তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৪
নওরিন মুনতাহা হিয়া
সকাল নয়টা জানালা ভেদ করে রােদের আলো রুমে এসে পড়ছে ইনায়া। ঘুমন্ত ইনায়া পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়, সে নিজেকে অরণ্যর বুকে আবিস্কার করে। আষ্টপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে অরণকে, যেনো হাতের বাঁধন ছেড়ে দিলে অরণ্য পালিয়ে যাবে। আজ প্রায় দুইবছর পর এমন সকাল ইনায়ার জীবনে এসেছে, কতদিন অপেক্ষা করেছে শুধু এই সকালের জন্য। অল্প সময় ঘুমন্ত অরণ্যকে দেখে সে, এরপর ঘড়ির দিকে খেয়াল করে দেখে সকাল নয়টা। সবর্নাশ সকাল নয়টা বেজে গেছে, আর ইনায়া এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে।
_____ °★ আজ অফিসে মিটিং রয়েছে তার, তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে হবে। আজ সকালের নাস্তা তৈরি করার পরিকল্পনা করে ছিলো ইনায়া, কিন্তু এখন মনে হয় সেটা আর সম্ভব নয়। সকাল নয়টা যেহেতু বেজে গেছে নিশ্চয়ই রেহানা বেগম রান্না করে ফেলেছেন। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ইনায়া, এরপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। কিন্তু অরণ্য এখনো বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে, যার কারণ তার অসুস্থতার জন্য ঘুমের ঔষধ দিয়েছে। আর অরণ্যর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে, এতোদিন সে অফিসে যাবে না। বাড়িতে থাকবে রেস্ট নিবে, আর সে যেতে চাইলে ও ইনায়া তাকে যাওয়ার অনুমতি দিবে না “।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
_____ “- প্রায় বিশ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে ইনায়া। অফিসের কাজ শেষ হতে প্রায় রাত হয়ে যাবে, তখন গোসল করার সময় থাকবে না। যার জন্য সে এখুনি গোসল সেরে নেয়, এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিজা চুল টাওয়াল দিয়ে মুছতে থাকে। সামান্য তৈরি হয়ে নিচে চলে যাবে সে, কিন্তু যাওয়ার আগে অরণ্যকে ঘুম থেকো উঠানো দরকার। বিছানার কাছে এগিয়ে যায় ইনায়া, এরপর আলতো করে ভিজে যাওয়া হাতে অরণ্যর মাথায় হাত রাখে। শান্ত স্বরে ডাক দেয় –
____ “- সকাল নয়টা বেজে গেছে অরণ্য। ঘুম থেকে উঠুন। সকালে খাওয়া দাওয়া শেষ করে, ঔষধ খেতে হবে আপনাকে ___.
___ শান্ত স্বরে ডাকে ইনায়া, কিন্তু অরণ্য উঠে যা বরং সে নাক মুখ কুঁচকে না তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। অরণ্যর বাচ্চাদের মতো এমন আচরণ দেখে, ইনায়া হেঁসে ফেলে। ঘুমন্ত অবস্থায় অরণ্যকে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়, পুরুষ মানুষ কি এতো সুন্দর হতে পারে? সেটা বোধহয় তার স্বামীকে না দেখলে সে জানতে পারত না। কিন্তু এখন স্বামীর রূপের প্রেমে যাওয়া বাদ দিয়ে তাকে উঠাতে হবে, ইনায়া এখন সামান্য জোরে ডাক দেয় অরণ্যকে —-
____” অরণ্য ঘুম থেকে উঠুন। অরণ্য ___.
° গম্ভীর কণ্ঠে ইনায়ার ডাক শুনে অরণ্যর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে, তার সামনে তাকিয়ে দেখে ইনায়া বসে আছে সেখানে। এতোখনের বিরক্তিমাখা মুখ মুগ্ধতায় ছুয়েঁ যায়, সদ্য গোসল করে আসা নারীর রূপে উন্মাদ হয়ে যায় অরণ্য। সৃষ্টিকর্তার এক নিখুঁত সৃষ্টি তার বউ, যার রূপ,আর লাবণ্য যেনো অফুরন্ত। যেনো জান্নাতের হুর, যার প্রেমে অরণ্য হাজার বার শতবার পড়তে রাজি। অরণ্য তার লোভনীয় দৃষ্টি দিয়ে ইনায়ার সমস্ত শরীর একবার পর্যবেক্ষণ করে, অস্বস্তি বোধ করে ইনায়া। আজ ইনায়াকে ছুঁয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছা করছে অরণ্য, অবশ্যই ইনায়ার প্রতি তার অধিকার রয়েছে। বউ হয় তার সম্পূর্ণ হালাল বস্তু, অরণ্য একটান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে ইনায়াকে।
★° বিছানায় এক ধাক্কায় ফেলে দেয় ইনায়ার সম্পূর্ণ শরীর। অরণ্য তার উপর ঝুঁকে যায়, ইনায়ার নিশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। হার্টবিট যেনো এখন রেলের গতিতো ছুটে চলছে, যা অরণ্য অনুভব করতে পারছে। সামান্য ছোঁয়ায় তার বউয়ের যে অবস্থা করছে, যদি সম্পূর্ণ শরীর জুড়ে অরণ্যর হাতের বিচরণ চলে তখন কি অবস্থা হবে ইনায়ার। সম্পূর্ণ গাল লাল হয়ে যাচ্ছে ইনায়ার লজ্জায়, যেনো ওর গাল নয় বরং টমেটো। অরণ্য তার হাত দিয়ে ইনায়ার গাল ছুঁয়ে দেয়, এরপর এগিয়ে যায় সেখানে। দীর্ঘ সময় ধরে গাঢ় চুম্বন করে সেখানে, প্রায় শত খানের বার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। ইনায়া সঙ্গে সঙ্গে অরণ্যর গলায় হাত রাখে, অরণ্য ইনায়ার কানের কাছের গিয়ে মাতাল করা কণ্ঠে বলে –
____ “- শএু হয়ে জীবনে এসেছেন বউ হয়ে থেকে যান। সারাজীবন ভালোবাসা, আর যত্ন করে দিয়ে আগলে রাখব কথা দিলাম। ভালোবাসি বউ অনেক ভালোবাসি তোমায় “—–.
°★ ইনায়ার ভালোবাসি শব্দটা শুনে মনটা জুড়িয়ে যায়। তার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে, কম্পিত ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে দেয় অরণ্য। এরপর অগ্রসর হয় সেইদিকে, যখন ইনায়ার একদম কাছে গিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিত করবে। হঠাৎ করে তখন দরজায় করার শব্দ শুনা যায়, অরণ্য যথেষ্ট বিরক্ত হয়। সম্পূর্ণ মোড নষ্ট করে দিয়েছে তার, বাহির থেকে সায়মা ডাক দেয় –
___ “- ইনায়া তুমি কি এখনো ঘুম থেকে উঠো নাই। আজকে না তোমার অফিসে মিটিং রয়েছে? ইনায়া? ___
°★ অফিসের মিটিং শব্দটা শুনে ইনায়ার হুঁশ ফিরে আসে। তার দেরি হয়ে যাচ্ছে, এখন যদি অরণ্যর সাথে তাকে তবে তার মিটিং মিস হয়ে যাবে। শরীরের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে অরণ্যকে উঠিয়ে দেয় ইনায়া, এরপর তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যায়। বিরক্তি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে অরণ্য, দরজা খুলে দেয় ইনায়া। সায়মা বলে —-
____ “- এতো দেরি কেনো করলে ঘুম থেকো উঠতে? আম্মু কখন থেকে খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে যাচ্ছে তোমাদের। তাড়াতাড়ি নিচে যাও, না হলে কিন্তু বকা খাবে —-.
°★ রেহানা বেগম সকলের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট কড়া। সায়মার সাথে ইনায়া নিচে চলে যায়, তবো আয়ান তার মামার ঘরের ভিতরে আসে। এতাখন সায়মার কোলে ছিলো সে, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে অরণ্য। বাড়ির প্রতৈক সদস্য তার শএু, বউ এমনি তার থেকে দূরে দূরে থাকে। আর যখন বউ তার কাছে আসতে চাই, তখন বাড়ির কেউ এসে বিরক্ত করে। মনে হয় না এই জনমে অরণ্যর বাসর হবে, বিয়ের প্রায় তিনবছর হয়ে গেলো কিন্তু এখনো বাসর হলো না কি দুঃখের বিষয়।
°★ আয়ান রুমে প্রবেশ করে, বিছানায় শুয়ে থাকা অরণ্যর কাছে ছুটে যায়। এরপর আদুরে স্বরে বলে –
___ “- মামা কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করে বিছানায় শুয়ে আছো কেনো?
°★ আয়ানের কণ্ঠ শুনে অরণ্য এগিয়ে আসে তার কাছে। এরপর কোলে তুলে নেয়, অরণ্য বলে –
___ ” বউয়ের সাথে রোমান্স করতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু তোর মা সেটা হতে দিলো না। এখন আর কি করার চলো খেলা করি, রোমান্স সবার ভাগ্যে থাকে না —-.
★° অরণ্যর থেকে রোমান্স শব্দটা শুনে আয়ান সেটা জানার চেষ্টা করে এইটা কি। কিন্তু তার বাচ্চা মাথায় এই শব্দের মানে খুঁজে পায় না, আয়ান বলে —–
——– ” মামা রোমান্স কি? এইটা কি খাওয়ার জিনিস? আম্মু কি তোমার থেকে এই জিনিস কেঁড়ে নিয়েছে?
___ “- এর মানে তুমি এখন বুঝবে না আয়ান। বড়ো হলে অবশ্যই জানবে। এখন তুমি এখানে বসো, আমি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি। এরপর একসাথে খেলাধুলা করব___.
___ “- ওকে মামা ___.
সকাল খাওয়ার টেবিলে সকলে নাস্তা করার জন্য উপস্থিত হয়। অরণ্য, ইনায়া সহ সায়মা আর তার স্বামী। সায়মার স্বামী অনেক দিন বিদেশে থেকেছে, তার সমস্ত ব্যবসার বেশির ভাগ বিদেশে। যার জন্য তাকে সেখানে থাকতে হয়, জরুরি কাজের জন্য অরণ্য ইনায়ার বিয়েের অনুষ্ঠানে সে উপস্থিত হতে পারে নাই। যার জন্য তাদের বিয়েতে কোনো গিফট দিতে পারে নাই, সায়মার স্বামী রাব্বি বলে —-
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৩
____ ” অরণ্য ভাইয়া তোমাদের বিয়েতে আমার কিছুই গিফট দেওয়া হয় নাই। যার জন্য আমার আর সায়মার তরফ থেকে হানিমুনের টিকিট তোমাদের জন্য ___.
° রাব্বির থেকে হানিমুন ট্রুর কথা শুনে অরণ্য খুশি হয়ে যায়। একে বলে হয়তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। অরণ্য তার থেকে টিকিট নেয়, ইনায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। হানিমুনে গেলে এই অরণ্য তাকে কাঁচা চাবিয়ে খেয়ে ফেললে, তার যে কি অবস্থা হবে। অরণ্য ইনায়ার কাছে গিয়ে বলে —–
____ ” বউ তোমার হানিমুনে গিয়ে কে বাঁচাবে? তুমি শেষ। অরণ্য রাজ চৌধুরী তোমাকে শেষ করে দিয়েই শান্ত হবে __
