দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৬
আফরোজা আশা
দিশাদের সাথে কথা বলে একটু এগোতেই মিতালীর সামনাসামনি পড়লো রায়হান। কিছু একটা ভেবে দিগন্তের কাছে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। মিতালীকে কালকের ঘটনা সংক্ষেপে বলে, তাকে দিগন্তের কাছে যেতে বললো। ও আর এক মূহুর্ত দেরী করলো না সেখানে। দ্রুত পায়ে তালুকদার বাড়ি ছেড়ে বাইক ছুটালো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। মাথায় জটলা পাঁকিয়ে আছে নানান চিন্তা-ভাবনা। শান্তি মেলছে না ভেতরে।
জ্ঞান হারায়নি বেলা। তবে মাথা ভন ভন করে ঘুরছে। কান ভারী হয়ে আছে বলে দিগন্তের ডাক ওর কানে ভাঙা ভাঙা লাগছে। এদিকে দিগন্ত বেলাকে দুহাতের বন্ধনে নিয়ে ডাকছে। চোখের পাতা নড়ছে ওর। অনেকটা সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো বেলা।
‘ কিরে! শুনছিস। বেলা, এই বেলা। ওঠ। ’
চোখ খুললো বেলা। ওকে চোখ খুলতে দেখে রাগী স্বরে দিগন্ত ধমকালো,
‘ হুটহাট জ্ঞান হারানো কি তোর স্বভাবদোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে? আগে তো কখনো দেখিনি। এখন এরকম হচ্ছে কেনো? বেয়াদবি করতে করতে যদি শরীরে রোগ বাঁধিয়েছিস তাহলে কিন্তু তোর কপালে খারাবি আছে বেলা। ’
ঠোঁট উল্টালো বেলা। ও অসুস্থও নয়, দূর্বলও নয়। কিন্তু দিগন্তকে ভালোভাবে দেখলেই মাথা ঘুরে কেন এর কারণ ও নিজেও জানে না।
সিঁড়ির কাছ থেকে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে দিগন্ত ছেড়ে দিল বেলাকে। ছাড়া পেয়ে বেলা উঠে দাঁড়ালো। দিগন্তও উঠে দাঁড়াতে যাবে তার আগেই ভেসে এলো বেলার চঞ্চলে গলার কথা,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ রোগ আমি বাঁধিয়েছি নাকি! আপনাকে ভালো লাগতে লাগতে এমনি থেকেই বেঁধে গেল। এতে আমার দোষ? খালি খালি বেয়াদব বলার সুযোগ খুঁজে বেড়ান। দোষ কিন্তু আপনার বুঝলেন। ’
বেলার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো দিগন্ত। ধমকে উঠলো,
‘ বেলা! ’
তাতে বেলার কি! সত্যি বলতে ভয় কিসের। ওর এমনিই ভয় লাগছে না। কিন্তু দিগন্তের চোখ রাঙানি দেখে ফুড়ুৎ করে উড়াল দিল। বেলাকে যেতে দেখে দাঁড়ালো দিগন্ত। পিছু ঘুরে একটা সিগারেট হাতে নিবে তখনি পেছন থেকে ওকে ডাকলো বেলা।
‘ দিগন্ত ভাইইই! ’
ভ্রুঁজোড়া এক করে দরজার দিকে চোখ ফেরালো দিগন্ত। দরজা থেকে ঘাড় হেলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে বেলা। দিগন্ত ভ্রুঁ নাচিয়ে বললো,
‘ আবার কি? ’
বিস্তর হাসলো বেলা। অতঃপর চটপটে স্বরে বললো,
‘ আপনার হাসিটা মারাত্মক ভালো লেগেছে। ’
বলেই গায়েব হলো সে। ওর টিকিটারও খোঁজ নেই আর। সামনের দিকে চেয়ে সিগারেটে আগুন দিতে দিতে আবারো শব্দহীন হাসলো দিগন্ত। বেলার পাগলামোতে ওর বিক্ষিপ্ত মন-মেজাজ কখন ঠিক হয়েছে তা টের পায়নি। তবে বেলা যে ওর ওপর বেশ ভালোভাবেই মজেছে তা ভেবেই ওর মন প্রশান্তিতে ছেঁয়ে গিয়েছে।
কয়টা সিঁড়ি পেরিয়ে আসতেই মিতালীর মুখোমুখি হলো বেলা। মিতালী ঝড়ের বেগে উপরে উঠছিল। বেলাকে সামনে পেয়ে বললো,
‘ হ্যাঁ রে! দিগু উপরে আছে এখনো? ’
মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিল বেলা, ‘ হ্যাঁ আছে। ’
‘ মাইশা পড়ে গিয়েছে বাগানে। অনেক ব্যাথা পেয়েছে মেয়েটা। তুই নিচে যা। আমি দিগুকে বলে আসছি। ’
মাইশার কথা শুনে চোখ বড় হলো বেলার। বাগানে যে পাঠিয়েছিল লেবু আনার জন্য, তা বেমালুম ভুলে বসেছে বেলা। হুড়মুড়িয়ে নিচে দিকে ছুটলো মাইশাকে দেখার জন্য।
কোমড়ের ব্যাথাটা একটু কম থাকলেও পায়ের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। ডান পায়ে কোনো বল পাচ্ছে না মাইশা।কোমড়ের চিনচিন ব্যাথার প্রভাবে ওর চোখমুখ নীল হয়ে গিয়েছে। দিশা আর বাণী ওর পাশে বসে ওর ভালোমন্দ দেখছে। বেলা অপরাধীর ন্যায় চুপ করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ও অযথা লেবু আনতে না পাঠালে মাইশা পড়ে যেতো না।
বৃষ্টি মাইশার ডান পা পরোখ করে বললো,
‘ হয়তো ফ্রাকচার হয়েছে। ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। ’
তা শুনে দিহান ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জয়নাল মাইশার রুমে এসে মাইশাকে তৈরি করে দিতে বললো। ফেরার আগে জুনায়েদের খোঁজ করলো কিন্তু পেল না কোথাও। বুঝে নিল সে জুনায়েদ এই সাত-সকালে কোথায় যেতে পারে।
মাইশার কথা জানতেই দিগন্ত এক মূহুর্ত দেরী করলো না। মাইশার কাছে এসে ওর হালচাল দেখে দিহানকে বললো গাড়ি বের করতে। মাইশা উঠে দাঁড়াতে পারলো না। কোমড়ের ব্যাথায় সোজা হওয়া কষ্টকর। কয়েকবার চেষ্টা করেও উঠতে পারলো না মাইশা। দিগন্ত আর জয়নাল মিলে ওকে ধরে গাড়িতে তুললো।
এতোক্ষন মাইশাকে নিয়ে অপরাধবোধে ভুগলেও, মূহুর্তে সেটা আবার ক্রোধে পরিণত হলো। দিগন্ত মাইশাকে ধরেছে। মাইশাও দিগন্তকে চেপে ধরেছে। ওদের এতো কাছাকাছি দেখে শরীরে আগুন ঝলকে উঠল বেলার। মনে হলো কোনো প্রিয় জিনিস ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে কেউ। ক্ষোভ আর জেদের ভারে দাঁতে দাঁত পিষে কিড়মিড়িয়ে উঠলো। চোখজোড়া অসম্ভব রকমের লাল হয়ে গিয়েছে। আরেকটু হলে পানি গড়িয়ে পড়বে।
মাইশাকে নিয়ে দিহান, দিগন্ত আর দিশা যাবে। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। জয়নাল যেতে পারবে না। দিহানও মাইশাকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছে।এদিকে এতোবড় মিটিং ও একা সামলাতে পারবে না । জুনায়েদকে বারবার ফোন দিচ্ছে কিন্তু নো রেসপন্স। জয়নালের চিন্তিত মুখ দেখে প্রশ্ন ছুড়লো দিগন্ত,
‘ কিছু হয়েছে? ’
জয়নাল আগ বাড়িয়ে জুনায়েদের কথা কিছু বললো না। স্মিত হেসে বললো,
‘ অফিসের এতো কাজ সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বয়স তো হলো অনেক। সারাজীবন ধকল সামলাতে গেল। দিহান যদিও হাল ধরেছে কিন্তু ওর একার ভরসায় তো এতো বড় ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এসব নিয়েই চিন্তায় আছি। যা হোক, তোমরা যাও দ্রুত। মেয়েটার ব্যাথা বাড়ছে। দেখি আমি অফিস থেকে যেতে পারলে যাবো। ’
জয়নালের আকার-ইঙ্গিতের কথা ধরতে পারলো দিগন্ত। ঘুরে ফিরে ওকে ব্যবসার হাল ধরতে বললো। তবে কথাগুলো ভুল বলেনি সে। দিগন্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দিল। ওর পাশে দিহান আর পেছনে মাইশাকে আধশোয়া করে ধরে আছে দিশা।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে তালুকদার বাড়িতে হাজির হলো রহমান। সারারাত ছটফট করে কেটেছে। রাতে বৃষ্টিকে কতবার ফোন দিয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। মেয়ে আর বোনের সাথে ভালোমন্দ কথা বলে দেরী করেনি। বৃষ্টি আর বেলাকে নিয়ে চলে এসেছে। মিতালী রাগারাগি করেছে এতো সকালে যেতে দিবে না। রহমান ওকে ভুলিয়ে ভালিয়ে মেয়েদের নিয়ে এসেছে। বাণীকে আনতে চাইলে বাণী এলো না। মাইশা অসুস্থ। এ অবস্থা বাপের বাড়ি যাওয়াটা শোভাপায় না।
আসার সময় বেলা খুব বেশি কথা বলেনি কারো সাথে। হাসিখুশি চঞ্চলতা মূর্ছা গিয়েছে। ফেরার পথে পুরো রাস্তা চুপ করে ছিল। রহমান মেয়ের নরম কাটা দেখে সংকিত হলো ভেতরে। পরক্ষণেই নিজের ভাবনার উপর নিজেই হাসলো। বেলা ছোট। এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
বাড়ি ফিরে কারো সাথে কথা না বলে রুমে চলে এলো বেলা। জামাকাপড় না ছেড়ে সেভাবেই শুয়ে পড়লো। মন ভালো না থাকলে হয়তো শরীরও সাথ দেয় না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। সারারাত ঘুমায়নি। শুয়ে কিছুক্ষন ঝিম মেরে পড়ে রইলো। কোনো এক সময় ঘুমিয়ে গেল।
দুপুরের কড়া রোদ চোখেমুখে আছড়ে পড়তেই ঘুম হালকা হলো বেলার। জানালা হাট খোলা থাকায় সম্পূর্ণ রোদটা বিছানার মাঝবরাবর এসে পড়েছে। সকালে শীত ভাব ছিল বলে ফ্যান না ছেড়েই ঘুমিয়েছে। এখন ঘেমেনেয়ে একাকার হয়েছে। উঠে কাপড়-চোপড় নিয়ে সোজা গোসল করতে চলে গেল।
মাথায় গামছা পেঁচিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো বেলা। নিজের মূর্ছা যাওয়া প্রতিচ্ছবি ভালো লাগলো না। ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করলো হাসি এলো না। বরং মাইশা দিগন্তের ধরাধরি ভাসলো মনে। কেমন একটা বিতৃষ্ণা ভাব ছেঁয়ে গেল অন্তরে। ঘরের তীর্যক রোদাটা ওর রাগে ঘি ঢালছে হয়তো। বড় বড় পা ফেলে টেবিলের কাছে গিয়ে ধুমধাম শব্দ তুলে জানালা লাগালো। ফেরি যেতে নিলে চোখ পড়লো একটা বক্স।
সরু চোখে কৌতুহল বশত বক্সটা হাতে নিল বেলা। খুলতেই নানান ডিজাইনের ফিঙ্গার রিং বেরিয়ে আসলো। চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো বেলার। পুরো বক্সটা এনে বিছানার উপর সব ঢেলে দিল। রিংয়ের ছোট খাটো একটা দোকান বের হলো। সাথে একটা স্টিকি নোট।
নোটটা মেলে ধরতেই ভেসে উঠলো একটা লেখা,
‘ আরো ভালো করে পড়াশোনা কর, বেয়াদব। ’
শেষের বেয়াদব দেখে ফিক করে হেসে দিল বেলা। দিগন্ত দিয়েছে তা স্পষ্ট। আজ তো মহাব্যস্ত। নিশ্চয়ই কাল রেজাল্টের পর দিয়েছে। বেলা ও বাড়ি যাওয়ায় আজ পেল। রাগ-ঢাক সব কোথায় হারালো কে জানে! খুশি মনে একটা একটা করে রিং হাতে দিচ্ছে আবার চোখের সামনে মেলে ধরে দেখছে কোনটা কেমন মানাচ্ছে।
মাইশাকে বাড়িতে আনা হয়েছে। পায়ে ছোট ফ্রাকচার হয়েছে। একমাস বেড রেস্ট দিয়েছে ডাক্তার । কোমড়ের মাংসে চাপ পেয়েছে অনেকটা। ওষুধ আর স্প্রে দিয়েছে তার জন্য।
বাড়ি ফিরে বেলাকে আর পেল না দিগন্ত। মিতালীর কাছে শুনেছে রহমান এসে তাড়াহুড়ো করে মেয়েদের নিয়ে গিয়েছে। তা শুনে ভেতরে ভেতরে অনেকটা আনন্দ পেল সে। পাটোয়ারী সাহেব ভয়ে আছে। এদিকে তার পিচ্ছি মেয়ে বাঘকেও বাঘ ভাবে না। বাঘের খাঁচায় বন্দি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঝখানে একটু আফসোসও করলো। মেয়ে নিয়ে পাটোয়ারীর অহংকার চূর্ণ হবে বোধ হয়।
রায়হানকে কয়েকবার ফোন দিয়েও পেল না। ক্লাবে গেল সেখানেও নেই। ছেলেদের থেকে খোঁজ নিল আজ আসেনি। আবারো ফোন দিল অপরপাশ থেকে তা কেটে দিল রায়হান। সবশেষে রায়হানের উদ্দেশ্যে কয়েকটা গালি দিয়ে বিড়বিড়ালো দিগন্ত,
‘ শালা,হারামজাদা! বউ ফেলে আরামছে দিন কাটাচ্ছে। আমার বউয়ের হদিস নাই অন্যের বউয়ের খেদমত করতেই আধবেলা কাটে। ’
মাত্র চট্টগ্রামে ঢুকেছে রায়হান। দিগন্তের কল দেখে কেটে দিল। চেতেছে দিগন্তের উপর। ফোন কেটে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সুইচ অফ করে পকেটে ভরলো। সত্যি যদি সেদিনের মেয়েটা মাইশা হয় তাহলে দিগন্ত অবশ্যই আগে থেকে জানে। সেদিন এতো কথা হলো একাবারো কিছু বলেনি। রায়হান প্রতিদিন নিখোঁজ বউয়ের গানা গায় দিগন্তের সামনে কিন্তু দিগন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। মজা নেয় ওর কষ্টে।
রায়হানের বাইক সোজা এসে থামলো কাজী অফিসের সামনে। দরজার কাছে এসে সব আশা-ভরসায় এক বালতি পানি পড়লো। কাজীর গেটের বিশাল তালায় মাকড়াসা সংসার বাঁধিয়েছে। পাশেই কাজীর বাড়ি, সেখানে গিয়ে খোঁজ করলো। কাজী সংসার নিয়ে ঢাকা গিয়েছে।
মাথায় হাত পড়লো রায়হানের। সেদিন সাইন করার সময় মেয়েটার নামটা দেখলে, আজ আর এতো খাটনি খাটতে হতো না। মুখ থেকে হেলমেট খুলেনি বিধায় সেদিনের লোকগুলো রায়হানকে দেখেও চিনতে পারলো না। এ ফয়দা নিল রায়হান।
একজনকে ওদের বিয়ে ঘটনা অপ্রতক্ষভাবে কিছুটা বলে জানতে চাইলো মেয়েটাকে কেউ চিনে কি না! চিনে না কেউ। ঢ্যামনা রায়হানের মাথায় বুদ্ধি তো এলো মাইশার ছবি দেখাবে। কিন্তু হায় কপাল! মাইশার কোনো ছবি নেই ওর কাছে।
ব্যর্থ হয়ে একটা পাহাড়ের কাছে এসে বসলো। সেখানেই অনেকটা সময় ব্যয় করে বাইকের কাছে আসতে নিলে মুখোমুখি হলো স্বল্পপরিচত একজনের সাথে।
সোফায় বসে দু পা নাচিয়ে নাচিয়ে আয়েস করে চকলেট খাচ্ছে প্রত্যাশা। গালে মুখে মাখিয়েছে অনেকটা। বিছানায় বেঘোরে ঘুমাচ্ছে মনা। মাত্রাতিরিক্ত মানসিক টানপোড়নে জ্বর উঠেছিল। সর্বক্ষণ ডিপ্রেশ থেকে মানসিক ভাবে দূর্বলতা গ্রাস করেছে। ডাক্তার দেখেছে ওকে। ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে আছে এখন। প্রত্যাশার কেয়ার টেকার প্রত্যাশার হাতে চকলেট ধরিয়ে দিয়ে ফোনে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছে। ফোনালাপে মহাব্যস্ত। জুনায়েদ মনাকে ওষুধ দিয়ে অফিস চলে গিয়েছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে। ফোনালাপে ব্যস্ত থাকায় প্রত্যাশাকে দুপুরের খাবার খাওয়াতে ভুলে বসেছে। প্রত্যাশা খাওয়ার কথা বললেই ওর হাতে একটা করে চকলেট ধরিয়ে দিচ্ছে মেয়েটা। ছোট প্রত্যাশা খিদে সহ্য করতে পারে না। একে একে অনেকগুলো চকলেট খেলেও পেট ভরেনি। শেষ চকলেটটার চেটেপুটে খেলেও ওর পেট জ্বলছে।
ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো। অনেকক্ষন যাবৎ কেঁদেই চলেছে কিন্তু মেয়েটার ফোনে এতোটা ডুবে গিয়েছে যে সে কান্না কানে লাগেনি। জুনায়েদ অফিস থেকে সরাসরি এখানে চলে এসেছে। নিচ থেকে প্রত্যাশার কান্নার আওয়াজ শুনে দ্রুত পায়ে উপরে উঠলো।
সোফায় বসে কান্না করতে করছে প্রত্যাশা। চোখ মুখ ফুলে উঠেছে। চকলেটগুলো গালে মুখে শুকিয়ে গিয়েছে। ওকে কোলে নিয়ে জুনায়েদ কেয়ার টেকার মেয়েটা আচ্ছা মতো ঝাড়লো। মনার এতো সবে কোনো হুশ নেই। ও ঘুমিয়েই আছে। হাই ডোজের ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত থাকায় ও টের পাবে না এতো সহজে।
মেয়েটাকে গালাগাল করে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিল। অতঃপর প্রত্যাশাকে পরিষ্কার করে ওকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিল। পরীর মতো মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে জুনায়েদ। কোনোকালেই মেয়ের আশা ছিল না ওর মনে। প্রথম স্ত্রীর ছেলে হয়েছিল বলে সে সংসার টিকেছিল।
যখন শুনেছিল মনার মেয়ে হয়েছে তখন ভেবে নিয়েছিল মেয়েটাকে সরিয়ে দেবে। কিন্তু যখন মেয়ের মুখ দেখলো আর পারলো না সে কাজ করতে। ফুটফুটে মেয়েটার সৌন্দর্য্য মায়ের থেকেও দ্বিগুণ বেশি। এতো সুন্দর মেয়ের বাবা হওয়ার লোভ হলো জুনায়েদের। এই মেয়ে ওর অংশ ভাবলেও অবাক হয়।
প্রত্যাশাকে ঘুম পাড়িয়ে মনাকে অনেক ডাকাডাকি করে ঘুম থেকে তুললো। জুনায়েদকে দেখে মনা আবারো মুখ কুঁচকে নিল।
দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৫ (২)
‘ আমাকে দুটো দিন একা ছাড়েন দোহাই লাগে। ’
গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জুনায়েদ বললো,
‘ যতদিন আমি বেঁচে আছি ততোদিন এভাবেই চলবে। তোমার বাপ-ভাই আমার টাকায় পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছে। ন্যাকামি করবে না। ’
দাঁত খিঁচে পেটে থাকা কথাগুলো হজম করে নিল মনা। কিছুতেই সহ্য হচ্ছে লোকটাকে। উপায় নেই ওর কাছে। মুখ বুজে সয়ে যেতে হবে সব।