দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৭
আফরোজা আশা
রকেয়া তালুকদার এর হাতে হাতে কাজ করে দিয়ে বাড়ি ফিরছিল রেহানা। ফেরার পথে দূর থেকে একজনকে দেখে চিনতে অসুবিধা হয় নি তার। রায়হানের সামনে এসে দাঁড়াতেই রায়হানও চিনতে পারে রেহানাকে। ভালোমন্দ কথার মাঝে রেহানা রায়হানকে ধরে বেঁধে পাশের এলাকায় তার বাড়িতে নিয়ে আসে। রায়হান প্রথমে যেতে চাইছিল না। পরে কি ভেবে যেন রেহানার কথা ফেললো না।
ঘরে যা ছিল তা দিয়ে রায়হানকে আপ্যায়ন করলো রেহানা।সকালে না খেয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল রায়হান। খিদের চোটে পেট শুকিয়ে গিয়েছিল কিন্তু বউ খোঁজার ধান্দায় খাওয়া-দাওয়া সব ভুলে বসেছিল। হাত মোছার জন্য কাপড় এগিয়ে দিয়ে রেহানা বললো,
‘ ওই বাড়ি যাবা না? তোমরা যাওয়ার পর বাড়িটা ফাঁকা হইয়া গেছে। খালা-খালুজান আর আমি তিনটা মানুষ এতো বড় বাড়িতে একা ঘুর ঘুর করি। ’
ঢোক চাপলো রায়হান। কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে এসেছে চট্টগ্রাম। ফোনটাও অফ করে রেখেছে। রেহানাকে বললো,
‘ আমি গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসেছিলাম খালা। হাতে সময় নেই বেশি। এখনি ঢাকা চলে যাবো। সময় করে আবার চলে আসবো সবাই একসাথে। ’
রায়হানের তাড়া দেখে রেহানা মুচকি হেসে বললো,
‘ আচ্ছা। আইসো আবার। সকাল থেকে ওই বাড়িতে ফোন দেই কেউ ধরে না। মাইশাকেও ফোনে পাই না। কি যে করে মাইয়াটা! ’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাইশা যে পড়ে গিয়েছে সে কথা বলতে নিয়েও থেমে গেল রায়হান। দূর থেকে মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে হয়তো চিন্তায় মরবে রেহানা। অযথা চিন্তা বাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করলো না সে।
‘ কাল বৃষ্টি আর বেলা এসেছিল ওবাড়িতে। তাই হয়তো ব্যস্ত আছে। ’
‘ যতই ব্যস্ত থাকুক, ওর সাথে কথা না বললে মনে শান্তি পাই না। মেয়েটা ছাড়া আমার আর আছেই কি! ওর জন্যই বাঁইচা আছি এখনো। নাহলে কতদিনে…’
মাইশার সম্পর্কে জানার জন্য রায়হানের কৌতুহল বাড়লো। রেহানা একের পর এক কথা বলছেই। সেসব মন দিয়ে শুনছে আর চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রুমটা দেখছে। বাড়িটাতে দুটো ঘর। রায়হান যেটাতে বসেছে সেটা বেশ সাজানো-গোছানো বড় ঘর আর পাশে একটা ছোট ঘর। রেহানার কথার শেষ হলে রায়হান বললো ও চলে যাবে এখন। রেহানাও ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রায়হানকে রুমে বসতে বলে কি কি যেন আনতে চলে গেল।
রেহানা যাওয়ার পরপরই রায়হান উঠে দাঁড়ালো। পাশের স্টিলের তৈরি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে ভ্রুঁ কুঁচকে সবকিছুতে নজর বুলালো। মেয়েলী কয়টা সাজগোজের জিনিস সাজিয়ে রাখা। সেগুলো হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে নামগুলো মুখস্থ করলো রায়হান। কেনো করলো তা জানে না! ফোন বের করে আবার কিছু কিছু জিনিসের ছবি তুলে নিল। সবশেষে মাইশার একটা হেয়ার ব্যান্ড এ নজর আটকালো রায়হানের। সেটা হাতে নিতেই একটা মিষ্টি ঘ্রাণ এসে ঠেকলো ওর নাসারন্ধ্রে। শ্যাম্পু স্মেল! কি শ্যাম্পু ইউস করে মেয়েটা জানার জন্য উদগ্রীব হলো রায়হানের মন। নাকের কাছে এনে বড় বড় কয়টা শ্বাস টানলো সে।
বাইরে থেকে রেহানার আওয়াজ পেয়ে তড়িঘড়ি করে ব্যান্ডটা পকেটে ভরলো রায়হান। দুকদমে গিয়ে আবার বিছানার উপর বসে পড়লো। রেহানা একটা ব্যাগে দুটো আচারের বোয়াম এনে রায়হানের হাতে ধরিয়ে দিল। রায়হান কিঞ্চিৎ হাসলো। গতবার রেহানার হাতের আচার খুব পছন্দ হয়েছিল রায়হানের। খেতে বসে আচারের অনেক প্রশংসা করেছিল রায়হান। রেহানার সেটা মনে রেখেছে। তা দেখে মনে মনে রায়হান ভেবে ফেললো, যদি রেহানা শ্বাশুড়ি হয় তবে খারাপ না। জামাই আদর ভালোই জুটবে ওর কপালে।
অতঃপর রেহানার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রায়হান। ঢাকা গিয়ে বাকি সবকিছু দেখবে। দিগন্ত জানে সব, ইচ্ছে করে ওকে নাচাচ্ছে তা বেশ টের পেয়েছে রায়হান।
পাটোয়ারী বাড়িতে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে সবাই। দুই মেয়েকে দুপাশে নিয়ে খাচ্ছে রহমান। ওদের একপাশে রাসেল বসেছে। আমেনা আর রিনা খাবার বেড়ে দিয়ে সবার ওরাও বসেছে খেতে। খাওয়ার মাঝপর্যায়ে গিয়ে রহমান বৃষ্টিকে বললো,
‘ কালকে বাড়িতে থাকবে। তোমাকে দেখতে আসবে। ’
রহমানের কথা শুনে গলায় খাবার আটকে এলো বৃষ্টির। চোখজোড়া ছলছল হয়ে এলো। রহমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আমি এখনি বিয়ে করতে চাই না আব্বু। একবার বিশ্বাস করে ঠকেছি। আবার কাউকে বিশ্বাস করতে ভয় হয়। নিজেকে স্বাভাবিক করতে আমার আরো সময় প্রয়োজন। ’
রহমান মেয়ের দিকে শান্ত চোখে চেয়ে বললো,
‘ তুমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলে তাই ঠকেছো। আমার মানুষ চিনতে ভুল হয় না আম্মা। তোমার বিয়ের কথাবার্তা অনেকদিন আগেই ঠিক হয়েছিল। কাজের সূত্রে ছেলে ব্যস্ত ছিল আর তোমার পড়াশোনার কথা ভেবে এতোদিন কোনো আলোচনা করিনি এ বিষয়ে। গতকাল ছেলে এসেছে কয়েকদিনের ছুটিতে। এর মাঝে বিয়ে দিতে চায় তার পরিবার। সব দিক বিবেচনা করে আমিও মানা করিনি। ’
বৃষ্টি গলা দিয়ে আর খাবার নামলো না। কিছুক্ষন ঝিম মেরে বসে থেকে হাত ধুয়ে রুমে চলে গেল। উপস্থিত সবাই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। রহমান একটা বড় শ্বাস ফেললো। একদিনে বেলার চিন্তা অন্যদিকে বৃষ্টির চিন্তা। বৃষ্টি যখন জানবে পরিবার একই তখন রহমান কিভাবে ওকে সামাল দেবে তা ভেবেই চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে আসছে তার। রাসেল রহমানকে বললো,
‘ আরেকবার খোঁজ নিবো ভাবছি। একবার মেয়েটা মরতে মরতে বেঁচেছে। আমার মন মানছে না ভাই। রক্ত তো এক। যদি…’
রহমান চোখ রাঙিয়ে তাকালো ভাইয়ের দিকে। ইশারায় চুপ থাকতে বললো। রাসেল খুব জোরে কথাটা বলেনি বিধায় আমেনা আর রিনা শুনতে পেল না কিছু।
বেলার খাওয়া-দাওয়া সব উড়ে গিয়েছে। খুশিতে আত্মহারা সে। আপার বিয়ে মানে মজা আর মজা। এর মাঝে আমেনা মন ভার করে বললো,
‘ আপনি তো আগে কিছু বলেন নি। আমার আবার বৃষ্টির জন্য একটা ছেলেকে খুব ভালো লেগেছিল। আপনাকে সেদিন বলতে চাইলাম না। ব্যস্ত ছিলেন তাই আর বলা হলো না। ’
রহমান খেতে খেতে বললো, ‘ কার কথা বলছো? ’
আমেনা স্বামীর দিকে চেয়ে বললো, ‘ দিগন্তের একটা বন্ধু এসেছিল না রায়হান নাম। ওর সাথে সেদিন দেখা হয়েছিল। ছেলেটার ব্যবহার খুব মনে ধরেছে আমার। নিজে থেকে…’
মাঝখানে ঠাস করে বলে বসলো বেলা, ‘ ধুর! তোমার পছন্দ! বৃষ্টি আপার সাথে রায়হান ভাইকে একদম মানাবে না। আর রায়হান ভাইয়ের প্রেমিকা আছে। বলেছিল দিগন্ত ভাই। ’
বেলার কথা শুনে মিইয়ে গেল আমেনা। সব কথার ছেড়ে বেলার মুখে দিগন্তের নাম শুনে ঝট করে ওর দিকে তাকালো রহমান। ভাবগম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
‘ দিগন্ত বলেছিল মানে? ওর সাথে তোমার কথা হয়? তুমি ওই ছেলের সাথে কথা বলো? ’
ভোলাভালা মুখ করে রহমানের দিকে তাকালো বেলা। চোখজোড়া কিঞ্চিৎ বড় বড় করে বললো,
‘ কথা বলবো না আব্বু? দিগন্ত ভাইয়ের সাথে বেশি কথা হয় না তো আমার। লোকটাকে দেখলেই আমার ভয় করে অনেক। দশ হাত দূরে চলে আসি। ওই যে বাণী আপার বিয়ে একটু আধটু কথা হয়েছিল। তারপর সামনে পেলে সালাম দিয়ে কেটে পড়ি। ঠিক করি না? ’
ডাহা মিথ্যা কথা বলে মনে মনে কয়বার তওবা কাটলো বেলা। এছাড়া আর উপায় কি! ও দেখেছে রহমান দিগন্তের নাম শুনলেই কেমন যেন রেগে যায়। তাই কোনো বাছ-বিচার ছাড়াই উত্তর দিল। রহমানের কাছে মিথ্যা বলে নিজের ভালো করলো নাকি খারাপ তা টের পেল না বেলা। এতো সব বোঝার বয়স ওর হয়নি এখনো। চোখে রঙিন চশমা লেগেছে। জীবনে কোনোদিন মিথ্যা না বলা মেয়ে খুব সাবলীলভাবে আব্বুকে মিথ্যা বলে দিল। ঠিক ভুলের বিচার হারিয়ে মিথ্যা বলে ফেললো। অথচ দিগন্তকে নিয়ে ওর মনে বিন্দুমাত্র ভয় নেই। ওর সাথে দুদণ্ড কথা বলার জন্য চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করছে। আমেনা কাছ থেকে ফোন এনে বালিশের নিচে লুকিয়ে রেখে তবেই খেতে এসেছে।
এদিকে রহমান মেয়ের কথা শুনে শান্তি পেল। যা হয়েছে তা নির্দিধায় বললো তাকে বেলা তাকে। এজন্য মেয়েদের প্রতি তার বিশ্বাস অনেক। যদিও তার ব্যস্ততার সুযোগ নিয়েছিল বৃষ্টি কিন্তু সহজ-সরল ছোট মেয়ের প্রতি তার অফুরন্ত আস্থা। রহমানের কথা বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করবে না সে। অটুট বিশ্বাস নিয়ে বেলার মাথায় হাত রেখে রহমান বললো,
‘ একদম ঠিক করেন আম্মা। বাড়তি কথা বলার প্রয়োজন নেই। আর আমার পারমিশন ছাড়া এরপর কোনোদিন ওবাড়ি যাবেন না। আপনি মন দিয়ে পড়াশোনা করেন। আব্বু আপনার জীবন গুছিয়ে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। ’
আব্বুর আদরে গলে গেল বেলা। ঠিক ভুল কি করেছে তার কিছুই মনে রইলো না। খেতে খেতে পুরো টেবিল মাতিয়ে রাখলো বৃষ্টির বিয়েতে কি করবে না করবে তা নিয়ে। রাসেলও ভাতিজীর সাথে তাল মিলাচ্ছে।
এতোক্ষন বৃষ্টির রুমে ছিল। ওর কাছ থেকে নিজ রুমে এসে দুম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো বেলা। আবারো সটান হয়ে উঠে বসলো। ধুমধাম করে হেঁটে গিয়ে দরজায় সিটকিন তুলে আবারো এসে শুয়ে পড়লো। বালিশের তল থেকে ফোন বের করে ফোন দিল দিগন্তকে।
ক্লাবে ছেলেদের নিয়ে আলোচনা করছে দিগন্ত। অন্য সময় হলে বন্ধ রাখতো ফোন। আজ রাখেনি, মাইশা অসুস্থ কিছু প্রয়োজন হলে ফোন দিতে বলেছে ওকে।
কথাবার্তার মাঝে ফোন ভাইব্রেট এর শব্দ পেয়ে টেবিলে রাখা ফোনের দিকে তাকালো সে। ভ্রুঁ জোড়া আপনা-আপনি বেঁকে গেল। আমেনার নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। এই অবেলায় বেলা ফোন দিচ্ছে ওকে!
দলের ছেলেদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা চলছে ওর। রায়হান আর ও দুজন একসাথে না থাকায় নিজেদের মধ্যে ভেজাল লেগেছে। সেসব সমাধান করছে সে। ফোনটা কেটে দিল।
দিগন্ত ফোন কেটে দেওয়াতে ঠোঁট উল্টালো বেলা। প্রথমে অভিমান করে ভাবলো আর ফোন দিবে না। পরে আবার কি হলো! ভাবনা-চিন্তা সাইডে রেখে পুনরায় কল লাগালো। যতক্ষণ ধরবে না ততোক্ষণ দিতেই থাকবে বেলা। লাগাতার কয়েকবার ওর ফোন কাটলো দিগন্ত। এতে বেলার জেদ বাড়লো। শোয়া থেকে উঠে বসে চোখমুখ লাল করে আবারো ফোন দিল।
বিরক্ত হলো দিগন্ত। কথার মাঝে বারবার আটকে যাচ্ছে সে। ফোন বন্ধ করতে চাইলেও পারলো না। আবারো কল ঢুকেছে বেলার। এবারে ফোন রিসিভ করে চড়া গলায় বললো,
‘ কেটে দিচ্ছি বুঝিস না ব্যস্ত আছি। সব সময় বেয়াদবি না করলে শান্তি পাস না। বড় হয়েছিস না! বাচ্চামো কমা অসভ্য মেয়ে। ’
বলেই কেটে দিল ফোন। এদিকে রাগে ফুঁসছে বেলা। জোরে জোরে শ্বাস টানছে। দিগন্ত ফোন কাটার পরও আবার ফোন লাগালো ও। সুইচ অফ করে দিয়েছে। ওকে কথা বলার সুযোগও দেয়নি তার আগেই বন্ধ করে দিয়েছে ফোন!
এবার সকালের রাগটাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো বেলার। মাইশার কথা ভুলে বসেছিল। মুহূর্তেই সেটা আবারো জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠলো ওর মনে। রাগে-দুঃখে কেন যেন ছটফটিয়ে উঠলো ও। এক পর্যায়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ফোনটা আছাড় মেরে বিছানায় ফেলে রাখলো। টেবিলের কাছে গিয়ে ড্রয়ার টেনে হিচড়ে খুললো। সেখান থেকে লুকিয়ে রাখা রিংগুলো সব বের করে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মারলো বাইরে।
দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৬
একের পর এক শ্বাস টানছে বেলা। মাথা ঘুরছে ওর। রাগে দাঁতে দাঁত পিষছে। দিগন্ত কেনো কথা বললো না ওর সাথে? এটা ভাবলেই জেদে মাথার চুল টানতে ইচ্ছে করছে ওর। মাত্রাতিরিক্ত হাইপার হওয়ার দরুন ভনভন করে কানের চারপাশ শব্দ করছে। হেঁচকিও উঠে গিয়েছে। একটু চোখের পানি পড়লেই হেঁচকি উঠে যায় ওর। মুখে হাত চেপে ধরে কোনোমতো ওয়াশরুমে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিল। মাথা গড়িয়ে পানি পড়ে পুরো শরীর ভিজিয়ে দিল ওর। ঠান্ডা পানি দিয়েও ঠান্ডা হচ্ছে ওর ভেতরে। কোথায় যেন ভীষণ জ্বালাপোড়া করছে বেলার। হেঁচকির শব্দ যেন বাইরে না যায় তাই মুখে হাত চেপে রেখে কাঁদছে আর বিলাপ বকছে। পাগলের ন্যায় বিড়বিড় করছে বেলা, সাথে দিগন্তের উপর এক পাহাড় অভিমান আর ক্ষোভ ঝারছে।