তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪১

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪১
নীল মণি

জায়নএর গাড়িটা বাসার সামনে এসে দাঁড়াতেই সেকেন্ড দেরি না করে দরজা খুলে দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো।
ড্রাইভারের সিটে বসে থাকা জেমস চুপচাপ তাকিয়ে রইলো জায়ন এর দিকে, পেছনে ইউভি আর আহানের গাড়িও এসে থামল, জায়নের এমন আচরণ দেখে তারা ও জায়ন এর পেছনে গাড়ি নিয়ে এসেছে।
জায়ন দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ঘরে ঢুকেই চিৎকার করে উঠলো—
“রোদ…..”
” রোদ….”
দৌড়ে চলে গেলো দোতালায় তিয়াশার রুমে কিন্তু রুম ফাঁকা। ওয়াশরুম ফাঁকা।
“রোদ….”
উত্তর না পেয়ে এক মুহূর্তও নষ্ট না করে গেস্ট রুমে ছুটে গেল,

“রোদ রোদ জান, কোথায় তুই?”
নিচে নামল। রান্নাঘরের পাশে দুইটা রুম চেক করল কোথাও নেই।
শেষে নিচের ওয়াশরুমটাও খুলে দেখে শূন্য।
চোখ মুখে আতঙ্ক, সারা শরীর কাঁপছে জায়নের, গলা শুকিয়ে কাঠ, নিশ্বাস দ্রুত।
সে এখন নিজের ভিতরেই লড়ছে, একটা আশঙ্কার ছায়া মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই সময় ইউভি আকাশ সাগর পলাশ আহান জেমস ছুটে এসে পড়ল দরজার কাছে।
ইউভি উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলো—
“ভাইয়া কি হয়েছে? এরকম আচমকা চলে এলে?
এরকম বনুর নাম ধরে চিৎকার করছো কেন”
“ভাইয়া?”
জায়ন ঘুরে দাঁড়িয়ে গর্জে উঠলো, কণ্ঠস্বর কাঁপছে–

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমার বউ পাচ্ছি না ,আমার বউ কই??”
এদিকে জায়ন তখনও পাগলের মতো এদিক-ওদিক ঘুরে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে। আবারও গলা চড়িয়ে ডাকছে
“রোদ… রো–ও–দ…”
সবাই চমকে উঠলো, ইউভি একটু এগিয়ে এসে
ভিত চোঁখে কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো —
” বনু কে পাচ্ছো না মানে , কো যাবে ও”
জায়ন চিতকার করে বলে উঠলো —
” আকাশ আরোহী কে কল দে , ইউভি তুই অনু কে কল দে, ওরা জানে আমার বউ কোথায় ? হারা** বাচ্চা কে পাই ….শা** জ্বালিয়ে রেখে দিল, একটা সময় শান্তিতে থাকতে দেবে না।”
ইউভি আকাশ দুজনেই ওদের কল দিল কিন্তু কেউ কল রিসিভ করলো না ।
এর মধ্যেই আহান বলে উঠলো —

” তুই বাসার সব রুম চেক করেছিস তো , ভালো করে
দেখ বাসাতেই আছে , তুই কি ক্যামেরায় দেখেছিস ভাবি কে বেরোতে?”
আহান এর কথায় জায়ন আবারো হুঙ্কার স্বরে গর্জে উঠলো —
” আরে বা** আমি সব…..
হঠাৎ কী যেন মনে পড়লো জায়নের।
সে তো নিজের রুমটাই এখনও চেক করেনি!
“ও রুমেই তো কোনো ক্যামেরাও নেই…”
এক মুহূর্ত দেরি না করে ছুটে গেল নিজের রুমের দিকে।
দরজা খুলেই জায়নের দৃষ্টিতে আটকে গেল এক শান্ত দৃশ্য।
তিয়াশা জায়ন এর বিছানায় আরাম করে নিজেকে গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে , পরনে প্লাজো আর হালকা টপ।
মনে হচ্ছে এই মেয়েটার কোনো হেল দোলই নেই।
জায়ন নিস্বাস ফেলতে ফেলতে দুই হাত উরু তে রেখে হালকা ঝুঁকে পড়ল।
জায়ন যেন এক দীর্ঘ দম ছেড়ে বাঁচলো।

যার জন্য কিছু সেকেন্ড আগেও বুক ফেটে যাচ্ছিল, শরীরটা যেন আগুনে দগ্ধ হচ্ছিল ,সেই মেয়েটা এই বিছানায় আছে ,যেন বাইরের দুনিয়ায় কোনো আগুনই নেই, যেন কারো ভেতরে ঝড়ও নেই।
জায়নের বুকের গভীর থেকে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
যেন কেউ গলা চেপে ধরা হাতটা হঠাৎ ছেড়ে দিয়েছে।
একটি দৃশ্য, একটি নিঃসঙ্গ চুলে এলোমেলো মেয়ের মুখ, সেই নিঃচঞ্চল কপাল।
ঠিক তখনই দরজার বাইরে আওয়াজ কেউ উপরে উঠছে । জায়ন কানে আকাশ, সাগর ইউভির গলা ভেসে আসলো ।জায়ন তো রীতিমতো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
দ্রুত বাইরে থেকে দরজা লক করে, জায়ন তাড়াতাড়ি ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে নিচে নিয়ে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো —

“তোরা এখানে এসেছিস কেন ? তোদের বলেছি না আমার বাসায় আসবি না?”
পলাশ একটু হাত উঁচিয়ে বলল–
“আরে ভাই, তুই যেভাবে হঠাৎ ছুটে এলি, আমাদের টেনশন হইলো না?”
” আমি কি বলেছি তোদের, টেনশান কর।”
এর মধ্যেই আহান জায়ন এর কীর্তি দেখে গম্ভির স্বরেই বলল —
” ভাবি কে পাওয়া যাচ্ছে না , সে কথা না ভেবে আমাদের তারাচ্ছিস কেন ? চল আগে ভাবি কে খুঁজি । বাসায় নেই বাইরে সব জায়গায় খুজবো চিন্তা করিসনা ।”
জায়ন একটু বিরক্তি মুখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো —
” আমার বউ আমার রুমেই আছে । আর আমি কি আসতে বলেছি ? এখন ত্রিশ সেকেন্ড এর মধ্যে সব কটা বিদায় হ।”
পলাশ বিড়বিড় করে বলল —

“আমারা তো আর বিয়ে করিনি বউ যেন আমাদের নেই , ওনার একার ই বউ আছে । বুড় বয়সে পিচ্চি মাইয়া বিয়ে করলে এরকম ই হয় ।”
তারপর আর কি সবাই একে একে মাথা চুলকে নিচে নেমে যেতে লাগল।
কেউ কিছু বলছে না, কিন্তু মুখে মুখে চাপা হাসির ছাপ।
সাগর শেষমেশ বাইরে গিয়ে নিচু গলায় সবার উদ্দেশ্যেই বলল —
“বউ তো রুমেই ছিল… আর মামা সারা বাসা মাথায় করে ‘বউ কোথায়, বউ কোথায়’ করে চিল্লাচ্ছে। আর যদি সত্যি সত্যি বউ হারাতো তাইলে কি করতো আল্লায় জানে ।এই পাগলের ঠেলায় যে আর কি কি দেখতে হবে , এমনিতেই বাসায় আমার পোলা ডা মাথা খায় ।”
ধীরে ধীরে সবাই বিদায় নিল —
নিজের রুমে ফিরে এসে জায়ন থমকে দাঁড়াল।
ঘরের আলো নরম, বাতাস ঠাণ্ডা, আর ঠিক বিছানার মাঝখানে তার পুরো পৃথিবীটা যেন গুটিশুটি মেরে ঘুমোচ্ছে।
দুই হাত কোমরে রেখে বিছানার ধারে দাঁড়িয়ে জায়ন চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
রাগ হচ্ছে… আবার কী এক অদ্ভুত প্রশান্তি এসে মনটা ভরে দিচ্ছে।আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে তিয়াশার কপালে একটা মৃদু চুমু দিল।চোখ বুজেই রইল সে ।

চোখে এক কোমল উত্তাপ এর ছায়া , ঠোঁটের কোণে লেগে আছে এক উন্মাদ পাগলের নিস্তব্ধ অনুভূতির রেখা —-
“তুই শুধু আমার বউ না রোদ, তুই আমার ঘুম ভাঙার কারণ, আমার রাগের শেষ, আমার শান্তির শুরু… তুই না থাকলে, আমি কিচ্ছু না।”তুই জানিস রোদ, তোর এই চোখ দুটোই আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। তোর একটা হাসিতে আমার পুরো দিনের রাগ গলে যায়। তুই যখন কাছে থাকিস, মনে হয় আমি পৃথিবীর সব কিছু জিতে নিয়েছি। আর যখন দূরে ছিলাম , তখন মনে হতো নিজের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।আমি কারো সঙ্গে তোর তুইকে ভাগ করতে পারবো না তুই শুধু আমার। এই যে আমার নামটা এখন তোর নামের আগে বসে, এই নামটাই তোর গায়ে এমনভাবে বসিয়ে দেবো, যেন সারা জীবন তুই ভুলেও সেটা মুছতে না পারিস। আমার অস্তিত্বের সেই বিকার, যার অনুপস্থিতিতে আমি ধ্বংস হয়ে যাই।

তুই শুধু আমার কাছে প্রেম না তুই আমার উন্মাদনা, তুই আমার ঈর্ষা, তুই আমার অন্ধকারের আলো। তোকে ছুঁতে না পারলে আমার আঙুল কাঁপে, তোকে দেখতে না পেলে আমার চোখ পুড়ে যায়।তুই বুঝিস না জান, আমি তোকে ভালোবাসি ঠিক আগুনের মতো তোর গায়ে লেগে পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে, আবার নিজেই সেই ছাইয়ের মধ্যে হাত ডুবিয়ে খুঁজতে থাকি নিজের নিঃশ্বাস। তোকে নিয়ে আমার ভালোবাসা শান্ত না এটা খামখেয়ালি, দখলদারি, একরোখা। তোকে অন্য কারো সঙ্গে কল্পনা করলেই বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যায়, আর তুই যখন আমার চোখের সামনে এসে চুপ করে দাঁড়াস, তখন আমার সমস্ত রাগ, অভিমান, পাগলামো সব ঠান্ডা হয়ে যায় শুধু তোর একটুকরো চাহনিতে। আমি তো প্রেমিক হতে যাইনি রে তোর, আমি তো চাইনি তোকে এইভাবে জোর করে বেঁধে রাখতে… কিন্তু তুই ছাড়া আমি যে আর কিছু বুঝি না। তুই আমার অভ্যাস হয়ে গেছিস রোদ নেশার মতো, যন্ত্রণা হয়ে গিয়েও যাকে ছাড়তে পারি না।”
জায়ন আর সহ্য করতে পারল না। বসে পড়ল ওর পাশে, এক হাতে মাথার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কোমল গলায় ডাকল–

“রোদ… রোদ, ওঠ। খাবি না ?”
কোন সাড়া নেই তিয়াশার
“রোদ ওঠ, জলদি।” এবার একটু আদেশের সুর।
কোনো সাড়া নেই।
জায়ন নিজের চিবুক ঘষে বলল —
“ঠিক আছে, না উঠলে আমি কিন্তু…”
তিয়াশা একটা হাত পেটে চেপে মুখ গুঁজে নিল বালিশে —
“আমি কিচ্ছু খাবো না, আপনি যান প্লীজ।”
“রোদ ওঠ বলছি কিন্তু ”
তিয়াশা চোখ বন্ধ রেখেই ফিসফিস করে বলল–
“পেটে খুব ব্যথা করছে… আমি খাবো না?”
জায়ন একটু থমকে গেল।
তারপর মুহূর্তেই ওর মুখের ভাব পাল্টে গেল ,চোখে একরাশ চিন্তা আর কণ্ঠে গভীর কোমলতা জমে উঠলো–
“হঠাৎ পেটে ব্যথা কেন হচ্ছে ?কিছু উল্টো পাল্টা খেয়েছিস ? ”
তিয়াশা এবার একটু বিরক্তি নিয়ে বলল —
” ঠিক হয়ে যাবে , আপনি যান প্লীজ । আমি এই বিছানা ছেড়ে আজ উঠতে পারবো না ”
“রোদ… আজ…?”

তার প্রশ্নটা অসমাপ্তই রয়ে গেল।
তিয়াশা কোনো উত্তর দিল না, শুধু কাঁথাটা মুখ অবধি টেনে নিল।
জায়ন এক চুপচাপ নিঃশ্বাস ফেলে বলল–
“আচ্ছা, ঠিক আছে। আর কিছু বলতে হবে না।
এই বলেই জায়ন রুমের বাইরে চলে গেলো।
তিয়াশা বুঝতে পারলো, জায়ন হঠাৎ রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।
সে আবারো চোখ বন্ধ করে বিছানায় গুটিয়ে নিল নিজেকে।
পেটের ব্যথাটা একটু একটু করে বাড়ছে। শরীর অবশ হয়ে আসছে যেন।
হঠাৎই তার তলপেটে এক ঠান্ডা, তরল কিছু ছোঁয়া লাগলো।
সে লজ্জায় আঁতকে উঠে চোখ খুলে তাকাল
জায়ন নিঃশব্দে তার পাশে বসে, মনোযোগ দিয়ে তার পেটে কিছু ডলে দিচ্ছে। যেই ছোঁয়ায় নেই কোন উন্মাদনা , নেই কোন পরীক্ষাকরন আছে শুধু যত্ন শুধুই যত্ন ।
তিয়াশা চমকে গিয়ে বসে পড়লো প্রায় —
“কি করছেন আপনি? সরেন আপনি আমি ঠিক আছি”
জায়ন এক পলক তাকাল, শান্ত গলায় বলল —

“জাষ্ট শাট আপ, ইটস অলিভ অয়েল ম্যাসাজ। ইউ উইল ফিল বেটার।”
তিয়াশার চোখ বড় বড় হয়ে গেল, শিশুসুলভ বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করল —
“আপনি…আপনি এসব জানেন কিভাবে?”
জায়ন চোখ না তুলেই ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি টেনে বলল —
“জেনারেল নলেজ বেবি। এরকম তাকানোর দরকার নেই।”
” হাতের বাঁধন কি করে খুললি?”
” বাঁধন মজবুত ছিল না তাই ।”
” অনু , আরোহী কে …..
বাক্য সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই , নিচু গলায় তিয়াশা বলল
” জী আমি বলেছি ।”
“এই ঘরে কি করছিলিস? ”
” আমার একা একা ভয় করছিল । এই রুমে আপনার ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম , মনে হচ্ছিল আপনি আছেন ।”
জায়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তিয়াশার দিকে ,
মনে মনে ভাবছে—

” আমাকে ভালোইবাসলো না আর ঘ্রাণ ।”
এক দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল —
” আচ্ছা আজকের পর আর কখনো সন্ধ্যার পর বাইরে থাকবো না।”
তিয়াশার চোখে যেন জল এসে গেল।
এই পুরুষটা… রাগ করে, জেদ করে, আবার যত্ন ও করতে জানে ।
কিচ্ছুক্ষন পর জায়ন এক পলক তাকিয়ে তিয়াশা কে জিজ্ঞেস করল —
” নাউ ফীল বেটার লিটল বিট?”
তিয়াশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল —–
এর পরে জায়ন আবার ও বেরিয়ে গেলো —-
কিছুক্ষন পর আবার দরজা খোলার শব্দ।
জায়ন ফিরে এসেছে হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে।
তিয়াশা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।

জায়ন ওর সামনে বসে , ভাত মাখিয়ে এক লোকমা ভাত তিয়াশার মুখের সামনে তুলে বলল–
“চল, এবার হা কর ।”
তিয়াশা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , তার সখের পুরুষ এর দিকে , যেই দৃষ্টিতে ছিল এই পুরুষ এর অজানা কিছু চিত্র । একটু হকচকিয়ে এই বলল —
“আমায় দেন .. আমি খেয়ে নেবো…”
কিন্তু জায়ন সে কথা কানে তুলল না।
“কথা কম বলে , হা কর।”
তিয়াশা লজ্জা আর আবেগে গলে গিয়ে মুখ খুলে দিলো।
জায়ন নিঃশব্দে একটা গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাতের লোকমা ওর ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিল।
তিয়াশার চোখ এক ফোঁটা জল দেখা গেল।
চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলল —
“আপনি এতটা কেয়ারিং?…”
জায়ন হাসল না, মুচকি ও দিল না।
শুধু বলল —

“আমি সব সময় এমনই ছিলাম তোর জন্য রোদ।
শুধু তুই চাসনি তাই আমার আমিটাকে তোর সামনে
রাখতে পারিনি । ”
তিয়াশা জায়ন এর হাতটা ধরে বলল ,
“আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে শুনবেন ?”
” পরে শুনবো আগে খাওয়া কমপ্লিট কর। খেয়ে রেস্ট নিবি, কালকে ভার্সিটি যেতে পারবি ?”
তিয়াশা আবারো বলল —
” হ্যাঁ পারবো ,কিন্তু আমার….
জায়ন বাঁধা দিয়ে পানির গ্লাস টা তিয়াশার ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিল । তারপর জায়ন উঠে দাঁড়ালো।
তিয়াশার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো, তারপর ধীরে ধীরে তার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে বলল–
“আমি ডিনার সেরে আসছি, তুই এখানে ঘুমিয়ে পর, আমি এই সোফায় শুয়ে পড়ব ।”
তিয়াশা কিছু বললো না। শুধু তাকিয়ে রইলো তার মুখের দিকে যেন প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা স্পর্শ নিজের হৃদয়ে সযত্নে গেঁথে রাখছে। মনে মনে ভাবছে —

” স্বামীর অধিকার পাবো না বলেছো , নিজেই সব অধিকার সামনে রাখছো সেটা জানা আছে কি ?”
জায়ন একে একে রুমের বড় লাইটগুলো বন্ধ করলো, রুমটা ডুবে গেল এক নরম অন্ধকারে।
শুধু খাটের পাশে একটা ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিল হালকা কমলা আলোয় পুরো ঘরটা যেন স্নিগ্ধতায় ঢেকে গেল।
তিয়াশা তাকিয়ে রইলো।
চোখের সামনে জায়নের দীর্ঘ ছায়া দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সে জানে, কিছুক্ষণ পরেই সেই ছায়া ঘরের বাইরে মিলিয়ে যাবে—
কিন্তু তার মনে হচ্ছে এই আলতো, যত্নশীল ছায়াটাই যেন আজ তার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।
জায়নের পেছনে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে নিজের বুকের ভেতর চাপা কণ্ঠে তিয়াশা মনে মনে বলল—
“এই মানুষটাই আমার সব।
সে রাগ করুক, চিৎকার করুক, তবু জীবনের প্রতিটা জন্মে আমি এই মানুষটাকেই চাই।
এই রাগী, বদমেজাজি পুরুষটাই আমার শান্তির ঠিকানা।”
তার ঠোঁটের কোণে এক ফোঁটা হাসি এল।
চোখ বুজে ফেলল ধীরে ধীরে।
রুমে পড়ে রইলো একটুখানি জ্বলা আলো, আর একটুখানি অসম্ভব ভালোবাসা…
যার ভাষা নেই, শুধু অনুভূতি আছে।

“কেমন কাটলো ভাইয়া আপনার নাইট ক্লাব?”
অনন্যার ঠাণ্ডা, ধীরে উচ্চারিত প্রশ্নে হঠাৎ চমকে উঠলো ইউভি।
রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে তার হৃদয়পাখি। কিন্তু চোখে-মুখে আগুন।
প্রথমে চমকে গেলেও পরমুহূর্তেই রাগে ফেটে পড়লো ইউভি।
ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল অনন্যার দিকে, কাঁধে হালকা ঝুঁকে গলা নামিয়ে বলল —
“নিজের হবু জামাইকে ভাইয়া বলিস, তোর এতটুকুও লজ্জা করে না?”
অনন্যার ভ্রু কুঁচকে এবার নাক মুখ ফুলে উঠলো।
কণ্ঠস্বর ঝাঁঝালো, চোখে আগুন–
“কসম খেয়ে মিথ্যে বলতে আপনার লজ্জা করে না? খুব ভালো লাগে, না? ওই ক্লাবের ছোট জামা পরা মেয়েগুলোর দিকে তাকাতে।”
এই বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো অনন্যা।
ইউভি স্তব্ধ। এদিকে ইউভি যে তার হৃদয়পাখী কে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকায় না পর্যন্ত আর এখন এই বদনাম শুনতে হচ্ছে , একটু চোটে গিয়েই বলল —

” পাখী এসব কি বলছিস ? হ্যা আমি মিথ্যে বলেছি কিন্তু তোর ভয়ে , তাই বলে মেয়েদের জরাবি? আমার সুন্দর চরিত্র টাকে এইভাবে বদনাম করবি পখী?”
একটু বিদ্রুপ হাসি দিয়ে দুহাত সামনে গুজে অনন্যা জবাব দিল —
” ও তাহলে মানলেন মিথ্যা বলেছেন।
ঠিক আছে ভাইয়া, আমার ছেলে মেয়ের মামা হওয়ার আগাম শুভেচ্ছা রইলো আপনাকে, থাকেন আপনার চরিত্র নিয়ে আপনি।”
এই বলে গট গট করে বেরিয়ে গেল অনন্যা , ইউভির মাথায় যেন বজ্র পড়ল ,চোঁখ তৎক্ষনাৎ হয়ে উঠলো বড় বড়, সে বাক্য শূন্য হয়ে দাড়িয়ে রইলো —
হঠাৎ মাথায় টনক নড়লো —

” কি বলে গেল এই মেয়ে , এই মেয়ে কি বলল। ওহ আল্লাহ আমার কান নষ্ট হয়ে গেলো না কেন এই সোনার আগে ? কি মামা , হবো আমি বাবা আর বলে কিনা হওয়াবে মামা, ওরে বেয়াদব নারী ।”
পকেট থেকে ফোন বের করে ইউভি কাকে একটা ফোন লাগালো —
ফোন রিসিভ হতেই ইউভি বলে উঠলো —
” শোনো ভাইয়া তোমার বেড়ালের বাচ্চা আমার সংসারের খ্যাতে আগুন লাগায় দিসে। তোমার বেড়ালের বাচ্চারে সাবধা….
কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই গম্ভির আওয়াজ এ জায়ন বলে উঠল —
” আ হা ওই ভুল করিস না , ওয়ার্ড কম্পিল্ট করিস না তাহলে তোর সংসারে যেটুকু আলো দেখা যাচ্ছে ওই টুকুও নিভিয়ে দেব। আমার বউ কে কিছু বলার হিম্মত আমি তোদের বাপ কেও দিব না , সেখানে তুই তো ওর বড় ভাই । “”

এই বলে ওপাশ থেকে কল কেটে যাওয়ার আওয়াজ আসলো —
আমি ভুলে গেছিলাম আমি কোথায় কল লাগায় ছিলাম, এইদিকে আমার বউ আমায় ওর বাচ্চার মামা
বানাচ্ছে , এই দিকে আমার বড় ভাই তার বউ এর কথা বলায় আমার সংসারের আলো নিভাচ্ছে । আল্লাহ্ তোমায় অনেক শুকরিয়া আমায় এরম ফাউল চো**
বানানোর জন্য ।”

এনেছে আজ। পুরো গলিটা নিথর, বাতাস নেই, গাছের পাতাগুলো পর্যন্ত থেমে গেছে কোনো শব্দ নেই, শুধু নিঃশ্বাসের মৃদু আওয়াজ। চাঁদের আলোয় ঢেকে থাকা রাস্তাটা এমনভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে যেন কারো মন খারাপের কথাগুলো নিঃশব্দে ছড়িয়ে আছে তার ওপর। আকাশ দাঁড়িয়ে আছে আরোহীদের বাসার সামনে, মাথার ওপর দিয়ে হালকা কুয়াশা ভেসে যাচ্ছে, আর দূরে একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠছে যেন এই নীরবতাকে কেটে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা।
রাতের হাওয়াটা কেমন এক বিষণ্ণতার ভার বইছে, গাছের ছায়া রাস্তায় পড়ে একেকটা স্মৃতির মত মনে পড়াচ্ছে সব ভুল বোঝাবুঝি, সব না বলা কথা। চাঁদের আলোয় আকাশের মুখটা দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার শুধু চোখদুটো কেমন ছায়া ঢাকা, ক্লান্ত, অপেক্ষায় পোড়া। ফোনের স্ক্রিনে বারবার একই নাম, ‘জলপরী’
কিন্তু ওপাশে কোনো সাড়া নেই।
চোখ তুলে ওপরে তাকালো সে জানালার পর্দা অল্প নড়ছে হাওয়ায়, কিন্তু আলো নিভে আছে। সবকিছু ঠিকই আছে বাইরে থেকে, শুধু কারো মনটাই যেন তালা মেরে বসে আছে ভেতরে।
আকাশ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে, ঠোঁটে ধরা একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস এ জ্যোৎস্না রাত তার জন্য প্রেমের নয়, অপেক্ষার, অনুতাপের।

জলপরী নামটা স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে, কিন্তু রিং হচ্ছে বেমালুম… কেউ ধরছে না।
“প্লিজ একবার… একবার কথা বলো জলপরী,”
মনে মনে প্রার্থনার মতো উচ্চারণ করলো আকাশ।
চারপাশে কুয়াশার মতো হালকা ধোঁয়া ছেয়ে গেছে, গাছের পাতাগুলোও থেমে গেছে যেন, বাতাস নিঃশব্দে আকাশের হাড়ে হাড়ে ঢুকে যাচ্ছে।
এই চুপচাপ শহরের মাঝে শুধু তার নিঃশ্বাসের শব্দটা শোনা যাচ্ছে।
হঠাৎ নিচু স্বরে সে নিজেই বলে উঠলো
“রাগ করেছিস ঠিক আছে… কিন্তু এইভাবে ফোনটাও না ধরলে আমি কোথায় যাব বলো তো? এত তেজ কোই দিয়ে আসে আল্লায় জানে ।”
চোখে অদৃশ্য জল, ঠোঁটে চাপা ক্লান্তি। তবুও দাঁড়িয়ে আছে এই জ্যোৎস্না রাতের নরম চাঁদের আলোয়, ভেজা পাথরের পাশেই, একটুখানি ক্ষমা আর ভালোবাসার আশায়।
“আমি জানি তুমি ইচ্ছা করে কল ধরছ না জলপরী , তুমি যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিচে না আসো । এতটা দূরে চলে যাবো তোমার জীবন থেকে খুজলেও পাবে না।”
এই মেসেজ টা আরোহীর ফোন এ পপ আপ হতেই হুট করে আরোহীর বুক টা কেঁপে উঠলো —
মনে মনে ভাবলো —

” রাঙ্গা মুলোকে খুঁজে পাবো না মানে ?”
তারাতারি ফোন টা চট করে হাতে নিয়ে রেগেই আকাশ কে মেসেজ দিল —
” খুঁজে পাবো না মানে ?”
কিন্তু তারপরে একেবারে নিস্তব্ধতা।
কোনো কল না, কোনো রিপ্লাই না।তারাতারি জালনার কাছে এসে দেখলো আকাশ দাড়িয়ে আছে বাইক এর সামনে হেলান দিয়ে । কেউ যদি দেখে ফেলে আস্ত রাখবে না এই ছেলে কে ।
এবার আরোহী নিজেই ফোন দিচ্ছে কিন্তু আকাশ কেটে দিচ্ছে , আরোহীর মাথা টা গরম হয়ে যাচ্ছে ।
হঠাৎ আরেকটা মেসেজ পপ আপ হল —
” পাঁচ মিনিটের দুই মিনিট বাকি ।”
মেসেজ টা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আরোহী তাড়াতাড়ি প্লাজো আর টপ এর উপরে কবার্ড থেকে বের করে একটা ওড়না জড়িয়ে নিল ।

আসতে আসতে দড়জা খুলে পা টিপে টিপে বেরোতে লাগলো মনে মনে ভয় ও করছে আম্মু আব্বু যদি দেখে
তাহলে হাজারো প্রশ্ন করবে । ভয়ও করছে, আবার যেন বুকের ভেতর এক রকম বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে।
ওদের এপার্টমেন্ট এর বাইরে চলে আসতেই দেখলো আকাশ ওর আসার দিকে তাকিয়ে আছে–
এসেই দুম করে কিল বসিয়ে দিল আকাশের বাহুতে আর গম্ভির গলায় বলে উঠল–
“ঢং করো এত রাতে , বাসার সামনে কি চাই।”
আকাশ এর মুখ থেকে বেরোলো একটা শব্দ —
” আউচ”
আকাশ একটুও না কাঁপিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল–
“তোমাকে ?”
আরোহী ঠোঁট বাঁকিয়ে কড়া গলায় বললো—

” নাইট ক্লাব জান ওখানে অনেকে আছে ।”
আকাশ শান্ত স্বরে বললো –“তোমার মতো আর কেউ নেই জলপরী। আর জাবো না কথা দিলাম ।”
আরোহী তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে মুখ ফিরিয়ে নিলো — “আমার জানার দরকার নেই তোমার প্রতিজ্ঞা।”
আকাশ আরোহীর কথায় কান না দিয়ে ব্যাক সিট বেঁধে রাখা হেলমেট টা খুলে আরোহী কে পরিয়ে দিতে লাগলো —
আরোহী আকাশের কান্ড দেখে চমকে বলে উঠলো

“আরে কি করছ ?”
” কিডন্যাপ ”
” মা মানে?”
আকাশ বাইকে বসে স্টার্ট দিতে দিতে বলল —
“ওঠো”
” এত রাতে কোথায় যাব মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে ?”
” হ্যা , ত্রিশ মিনিট নেবো তোমার থেকে ,এবার ওঠো নইলে তোমাদের এলাকার লোকজন এভাবে দুজন কে দেখলে ধরে বিয়ে দিয়ে দেবে।
আমার কোন সমস্যা নাই। এবার দেখো তুমি কি করবা।”

” ছিলে তো ভীতুর ডিম , এত সাহস আসলো কোই দিয়ে ?”
” যখন থেকে আমার জলপরী যাওয়ার কথা বলেছে।এবার উঠবে না কি …..
কথা না বাড়িয়ে আরোহী উঠে পড়ল বাইকে ।
বাইক চললো… নিঃশব্দ, জ্যোৎস্নামাখা পথে।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে গিয়ে থামলো এক লেকের পাশে।
আরোহী বুঝে পাচ্ছে না হঠাৎ আকাশ তাকে এই লেকের পাশে কেন নিয়ে আসলো —
” আসো ।”
” এখানে কেন আনলে আমাকে ।”
” আসো বুঝতে পারবে ।”

আরোহী যখন আসে, পায়ের নিচে জ্বলে উঠে pathway lights, প্রতিটি ধাপে যেন ফুল ফুটে উঠছে তার জন্য। আকাশ এর চোখে আবেগে ভেজা এক পলক দৃষ্টি।
চারপাশ নিস্তব্ধ, বাতাসে গোলাপের মৃদু সুবাস, আকাশে উজ্জ্বল জ্যোৎস্না। চাঁদের আলোয় ভেজা ঘাসের উপর বিছানো এক লাল কার্পেট, তার শেষ মাথায় রাখা ছোট্ট একটি টেবিল। যেন ভালোবাসার প্রতিটি সেকেন্ড গুনে রাখছে।ওই টেবিলের চারপাশে রাখা শত শত গোলাপের পাপড়ি, মাঝখানে সোনালি রিবনে বাঁধা একটি বড় গোলাপের তোড়া
আকাশ আরোহী কে সঙ্গে নিয়ে এসে সেই টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল ,

টেবিলের ঠিক পেছনে তৈরি করা হয়েছে একটি heart-shaped arch, যা সাদা আর লাল রঙের ফুল দিয়ে সাজানো। সেই আর্চের উপরে ঝুলছে ছোট ছোট fairy lights যেন তারারা নেমে এসেছে পৃথিবীতে।
এই সব দৃশ্য দেখে আরোহীর মনে হল সে যেন পারি দিয়েছে স্বপ্ন দুনিয়াতে–
আর্চের মাঝখানে সোনালি রঙে লেখা —
“Be Mine Forever”
একদিক থেকে হালকা হাওয়ায় দুলছে সাদা sheer কাপড়, যেন স্বপ্নেরা নাচছে প্রেমের ছন্দে।
এইসব মাঝেই সেই সুন্দর পুরুষটি আরোহীর সামনে এসে দাঁড়াল , আরোহীর হাত দুটো নিজের দিকে নিয়ে এসে আকাশ বলে উঠলো —

” জানো জলপরী আমার তোমায় নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল । যেদিন থেকে তোমায় নিজের একান্ত জলপরী
ভেবেছি , সেদিন থেকেই তোমাকে আমি আমার করে নিয়েছি । ভেবেছিলাম যেদিন ডাক্তার হয়ে যাবো সেদিন রাজকীয় ভাবে তোমার বাবার কাছে গিয়ে তোমায় নিজের করার আবাদার রাখবো ।”
আরোহী যেন এসব শুনে এক ভাবশীল দুনিয়াতে প্রবেশ করছিল —
আকাশের হাতে থর থর করে সৃষ্টি হলো এক কম্পন , কপালে ফুটে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম ,তবুও সে নিজেকে সামলে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল —
” কিন্তু তুমি তো তা হতে দিলে না , কারন আমি তোমার তুমি কে শুধু নিজের জন্য চাই অন্য কোন ব্যক্তি আমার থেকে এই তুমি কে নিয়ে যাবে সেইটা আমি কি করে সহ্য করব । আমি চাই এই পৃথিবীর প্রতিটি জ্যোৎস্না যদি একটা মুহূর্ত হয়, সেগুলো কেবল তোমার হাত ধরেই কাটুক।”
টেবিলের ওপর রাখা গোলপের তোরাটা নিয়ে আরোহীর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে একটু থেমে বলে উঠল —
“এই আমি আকাশ খান তার নিজের জলপরী ‘ইয়াসমিন আরোহী চৌধুরীর’ সঙ্গে হালাল ভাবেই জীবনের প্রতিটি সমুদ্র সৈকত দেখতে চায় । তো মিস আরোহী আপনি কি এই আমার আমির সঙ্গে জীবনের প্রতিটি সমূদ্র সৈকত দেখতে রাজি আছেন ?

সবচেয়ে অবাক করা জিনিস, লেকের ওপার থেকে ছোট ড্রোনে ঝুলছে একটি ছোট ব্যানার ,
যেখানে সাদা ক্যালিগ্রাফিতে লেখা —
“From your Ranga Mulo, be my jolpori forever?”
আরোহীর চোখের কার্নিশ বেয়ে পড়ল একফোঁটা নোনা জল —
এই দিনটার জন্য সে নিজেও তো মনে মনে অপেক্ষা করছিল , এটাও সম্বব তার জীবনে ?
ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল এক চিলতে হাসি —
” কি হলো বলেন মিস আরোহী , এমন কিছু বলবেন না যার জন্য আমার নিজের হার্টের সার্জারীর প্রয়োজন হয় ।
আরোহী আকাশ এর হাত থেকে ফুলের তোরা টা নিয়ে আকাশ কে দার করিয়ে আকাশের ওই শক্ত হাত দুটো নিজের ওই ছোট্ট দুই মুঠোর মধ্যে নিয়ে বলল —
” আমি আমার জীবনের প্রতিটি গরমে প্রতিটি শীতে
হালাল ভাবেই এই আমার একান্ত রাঙ্গামুলো সবজিই
আমার বাসায় রাখতে চাই। আই উইল ইওর ফরএভার
মাই রাঙামূলো।”
এই শুনে আকাশ জড়িয়ে ধরলো আরোহী কে , মনে হচ্ছে সর্ব সুখ খুঁজে পেয়েছে। এতে এত সুখ জানলে সে আগেই প্রোপোজ করে দিত।
হঠাৎ আরোহী আকাশের বুকে এক কিল দিয়ে বলল

” আগে বললে না কেন একটু সেজে আসতাম।”
আকাশ মুচকি হেসে জবাব দিলো —
” তাহলে কি আমার জলপরী কে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম । এখন বলো তুমি কি এখনো রেগে আছো সোনা?
আরোহী আকাশ এর বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে —
” যেখানে সর্বসুখ চাই সেখানে কি রেগে থাকা যায় ?”
চাঁদের আলো, বাতাস, লেকের ঢেউ সব যেন নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তাদের মিলনের।
আকাশ আর আরোহীর মাঝে কোনো শব্দ ছিল না, শুধু চোখে চোখ রেখে অনুভব চলছিল এক গোপন ভাষায়।
দুজনেই যেন কথা বলছিল, অথচ কেউ কিছু বলছিল না।
আরোহীর চোখে ছিল অশ্রুজল, আর আকাশের চোখে তীব্র ভালোবাসা।

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪০

আকাশ দু’হাত দিয়ে আরোহীর মুখখানি ধরলো
চোখে চোখ রাখতেই যেন সময় স্থির হয়ে গেল।
সেই নিরবতা ভেদ করেই হৃদয়ের স্পন্দন বুঝিয়ে আকাশ বলে উঠল —
“এই আমি আর তুমি… চিরকাল।
এবার বাসায় চলো সোনা নইলে হবু শ্বশুর আব্বা আমায় খুন করবে আগামীকাল ।”
এই শুনে ভেসে উঠলো আরোহীর হাসির আওয়াজ —
যার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আকাশ মনে মনে বলে উঠলো
” আজ থেকে তোমার সব হাসির পেছনের কারন যেনো আমি ই
হতে পারি।”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here