তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৩

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৩
Raiha Zubair Ripti

পুরো আকাশ টা আজ মেঘলা। মন খারাপ করে বসে আছে বেলকনিতে আরু। থেকে থেকে আকাশ টা ডেকে উঠছে। আরাধ্য সবেই ফিরেছে ভার্সিটি থেকে। সারা রুম জুড়ে আরু কে না পেয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এগিয়ে আসতেই দেখে বেলকনিতে বসে আছে আরু। আরাধ্য চেয়ার টেনে পাশে বসে পায়ের উপর পা তুলে বলল-
-” কিরে এখানে কেনো তুই?
আরু ছোট্ট করে জবাব দিলো-

-” এমনি।
-” মান খারাপ?
-” মন খারাপ থাকলেও তাতে আপনার কি?
-” আরে বল মন টা ভালোও তো করে দিতে পারি।
-” গতকাল ভ্যালেন্টাইন্স ডে ছিলো।
-” তো?
-” তো মানে? আমার কি কিছু প্রাপ্য ছিল না?
-” সেম টু ইউ। আমার কি বাসর রাতে কিছু প্রাপ্য ছিলো না? আর তাছাড়া এসব ভ্যালেন্টাইন্স ডে টে পালন করে ভালোবাসার মানুষজনেরা। আমরা ওমন নাকি। আমরা কাজিন যাকে বলে তুই আমার চাচির পেটের বোন।
আরুর রাগ হলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” তো বিয়ে করছেন কি করতে?
-” অনেক কিছুই করতে। বাট তুই কিছুই করতে দিস নি।
-” আপনি একটা ডাহা লু’ইচ্চা জানেন?
-” একটু লু’চ্চামিপনা তাহলে করি?
-” করে দেখেন দাঁত ভেঙে দিব।
আরাধ্য নিজের মুখ টা এগিয়ে নিলো সাথে সাথে আরুর দিকে। ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল-
-” ভেঙে দেখা দাঁত।
আরু গলা চেপে ধরলো আরাধ্যর। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বলল-
-” খালি লু’চ্চামি করতে পারেন। চকলেট ডে তে না চকলেট দিছেন,রোজ ডে তে রোজ দেন নি,ট্যাডি ডে তে ট্যাডি দেন নি।

-” কিস ডে তে তো কিসও দেই নি। সেটাও বল।
-” আমি বাড়ি যাব।
-” কোন সুখে?
-” আপনার দুঃখে। মানুষজন কি সুন্দর শাড়ি পড়ে ঘুরলো গতকাল। কিন্তু আমি কি করলাম? টানা তিনদিন বাসার ভেতরই পড়ে রইলাম।
-” ঐ তুই কি নিজেরে বিশ্ব সুন্দরী মনে করস?
আরু বিরক্ত হয়ে বলল-
-” হ।
-” এ্যাহ আইছে আমার বিশ্ব সুন্দরী। আলকাতরা। তোরে যদি শাড়ি পড়াইয়া বাইরে নিয়ে যাই..তাইলে আমার মানসম্মান থাকবে নাকি?
-” মানে?
-” মানে হলো এই যে এমনিতেই তুই কালিতারা তার উপর আমার মতন হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে তোকে নিলে তো সুন্দরী সুন্দরী মেয়েরা পটবে না।
-” আপনি কি মেয়ে পটাতে চান। আরো বিয়ে করবেন সেজন্যই কি আপনার ফ্রেন্ড’দের সামনে সেদিন আমায় কাজিন বলে পরিচয় দিলেন?

-” চার বিয়ে কিন্তু জায়েজ রে আরু পুরুষের উপর।
-” এক বউয়ের মন জুগিয়ে চলতে পারেন না। আবার চার বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেন!
-” আমার একটা ড্রিম চার বিয়ে করার। আমার বাড়িটায় আমার বউদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকবে। আমি হসপিটাল থেকে ফিরলে একজন পানি আগায় দিবে..
-” আরেকজন আপনারে হিসু, হা’গু করাতে নিয়ে যাবে। আরেকজন আপনাকে ফিটার খাওয়াবে। তাই তো?
-” সর তুই আমার মুডের গুষ্টি শুদ্ধো করে দিলি। ভার্সিটি যাস না কেনো?
-” মানুষের নকশা দেখার ইচ্ছে নেই সেজন্য যাচ্ছি না। কাল থেকে যাব।
-” কাল তো দাওয়াত আছে।
-” কিসের?
-” আমার মামার বাড়িতে। মানে নিখিল মামার বাড়িতে।
আরু হো হো করে হেসে ফেললো কথাটা শুনে।

-” বলদের মতন হাসছিস কেনো?
-” এই যে মামনির এক্স কে আপনি মামা ডাকছেন। ক’জনের এমন ভাগ্য বলুন তো। মায়ের এক্স কে মামা ডাকার।
আরাধ্যর রাগ হলো। গম্ভীর গলায় বলল-
-” কথা মেপে বলবি। আর পিচ্চি পিচ্চির মতন থাকবি।
-” কিসের পিচ্চি আমি? আপনার থেকে কয়েক মাসের ছোট আমি।
-” অতীত টানছিস কেনো? তোর ছেলেপেলেও তো নীরা কে ফুপি,খালা ডাকবে।
-” ডাকলে ডাকবে।
-” আমিও তো ডাকছি। যা খাবার নিয়ে আয়। সারাদিন শুয়ে বসেই খাচ্ছিস। আমার মা যে খেটেখেটে রাঁধে। হেল্প করতে পারিস না?

-” মামনি দেয় না তো হেল্প করতে।
-” জোর করে করবি। বউ তুই এ বাড়ির। সংসার সামলানো শিখতে হবে না?
-” আচ্ছা.. নিয়ে আসতেছি খাবার।
আরু চলে যায়। আরাধ্য ল্যাপটপে বসে কিছু কাজ করতে থাকে। এরমধ্যে আয়ুশ ফোন দেয়। আরাধ্য রিসিভ করতেই আয়ুশ বলে-
-” আসসালামু আলাইকুম ব্রো।
আরাধ্যর কপাল কুঁচকে আসে।
-” সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে রে? শুরুতেই সালাম দিলি।
-” সূর্য তো রোজ পশ্চিমেই উঠে ব্রো।
আরাধ্য ধমক দিয়ে বলল-

-” হোপ ব্যাডা। সূর্য পূর্ব দিক দিয়ে উঠে।
-” আচ্ছা হলো। সালামের যে জবাব দিতে হয় এটা শিখো নি?
-” ওয়ালাইকুমুস সালাম। এখন বল কেনো ফোন দিছিস?
-” কেনো রাগ করেছো?
-” কাজ করতেছি।
-” আচ্ছা শোনো।
-” বলতেই তো বলেছি।
-” তোমরা তো আমাকে দেখতে পারো না তাই না?
-” হ্যাঁ। তাতে কি এখন?
-” ভাবছি আমি চলে যাব।
-” কোথায়?
-” কোথায় যাওয়া যায় বলো তো?
-” আমাদের বাড়ি চলে আয় ধান্ধাবাজ।
-” সত্যি?
-” হু।

-” আচ্ছা এখনই আসতেছি।
আরাধ্য ফোন কেটে দিলো। আরু খাবার নিয়ে আসলে সেটা খেয়ে নেয়।
-” তোর ভাই আসতেছে।
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল-
-” কেনো?
-” পিন্ডি চটকাতে।
-” সবসময় আমার ভাইকে নিয়ে এমন কথা কেনো বলেন? মধু নেই আপনার মুখে?
-” তোর মুখ দিয়ে মনেহয় মধু চুইয়ে চুইয়ে পড়ে সবসময়।
-” ঝগড়া ছাড়া আর কি কিছুই পারেন না?
-” পারি তো।
-” কি পারেন?
-” আদর করতে।
-” ওটা আদর না স্রেফ যন্ত্রণা।

-” তোর কাছেই এমন উদ্ভট জিনিস মনে হবে। থাক তুই তোর রুমে। চললাম আমি।
আরাধ্য নিচে নামলো। মা’কে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে দেখে বলল-
-” কার সাথে ফোনে কথা বলছো?
-” তোর বাবা।
-” ওহ্, আমি বের হলাম একটু।
-” কোথায় যাচ্ছিস?
-” আয়ুশ আসতেছে। এগিয়ে নিয়ে আসি।

-” আচ্ছা, আসার পথে ফুচকা নিয়ে আসিস তো। আরু সকালে বলেছিল ওর খেতে ইচ্ছে করছে ভীষণ।
বেয়াদব মেয়ে তাকে কেনো বললো না? তাহলে তো আসার পথে নিয়ে আসতো। আরাধ্য মাথা নেড়ে চলে আসলো। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আসতেই আয়ুশের দেখা মিললো। সাহেব একদম নায়ক সেজে হেঁটে আসছে। চোখে আবার সানগ্লাস ও আছে,হাতে ঘড়িটাও দেখি দেখা যাচ্ছে। আয়ুশ এগিয়ে আসলো।
-” হেই ব্রো। কেমন লাগছে আমায়? লুকিং গুড না?
-” হ্যাঁ। চল।
-” হয়ার?
-” ফুচকার দোকানে।
-” ব্রো তুমি এত ভালো হলে কবে থেকে। আমাকে ফুচকা খাওয়াবে। ও মাই গড। চলো চলো।
-” থাম ভাই। তোরে খাওয়াবো না। তোর বোনের জন্য নিব। তুই খেতে চাইলে খাইস সমস্যা নাই।

আয়ুশ দুই প্লেট খেলো। এক প্লেট ফুচকা আর আরেক প্লেট চটপটি। আরাধ্য ২০০ টাকার ফুচকা প্যাকেট করে নিলো।
বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো। বসার ঘরে আরু আর,মা ছিলো। মায়ের হাতে ফুচকা দিয়ে চলে আসলো রুমে আরাধ্য। আরু ফুচকা দেখে খুশি হয়। তড়িঘড়ি করে প্লেটে সাজিয়ে আরশি কে ডেকে খাওয়া শুরু করে সন্ধ্যা কে নিয়ে। আয়ুশ কে খেতে বললে আয়ুশ না করে। সে খেয়ে এসেছে জানায়। সন্ধ্যা খাওয়ার ফাঁকে আয়ুশ কে জিজ্ঞেস করে-
-” পড়াশোনা কেমন চলছে?
-” গুড চলছে।
-” সামনেই তো পরীক্ষা। ভালো নম্বর পাবে তো?
-” ভালো নম্বর পাবো কি না জানি না। তবে পাস করবো।
-” এটাই অনেক।
খাওয়া শেষ করে আরু রুমে এসে আরাধ্য কে থ্যাংকস জানাল ফুচকা আনার জন্য। আরাধ্য মুখ বাঁকিয়ে বলল-
-” তোর জন্য আনছি নাকি আমি। মা বলেছে সেজন্য এনেছি।

আরুর মুখ চুপসে যায়।
-” আপনি ধন্যবাদ পাওয়া টা ডিজার্ভ ই করেন না।
-” সেটা তোর একাই মনে হয়। ঘুমাবো আমি। লাইট নেভা।
-” এত তাড়াতাড়ি?
-” তো কি রাত জেগে তোর সাথে ইটিসপিটিস করবো?
আরু লাইট নিভিয়ে দিলো। আরাধ্য ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কয়েকটা দিন ধরে প্রচুর প্যারা যাচ্ছে ভার্সিটি তে। এক সময় আরাধ্য ঘুমিয়ে গেলো। এই ঘুম ভেঙে গেলো মাঝরাতে কারো ফোন আসায়। আরাধ্য ফোন হাতরে নম্বর টা দেখলো। সৌরভ ফোন করেছে। ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করে বলল-
-” কিরে এত রাতে ফোন কেনো দিলি? কোনো সমস্যা?
আরাধ্যর কথায় সৌরভ নড়েচড়ে উঠে।

-” হ্যাঁ একটা সমস্যা দোস্ত।
-” কি সমস্যা বলবি তো।
-” দোস্ত তোর কাজিনের ফোন নম্বর টা দেস না। আমি একটু কথা বলতাম।
-” কোন কাজিন?
-” আরে সেদিন যে নিয়ে আসলি ভার্সিটি তে আরু নাম।
আরাধ্যর ঘুম সব উবে গেলো।
-” মাথা ঠিক আছে তোর শালা?
-” শালা বলিস না। আমার কোনো বোন নাই আরাধ্য।
-” আমার বউয়ের ভাই বানাইছি তোকে। সো আরুর দিকে নজর দেওয়া বন্ধ কর।
-” মানে?
-” মানে টা সিম্পল.. আরু সিঙ্গেল নাই। ও মিঙ্গেল।
-” ওর বয়ফ্রেন্ড আছে?

-” বয়ফ্রেন্ড না জামাই ও আছে ভাই। ওর জামাই শুনলে তোরে আস্ত জ’বাই দিবে।
-” আগে বলবি না শা’লা। হুদাই টাইম নষ্ট করে, না ঘুমিয়ে আমি চোখের নিচ টা কালি করলাম।
-” এখন তো বললাম। সো ভালো হয়ে যাও।
-” আশ্চর্য আমি তো ভালোই।
-” ছিলি এক সময়। এখন খারাপ হয়ে গেছিস।
-” আচ্ছা রাখি ফোন। ঘুমা।
আরাধ্য ফোন কেটে ফোনটা রাখতেই দেখলো আরু তার দিকে তাকিয়ে আছে।
-” কিরে ঘুমাস নি?
-” ঘুমিয়েছিলাম। আপনার আওয়াজ শুনে জাগলাম। সৌরভ ভাইয়া ফোন দিছিলো?
-” হ।
-” কি বললো?
-” কি আর বলবে?
-” আমায় পছন্দ করে?
-” হ। কত বড় সাহস ভাব।
-” আমার কিন্তু তাকে বেশ পছন্দ।

কথাটা বলতে দেরি কিন্তু বালিশ টা আরুর মুখে ছুঁড়ে দিতে দেরি হলো না আরাধ্যর। আরু তবলা খেয়ে গেলো।
-” ১৩ ব্যাটারি তুই আরু ছি ছি ছি। স্বামীর বন্ধুকে তুই.. ছি আরু। এ আমি কেমন মেয়ে বিয়ে করলাম খোদা। কয়েকদিন পর তো এই মেয়ে সোজা পালিয়ে যাবে আমার বাড়ির মানসম্মান কে ঝা’টা দেখিয়ে। এ খোদা এমন দিন দেখার আগে আরুকে তুমি তুলে নাও।
আরু ঝাড়া দিয়ে বালিশ টা ফেলে দিয়ে দাঁত চেপে বলল-
-” আপনি করলে সভ্য পুরুষ আর আমি করলেই ১৩ ব্যাটারি? আপনাকে বিয়ে করে আমার জীবন খানা শেষ। দ্বিতীয় বিয়ে করতে হবে আপনাকে রেখে।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১২

-” যা কর গা। আমি না করছি নাকি? কে করবে তোরে বিয়ে? সৌরভ? জীবনেও না।
আরু বাঁকা হেসে বলল-
-” রনি আছে কি করতে তাহলে।
-” মে’রেই ফেলবো তোকে আরু। তারপর জেলে বসে শক্ত রুটি আর সবজি খাবো।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৪