তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩২

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩২
নওরিন মুনতাহা হিয়া

অরণ্য আর রেহানা বেগম ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছে, অরণ্য শব্দ করে হেঁসে যাচ্ছে। অরণ্যর এমন হাসি রেহানা বেহমের মনে ভয় সৃষ্টি করছে, কারণ তার ছেলের এমন ব্যবহার সন্দেহ জনক। চৌধুরী পরিবারের কোনো সদস্যকে অরণ্যকে ভালোবাসতে পারে না অসম্ভব, আর ইভান চৌধুরীকে শুরু কষ্ট দেওয়ার জন্য ইনায়াকে অরণ্য বিয়ে করে নাই। যে শাফায়াত মৃত্যুর আসল অপরাধী অরণ্য, সে কেনো ইনায়াকে নিয়ে তার নানার বাড়িতে গিয়ে শাফায়াতের মৃত্যুর রহস্য সমাধান করবে। রেহানা চৌধুরীর যা মনে হচ্ছে অরুণ কোনো গভীর ষড়যন্ত্র করছে, সকলের সামনে অরণ্য যতই সাধারণ আর বোকা সাজার নাটক করুক না কেনো। আসলে অরণ্য সবচেয়ে বেশি চালাক আর নিষ্ঠুর। রেহানা বেগম বলে –

“- অরণ্য সত্যি করে বলো ইনায়াকে কেনো বিয়ে করেছ তুমি? যদি চৌধুরী বাড়ির প্রতি প্রতিশোধ নিতে ইনায়াকে বিয়ে করে থাকো , তাহলে বিয়ের প্রথম দিন থেকে ওর উপর অত্যাচার করো নাই কেনো? যদি তুমি শাফায়াতকে হত্যা করে থাকো তাহলে রূপনগর গ্রামে কেনো গিয়েছিলে? বউভাতের দিন তুমিই ইনায়াকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিলে? আবার তুমি ওকে বাঁচানোর জন্য জর্জকে টাকা দিয়েছ? আসলে অরণ্য তুমি করতে কি চাও?
মায়ের কথা শুনে অরণ্য শব্দ করে হেঁসে উঠে, যাক পৃথিবীতে একজন মানুষ রয়েছে যে তার আসল রূপ সম্পর্কে যানে। অরণ্য শান্ত হয়ে রেহানা বেগমের দিকে তাকায় আর বলে –

“- হুম ইনায়া আমার খেলার ছোট একটা গুটি মাএ সে আমাকে সম্পূর্ণ খেলা জিতিয়ে দিবে। চৌধুরী বাড়ির উপর প্রতিশোধ নেওয়া মাএ শুরু, আর শাফায়াত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় না বরং ওকে আমি খুন করেছি। কারণ ও আমার বাবাকে খুন করেছে, কর্ম ফল প্রতৈক মানুষের ভোগ করতে হয়। আর এখন অবধি ইনায়ার সাথে যা যা হচ্ছে ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ওর ফাঁসির রাই হচ্ছে, বা রূপনগর গ্রামে ওর মামার মৃত্যুর রহস্যর খুঁজে যাচ্ছে সব আমার পূর্ব পরিকল্পনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরণ্য নিজের মুখে সব সত্যি বলে, রেহানা বেগমের রাগ হচ্ছে ওনার ছেলের উপর। অরণ্য ঠিক কতটা জঘন্য আর নোংরা তা রেহানা বেগম যানে। আর এইজন্য রেহানা বেগম তার ছেলেকে ঘৃণা করে, এই ভালো মানুষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত চেহারা সে দেখতে চাই না। রেহানা বেগম ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে –
“- ছিঃ অরণ্য তুমি ঠিক কতটা নিচুঁ মন মানসিকতার অধিকারী। ইনায়া তোমার স্ত্রী হয়, বিয়ের পর ওকে সবসময় আগলে রাখা বিপদে ওর পাশে থাকা তোমার দায়িত্ব। আর তুমি নিজের প্রতিশোধ আর স্বার্থের জন্য ওর সাথে মিথ্যা ভালোবাসার নাটক করলে, এসএস কোম্পানির খাবারে বিষ ইনায়া মিশায় নাই তবুও ওকে তুমি ওকে বিনা কারণে জেলে পাঠালে। রূপনগর গ্রামে গিয়ে শাফায়াতের মৃত্যুর বিষয়ে কিছু যানতে পারবে না জেনে ও ওর পাশে থাকার অভিনয় করলে। এসএস কোম্পানির আসল অপরাধী কে তা যানার পর ও সত্যিটা বলছ না কেনো তুমি? আর কয়দিন পর যদি ইনায়ার ফাঁসি হয়ে যায় তবে তুমি শান্তি পাবে?

রেহানা বেগমের কথা অরণ্যর সয্য করে নেয়, কিন্তু তার প্রতি তার মায়ের ঘৃণার দৃষ্টি সয্য করতে পারে না। অরণ্যর বুকের ভিতর অনেক কষ্ট হচ্ছে, তার মায়ের চোখের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। অরণ্য বলে –
“- আম্মু তোমার কি মনে হয় এই অরণ্য রাজ চৌধুরী এতো জঘন্য? নিজের ছেলের মাথায় থাকা পরিকল্পনার বিষয়ে জানা, আর ছেলের চোখ দেখে সত্যিটা বোঝার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকে? সব ঘৃণা আর রাগ ভুলে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলো না আম্মু। এই চোখে কি তুমি ইনায়ার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাও না? নিজের বাবার খুনের প্রতিশোধ নেওয়ার হিংস্রতা কি দেখতে পাও না? এতো বছরে শুধু একবার মায়ের মুখে নিজের নাম শুনার আত্মানাথ কি তুমি দেখতে পাও না? ওই চৌধুরী বাড়ির মিলন চৌধুরীর আর অরুণা বেগমের প্রতি ঘৃণা কি দেখো না? শুধু কি মিথ্যা অভিনয় আর স্বার্থ দেখো?

অরণ্যর কথা শুনে রেহানা বেগম কতোখন থমকে দাঁড়ায়, তার শরীরে থাকা রাগ কমে যায়। অরণ্যর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে, বাবার মৃত্যুর পর অরণ্য আজ প্রথম কান্না করছে। রেহানা বেগম বলে –
“- অরণ্য তুমি কি ইনায়াকে ভালোবাসো? তাহলে ওকে শান্তি কেনো দিলে? আর তোমার বাবার খুন শাফায়াত করেছে টাকার জন্য, তুমি তো শাফায়াতকে মেরে ফেলেছ তাহলে আর কিসের প্রতিশোধ নিবে তুমি? কার থেকে প্রতিশোধ নিবে? মিলন চৌধুরী আর অরুণা চৌধুরী তোমার বাবার খুনি না? হ্যা ওনারা যা করেছেন আমাদের সাথে তা অন্যায়। আর ইনায়ার সাথে যদি তোমার কোনো শএুতা নাই, তবুও ওকে শাস্তি কেনো দিচ্ছো? ওর যদি ফাঁসি হয়ে যায় তখন তুমি করবে?
রেহানা বেগমের কথার জবাবে অরণ্য বলে –

“- আমি মারা যাব আম্মু, ইনায়াকে হারিয়ে ফেললে তোমার অরণ্য বাচঁবে না আম্মু। ইনায়াকে আমি অনেক ভালোবাসি, বিশ্বাস করো আম্মু ইনায়ার যদি ফাঁসি হয়ে যায় তাহলে আমি ও জীবিত দাফন হয়ে যাব আম্মু। ইনায়ার সাথে কোনো মিথ্যা নাটক বা অভিনয় আমি করি নাই, ওকে সত্যি ভালোবাসি আমি।
অরণ্য আর রেহানা বেগম অনেক সময় কথা বলে, মা ছেলে আজ প্রথম কোনো বিষয়ে কথা বলে। রাত প্রায় বারেরটার সময় অরণ্য রুমে ফিরে আসে, ইনায়া বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। বিছানায় শুয়ে পড়ে অরণ্য, ইনায়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে ওর বুকে ইনায়ার মাথা রাখে। ইনায়া ও ঘুমের মধ্যে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে, অরণ্য মনে মনে বলে –

“- সরি ইনায়া আপনাকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য। বিশ্বাস করেন ইনায়া এই অরণ্য চৌধুরী নিষ্ঠুর বা স্বার্থপর নয়। শুধু নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অতীত তাকে এমন তৈরি করেছে। তবে যায় হয়ে যাক অরণ্য আপনাকে নিজের থেকে দূরে করবে না কখনো। ভালোবাসি ইনায়া অনেক ভালোবাসি আপনাকে “.
অরণ্য কথাটা বলে ইনায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল প্রায় নয়টা বাজে ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে, আর তার মিটিং রয়েছে। ইনায়া যানে আজ চৌধুরী গ্রুপের তার কাজ, তার মানে আবার ইভানের সাথে দেখা হবে। ইনায়া জীবনে আর কখনো ইভানের সম্মুখী হতে চাই না, সে তার নতুন জীবন নিয়ে যথেষ্ট খুশি। আর ইভান নিশ্চয়ই নিজের অফিস নিয়ে বিজি থাকে। তবে ইনায়া নিজের কাজের জায়গায় যথেষ্ট প্রফেশনাল, আর সে প্রতিটা কাজ মনোযোগ সহকারে করে। সেখানে ইভান যদি থাকে তাহলে নিজেকে এলেমেলো লাগবে তার, হাজার চেষ্টা করলে ও প্রথম ভালোবাসা কেউ ভুলতে পারে না।

অরণ্য রুমে এসে দেখে ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, অরণ্য আজ অফিসে যাবে। অরণ্য বলে –
“- কি হয়েছে ইনায়া? এমন লেখক সাহিত্যের মতো কোন ভাবনার জগৎতে হারিয়ে গেলেন?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার ঘোর কাটে আর বলে –
“- না কিছু হয় নাই। আসলে আজ দুইটা মিটিং রয়েছে, একটা চৌধুরী গ্রুপের মালিক ইভান চৌধুরীর সাথে। আর এসএস কোম্পানির শেয়ার হুল ডলারের সাথে।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩১

চৌধুরী গ্রুপ কথাটা শুনে অরণ্যর ইভানের কথা মনে পড়ে, আজ ইনায়ার ইভানের সাথে মিটিং রয়েছে। তবে ইনায়া যথেষ্ট সাধারণ ভাবে কথাটা বলে যেনো ইভান ওর কেউ হয় না, অরণ্য সেটা ভেবে খুশি হয়। সে ইনাযার কাছে যায আর বলে –
“- ওকে তাহলে আমি আপনাকে ড্রব করে দিব।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩৩