তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৭
Raiha Zubair Ripti
আরাফাত দেশে আসার দুদিন পর রাত দের বাসায় আসলো। রাত আরাফাতের আসার কথা শুনে অফিস থেকে আগেই চলে এসেছে। বসার ঘরে আষাঢ়, আরাফাত, রাত মিলে গল্প জুড়ে দিয়েছে। কুনাল রাত দের বাড়ির বাগানে বসে আছে দোলনায়। আয়ুশ সবেই স্কুল থেকে এসেছে। বাগান পাড় হতেই অচেনা এক ছেলেকে বাগানে বসে থাকতে এগিয়ে আসলো। আপাদমস্তক পরখ করলো কুনাল কে। তারপর বলে উঠল-
-” হু আর ইউ মিস্টার? হোয়াট আর ডুয়িং মাই বাড়ির বাগানে?
কুনাল আচমকা এমন ইংরেজি শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। ঘাড় ফিরিয়ে আয়ুশ কে দেখে বলল-
-” এ্যাই কে তুমি?
আয়ুশ কোমরে দু হাত গুঁজে বলল-
-” আমি কে মানে! আমার বাড়ি,আমার বাগানে বসে বলছো আমি কে? তুমি কে সেটা বলো।
কুনাল হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-” আমি কুনাল। তোমার নাম কি?
আয়ুশ হ্যান্ডশেক করলো না। দু হাত বুকে গুঁজে বলল-
-” মাই নেম আয়ুশ আহমেদ। তোমায় আমি চিনি না।
-” আমিও চিনি না তোমায়।
-” তাহলে আমাদের বাসায় কার সাথে এসেছো?
-” বাবা মায়ের সাথে।
আয়ুশ ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে চলে আসলো। বসার ঘরে এক অপরিচিত মুখ দেখে এগিয়ে এসে বাবার পাশে বসে ফিসফিস করে বলল-
-” ওটা কে বাবা?
রাত আয়ুশ কে আরাফাতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো-
-” আরাফাত ভাই এই হচ্ছে আমার হতচ্ছাড়া ছেলে আয়ুশ। আর আয়ুশ উনি হচ্ছে তোমার আঙ্কেল লাগে।
আরাফাত হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলো আয়ুশ কে। আয়ুশ কাঁধ থেকে ব্যাগ খুলে আরাফাতের কাছে গেলো। আরাফাত আয়ুশের মাথার চুল নেড়ে বলল-
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” কেমন আছো চ্যাম্প?
আয়ুশ মৃদু হেঁসে বলল-
-” এই তো আঙ্কেল সিঙ্গেল লাইফ যেমন চলে তেমনটাই আছি।
আরাফাত ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
-” মানে?
-” মানে…
রাত আয়ুশ কে থামিয়ে দিয়ে বলল-
-” ওর কথা বাদ দাও ভাই। মেন্টাল তাড় ছিঁড়া। আয়ুশ যা ফ্রেশ হ গিয়ে রুমে।
আয়ুশ বাবা কে মুখ ভেঙিয়ে চলে আসলো ঘরে। সন্ধ্যার পর সবাইকে খেতে দেওয়া হলো। আয়ুশ খাচ্ছে আর কুনাল কে দেখছে। হঠাৎ কি মনে হলো আয়ুশ বলে উঠল-
-” এ্যাই ছেলে তুমি কিসে পড়ো?
রাত চমকালো।
-” এ্যাই তুই কাকে এই ছেলে বলছিস?
-” কেনো ঐ ছেলেটাকে। আঙ্কেলের পাশে বসেছে।
-” থাপড়ে গা’ল লাল করে দিব। তোর থেকে বয়সে বড়। ভাইয়া বল।
-” ওক্কে। ভাইয়া তুমি কিসে পড়?
কুনাল জবাব দিলো-
-” টেনে পড়ি।
-” খুব বিলিপ..না খুব ব্রিলিয়ান্ট তুমি? আরশির মতন?
-” হু ইজ আরশি?
-” মাই লাভ।
রাত বিষম খেলো। আরাফাত পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। রাত ঢকঢক করে পানি টা খেয়ে নিলো। আরাফাত অবাক চোখে আয়ুশ কে পরখ করলো। এজন্য বুঝি সবাই এত গুনগান করছিল আয়ুশের? ছেলেটা তো পুরাই…
আজ রাত আরাফাত রা রাত দের বাসায় থাকবে। সে হিসেবে কুনাল কে রাতে থাকতে বলা হলো আয়ুশের রুমে। আয়ুশ তো কুনাল রুমে আসার পর থেকেই পড়ার চেয়ে বারবার আড়চোখে দেখছে। কুনাল লক্ষ করলো সেটা। বিছানায় বসে বলল-
-” কিছু বলতে চাও?
আয়ুশ মাথা নেড়ে বলল-
-” না।
-” আচ্ছা একটা কথা বলো।
-” বলো কি জানতে চাও?
-” আরশি কে?
-” ওমা চিনো না তাকে?
-” না।
-” আমার হবু বউ। আষাঢ় চাচ্চুর মেয়ে। দেখো নি?
-” না।
-” খুব ব্রিলিয়ান্ট। জীবনে ফেল করে নি কোনো সাবজেক্টে।
-” তুমি কি ব্রিলিয়ান্ট না?
-” না। আমি তো ব্যাকবেঞ্চার স্টুডেন্ট। তিন-চার সাবজেক্টে ফেল করি।
-” ভেরি ব্যাড।
-” তোমরা কি চলে যাবে?
-” কোথায়?
-” যেখান থেকে এসেছো।
-” না। আমরা দেশে চলে এসেছি একেবারে।
-” তোমায় আমি আরশির সাথে দেখা করাবো ওক্কে? জানো আরশি আমাকে পছন্দই করতে চায় না।
-” কেনো?
-” আই ডোন্ট নো। শি নেভার টলক্ টু মি। এভ্রি টাইম শি ইগনের মি। মাই হার্ট অলওয়েজ ব্রোকেন হয়।
-” ব্যাস থামো। তুমি ইংরেজি বলতে জানো না?
-” কে বলেছে জানি না? এই যে আই টলক টু ইংরেজি ল্যাঙ্গুয়েজ উইথ ইউ।
-” এসব তো ভুল ইংলিশ।
-” হতে পারে। তাতে আমার কি?
-” এজন্যই বুঝি ফেল করো এক্সামে। আমাদের ওখানে তোমার থেকে পিচ্চি পিচ্চি ছেলেমেয়ে গড়গড় করে ইংরেজি বলে।
-” তোমাদের ওটা আমেরিকা। আর আমাদের এটা বাংলাদেশ। সো ডিফারেন্ট তো থাকবেই। তুমি আমার ফ্রেন্ড হবে?
-” কেনো নয়। অবশ্যই।
-” আমাকে কিন্তু হেল্প করবে।
-” হ্যাঁ বলো পড়াশোনায় যখন হেল্প লাগবে আমায় বলবে। আমি করে দিব।
-” ধূর পড়াশোনায় হেল্প নিয়ে আমি কি করবো। তুমি আমাকে অন্য ভাবে হেল্প করবে।
-” মানে?
-” মানে টা হচ্ছে তুমি আমাকে শিখিয়ে দিবে কিভাবে কি করলে আরশি আমাকে পছন্দ করবে,ভালোবাসবে,কথা বলবে।
-” ভীষণ ভালোবাসো বুঝি?
-” ভীষণ মানে ভীষণ।
-” খুব সুন্দরী নাকি তোমার আরশি?
-” পৃথিবীর দ্বিতীয় তম সুন্দরী রমণী আরশি আমার কাছে।
-” দেখতে হচ্ছে তো তাহলে তোমার আরশি কে।
-” বোনের নজরে দেখো কিন্তু।
-” অবশ্যই। তা পড়তে থাকো। আমি বরং ঘুমালাম।
-” আরেহ্ আমিও তো ঘুমাবো। আর পড়ে কি করবো। মশারি টা টানাও না। আমি ওয়াশরুম থেকে আসতেছি।
কুনাল মশারি না টানিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। তার এসব মশারি টানানোর অভ্যাস আছে নাকি। আয়ুশ ওয়াশরুম থেকে ফিরে মশারি টানানো না দেখে ঠোঁট নেড়ে কুনাল কে ইচ্ছে মতন বকে নিলো। তার ঘরে, তার বিছানায় ঘুমাচ্ছে দেখো কেমন রাজপুত্রের মতন৷
আয়ুশ ও মশারি টানালো না। মাঝখানে কোলবালিশ দিলো। পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে রিলসে ঢুকলো। একটা রিলসে আয়ুশের চোখ আটকালো। প্রিয়তমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আরেকজনের সাথে আর ছেলেটা মত খেয়ে সেই বিয়ে বাড়ির সামনে বসে আছে। আর গান গাইছে- ও মাইয়া রে, মাইয়ারে তুই অপরাধী রে।
আমার যত্নে গড়া ভালোবাসা দে ফিরাইয়া দে।
রিলস টা আরাধ্যর ফোনে পাঠিয়ে ছোট করে মেসেজ লিখলো-
-” ব্রো আমার ফিউচার।
পরের দিন কুনাল রা চলে গেল কুনালের দাদি বাড়ি। আরুর এক্সাম ঘনিয়ে এসেছে সেজন্য এখন বেশিরভাগ সময়ই বই নিয়ে পড়তে থাকে। সন্ধ্যা সুস্থ হওয়ায় এখন রান্না বান্না সন্ধ্যাই সামলায়। আরু একাউন্টিং এর ম্যাথ করছিলো। এমন সময় টেবিলে থাকা ফোন টা বেজে উঠে। আরু তাকিয়ে দেখে আরাধ্যর ফোন। আরুর মুখে হাসি ফোটে। তড়িঘড়ি করে ফোন টা কানে নিয়ে হ্যালো বলে। আরাধ্যর অস্থির মন যেন শান্ত হলো আরুর গলার স্বর শুনে। কিছুক্ষণ নিজেকে শান্ত করে বলল-
-” কি করছিস?
-” এই তো পড়াশোনা করছি। আপনি?
-” ক্যাম্পে আছি।
-” ওহ্ আচ্ছা। কিছু বলার জন্য ফোন দিয়েছেন?
-” কেনো এমনি ফোন দেওয়া যায় না নাকি?
-” না তেমন টা না। আসলে অপেক্ষায় ছিলাম আপনার ফোনের।
-” অপেক্ষায় ছিলি কেনো?
-” জানি না।
-” জেনে জানা।
-” কার থেকে?
-” তোর থেকে।
-” জানা যাচ্ছে না তো। জিজ্ঞেস করেছিলাম।
-” কি বললো?
-” বললো উত্তর তারও জানা নেই।
-” আমার ভালো লাগছে না রে এখানে।
-” ওমা কেনো?
-” জানি না।
আরু স্মিত হেঁসে বলল-
-” জেনে জানান।
আরাধ্য মুচকি হেঁসে বলল-
-” আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছিস? পাখির মতন দুটো ডানা থাকলে ভালো হত।
-” কেনো?
-” উড়ে চলে আসতাম।
-” কোথায়?
আরাধ্য বিরক্ত হয়ে বলল-
-” আমার এক্স দের কাছে শালি।
-” এ্যাই মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। শালি বলছেন কাকে?
-” তোকে শালার বোন। তোর অস্থির লাগে না?
-” লাগে তো বেশি হাটাহাটি করলে,দৌড়ালে,বেশি খেলে।
-” ম’রে যা তুই আরু। আমার সামনে থাকলে তোকে এখন ছাঁদ থেকে আমি ফেলে দিতাম।
-” ওমা কেনো?
-” মনের সুখে। শুনলাম আরাফাত আঙ্কেল এসেছে।
-” হ্যাঁ।
-” ধূর ভালো লাগছে না।
-” কচু গাছের সাথে ফাঁ’সি নেন তাহলে।
-” কচু গাছ থাকলে তো নিব।
-” কলা গাছ ও কি নেই?
-” না।
-” আহারে।
-” হাসি পাচ্ছে তোর?
-” মোটেও না। কষ্ট হচ্ছে আপনার জন্য।
-” হার্ট অ্যাটাক কর। সেই উছিলায় চলে আসি।
-” বকবক করার সময় নেই মশাই। পরীক্ষা কাল৷ পড়তে হবে।
-” পড়াশোনা করে কোন রাজ্য উদ্ধার করবি তুই?
-” আপনার মনের রাজ্য হয়েছে?
-” তালা মারা এই রাজ্য হু। চাবি নাই।
-” চাবি লাগে না খুলতে।
-” তাহলে কি লাগে?
-” মনের মিল থাকলেই খুলে যায়।
-” মনের মিল হবে কি করে মেয়ে? আমি তো ব্র্যান্ড আর তুই তো গুলিস্তান।
আরু দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলল-
-” শাট-আপ। ফোন রাখেন বেয়াদব।
-” তুই বেয়াদব, তোর ভাই বেয়াদব।
-” আয়ুশ কে টানছেন কেনো?
-” তোর ভাই গতকাল রাতে কি করেছে জানিস?
-” কি করেছে?
-” আমাকে একটা রিলস পাঠাইছে।
-” তো?
-” কিসের রিলস জানিস?
-” কিসের?
-” ছ্যাকা খাওয়ার রিলস। তোরে পাঠাচ্ছি দেখ। মাথা তো ওর এক্কেবারে গেছে। এখন আমার মাথাটাও খাচ্ছে দিনকে দিন। বড় হলে দেখিস আইক্কালা বাঁশ আমায় ধরায় দিবে তোর ভাই।
-” দিলে দিবে ধরিয়ে। সমস্যা কি?
-” তোর ভাইরে সময় থাকতে বোঝা আরু। আরশির সাথে কিন্তু ওর কোনো কিছু সম্ভব না।
-” কেনো সম্ভব না?
-” সেটা তুই আমি সবাই জানি।
-” বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।
-” এখন কি ফিটার খাওয়া বাচ্চা তোর ভাই? ও কিন্তু সেই রকমের একটা ধাক্কা খাবে।
-” পজিটিভ ভাবুন।
তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৬
-” যা নেগেটিভ তা কেনো পজিটিভ ভাববো আমি?
আরশি কে বাবা আয়ুশের হাতে তুলে দিবে না। মিলিয়ে রাখিস। সে তার মেয়েকে নিয়ে ভীষণ পজেসিভ।
-” আয়ুশ তো ভালোবাসে আরশি কে।
-” জানি না তোর ভাইয়ের ভালোবাসা এটা নাকি পাগলামি। তবে ভবিষ্যতে পস্তাবে দেখিস। সংসার করার জন্য একজন স্বাভাবিক, ম্যাচিউর ছেলের প্রয়োজন। আয়ুশের ভেতর এসবের কোনো ছিটেফোঁটা নেই। রাখছি এখন। পারলে বোঝা ভাই কে।