তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৪

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৪
Raiha Zubair Ripti

বিকেলে নিখিল দের বাড়িতে আসে, আরু আর আরাধ্য । খাবার টেবিল টা সাজানো হরেক রকমের খাবারে। টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে এখন আরু,আরাধ্য। কিছুটা দূরে সোফায় বসে আছে নীরা। সন্ধ্যা, আষাঢ়ের আসার কথা থাকলেও তারা আসে নি। নিখিলের বউ তিতলি সন্ধ্যার থেকে জেনেছে আরাধ্যর পছন্দের সব খাবার, তারপর সেই মোতাবেক রান্না করা হয়েছে। যার কারনে খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছে আরাধ্য। সেটা দেখে আরু ফিসফিস করে বলল-

-” খুব মজা তাই না?
আরাধ্য আরো কয়েক পিস মাংস তুলে নিয়ে বলল-
-” আসলেই। সেই স্বাদ। কথাটা বলে তিতলির দিকে তাকিয়ে বলল- ” মামি তোমার হাতে কিন্তু যাদু আছে। রান্নার হাত টা জম্পেশ। আজকের রান্নাটা এত দারুন করে রেঁধেছ কি বলবো। দেখো কত খাচ্ছি আজ।
তিতলি হেঁসে বলল-
-” খেতে তো মানা নেই। তোমাদের জন্যই এই আয়োজন। আর এই রান্না গুলো তো আমি করি নি।
মাংস মুখে নিতে নিতে বলল-
-” তাহলে কে করেছে? তোমার শাশুড়ি?
-” আম্মা রাঁধে নি। নীরা রেঁধেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাটা শেষ করেই তিতলি রান্না ঘরে যায় ফ্রিজ থেকে দই আনতে।
আরাধ্য যেন মুখের ভেতর থাকা মাংস টা চিবাতে ভুলে গেলো। আড়চোখে তাকালো আরুর দিকে। আরু তার দিকেই তাকিয়ে আছে। গরুর মাংসের বাটি টা আরাধ্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে আরু বলল-
-” অনেক স্বাদ..পেট তো ভরে নি। একদম পেট ভরে খাবেন। এভাবে এত স্বাদ করে খেতে আমি কখনই দেখি নি আপনায়। নীরা তোমার হাতের প্রশংসা করলো তোমার ভাইয়া। আসলেই তোমার রান্নার হাতে অনেক ভালো। ভীষণ সুস্বাদু। আমার যদি রান্নার হাত টা ভালো হতো তোমার মত। তাহলে কতই না ভালো হতো।
নীরা ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালো। ম্লান হেঁসে বলল-

-” রান্নার হাত আমার ভালো হলেও..ভাগ্য আমার ভালো না আরু আপু। কিন্তু তোমার রান্নার হাত ভালো না হলেও ভাগ্যটা অনেক ভালো। রান্নার হাত বদলানো যায় কিন্তু ভাগ্য বদলানো যায় না। তোমার রান্নাও আস্তে আস্তে মজাদার হবে।
-” আমার ভাগ্য ভালো?
-” ভীষণ।
-” বোকা মেয়ে তুমি নীরা।
-” হয়তো। আচ্ছা খাওয়া শেষ করো। আমি পড়তে গেলাম। সামনে এক্সাম তো, না পড়লে এক্সামে আবার ফেল করবো।
নীরা চলে গেলো। আরু আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে বলল-
-” নীরা বললো আমার ভাগ্য নাকি ভালো। কিন্তু আমি তো দেখতে পেলাম আমার ভাগ্য নীরার চেয়েও খারাপ।
আরাধ্য ভ্রু কুঁচকালো। প্লেটে থাকা ভাত আর মাংসের ভেতর হাত ধুয়ে বলল-

-” মানে?
-” মানে টা কি বোঝার মতন বয়স আপনার হয় নি? নীরা আমার ভাগ্য ভালো বলল একমাত্র আপনাকে বিয়ে করায়। ও ভাবছে ওর সাথে আপনার বিয়ে হলে ও সুখী হত। কিন্তু আপনার সাথে ওর বিয়ে হলে ও তো সবচেয়ে বেশি দুঃখী হতো। যেমন আপনাকে বিয়ে করে আমি অসুখী।
-” আমাকে বিয়ে করে তুই অসুখী মানে আরু? তোকে দিয়ে তো বাড়ির তেমন কাজ করানো হয় না,আমার মা তো ওসব জল্লাদ শাশুড়ির মতন তোকে টর্চার করে না। আমার বোন তো ওসব কুটনি ননদের মতন কুটনামি করে না। আমিও তো ওসব স্বামীর মতন তোকে….
আরাধ্য কে থামিয়ে দিয়ে আরু বলল-
-” ভালোবাসেন না। আপনি তো আর সব স্বামীর মতন আমায় ভালোবাসেন না। কেনো বাসেন না?
আরাধ্য আশেপাশে তাকিয়ে বলল-

-” আরু বোইন দেখ এটা খাবার টেবিল। তাও আমাদের বাড়ির না। মাইনসের বাড়ির। চুপচাপ খা। আমাদের বাসায় ফিরে বেডরুমে গিয়ে এসব নিয়ে তর্কাতর্কি করবো।
আরু এঁটো হাত ধুয়ে বলল-
-” বোন কেনো বলছেন আমায়? বউ হই আমি এখন আপনার। আমার খাওয়া শেষ,এখন বাসায় চলুন।
তিতলি দই নিয়ে ফিরলো। আরু,আরাধ্যর খাওয়া শেষ দেখে বলল-
-” দই খাও।
আরু দইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
-” না না আন্টি দই খাবো না। পেটে আর জায়গা নেই একটু ও। আসলে মামনি মেসেজ দিয়ে জানালো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে। আমাদের যেতে হবে।
আরাধ্য ভ্রু কুঁচকালো। মিথ্যা কেনো বলছে আরু। কই মা তো কোনো মেসেজ দিয়ে বলে নি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে। আর বেশিক্ষণ রইলো না তারা, চলে আসলো। গাড়িতে বসে হাসফাস করতে লাগলো আরু। আরাধ্য দেখে সেটা বলল-

-” কিরে বয়লার মুরগীর মত হাসফাস করছিস কেনো? গরম লাগছে? এসি তো চলতেছে।
আরু দাঁত চেপে বলল-
-” কই হাসফাস করতেছি।
-” এই তো আমি সচক্ষে দেখলাম। ওড়নার প্রান্ত নোখে পেঁচিয়ে বারবার সামনে তো জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাচ্ছিস।
-” আমার ওয়াশরুমের চাপ পাইছে। তাড়াতাড়ি গাড়ি চালান পিঁপড়ার মতন না চালিয়ে।
-” ভালো হইছে। আমি এখন আরো স্লো গতিতে গাড়ি চালাবো। বাসা থেকে বের হবার সময় জানিস না ওয়াশরুম সেরে আসতে হয়।
-” তখন তো পায় নি।
-” ভালো হইছে এখন চেপে বসে থাক। খবরদার আমার গাড়ি ভেতর আবার করে ফেলিস না। তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে।

-” বকবক না করে গাড়ি চালান জোরে। আর তা না হলে আশেপাশে কোনো রেস্টুরেন্ট বা কিছু থাকলে ওখানে গাড়ি থামান। আমার সত্যি ভীষণ চাপ পাচ্ছে।
সামনে একটা রেস্টুরেন্ট থাকায় আরাধ্য সেটার সামনে গাড়ি থামালো। তারপর ভেতরে ঢুকে ওয়েটার কে ডেকে লেডিস ওয়াশরুম টা কোনদিকে জেনে আরু কে নিয়ে গেলো। আরু মিনিট পাঁচেক পর ক্লান্ত হয়ে ফিরলো। হাঁটতে শুরু করে বলল-
-” চলুন।
আরাধ্যর হাতে প্যাকেট। সেটা দেখে আরু বলল-
-” প্যাকেটে কি?
-” খাবার।
-” সে কি এত খেয়েও আপনার পেট ভরে নি? নীরার রান্না এত জম্পেশ ছিলো?
-” তোর কি মাথায় কমন সেন্স নাই?
-” থাকবে না কেনো?
-” মনে তো হচ্ছে নেই।
-” আছে। এখন বলুন খাবার কেনো নিলেন?
-” রেস্টুরেন্টে ঢুকেছি। তাদের ওয়াশরুম ব্যবহার করলি। এখন তাদের রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু না কিনেই বেহুদা, বেক্কলের মতন চলে যাব?

-” ওহ আচ্ছা চলুন এখন।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো দুজন। আরাধ্য গাড়ি চলাতে লাগলো। আরু এখন চিল মুডে গাড়ির দরজার গ্লাস টা খুলে বা হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে হাতের তালু গালে ঠেকিয়ে বাহির টা দেখতে লাগলো। বাহিরের দমকা হাওয়া খেলে গেলো আরুর দেহ জুড়ে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে খেলতে লাগলো বাতাসের সাথে মিলে। আরাধ্য সেটা দেখে বলল-
-” হাত খোঁপা করে রাখতে পারিস না চুল? বলিউড অভিনেত্রী দের মতন ভাইব নিচ্ছিস কেনো?
-” কারন আমি নায়েকা সেজন্য।
আরাধ্য মুখ বাঁকিয়ে বলল-
-” সিরিয়াসলি!
-” এনি ডাউট?
-” নো। বাসায় এসে গেছি। নাম।
আরু নামলো গাড়ি থেকে। বাসার ভেতর ঢুকে দেখলো বসার ঘর পুরো ফাঁকা। আরু সন্ধ্যার রুমের দিকে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো সন্ধ্যা শুয়ে আছে। আরু এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে শরীরে হাত দিয়ে বলল-
-” মামনি শরীর ঠিক আছে?

সন্ধ্যা কেঁপে উঠলো জ্বরে। বিকেলের পর থেকে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে। রাতের রান্না টা করার সাহস হয়ে উঠে নি এই শরীর নিয়ে। আরু,আরাধ্যকেও বলে নি ফোন দিয়ে। কারন একটা জায়গায় গেছে শুধু শুধু জানিয়ে নষ্ট করতে চায় নি। আর আষাঢ় তাকে জানালে তৎক্ষনাৎ ই সব কাজ কর্ম ফেলে চলে আসতো বলে আরো জানায় নি। আরশি এতক্ষণ জলপট্টি দিচ্ছিল। মেয়েটার চোখ দুটো কি যে ছলছল করছিল তখন। এই তো একটু আগেই রুমে গিয়ে পড়াশোনা করতে বলেছে। মেয়েটা যেতে চায় নি। সন্ধ্যা জোর করেই পাঠালো। আস্বস্ত করে বলল সে এখন ঠিক আছে।

কিন্তু ঠিক নেই। জ্বর কমার বদলে বেড়ে চলছে। আরু শরীরে হাত দিতেই বুঝলো শরীরে জ্বর। জ্বরের তীব্রতা এখন এতই যে সন্ধ্যা ঠিক মতন চোখ ও মেলতে পারছে না। আরাধ্য সবেই গাড়িটা পার্ক করে বাসার ভেতর ঢুকলো। আর তখনই আরু কে দৌড়ে ছুটে আসতে দেখে আরাধ্য বলল-
-” এসেই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলি বে’য়াদব।
আরু আরাধ্যর হাত টেনে বলল-
-” মামনির অবস্থা খারাপ আরাধ্য ভাই। জ্বরে শরীর পু’ড়ে যাচ্ছে। চোখ মেলেও তাকাতে পারছে না। হসপিটালে নিতে হবে।
আরাধ্যর মস্তিষ্ক এক মুহূর্তের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিলো। বিষয় টা মস্তিষ্ক অব্দি গিয়ে ঠেকতেই আরাধ্য ছুটে মায়ের রুমে আসলো। মায়ের পাশে বসে মায়ের মাথাটা কোলে নিয়ে গালে আলতে করে থাপ্পড় দিয়ে অস্থির কন্ঠে বলল-

-” মা ও মা চোখ খুলো। এত জ্বর শরীরে জানাও নি কেনো। মা শুনতে পারছো আমার কথা? আরু আরশি কোথায় দেখ তো।
আরাধ্য ততক্ষণে তার মাকে পাঁজা কোলে নিলো। হসপিটালে নিতে হবে। অবস্থা ভয়াবহ।
আরু আরশির রুমে আসলো। পুরো রুম ফাঁকা। আরশি নেই। আরু পুরো বাড়ি জুড়ে খুঁজলো। নাহ্ আরশি কোথাও নেই। মেয়েটা গেলো কোথায়?
এখন আরাধ্য কে কিভাবে বলবে যে আরশি নেই বাসায়। আরাধ্য গাড়িতে অপেক্ষা করলো আরশি,আরুর। এখনও আসতে না দেখে ইচ্ছে করলো দুটো কে গিয়ে এক রামধমক দিতে। জানালা দিয়ে বাড়ির দিকে তাকাতেই আরু কে একা আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। আরু এগিয়ে আসতেই আরাধ্য জিজ্ঞেস করলো-
-” আরশি কোথায়? ওকে তো নিয়ে আসতে বললাম।
-” আ..আরাধ্য ভ..ভাই..
-” তুতলাচ্ছিস কেনো? কি হয়েছে বলবি তো। দেখ এমনিতেই মায়ের অবস্থা ভালো না। হসপিটালে নিতে হবে কুইক।

আরু এবার কেঁদে বলে উঠল-
-” আরশি বাসায় নেই। আমি তন্ন তন্ন করে পুরো বাড়ি খুঁজছি। ও কোথাও নেই।
-” হোয়াট! এই মেয়ে গেলো কোথায়। এখন আমি কি করবো। মাকে দেখবো নাকি আরশি কে খুঁজবো।
-” আপনি মামনি কে নিয়ে যান। আমি বাসায় থাকি। সিদ্দিকের বাসায় দেখি নি। হয়তো ও বাসায় থাকবে। আপনি হসপিটালে যান। আমি চাচাকে ফোন করে বলতেছি।
-” আচ্ছা পেলে জানাস আমায়।
আরু সিদ্দিক দের বাসায় গেলো। সিদ্দিকের আম্মুকে জিজ্ঞেস করলো আরশি এসেছে কি না। সিদ্দিকের মা জানালো- আরশি আসে নি।
আরুর বুক ধক করে উঠলো। ইন্ট্রোভার্ট মেয়েটা আচমকা কোথায় চলে গেলো? আরু ফোন টা নিয়ে বাসায় কল দিলো। কনা সবেই বের হচ্ছিল বাসা থেকে আরুর ফোন পেয়ে কনা অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করলো-

-” হ্যাঁ রে সন্ধ্যার অবস্থা এখন কেমন? জ্বর কমেছে নাকি বেরেছে?
আরু কিছুটা অবাক হলো। তার মা কি করে জানলো কথাটা?
-” তুমি জানলে কি করে?
-” আরশি জানালো বলেই তো জানলাম। সন্ধ্যার ফোনটাও তো বন্ধ বলছে।
-” আরশি তোমাদের ওখানে?
-” হ্যাঁ কাঁদছে অনেক।
-” আচ্ছা আমি আসতেছি।
আরু ফোন টা রেখে একটা রিকশা ডেকে বাসার দিকে গেলো। বাসার কাছে আসতেই রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে বাসায় ঢুকলো। মায়ের পাশে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে আরশি। তার সামনের সোফায় আয়ুশ বসে আরশি কে দেখছে। আরু এগিয়ে গেলো আরশির কাছে। গিয়ে ডাকলো। আরশি আরু কে দেখামাত্রই জড়িয়ে ধরলো। কান্নারত অবস্থায় বলল-

-” আপু আম্মু?
আরু সযত্নে আরশির গালে,চোখে লেগে থাকা জল মুছে বলল-
-” ভাইয়া হসপিটালে নিয়ে গেছে। তুমি মামনি কে একা রেখে এ বাসায় এসেছো কেনো? যদি রাস্তা ঘাটে কোনো বিপদ হত তোমার তখন?
-” আম্মুর কষ্ট হচ্ছিল। আম্মুর কাছে থাকতে দিচ্ছিলো না আম্মু। আব্বুকেও ফোন দিতে দিচ্ছিলো না। সেজন্য কাকিয়ার কাছে চলে এসেছি কাকিয়া কে সাথে করে নিয়ে আম্মুকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আরু বুকের সাথে চেপে ধরলো ছোট্ট আরশি কে।
-” চলো মায়ের কাছে যাবে।
কনা আর আয়ুশ ও আসলো সাথে।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পরপরই সন্ধ্যাকে স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে জানালেন—
-“তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট! শরীরে পানিশূন্যতা হয়ে গেছে। ইমিডিয়েট স্যালাইন লাগবে।
আরাধ্য ডক্টরের কথাগুলো শুনে আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে। নার্স এসে দ্রুত সন্ধ্যাকে স্যালাইন লাগিয়ে দিলো।
ডাক্তারের কথায় বোঝা গেল, সন্ধ্যার শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে তার হাই ফিভার হয়েছে। রক্ত পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল নেওয়া হলো। এরমধ্যে আষাঢ়ও চলে আসলো। একটা ইম্পরট্যান্ট কাজে হসপিটালের বাহিরে ছিলো। আরুর ফোন পেয়েই ছুটে চলে আসে। আরাধ্যর কাছে এগিয়ে এসে জানতে চাইলো-
-” তোর মা ঠিক আছে তো?

আরাধ্য করিডরে থাকা বেঞ্চ টায় বসে পড়লো।
-” জ্বরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট! শরীরে পানিশূন্যতা হয়ে গেছে।
আষাঢ় ছুটে গেলো ডক্টরের কাছে।
-” ডক্টর সন্ধ্যার অবস্থা এখন কেমন?
ডক্টর ফরিদ জানালো-

-” শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। তীব্র জ্বরের কারণে শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে গেছে। আমরা দ্রুত ওষুধ ও ইনজেকশন দিয়েছি ডক্টর আষাঢ় , তবে ২৪ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখতে হবে। তারপর বলতে পারবো।
আষাঢ় সোজা সন্ধ্যার কাছে চলে গেলো। বেডে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে তার প্রিয়তমা। হুঁশ নেই। আষাঢ় পাশে গিয়ে টুল টেনে বসলো। বা হাতে লাগানো ক্যানোলা। আষাঢ় সেই হাত টার উপর নিজর হাত ছুঁইয়ে দিলো। কিছুক্ষণ নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে সন্ধ্যার কপালে গাঢ় চুম্বন একে দিলো।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৩

কেবিনের বাহিরের দরজা থেকে আরু আর আরাধ্য সেটা দেখলো। আরু আড়চোখে তাকালো আরাধ্যর দিকে। আরাধ্য চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। বোধহয় কান্না আঁটকে রাখার ভীষণ যুদ্ধ চলছে ঐ চোখ দুটোয়। পুরুষ মানুষের এই এক সমস্যা তারা মন খুলে কাঁদতে পারে না। কান্না যেন সব মেয়েদের জন্য সৃষ্টি করা। কান্না যেন পুরুষদের জন্য হারাম..কিন্তু আরুর মতে কান্না পেলে কেঁদে নেওয়া উচিত। লোকসমাগমে মেয়েদের মতন কাঁদতে না পারলেও একাকী কেঁদে হাল্কা হওয়া উচিত।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৫