তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫
নীল মণি

চুপি চুপি কেটে গেছে চৌধূরী বাড়িতে প্রায় অনেক গুলো দিন। সময় টা খুব বেশি কিছু বলে যায়নি আবার একেবারেই নীরব ও ছিল না। সকালের ভেতরে ছিল বেলার হাঁসফাঁস, বিকেলের রোদে ভেসে বেরিয়েছে হাসির আওয়াজ,আর রাতগুলো যেন জমা রেখেছে কার কার চুপ করে চেয়ে থাকা চোখের ভাষা।
কিন্তু কালের হিসেবের কিছু অনুভব থেকে যায়, যেগুলো দিনের শেষে চুপ করে বসে থাকে সিঁড়ির ধাপে।
প্রতিটা ধাপে , কারও নিঃশ্বাসের সথে যেন জমে উঠেছে না বলা কথা , অদ্ভুত এক টান।

এই কয়দিনে তিয়াশা আর জায়ন এর মধ্যেও কোন তেমন ও কথা হয়নি। জায়ন নিজে থেকেই তিয়াশা কে
উপেক্ষা করে চলছে, তার মনের ভেতরে কোথাও একটা নতুন অনুভূতি কুঁকড়ে উঠেছে, কিন্তু সে নিজেই চেষ্টা করছে সেটা উপেক্ষা করে যেতে, নিজে থেকেই সে যেন ইচ্ছে করে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, নিজের মন কে উপেক্ষা করে ভবিষ্যতে এর নিয়তি কে গ্রহণ করে নিয়ে বৃষ্টির সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করছে।
আর এদিকে তিয়াশার এক্সাম ও প্রায় শেষ , আর একটা এক্সাম বাকি আছে, এরই মাঝে বদলেছে অনেক কিছু, মনের মাঝে কিছু যেন জমে ভার হয়ে আছে, তার এই কিশোরী বয়সের যে অনুভূতির আবির্ভাব ঘটেছে তার নাম তার নিজের ও জানা নেই ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু জয়নের সেই উপেক্ষা, অবজ্ঞা, চোখের সেই অনাগ্রহ তিয়াশার মনের আবেগ এর পরিমান আরও বাড়িয়ে তুলেছে ,বুকের মাঝে জমা হচ্ছে এক নতুন বেদনা দায়েক ব্যথা। তার এই সব টা অনুভূতি নিয়ে জড়িয়ে আছে তার নির্দয় জায়ন ভাই , তার নিজের আপন আপুর বাগদত্তা।
মনে মনে ভাবতে লাগল ,
“না তার এই কিশোরী মনের যে অনুভুতি তৈরি হয়েছে এটা অনুভুতি নয় এটা হারাম , এটা পাপ” কিন্তু এই পাপ কে সে উপেক্ষা করবে কি করে?

তার এই মনের মাঝে যে জটিল ঝড় বয়ে চলেছে , এই ঝড়ের কথা সে তার বেস্ট ফ্রেন্ড আরোহী কেও জানিয়েছে। সে জানিয়েও মরেছে, কারণ যখন ই আরোহীর সঙ্গে দেখা হয় তখন ই মজা করে…
এই তো সেদিন তার আম্মুর ফোন এ ফোন করে কথা বলা কালীন ও কত মজা ওড়াল তিয়াশার…..
আজ শুক্রবার ছুটির দিন , সবাই মিলে আজ বাড়িতেই আছে। সকাল সকাল পরিবারের সব মেম্বার ও নাস্তার টেবিলে বসে পড়েছে , পরিবেশন করছেন রোজ কারের মত বাড়ির গৃহিণীরা । সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আজকে দুপুরে আবরার জায়ন এর বৃষ্টির বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হবে,দুপুরের আগে আয়েশা বেগম ও তার স্বামী ও আসবে , এমন কি বিয়ের সব অনুষ্ঠান রঙমাটি জেলার বাগান বাড়িতেই হবে।

কিন্তু এইসব সিদ্ধান্তে কারো মনে যেন অজস্র ঝড় বেয়ে চলেছে, তার নিজের আপুর বিয়ে তার তো খুশি হওয়ার কথা , কিন্তু সে কেন পারছে না খুশি হতে, গলার কাছে কিছু বাঁধছে খেতে পারছে না, কিন্তু কেন?
এরই মাঝে প্রণয় আলী তার ছোট মেয়ে তিয়াশর উদ্দেশ্যে বলে উঠল —
” আম্মু কি হয়েছে কিছু খাচ্ছ না কেন? শরীর খারাপ লাগছে? বল আমায়”
এইদিকে মেহজাবীন বেগম বলে উঠলেন
” মেজ ভাই আজ প্রায় অনেক দিন ধরেই ওর খাওয়া দাওয়ার এরকম অবস্থা, মেয়ে টা এমনই এত রোগা পাতলা তার উপর কিছুই খায় না।”
এদিকে জায়ন এর চোখে কিছুই এড়ায় না সে রোজ রোদ এর সব কিছুতে নজর রাখে , কিন্তু আজ গুরু গম্ভীর আওয়াজ করে বলেই
উঠল —

” মা , মেজো মা , ছোট মা রোদ না খাইতে চাইলে জোর করে খাওয়াবে , যতক্ষণ না খাবার শেষ করবে ততক্ষণ বসিয়ে রাখবে”
এদিকে রোদ চুপ চাপ সব শুনছে আর কোন দিকে না তাকিয়েই , তার আব্বুর উদ্দেশ্যে বলল
” না আব্বু আমি ঠিক আছি।”
তার পর বলে উঠল
“আব্বু আজ একটু দুপুরে সে আরোহী দের বাড়ি যাব, আমরা দুজনে একসঙ্গে ওদের বাড়িতে পড়বো, যাব আব্বু?”
প্রণয় আলী কিছু বলতে যাবে তার আগেই জায়ন কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে
” কোন দরকার নেই, পড়তে হলে বাড়িতে বসে পর ওকে ডেকে নিয়ে আয়, তোর যাওয়া হবে না।”
তিয়াশা উত্তর দিল
” আমি ত আব্বু কে জিগ্গেস করেছি, আব্বু , বড় আব্বু প্লিজ যাই না আজকে বাড়িতে অনেক লোক আসবে আমার পড়া হবে না”।

এদিকে এই শুনে জায়ন এর মনে মনে রাগ উঠে গেল।
রূহেনা বেগম বলে উঠলেন
” জায়ন বাবা তো ঠিক ই বলছে, তোর পড়ার হলে তুই বাড়িতে পর”।
তারপর প্রান্তিক সাহেব বলে উঠলেন
” আচ্ছা বৌমা তোমরা থাম না, ও যেতে চাইছে যাক আর হ্যাঁ তো বিয়ের কথা বার্তা হবে ও ছোট মানুষ থাকার কোন দরকার নেই।”
তারপর আবার বললো
” মা যা তুই , আবরার তোকে দিয়ে আসবে “।
এই শুনে তিয়াশা খুশি হল একটু
এদিকে আবরার জায়ন বলে উঠল
” বাবা আমার কাজ আছে আমি পাড়ব না”।
প্রান্তিক সাহেব জবাবে বললেন
” কাজ পড়ে কর, ১৫, ২০ মিন এ তুমি কৃতিত্ব করবে না, ওকে দিয়ে আসবে।”
এবার আর জায়ন না করতে পারল না।

এর মধ্যে ইউভি তার বড় আব্বু, আব্বু, চাচার উদ্দেশ্যে বলে উঠল
” বড় আব্বু, আব্বু আমাকে দুদিন এর জন্য রাঙ্গামাটি যেতে হবে , যেহেতু অনুষ্ঠান ওখানেই হবে তাহলে আমি আর আকাশ গিয়ে দেখে আসি, এই দুদিন না হয় ভাই অফিস টা একটু দেখুক, ভাই এর তো এদিকে প্রয়োজন , আমি ভাই এর সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছি , এবার আপনারা যদি অনুমতি দেন…”
প্রান্তিক সাহেব বলে উঠলেন
” বেশ তো খুব ই ভাল সিদ্ধান্ত, এই সুযোগে জায়ন ও অফিস টা দেখে নেবে ।”
সবাই আবার খাওয়া শুরু করল আর এদিকে জায়ন আর চোখে বার বার রোদ এর দিকে তাকাচ্ছে। এদিকে
অনু আর রায়ান খাবার এর টেবিল এও খুনসুটি করে যাচ্ছে ।
হঠাৎ বৃষ্টির ফোন টা বেজে ওঠে ,
বৃষ্টি বলে উঠল —

” আম্মু ভার্সিটি থেকে এক ফ্রেন্ড কল করেছে ওর কিছু নোটস লাগবে , আমি উপরে গেলাম ।”
রুহেনা বেগম হ্যাঁ সূচক সম্মত্তি জানিয়ে দিল।
তারপর প্রান্তিক সাহেব বললেন তিয়াশার উদ্যেশ্যে
— ” তো আম্মু কি চিন্তা ভাবনা নিলে, কোন কলেজে এডমিশান নেবে ?”
প্রণয় আলী বললেন
” আরে ভাইয়া এখন তো এক্সাম ই শেষ হয় নি, রেজাল্ট তো হতে পাক।”
তাহসান আলী বললেন —
” আরে ভাইয়া আমাদের রোদ ভাল রেজাল্ট ই করবে, টেনশান তো আমার এই রায়ান টাকে নিয়ে হয় পরের বার ওর আর অনুর ও তো এক্সাম , অনু কে নিয়ে টেনশান নাই বাট এই বেটা যে কি করবে?”
রায়ান বলে ওঠে –

” আব্বু অল ইস ওয়েল, নো টেনশান ”
এই সুনে সুরাইয়া বেগম বলে –
” রাখ তোর অল ইস ওয়েল, পরার নামে খোজ নেই ।”
এই শুনে সবাই হেসে উঠল,
প্রান্তিক সাহেব হাসতে হাসতে বললেন —
” হ্যাঁ ছোট ভাই ঠিক ই বলেছে রে প্রণয় তিয়াশা কে নিয়ে কোন চিন্তা নেই, তো আম্মু বল কোন কলেজে এ এডমিশান নেবে? ”
তিয়াশা বলে ওঠে —
” বড় আব্বু আপনারা যদি অনুমতি দেন তাহলে , আমার বান্ধবীরা সবাই ঢাকা কোয়েট কলেজে এডমিশান নেবে আমি নিতে পা…….. !!!

বাক্য সম্পূর্ণ হতে পারল না তার আগেই কেউ টেবিল থেকে উঠে হাত টা টান ধরে উঠিয়ে ঠাসিয়ে এক থাপ্পর লাগিয়ে দিল, তিয়াশ সামনে তাকিয়ে দেখে জায়ন এর চোখ রাগে রাগে জল জল করছে , যা দেখে তিয়াশ ভয়ে কেঁপে ওঠে , বাকি সবায় ও ভেবে ওঠে কি হল এটা? রায়ান আর অনু ও কাপছে ভয়ে , ইউভি ও এগিয়ে আসল ।
মুখে আঙুলের ছাপ জল জল করছে ,
তারপর জায়ন বলে ওঠে –

” আরেকবার বল কোন কলেজে এডমিশান নিবি, কোয়েটে কলেজে ? খুব সাহস বেড়েছে না তোর , হাত পা ভেঙে না বাড়িতে বসিয়ে রাখবো।”
প্রান্তিক সাহেব মেহজাবীন বেগম এর উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে
” তোমার ছেলের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই বিষয় নিয়ে কেউ মারে , এই জায়ন তুই ওকে মারলি কেন?”
মেহজাবীন বেগম ও বলে উঠলেন –
” বাবা তোর শুধু হাত চলে কেন বলত
মুখেও তো বলতে পারতি।”
এদিকে জায়ন এর রাগে মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে, আর তিয়াশা কান্না করেই যাচ্ছে।
প্রণয় আলী সাহেব ও কিছু বলতে পারছে না যতই হোক বড় ভাইয়ের বড় ছেলে তাদের নিজেদের খুব অন্তরের ছেলে ।
রূহেনা বেগম বললেন —

” থামেন তো আপা একদম ঠিক করেছে , কত সাহস এই মেয়ের ওর আপু যেখানে মহিলা কলেজে স্কুল এ পড়েছে , সেখানে ও কি করে ভাবে কোয়েট কলেজে এডমিশান নেবে।”
জায়ন এবার ওর মায়ের উদ্দেশ্যে রেগে বলে ওঠে —
“এই তোমাদের আশকারা তেই ও এত বিগড়েছ, ওর চিন্তায় আসল কি করে, সাহস কত বেড়েছে চিন্তা করেছ, কে কোথায় এডমিশান নিল বা না নিল
আমার জানার দরকার নেই ,…
ও যেন মহিলা কলেজে ই এডমিশান নেয় , এই আমি বলে রাখলাম । ”
এই চিৎকার চেঁচামেচি তে বৃষ্টি ও নিচে চলে আসে
জায়ন তারপর ইউভি র উদ্দেশ্যে বলে —

” তোর বোন কে এখন শুধরাতে বল, সাবধান হতে বল। আর উপরে আয়”
ইউভি জবাব দিল–
“জী ভাইয়া”
জায়ন গটগট করে উপরে চলে যায়।
এদিকে রোদ ভ্য ভ্যা করে কেঁদে যাচ্ছে —
সুরাইয়া বেগম বললেন –
” কাদিস না মা, তুই বা কেন এটা বলতে গেলি বলত?”।
তিয়াশা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলল —
” আমি কি জানতাম নাকি, ”

এই বলে দৌড়ে নিজের রুম এ চলে গেল, বালিশে মুখ বুজে কান্না করতে করতে বির বির করল —
” বাঘের বাচ্চা শুধু ওর ঐ বাঘের থাবার মত হাত
দিয়ে মারা শুরু করবে, বদমাশ ইবলীস লোক ”
ব্যালকনি তে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেট এর ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে কিছু ভাবছে , চোঁখ গুলো এখন র**ক্তে রাঙ্গা লাল হয়ে আছে,
হঠাৎ ইউভি এসে দাঁড়াল —
” ভাইয়া কি হয়েছে তোমার, এত রেগে গেলে কেন? এটা তো আমরা অন্য ভাবেও সামলাতে পারতাম”
জায়ন ওর দিকে না তাকিয়ে ই বলতে লাগল
” তোর বোন আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে দিন কে দিন, আমি জানি না কি ভাবে সামলাব নিজেকে”
ইউভি কিছু একটা ভেবে বলল —

” হ্যাঁ,বৃষ্টি আবার কি করেছে ভাইয়া? আমি ওর সঙ্গে কথা বলব?”
জায়ন রেগে বলে দাঁতে দাঁত পিষিয়ে বলে উঠল —
” গাধার বাচ্চা আমি রোদ এর কথা বলছি”।
ইউভি বলে উঠল –
” ও আচ্ছা আচ্ছা, ছারো ভাইয়া ও ছোট মানুষ কি বলতে কি বোলে ফেলেছে”
জায়ন আবার ও উপরের দিক তাকিয়ে ধোঁয়া টেনে বির বির করে বলল —
” ছাড়তেই তো পারছি না, ওটাই তো চাচ্ছি।”
ইউভি বলল — ” কিছু বললে ভাইয়া ”
জায়ন উত্তর দিল –
* না”
জায়ন আবার ও ইউভি র দিক তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে
ইউভির কাধে হাত দিয়ে বলল —

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪

” কি যেন বললি তোর বোন ছোট? তাহলে অনু কি?
অনু তো রোদ এর থেকে ১ বছরের ছোট তাহলে?
ইউভান কিছু না বুঝে থত মত খেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে একটু হেসে বলল —
“ইয়ে মানে ভাইয়া, হি হি বোঝোই ত”
জায়ন ও বির বিরল –
” তাহলে তুই ও বোঝ”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here