তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৪

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৪
নওরিন মুনতাহা হিয়া

ইনায়া রাগী স্বরে শান্ত হয়ে হাজার আবার পুলিশের কাছে শাফায়াতের মৃত্যুর ফাইলের বিষয়ে জানতে চাই, কিন্তু পুলিশ তার কথায় অটল থাকে শাফায়াতের মৃত্যুর সম্পূর্ণ ঘটনা তার বা থানার অজনা তা বলে বিদায় করে দেয় ইনায়াকে। শেষ মূহুর্তে ইনায়া মিনতি করে বলে একবার পুরানো ফাইল চেক করে দেখতে, থানায় এক কোণে থাকা তালা বন্ধ রুমে হয়তো কোথাও না কোথাও তার মামার মৃত্যুর কেনো তথ্য লুকিয়ে আছে। ইনায়া নিজের মামার খুনির বিষয়ে জানতে চাই, তার আগন্তুক শএুর পরিচয় স্পষ্ট করে সকলের সামনে তাকে দোষী প্রমাণ করতে চাই। নিজের অতীতের সকল রহস্য জানার জন্য তার মন উতলা হয়ে গেছে।

ইনায়ার সকল চেষ্টা পুলিশের কাছে ব্যর্থ হয় সে তাকে নিষেধ করে দেয় থানায় তার মামার মৃত্যুর কেনো কাগজ নাই, পুলিশ তাকে বাধ্য করে থানা থেকে বের হয়ে যেতে। পুলিশের ব্যবহার ইনায়ার কাছে অদ্ভুত লাগে, তবে অরণ্য যথেষ্ট শান্ত থাকে পুলিশের বলা প্রতিটা কথা অরণ্যর কান অবধি আসে ইনায়া মিনতি আর রাগ সবই অরণ্য শুনে। তবুও অরণ্য শান্ত সমুদ্রের মতো শান্ত থাকে, একবার প্রতিবাদ করে নাই পুলিশের কথার বিরুদ্ধে ইনায়ার দেওয়া যুক্তির পক্ষে আওয়াজ তুলে নাই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রূপনগর থানার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে ইনায়া আর অরণ্য, বাহিরে প্রচুর রোদ তীব্র রোদে সারা গ্রাম পুড়ছে যেনো সূর্যর তেজ আজ একটু বেশিই। ইনায়ার শরীর রাগে আর রোদে পুড়ে যাচ্ছে, শরীর থেকে ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। ইনায়ার ভীষণ রাগ হচ্ছে তার এখন মনে হচ্ছে সে হাজার চেষ্টা করার পর ও ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, সত্যর খোঁজার প্রয়াস করে ও সে এক বিশাল সমুদ্রের অদৃশ্য মায়ার বেড়াজালে জড়িয়ে যাচ্ছে। ইনায়া সকল ভাবনার মাঝে অরণ্যর দিকে তাকায়, সূর্যের তাপ যেমন প্রখর অরণ্যর নীরবতা তার চেয়ে ও অধিক গম্ভীর।
অরণ্যর হঠাৎ করে এমন নীরব হয়ে যাওয়ার কারণ ইনাযার যানা নেই, সকালে যেই অরণ্যর মুখে হাসি মুখে কথা বলেছে এখন তার মুখ এত শান্ত । ইনায়া বলে –

“- অরণ্য কি হয়েছে আপনার? বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে আপনি এতো শান্ত হয়ে গেলেন কেনো? আপনাকে জোর করে থানায় নিয়ে এসেছি বলে কি রাগ করেছেন এই ইনায়ার উপর?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য তার দিকে তাকায়, শীতল চোখের চাহনি কণ্ঠে কেনো শব্দ নাই তবুও তার দৃষ্টি যেনো হাজার কথা বলে দিচ্ছে। অরণ্য চোখে এমন করে কবে তাকিয়ে দেখেছে ইনায়ার খেয়াল নাই, তবে আজ কেনো যানি অরণ্যকে তার বড্ড অচেনা লাগছে। বিয়ের পর অরণ্যর এমন শান্ত রূপের সম্মুখী তার অধিক বার হতে হয় নাই, কিন্তু আজ এমন কি হয়েছে যার জন্য অরণ্য এমন চুপ হয়ে যাচ্ছে। ইনায়া আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে –
“- অরণ্য উত্তর দেন কি হয়েছে আপনার? হঠাৎ করে আপনার চোখে মুখে এমন নীরবতা, গম্ভীরতা, আর এমন শীতল চোখের কারণ কি?

থানার সামনে থাকা দেয়ালে অরণ্য হেলান দিয়ে, নিজের শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দেয় এরপর ইনায়ার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে বিনয়ের স্বরে বলে –
“- ইনায়া আপনাকে যদি একটা অনুরোধ করে করি রাখবেন? শএু হিসাবে যদি একটা পরামর্শ দেয় শুনবেন?
অরণ্যর এমন কথা শুনে ইনায়া বুঝতে পারে অরণ্যর মনে বিশাল কোনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে, যার জন্য অরণ্য এমন শান্ত ব্যবহার করছে। ইনায়া আগ্রহ প্রকাশ করে –

“- বলুন কি অরণ্য কি এমন অনুরোধ বা আদেশ করবেন? শুনে দেখি শএুর কথায় কতো উপকার হয় আমার?
“- খুনের তদন্ত বন্ধ করে দেন। যে সত্যি খুঁজার চেষ্টা করছে তা মাটি চাপা দিয়ে দেন, মামার কবরের মতো তার মৃত্যুর রহস্য ও কবর দেন। চলুন নতুন করে আবার পথচলা শুরু করি “।
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে, অরণ্য তাকে খুনিকে শাস্তি দিতে নিষেধ করছে। শুরু থেকে অরণ্য সবসময় ওর সাপোর্ট করেছে তাহলে আজ কেনো এমন ব্যবহার করছে, ইনায়ার কাছে জবাব নাই ইনায়া বলে –

“- আপনি কি বলছেন তা যানেন অরণ্য? আর কয়েকমাস পর আদালতে আমার খুনের রায়, যদি এখন এসএস গ্রুপের অপরাধীর কথা না জানতে পারি। তাহলে কালকে আমার ফাঁসি হয়ে যাবে, আপনি কি আমার মৃত্যু কামনা করেন?
“- না ইনায়া আপনার মৃত্যু হলে আমি কি করে জীবিত থাকব বলেন। তবে আসল খুনির নাম না যানলে আপনার শারিরীক মৃত্যু হবে, আর খুনির পরিচয় জানলে মানসিক। কোন মৃত্যুর কষ্ট আপনার কাছে অধিক বলে মনে হয়?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া অবাক তাহলে কি অরণ্য যানে কে খুনি? খুনি কি তার খুব প্রিয়জন যার জন্য বলছে ইনায়ার কষ্ট হবে। কিন্তু তার পরিচয় কে খুনি হতে পারে? তার শএু হয়ে মৃত্যু কামনা করতে পারে? ইনায়ার উত্তর জানা নাই। ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আপনি কি যানেন মামার খুন করে করছে? আসল অপরাধী কে? সে কি আমার আপনজন?
অরণ্য শান্ত গলায় বলে –
“- যদি বলে যানি তাহলে? যদি বলি সে আপনার আপনজন তখন কি তার পরিচয় খোঁজা বন্ধ করে দিবেন?
“- কে সে? তার নাম কি? কে খুন করেছে আমার মামাকে? এসএস কোম্পানির মালিক কে? শহরের এতো নিরপরাধ শিশুকে খুন কে করেছে? এমন পাষাণ হৃদয় কার?
“- যদি না বলি?
“- আমার উত্তর চাই?
“- আপনার উত্তর চাই না আমাদের সংসার। ইনায়া যদি এই খুনের তদন্ত আপনি শুরু করেন তবে হারাতে হবে আমাকে। ফিরে যেতে হবে আবার চৌধুরী বাড়িতে, শএু ভেবে ঘৃণা করতে হবে আমাকে?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার মাথায় শুধু একটা কথা আসে সে জিজ্ঞেস করে ফেলে –

“- তাহলে কি আপনি খুন করেছেন শাফায়াত মামার? এসএস কোম্পানির খাবারে বিষ মিশিয়ে কি নিষ্পাপ বাচ্চাদের খুন করেছেন? এতো জঘন্য অপরাধ কি করেছেন আপনি অরণ্য “।
“- যদি আমার উত্তর হ্যা হয় তাহলে কি করবে? ছেড়ে চলে যাবেন আমাকে ডিভোর্স দিবেন আমাকে? আবার ইভান চৌধুরীর বউ হয়ে যাবেন?
“- হুম হয়ে যাব “।
অন্যদিকে ইভান রুম থেকে বের হয় নাই আজ তার মনে ভীষণ আঁধার জমে রয়েছে, তার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে যা দেখে বোঝা যায় সে সারারাত নিঘুমে কাটিয়ে দিয়েছে। সকালে সূর্যের আলো ইভানের চোখ মুখে পড়ে ইভান শ্বাস ফেলে বল৷ –

“- যার জন্য আমি হাজারো রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম, সে হয়তো অন্য কারো বুকে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। চাওয়ার অধিকার সবার থাকলে, ও পাওয়া ভাগ্য সবার থাকে না। কি করে পাওয়া যায় এমন ভাগ্য যে ভাগ্যে আপনি আমার হবেন ইনায়া “।
ইভান কথাটা ভেবে মৃদু হাসে সেই হাসির মধ্যে কতো দুঃখ লুকিয়ে রাখা ছিলো, তা সবার অজানা। প্রতিটা মানুষ জীবনে একবার ভুল করে, কিন্তু তার ভুলের শাস্তি সরূপ কি তার প্রিয় মানুষকে নিজের জীবন থেকে কেঁড়ে নেওয়া উচিত। কিন্তু ইনায়াকে কেউ ইনায়ার জীবন থেকে জোর করে কেঁড়ে নিয়ে যায় নাই, ইভান সব ইচ্ছায় তাকে অন্যর হাতে তুলে দিয়েছে। তবে আজ কেনো তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য এতো হাহাকার, কেনো তার সাথে জীবন কাটানোর এক আকাশ পরিমাণ ইচ্ছা ইভানের। সব কথার কেনো উত্তর যানা নাই ইভানের, শুধু বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে শ্বাস ফেলার জন্য ও ইনায়ার প্রয়োজন তার জীবনে।

সকালে অফিসে যেতে হবে যার জন্য বিছানা থেকে উঠে বসে, সারারাত অনিদ্রা যাপন করার জন্য তার চোখ খুলছে না। তবুও দায়িত্ব পালন তাকে করতে হবে, যার জন্য সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অন্যদিকে ইনায়া অরণ্যর কথা শুনে চোখ পানি চলে আসে, যেই অরণ্য কাল অবধি ইভানের নাম তার মুখে শুনে খুন করার ধমক দিয়েছে। আজ তার সামনে থাকা সেই অরণ্য ইভানের জীবনে তাকে ফিরে যেতে বলছে অবিশ্বাস্য, ইনায়া তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে –

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৩

“- আপনারা পুরুষ জাতি এমন কেনো, যখন যার প্রয়োজন হয় তখন ব্যবহার করেন। আবার ছুঁড়ে ও ফেলে দেন। যানেন প্রিয়জন আর প্রয়োজন কথাটার মধ্যে বিশাল পাথর্ক্য। কারো প্রিয়জন হতে পারি নাই কখনো হবে প্রয়োজনে সবার শীর্ষ তালিকায় ছিলাম আমি “।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৫