দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১৪
আফরোজা আশা
বিদায়ের মূহুর্ত ঘনিয়ে এলো। চিরচেনা একটা স্থান, জন্মের পর থেকে এতোগুলো বছর হাজার হাসি-খুশি, সুখ-দুঃখের মাঝে কাটিয়ে দিল যে স্থানে, যে নিবাসে সেটা ছেড়ে আরেক জায়গায় চলে যেতে হবে। অথচ এতোদিন সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়িয়েছে এটা আমার বাড়ি। যে বাড়িটা এতোদিন আমার বাড়ি নামে পরিচয় পেয়েছিল বিয়ের পর সেটা বাবার বাড়ি নামে আখ্যায়িত হয়ে গেল। এখন যে বাড়িতে যাবে সেটার পরিচয় শ্বশুড় বাড়ি। হয়ে গেল বাণীর জীবনে দুটো বাড়ি। প্রথম বাড়ি বাবার বাড়ি, আর দ্বিতীয় বাড়ি শ্বশুড়বাড়ি।
এই দুই পরিচয় নিয়েই চলবে এখন ওর জীবন। বিদায় মূহুর্তে কান্নার রোল পড়ে গেল পাটোয়ারী বাড়ির গেটের সামনে। আমেনা আর রিনা দুজনকেই একসাথে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছে বাণী। এই মা-চাচির সাথে যেখানে দিনের সবটা সময় কাটে সেখানে এখন ও আসবে বেড়াতে অতিথির মতো দেখা করতে। আসবে কয়টা দিন থাকবে আবার ফিরতে হবে শ্বশুড়বাড়ি নামক নিবাসে। মেয়েদের জীবনে কি আজব এক নিয়ম তাই না! কিন্তু এ নিয়মের বাইরে কেউ যেতে পারবে না। এ নিয়ম যে যুগ যুগ ধরে চলছেই। যুগ পাল্টাবে, আধুনিকতা বাড়বে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত নিয়ম পাল্টানোর ক্ষমতা কারো নেই!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাণীর কপালে একটা মমতাময়ী পরশ দিয়ে ওকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল আমেনা। বাণী আবারো তার বুকে পড়তে চাইলে সরে দাঁড়ালো সে। মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বড় বড় কদম ফেলে অন্দরের দিকে চলে গেল। সবাই বুঝল আমেনার মনের অবস্থা। ওর পিছু পিছু দৌড়ে গেল রিনা। তবে যাওয়ার আগে বাণীকে রাসেল পাটোয়ারীর হাতে দিয়ে গেল। বাণী হেঁচকি তুলে কাঁদছে। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে একজন খুঁজলো খুব করে কিন্তু পেল না। রাসেল ছলছল নেত্রে বাণীর মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলল,
‘ তোমার আব্বু ক্যাটারিং এর ওদিকে আছে। সেখানের কাজ ফেলে আসতে পারছে না। ’
বাণী জানে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। রহমান পাটোয়ারী ইচ্ছা করে নিজেকে সরিয়ে রেখেছে। হয়তো মেয়ের সামনে দুর্বল হতে চায় না। রাসেল পাটোয়ারী বাণীর এক হাত ধরে নিয়ে গিয়ে দিহানের সামনে দাঁড়ালো। তাতক্ষনাৎ বাণীর পাশে এসে ওপর হাত ধরে দাঁড়ালো ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ভরসায় হাত। বাবাকে দেখে আরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল বাণী।
এদিকে ওদের থেকে একটু দূরে বাইকে সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সামনে দৃশ্যগুলো দেখছে দিগন্ত। হাত বগলদাবা করে গম্ভীর চোখে অবলোকন করছিল সবকিছু। এতোক্ষন পর রহমান পাটোয়ারীকে আসতে দেখে ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বলে উঠল,
‘ যাক অবশেষে এসেছে। আমি আরো ভাবলাম অন্য সব নামের আদর্শ বাপগুলোর মতো তোর বাপ মেয়ের সামনে দূর্বল হবে না বলে ঘরের কোণে লুকিয় থাকবে। যাক সব ক্ষেত্রে আদর্শ না হলেও কিছু ক্ষেত্রে ঠিক আছে তোর বাপ। ’
কথাগুলো শেষ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বেলার দিকে তাকালো দিগন্ত। তাকিয়ের চোখগুলো কুঁচকে নিল। নীরবে চোখের পানি ফেলছে বেলা। বোনের কান্না দেখে নিজেও কাঁদছে। ওর অবস্থা দেখে গম্ভীর গলায় বলল দিগন্ত,
‘ কাঁদছিস কেনো? ’
বেলা জোরে নাক টেনে ফ্যাঁস ফ্যাঁস গলায় উত্তর করল,
‘ আপা এখন থেকে আপনাদের বাড়িতে থাকবে। আপাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব? ’
‘ আপার সাথে থাকতে চাস? ’
কি বুঝলো বেলা কে জানে! মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ‘ হু ‘
ঠোঁট বাঁকালো দিগন্ত। দুহাত দিয়ে নিজ ভঙ্গিতে চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলতে ঠেলতে বলল,
‘ বড় হো তাড়াতাড়ি। তারপর সারাদিন আপার গলা ঝুলে থাকিস আর রাতে নাইট ডিউটি করিস। ’
এবার দিগন্তের কথা বুঝল না বেলা। সরল গলায় প্রশ্ন করে বসল, ‘ কিভাবে? ’
‘ বড় হো আগে তারপর বুঝবি। ’
বেলা আরো প্রশ্ন করতে চাইলো কিন্তু নাক দিয়ে যেন সমুদ্র গড়িয়ে পড়তে চাইছে। শিরশির করছে ভেতরে। জোরে টানতে নিবে এমন সময় দিগন্ত ওর দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ দিন দিন বড় হওয়ার জায়গায় ল্যাদা হচ্ছিস। সব তোর বাপের দোষ। মানুষ করতে পারছে না তোকে। ’
বেলা হাত বাড়িয়ে টিস্যুটা নিয়ে শান্ত করল অবাধ্য নাকটাকে। কাঁদছে মনের কষ্টে। এজন্য চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ঠিক আছে কিন্তু নাক দিয়ে কেনো পড়বে সরল বেলার মাথায় এ প্রশ্ন বহু দিনের। কিন্তু কখনো কাউকে বলে নি।
বাণীর কান্নার আওয়াজ এসে লাগল রহমান এর কানে। তাও তাকালো না মেয়ের দিকে। চোখ-মুখ শক্ত করে রেখেছে। হাত উঠিয়ে বাণীর হাত দিহানের হাতে দিতে চাইলেও পারল না। বাণীর কান্না রহমানের পিতৃহৃদয়কে হার মানালো। মেয়ের দিকে ঘুরে মেয়ের মাথাটা স্ব-স্নেহে বুকে আগলে নিল। চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। নরম স্বরে বলল,
‘ এতো কাঁদতে নেই বড় আম্মা। আপনি আমার বুঝদার বাচ্চা। আপনার কাছে অবুঝের ন্যায় এভাবে চোখের পানি ফেলার আশা রাখি না আমি। কেনো কাঁদছেন? বিয়ে হয়েছে বলে কি আব্বু আপনার হাত ছেড়ে দিয়েছে? কখনোই না। আব্বু সব সময় আপনার পাশে ছায়ার মতো আছে। বরং আব্বু আপনার পাশে আব্বুর চেয়ের শক্ত একটা হাত ধরিয়ে দিয়েছে। এখন আব্বুর চেয়েও আপনার স্বামী আপনার বড় ছায়া। বোকার মতো কাঁদলে চলবে! ’
রহমানের প্রত্যেকটা কথা মন দিয়ে শুনল বাণী। কান্নার বেগ থামল কিন্তু চোখের পানি বাঁধ মানছে না। গড়িয়ে পড়ছেই অবাধে। রহমান আর রাসেল দুভাই বাণীর দুহাত ধরে দিহানের হাতে ধরিয়ে দিল। দিহান স্বযত্নে নিজ হাতেদ্বয়ের মাঝে বাণীর হাত আগলে নিল। রহমান আর রাসেল কিছু বলতে চাইল কিন্তু দিহান থামিয়ে দিল ওদের। হালকা হেসে বলে উঠল,
‘ ওর সম্পূর্ণ খেয়াল রাখা আমার দ্বায়িত্ব। এর পুরাটাই পালন করার একশভাগ চেষ্টা করব আমি। ওর ভালো-খারাপ সব সময় ওর পাশে পাবে আমাকে। চিন্তা করবেন না আপনারা। শুধু মন ভরে দোয়া দেন আমাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য। ’
প্রশন্নচিত্তে হাসল দুভাই। তারপর আরো কিছুক্ষন কথাবার্তা বলে বাণীকে নিয়ে রওনা দিল সবাই। এক এক করে বরযাত্রীর সব গাড়িগুলো চলে যেতে লাগল। সবশেষে বাইকগুলো যাওয়ার পালা এখন। রহমান দিগন্তের কাছে এসে সাবধান গলায় বলল,
‘ আস্তেধীরে বাইক চালাবে বাবা। আর বেলাকে দেখে রেখো। ’
ছোট করে জবাব দিল দিগন্ত, ‘ হু ’। পরপরই ফোন বেজে উঠল। পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করতেই শাড়ি পরিহিত মিতালীর একটা সুন্দর ছবি দেখা দিল। রহমান আরো একবার সাবধানী বানী আওড়ে ভেতরে চলে গেল। দিগন্তের পাশ কেটে একে একে সব বাইকগুলো ছুট লাগালো। রায়হানও দিগন্তকে আসতে বলে চলে গেল। বেলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। দিগন্তের ফোন এখনো বাজছেই । কেটে যাবে এমন মূহুর্তে ধরে ফেলল। কানে চেপে ধরতেই মিতালীর চিন্তিত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
‘ বড় ভাইজান তো মনা আর ওর মেয়েকে নিয়ে সেই ঘণ্টা দুয়েক আগে এবাড়ি এসেছে দিগু। আজ নাকি ওরা থাকবে এখানে। ’
‘ হুম। ’
অস্থির হলো মিতালীর কণ্ঠস্বর, ‘ তাহলে তুই কি করবি? বাড়ি আসবি না আজ? ’
‘ না। ’
‘ এটার কি খুব প্রয়োজন আছে? তোর বাড়ি তুই আসবি না। সকাল থেকে তো কিছু খাস নি। ওখানেও যে মুখে কিছু তুলিস নি তা আমি ঢের জানি। ’
‘ চিন্তা নেই, খেয়ে নিবো। ’
হতাশার শ্বাস ফেলল মিতালী। ধীর আওয়াজে বলল,
‘ বেলা? ’
কানে ফোন ধরে রেখেই চোখ ঘুরিয়ে বেলার দিকে তাকালো দিগন্ত। আস্তে করে বলল,
‘ আছে। ’
‘ ও তো আজ রাতটাই আছে এ বাড়িতে। ও থাকবে অথচ তুই থাকবি না! ’
‘ না ’
‘ আচ্ছা, বুঝেছি। রাত হচ্ছে অনেক। ওকে নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি।’
‘ হুম ’ বলে কেটে দিল ফোন।
তারপর পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে বাইক স্টার্ট দিল। বেলাকে বলল উঠে বসতে। বেলা বসল ঠিকি মাঝে একহাত ফাঁকা রেখে বসল।মিররে বেলার কাহিনী দেখে, পেছনের দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে ধমকে উঠল দিগন্ত,
‘ শেষ মাথায় গিয়েছিস কেনো? পরে যাওয়ার শখ হয়েছে? এগিয়ে আয়, ভালোভাবে ধরে বস। ’
বেলা সোজা দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ না ’
ভ্রুঁ গুটালো দিগন্ত, ‘ কেনো? ’
‘ আব্বু বলেছে ছেলেদের থেকে দূরে বসতে। ’
ঠিকি বলেছে ছেলেদের থেকে দূরেই থাকতে হবে বেলাকে। তাই দিগন্ত বলল, ‘ হুম! ঠিক বলেছে তোর বাপ। এখন ঠিকভাবে ধরে বস। ’
বেলা টুকুর টুকুর চোখে তাকালো দিগন্তের দিকে। এ আবার কেমন কথা! ঠিক বলেছে বলে আবার ছেলের কাছে বসতে বলছে। সরল গলায় প্রশ্ন করল,
‘ ঠিকভাবে বসব মানে! আপনি কি ছেলে না? আপনাকে ধরে বসব কেনো? ’
বেলার কথা কর্ণকুহুরে স্পর্শ করতেই আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালো দিগন্ত। একটা লম্বা শ্বাস টেনে গমগমে গলায় বলল,
‘ সেটা বুঝবি একদিন। তোর বাপ ঠিক বললেও সেটা অর্ধেক ঠিক বলেছে। সব ছেলেদের থেকে দূরে থাকবি কিন্তু আমি অনেক ভালো মানুষ। তাই আমার থেকে দূরে থাকার প্রয়োজন নেই এ কথা বলতে ভুলে গিয়েছে। নে আমি বলে দিলাম। এরপর তোর ওই মুখ থেকে যদি একটাও শব্দ বের হইছে তাহলে রাস্তায় ধাক্কা মেরে ফেলে চলে যাবো। ’
ঠোঁট উল্টালো বেলা। হালকা এগিয়ে এলো। দিগন্ত দিল আরেকটা রাম ধমক। ওর ধমক শুনে টুস করে এগিয়ে এলো বেলা। মাঝে কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব এখন। তারপর এক হাত আস্তে করে দিগন্তের ঘাড়ে রাখল। দেখল সব কিছুই দিগন্ত। তারপর একটানে ছেড়ে দিল বাইক। জোর গতিতে বাইক চালিয়ে কিছুক্ষনের মাঝেই তালুকদার বাড়ির সামনে এসে থামল দিগন্ত। বেলা নামল বাইক থেকে। দিগন্ত ভারী গলায় বলল, ‘ যা ভেতরে যা। সোজা মনির কাছে যাবি আগে। ’
‘ আপনি যাবেন না। ’
‘ না ’
সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন করল বেলা, ‘ কেনো? ’
ভালো লাগল দিগন্তের। কিন্তু প্রকাশ পেল না। বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল, ‘ তোকে এতো বলতে হবে কেনো? ’
বেলা আবারো মুখ খুলতে নিয়েছিল কিন্তু থেমে গেল। কারণ রায়হানের বাইক দিগন্তের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হুট করে রাগ নাকের ডগায় চলে এলো বেলার। কিছু না বলে মুখ ভেটকিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেল বাড়ির ভেতরে।
বেলার কাজে অবাক হলো রায়হান। বিস্মিত গলায় বলল,
‘ কি হলো, বল তো? বেলা এভাবে চলে গেল কেনো? ’
রায়হানের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিল দিগন্ত। ত্যাড়ছা গলায় বলল, ‘ ওকে বলেছিলাম তোর প্রেমিকা আছে। ’
মাথায় হাত পড়ল রায়হানের। দিগন্তের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
‘ শালা, হারা’মজাদা! বাচ্চা মেয়েটার মন ভেঙ্গেছিস। আর আমি এখন জানলাম। নির্ঘাত বদদোয়া দিয়েছে আমাকে। শালা তোদের এগুলোর জন্যই এখনো বিয়ে হয় না আমার। ’
চোখ-মুখ কঁচকালো দিগন্ত। বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
‘ ফালতু কথা ছাড়। চল এখান থেকে তাড়াতাড়ি। দম বন্ধ লাগছে আমার। ’
দীর্ঘশ্বাস ফেলল রায়হান। ভারী গলায় বলল, ‘ মনা কথা বলতে চেয়েছিল আমার সাথে….’
‘ স্টপ! বিরক্ত আমি। পরিবেশটাই সহ্য হচ্ছে না।’ বলে বাইক ছাড়ল দিগন্ত। ওর সাথে সাথে রায়হানও ছাড়ল।দুটো বাইক একসাথে ধুলো উড়িয়ে চলে গেল শোঁ শোঁ গতিতে।
গভীর রাত হয়েছে। চারপাশ অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে। রাতের ঠান্ডা বাতাস বইছে আস্তে আস্তে। মাথার উপরে আকাশটাতে একটা গোলাকার বড় চাঁদ দাঁড়িয়ে আছে। ওর আলোয় মৃদু আলকিত চারপাশ। মিটিমিটি তারাগুলো জ্বলছে। এমন একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশের মাঝে, বিশাল বড় একটা ফাঁকা মাঠে দুটো বাইক দাঁড়িয়ে। বাইকে সাথে হেলান দিয়ে ঘাসের উপর বসে আছে রায়হান আর দিগন্ত। দুজনেই হাতেই ধোঁয়া ছড়ানো সিগারেট। দুটো নেশাখোর সিগারেট ফুঁকছে আপন মনে। এই ফাঁকা পরিবেশের মধ্যে সিগারেটে একটা টান দিয়ে রায়হান বলল,
‘ দিহানকে ফোন লাগা। ’
ঘাড় ফেরালো দিগন্ত। ভ্রুঁ নাচিয়ে প্রশ্ন করল, ‘ কেনো? ’
‘ বেটা, হয়তো এতোক্ষনে রুমে চলে গিয়েছে বউ নিয়ে। ’
‘ গেলে যাবে। তাতে তোর কি? ’
‘ কিছুই না। একটু চিয়ার আপ দেই, শালাকে। এই আরকি? ’
ঠোঁট বাঁকালো দিগন্ত। ফোন বের করে দিহানের নাম্বার ডায়াল করল। একবার বেজে কেটে গেল, ধরল না। কিছুক্ষন পর আবার রায়হান ওর ফোন থেকে ফোন দিল। শেষের দিকে গিয়ে রিসিভ হলো ফোন।
রিসিভ হতেই রায়হান দিহানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফট করে বলল,
‘ কিরে দিহাইন্না! কোথায় এখন? ’
মাত্র রুমে এসেছে দিহান। বাণীর কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছিল। মাঝপথেই ফোন বাজল। রায়হানের নাম্বার দেখে কানে তুলেই বোকা বনে গেল। বিছানার উপর ঘোমটা টেনে বসে থাকা বাণীর দিকে চেয়ে অবাক গলায় উত্তর করল দিহান,
‘ মাত্র ঘরে এসেছি। ’
পাশ থেকে দিগন্ত রাশভারি গলায় বলল, ‘ এতো তাড়াতাড়ি? ’
‘ কোথায় তাড়াতাড়ি! রাত একটা বাজতে চলল। ’
রায়হান ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকালো। দুষ্টুমি ভরা গলায় বেশ ভাব নিয়ে বলল, ‘ কি করবি এখন? ’
রায়হানের প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো দিহান। আশ্চর্য গলায় বলল,
‘ বিয়ের রাতে মানুষ কি করে, ভাই? যা করে তাই! ’
দিগন্ত আর রায়হান একে অপরের দিকে তাকালো। দুজের চোখ-মুখে জুরে দুষ্টামির ছড়াছড়ি। রায়হান এক চোখ মারল। দিগন্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে কুটিল হাসল। দুজনেই হাই ফাইভ দিয়ে গলা ছেড়ে গান ধরল একসাথে।
পাগলুউউউ…থোরাসা কারলে রোমান্স।
দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১৩
হো জমবে জমবে জমবে
এ মস্তি আরো জমবে
নামবে যখন নামবে
রাতের মায়া নামবে
আজ মনেতে জাগছে আশা
চাইছে তোর ছোঁয়া
প্রেম সুখেতে মন হারালে
যায় রে প্রেম পাওয়া
পাগলুউউ……থোরাসা কারলে রোমান্স
পাগলুউউ…..থোরাসা কারলে রোমান্স
পাগলুউউ…..থোরাসা কারলে রোমান্স
এদিকে কান থেকে ফোন নামিয়ে ভ্যাবলার মতো ফোনের দিকে চেয়ে আছে দিহান। মনে মনে ভাবল, দুটোর মাথা গিয়েছে। অতঃপর ফোনটা অবহেলায় একদিকে ফেলে বাণীর দিকে এগিয়ে গেল।