তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ৯
অহনা আক্তার
কেটে গেছে বেশ অনেক গুলো দিন। মুসকান ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে। সেইদিন হসপিটাল থেকে ফেরার পর হিয়ার ব্যাপারে আর কিছুই শুনেনি সে। আর না ধরেছে ফারিশের ফোন। ভুলেও ফারিশের ফোনে টাচ করেনি মুসকান। সে যত কলই তার সামনে বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যাক না কেন। রোজ রাতে ফারিশের সাথে তর্কাতর্কি চলে মুসকানের। ফারিশ বিনা কারণে মুসকানকে এটা সেটা বলে রাগিয়ে দেয়। আর মুসকান গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। এটা দেখতেই ভালো লাগে ফারিশের। তাজমহলের কথায় প্রতিদিন রাতে এখন খাবার নিয়ে মুসকানকেই ওয়েট করতে হয়। আর এটা নিয়েই মূলত ঝগড়া চলে তাদের দুজনের মধ্যে।
মুসকানের জন্য এখন একটু জলদিই বাড়িতে ফিরতে হয় ফারিশকে। দিনেদিনে মুসকানের বাচ্চামোতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে ফারিশ। মুসকানের মায়বী চেহারার মায়ায় পরে যাচ্ছে। মুসকানের মুগ্ধতায় আটকে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ফারিশ ভুলেই যায় মুসকান আর তার বয়সের ডিফারেন্স। শাড়ি পরলে বাচ্চা মেয়েটাকে একদম যুবতী মনে হয় । একেবারে চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগে। তাজমহলের কথায় প্রায়ই শাড়ি পরে মুসকান। আর এদিকে মুসকানকে শাড়িতে দেখে হার্টবিট মিস হয়ে যায় ফারিশের।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাজমহল বলেছে স্বামীর সামনে সবসময় সেজে গুঁজে থাকতে। মুসকান তাই করে। শাড়ি পরে মায়াবী চোখ জোড়ায় গাঢ় করে কাজল এঁকে লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে যখন ফারিশের সামনে আসে ফারিশ তখন নিজের খেই হারিয়ে ফেলে। ভুলে যায় মুসকানের বয়স, ব্যবধান সব। মাথায় শুধু ঘোরে মুসকানতো তারই। একান্তই তার। তার নিজস্ব নারী। তার অর্ধাঙ্গীনি। মাঝরাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যখন মুসকানের গভীর কাছে চলে আসে, তখন মুসকানের কান্নায় হুস আসে তার। কোনো মতে নিজেকে সামলে বারান্দায় চলে যায়। মাঝে মধ্যেতো রেগে মাথায় আগুন ধরে যায়। বাবা-মা কে ইচ্ছে মতো ঝাড়তে ইচ্ছে হয় এমন একটা পিচ্চির সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য। যে পিচ্চি স্বামী সংস্পর্শে এলেই কাঁন্না শুরু করে।
আজও শাড়ি পরেছে মুসকান। বাচ্চা মেয়ে শাড়ি সামলাতে পারে না তাও পরতে হয় শাশুড়ীর কথায়। আজ শাড়ি পরার অবশ্য কারণ আছে। আজকে গ্রাম থেকে ফারিশের নানিজান সরমিলা বেগম আসছে কিছুদিন বেড়াতে। প্রায় বছর দুয়েক পরে আসছেন সরমিলা বেগম মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে। ফারিশকে খুব ভালোবাসেন তিনি। নাতি বিয়ে করেছে শুনা মাত্রই আর অপেক্ষা করেননি। পল্টি পল্টা বেঁধে তৈরি হয়ে গেছেন প্রিয় নাতির বউ দেখার জন্য।
আম্মাজানের জন্য কোনো কিছুর ক্রুটি রাখছেনা তাজমহল। মায়ের সব দরকারি জিনিস আগেভাগেই এনে রেডি করে রেখেছে। মুসকান তার বড়চাচি ওরফে শাশুড়ী মায়ের সাথে রান্না ঘরে কাজ করছিল।
তাজমহল সরমিলা বেগমের জন্য রান্না করছে আর মুসকান পাশে দাঁড়িয়ে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। এতোদিন মুসকান কে রান্নাঘরে কোনো কাজ না করতে দিলেও আজ দিলেন তাজমহল। কারণ তার আম্মাজান ছোটবড় মানবেন না। মুসকান বাড়ির বউ আর বউ হয়ে যদি রান্নাঘরে না থাকে, কাজে হাত না লাগায় তাহলে তাকে কথা শুনাতে এক বিন্দু পরিমাণও ছাড় দিবেন না সরমিলা বেগম । তাজমহল চায় না তার আম্মাজান এসে বাপ ম’রা ছোট্ট মেয়েটাকে কথা শুনাক। এতোটুকুও বয়সে সংসারের কিইবা ধারণা থাকবে তার। উল্টো কারো কথা শুনে মন ভাঙবে। কষ্ট পাবে। চঞ্চলতা কমে যাবে। এই কয়দিনে মুসকানের সাথে থাকতে থাকতে বাড়ির সকলেই বুঝে গেছে মুসকান কতটা চঞ্চল। নিজের চটপটে রূপ দেখিয়ে বাড়ির সকলকে মুগ্ধ করে ফেলেছে মুসকান। বিশেষ করে ফারিশের বাবা জহির তালুকদারকে। তিনি মুসকানকে মা ছাড়া ডাকই দেন না।
ভাইয়ের শূন্যতার কোনো কমতি উপলব্ধি করতে দেন না জহির মুসকানকে। পুরো জাহিদের মতোই আচরণ করেন মুসকানের সাথে। মুসকানের এই প্রাণবন্ত রূপ এতোদিন ঢাকা পরেছিল বাবাকে হারিয়ে। কিন্তু ফারিশের পরিবারের সকলের ভালোবাসা পেয়ে সেই রূপ আবার ফিরে এসেছে। এরশাদ তালুকদার যখন ফোন দিয়ে নাতনির হাসিখুশি মুখটা দেখেন তখন উনার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। রাহিলাও মেয়ের পরিবর্তন দেখে শান্তি পায়। শুকরিয়া জানায়।
টুকিটাকি কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে শাশুড়ীর সাথে খুশগল্পে মেতে উঠেছে মুসকান। তাজমহলও যেন এতোদিনে নিজের রান্নাঘরের সঙ্গী পেয়ে গেলেন।
ফাইজাতো এদিকে কোনোদিন উঁকি দিয়েও দেখেনি। একাএকাই রান্না করতে হতো ওনাকে। সার্ভেন্টরা সব ধুয়া মুছা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাছে নিয়োজিত। রান্নাঘরের দিকটা তাজমহল একাই সামলাতো। আর তার থেকেও বড় কথা তাদের বাড়িতে কোনো মেয়ে সার্ভেন্ট নেই। একদিন একজন মহিলা সার্ভেন্ট রাতের বেলায় তাজমহলের ঘর থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পরেছিল। এরপর থেকে তাজমহল আর কোনো সার্ভেন্টদেরই বাড়িতে থাকার জন্য এলাও করে না। মহিলা সার্ভেন্টতো নাই। যে গুলো আছে সেগুলো দিনের মধ্যেই কাজ কমপ্লিট করে চলে যায়। ফারিশ কতো চেষ্টা করল তার মায়ের কাজে হেল্প করার জন্য বাড়িতে একজন মেয়ে রাখতে। সব কাজের লোকতো একনয়। কিন্তু তাজমহল রাজি হননি।
মুসকান আজ একটু ভীতু হয়েই আছে। ফাইজা থেকে শুনেছে তাদের নানিজান নাকি খুব কড়া মহিলা। কথায় কথায় ক্ষুত বের করা স্বভাব। তার মামিদের নাকি একটুও শান্তি দেন না। কড়া শাসনে রাখেন নাতনিদেরও। মুখের উপর কথা বলাতো একদমই পছন্দ করেন না। সেই থেকেই মুসকানের মনে ভয়ভীতি বাসা বেঁধেছে। তাঁর যে মুখের উপর কথা বলে দেওয়ার অভ্যেস। কেউ তাকে কিছু বললে সেও যে সাথে সাথে তার পাল্টা জবাব দিয়ে দেয়। এর জন্য যে মায়ের কত বকা খেয়েছে মুসকান তারতো কোন হিসেব নেই।
মুসকান একহাতে শাড়ির কুঁচি ধরে অন্যহাতে কফির মগ নিয়ে এগুচ্ছে ফারিশের ঘরে। ফারিশ কিছুক্ষণ আগে মাত্র ফিরেছে। লাঞ্চটা করেই আবার বেরিয়ে পরবে। কয়েকদিন যাবত একটা বিল্ডিং এর কাজ নিয়ে খুবই ব্যস্ত সে। ঘর্মাক্ত শরীরে এসেই আগে সাওয়ারে ডুকেছে। মুসকান ঘরে ঢুকে দেখে গলায় টাওয়াল জুলিয়ে রেখে একটা কাগজে তীক্ষ্ণ নজর বুলাচ্ছে ফারিশ। খালি গা পরনে ব্লাক পেন্ট । চুল থেকে টপাটপ পানির ফোটা পরছে। ফারিশকে খালি গায়ে দেখে খানিকটা লজ্জা পেল মুসকান। কফির মগটা এগিয়ে ধরে ধীর কণ্ঠে বলল,
— আপনার কফি..
ভ্রু উঁচিয়ে মুসকানের দিকে চাইলো ফারিশ। আর চাইতেই চোখে মুগ্ধতা এসে ভিড় করল। হাতের কাগজটা টেবিলের উপর সাবধানে রেখে কফির মগটা হাতে নিল। মুসকানের দিকে পলকহীন তাকিয়েই কফির মগে চুমুক দিতে লাগল। যা দেখে অস্বস্তি হতে লাগল মুসকানের। ইদানিং ফারিশের চাহনি নিতে পারে না সে। কেমন যেন গভীর করে তাকিয়ে থাকে লোকটা । পরনের খয়েরী রঙের শাড়ির আঁচলটা মাথায় ভালো করে টেনেটুনে একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল মুসকান। মিনমিনিয়ে বলল,
— আমি নিচে খাবার বাড়ছি আপনি আসুন।
ফারিশ নির্লিপ্ত ভাবে বলল,
— আজ শাড়ি পরেছো কোন খুশিতে? দিনদিন শাড়ি পরে আমাকে এভাবে হার্টের রোগী না বনালে কি চলছে না তোমার? আমি অসুস্থ হয়ে গেলে এর দায়ভার কে নিবে শুনি?
মুসকান বলার মতো কিছু খোঁজে পেল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অবুঝের মতো করে বলল,
— আজ নানিজান আসবে বলে বড়চাচি বলেছে পড়তে। নানিজান থাকাকালীন নাকি কিছুদিন পড়তে হবে। চলে গেলে আর পড়বো না।
ফারিশ স্মিত হাসে,
— তাহলেতো নানিজানকে সবসময়ের জন্য এখানে রেখে দিতে হয় দেখছি। আর যাই হোক উনার জন্য তোমার এই আবেদনময়ী রূপটাতো দেখতে পাবো রোজ রোজ।
মুসকান লজ্জা পেয়ে দরজার দিকে হাঁটা ধরে। যেতে যেতে অস্ফুট স্বরে বলে,
— খাবার দিচ্ছি জলদি আসুন। আর দাঁড়ালো না মুসকান দ্রুত পায়ে চলে গেল। ফারিশ পিছনে ডাকলেও শুনলো না।
বিকালের দিকে বাড়িতে এসে পৌঁছলেন সরমিলা বেগম। আর এসেই মুসকানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। সোফায় বসে উনার হেল্পিং হ্যান্ড লতিফাকে বললেন,
— আমার চশমাটা বাইর করতো লতু। এমনে স্পষ্ট দেইখবার পারতাছি না।
লতিফা চট জলদি ব্যাগ থেকে সরমিলা বেগমের চশমাটা বের করে দিলো। চশমা টা পরেই সরমিলা বেগম বড় বড় চোখ করে মুসকান কে দেখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলো। মুসকান বারে বারে ঢুক গিলছে। এভাবে দেখছে কেন তাকে। সে কি এলিয়েন নাকি।
সরমিলা বেগম গলা খেঁকিয়ে বললেন,
— হু রূপতো ভালোই দেখতাছি। তা গুন আছে কদ্দুর? নামাজ কালাম পারোনি? কোরআন পড়বার পারো? দেহি তোমার চুল গুলাইন দেহি একবার! বলেই মুসকানের ঘুমটা সরিয়ে তার দীঘল কালো ঘন কেশ গুলো দেখতে লাগলো।
তাজমহল ক্ষীণ আওয়াজে বলল,
— এখন বাদ দেননা আম্মাজান। আপনি কতো দূর থেকে এসেছেন। একটু রেস্ট নেন। মুসকানকেতো পরেও দেখতে পারবেন। সেতো কোথাও চলে যাচ্ছে না। বাড়িতেই আছে।
— তুই চুপ কর। আমার ওমন সুন্দর নাতির লাইগা কেমন বউ আনছোস দেখমো না আমি! লাখে একখান বউ আনতাম! শ্বওরের কথায়তো ডান-বাম না দেইক্কা পোলারে বিয়া পড়ায় দিলি!
— আম্মা মুসকানতো কোনো দিক থেকে কমনা।
— হো হেইডা তো দেখতাছিই। কেমন বাচ্চা মাইয়া বিয়া করায় লইয়া আইছোস আমার চান্দের লাহান নাতির লাইগা! এই মাইয়া সংসার করবো কি? বাচ্চা কাচ্চা পয়দা করবো কেমনে? এমন পাট কাঠির মতোন শরীরে আমার ফারিশের বংশধর জায়গা দিবো কই? নাতির ঘরের পুতি দেখার ভাগ্য বুঝি এই জন্মে হইবো না আর।
তাজমহল বলেন,
— আম্মা আল্লাহ চাইলে সব হবে। আপনি এখন আমার সাথে আসেন রেস্ট নিবেন।
সরমিলা বেগম যেন তাজমহলের কথা কানেই তুললেন না। উনি মুসকানকে উদ্দেশ্য করে কড়া কণ্ঠে বলতে লাগলেন,
— ওই ছেমরি হুন,,ভালা কইরা খাইয়া দাইয়া শরীরডারে একটু সতেজ বানা। আমি খুব শিঘ্রই আমার ফারিশের বংশধর দেখবার চাই। নাতির ঘরের পুতি দেইখা মরলেও শান্তি পামু।
মুসকান সরমিলা বেগমের কথা শুধু স্রোতার মতো শুনে গেল। এই বৃদ্ধ মহিলা আসতে না আসতেই বংশধর নিয়ে পরেছ। এসে থেকে তার শ্বাস আটকিয়ে বসিয়ে রেখেছে। প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করে যাচ্ছে! অনেক কষ্টে নিজের মুখটাকে বন্ধ করে রেখেছে মুসকান । কখন যেন ছুটে কথা বেড়িয়ে যায় এই ভয়ে হা পর্যন্ত করছে না।
তাজমহল এবার তাড়া দিয়ে বললেন,
— আম্মাজান এবারতো আসেন। আমি আপনার খাবার কখন থেকে বেড়ে রেখেছি।
সরমিলা বেগম উঠতে উঠতে বলেন,
— না আমি এখন খামু না। আমার হাত পা ধুইবার লাইগা গরম পানির ব্যবস্থা কর।
— আমি সব করে রেখেছি আম্মাজান রুমে চলেন আপনি।
সরমিলা বেগম নিজের জন্য বরদাস্ত করা রুমটার দিকে যেতে যেতে মেয়েকে বলতে লাগলেন,
— খুব শিঘ্রির ওই মাইয়ারে বুঝাইয়া হুনাইয়া কইছ বাচ্চা নিয়া নিতে। এখন না নিলে পরে আর হইবো না।
— আম্মাজান আপনি এসেই কি বাচ্চা নিয়ে পরলেন বলেনতো। সময় যখন হবে আল্লাহই দিবে। সবেতো মাত্র বিয়ে হলো।
— তুই থাম! আমার থেইক্কা বেশি জানস? তোর ভাই রসেলও প্রথম এই কথা কইছিলো। কই এখন বিয়ার ছয় বছর হইয়া গেল আমারে নাতিনাতনির মুখ দেহাইতে পারলো না। ওই অপয়া মাইয়ারেতো আমি কবেই বাড়ি থেইক্কা বাইর কইরা দিতাম হুধু মাত্র তোর ভাইয়ের লাইগা পারিনা।
তাজমহল তিক্ত কণ্ঠে বলেন,
— আম্মাজান আপনি আর কতোদিন এই ধারণা নিজের মধ্যে রাখবেন বলেনতো? বাচ্চা দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি চাইলে যখন ইচ্ছা তখনই দিতে পারেন। এটা নিয়ে আপনি কেন রাসেলের বউকে কথা শুনান?
— তুই কি বুঝবি। কষ্টতো আমার হয়। বড়পোলার বউডায়ও আমারে নাতির মুখ দেহাইতে পারলো না। জন্ম দিলো দামরা দামরা দুইডা মাইয়ার। এক মাইয়াতো বিয়া দিয়া জামাইসহ আমার বাড়িত ওই ফালায় রাখছে। আরেক মাইয়ারে যা মাডার্ণ বানাইতাছে। নামাজ কালামের নাম নাই। হারাদিন হুদু ত্যাড়িং ব্যাড়িং করে। পোলাগো মতোন পেন্ট পইড়া ঘুইরা বেড়ায়। ওইডারে কেডায় বিয়া করবো!
তাজমহল আর কথা বাড়ালো না। সে জানে তার আম্মাজান কেমন। কথা বাড়িয়ে লাভ হবে না। একটা নাতির খুব শখ সরমিলা বেগমের। কিন্তু না বড় ছেলে আর না ছোট ছেলে। কারো ঘরেই কোনো ছেলে সন্তান হলোনা। মেয়ে তাজমহলের ঘরেই প্রথম জন্ম হলো পুত্র সন্তানের। তাইতো ফারিশকে এতো স্নেহ করেন তিনি। সরমিলা বেগমের নাতি নাতনিদের মধ্যে ফারিশই সবচেয়ে বড় । তাজমহলের বিয়ে জহিরের সাথে ওনার বড় ছেলের বিয়ের আগেই হয়েছিল। না হয়নি। তাজমহল নিজে করেছে। শত্রুর ছেলেকে বিয়ে করায় তাজমহলের নামও শুনতে পারতেননা তাজমহলের আব্বাজান। কিন্তু যখনই ফারিশ জন্ম নিলো সব যেন ভুলে গেল সবাই। ফারিশ হয়ে ওঠলো সকলের অক্ষিতারা। ফারিশের নানাজানও ফারিশকে খুব ভালোবাসতেন।
সরমিলা বেগম চলে গেলে মুসকান যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। কতক্ষণের জন্য দম আটকিয়ে দিয়েছিল তাকে।
লতিফা হা করে মুসকান কে দেখছে। মুসকান লতিফার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালে লতিফা বলে,
— আফনিতো মেলা সুন্দর ভাবিমণি। এক্কেরে নাইকা অসরিয়া রাই। ফারিশ ভাইয়ের সাথে খুব সুন্দর মানাইছে আফনারে।
মুসকান মুচকি হেসে বলল,
— তাই। তা কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?
লতিফা মন খারাপ করে বলল,
— আমিতো লিহাপড়া করি না ভাবিমণি। কেলাস ফোর পর্যন্ত পড়ছি। এহন লিহাপড়া করলে কেলাস সেভেনে পড়তাম।
মুসকান তড়িৎ গতিতে বলল,
তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ৮
— কেন? লেখাপড়া করোনা কেন?
লতিফা সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল,
— সেই মেলা কথা। পড়ে একসময় আফনার লগে কমুনে। এহন যাই। দাদিজান আমারে না পাইলে খোঁজব।