তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭১

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭১
নীল মণ

তিন ঘন্টা আগে ~~
জায়ন বিকেলে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। ঘরজুড়ে ছড়িয়ে আছে তার চিরচেনা সেই বিদেশী পারফিউম ‘ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান’এর গাঢ় সুবাস যা যেন মুহূর্তেই চারপাশের বাতাসকে দমবন্ধ করে দেয়। তিয়াশার বুকের ভেতরটা হঠাৎ জ্বলে উঠছে আগুনে, তার ভেতরে ভেতরে দহন যেন আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়ছে, কিন্তু মুখে সেটা একফোঁটাও ধরা দিচ্ছে না। যেন সে নিজেকে অদৃশ্য দেয়ালের আড়ালে আটকে রেখেছে কিন্তু বুকের ভেতরে চাপা আগুনে সে একেবারেই কেঁপে উঠছে।
জায়ন আয়নার সামনে একটু ঝুঁকে চুলে হাত চালিয়ে সেট করতে করতে গুনগুন করছে আজকে সে যেন অস্বাভাবিক খুশি। তার লম্বা দেহটা এতটাই উঁচু যে আয়নার সামনে না ঝুঁকলে নিজের মুখটাই ঠিকমতো দেখতে পায় না। হঠাৎ সেই অস্থির নীরবতা ভেঙে এলো তিয়াশার কণ্ঠে।

__” বর তুমি তো যাবেনা বলেছিলে , এখন এত খুশি দেখে তো মনে হচ্ছে তোমার ও ইচ্ছা আছে । আর এরকম রেডী হয়েছো মেয়েরা দেখলে তো চোখ সরাবেই না ।”
কথাটা শোনামাত্রই জায়নের খুশি মুখটা যেন মুহূর্তেই চুপসে গেল। চুলে হাত চালানো থেমে গেল, আয়নার সামনে খাড়া দাঁড়ানো হাতের ভঙ্গিটা হঠাৎ থমকে গেল। ভেতরে ভেতরে সে মনে মনে ভাবল,
__” এই রে এখন যদি মানা করে দেয় ?”
সে ধীরে ধীরে পেছন ফিরে তাকাল, দেখল তার বউ ভ্রূ কুঁচকে বসে আছে। জায়ন গলা খাকরে ব্লেজারের কলার ঠিক করতে করতে অস্বস্তি গোপন করার চেষ্টা করল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

__” আরে ছিল না তো ইচ্ছা ,তুই বললি তাই নইলে থোরি যেতাম? বউ তুই কি চাস তোর বর সবার মধ্যে খারাপ লাগুক? আর যেখানে যাচ্ছি রেডি না হয়ে গেলে মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে ।”
তিয়াশা বিছানায় বসে ম্যাগাজিন উল্টে দেখার ভান করছিল, কিন্তু তার চোখে জ্বলজ্বলে একরকম বিদ্রোহের ছাপ। একটু কি ভেবে আবারো হালকা গলায় বলল,
__” ওওও আচ্ছা , তা কোথায় যাচ্ছ ?”
জায়ন এবার শার্টের বোতাম ঠিক করতে করতে অনায়াস ভঙ্গিতে বলে উঠল,
__” দা ওয়েস্টিন বউ , কেন জান?”
__” না এমনি বর, খুব ভালো করে এনজয় কোরো।”
জায়ন এবার ধীর ভঙ্গিতে কাছে এসে তিয়াশার গালে হাত বুলিয়ে দিল। তার গলা হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল, যেন নিজের আসল আবেগ চাপতে চাইছে।

__” আমি আর কি এনজয় করবো বউ , আমার এনজয় তো একমাত্র শুধু তোর সঙ্গে অনুভব করি ।”
এই বলে সে হালকা করে তিয়াশার গালে চুমু খেল, তারপর আবারো ফিসফিস করে বলল,
__” তারাতারি চলে আসবো । রুম থেকে বেরোবি না ,
সামনে বাড়িতে বিয়ে ,লোকজন আসতে থাকবে মনে থাকবে তো ?”
তিয়াশার বুকের ভেতর যেন মাটির নিচে চাপা আগুন আরও দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। তার মনে হচ্ছিল এই নাইটকবাজ লোকটার মাথাটা ফাটিয়ে দেয় কী বেয়াদপভাবে সে সবকিছুর নিয়ম বানিয়ে দিচ্ছে! কিন্তু উপর থেকে তার মুখে মিষ্টি হাসি লেগেই রইল। মনে মনে সে বিড়বিড় করে আওড়াল,

__” নিজে দুনিয়া চষে বেড়াবে আর আমি যেন রুম থেকে না বেরোই বাহ কি ফর্মুলা । আজকে তোমায় এমন ফর্মুলা দেখাবো না ।”
জায়ন হঠাৎ থেমে তিয়াশার মুখের দিকে তাকাল, ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করল,
__” কিছু বলছিস বউ?”
তিয়াশা নিজের ভেতরের রাগ যাতে প্রকাশ না পায় তাই খিলখিল করে হাসি দিয়ে বলে উঠল,
__” আরে কিছু না তুমি তাড়াতাড়ি যাও , লেট হয়ে যাচ্ছে তো ।”
আর কোন কথা না বাড়িয়ে জায়ন মৃদু হাসি দিয়ে তার বউয়ের মুখে কয়েকটা চুমু দিয়ে টেবিল থেকে ফোন তুলে নিল, তারপর দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
জায়ন বেরিয়ে যেতেই তিয়াশা যেন মুহূর্তেই ভিন্ন মানুষ হয়ে গেল। তার হাত কাঁপতে কাঁপতে ফোনটা বের করে দ্রুত গ্রুপ কলে জয়েন করল। কলে ছিল বৃষ্টি, আরোহী, পরি, রুবিনা আর অনু। যদিও অনু তিয়াশার মাত্র দুটো রুম পাশেই থাকে, তবুও উত্তেজনায় সেও কলে যোগ দিল। কল রিসিভ হতেই সবার আগে বৃষ্টি বলে উঠল,

__” বনু তোর দুলাভাই এখনো রেডি হচ্ছে , তাই ফোন
টা নিয়ে বাইরে চলে আসলাম ।”
বৃষ্টির কথার পরপর ই পরি ও বলে উঠলো,
__” জেমস বেরিয়েছে পাঁচ মিনিট হয়েছে বৃষ্টি আপু , তাই আমিও রেডি হওয়ার জন্য বসে আছি।”
এতসব পরিকল্পনা দেখে রুবিনা ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ফেলল,
__” আমি ই ভালো আছি বাবা , আমার বর ও নাই আর
এসব ঝামেলাও নাই। শুধু এক ঝামেলা উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল এখন দেশে এসে শান্তি সেই উটকো ঝামেলাও নাই ।”
রুবিনার কথায় আরোহী বিরক্তি হয়ে বলল,

__” এ রাখ তো তোর ফাও কথা , দুদিন বাদে কাজিনের লগে আকদ সারতাছিস দুদিন বাদে তোর এই বচন দেখবো কোথায় থাকে। আর তুই কোন ঝামেলা বাধায় আইছোস?”
রুবিনা চুপ হয়ে গেল তার আর মুখ থেকে কোনো কথা
বেরোলো না।
__” আরে তোরা এসব বাদ দে , ব্যাস তোমরা একটু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ো নইলে যে প্ল্যান করেছি সব
ভেস্তে যাবে ।”
তিয়াশা নিজের কথা রাখতেই তার পরপরই অনন্যা বলে উঠলো,
__ ” আচ্ছা আপু সে তো নয় রেডি হলাম , কিন্তু বাসা দিয়ে বেরোবো কি করে ওই ড্রেস পরে ? আমরা কেউ ই তো ওই ড্রেস পরে বেরোতে পারব না ।”
তখন সবারই একটু চিন্তা হলো , তারা তো এই কথা ভাবেই নি, দুপুরে সবাই শপিং তো করেছে কিন্তু কথাটা
তো মাথায় আসেনি । এবার ভিডিও কলে সবার মুখ গুলোয় চিন্তার ছাপ দেখা গেলো । তিয়াশা ভাবতে লাগলো কি করা যায়।এরমধ্যেই আরোহী ছুঁড়ে দিলো এই প্রশ্নের জবাব,

__” আরে ওড়না পেঁচিয়ে নিবো ড্রেসের ওপরে বা ড্রেসের ওপরে হালকা পাতলা থ্রি পিস পইরা নেবো যা গাড়ির মধ্যেই এক ঝটকায় খোলা যাবে । কিন্তু ওখানে আমাদের জেতেই হবে, কত বড় সাহস বেটা গুলোর বিয়াইত্ত হয়ে ব্যচেলর পার্টি করতে চায়। আর আমরা বাসায় বসে আঙুল চুষবো ? ”
আরোহী রাগে রাগে কথা টা শেষ করতেই , বৃষ্টি একটু চিন্তা ভাব নিয়ে বলল,
__” সব তো না হয় ঠিক আছে , কিন্তু ….”
বৃষ্টিকে এরকম চিন্তিত দেখে তিয়াশা একটু বিস্মিত হয়ে বলে উঠলো,
__” কিন্তু কি আপু ?”
তিয়াশার প্রশ্নে বৃষ্টি ফোনের দিকে তাকিয়ে তার কথা
সবার সামনে রাখল,

__” আমাদের বর গুলো কে না হয় ধমকি দিয়ে সিধা করে রাখবো যদি কিছু বলতে আসে, কিন্তু বনু জায়ন ভাই কে কি করে সামলাবি এই ড্রেসে তোকে দেখলে
মার্ডার করে দেবে । আরো যদি ওখানে যাস তাহলে কি করবে তা ভালো করেই জানিস ।”
সবার মুখে আবার চিন্তার ছাপ একমাত্র তিয়াশা বাদে , পরি তো বলেই ফেলল,
__” আমার বর টা কে তো এক চাপকি দিয়ে সিধা করে দেবো , কিন্তু তিউ বৃষ্টি আপু ঠিক ই বলেছে জায়ন ভাই কিন্তু তোকে কি যে করবে তার ঠিক নেই।”
তিয়াশা ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা হাসল, চোখে ঝিলিক
__” আজকে কিছু বলতে আসুক আমিও দেখিয়ে দেবো অবশ্য মাঝে মাঝে আমি জোমের মত ভয়
পাই ওনাকে কিন্তু আজ পেলে হবে না। বেয়াদপ লোক
কি নাটক টাই না করলো আমার সঙ্গে । ”
তারপর একটু থেমে আবারো আরোহী কে বলল,

__” বইন সাবধান, আমার আকাশ ভাই তো বাটারিং
এর মাষ্টার । তোদের বিয়ের পরে তোকে আর বাটার কিনে খেতে হবে না ।
এই বলার পর সবাই এমনভাবে হেসে উঠল যেন সেই হাসি ভিডিও কলে আটকে না থেকে ঘরের দেয়াল পেরিয়ে পুরো বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল, হাসির শব্দে যেন একটু আগেই জমে থাকা চিন্তা-উদ্বেগ মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। হাসতে হাসতেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিল কেউ, মনে হলো আজকের রাতটা তাদের সবার জন্য একেবারেই আলাদা, একেবারেই অন্যরকম।

কল কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন সবার শরীরে এক অদ্ভুত এনার্জি এসে ভর করল, সবাই নিজের নিজের মতো করে রেডি হতে ছুটে গেল । কেউ চোখের সামনে সাজিয়ে রাখা ড্রেস হাতে নিয়ে নাচের ভঙ্গি করল, কেউ আবার হাইহিলের স্ট্র্যাপ নিয়ে কসরত করতে করতে হেসে উঠল নিজের দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত ভেবে। মনে হচ্ছিল, আজকে প্রতিটা মুহূর্তই যেন তাদের মধ্যে নতুন করে রক্তের স্রোত বইয়ে দিচ্ছে, একদিকে উত্তেজনা আর অন্যদিকে ভয়ের হালকা ছায়া যদি ধরা পড়ে? তবুও ভেতরে ভেতরে সবার মনেই একই কথা এই একবার সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।

তিয়াশা আর অনন্যা যখন বডিকন ড্রেসের উপর হালকা গাউন পরে নিচে নামল, তখন তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠল এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস, যেন তারা জানে এই রাত তাদের জন্যই লেখা হয়েছে। গাউনের ভেতরে লুকিয়ে রাখা সেই দুঃসাহসী সাজ যেন গাড়িতে বসার আগেই বুক ধড়ফড় বাড়িয়ে তুলছিল, আর প্রতিটা পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছিল তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এক নিষিদ্ধ আনন্দের দিকে। যাওয়ার পথেই বৃষ্টি আরোহী আর পরি কে তুলে নিবে ।

তিয়াশা আগেই বাসায় বলে রেখেছিল আজ তারা সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে। কিন্তু বাসার সবাই জানত জায়ন তিয়াশা কে একা ছাড়ে না কিন্তু তিয়াশা আজ মিথ্যে বলেছে , বলেছে জায়ন ও জানে কিন্তু তারা তো জানে না জায়ন কিছুই জানে না।
ড্রাইভার চাচার চোখেমুখে তখনো স্পষ্ট অস্বস্তি, কারণ সে জানে এই বাসার বড় ছেলের বউকে নিয়ে এভাবে বাইরে যাওয়া মানেই নিজের বিপদ ডেকে আনা। অথচ তিয়াশা আর অনন্যা এতটাই প্রাণবন্ত আর দুষ্টুমি ভরা ভঙ্গিতে তাকে সামলে নিল যে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই রাজি হতে হলো তাকে। চাচার মুখে তখনো ভয়ের ছাপ, কিন্তু মেয়েদের চোখেমুখে শুধুই উচ্ছ্বাস, এক ধরনের বিজয়ের আনন্দ, যেন তারা জানে তাদের এই প্ল্যান যতটা কঠিন, ততটাই মজাদার।

গাড়িতে ওঠার পর মুহূর্তেই চারপাশের শহরের আলো যেন আরও রঙিন হয়ে উঠল, হাওয়ার ঝাপটা এসে মিশল তাদের দুষ্টু হাসির সঙ্গে, বুকের ভেতরে জমতে লাগল এক অজানা উত্তেজনা। মনে হচ্ছিল প্রতিটা সেকেন্ডে হৃদস্পন্দন আরও বেড়ে যাচ্ছে, ধরা পড়ার ভয় আর নিজের সাহস প্রমাণ করার আনন্দ একসাথে মিশে তৈরি করছিল এক অদ্ভুত আবেগ, যা তাদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাসের আগুন জ্বালিয়ে দিল।

গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই যেন পাঁচজনের ভেতরে এক অদ্ভুত সাহস এসে ভর করল, গাড়ির ভেতরেই তারা যে জার মতো গাউনগুলো খুলে ফেলল, আর মুহূর্তেই প্রকাশ পেল সেই সাজ, যেটা এতক্ষণ ঢাকা ছিল। ভেতরে ভেতরে সবার বুক ধড়ফড় করছিল, তবুও চোখেমুখে ফুটে উঠল এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসী দীপ্তি, যেন তারা সবাই জানে আজকের রাত শুধু তাদের জন্যই সাজানো। গাড়ি থেকে নামার সময় ওড়না পেঁচিয়ে শরীর ঢাকার সেই চেষ্টাটা যেন ছিল কেবল বাইরের চোখ ফাঁকি দেওয়ার এক শেষ প্রচেষ্টা, কিন্তু হোটেলের নাইট ক্লাব সাইডের গেটে পৌঁছাতেই যখন সিকিউরিটি গার্ড কড়া গলায় জানাল এভাবে ঢোকা সম্ভব না, তখন মুহূর্তের মধ্যে তারা পাঁচজনই চোখাচোখি করে হেসে ফেলল আর পরের মুহূর্তেই এক ঝটকায় ওড়না গুলো খুলে ফেলল।

হোটেলে ঢুকেই তাদের চোখে পড়েছিল , তাদের স্বামীরা ভীষন ফুর্তিতে আছে।
মুহূর্তেই যেন চারপাশের বাতাস থমকে গেল। সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে আশেপাশের লোকজন, সবাই একসাথে হা হয়ে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছিল ক্লাবের দরজার সামনে যেন হঠাৎ করে তারকাদের মেলা বসেছে, আলো-ঝলমলে পরিবেশে তারা পাঁচজন যেন আলাদা এক আভা ছড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে তিয়াশা যেন একটু বেশিই আগুন ছড়াচ্ছে।

তিয়াশা দাঁড়িয়ে আছে সবার সামনেতার পরণে লাল রঙের সিকুইঞ্জে মোড়ানো স্লিভলেস বডিকন ড্রেস, ওর শরীরের প্রতিটি কার্ভস এমন স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে চোখ ফেরানোই মুশকিল,আলো পড়তেই পুরো শরীর জুড়ে চিকচিক করছে ঝিকিমিকি লাল আভা। ড্রেসের সাইডের কাট হাঁটার সাথে সাথে হাঁটুর উপরে পর্যন্ত উঁকি দিচ্ছে, যা তাকে যেন আরও উজ্জ্বল, আরও দৃষ্টি-কাড়া করে তুলেছে। খোলা চুলে হালকা কার্ল, চোখে স্মোকি মেকআপ দেখে মনে হচ্ছিল এই মেয়েটা যেন আগুন, যার দিকে তাকালে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। চারপাশের সবার দৃষ্টি একসাথে আটকে গেল তার উপর, আর তার ভেতরে ভেতরে যে ভয় ছিল, সেটা মুহূর্তেই গলে গিয়ে রূপ নিল অদ্ভুত এক আত্মবিশ্বাসে, ঠোঁটে খেলে গেল সামান্য তৃপ্তির হাসি।

তিয়াশার পাশেই বৃষ্টি তার শরীরে ঝলমলে রুপালি অফ-শোল্ডার গাউন, যেটা হাঁটার সময় পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ছে, আলোয় পড়ে সোনালি-রুপালি আভা ছড়াচ্ছে। চুল খোলা রেখে শুধু কানে বড় হুপ ইয়াররিং, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক যেন একেবারে ক্লাসিক ডিভা। তার ভেতরে দুষ্টুমি ভরা আনন্দ, চোখে খেলে যাচ্ছে দুষ্টু ঝিলিক, মনে হচ্ছে এই রাতটা পুরোপুরি উপভোগ করার জন্যই সে তৈরি।

অনন্যা যেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে কিউট কিন্তু সাহসী লুক নিয়ে হাজির কালো বডিকন ড্রেসের উপরে সোনালি চেইন এর কারুকার্য, যা একেবারেই ইউনিক আর আধুনিক। লম্বা চুল টাইট হাই পনিটেলে বাঁধা, চোখে ক্যাট-আই লাইনার, ঠোঁটে হালকা নিউড লিপস্টিক ,যেন পুরো একটা স্টাইল আইকন। ভেতরে ভেতরে সে একটু নার্ভাস হলেও বাইরের হাসিটা এত উজ্জ্বল যে সেটা দেখলেই বোঝা যায় সে আসলে কতটা এক্সাইটেড।
আরোহী যেন দলে সবচেয়ে সাহসী সাজে তার গায়ে গভীর নীল রঙের সিকুইঞ্জ ড্রেস, সেই ড্রেসের পেছনে কাট,সাথে হাই হিল জুতো। ড্রেসের কাঁধে একপাশ খোলা, আর সেই সাহসী কাট তার শরীরী ভঙ্গিমায় এনে দিয়েছে অন্যরকম আকর্ষণ। তার মুখে সবসময়কার মতো দুষ্টু আত্মবিশ্বাসী হাসি, চোখে চ্যালেঞ্জ ছোড়া একরকম দৃষ্টি, যেন চারপাশের মানুষদের তাকিয়ে থাকার মধ্যেই সে আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে।

বর্তমান……….
তাদের স্বামীদের দৃষ্টি এখন পুরোপুরি তাদের গায়ে গিয়ে আটকে আছে, যেন চারপাশে এত আলো ঝলমল করলেও আসল আলোর উৎস কেবল তাদের এই পাঁচজনই। আর তাদের চোখেই সেটা ধরা পড়ল চোখের দৃষ্টি লুকোনো যায় না, সেই দৃষ্টি ভরা ঈর্ষা, অধিকার, আবার একরাশ অবিশ্বাসের শীতল শিহরণও। ক্লাবের ভেতরে অন্য সব ছেলেদের দৃষ্টি ততক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাদের দিকে, কেউ কেউ ইতিমধ্যেই শার্টের বোতাম ঠিক করছে, হেয়ার জেল লাগিয়ে আবারও চুল ঠিক করছে, যেন মুহূর্তেই কথা বলার একটা সুযোগ মিললেই তাদের জীবন সফল।
রায়ান একটু আগে অবধি দুষ্টু মুচকি হেসে দাঁড়িয়েছিল, যেন ছোট ভাই হিসেবে মজা দেখছে। কিন্তু হঠাৎ তার চোখের মণি যেন দপ করে আগুনের মতো জ্বলে উঠল। মুচকি হাসিটা সরে গিয়ে মুখে এলো এক ঝড়ো গাম্ভীর্য। মুহূর্তেই সে তিয়াশাদের দিকে বজ্রপাতের মতো পা বাড়ালো। তার চোখের আগুনে ক্লাবের চারপাশ যেন কেঁপে উঠল, সামনে যেতেই বজ্রকণ্ঠে হুংকার দিয়ে উঠল,

__” এখানে কি করছো আপু তোমরা? এক্ষুনি এখান থেকে ফিরে যাও নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
তাদের ছোট ভাইয়ের মুখে এমন সিংহের গর্জন শুনে সবাই কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। যাকে এতদিন তারা ছোট ভাবত, সে আজ যেন বড় ভাইদের থেকেও বড় দাপটে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক লাগলেও তারা পাত্তা দিল না, হাসি মুখেই আবারও সামনে পা বাড়ালো। কিন্তু রায়ানের মুখে শিরাগুলো ফুলে উঠল, দাঁত কিড়মির করে রাগ সামলাতে চেষ্টা করছে, যেন মুহূর্তেই বিস্ফোরণ ঘটবে।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দৃষ্টি ছিল জায়নের। তার চোখের দৃষ্টি এত তীব্র যে মনে হচ্ছিল এখনই বিদ্যুৎ চমকাবে। নিজের বউকে এমন রূপে দেখে বুকের ভেতর রাগের আগুন জ্বলে উঠেছে, শরীরের প্রতিটি শিরায় রক্ত যেন ফুটছে দহনায়। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তেই সব শেষ করে দেবে। তিয়াশার দিকে সে যেভাবে তাকিয়ে আছে ওই দৃষ্টির নিচে দাঁড়িয়ে থাকাই যেন কারও পক্ষে সম্ভব নয়। ঠাণ্ডা অথচ আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিত কণ্ঠে একটাই কথা ছুঁড়ে দিল বন্ধুদের দিকে,

__” কোন বা** এর চোখ যদি ওদিকে যায়, সেই কু** বাচ্চার চোখ তুলে নেবো। আহান, আমার এই ক্লাব এক্ষুনি ফাঁকা চাই। ম্যানেজারকে বলে ব্যবস্থা কর। যা ক্ষতি হবে তার তিন ডবল দেবো, দরকার পড়লে পাঁচ ডবল। কুইক।”
কথাগুলো শোনা মাত্রই রায়ান, আহান, পলাশ আর সাগর একসাথে শিউরে উঠল। তারা জায়নকে খুব ভালো করেই চেনে, ওর কণ্ঠের মধ্যে যখন এই তীব্রতা থাকে, তখন সেটা শুধু কথা নয়, সেটা একেবারে রায়। মানে এখনই এই ক্লাব ফাঁকা করতে হবে, নয়তো বিপদ। তারা এক সেকেন্ডও দেরি করল না, সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে গেল চারদিকে দৌড়ঝাঁপ করতে।

যার যার স্বামীদের চোখে তখন ভিন্ন ভিন্ন আগুন। আকাশ যে কিনা হার্টের ডাক্তার, যে মানুষের হৃদয়কে সুস্থ রাখার শপথ নিয়েছে, সে নিজের হৃদয়ই সামলাতে পারল না। নিজের হবু বউকে এই রূপে দেখে বুকের ভেতর যেন একসাথে রাগ ,আনন্দ, অবাক আর অধিকারবোধের ঝড় বইতে লাগল। কিন্তু সেই ঝড় সহ্য করার মতো শক্তি তার ছিল না হৃদস্পন্দন গিয়ে আঘাত করল মাথায়, আর মুহূর্তেই টাস্কি খেয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। অবাক চিৎকারে চারপাশ কেঁপে উঠল।

ইউভির শরীর আগুনের মতো কাঁপছে। তার রাগ এতটাই তীব্র যে হাত দুটো কাঁপছে অবিরাম, ঠোঁট কামড়ে সে দাঁত ঘষে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন দমিয়ে রাখা একেকটা বিস্ফোরণ। সে যেন এখনই ছুটে গিয়ে কাউকে ছিঁড়ে ফেলবে, চোখে সেই দপদপে জ্বালা।
জেমস বাইরে শান্ত দেখালেও ভেতরে যেন দাউ দাউ করে পুড়ছে। তার চোখ দুটো লালচে হয়ে জ্বলজ্বল করছে, যেন আগুনের অঙ্গার ছিটে বেরোচ্ছে। কিন্তু ঠাণ্ডা কণ্ঠে ফিসফিস করেও সে থামতে পারল না, মুখ থেকে বেরিয়ে এলো চাপা বিষাক্ত আগুন,

__” ইউভি ব্রো, একটু আগে ফিল হচ্ছিল আই এম ইন হ্যাভেন। কিন্তু এখন আমার কাউকে হেল এ পাঠাতে ইচ্ছা করছে।”
জেমসের কণ্ঠের আগুনে চারপাশ স্তব্ধ হয়ে গেল। ইউভি তখনও অনুর দিকে চোখ গেঁথে রেখেছে, তার ভিতরের রাগের ঢেউ সামলাতে না পেরে গর্জে উঠল জেমসের কথার জবাবে,
__” সেম, আমারও তাই মনে হচ্ছে।”
নাজিম এর মুখ ধর ধর করছে বিয়ে হয়েছে এই তিন
বছর কিন্তু এই মুহূর্তে বৃষ্টি কে দেখে বলল,
__” আমার মনে হচ্ছে আমি দেহ ত্যাগ করবো।”

মুহূর্তেই ক্লাবের পরিবেশ বদলে গেল। কয়েক সেকেন্ড আগেও যেখানে আলো, সাউন্ড, মজা আর হাসি ছিল, এখন সেটা পরিণত হলো রাগ, অধিকার আর আগুনের এক দাপটে। মনে হচ্ছিল এ যেন কোনো ব্যাচেলর পার্টি নয়, বরং পাঁচজন পুরুষের চোখে-পুড়তে থাকা আগুনের মধ্যে তাদের স্ত্রীর রূপ, ভালোবাসা আর বেপরোয়া সাহসের যুদ্ধক্ষেত্র।
নাজিম এর বুকের ভেতরটা তখন কেমন জানি টনটন করছে, মাথার ভেতরে রক্ত স্রোতের মতো ধুকপুক করছে, এই তিন বছর সংসার করেও আজ যেন নতুন করে স্ত্রীর রূপ তাকে পাগল করে তুলছে, শরীর কাঁপছে, শ্বাস গুলিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আর সামলাতে পারবে না নিজেকে।
নাজিম আর নিতে পারল না , পা বাড়িয়ে চলে গেলো তাদের সামনে কিন্তু সামনে যেতেই তিয়াশা বলে উঠলো,

__” এক্সকিউজ মি ম্যান , সাইড প্লিজ…”
এই কথা শুনতেই তাঁর কান থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে গেল, বুকের ভেতর হাহাকার যেন কানে বজ্রপাত হয়ে বাজল, নাজিমের চোখে অবিশ্বাস, ঠোঁট শুকিয়ে গেল, শরীর শিউরে উঠল, নাজিমের মুখ বন্ধ হয়ে গেল ।যেই শ্যালিকা তাঁকে দুলাভাই বা ভাইয়া ছাড়া ডাকে না ,সে এরকম বলছে ? মনে হলো বুকের ভেতরে শিলাবৃষ্টি নামল, দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে থামালেও তার ভেতরের রক্ত তখন আগুন হয়ে ফুটছে।

নাজিম সরছে না দেখে তারাই সাইড কেটে চলে যাচ্ছে , তিনটে ছেলে তাদের দিকেই আসছিল কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই বজ্রপাতের মতো জায়ন এসে দাঁড়ালো, তিয়াশার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। সেই গ্রিপে তিয়াশার শিরায় রক্ত জমে গেলো, বুক ধড়ফড় করতে লাগলো, শরীর শিহরে উঠলো। ভেতরে ভয় কাঁপছিল, কিন্তু মুখে সেই ভয় প্রকাশ করলো না, মাথা উঁচু করে তাকিয়েই রইলো।
জায়নের কপালে নীল শিরা ফেটে বেরিয়ে এসেছে, চোখ রক্তাক্ত, ঠোঁট শক্ত হয়ে গেছে, দাঁত কিড়মিড় করছে, চোয়াল জ্বলে উঠছে। বুকের ভেতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, তিয়াশার দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠলো,

__” কি নাটক এইসব ?”
তিয়াশার বুকের ভেতরে তখন ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়ছে, একদিকে ভয় তার শরীরকে গ্রাস করছে, অন্যদিকে এক অদ্ভুত জেদ তাকে শক্ত করে দাঁড় করাচ্ছে, মুখ শুকিয়ে গেলেও ঠোঁটে সাহসের রেখা টেনে বলল,
__” এক্সকিউজ মী আমি কি আপনাকে চিনি ?”
কথা শোনার সাথে সাথে জায়নের শরীর ফেটে গেলো, রাগের দমকে তার হাত আরো শক্ত হলো, আঙুলে চাপ এতটাই বাড়লো যেন হাতের হাড় ভেঙে যাবে। মুহূর্তেই বজ্রঝড়ের মতো তীব্র চিৎকার করে উঠলো, কেঁপে উঠলো পুরো ক্লাব,

__” হারামির বা** আমাকে চিনিস না ?কেটে ফেলে রেখে দেবো , সাহস দেখাস এই আবরার জায়ন চৌধুরী কে ? আজকে তোর কপালে কি আছে তুই নিজেই জানিস না । ”
চারপাশ মুহূর্তেই থমকে গেলো। আলো নিভে গেলো, সুর থেমে গেলো, নাচগান স্তব্ধ হয়ে গেলো। চারদিকে শুধু নিস্তব্ধতা আর ভয়ের গর্জন। সবাই কেঁপে উঠলো, বুক ধড়ফড় করতে লাগলো, কারো মুখে শব্দ রইলো না। দুজন সাহস করে এগিয়ে এসে বলতে চাইল,
__” কি অসভ্যতামি হচ্ছে এইখানে ?”

কিন্তু জায়ন ওদের দিকে তাকাতেই রক্তলাল চোখে আগুন ঝরালো, ভয়ঙ্কর গলায় আবারো গর্জে উঠলো,
__” এই শুও** বাচ্চা, আমি আমার বউ এর সঙ্গে কি করব তোকে কৈফিয়ত দেবো ? তুই কোন বা* আমার জানার দরকার নেই আর একটা কথা বললে তোর কলিজা ছিঁড়ে নেবো। ”
জায়ন এর এই কথায় লোক দুটো কাপতে কাপতে পিছে সরে গেলো , ম্যানেজার ভয়ে থর থর করে কাপছে, তারপরই আবার শোনা গেল বজ্রপাতের মতো গর্জন,
__” আহান তোকে কি বলেছি সুনিস নি ?”

সাথে সাথে ম্যানেজারের কণ্ঠে অ্যানাউন্সমেন্ট বেজে উঠলো, আর মুহূর্তেই যেন হরগোল পড়ে গেলো। সবাই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতে লাগলো, পায়ের শব্দে পুরো হল কেঁপে উঠলো, যেন দুনিয়া ভেঙে পড়ছে।
জায়নের বুক ফেটে গেলো, ভেতরে রাগের আগুন থামছে না। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ঝড়ের মতো বলে উঠলো,
__” কি বা* পড়েছিস এইসব ? শরীর দেখানোর ইচ্ছা সবাইকে ? এই ড্রেস পড়ে রুমের বাইরে বেরোনোর সাহস কোথায় পেলি ? আর এখানে আসার পারমিশন কার কাছ থেকে নিয়েছিস ?”

কথা শেষ হতেই নিজের ব্লেজারটা খুলে তিয়াশার গায়ে ঝড়িয়ে দিলো, চোখে রক্তিম দৃষ্টি, বুক কাঁপছে, শরীর কাঁপছে। তারপর ঝড়ের মতো শক্ত হাতে তিয়াশাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। তিয়াশা বুক ধড়ফড় করে উঠলো, কষ্টে নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করলো, চোখ মুখ কুঁচকে কান্না আটকে ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো,
__” তুমি তো ব্যচেলর, তাহলে আমাকে বউ কেন বলছো ? ব্যাচেলর পার্টি করবে আর আমরা করলে দোষ ? বেশ করেছি এই ড্রেস পড়েছি, আরো পড়বো, তোমাকে সব কিছুর কৈফিয়ত দিতে হবে ? তুমি আমায় কিছু পড়তে গেলে কৈফিয়ত দাও ? নাটক করো এখানে আসার জন্য, তাহলে এখানে আমিও আস…..”

কথা শেষ হবার আগেই আকাশ ফেটে গেলো। মুহূর্তেই তিয়াশার গালে বাজ পড়ার মতো বসলো জায়নের হাতের এক বাঘের থাবা।
সেই শব্দে পুরো হল কেঁপে উঠলো। তিয়াশার কান-মুখ ঝাঁঝিয়ে উঠলো, ফর্সা মুখ লাল হয়ে চার আঙুলের দাগ ফুটে উঠলো। ব্যথায় বুক ফেটে গেলো, চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পড়লো। তবুও কোনো শব্দ করলো না। ঠোঁট কাঁপলো, বুক কেঁপে উঠলো, কিন্তু সবার সামনে নিজের ভাঙন গোপন করার জন্য নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলো, অশ্রু মুছলো না, শুধু নিঃশব্দ যন্ত্রণায় শরীর কেঁপে উঠলো।
জায়ন এর কপাল থেকে ঘাম ঝরছে, রাগে শরীর কাঁপছে, দাঁতের ফাঁক দিয়ে বেরোচ্ছে বিরক্তির শব্দ, নিঃশ্বাস ভারি হয়ে বুক উঠানামা করছে, চোখ রক্তাভ হয়ে আছে। তিয়াশার চোয়াল শক্ত করে ধরে গর্জে উঠলো,

__” হা** বাচ্চা মুখে মুখে তর্ক করিস ? জানিস না আমার মধ্যে এক পশু বাস করে ? দিন দিন কিছু না বলতে বলতে পেয়ে বসেছিস ? আমার এখানে আসা তোর পছন্দ না বলে দিতে পারতি। তুই কোন সাহসে বেরলি ?”
তিয়াশার বুক ধড়ফড় করছে, তবুও সাহস গিলে তাচ্ছিল্যের সুরে জবাব দিলো,
__” বলেছি না বেশ করেছি ? তুমি আসবে কেন এখানে ? তুমি ব্যচেলর ? নাটক করো আমার সঙ্গে। আমায় বাসায় বন্দী করে রাখবে আর নিজে ফুর্তি কর….”

কথা শেষ হবার আগেই জায়নের চোখ রক্তে লাল হয়ে উঠলো, মুহূর্তে ঠাসস করে পড়লো আরেক থাপ্পড়। তিয়াশার মাথা দুলে উঠলো, গাল জ্বলে উঠলো। জায়ন রাগে নিজের চুল টানতে লাগলো, যেন নিজের ভেতরের আগুন থামাতে পারছে না। তিয়াশা আর সহ্য করতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে ফুঁপিয়ে উঠলো, কান্নার সুরে বুক কেঁপে কেঁপে বলে উঠলো,

__” অ অসভ্য লোক, শুধু হাত চালাতে জানে। নিজের কথা মত চললে আমায় রানি করে রাখবে, আর কথার খেলাপ হলে জানোয়ারের মত ব্যবহার করবে। চাই না বিয়ে, চাই না এই বর।”
এই বলে তিয়াশা ব্লেজারটা শরীর থেকে ছুঁড়ে ফেলে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু জায়ন যেন শিকারি বাঘ, আবারও টেনে ধরলো। তার চোখে রক্তের ঝড়, বুকের নিঃশ্বাস আগুনের মত।
অন্যদিকে অনন্যার সামনে ইউভি দাঁড়ানো। অনন্যা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বুকে দুই হাত গুঁজে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ইউভির বুক ফেটে যাচ্ছে, অমনি অনন্যার কানে গর্জে উঠলো,

__” খুব সাহস হয়েছে তাই না ?”
অনন্যা চোখ ফেরাল না, ঠান্ডা মাথায় অন্য দিকে তাকিয়েই বললো,
__” সাহস আমার আগা গোড়াই ছিল। আনন্দ করতে এসেছিলাম কিন্তু আমার বড় ভাইয়া সব নষ্ট করে দিলো।”
ইউভির শরীর জ্বলছে, কোমরে দুই হাত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে ফুঁসতে লাগলো,
__” পাখি এসব বলিস না। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ভাইয়া কে দেখেছিস কি পরিমানে রেগে গেছে।আর এইসব ড্রেস কোথায় পেয়েছিস ? মনে হচ্ছে থাপড়ে লাল করে দেই।”
অমনি অনন্যার চোখে আগুন ঝিলিক দিলো, ঠান্ডা মুখে গর্জে উঠলো,
__” হাত তুলে দেখাও, হাত ভেঙে রেখে দেবো।”
ইউভির মুখ হাঁ হয়ে গেলো, চোখ বড় বড় হয়ে উঠলো। মনে হলো বুকের ভেতর বজ্রপাত হলো কি বললো এই মেয়েটা?
এদিকে নাজিম কপাল চেপে ধরলো, বুক ফেটে যাচ্ছে, চিৎকার করে উঠলো,

__” বাসায় ছেলে ক রেখে এই করে বেড়াচ্ছো বৃষ্টি ? কোন রকম লাগলো না ? কি ভয়ংকর লাগছে, যদি কেউ তুলে নিয়ে যেতো আমি তো বউ হারা হয়ে যেতাম।”
কথা শেষ হতেই বৃষ্টি গর্জে উঠলো, চোখে আগুন, ঠোঁটে বিষ,
__” এই বান্দির বাচ্চা, নাটক করবি না। তুই বাসায় ছেলে জে কে রেখে এখানে পার্টি করছিস। বাবুর সব দায়িত্ব কি আমার ? এবার থেকে তুই ছেলে সামলাবি আর আমি ফুর্তি করব।”
নাজিমের বুক ফেটে গেলো, মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়লো। ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে মনে মনে আওড়াতে লাগলো,

__” হায় আল্লাহ, তুমি আমার কপালে কি ডাইনি জুটাইছ ? তুই তারাক করে, মারার হুমকি দেয়। শুধু এই সুন্দর ডাইনি টারে ভালোবাসি বলে কিছু বলিনা।”
বৃষ্টি কটমট করে তাকালো,
__” কি বিড়বিড় করছো ?”
নাজিম কিছু বললো না, সে এখনো নিজের ভাবনার জগতে ডুবে।
এদিকে জেমস দাঁড়িয়ে আছে, ঠোঁটে দুষ্টু হাসি, চোখে রাগ আর উন্মাদনা মিশ্রিত ঝড়। তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
__” এত হট সেজে এসে কি লাভ হলো, দেখলে তো স্যারের পাওয়ার,টু মিনিটসে সব ক্লিয়ার করে দিলো ? নাইস ড্রেস রেইনবো। ”
একটু থেমে আবার গর্জে উঠলো,

__” কিন্তু তুমি তো ভুল জায়গায় ড্রেসটা পড়েছো। আজ আমার মাথা খারাপ হয়ে আছে। চিন্তা নেই শুধু ভাবি সাফার করবে না তোমরাও ভাগ পাবে ।বাড়িতে চলো, তারপর ইউ উইল গেট দা পানিশমেন্ট।”
তার স্বরে আগুন, চোখে লালচে ঝড়। যেন এখনই পরিকে ভুলের শাস্তি দিতে চায়। কিন্তু পরি ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে তাচ্ছিল্যের গলায় জবাব দিলো,
__” ওকে, বাসায় চলেন। আমিও দেখবো কি পানিশমেন্ট দিতে পারেন আপনি।”
জেমস দুষ্টু হাসি দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো পরিকে, যেন শিকার নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আকাশ রাগে ফুঁসছে, চোখ মুখ ঘামে ভিজে যাচ্ছে, বুক ধড়ফড় করছে। বসা থেকে উঠে আরোহীর হাত শক্ত করে টেনে সাইডে নিয়ে গেলো। নরম অথচ গম্ভীর স্বরে রাগ চেপে বলে উঠলো,

__” সোনা, এইসব ন্যাকড়া কেন পড়েছো ?”
অমনি আরোহী ঠোঁট বাঁকিয়ে ঝাঁঝালো সুরে জবাব দিলো,
__” এটা ড্রেস, ন্যাকড়া না গর্ধব।”
আকাশের চোখে রাগের ঝড়, বুক কাঁপতে কাঁপতে বললো,
__” সোনা, এখানে কেন আসলে ? তাও এই মারাত্মক ভাবে। কত ছেলের নজর তোমাদের দিকে ছিল জানো ?”
আরোহী ঠান্ডা মুখে জবাব দিলো,
__” বেশ করেছি।”
আকাশ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিশ্বাস ছাড়লো,

__” তোমাদের ভুলের জন্য ভাইয়া এখন এত রেগে আছে, বনুর উপর দিয়ে এখন ঝড় যাবে। তোমরা তো জানো বড় ভাইয়া কেমন। তিয়াশা তো না হয় অবুঝ, তুমি তো একটু বোঝো। তাহলে কেন করলে এসব ? যাও, গিয়ে সামলাও ঝড়। কান্নার আওয়াজ পাচ্ছো নিজের বন্ধুর? খুব ভালো লাগছে তাই না ?”
আকাশের মুখে বিরক্তি, রাগে নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে। এদিকে আরোহীর মুখেও চিন্তা, সেও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে তিয়াশার কান্নার শব্দ।
এদিকে জায়ন নিচে থেকে ব্লেজার টা উঠিয়ে তিয়াশার গায়ে আবার পেঁচিয়ে দিল কিন্তু তিয়াশা আবার ফেলে দিলো ব্লেজার, জায়নের মাথায় যেন আগুন চড়ে বসল, বুকের ভেতর রাগ যেন আগুনের গোলা হয়ে বিস্ফোরিত হচ্ছিল, মাথা ঠিক রাখতে পারছে না, চোখ রক্তাভ, নিঃশ্বাস দ্রুত, একেবারে গম্ভীর গলায় নিচু স্বরে এমনভাবে বলে উঠল যে তিয়াশার বুক কেঁপে উঠল,

__” ব্লেজার উঠিয়ে গায়ে চড়া রোদ।”
তিয়াশা ঠোঁট কামড়ে, চোখে জল, মুখ ঝামটা দিয়ে গর্জে উঠলো,
__” আমি চড়াবো না, লাগ…”
তার আগেই ঠাসসস করে আরেকটা বাঘের থাবা। থাবার শব্দে পুরো হল কেঁপে উঠলো। তিয়াশা ছিটকে পড়ে গেলো, মুখে হাত দিয়ে ব্যথায় কাঁদছে, বুক কেঁপে কেঁপে শব্দ বেরোচ্ছে।
জায়ন এক সেকেন্ডও দেরি করল না, আবারো ঝুঁকে সেই ব্লেজার ভালো করে তিয়াশার গায়ে পেঁচিয়ে দিলো, তারপর এক ঝটকায় নিজের কাঁধে তুলে নিলো তাকে, যেন এক মুহূর্তও আর কারো চোখের সামনে রাখতে চাইছে না। জায়নের হনহনিয়ে হাঁটার শব্দে পুরো ক্লাবের মেঝে কেঁপে উঠছিল, জায়নের চোখে মুখে এমন এক অগ্নি, এমন এক তেজ, যে তাকাতে গিয়েই সবাই ভয়ে জমে গেল, কেউ সাহস পেল না কাছে আসার। ক্লাবের আলো ঝলমল, চারদিকে অদ্ভুত সাইরেনের মতো থেমে থেমে বাজতে থাকা গান, কিন্তু সেই সব শব্দ থেমে গেল জায়নের পায়ের গর্জনের সামনে।

নিজের কালো মার্সিডিজের দরজা ধাক্কা মেরে খুলে সামনে পেসেঞ্জার সিটে তিয়াশাকে ছুঁড়ে মারল সে, যেন নিজের বুকের আগুনকে গাড়ির ভেতরে বন্দী করে দিল। তিয়াশা তীব্র কান্নায় ফুঁপিয়ে উঠল, চোখে রাগের আগুন, ঠোঁটে তীব্র কাঁপন, কন্ঠ ভেঙে ভেঙে রাগী গলায় বলে উঠলো,
__” সোনা আমি আর তোকে কখনো ব্যথা দেবো না, কখনো কষ্ট দেবো না, সব নাটক করে সব নাটক। এক মাসও যেতে পারল না, যেই একটু সুস্থ হয়েছি অমনি হাত চালানো শুরু করেছে, সেদিন মরে গেলে ভা…”
তিয়াশার কণ্ঠ থেমে গেল হঠাৎ, কারণ মুহূর্তেই খুব স্পিডে ব্রেক কষিয়ে জায়ন গাড়িটা রাস্তার পাশে দাঁড় করাল, পুরো গাড়িটা কেঁপে উঠল, তিয়াশার বুক ধক করে কেঁপে গেল, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল ভয়ে।
জায়ন এক হাত স্টিয়ারিং এ ভয়ঙ্কর শব্দে থাবা মেরে দিলো, সেই আওয়াজে গাড়ির ভেতরের বাতাস জমে গেল, তিয়াশার বুক ধড়ফড় করতে লাগল। জায়নের চোখ তখন আগুনে জ্বলছে, মুখের শিরা ফেটে উঠছে, চোয়াল শক্ত, রাগে তার নিঃশ্বাস ভারি, আরেক হাতে তিয়াশার মুখের চোয়াল ধরে টেনে নিয়ে মুখোমুখি তাকিয়ে গর্জে উঠল,
__” মরতে চাস তাই না? ওকে দ্বারা।”

সেই গর্জনের মধ্যে ছিল একসাথে ক্রোধ, বেদনা আর দমিয়ে রাখা এক ভালোবাসার হাহাকার, যেন জায়ন নিজেই জানে না কি বলছে, শুধু জানে তিয়াশা তার, তাকে হারানোর কথা ভাবলেই বুকের ভেতর দাউ দাউ আগুন জ্বলে ওঠে, আর তিয়াশার চোখ ভিজে উঠলো অশ্রুতে কিন্তু ঠোঁটে লেগে রইলো বিদ্রোহী কাঁপন।
জায়ন পকেট থেকে ফোন বার করে এক ঝটকায় ডক্টর কে কল লাগিয়ে লাউড স্পিকারে রাখল, গাড়ির ভেতরের উত্তেজনায় ভরা ভারী বাতাসে যখন রিং টোন বাজছিল তখন তিয়াশার বুক কেঁপে উঠছিল ভয়ে, কল রিসিভ হতেই জায়নের গম্ভীর কণ্ঠস্বর বজ্রপাতের মতো গাড়ির ভেতরে ছড়িয়ে পড়ল,

__” ডক্টর আমি এখন কি আমার ওয়াইফ এর সঙ্গে ইন্টিমেট হতে পারি?”
ডক্টর হঠাৎ থেমে গেলেন, কয়েক সেকেন্ড নীরবতা তারপর সাবধানে বললেন,
__” আপনার ওয়াইফ এখন অনেকটাই রিকভার করে গেছে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে উনার শরীরের উপর। আরেকবার চেক আপ করলে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারব উনি পুরোপুরি সুস্থ কি না।”
জায়নের চোখ রক্তে ভরা, দাঁতের ফাঁক দিয়ে বেরোচ্ছে বিরক্তির শব্দ, ফোনটা হঠাৎ রাগে কেটে দিল সে, গাড়ির ভেতরে ভয়ংকর নিস্তব্ধতা নেমে এলো, সেই নিস্তব্ধতার মাঝেই জায়নের চোখ আটকে গেল তিয়াশার ফর্সা মুখে, যেখানে তার নিজের হাতের পাঁচ আঙুলের দাগ স্পষ্ট। তিয়াশা সত্যিই ভয়ে কাঁপছে, বুক ওঠানামা করছে আতঙ্কে, মনে মনে ভাবছে কেন সে এই মানুষটার সঙ্গে পারে না, কেন এই লোকটা কখনোই স্বাভাবিক না, কিন্তু সেই মুহূর্তে জায়নের চোখে কোন দয়া নেই, শুধু আগুন, শুধু দাহ্য রাগ।
স্টিয়ারিং এ হাত রেখে আবারো গাড়ি স্টার্ট দিল সে, গাড়ি ছুটছে পাগলের মত , গাড়ি চালাতে চালাতে রাগে ফুঁসে উঠা গলায় গর্জে উঠলো,

__” শরীর দেখানোর ইচ্ছা সবাইকে, তুই আমার হাতে ঠিক মরবি যদি নিজের ইচ্ছে মতো চলিস। কু** বাচ্চার সাহস কত! তোর এই সাহসের জন্য আমি কি করবো তুই নিজেই জানিস না। আমার বউ এর দিকে ওই মা*দা*র ফাঁ*কার গুলো লালসার চোখে তাকাচ্ছিল, আর সেগুলো আমার দেখতে হবে ? হট সেজেছিস না? এবার দেখবি তোর বরের কি অবস্থা করেছিস তুই।”

এই বলে জায়ন হঠাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে এক ফাঁকা রাস্তার পাশে দাঁড় করাল, চারদিকে অন্ধকার, কেবল গাড়ির হেডলাইটে আলোর রেখা। তিয়াশার বুক ধড়ফড় করছে, ভয়ে সিটিয়ে আসছে, মনে হচ্ছে কিছু ভয়ঙ্কর ঘটতে চলেছে, সে জানে না এখানে কেন দাঁড়াল কিন্তু এক অদ্ভুত শীতলতা ভর করেছে বুকের ভেতরে। মনে মনে ভাবছে যখনই সে একটু সাহস দেখায়, প্রতিবাদ করে, তখনই তার উপর ভয়ঙ্কর ঝড় নেমে আসে।
হঠাৎ জায়ন ঝুঁকে পড়ে সিটবেল্ট খুলে তিয়াশাকে এক ঝটকায় নিজের ঊরুর উপর বসিয়ে নিলো, তিয়াশার শরীর ছিটকে গিয়ে জায়নের বুকের সঙ্গে লেগে গেলো, জায়ন এর দুই উরু আটকে গেল তিয়াশার দুই পা এর ফাঁ*কে। ড্রেসটা উঠে গিয়ে উন্মুক্ত ফর্সা ঊরু প্রকাশ পেল, গাড়ির ডিম লাইটে সেই দৃশ্য চোখে পড়তেই জায়নের মাথা আরো খারাপ হয়ে গেল, চোখে আগুন, দম ফাটানো নিঃশ্বাস।
তিয়াশা হাত কাঁপিয়ে, কণ্ঠ কাঁপিয়ে ভয়ে বলল,

__” কি কি করছো এখানে?”
জায়নের দৃষ্টি তখনও তীক্ষ্ণ, গলায় আগুনের মতো গর্জন, দুই হাত দিয়ে তিয়াশার বাঁকানো কোমর আরো কাছে টেনে নিয়ে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে দিলো, নিচু, গম্ভীর, হুকুমের সুরে বলে উঠলো,
__” স্ট্রি*প ইওর ড্রেস।”
তিয়াশা চমকে উঠলো, চোখ ভিজে উঠলো ভয়ে, কান্নায় ভারী হয়ে উঠলো দৃষ্টি, রাস্তার মধ্যে কি শুনছে সে । শ্বাস ভারী হয়ে আসছে, বু*ক ওঠানামা করছে আতঙ্কে আর অপমানে। তার চুপচাপ, হতবিহ্বল অবস্থা দেখে জায়নের রাগ যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিল, হঠাৎ আবারো বজ্র গর্জনের মতো গলায় বলে উঠলো,
__” আই সেইড ফা*কিং স্ট্রি*প ইওর ড্রেস। আমার যদি আর একবার বলতে হয় রোদ, বলে দিচ্ছি খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

তখন গাড়ির ভেতরে জমে ওঠা ভয়, কান্না, রাগ আর বেদনা একসাথে বিস্ফোরিত হচ্ছিল, তিয়াশার শরীর কাঁপছিল আতঙ্কে, কিন্তু চোখে ছিল অদম্য প্রতিবাদের ঝিলিক, অন্যদিকে জায়নের ভেতরে হঠাৎ জমে ওঠা প*শুর মতো রাগ আর ক্ষু*ধা তাকে ঠেলে দিচ্ছিল আরো অন্ধকারের দিকে।
এই গর্জনে শুধু তিয়াশা নয়, পুরো গাড়িটাই যেন ভিতর থেকে কেঁপে উঠল। অন্ধকার গাড়ির ভেতরটা মুহূর্তে ভারী হয়ে গেল, নিঃশ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে উঠল। বুকের ভেতর হাহাকার নিয়ে তিয়াশা মুখ ফিরিয়ে নিল, চোখ শক্ত করে বন্ধ করল আজ সে কিছুতেই এই লোকটার কথা শুনবে না।
কিন্তু ঠিক তখনই জায়নের চোখের আগুন থামল না। এক ঝলকে দুহাতে তিয়াশার ড্রেস এমনভাবে ছিঁ*ড়ে ফেলল যেন নিয়ন্ত্রণ হারানো ঝড় সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই হঠাৎ আঘাতে তিয়াশা সারা শরী*র নিয়ে চমকে উঠল, বু*ক ভেঙে বেরিয়ে এলো আতঙ্কভরা চিৎকার,

__”পা পাগল হয়ে গেছো তুমি?”
তবু কোনো উত্তর দিল না জায়ন। মুহূর্তের মধ্যে তার ঠোঁট ডু*বে গেল তিয়াশার গলার নরম ত্বকে। ব্যথায় কেঁপে উঠল তিয়াশা, ঠোঁ*ট ফসকে বেরিয়ে এলো আর্তনাদ,__”আহ্!”
জায়নের হাত যেন উন্মা*দের মতো ঝড় বইয়ে দিল তার অন্ত*র্বাস ঢাকা বু*কে, আঙুলের চাপে, রাগে আর কা*মনা*য় দগ্ধ হয়ে গেল সে। তিয়াশা ব্যথায় জায়নের চুল আঁকড়ে ধরল, শরীর পেছনে হেলে গেল, মাথা ঝুঁকে পড়ল তবু সে কোনো রেহাই পেল না।
এক হাতে তিয়াশার খোলা লম্বা চুলগুলো মুঠো করে টেনে এনে নিজের সামনে আনল জায়ন, তারপর তার ঠোঁট ঝ*ড়ের মতো নেমে এলো তিয়াশার ঠোঁ*টের উপর। দম বন্ধ হয়ে আসছে তিয়াশার, শ্বাস নেওয়ার সময় দিচ্ছে না সে, জোর করে কেড়ে নিচ্ছে তার নিশ্বাস। চোখ ভিজে উঠল ব্যথার অশ্রুতে, কিন্তু শত চেষ্টা করেও জায়নের শক্ত বাঁধন থেকে মুক্তি পেল না সে।
গোঙা*নিতে কণ্ঠ ভেঙে তিয়াশা কাঁপতে কাঁপতে বলল,

__”ছা ছাড়ো প্লিজ, লাগছে আমার….”
তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে, তবু জায়নের ঠোঁ*ট আরো গভীর, আরো উন্মাদ হয়ে উঠল। তার হাত ধীরে ধীরে নেমে এলো তিয়াশার উরু*র উপর, ত্বক বেয়ে বেয়ে উন্মত্তভাবে উপরে উঠে গেল তিয়াশার বাঁকানো উদ*রের উপর । এক মুহূর্তেই তিয়াশার মুখ থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো চিৎকার, শরী*র কেঁপে উঠল আকস্মিক স্পর্শে।
শ্বাস নিতে নিতে ভারী নিঃশ্বাসের ভেতর দিয়ে জায়ন ফিসফিস করে বলল,
__”জানতিস না তোর বর পাগল? জানতিস না, হ্যাঁ? তুই নিজেই পাগল বানিয়েছিস আমায়…. এখন আমার মাথা ঠিক নেই, কথা বলিস না, তোর কথা ভেবে আজ একটা মাস নিজেকে আটকে রেখেছি কিন্তু তুই ঠিক থাকতে দিলি না ।”
এই বলে জায়ন কোমর থেকে নিজের বে*ল্ট খুলতে লাগল ,তিয়াশার চোখ বড় হয়ে গেল,

__”কি…..কি করছো?”
জায়ন কোনো জবাব দিল না। বরং গাড়ির সাউন্ড সিস্টেম এক ঝটকায় ফুল ভলিউমে চালিয়ে দিল। চারপাশ কেঁপে উঠল গানের তালে, কিন্তু ভেতরের নীরবতা ভেঙে গেল আরও ভয়ঙ্কর শব্দে। তিয়াশা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সরে যেতে চাইলে, এক ঝটকায় আবার টেনে নিয়ে কোলে বসিয়ে নিল সে।
বে*ল্ট খুলে তিয়াশার দুই হাত পেছনে শ*ক্ত করে বেঁধে দিল জায়ন। তিয়াশার শরীর কাঁপছে থরথর করে, চোখে অশ্রু জমছে। গলায় কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে মিনতি করল,

__”প্লিজ ছাড়ো আমায়…..আমি তোমার সব কথা শুনব।”
জায়নের ঠোঁট ভারি হয়ে উঠল, চোখের আগুন আরো ভয়ঙ্কর হলো। গর্জে উঠল সে,
__”অনেক দেরি হয়ে গেছে, । এখন আমার দিকে তাকিয়ে দেখ…… আমি ঠিক নেই।”
সে সিটটা পিছনে সরিয়ে দিল, ভারী নিঃশ্বাসে চোখ জ্বলে উঠল। আদেশের মতো হুকুম দিল,
__”গেট অন ইওর নি*স বেইব , আই ওয়ান্ট সামথিং, এন্ড দ্বিতীয় বার যেন বলা না লাগে ।”
তিয়াশার শরীর কেঁপে উঠল, ঠান্ডা স্রোত বেয়ে গেল মেরুদণ্ড বেয়ে। ধীরে ধীরে ভয়ে কুঁ*কড়ে সামনে নেমে এলো সে, আর জায়নের হাত চুলের মুঠো ধরে টেনে নিল তাকে আরো কাছে। গাড়ির ভেতরে বাজছে গান, তার সাথে মিশে যাচ্ছে জায়নের উন্মাদ গোঙানি,

__”ওহ ফা*ক…..ওহ গড… বেবি, ইউ উইল কি*ল মি….”
ঘামে ভিজে উঠল জায়নের শার্ট, জায়ন এর পুরো শরীর এবার কাপছে ,শরীর জুড়ে তাপের ঝড় বইছে। হঠাৎ এক ঝটকায় সে আবারও তিয়াশাকে টেনে তুলল কোলে, ঠোঁ*টে ঝড় নামাল আরও একবার, হাতের ঝড় চালাল বুকে। অন্ত*র্বাস এক টানে ছিঁড়ে ফেলে দিল, তারপর মুখ এগিয়ে ঠোঁ*টের হামলা চালিয়ে দিল বুকে ,ঠোঁট ভিজে গেল তিয়াশার বু*কের প্রতিটা ইঞ্চিতে।
ব্যথা পেলেও এবার তিয়াশা নিজেকে আর সামলাতে পারল না। শরীর উন্মাদনায় কেঁপে উঠল, আঙুল দিয়ে জোরে জোরে আঁকড়ে ধরল জায়নের চুল, উন্মা*দনা ভেসে এলো তার ঠোঁট থেকে,

“উমমম……”
ঠিক তখনই জায়নের আঙুল চলে গেল তার উরুর অভ্যন্তরীণে, মুহূর্তেই তিয়াশার চিৎকার ভেসে উঠল পুরো গাড়ীতে। দুজনের নিঃশ্বাসে গাড়ির ভেতরটা ভারী হয়ে উঠল, জানালা বেয়ে কুয়াশা জমল। পুরো গাড়িটা কেঁপে উঠতে লাগল তাদের উন্মাদনায়।
ভারী নিঃশ্বাসে কাঁপা কণ্ঠে জায়ন ফিসফিস করে বললো ,

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭০ (২)

__”নেক্সট টাইম যদি এইরকম ‘ফা*ক মি’ ড্রেস পরে বের হস…… তাহলে কেটে রেখে দেব।”
কথার সাথে সাথেই আবার ঠোঁট ঝ*ড়ের মতো নেমে এলো তিয়াশার ঠোঁটে। তার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে, তবু জায়নের হাত একটুও থামছে না। উন্মা*দ প্রেম, রাগ আর কাম*নার বাঁধনে গাড়িটা যেন পরিণত হলো ঝড়ের এক বধ্যভূমিতে, যেখানে আর কোনো নিয়ম নেই, শুধু দুই দেহের উন্মত্ততার শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বারবার।

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭১ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here