তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি শেষ পর্ব
নীল মণ
রায়ান তার BMW নিয়ে খান বাসার সামনে এসে দাড়ালো।
আজকের এই গাড়ি, যে গাড়িটা তাকে তার বড় ভাই জায়ন গিফ্ট করেছে, রায়ানের জন্য যেন এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাসের প্রতীক।
যখন জায়ন এয়ারপোর্টে তার ড্রিম কার নিয়ে দাড়িয়ে ছিল, রায়ান খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন সেই খুশি যেন কোথায় হারিয়ে গেছে, মনের মধ্যে শুধু এক অচেনা উত্তেজনা আর এক অদ্ভুত ভারী অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে।
ঝড়ের বেগে গাড়ির দরজা খুলে রায়ান খান বাসায় প্রবেশ করল, যেন তাঁর ধাপে ধাপে আবেগের ঝড় বাড়ছে।
পাত্র পক্ষের সামনে বসে থাকা মারিয়া নিজের কণ্ঠে চেপে রাখা উত্তেজনা অনুভব করছিল, পাশে আরোহী, আর্তচোখে তাকিয়ে থাকা আয়েশা বেগম আর আব্বু আশরাফ খান।
মারিয়ার মনে এক অদ্ভুত ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে জানে, আজ তার রায়ান ভাই দেশে ফিরেছে। কিন্তু নিজের ভয়, কষ্ট আর উত্তেজনার মধ্যে সে আটকা।
রায়ান তাকে এই পাঁচ বছর ধরে অবহেলা করেছে, তার ‘মানে’ কথার জবাব সে পেয়েছে, তবু সেই জবাবের আকাশে রায়ানের অনুপস্থিতি এক বড় অন্ধকার হয়ে আছে।
বুকে জমে উঠেছে এক পাহাড়ের মতো কষ্ট, হাত-পা কাঁপছে, হৃদয় কেঁপে উঠছে, আর এক পায়ের নূপুরের ভারও যেন বয়ে যাচ্ছে ভারাক্রান্ত হাওয়ার মতো।
মারিয়ার ভাবী আরোহী সবকিছুই জানে, কিন্তু তার হাতেও কিছু নেই। সে শুধু পাশে বসে, মারিয়ার কষ্টের সঙ্গে কষ্ট ভাগ করছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই সমস্ত ভাবনার মধ্যে, হঠাৎ ঝড়ের গতিতে সদর দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করল।
প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মারিয়ার দৃষ্টিতেও যেন কুয়াশার মতো উত্তেজনা নেমে এলো।
এক লম্বা, চওড়া, সুঠাম দেহ যুক্ত, সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে, যার উপস্থিতি কেবল বায়ুর দিকেই নয়, মনে উত্তেজনার ঝড় বইয়ে দিল।
মারিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। নিঃশ্বাসে যেন থেমে গেলো হৃদয়, আরোহীও হা হয়ে রীতিমতো স্তব্ধ।
আয়েশা বেগমের চোখে খুশির অশ্রু ঝরতে লাগল।
আশরাফ খান পেছন থেকে ছুটে এগিয়ে এল, মুখে একটি গাল হাসি আর চোখে আবেগের জ্বলন।
সবাই যেন মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল, রায়ানের উপস্থিতি এক অদ্ভুত উত্তেজনার ঢেউ তুলল পুরো কক্ষে।
মারিয়ার হৃদয় কাঁপছে, রায়ানের চোখে দীপ্তি, আর আশরাফ খানের হাসি যেন সবকিছুর ভারসাম্য রাখছে।
ঘরের মধ্যে যেন প্রতিটি নিঃশ্বাস, প্রতিটি দৃষ্টিপাত এক রকম রহস্যময় ও আবেগময় বাতাসে ভরে উঠেছে।
রায়ানের কানের কাছে আবেগের ঢেউয়ে ভর করে আয়েশা বেগম ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল,
__”বাবা আমার বাবা তুমি এসেছো, আমি একটু পরেই যাচ্ছিলাম সোনা তোদের বাসায়।”
ওই উচ্ছ্বাস কণ্ঠে ঘর পুরো ছেঁড়া-মেলা হাসি, চোখে লুকানো দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার আভা মুহূর্তেই সবাইর মনে এক অদ্ভুত মৃদু সেঁক দেওয়া আনন্দ জাগ্রত করল। কিন্তু ঠিক একই সময় পৃথিবীর নড়াচড়া যেন থমকে গেল মারিয়ার পায়ের তলার মাটি হঠাৎ সরে যাওয়ার মতোই; শরীর হিমশীতল হয়ে গেল, হাত-পা কাঁপছে, গলার স্বর আটকে আসছে তবু বহু কষ্টে, নিঃশ্বাস খিঁচে মুখ থেকে এক শব্দ বের করল,
“ভাবি আমি কি ঠিক দেখছি?”
মারিয়ার কণ্ঠে কাঁপন, চোখে বিস্ময় আর ভয়ের মিশ্রণ সেই সপ্রতিভ ভাঙাচেরা মুহূর্তে আরোহী এগিয়ে এসে মারিয়ার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে, মৃদু লহমায় বলে উঠল,
__”হ্যা সোনা তোর অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলছে।”
তার কথায় মারিয়ার চোখে অচেনা আশার আভা জ্বলে ওঠে কাঁধে হাত পেয়ে সে যেন একটু স্থির হলো হৃদয়টা লাফিয়ে উঠল, মুখে অচেনা নরম হাসি ফুটে উঠল। সকলে তাকিয়ে থেকে একে অপরের দিকে ছটফট করছে খুশি, অচেনা উত্তেজনা, আর নরম অনিশ্চয়তার মিশেল।
ওদিকে রায়ান রক্তে রক্ত, বন্ধনেই বাঁধা তার ফুফুকে আবেগপূর্ণভাবে জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে রাখার সেই মুহূর্তে যেন ভাষা হারিয়ে যায়; তারপর কিছুক্ষণ পর সে ছেড়ে দিয়ে, চোখে অশ্রু আঁচড়ে কণ্ঠে নরম কাঁপুনি নিয়ে বলল,
“ফুফু ফুফা আমি এখন যা করতে চলেছি তার জন্য আগে থেকেই সরি।”
ফুফুর চোখে মিশে আছে মমতার ঝলক, কপালে কষ্টের রেখা ও সহানুভূতির উষ্ণতা তিনি কিছু বলতেই যাচ্ছিলেন, কিন্তু রায়ানের মুখের দৃঢ়তা আর অভিমান ভরা আবেশে শব্দ আটকে যায়। পাত্রপক্ষের লোকজন হকচকিয়া ভাব তারা কেবল দেখতে থাকে, কথা বলতে পারে না।
রায়ান আর এক সেকেন্ডও দাড়াল না। যেন বাধা টপকাতে একটা ভূমিকম্প লেগেছিল তার পায়ের আওয়াজে মার্বেলের মেঝে কাঁপে উঠল। সে ধীর, স্থির ভঙ্গিতে পাত্রপক্ষের সামনে এগিয়ে গেল, চোখে অদম্য সংকল্পের ঝিলিক। মারিয়ার দিকে একবার ভয়ঙ্কর, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে আবার ছেলের দিকে ফিরল কণ্ঠে লোহার মতো জোর নিয়ে বলল,
__”এক মিনিটের মধ্যে এই তোর পুরো পরিবার নিয়ে যদি বিদায় না হোস, তাহলে পুরো পরিবারের মুখের মানচিত্র বদলে দেব।”
রায়ানের হুংকারে পুরো খান পরিবার স্তম্ভিত হয়ে রয়ে গেল।
ছেলের পরিবার যেন এক মুহূর্তের জন্য শ্বাসরুদ্ধ হয়ে, কেবল রায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রায়ানের পেছনে বসা মারিয়ার হাতে হাত আরোহীর, শক্ত করে ধরে আছে, চোখ বড় বড়, শরীর কেঁপে উঠছে ভয়ে।
মারিয়ার মনে এক অদ্ভুত শিহরণ নেমে এসেছে ভয়, উত্তেজনা আর এক অদ্ভুত নিরাপত্তার অনুভূতি একসাথে ঘনীভূত হয়েছে।
আশরাফ খান আর আয়েশা বেগম এই দৃশ্য তাদের চোখে ভীষণ পরিচিত।
পাঁচ বছর আগে ঠিক একইভাবে তারা দেখেছে,তৎকালীন জায়ন, তিয়াশার জন্য যা করেছিল, এখন সেটি রায়ান নিজেই পুনরায় করে চলেছে।
তাদের চোখে এক অদ্ভুত ভয়, মুখে অবিশ্বাসের ছাপ।
আশরাফ খান বললেন, কণ্ঠে কম্পমান আতঙ্ক,
__”রায়ান বাবা, কি করছিস?”
কিন্তু রায়ান শুনল না।
রাগ আর সহ্যহীনতা তাকে এক মুহূর্তেও থামতে দিল না।
চোখে অগ্নি, কপালে সিরা জাগিয়ে দাঁতের ফাঁ*ক দিয়ে রাগের চূড়ায় উঠে, তিনি নিজের হাতের মুঠি শক্ত করে ছেলেটার মুখের উপর বসিয়ে এক নাক-মুখ জড়ানো ঘুষি বসিয়ে দিলেন।
ঘরটা যেন মুহূর্তেই থমকে গেল, নিঃশ্বাসরুদ্ধ করে সবাই এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করল।
রায়ানের হুংকার আবারও গর্জে উঠল, কণ্ঠে রাগের ঘূর্ণিঝড়,
__”কি বললাম শুনতে পারছিস না?”
ছেলের মা, কণ্ঠে কাঁপন আর চোখে অশ্রু, দৌড়ে এসে আর্ত চিৎকার করল,
__”আমরা চলে যাচ্ছি এখনি, প্লীজ আর মারবেন না আমার ছেলে কে।”
এই মুহূর্তে আর এক মুহুর্ত দেরি হল না।
তীব্র বেগে, যেন বাতাসের সাথে ঝড়ের মতো, তারা খান বাসা ছেড়ে চলে গেল।
ঘরের মধ্যে যেন এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এল কেউ কিছু বলতে পারছে না।
মারিয়ার চোখে চোখের পানি, হাত এখনো আরোহীর সঙ্গে চেপে ধরে আছে, হৃদয় কেঁপে ওঠা বন্ধ হচ্ছে না।
আশরাফ খান আর আয়েশা বেগম দেখছে এই দৃশ্যের পর কেবল একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
মনের মধ্যে ভয় আর প্রশান্তির এক অদ্ভুত মিশ্রণ।
রায়ান আর মারিয়ার মুহূর্তগুলো যেন সময়কে থামিয়ে দিয়েছে। একদিকে ছিল অগাধ ভালোবাসার ঝড়, অন্যদিকে নিঃশব্দ উত্তেজনার তীব্রতা।
রায়ান তার ফুফু আর ফুফার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল, যেন পাঁচ বছরের অপেক্ষার বোঝা খুলে গেছে।
__”ফুফু ফুফা আমি মারিয়া কে বিয়ে করতে চাই, আমি বাদে ওর জীবনে কোন ছেলে আসতে আমি দেবো না।”
সবাই স্তব্ধ, চোখে বিস্ময় আর চোখের পাতা জড়ানো আনন্দের মিশ্রণ।
রায়ান আরও বলল,
__”আমি জানি শুধু ভালোবাসা থাকলেই হয় না, আমার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে শিখেছি যোগ্যতা থাকা টাও জরুরি। এখন আপনাদের সামনে যোগ্যতা নিয়ে দাঁড়িয়েছি। এখন আপনাদের মেয়ে ভালোয় ভালোয় দিয়ে দেন। নইলে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে এটাও শিখেছি ভালোভাবে না শুনলে আঙুল বেকিয়ে শোনাতে।”
আশরাফ খান হেসে রায়ানকে জড়িয়ে বলল,
__”বাবা, তোকে আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে না। আমি নিজেই চাইতাম আমার মারিয়ার জন্য জায়নের মত কেউ আসুক। আল্লাহ তায়ালা যে তোকে পাঠাবে আমার মেয়ের জন্য, আমি ভাবতেই পারিনি। তোর থেকে পারফেক্ট কেউ হতে পারবে না।”
এর পর মারিয়া, আরোহী এবং আয়েশা-বেগম স্তব্ধ হয়ে বিস্ময়ে তাকাল। রায়ানও ভাবতে পারেনি যে তার ফুপা এত দ্রুত অনুমতি দেবে।
এই কথাটা বলতেই আরোহী আয়েশা বেগম মারিয়া সবাই শক পেয়ে গেল। রায়ান ও ভাবতে পারিনি যে তার ফুফা এত শিগগিরই মেনে নেবে।
রায়ান একদিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
__”থ্যাংক ইউ ফুপা, আমি একটু মারিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাই দশ মিনিট একটু স্পেস দরকার পেতে পারি কি? ”
আশরাফ খান কিছু বলতে যাবে কিন্তু তখনই আরোহী তার আব্বু আর আম্মুর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
__” ভাই ১০ মিনিট কি তোর যত টাইম লাগবে তুই নিয়ে নে। শুধু আমার ননদকে আর অপেক্ষা করাস না”
তখন মারিয়া ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল তার ভাবীর উদ্দেশ্যে,
__” ভাবি প্লিজ আমাকে গন্ডারের বাচ্চার কাছে রেখে যেও না আমার ভয় করছে।”
কিন্তু আরহী কোন জবাব দিল না। তারা চলে যেতেই রায়ান মারিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ভয়ংকর দৃষ্টিতে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
__” সাহস কি করে হলো? ”
মারিয়া ভয়ে তাকাতে পারছে না রায়ানের দিকে তাই সে মুখ ঘুরিয়ে চোখমুখ বন্ধ করে কাঁপা কন্ঠে জবাব দিল,
__” আ আ আমি কিছু জানিনা।”
রায়ান এতদিন মারিয়াকে একবারও দেখেনি কিন্তু রোজ ঠিক তার খবর নিত, সে জানত
একবার যদি এই মেয়ের মুখ দেখে তাহলে নিজেকে আর সামলাতে পারবে না প্রতিটা দিন তার পক্ষে বড়ই কঠিন হয়ে উঠছিল কিন্তু তাকে পাওয়ার জন্য সে সবকিছু করতে রাজি ছিল। তাই একভাবে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে তার ছোট্ট শাকচুন্নি এখন আর ছোট্ট নেই সেই চোদ্দ বছরের কিশোরী এখন এক নারীর রূপে বসে আছে তার সামনে। সেই নারী যেই নারী কিনা সাত বছর আগে তার মনে বাসা বেধেছিল। রায়ান হঠাৎ মারিয়ার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলল
__” এখনো কি কথাগুলোর ” “মানে ” খুঁজছিস যেগুলো তোকে ৫ বছর আগে বলেছিলাম? ”
মারিয়া জবাব দিল,
__” না সব মানের উত্তর আমি তিন বছর আগেই বুঝে গেছিলাম।”
__” তার পর ও সাহস কি করে হল সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে বসার?”
মরিয়া এবার রায়ান এর দিকে তাকিয়ে চোখ ভিজিয়ে কাতর কন্ঠে বলে উঠলো,
__” সেই মানুষটা আমায় অবহেলা করেছে এত বছর একটা বার ও আমার খোজ নেয়নি।উপেক্ষা করেছে আমায়। আমি ভেবেছি হয়তো তুমি আমায় ভুলে…… ”
মারিয়া আর বাক্য সম্পন্ন করতে পারল না তার আগেই রায়ান নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিল মারিয়ার কোমল গোলাপি ঠোটের উপর। রায়ান মারিয়ার মেদহীন কোমর ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নিতেই মারিয়ার স্বাস বন্ধ হতে লাগলো , বুক কাঁপতে লাগলো এই নতুন অনুভূতিতে এ এক অচেনা শিহরণ। এই শিহরণ সে আগে কখনো অনুভব করেনি চোখ বড় বড় হয়ে আসলো কিন্তু রায়ান আরো জোরে মারিয়াকে আঁকড়ে ধরল ঠোটের উপর চালিয়ে যাচ্ছে নিজের ঠোঁটের ঝড় ।রায়ান ভিজিয়ে দিতে লাগলো মারিয়ার উপরের ঠোঁট আর নিচের ঠোঁট।মারিয়ার মনে জমে ওঠা পাথর ধীরে ধীরে গলতে শুরু করলো পানির মত।
মারিয়ার কাছে এই অনুভব নতুন হলেও এক ভয় ও ভালো লাগার মাঝে নিজেকে আর রক্ষা করতে পারলো না নিজেও দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল রায়ানের গলা। সেটা রায়ন অনুভব করতেই আরো তীব্র আক্রমণ করল মারিয়ার ঠোঁটের উপর। মারিয়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে পেটের মধ্যে ডানা মেলছে অজস্র প্রজাপতি। কি হচ্ছে তার সঙ্গে? সে নিজেকে কেন আটকাতে পারছে না?
বরং ভেসে যাচ্ছে এই নতুন অনুভূতির জোয়ারে। এই চুম্বনেই বোঝা যাচ্ছে তাদের অপেক্ষার অবসান কতটা তীব্র ছিল।প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর যখন রায়ান মারিয়া ঠোঁট ছাড়লো, তারপর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে রায়ান নিজের ঠোঁটের কোনা মুছে বাঁকা হাসি দিয়ে জবাব দিল,
__”এখনো কি মনে হচ্ছে আমি তোকে ভুলে গেছি শাকচুন্নি?”
মারিয়া লজ্জায় লাল হয়ে দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল, নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে। কিন্তু রায়ান অপেক্ষা করল না, মারিয়ার হাত সরিয়ে বলল,
__” তুই নিজেও জানিস না আমি তোকে কতটা চাই, আমার মনে তো সাত বছর আগে জায়গা করেছিলিস সেই জায়গা থেকে তোকে আমি এক সেকেন্ডের জন্য সরাইনি। এই পাঁচ বছরে প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা ঘন্টা, প্রতিটি রাত—সবই এই মুহূর্তের জন্য।”
মারিয়ার চোখে অশ্রু, বুক কেঁপে উঠছে, হৃদয় আনন্দ আর উত্তেজনার সঙ্গে একসাথে বেজে উঠছে। রায়ান তার পাশে বসে হাত বাড়িয়ে বলল,
__” বিয়ে করবি আমায়, থাকবি আমার সঙ্গে সারাটা জীবন, ধরবি আমার হাত, রাখবি আমার নামের পাশে তোর নাম, জানেমান?”
রায়ানের কথাগুলো যেন মারিয়ার হৃদয়ের মধ্যে তীরের মতো লাগল। প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বাক্যে ভেসে এল দীর্ঘকালীন অপেক্ষার তীব্রতা, ভালোবাসার গভীরতা। মারিয়ার বুক কেঁপে উঠল অজান্তেই ঝড়ের মতো অশ্রু ঝরল, এক সাথে অপেক্ষার অশ্রু, ভালোবাসার অশ্রু, আর এক তীব্র খুশির অশ্রু।
মারিয়া গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে রায়ানের দিকে তাকাল, চোখে ভেজা দীপ্তি, গলায় কাঁপা কন্ঠে বলল,
__” যবে থেকে সব মানের মানে খুঁজে পেয়েছি, তখন থেকে তুমি ছাড়া এই মনে অন্য কোন পুরুষ কখনো জায়গা পায়নি, আর না পাবে, আর আগে কখনো পেয়েছে না। আমি শুধু তোমার হতে চাই রায়ান ভাই, শুধু তোমার।”
রায়ান ধীর অভিব্যক্তি নিয়ে মারিয়ার কপালে চুমু দিল,
__” আই লাভ ইউ শাকচুন্নি, আই লাভ ইউ সো মাচ।”
মারিয়াও রায়ানের গলা জড়িয়ে ধীম কণ্ঠে বলল,
__” আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি রায়ান ভাই, অনেক। আমি আর এই আমার এক পায়ে নুপুরের ভার নিতে পারছি না, তুমি আরেক পায়ে নুপুর পরিয়ে এই ভার কমিয়ে দাও, আমি আর পারছি না।”
রায়ান তখন নিজের পকেট থেকে মারিয়ার আগে নেওয়া নূপুর বের করে পরিয়ে দিতে দিতে বলল,
__” পায়ের সাইজ তো সেটুকুই রয়েছে, হাইট হয়তবা ১ ফুট বেড়েছে, জেরকম ছিলিস সেরকমই আছে, বেড়েছে শুধু একটাই জিনিস।”
মারিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
__” মানে?”
রায়ান আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করল না, মারিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
__” কিছুদিন অপেক্ষা কর জানেমান, বিয়ের পরে সব বুঝিয়ে দেবো। তুমি এখনো অনেক ছোট। তোমাকে এখন আরও অনেক কিছুর মানে বোঝাতে হবে।”
মারিয়ার লজ্জায় চোখ লাল, মুখ রায়ানের বুকে ডুবে গেল। কোমল কণ্ঠে বলল,
__” রায়ান ভাই, কি করছো? কেউ দেখে নেবে, তো নিচে নামাও।”
রায়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
__” আই ডোন্ট ফা*কিং কেয়ার জানেমান। আই জাস্ট নিড ইউ রাইট নাউ। অনেক অপেক্ষা করেছি, আর সম্ভব না আমার পক্ষে।”
মারিয়া আর কোন কথা বলল না। নিজের ভালোবাসার মানুষটির গলা জড়িয়ে সে নিঃশ্বাসে সম্মতি জানালো।
রায়ান তখন চিৎকার করে বলল,
__” ফুফি ফুফা, রুহি আপু, তোমাদের রাজকন্যাকে আমি নিয়ে যাচ্ছি। কারণ সে এখন থেকে শুধুই আমার জানেমান। তার ওপর শুধু আমার অধিকার। আমি হালালভাবে তাকে সব অধিকার দিতে চাই।”
এই বলে রায়ান বেরিয়ে গেল, আর পুরো ঘরে শুধু
সবার হৃদয় একসাথে উত্তেজনা, আনন্দ, ভয় ও উচ্ছ্বাসে ভরে উঠল। প্রতিটি মুহূর্তে অনুভূতি ঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়ল ভালোবাসা, স্বপ্ন, প্রতীক্ষা আর দীর্ঘকালের আবেগের এক অদ্ভুত মিলন।
আজ হলো জায়ন আর তিয়াশার পাঁচ বছরের বিবাহবার্ষিকী। জায়ন গতকাল বাসার সবাই কে রায়ান আর মারিয়ার ব্যাপারে জানালে প্রান্তিক সাহেব আর তাহসান সাহেব আমতা আমতা করলে জায়ন এর এক চোখ রাঙানিতে সব চুপ হয়ে গেছিল।
আজকে বাসায় অনেক অতিথি জায়ন এর সব বন্ধুরা
সাগর পলাশ আহান তাদের সবার বউ বাচ্চা নিয়ে উপস্তিত হয়েছে। জেমস আর পরির কোল জুড়েও তাদের পুত্র সন্তান এসেছে এক বছর আগে তারাও আজ উপস্তিত হয়েছে । খান পরিবারের সবাই আশরাফ খান, আয়েশা বেগম, আকাশ আরোহী আর তাদের সন্তান আরিয়াশ । আর মারিয়া , রায়ান তো তার পেছন ই ছাড়ছে না এই নতুন জুটি যেন একে অপরকে চোঁখে হারাচ্ছে ।
ইউভি আর অনন্যা, বৃষ্টির ছায়ায়, সন্তানদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি আর নাজিম নিঃশব্দে বসে আছে। প্রান্তিক সাহেব, মেহজাবীন বেগম, প্রনয় সাহেব, রুহেনা বেগম, তাহসান সাহেব, সুরাইয়া বেগম সবাই নিজেরাই উত্তেজিত। আর চারপাশে ছোটরা রিহানা, রোজা চৌধুরী, রেজোয়ান, আরিয়াশ, সাগরের ছেলে, আহানের ছেলে, পলাশের মেয়ে ছোটাছুটি করছে, হাহাকার করছে, হাসছে।
টেবিলের উপরে রাখা বিশাল কেকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিয়াশা। লাল রঙের দামী শাড়ি তার সৌন্দর্যকে আরও ঊর্ধ্বমুখী করেছে। লম্বা চুল খোলা, চোখে কাজল, হাতে লাল কাচের চুরি যেন সে আজও নববধুর মত। তার চেহারায় এখনো সেই যৌবনের দীপ্তি, এক সন্তানের মা হয়ে গেলেও তার রূপের জাদু যেন কমেনি। তবুও আজ মুখে অজস্র রাগের ছাপ, কারণ জায়নের কোনও পাত্তা নেই। সন্ধ্যা নেমেছে, তবুও জায়ন সকালের মতোই বাইরে।
হঠাৎ সদর দরজা খোলা হলো। ঢুকলো জায়ন। কালো টাক্সেডো, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, চিরচেনা পারফিউম, হাতে দামি রিস্টওয়াচ, পায়ে উঁচু দামী জুতো। ৩৬ বছর বয়সেও তার রূপমাধুর্য অব্যাহত। তিয়াশার ২৪, তবে দেখলে কেউ বলবে না তাদের বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেছে। ভালোবাসার আবেগ এখনও যেমন উষ্ণ।
মেহজাবীন বেগম কণ্ঠে উচ্ছ্বাস:
__”কিরে, এত দেরি করলি যে মেজ আম্মু সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
হঠাৎ রিহানা “ড্যাডি ড্যাডি” করে ছুটে এসে জায়নের কোলে উঠে যায়। জায়ন তাকে কোলে নিয়ে মায়ের দিকে উত্তর দিল,
__”একটু কাজ ছিল মা।”
মেহজাবীন বেগম কিছু বলতে গিয়ে থমকে গেলেন। তখন তিয়াশা রাগের ছাপ নিয়ে বলল,
__”বড় আম্মু, কেক কাটা হোক, অনেক লেট হয়েছে, সবাই অপেক্ষা করছে।”
এই বলে তিয়াশা চলে গেল কেকের সামনে। জায়ন বাঁকা হাসি দিয়ে তার পেছন পেছন চলে গেল। তারা মিলে রিহানা নিয়ে কেক কাটতে লাগল। জায়ন তিয়াশার পেটের উপর খোচা মারল। তিয়াশা দাঁত কিড়মিড় করে রেগে বলল,
__”একদম ছোঁবে না।”
জায়ন কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
__”শুধূ ছোঁবো না, আজ খেয়ে ফেলব।”
এই কথায় তিয়াশার লজ্জা রঙিন হয়ে গেল।
অতিথিরা চলে যাওয়ার পর তিয়াশা রিহানাকে বিছানায় ঘুমিয়ে দিল। তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে কানের দুল খুলছিল, চোখ আয়নায়। রাগ, হালকা অস্থিরতা সব মিশে গেল।
হঠাৎ দরজার আওয়াজ। কালো স্যুটে জায়ন প্রবেশ করল। আয়নায় তার দিকে তাকানো হলো না কারণ সে জানে, সে তার স্বামী।
তিয়াশা জায়ন কে দেখল তার দিকে এগিয়ে আসছে। জায়ন তার পিছনে দাঁড়াল এবং নিজের মাথা নিচু করল। জায়ন তিয়াশার বাহুতে হাত রাখল।
“কী?” তিয়াশা রাগ দেখিয়ে দাবি করল।
জায়ন তার মাথা কাত করে তিয়াশার গালে চুমু খেলো,
তারপর কর্কশ কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো।
__”আই এম সরি, বেবি গার্ল। তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?”
তিয়াশা রাগ দেখিয়ে বলল ,
__”না,”
জায়ন এর ডান হাত তিয়াশার অনাবৃত ঘাড়ে আলতো করে বুলিয়ে দিল, যার ফলে তিয়াশা চোখ বন্ধ করলো। হঠাৎ, তিয়াশা তার ঘাড়ে একটি ভার অনুভব করলো। ভ্রু কুঁচকে সে চোখ খুললো কিন্তু জমে গেল।
আয়নায় তার দৃষ্টি সরাসরি তার ঘাড়ের উপর পড়লো। সে সেই নেকলেসের দিকে তাকিয়ে ছিল যা জায়ন এইমাত্র তার গলায় পরিয়ে দিয়েছিল।
__”এটা”
তিয়াশা সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো এবং তার মুখোমুখি দাঁড়ালো।
__”এই পান্না নেকলেস! এটা তো একমাত্র পান্না যা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল…”
তিয়াশা কখনো গহনার ভক্ত ছিল না। কিন্তু কয়েক দিন আগে, নিলামে এই নেকলেসটি তার চোখ কেড়েছিল, যেখানে সে জায়ন এর সাথে গিয়েছিল। তিয়াশা কেনেনি কারণ খুব ব্যয়বহুল ছিল, এবং সে বিশ্বাস করত যে তার নিজের জন্য এত টাকা খরচ করা উচিত নয়।
__”আমার স্পষ্ট মনে আছে। ” এইটা দ্বিগুণ দামে কিনে কেউ তাদের জাদুঘরে প্রদর্শন করেছিল,” সে বিড়বিড় করল।
জায়ন তার দিকে বাঁকা হাসি হেসে তার চিবুকে নিজের হাত ঘষল।
__”এবং তোর বর তাদের কাছ থেকে তিনগুণ দামে এটি কিনেছেন।”
তিয়াশা আশ্চর্য হয়ে তার ঠোঁট ফাঁক হয়ে গেল। এএই নেকলেস তার জন্য ব্যয় করা টাকার কারণে ছিল না, বরং তার পছন্দগুলি সে যেভাবে সর্বদা পূরণ করত তার কারণে।
__”আমি সরি বেইব। এই গিফ্টের জন্য আমার দেরি হয়ে গেছে।”
তিয়াশা তাকে জড়িয়ে ধরল এবং বিড়বির করে বলল,
“বর, এর কোন দরকার ছিল না।”
জায়ন তিয়াশার মাথায় চুমু খেল এবং বিড়বিড় করে বলল,
__ “আমার সাথে আয়। তোর জন্য আমার আরও একটা সারপ্রাইজ আছে।”
তিয়াশা হতবাক হয়ে গেল যখন জায়ন তাকে তাদের শোবার ঘর থেকে টেনে বের করল।
তিয়াশা ভাবতে লাগল জায়ন কোন সারপ্রাইজ এর কথা বলল? তখন অনেক রাত হয়ে গেছিল, এবং সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সে তাকে কী ধরনের চমক দিতে যাচ্ছিল?
যেই সে তাকে বাইরে নিয়ে এলো…..
বিশাল ব্যালকনি একটি রূপ কথার রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। তিয়াশা পিছন থেকে একটি জোরে শব্দ শুনতে পেল।
সে ঘুরে তাকিয়ে দেখল জায়ন ব্যালকনির দরজা বন্ধ করছে।
__”তুমি কী করছো?”
তিয়াশা লাজুকভাবে জিজ্ঞেস করল। জায়ন তিয়াশার কোমর ধরে তাকে ব্যালকনির অন্য দিকে নিয়ে গেল। সে দেখল সেখানে ছোট করে ড্রিমি ভাবে শোবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেঝেতে পড়ে থাকা সাদা গদির উপর, তিয়াশা ফুল এবং জ্যুস, সাথে ফল দেখতে পেল।
জায়ন আর তিয়াশা দুজনেই বসার সময় একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল।
__”কী সুন্দর!”
তিয়াশা হাসি মুখে জায়ন কে জড়িয়ে ধরল।
তারা চাঁদের একটি পরিষ্কার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিল কারণ ব্যালকনি আকাশের নীচে ছিল।
জায়ন কে তিয়াশার ঘারের কাছে ঝুঁকে থাকতে দেখে তিয়াশা পলক ফেলল।বিয়ের এত বছর পরেও, যখনই জায়ন আশেপাশে থাকে , তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায় । প্রথম যখন তারা একে অপরকে স্পর্শ করেছিল, তখনও ঠিক এমনই ছিল। তাদের ভালোবাসা প্রতিদিন আরও গভীর হচ্ছে। তারা ছিল সুন্দর দম্পতির মতো, যেখানে স্ত্রী তার বরের সঙ্গে রাগ করেছে এবং বর তার বউকে রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে।
তিয়াশা জায়ন এর ঠোঁট তার নিজের ঠোঁটের ওপর অনুভব করল। সে তখন ই তার দিকে ফিরল এবং নিজেও চু*মু খেল, চুমু হয়ে উঠল গভীর থেকে গভীর।
জায়ন এর হাত তিয়াশার ঢেউ খেলানো কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, তাকে আরও কাছে টেনে নিল।
তারা চাঁদের আলোয় গভীর ও আবেগপূর্ণ চুম্বনে লিপ্ত হলো।
তারা দুজনেই ছিল আল্লাহর দান , যারা চাঁদের দোয়াপ্রাপ্ত ছিল।
তিয়াশা চুম্বন শেষ করে জায়ন এর চোখের দিকে তাকাল।
তিয়াশা বিশ্বাস করতে পারছিল না যে সে এখন কতটা খুশি।এই মানুষটি তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে।
শুরুতে সবকিছু ভিন্ন ছিল। ভাগ্য সত্যিই অপ্রত্যাশিত।
সে তাকে ভেবেছিল ” দুলাভাই ” বলে ডাকবে, কিন্তু সে অবশেষে তার ভালোবাসা এবং তারপর তার স্বামী হয়ে ওঠে।তার জন্য সবকিছু সহজ ছিল না। বিয়ের আগের তিন বছরে সে ভাবেই নি সে এই মানুষ টা কে নিজের স্বামী নিজের সন্তানের বাবা হিসাবে পাবে ।
কিন্তু দিনের শেষে,তারা একত্রিত হয়েছিল। ভাগ্য তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি এবং তাদের প্রাপ্য জিনিসটি দিয়েছে। আর তাদের ভালোবাসার দান ছিল তাদের মেয়ে তাদের কলিজা
__”রিহানা রোজা চৌধুরী।”
সে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান নারী মনে করে কারণ সে সেই নারী যাকে আবরার জায়ন চৌধুরী ভালোবেসেছে ।
হটাৎ জায়ন প্রশ্ন করল তিয়াশার ঘাড়ে মুখ ডোবাতে ডোবাতে,
__” আমার বউ দিন দিন এত হট কেন হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না,?”
জায়ন এর প্রশ্নে তিয়াশার ভ্রু কুঁচকে গেল। হটাৎ তারপর তিয়াশা লাল হয়ে গেল এবং জায়ন তিয়াশার শরীরের উপর চোখ রেখে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
জায়ন হেসে উঠল এবং আবার ফিরে আলতো করে তিয়াশার চোয়াল ধরল, তার মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে ফেরাল।
__”আবার আমার উপর রাগ করো না, ঠিক আছে? আমি আমার বউ এর চিৎকার শুনতে আমার উপর তার ভালোবাসার উন্মাদনা দেখতে চাই। নাহলে আমি তোর উপর রাগ করব। আর তুই তো জানিস , যখন আমার রাগ হয়, আমি কোথায় আমার রাগ দেখাতে পছন্দ করি…”
জায়ন অল্প থেমে, মাথা কাত করে আবার ঘাড়ে চুম্বন করল তিয়াশা চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নিল। অফিস থেকে ক্লান্ত ঘন চাহনি, দিনের শব্দ সবই মুহূর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল। জায়ন কানের কাছে গিয়ে ঢিলে গলায় বলল,
__”আমি আমার রাগ ঝাড়ব এবং তোকে আমাদের বিছানায় শাস্তি দেব, বেইবি।”
তিয়াশা কাঁধে জড়িয়ে ধরে বলল, কণ্ঠে নরম করে,
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৬
__”বর, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কথা দাও যে তুমি কখনো বদলাবে না এবং এরকমই থাকবে।”
জায়ন আলিঙ্গন ভেঙে, তখনেই তিয়াশার গাল হাতে নিয়ে গভীর ভালোবাসা আর দৃঢ় সঙ্কল্পে প্রতিশ্রুতি দিল,
__”যদিও আমরা বুড়ো হয়ে যাই এবং আমাদের জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাই, তোর প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো বদলাবে না। আমি তোকে এভাবেই চিরকাল ভালোবাসব জান। কারন আমি তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত জান”
ব্যালকনির সেই নীরব রাতে, চাঁদের আলোর নিচে তারা দু’জন জীবনকে আবার একবার নতুন করে শপথ করল। রাগ ভুলে যাক, ক্ষেপ উঠে যাক তবু শেষ প্রান্তে ভালোবাসাই তাদের একমাত্র ঠিকানা।
