তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪৫

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪৫
নীল মণি

রাত যেন আজ একটু বেশিই নরম। আকাশটা ঠিক যেন কাঁচের গ্লাস মোঘলা তারায় ভরা।চাঁদটা ঝুলে আছে মাথার উপর,তার আলোয় গোটা দুনিয়াটাই যেন নিঃশব্দ কোনো কবিতা হয়ে গেছে।শহরের সব আলো হলুদ ছাড়িয়ে আছে চারিপাশে।ক্লান্ত শহর ধীরে ধীরে গা ছেড়ে দিচ্ছে,কিন্তু রাত এখনো জেগে আছে ,
প্রেমিকদের জন্য, অপেক্ষার জন্য, আর একফোঁটা অশ্রু কিংবা হাসির জন্য।
” বউ প্লিজ দারা, সোনা , শোন না আমি সরি বলছি তো।”
শহরের গলির আলো-আঁধারি রাস্তায় নিঃশব্দে হেঁটে যাচ্ছে দুটো পা, একজোড়া ছায়া।তিয়াশা রাগে ফুসে উঠেছে, চোখে জল আর রাগের ঝড় একসাথে।

আর পেছনে জায়ন, দু’হাত পকেটে, মাথা একটু ঝুঁকিয়ে, তিয়াশার পেছনে পেছনে ক্লান্তিহীনভাবে হেঁটে যাচ্ছে।যেন এই মেয়ে ছাড়া আর কিছুই এখন তার কাছে জরুরি নয়।
তিয়াশার মুখে অভিমান, হাঁটার গতি তার রাগের মতোই দ্রুত।সে বারবার পেছনে তাকায়, কিন্তু তাকিয়েই মুখ ঘুরিয়ে ফেলে ।যেন চোখ রাখলেই হৃদয় গলে যাবে।যেন এক পলকের দৃষ্টি আবার তাকে ফিরিয়ে দেবে এই বাঘের বাচ্চাটার বুকে।তার মনের মধ্যে যেমন আগুন জ্বলছে, আর জায়নের মুখে সেই চিরচেনা দুষ্টু হাসি।
এর পেছনে হঠাৎ আকাশের দুষ্টু গলা ভেসে এলো–

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“বড় ভাই, আমরা তাহলে চলে যাই?”
এই কথাটা যেন আচমকা ব্রেক টানল তিয়াশার রাগী পায়ে।সে থেমে গিয়ে পেছনে ঘুরে তাকাল।আর তখনই সে দেখল,জায়ন মুচকি মুচকি হাসছে।হাসিটা এমন, যেন সব দুষ্টুমি, সব ভালোবাসা আর ক্ষমাপ্রার্থনা ওই এক চোখে লুকিয়ে রেখেছে।
জায়ন চোখ টিপে মুচকি হেসে গলা উঁচু করে বলল–
“চলে যা তোরা। আমার বউয়ের রাগ অভিমান ভাঙাতে একটু সময় লাগবে , এইটা শুধু রাগ না রে এইটা আমার জানের আগুন।”
তিয়াশা এক পা এগিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে চিৎকার করে উঠল–
“ভাইয়া ,আমি যাবো তোমাদের সঙ্গে। আমাকে নিয়ে যাও,থাকবো না আমি এই বদমাইস জেদি লোকটার সাথে এক মিনিটও।”

এই বলে সে দৌড়ে যেতে চাইছিল ইউভিদের দিকে,
কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই জায়ন যেন বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে এসে পিছন থেকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল তিয়াশার কোমর।মেয়েটা ছটফট করতে লাগল, কিন্তু সে বাঁধন নরম নয়, আবার হিংস্রও নয়—
একটা দখলদার ভালোবাসা, যা ছাড়তে জানে না।
জায়ন ঠোঁটে এক মায়াবী দুষ্টু হাসি রেখে সে বলল–
“”আমার দুই সম্ভন্ধি, তোদের গাড়ি স্টার্ট নিতে যত সময় লাগবে…ততটুকু সময় তোদের হাতে আছে।তারপর এখান থেকে বিদায় হ ।”
তিয়াশা ছটফট করছে, ওর শরীর ছোট, কিন্তু ইচ্ছাশক্তি অটুট।তবুও জায়নের সেই শক্ত বাহু যেন আজ সে নিজেই উপহার হয়ে কাঁধে জড়িয়ে আছে।রাগে দাঁত চেপে বলল–
“আপনার ইচ্ছে মতো চলবে নাকি সবাই?”

জায়ন এবার এক ঝটকায় ওকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে, চোখের সামনে এনে যেন এক মায়াবী কন্ঠে বলে উঠলো–
“জ্বী বউ…সবাই চলবে আমার কথায়।শুধু আমি চলব আমার বউয়ের কথায়।তবে এই মুহূর্তে না…এই মুহূর্তে আমার কিটি ক্যাট যা বলবে, তা আমার পক্ষে মানা অসম্ভব।”
ইতিমধ্যেই ইউভি আর আকাশ গাড়ি নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগল।
আকাশ গাড়ির জানালা নামিয়ে একটু খুনসুটিভরা হাসি দিয়ে বলল—
“নতুন ভাবি, আপনি আমার ভাইয়ার সঙ্গেই থাকেন। আর জামাই সাহেব, আমার ছোট্ট বোনটারে একটু দেখে রাখবেন… কাঁদিয়ে দেবেন না যেন!”
তিয়াশা তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে,চোখে একরাশ রাগ আর লজ্জা।কিন্তু তিয়াশার মুখের রাগী রেখা মুছে গিয়ে কেমন যেন নরম, কাঁপা কাঁপা হয়ে গেল।
সে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল–
“আমায় নিয়ে যাও না আকাশ ভাইয়া…”
এইবার জায়নের গলায় হঠাৎ নেমে এলো গর্জন

“বিদায় হ এখান থেকে…তা না হলে আমায় আবার বের করতে হবে ।”
জায়ন এর কথায়আকাশ তো হকচকিয়ে গেল।
কাপা কাপা স্বরে বলে উঠলো —
“”ইউভি ভাই চলো চলো, দেরি করলেই কেলেঙ্কারি।”
ওরা চলে যেতে না যেতেই তিয়াশার মুখ ফ্যাকাশে।সে চিৎকার করে উঠল–
“আরেহ ভাই ,আমায় ফেলে চলে গেলে এই বদমাইস বাঘের বাচ্চার কাছে? ”
তিয়াশা হঠাৎ করে জায়ন এর শরীর থেকে এক অন্য ঘ্রাণ পাচ্ছে , এই ঘ্রাণ এর সঙ্গে পরিচিত না তবুও বুঝতে পাড়ছে কিসের , চোঁখে যেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বেলে উঠলো , এই আগুন জ্বালা চোখেই জিজ্ঞাওসা করে উঠলো

” আপনি ড্রিংক করেন?”
জায়ন যেন থতমত খেয়ে উঠলো , এত চিন্তায় তার মনেই নেই এইসবের কথা , মাথা নিচু করে বলল
“কষ্ট হচ্ছিল তো দুপুরে খুব , তাই করেছি । তবে আর
করবো না বউ প্রমিজ।,”
তিয়াশার মাথায় যেন বজ্র পড়ল —
” আপনাকে আমি খু*ন করে ফেলবো । বাজে পুরুষ
যান এখান থেকে?”
কিন্তু জায়ন তিয়াশার কথায় মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে হাসি এমন একরকম, যেন সে নিশ্চিত এই মেয়ে তার কাছ ছাড়া যাবেই না।
তিয়াশা কোঁচকানো কপাল, রাগী চোখে বলল–
“ছাড়ুন আমাকে আপনি বাজে জিনিষ খান । কেন এমন বদমাইশের মতো হাসছেন?আর কি বের করার কথা বললেন ভাইয়া দের?”

জায়ন নিজের ভ্রূ উঠিয়ে , তিয়াশার দিকে একটু ঝুঁকে তিয়াশার শেষের প্রশ্ন উপেক্ষা করে বলে উঠলো —
” আমি এখন হাসতেও পারবো না বউ, ?”
তিয়াশা মুখ বাঁকিয়ে সোজা উত্তর দিল —
” না।”
জায়ন তার বাঁ হাত দিয়ে তিয়াশাকে নিজের কাছে টেনে নিল, এবার তিয়াশার মুখের সামনে তার এলোমেলো চুল সরিয়ে দিয়ে মায়া ভরা রোমান্টিক কণ্ঠে বলল–

“**” কিন্তু আমার হাসির কারণ এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে…চোখে আগুন, বুকে দুঃখ, মুখে অভিমান।আর আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস…তুইই তো আমার হাসির কারণ, কিটি ক্যাট”
তিয়াশা এবার চোখ নামিয়ে নিল।ওর বুক কেঁপে উঠল, ঠোঁট কাঁপল…কিন্তু মুখে আবার সেই চেনা খোঁচা—
“দূর হন আপনার নাটক নিয়ে… আমি এসবতে মানব না, আমায় এত কষ্ট দিয়ে ছেন , ব্যথা দিয়েছেন”।
জায়ন করুন চোখে তাকিয়ে আছে অসহায় হয়ে তার ভালোবাসার দিকে।আর শহরের গলির ওই সন্ধ্যা আলোতে, এক বউ আর এক স্বামী দাঁড়িয়ে রইল পাশাপাশি।তাদের মাঝে অভিমান, কিন্তু তার চেয়েও বড় ভালোবাসা।
জায়নের গলা তখন একটু থেমে আসা বৃষ্টির মতো নরম।একটু কাঁপা, একটু আবদারমেশানো।
সে হঠাৎ থেমে গিয়ে গভীরভাবে তিয়াশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল–
“আচ্ছা জান… আমি যদি নিজেকে কষ্ট দিয়ে ব্যথা দেই, তাহলে কি তুই মানবি?একবার বল শুধু… তোর বলতে যতটুকু দেরি আমার করতে দেরি হবে না ।”

জায়ন এর এই বাক্যে যেন তিয়াশা থমকে গেল।
জায়নের গলায় কোনো রাগ নেই, কোনো চাপ নেই।শুধু নিঃশব্দ ভালোবাসার আর্তি।চোখে একরাশ শীতল অনুরোধ… যেন সে মাফ না পেলে সত্যিই নিজের গায়ে হাত তুলবে।
“বল জান… নিজেকে আঘাত করব, ব্যথা দেব, তুই যদি বলিস নিজের জীবন টাও দিয়ে দেব , কিন্তু আমি তোর সঙ্গে বাঁচতে চাই…তুই শুধু একবার বল বউ।
এই কথার তীব্রতা এতটাই সজীব,তিয়াশার বুকের ভেতর কোথাও যেন কেঁপে উঠল।চোখের পাতার নিচে জমে থাকা অভিমানী জলটা হঠাৎ নরম হয়ে চোখের জলের রূপ নিল।আর মনে হলো, এই মানুষ টা যেমন থাকুক না কেন,ভালোবাসায় ও যে সত্যিই হেরে যেতে জানে।
হঠাৎ যেন সমস্ত অভিমানের সাঁকো ভেঙে পড়ল তিয়াশার ভিতর থেকে।চোখের কোণে জমে থাকা নীরব জলের ধারা এবার আর থামিয়ে রাখা গেল না।

চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল সবটুকু না বলা কথা, না শোনা ব্যথা।এক চিলতে থমকে থাকা নিঃশ্বাসের পর।তিয়াশা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল নিজেকে সামলাতে না পেরে দুই হাতে জায়নের বুকের ওপর বারবার আঘাত করতে লাগল।সে যেন বুঝতেও পারছে না, কী বলছে, শুধু মনের ঝাঁপ খোলা কান্নার শব্দে বলে উঠল —
“আপনি খুব বাজে… খুব, খুব… বাজে।”
গলার কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠছে, চোখে জলের ঝাপসা,

কিন্তু দুচোখে যেন জমে আছে একসাথে হাজার রকমের অনুভূতি।রাগ, কষ্ট, ভালোবাসা, বেদনা আর অনুচ্চারিত ক্ষমা। এই বলে সে হঠাৎ মাথা রাখল জায়নের বুকের উপর।সেই চেনা বুকে, যে বুক ওকে কাঁধ দিত, আশ্রয় দিত, অথচ কতবার অবহেলা করেছিল।আজ সেখানে ফের মাথা রেখে, গলা ফাটিয়ে কাঁদতে লাগল সে ।একটু যেন জায়নের বুক ভিজে উঠছে তিয়াশার ফুঁপিয়ে ওঠা কান্নায়।
এই কান্নায় ছিল এক অন্যরকম ছাপ।ভাঙা হৃদয়ের সবটুকু জমে থাকা অভিমান ধুয়ে ফেলার শেষ মুহূর্তের রঙ।জায়ন কিছু বলল না,শুধু একটুখানি মুচকি হাসল…এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে
নিজের দুই হাত জড়িয়ে নিল সেই কাঁপতে থাকা নিজের প্রাণ প্রিও রমনীকে।নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে বুকে চেপে ধরল।এমন করে —

যেন এই এক নারীকে ভালোবেসে, হাজার ত্রুটি নিয়েও,সে নিজের হারিয়ে যাওয়া পৃথিবীটা আবার খুঁজে পেল…যেন এই ছোট্ট কান্নার ভিতরেই
তিয়াশা আর জায়নের অগোছালো হৃদয় আবার গুছিয়ে এক হলো।
জায়ন কাঁধ ঝাঁকিয়ে হেসে বলল, “জান… মাফ করেছিস? একবার বল না প্লিজ…”
তিয়াশা তার বুক থেকে মুখ তুলে, ভেজা চোখে একটু সরল অভিমান নিয়ে তাকিয়ে বলল,
“এখনো করিনি… আগে কান ধরে উঠবস করেন বিশবার… তারপর ভাবা যাবে।”
জায়ন অবাক হয়ে এক পা পিছিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
“হায় হায়। আমার বউ এখন আমায় দিয়ে উঠবস করাবে? ও গড… এটাও দেখা বাকি ছিল মনে হয়।”
তিয়াশা চোখ কুঁচকে তাকিয়ে রইল, অথচ ভিতরে ভিতরে যেন গলে যাচ্ছে।
মনে মনে ভাবছে —

“এই মানুষটা এই ভাবে হা পারে কত সহজ, কত নিখাদ হাসি… আর সেই হাসির কারণ আমি…”
তবু সে কিছু বলল না, একটু দূরে সরে ঠোঁট উল্টে রাগি গলায় বলল,
“আগে করেন, নইলে আমি কিন্তু মানব না।”
জায়ন সত্যি সত্যি হাঁটু গেড়ে উঠবস শুরু করল।
তিয়াশা এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না, মুখ চেপে রেখে ফিসফিস করে হেসে ফেলল। তারপর
জায়ন উঠে এসে ধীরে তিয়াশার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে গভীর চোখে তাকিয়ে একটু গলা নামিয়ে বলল–

“ইটস ডান, কিটি… এখন বল আমি কি মাফটা পেয়েছি?”
তিয়াশা জায়নের গলা জড়িয়ে ধরল, চুপচাপ।তারপর মুখ তুলে শান্ত গলায় বলল—
“আর কখনো ভুল বুঝবেন না তো?”
“প্রশ্নই ওঠে না…”
“আর ছেড়ে যাবেন না তো?”
“তুই ছাড়া বাঁচব কীভাবে?”
“আমার কথা শুনবেন তো?”
“তুই ব্যতীত আর কোনো কথাই নেই আমার।”
“ভালোবাসেন আমায়?”
জায়ন একটু হেসে বলল,
“বলব না… শুধু প্রতিটা মুহূর্তে বুঝিয়ে দেব।”
তিয়াশা এবার হেসে বলল,
“তবু আমি বলতে চাই… আমি আপনাকে খুব… খুব ভালোবাসি…”
এই কথা শুনে জায়ন আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না।একটু এগিয়ে এসে তার ঠোঁ*ট রাখল তিয়াশার নরম ঠোঁ*টে , গভীর, অথচ অগাধ ভালোবাসায় ভরা এক চুম্বন…যেটার প্রতিটা স্পর্শে ছিল বছরের পর বছর জমে থাকা প্রেম, অপেক্ষা, ক্ষোভ… আর মাফ।

তিয়াশা ধীরে চোখ বুজে দিল।কোনো শব্দ নেই, শুধু নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসের ছোঁয়া।জায়নের ঠোঁ*ট যখন তিয়াশার ঠোঁ*ট ছুঁয়ে আসে, তখন সে কিছুই ভাবে না,
শুধু অনুভব করে নিজের বুকের ভেতর একরাশ বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে।সে আর পিছু হাটে না,বরং নিজের ঠোঁটটাও একটু এগিয়ে দেয়,আলতো করে, কিন্তু স্পষ্টভাবে সে সাড়া দেয়।
এই সাড়া যেন আগুনে ঘি ফেলে দেয়,জায়নের চোখ লালচে হয়ে জ্বলছে, ঠোঁ*টে একধরনের উন্মত্ততা।
তিয়াশার এই সাড়া, এই আত্মসমর্পণ তাকে জ্বালিয়ে দেয়, উন্মাদ করে তোলে।জায়নের হাত দুটো আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তিয়াশাকে,এবার সে থেমে থাকেনা, ঠোঁ*টের মাঝে আরেকটু গভীর চুম্বন,
তার ঠোঁ*ট নিচে গিয়ে তিয়াশার নিচের ঠোঁ*টে একরাশ কাঁপুনি তুলে দেয়,ঠোঁট বেয়ে কানে ফিসফিস করে বলে ওঠে—

“তুই জানিস না, তুই আমায় কী করে তুলিস…
তোর একটুকু সাড়া মানে আমার বুক ফেটে পড়ে যায় ভালোবাসায়… তুই আগুন, কিটি… তুই আমার পাগলামির শেষ সীমা।”
তিয়াশা এক মুহূর্ত চোখ খুলে তার চোখে চোখ রাখে,
একটা নরম হাসি, একধরনের নারীসুলভ আত্মবিশ্বাস
যেটা জায়ন কে আরও পাগল করে তোলে।তারপর সে ঠোঁট নামিয়ে দেয় তিয়াশার গলার কাছটায়,একটা দীর্ঘ চুম্বন বসিয়ে দেয় গলার বাঁ পাশে ।তিয়াশার শরীরের রোমকূপ খাড়া হয়ে যায়, শ্বাস কেঁপে ওঠে।
সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে– “রাস্তায়… সবাই দেখবে…”
তারা যে এখনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে, সেটা খেয়াল হলো এক ঝলকে।হঠাৎ জায়ন তিয়াশার হাত ধরে দ্রুত বেগে বাইকের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল

তিয়াশা একটু চমকে উঠে বলল–
“আরে এত তাড়া কিসের? আস্তে , হাতে ব্যথা পাচ্ছি তো”
জায়ন ফোন বের করতে করতে ফিস ফিস করে বলে উঠল —
“আমি আর পারছি না জান, আই এম কন্ট্রোললেস… আজ বাসর না সারলে পাগল হয়ে যাব…”
তিয়াশা মাথা নিচু করে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিল।
বাসর শব্দটা শুনেই তার গাল লাল হয়ে গেছে।তিয়াশা একটু ভয় পেয়ে লজ্জায় গুটিয়ে গেল মনে মনে এই বাসর এর কথা ভাবতেই যেন গাঁ হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে । তিয়াশার এই অবস্থা দেখে জায়ন বলে উঠলো —
” জান এইসব লজ্জা আজকে তোকে বিসর্জন দিতে হবে । এতদিন অনেক জলিয়েছিস আর না । ”
তিয়াশা কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছে না । এর মধ্যেই জায়ন কাউকে একটা ফোন লাগালো , ওদিক দিয়ে ফোন রিসিভ হতেই জায়ন বলে উঠলো
” জেমস কুইকলি আমার বাসায় বাসর থিম লাগবে , ব্যবস্থা কর ঘণ্টা খানেক এর মধ্যে।”
তিয়াশার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ,
মনে মনে ভাবছে —

” কোনো পুরুষ এরকম বেহায়া হতে পারে ।”
তিয়াশা এই ভাবতে ভাবতে নিজের মুখ খুলে বলেই ফেলল–
” আপনার কি লজ্জা সরম নেই ? এই ভাবে কেউ নিজের বাসর এর কথা বলতে পারে ।”
জায়ন এবার তিয়াশার হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে বলল
” আমি করব আমার বউ এর সঙ্গে বাসর এতে লজ্জা কিসের । ”
এই বলে ঘুরে বাইক স্টার্ট করতে লাগল ।তিয়াশা মনে মনে বিরবির করছে –
” একটা অসভ্য লোক। আল্লায় যানে আমার সঙ্গে কি করবে ।”
“জান তারাতারি বস নইলে কিন্তু এখানেই আমায় বাসর সারতে হবে । ”
জায়ন এই কথা বলতেই তিয়াশা তারাতারি বাইক এ উঠে বসল ।
জায়ন নিজে নিজেই বলতে লাগলো —
” জান একদম সাপের মত জরিয়ে থাকবি এখন । ওহ গড রাস্তা টা তারাতারি শেষ হয় যেন ।”
তিয়াশা মনে মনে ভাবছে —
” এই লোক কি পাগল হয়ে গেল।”
হঠাৎ করেই জায়নের পকেটের ভেতর ফোনটা বেজে উঠলো।
সে একটু বিরক্ত মুখে ফোনটা বের করতেই চোখটা ছানাবড়া হয়ে গেল।স্ক্রিনে নাম দেখে তৎক্ষণাৎ বলে উঠল–
” বউ তোর শ্বশুর আব্বু কল দেয় কেনো ?”
তিয়াশা ও যেন চমকে উঠলো , এক মুহূর্ত থেমে বলে উঠল —
” আরে তারাতারি কল টা ধরবেন তো। কিছু হয়েছে হয়তো ”
তিয়াশার কথায় জায়ন আর দেরি না করে রিসিভ করল , ওপাশ থেকে গম্ভির স্বরে প্রান্তিক সাহেব বলে উঠলেন —
” কোথায় আছো?”

জায়ন মুহূর্তে যেন নিজের অতীতে হারিয়ে গেল।
এতদিনে এই মানুষটা একটিবারও ফোন করেননি তাকে।আজ হঠাৎ করেই এই ফোনের মানে কী?
নিজেকে সামলে নিয়ে একটু গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো —
” রাস্তায় আছি , বাসায় ফিরব । ”
ওদিক দিয়ে প্রান্তিক সাহেব বলে উঠলেন —
” আচ্ছা , তোমার মা কথা বলবে , কথা বলে নাও ।”
এই বলেই ওদিক থেকে মেহজাবীন বেগম বলে উঠলেন —
” বাসায় ফিরতে হবে না , মেজো আম্মু কে নিয়ে এই বাসায় চলে আসো এক্ষুনি ।”
জায়ন চমকে উঠলো , মনে মনে ভাবছে ওই বাসায় যাব মানে ? কি করতে ? আমার আজ ওই বাসায় গেলে চলবে না, নিজের ভাবনা কে নিজের মায়ের সামনে তুলে ধরার জন্য বলে উঠলো —
” কি হয়েছে মা? ফোনে বলো আমাকে। এখন আমায় বাসায় ফিরতেই হবে । এখন যেতে পারবো না। ”
মেহজাবীন বেগম করা কন্ঠে বলে উঠলেন ,

” তোমার মতামত জানতে চাইনি,যেটা বলেছি সেটা করো। এসে আবার চলে যেও কিন্তু আসতেই হবে।”
এই বলে ওইদিক থেকে কল কেটে গেলো।
জায়ন মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল।মায়ের এই আচমকা রূঢ় সুর, যা সে কোনোদিন শোনেনি।জায়ন কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে বাইকের উপর বসে রইল।এতদিনের চেনা মানুষটা আজ এমন রূঢ় কেন?
এই সময় তিয়াশা তার পেছন থেকে উৎসুক গলায় বলে উঠল–
“কি হয়েছে বলবেন তো? আপনি এমন চুপ কেন?”
জায়ন মুখটা কিছুটা কালো করে পেছন না তাকিয়েই বলল–
ওই বাসায় যাওয়ার আদেশ এসেছে তোর শ্বাশুড়ি আম্মুর থেকে বুঝলি।তাই তুই আরেকটু সময় পেয়ে গেলি।নিজেকে তৈরি করে নে আজ রাতে বাঘের বাচ্চার
শিকার হওয়ার জন্য ।”

এই বলে মুখে একটা শয়তানি হাসি টেনে জায়ন বাইক স্টার্ট করলো।তিয়াশা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে জায়নের পিঠে এক জোরাল চিমটি কেটে দিলো —
“অসভ্য বেহায়া লোক একটা। জীবনে সুধরাবেন না আপনি।”
জায়ন যেন এই চিমটিটাও উপভোগ করলো, হেসে হেসে বলল–
“তুই আমার বউ, আজ থেকে তোর সব কথা শুনবো জান কিন্তু শুধু দিনে , রাতে শুধু তুই আমার শুনবি।
এখন রাত তাই তুই বেশি কথা বলিস না। আজ দেখাবো ‘অসভ্যতামির No-Limit Credit Card’।”
তিয়াশা রাগে ফুঁসতে লাগলো।
কিন্তু ভেতরে কোথায় যেন লুকিয়ে থাকা একটা হাসিও দমকে আছে।
এক ভালোবাসার রাতের আলোয় শহরের রাস্তা ধরে এগিয়ে চললো দুজন…একটা অচেনা রাত,একটা চেনা ভালোবাসার দিকে।

চৌধুরী বাড়ির ফটকের সামনে বাইক থামাতেই জায়ন ধীরে ধীরে নামল।পেছনে বসে থাকা তিয়াশা একবার দৃষ্টি ছুঁইয়ে দেখল নিজের চেনা উঠোন, চেনা দেয়াল, চেনা দরজা।কতদিন পর নিজের বাসায় ফেরা…
এই বাসার প্রতিটা ইট, প্রতিটা ঘ্রাণ যেন তার শৈশব, কৈশোর আর হাজারো স্মৃতিকে একসাথে টেনে নিয়ে এলো চোখের সামনে।
তিয়াশার বুকের ভেতরটা হঠাৎ করে ভরে উঠলো এক অপার্থিব শান্তিতে।কিন্তু সেই শান্তির কাচে হঠাৎ ছোপ লাগল,জায়ন যখন তার হাত ধরে এগিয়ে এলো সদর দরজার সামনে, খনই সামনে থেকে এক দৃঢ়, কঠিন কণ্ঠস্বর–
“দাঁড়াও।”

তিয়াশা থমকে দাঁড়াল।জায়ন সামনে তাকাতেই চমকে উঠল।এই কণ্ঠস্বর কি সত্যিই?মেহজাবীন বেগম।
যার গলায় তারা বরাবরই শুনেছে স্নেহ, নরম কোমলতা, সেই মানুষটাই আজ যেন রূপ পাল্টেছে।
প্রান্তিক সাহেবও চুপচাপ একপাশে বসে আছেন ,
তাঁর চোখে শূন্যতা।
মেহজাবীন বেগম এবার দৃঢ় অথচ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন —
“মেজো আম্মু, ঘরে ঢুকে পর।”
তিয়াশা এগোতেই, জায়ন ও সঙ্গে সঙ্গে তার হাত ধরে, একসাথে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে, কিন্তু আবার সেই ঠাণ্ডা ধমক —

“আমি মেজো আম্মুকে বলেছি, তোমাকে না।”
এই কথা যেন পুরো ড্রইং রুম জুড়ে এক বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দিল।সবাই নিস্তব্ধ।তিয়াশার চোখ বড় হয়ে উঠলো।
জায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল।
জায়ন এবার ধীরে ধীরে তিয়াশাকে নিজের কাছে টেনে নিল।তার চোখের ভাষায় যেন ঝড় আসন্ন–
“মা, আজ নাটক না।আমি খুব ক্লান্ত ।হয় আমরা একসাথে ঢুকবো,নয়তো আমি আমার বউ নিয়ে এখান থেকেই চলে যাবো।”
তিয়াশা ভয়ে কাঁপছে, এই পরিবেশ সে বুঝতে পারছে না কি করবে একদিকে পরিবার একদিকে স্বামী , পড়েছে মহা জ্বালায়।জায়নের হাত শক্ত,আর তার মার গলাও এখন খাঁটি ইস্পাতের মতো–

“এই মুহূর্তে মেজো আম্মুর হাত ছাড়ো,
নাহলে তোমার হাতটা আমি নিজে ভেঙে দেব।”
তিয়াশা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও জায়ন আর কিছুতেই ছাড়ছে না।বিরক্ত হয়ে জায়ন বলল–
“মা, আমি ক্লান্ত, প্লিজ। আমি শুধু আমার বাসায় ফিরতে চাই।”
“ফিরো। কিন্তু একা। মেজো আম্মুকে রেখে। আট দিন পরে আসবে তুমি। ও এই কদিন এখানেই থাকবে”
জায়নের কণ্ঠ এবার কাঁপছে রাগে —
“মানে কি আমার বউ আমি এই বাসায় কেন রাখবো আট দিন ? আমি এক মিনিট ও কোথাও রাখবো না আমার বউ কে যেখানে আমি নেই ।”

তারপর তিয়াশার দিকে ফিরে নরম গলায় বলল– “চল বউ।”
ঠিক তখনই মেহজাবীন তিয়াশাকে সরাসরি লক্ষ্য করে বললেন– “মেজো আম্মু, তুমি ঘরে ঢোকো।
তোমাদের বিয়ে আমরা আবার আনুষ্ঠানিকভাবে করাতে চাই। আট দিন পর। এখন তুমি ঠিক করো-
তোমার স্বামীর সঙ্গে যাবে, নাকি এই বাড়িতে থাকবে।”
তিয়াশার চোখে জল চলে এলো।তবে কি বাসার সবাই তাদের মেনে নিচ্ছে?তবে কি এই যুদ্ধের পর, সে স্বীকৃতির পথে হাঁটতে পারছে?
সে আস্তে আস্তে জায়নের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইল।
জায়নের কণ্ঠ মুহূর্তেই ধমকে উঠল —
“বউ, কি করছিস?”

তিয়াশা মুখ নিচু করে ফিসফিস করে বলল– “আমি বাসায় যাব।”
জায়ন রেগে গিয়ে গর্জে উঠে নিচু স্বরে বলল —
“হ্যাঁ, যাবো তো সোনা আমাদের বাসায়। আমায় আজ বাসর করতে হবে।”
তিয়াশার এবার প্রচন্ড রাগ উঠতে লাগল , মনে মনে ভাবছে —
” বেহায়া লোক এই পরিস্থিতি তেও বাসর বাসর করে যাচ্ছে ।”
লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিয়ে হঠাৎ জোর করে হাত ছাড়িয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল।তিয়াশা হাত ছাড়িয়ে নিয়েছে বুঝতেই জায়ন ও যেতে চাইলে কিন্তু মেহজাবীন আটকে দাঁড়ালেন–
“তুমি কোথায় যাচ্ছো? নিজের বাসায় যাও।”
সেদিকে কান না দিয়ে জায়নের কণ্ঠ তীব্র হয়ে উঠল–
“রোদ, এক্ষুনি বাইরে আয়। খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
তিয়াশা দাঁড়িয়ে, অনন্যার পাশে চুপচাপ।
এইবার প্রান্তিক সাহেব মুখ খুললেন–

“তোমার মা বলেছে তো, বিয়ে আবার হবে।তাহলে এত সমস্যা কোথায়?”
জায়ন হালকা বিরক্তিতে ফিসফিস করে বলল–
“সমস্যা তোমার বউ। আমার বউ নিয়ে টানা টানি করছে । আমার বউ দিয়ে দাও সমস্যা করছি না।”
তার চোয়াল শক্ত , রাগে ফুসে উঠছে দাঁতে দাঁত চেপে , ঠোঁটে ঝড় নিয়ে বলে উঠলো —
“বাবা, এখনই বিয়ে দিয়ে দাও না। আমি অপেক্ষা করতে পারছি না।”
পাশ থেকে তাহসান সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন–
“তুই পাগল হয়ে গেছিস? এই মুহূর্তে বিয়ে হয়?”

এদিকে জায়ন এর কাণ্ড দেখে আকাশ, ইউভি, রায়ান, অনন্যা সবাই হাসি চেপে রাখার ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত।
এবার জায়ন কোমরে দুই হাত দিয়ে মেহজাবীন বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো —
“মা, আমার বউ দিয়ে দাও।আমি আট দিন পরে এসে আবার বিয়ে করবো। নাহলে আমাকে এখানেই থাকতে দাও।”
মেহজাবীন বেগম এবার হতাশ হয়ে পড়লেন, এই ঘাড় ত্যাড়া ছেলে কে সোজা করবে কি করে? এই ছেলের মুখে কি আর লাগাম পড়বে কোনোদিন?

“এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাও।
এই ক’দিন যেন তোমাকে এই বাড়ির আশেপাশে না দেখি।”
এই বলেই মেহজাবীন বেগম সদর দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দিলেন জায়নের সামনে।
জায়নের রাগে চোখ লাল।চিৎকার করে উঠল–
“মা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু ।”
“বাবা, তোমার বউ আমার বউ নিয়ে কেন হিটলারি করছে?”
“আমার বউ দিয়ে দাও।”
“রোদ, বাইরে আয়।”
সে সদর দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে চিৎকার করে উঠল
“ও মেজো মা ছোট মা দরজা খোলো।”
কেউ দরজা খুলছে না।
” বউ বাইরে আয় কিন্তু।”

“মা, আমার বউ দাও।নইলে আমি কিন্তু কোর্টে মামলা করে দেব।”
জায়ন নিজের চুল চেপে ধরছে রাগে।
পকেট থেকে ফোন বের করে ইউভিকে কল করল–
ফোন রিসিভ হচ্ছে না।আকাশ, রায়ান, অনন্যা–
সবার নামেই ফোন দিচ্ছে, কিন্তু সবাই যেন আজ একজোট হয়ে জয়ন্তিক বঞ্চিত করছে।
” সব শা** আমার বিয়ের আর বাসর এ চন্দ্রবিন্দু
লাগিয়ে দিল ।”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪৪

একটা পরাজিত হাহাকারের মতো
চৌধুরী বাড়ির ফটকে দাঁড়িয়ে রইল জায়ন
নির্মম দরজার এপাশে।
মনে মনে বিড়বিড় করছে —
” রোদের বাচ্চা পাই তোকে দেখাবো মজা।”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here