তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৮

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৮
অহনা আক্তার

মেয়েদের গায়ে হাত তুলাটা একদমই পছন্দ করেন না জহির তালুকদার। মেয়ের গালে হাত দিয়ে কান্না করা দেখে উনি বুঝেই গিয়েছেন ফারিশ হয়তো থা*প্পড় মে’রেছে। কপালে ভাজ পরে জহিরের। ছেলেতো তার বোনকে তাদের থেকেও বেশি ভালোবাসে, আগলে রাখে। তাহলে কি এমন হলো যে আদরের বোনের গায়ে হাত তুলতে হলো! গম্ভীর স্বরে ছেলেকে শুধায় জহির,
— ফাইজাকে থা’প্প’ড় কেন মে’রেছো ফারিশ?

ফারিশের বুকের ভিতরটা এখনো ধড়ফড় করছে। সময় নিয়ে শান্ত হয় সে। বাবা, মার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
— ওহ সিঁড়ি উপর মুসকানের সাথে ধস্তাধস্তি করছিল। সদর দরজা দিয়ে ঢুকার সময় এই দৃশ্য দেখি আমি। আর একটুর জন্য মুসকান সিঁড়ি থেকে উল্টে পরে যায়নি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে পায়ে ব্যথা পেয়েছে! পায়ে ব্যথা পেয়েছো তুমি? (মুসকানের দিকে তাকিয়ে)
মুসকান আমতাআমতা করে । আসলেও ওহ পায়ে ব্যথা পেয়েছে। বাঁচার জন্য বেকায়দায় পা রাখতে গিয়ে পয়ে অনেকটা আ’ঘাত লেগেছে। অস্ফুট স্বরে আহ্ও করেছিল তখন। কিন্তু সেতো ব্যথা না পাওয়ার ভান ধরে দাঁড়িয়ে আছে উনি বুঝলো কি করে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মুসকানের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে ফাইজা। ওর জন্য আজ প্রথমবার তার ভাই তার গায়ে হাত তুলেছে। এটা সে বিশ্বাসই করতে পারছে না!
ফারিশের মুখ থেকে একথা শুনে তাজমহল আর জহির দু’জনেই রেগে যান। তাজমহল ফাইজার বাহু টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কড়া কণ্ঠে বলেন,
— এসব কি শুনছি ফাইজা! অবুঝ তুমি? ছোট আছো এখনো? মুসকানের সাথে এমন করতে গিয়েছো যদি কিছু হয়ে যেত!
ফাইজা এবার চিল্লিয়ে উঠলো। ঝাড়া মেরে মায়ের থেকে নিজের বাহু ছাড়িয়ে বলতে লাগলো,

— থামো এবার! সারাক্ষণ শুধু মুসকান, মুসকান, মুসকান !! মুসকান ছাড়া আর কিছু বুঝো তোমরা? এই মেয়ে আমার বাবা, মা, ভাই সবাইকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। ওহ আমার ভাইকে পর বানিয়ে দিয়েছে। ওর জন্য আজ আমার ভাই আমার গায়ে হাত তুলেছে। তোমরা আমার সাথে রোড ব্যবহার করছো….
” ফাইজা ” (চিল্লিয়ে উঠে ফারিশ)
এবার তাজমহল মা’রল ফাইজার গালে চ*ড়। জহিরও জোরে ধমক দিল। তাজমহল চেঁচাল,
— এতো বি’য়াদব কবে থেকে হলে তুমি? মুসকানের সম্পর্কে এমন ধারণা কিভাবে নিতে পারলে? হঠাৎ কি এমন হলো যে মুসকান কে এইরকম ভাবতে শুরু করেছো?’
ফারিশ এসে ফাইজার সামনে দাঁড়াল। রাগ দমিয়ে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

— কি করেছে মুসকান তোর সাথে? ওর সাথে এরকম করছিস কেন?
ফাইজা চুপসানো দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকায়। অন্যায় টা তো তারই। কি বলবে এখন। ফাইজার চুপ থাকা দেখে ফারিশের রাগ বাড়ে। মুসকানের দিকে তাকিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,
— তুমি বলো কি হয়েছে তোমাদের? এতোদিন তো ভালোই মিল ছিলো দু’জনের মাঝে। হঠাৎ কি হলো যে ফাইজা তোমাকে সহ্যই করতে পারছে না!

মুসকান আড়চোখে একবার তাকালো ফাইজার দিকে। ফাইজা দুই পাশে মাথা নেড়ে মুসকানকে কিছু না বলতে ইশারা করছে। ভয়ে, আতঙ্কে ফাইজার হাত-পা ঠান্ডা। মুসকান কি করবে বুঝতে পারছে না। ফাইজা যেভাবে তার উপর ক্ষেপে আছে এখন কিছু বললে নিশ্চিত আরো ক্ষেপে যাবে । তাছাড়াও ঘরের প্রত্যেকেই এখন রাগান্বিত হয়ে আছে। রাগের মাঝে আরো রাগের কথা বললে বিস্ফোরণ ঘটতে সময় লাগবে না! মুসকান ভাবলো সে ফাইজাকে ঠান্ডা মাথায় আবারও বুঝাবে। এরপরও যদি ফাইজা না বুঝতে চায় তাহলে নাহয় ওদের কে বলা যাবে। ওরাই ফাইজাকে মানিয়ে নিবে। ফারিশ এখনো থমথমে ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে মুসকানের দিকে। মুসকানের দৃষ্টি ছন্নছাড়া। এদিকেওদিকে অযথা নজর ঘুরিয়ে চলেছে। ফারিশের কড়া চাহনি এখনো মুসকানের উপর,,

— কি হলো কথা বলছো না কেনো দু’জনে?
মুসকান উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। একটু চিন্তা ভাবনা করার পর মিথ্যে বলে,
— আ..আমি দুষ্টমি করে ফাইজার ফোন ছিনিয়ে এনে ছিলাম। ফাইজা নিজের ফোন নেওয়ার জন্য এ..মন করেছে।
ফারিশের কঠোর স্বর,
— কোথায় ফাইজার ফোন?
ফাইজা তড়িৎ গতিতে নিজের ফোনটা দেখিয়ে বলে,
— এই যে ভাইয়া! এ..এই যে আমার ফোন। ভাবির থেকে নিয়ে নিয়েছি। (হাসার চেষ্টা করে)
ফারিশের খটকা লাগে। সন্দিহান গলায় শুধায়,
— কি আছে এই ফোনে যার জন্য এতো জোরাজোরি?
ফাইজা ঘাবড়ে যায়। এবার যেন হার্ট অ্যাটাক করে বসবে সে। যদি ফোন চেক করতে চায় তখন কি হবে!
মুসকান দ্রুত উত্তর দিল,

— গে…গেমস। ‘গেমস’ খেলছিলাম আমরা। কার আগে কে জিতে সেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছিল।
— তাহলে এতো ভয় কেন পাচ্ছো?
মুসকানের নিচু কণ্ঠ,
— আপনি রেগে আছেন এইজন্য।
ফাইজাও সুর মেলাল,
— হ্যা ভাইয়া।
মুসকান মনে মনে বলে আল্লাহ একটা মিথ্যের জন্য কয়টা মিথ্যে বলতে হচ্ছে রহমত করো!
ফারিশেরন সন্দেহ এখনো যায়নি। শুধুমাত্র গেমস খেলার জন্য ফাইজা মুসকানকে এতো গুলো কথা শুনাবে! ফাইজা হয়তো ভাইয়ের মনোভাব বুঝে যায়। তাই অপরাধী সুরে বলে,

— তুমি আমাকে থা*প্পড় মে’রেছো এটা আমি মানতে পারিনি। বাবা-মাও কেমন ধমকাচ্ছিল তাই রাগের মাথায় ভাবিকে এতোগুলো কথা বলে দিয়েছি। সরি ভাবি। ‘আমি সত্যিই সরি’। (মুসকানের দিকে তাকিয়ে)
— তাই বলে ধস্তাধস্তি করার জন্য আর কোনো জায়গা পেলে না? সিঁড়ির উপরেই কেনো? (তাজমহল)
ফাইজা মাথা নুয়ে সরি বলল। তাজমহল এবার মুসকানের দিকে তাকায়। শক্ত কণ্ঠে বলে,
— একদমই সাবধান থাকোনা তুমি! এই অবস্থায় চঞ্চলতা টা কমিয়ে দিলে তোমাকে কেউ জে’লে বন্দী করে রাখবে না। এবার একটু সাবধান হও। নিজের দিকে খেয়াল রাখো। ফাইজা যখন নিজের ফোন তোমার থেকে নিতে চাইছিল তুমি তখনই ফোনটা ছেড়ে দিতে। তাহলে আর এই পরিস্থিতিতে পরতে হতো না। ফাইজার কথা ছাড়ো! তুমিতো জানো তোমার এখন কতটা সাবধান থাকা প্রয়োজন। এরপরও এইরকম একটা ভুল কি করে করতে গেলে? ছেলে মানুষি ছাড়ো এখন। মা হতে যাচ্ছ। চোখ কান খোলা রেখে চলাফেরা করো। আমার ছেলেটার চিন্তাও এবার একটু কমাও ।

— আহ মা কি হচ্ছে? (ফারিশ)
মুসকানের চোখ ভিজে আসে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। এর আগে তার শাশুড়ি ওরফে বড়চাচি কখনো তার সাথে এমন কড়া গলায় কথা বলেনি। আর যা বলেছে ঠিকইতো বলেছে। একদমই অসাবধান সে। কি দরকার ছিলো ফাইজার সাথে বাড়াবাড়ি করতে যাওয়ার। সে তো জানে সে এখন আগের মতো ছোটাছুটি করতে পারবে না। তার জন্য ফারিশেরও চিন্তার শেষ নেই।
ফারিশ মুসকান কাছে আসে। হাত চেপে ধরে বলে,
— রুমে চলো। পায়ে কোথায় ব্যথা পেয়েছো দেখি।
জহির বলেন,

— হ্যা নিয়ে যাও রুমে। আর তুমি,,, (ফাইজাকে উদ্দেশ্য করে) রাত হয়েছে অনেক। নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও এখন। আর কখনো যেন মুসকানের সাথে এমন ব্যবহার করতে না শুনি।
ফাইজা মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলে। স্বস্তির শ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। তাজমহল আর জহিরও নিজেদের ঘরে চলে যায়।
মুসকান ফারিশের চোখে চোখ মিলাতে পারছে না। আসামির মতো মাথা নুইয়ে রেখেছে। ফারিশের নিরবতায়ই বলে দিচ্ছে সে এখনো রেগে। মুসকান ক্ষীণ আওয়াজে বলল,
— সরি। আর এমন হবে না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফারিশ। মুসকান কে পাজা কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। আলগোছে বিছানায় বসিয়ে বলে, — পা দেখাও..

— তেমন একটা লাগে নি।
— আমি দেখাতে বলেছি!
মুসকান ডান পা টা বাড়িয়ে দিতেই ফারিশ মুসকানের ব্যথাযুক্ত পা টা আলতো করে ধরে নিজের হাঁটুর উপর রাখে। ফর্সা পা গোড়ালির দিকটায় অনেকটা ফুলে লালবর্ণ ধারণ করেছে। ফারিশ হালকা হাত লাগাতেই মুসকান ব্যথায় অস্ফুট শব্দ করে উঠে। ফারিশ খাটের পাশে রাখা ড্রয়ার থেকে ব্যথার স্পেটা বের করে সেটা লাগাতে লাগাতে বলল,
— আর কোথাও লেগেছে?
মুসকান দু’দিকে মাথা নাড়ে। ফারিশ আবার বলল,
— খিদে পেয়েছে? কিছু খাবে?
মুসকান আবারও না করল। ফারিশ তপ্ত শ্বাস ফেলে স্পেটা রেখে উঠে যেতে নিলে মুসকান ফারিশের বাহু ধরে আটকিয়ে দেয়। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,

— আমার ভালো লাগছে না। আপনারা সবাই আমার উপর কেমন রেগে আছেন। আপনি কেমন বা’ঘের মতো গম্ভীর হয়ে কথা বলছেন। আমার কষ্ট হচ্ছে, কান্না পাচ্ছে। এমন কেন করছেন?
— রেগে যাওয়ার মতো কাজ করো কেন তাহলে ?
— আর করবো না বলেছিত।
ফারিশ একটু নরম হলো। মুসকানের হাঁটু তে দু’হাত রেখে মুসকানের দিকে তাকালো,
— যদি করো?
মুসকান স্পষ্ট কণ্ঠে বলল,

— করবো না।
ফারিশ বেশ কিছুক্ষণ মোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল মুসকানের দিকে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর মেয়েটা যেন আরো গুলোমুলো আর আকর্ষনীয় হয়ে গেছে। দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে। ফারিশ সন্তপর্ণে নিজের ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিয়ে যায় মুসকানের পেটের দিকে। কামিজর উপরই আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে সেখানে নাক ঘষে বলে ,
— জান বেড়িয়ে গিয়েছিল আমার। এখনো মনে হলে হলে হৃদপিণ্ড ধুকধুক করে। তোমাদের কিছু হলে ম’রে যাবো আমি। একেবারে ম’রে যাবো।
মুসকানের সমস্ত শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। বক্ষস্থলে তোলপাড় শুরু হলো। ফারিশের মোলায়েম চুল গুলোতে হাত ডুবিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
— আমরা ঠিক আছিতো।

রিতার বিয়ে ঠিক করেছে মোকলেস। তাও আবার দুই বাচ্চার বাপ একটা বয়স্ক লোকের সাথে। পাত্রের আছে অঢেল টাকা পয়সা। পাত্র নিজে রিতার বাবাকে কথা দিয়েছে মেয়ে উনার কাছে বিয়ে দিলে উনি নগদ পাঁচ লাখ টাকা মোকলেসের হাতে তুলে দিবেন। তাছাড়া মোকলেসের ব্যবসার যতো লস যাচ্ছে সব মিটিয়ে দিবেন। রিতার নামে জায়গা দিবেন যেটার মালিক নামে মাত্র রিতা কিন্তু আসল মালিকানা থাকবেন মোকলেস শেখ। এতো কিছু পাওয়ার লোভে পরে মোকলেস কাউকে না জানিয়ে একমাত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেললেন টাক ওলা ওই বয়স্ক লোকের সাথে। এমনকি নিজের ছেলেকেও জানান নি। ছেলের পরিবর্তন মোকলেস শেখ মেনে নিতে পারছেন না । এতো বছর ধরে ছেলেকে পুষ মানিয়ে নিজের আয়ত্তে এনে এখন হঠাৎ সেই ছেলে তার হাতের বাইরে চলে গেল। সারাক্ষণ মা মা করে আর ফোন নিয়ে পরে থাকে। ছেলেকে এখন আর বিশ্বাস করে না মোকলেস শেখ। বোনের বিয়ে এমন লোকের সাথে ঠিক করেছে জানলে যদি বাঁধা দেয় বিয়েটা ভেঙে দেয় তাহলে আম ও যাবে ছালা ও যাবে। তাই যা করার উনিই করেছেন। মেয়ে রিতাকে মায়ের সাথে দেখা করাতে নিবে এটা সেটা বলে তাকে কাজি অফিসে নিয়ে আসেন। পাঁচ লাখ টাকা অলরেডি নিজের পকেটে পুড়ে নিয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে যায় তত ভালো। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে তখন আর কোনো চিন্তা থাকবে না।

কাজি অফিসের সামনে এসে যখন রিতা বাবার এমন নিকৃষ্ট মনোভাব বুঝতে পারে তখন ঘে*ন্নায় তার গা গুলিয়ে আসে। কান্নাকাটি করে। বাবার পায়ে পরে। ওইরকম একটা লোকের সাথে তাকে বিয়ে না দেয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করে। কিন্তু মোকলেস শেখের কানে কথা ঢুকে না। উনি মেয়েকে বুঝ দেন,, সে খুব সুখী হবে। টাকার উপর ঘুমাতে পারবে। যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। ‘
রিতা যখন কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে ঠিক তখনই অস্বাভাবিক ভাবে ছুটে আসে তার ভাই। রিশাদকে দেখে রিতার কলিজায় পানি আসে। বাবার হাত থেকে কোনো রকমে ছুটে ভাইকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। দাদির থেকে জানতে পেরেছে রিশাদ তার বাবার এমন নিচু কাজ সম্পর্কে। রিশাদের দাদি আর যাইহোক ছেলের পাশাপাশি নিজের নাতি নাতনিদেরও খুব ভালোবাসেন। রিশাদ এখন সচারাচর বাড়িতে থাকে না বলে বাবার এমন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারে নি। যখন জানতে পারে আর একমিনিটও সময় ব্যয় না করে বোনকে বাঁচাতে ছুটে আসে…

দুপুরে খাওয়ার পর নিজের রুমেই একটু হাটাহাটি করছিল মুসকান। ফারিশ বাড়ি নেই। কাজের জন্য আজও ঢাকার বাইরে গেছে। ফাইজা মুসকানের দরজার সামনে পাঁচ মিনিট যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে। কাল সারারাত সে ঘুমাতে পারেনি মুসকানের সাথে এমন একটা বা’জে ব্যবহার করার জন্য। হঠাৎ যে তার কি হলো সে নিজেও বুঝলো না। সে তো ভেবেছিলো মুসকান অন্যসব ভাবিদের মতো ডা’ইনি ভাবি হয়ে গেছে। বাবা-মা, ফারিশ ভাইয়া সবাইকে রিশাদের কথা বলে দিয়ে তাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দেওয়ার ফন্দি আঁটছে। কিন্তু মুসকান কতো সুন্দর করে কথা কাটিয়ে তার ভাইয়ার হাত থেকে তাকে বাঁচিয়ে দিল। না, না, তার এমন লক্ষি একটা ভাবির সাথে এমন ব্যবহার করা মোটেও ঠিক হয়নি তার। মনে মনে এখনো খুব গিলটি ফিল করছে ফাইজা। মুসকানের সাথে ভাব জমানো না পর্যন্ত শান্তি হবে না তাঁর । এইজন্যই সকাল থেকে উসখুস করতে করতে এখন ছুটে এসেছে মুসকানের কাছে। দরজায় টুকটাক শব্দ শুনে মুসকান গলা চড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

— কে?
— ভাবি আমি ফাইজা। তোমার সাথে কথা ছিলো?
— আসো ভিতরে দরজা তো খোলাই আছে।
ফাইজা মুখটাকে চুরি করা চোরের মতো অসহায় বানিয়ে মুসকানের ঘরে ঢুকল। মিনমিনিয়ে বলল,
— তোমাকে সরি বলতে এসেছি।
মুসকান শীতল চোখে তাকিয়ে রইল। ফাইজা আবার বলতে লাগল,
— আমি জানি তুমি আমার ওই কথাগুলোতে খুব কষ্ট পেয়েছো। আমার তোমাকে ওইভাবে বলা উচিৎ হয়নি ভাবি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি আর কখনো তোমার সাথে ওইরকম আচরণ করবো না । এই যে কানে ধরছি। প্রমিজ করছি।

— আমি কোনো কষ্ট পাইনি ফাইজা। ননদ ভাবিদের মধ্যে এইগুলো এবেইলেবল হয়ে থাকে। আর এখানে দোষ আমারও ছিল।
— মোটেও এখানে তোমার দোষ ছিল না। আমার ছিল। আর বললেই হলো কষ্ট পাও নি। আমি জানি আমার রুমে বলা কথা গুলোয় তুমি খুব কষ্ট পেয়েছো।
— তাই নাকি!
–‘ হুঁ ‘
— তাহলে ওগুলো বললে কেন?
— রাগের মাথায় বলে ফেলেছি ভাবি। আর কনোদিন বলবো না। সত্যি বলছি এবারের মতো ক্ষমা করে দাও!
মুচকি হাসে মুসকান,

— এভাবে বললে কি ক্ষমা না করে থাকা যায়।
ফাইজার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে। লাফ মেরে সে মুসকানকে জড়িয়ে ধরে। তবে হালকা করেই ধরেছে যেন তার ভাতিজা/ভাতিজিরা ব্যথা না পায়।
মুসকান এবার শব্দ করেই হাসে,
— তোমার ভাইয়ের মতো তো তুমিও আমাকে কম ভালোবাসো না। তাহলে এতো হিংসে কেন?
ফাইজা দুষ্টু কণ্ঠে বলে,

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৭

— ওইতো মায়ের সাথে সিরিয়াল দেখতে দেখতে দু*ষ্টু ননদ হওয়ার ট্রাই করেছিলাম। আর করবো না।
— ফাজিল।
— ফাজিল নয় ফাইজা।
এবার দুজনেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। দরজার আড়াল থেকে তাজমহলও তাদের দেখে গাল ভারে হাসেন।

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ২৯