দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৭

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৭
অবন্তিকা তৃপ্তি

শেখ মহলে,দোতলার সিঁড়ির পাশের রুমটা অরূপের! আজ যেখানে ভীষণ সুন্দর করে বাসর সাজানো হয়েছে। বিছানায় ছড়িয়ে রাখা হয়েছে লাল গোলাপের পাঁপড়ি। মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে বিছানার দুপাশে! এয়ারফ্রেশনারের মিষ্টি গন্ধে চারপাশ মো-মো করছে।
ফুলে সজ্জিত বিছানার ঠিক মধ্যখানে, হাঁটু ভেঙে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে নিধি। দরজার বাইরে অরূপের কথা শোনা যাচ্ছে। হাসাহাসি করছে ভীষণ। অরূপ, নিধির স্বামী। তিন কবুলের স্বামী। যাকে নিধি, একদম আচমকা নিজের এলোমেলো, কাহিল জীবনটায় জড়িয়ে ফেলেছে।

নিধির হঠাৎ-ই ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কেন পাচ্ছে ও জানে না। বারবার মনে হচ্ছে- এই যে যা হচ্ছে নিধির সঙ্গে; এসব নিধি ডিজার্ভ করে না। ও যা পাচ্ছে, সব কারোর দয়া করেই পেয়ে গেছে। অথচ অরূপ বলেছে, ও নিধির উপর কোনো দয়া করেনি। তাও নিধির অবুঝ, অপরাধবোধে দগ্ন হৃদয় সেটা মেনে নিতে পারছে না। নিধির চোখের কোন বেয়ে জল গড়াবে, এর পূর্বেই শোনা গেলো দরজায় সিটকিনি লাগানোর শব্দ। নিধি কান্না গিলে ফেলল।
অরূপ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিধিকে অনেকক্ষণ দেখলো। নিধি আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বিছানার বসে রইলো। অরূপ হালকা হাসল! পাঞ্জাবির হাত গুটাতে গুটাতে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে। অরূপ বিছানায় বসলো। পালং কাঁপলো, সঙ্গে কাঁপলো নিধির ছোটমোট্ট হৃদয়! অরূপ কিছুক্ষণ ঘোমটার আড়ালে শখের, আদরের বউটাকে দেখল। তারপর হালকা হেসে বউয়ের ঘোমটা তুললো!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মারহাবা! অরূপ না চাইতেও মনেমনে বলে উঠল! হালকা মেকআপে নিধিকে বড্ড মায়া-মায়া দেখাচ্ছে। চোখ দুটো নামানো,চিকন ঠোঁটদুটো তিরতির করে কাঁপছে, চুলগুলো সিঁথি করে খোঁপা করা। সিথির মধ্যে আটকে আছে, চিকন একটা সোনার গড়ানো টিকলি। অরূপ নিধিকে দেখলো। তারপর নিধির থুতনি আঙুল দিয়ে ধরে মুখটা উঁচু করল। নিধির মুখ উঁচু করা থাকলেও, চোখ বুজে রেখেছে। অরূপ সেটা দেখে হালকা স্বরে বললো-
‘আমার দিকে তাকান নিধি।’

তার কণ্ঠ, পুরুষ কণ্ঠের আদুরে আবদার! তবুও নিধি তাকাল না। বুকটা অসম্ভব কাঁপছে ওর! ভয়ে নাকি লজ্জায়; ও জানে না। অরূপ আবারো বললো-‘চোখ খুলুন নিধি; আপনার স্বামীকে দেখুন।’
‘স্বামী’ শব্দটা নিধির কানকে আলোড়িত করে তুলল। নিধি ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখলো। অরূপ সামনে বসে আছে। গায়ে সাদা রঙের এক রঙা কুর্তা। কুর্তার বুকের কাছের বোতাম খুলে রাখা, লম্বা হাতা গুটিয়ে রাখা। মুখে একটা মিষ্টি হাসি ঝুলানো। নিধি মনেমনে সদ্য স্বামীর এমন আকর্ষণীয় রূপটার প্রেমে একদম হঠাৎ করে পড়ে গেলো, সেটা নিধি নিজে বুঝতেও পারল না।
অরূপ থুতনি থেকে হাত সরালো। মোবাইলে ঘড়ি দেখে নিয়ে বললো-‘চেঞ্জ করে ফেলুন, গরম আজকাল বেড়েছে খুব।’

নিধি শুনলো! গায়ের ভারী বেনারসি বদলানো হয়নি। আশা চুলের ক্লিপ খুলে চুল সুন্দর করে আঁচড়ে দিয়েছে। মুখের মেকআপও তুলে দিয়েছে। এখন শুধু একটু গোসল করে, গায়ের শাড়ি বদলানো উচিত। নিধি বাথরুমে যাবে। লাগেজ খুঁজে পাচ্ছে না। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে শুধু। অরূপ বিছানায় বসে নিধিকে দেখছিল। নিধি কী খুঁজছে বুঝতে পেরে ও বললো-‘আপনার শাড়ি, অন্যান্য জিনিস আমাদের আলমারিতে তুলে রেখে গেছেন ভাবি।’
‘আমাদের আলমারি’ নিধি চোখ দুটো বন্ধ করে লম্বা এক নিঃশ্বাস টানল! লোকটা কথায় কথায় নিধিকে এতো হক, এত অধিকার কেন দিচ্ছে? অভ্যাস নষ্ট হয়ে যাবে নিধির। ওভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে নিধি আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে বাথরুমে গেলো।

নিধি খানিক পর বের হলো! অরূপ তখনও সেভাবেই বসে আছে। নিধি বের হতেই, ওর দিকে চোখ তুললো অরূপ। চুলে গামছা বেঁধে রাখা। সদ্য গোসল করে আসায় ভীষণ সতেজ দেখাচ্ছে ওকে। অরূপ একটু কেশে সোজা হয়ে বসলো। কখনো কোনো মেয়েকে সরাসরি এভাবে দেখে অভ্যস্ত নয় অরুপ। ওর ভীষণ নার্ভাস লাগছে।
নিধি ফ্রেশ হয়ে অরূপের দিকে কোণা চোখে চেয়ে বিছানার এক কোণে চুপটি করে বসলো। অরূপ অনেকটা দূরে বসে। দুজনেই চুপচাপ। অরূপ খানিক পর এগিয়ে এসে নিধির কাছ ঘেঁষে বসলো। নিধি কেঁপে উঠলো, অস্বস্থি লাগলেও সরলো না জায়গা থেকে। কাঠ হয়ে বসে রইলো। অরূপ নিধির দিকে মাথা তুলে একবার তাকালো। তারপর একটু একটু করে ওর আর রুক্ষ হাতটা দিয়ে নিধির এক হাত আলতো করে ধরলো। নিধি জোরে শ্বাস টানলো। ওর ভীষণ ভয় লাগছে। এমন মূহুর্ত এর আগেও ওর জীবনে এসেছে! সরচরাচর যা হয়, বিয়ের প্রথম রাতেই অচেনা স্বামীকে নিজের সবকিছুই সপে দিতে হয়েছিল। আজ কি হবে কে জানে? নিধি অবশ্য সময় চাইবেও না। স্বামী হয় ওর, হক আছে অরূপের। নিধি ন্যাকামো করে স্বামীকে ফিরিয়ে দিবে না। পুরুষ মানেই তো এই রাতে অস্থির হয়ে স্ত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়া। এটাই নিধি জানে।

কিন্তু বোকা নিধি, এটা জানে না! সব পুরুষ সমান নয়। যেমন অরূপ! অরূপ হাতটা ধরে কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থাকলো। তারপর একসময় বললো-‘নিধি, আমাকে একটু চিমটি কাটবেন?’
নিধি অবাক হয়ে তাকাল! ওর চোখ দুটো গোলগাল হয়ে গেছে। অরূপ আবারো বললো-‘প্লিজ।’
নিধি কাঁচুমাঁচু হয়ে অরূপের লোমশ বাম হাতে চিমটি কাটল। অরূপ ‘উঁহ’ করে উঠলো। চিমটি দেওয়া স্থান মালিশ করলো চোখ-মুখ কুঁচকে। নিধি ওই লোকের ওমন বোকামো দেখে হাসি আসলেও, গিলে ফেললো।
অরূপ থামলো, নিধির হাতটা অধিকারবোধ দেখিয়ে আরো শক্ত করে চেপে ধরে নিচু আওয়াজে বললো-‘ফাইনালি, আপনি আমার স্বপ্ন নন! আপনি আমার হাকিকাত, আমার নিধি।’

নিধি থমকে তাকাল। এতোকিছু নিধি আশা করেনি। ওর সমস্ত ভয়টাকে এ পুরুষ ধুমধাম ফাইট করে হারিয়ে ফেলছে। নিধির জড়তাগুলো শুষে নিচ্ছে। নিধির মত অভাগারা এতকিছু পায়না, নিধি কিভাবে পেয়ে গেলো? এতবছরের নিঃস্ব নিধি নিজের প্রাপ্তির খাতাটার হিসেব কষে আচমকা কেঁদে উঠল। নিধির কাঁন্নায় ভ্যাব্যাচ্যাকা খেয়ে গেলো অরূপ। ও শশব্যস্ত হয়ে আগলে নিল স্ত্রীকে। অধৈর্য্য গলায় বারবার জিজ্ঞেস করলো-‘কী হয়েছে নিধি? কাঁদছেন কোন? অ্যাই নিধি?আরে!’
নিধি কথা বলছে না। ও কেঁদে কেঁদে আচমকা অরূপের ডান বাহু চেপে ধরে ডান কাঁধে মুখ গুঁজে দিয়ে ফুঁপিয়ে উইহে, বলতে লাগল-
‘আমি এত সুখ ডিজার্ভ করিনা, অরূপ! আপনি কেন এগুলোর লোভ আমাকে দেখাচ্ছেন? আমি করি না, করিনা ডিজার্ভ!’

থমকে গেল অরূপ। ভালোবাসার মানুষর প্রথম এতটা ঘনিষ্ঠ স্পর্শে ওর রূহ-মন কেঁপে উঠলো। বিয়ের আগে অরূপ ভাবত, নিধি মেয়েটা বড্ড শক্ত, কঠোর! অথচ এখন জানতে পেল, মেয়েটা ভীষণ নাজুক! বিয়ে না হলে তো অরূপের এই সত্যটা অজানাই থেকে যেত।
অরূপ নিজের অনুভূতি শক্ত করে চেপে, নিধির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় বুঝালো- ‘আপনি ডিজার্ভ করেন নিধি। এই সুখগুলো আমরা দুজনেই ডিজার্ভ করি।’
নিধি ফুপাচ্ছে! অরূপ নরম কণ্ঠে নিধির ঘন ভিজে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল-‘কাঁদে না আর। হুহ, শান্ত! স্টপ ক্রাইং, নিধি।’

নিধি কেঁদেই গেল শুধু। অরূপও বাধ্য এবং যত্নবান স্বামীর ন্যায় নিজের স্ত্রীকে পুরোটা রাত আগলে ধরে রাখলো! মেয়েটা ভালোবাসা পায়নি কখনো। কেউ ওকে এতটা ভালোবাসছছে, এটুকু যেন সহ্য হচ্ছে না ওর। খুশি, উত্তেজনায় কান্না আসছে শুধু! স্বামী অরুপকে বড্ড বেগ পেতে হলো নিজের আবেগি, সদ্য পরিণত হওয়া ছিচকাদুনে স্ত্রীকে সামলানো। শেষ রাতের দিকে নিধি নিজে থেকেই অরূপের বুকে মুখ লুকিয়ে ক্লান্ত দু চোখ বুজে ফেললো! অরূপও হাসিখুশি ভাবে আগলে নিলো স্ত্রীকে।

বাড়ির বড় বউ হিসেবে আজ সন্ধ্যা থেকে অনেক কাজ ছিলো আশার। সকল কাজ শেষ করে রুমে ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা বেজে গেলো। ক্লান্ত আশা রুমে ঢুকতেই চমকে গেলো। পুরো রুমটা বাসর ঘরের মতো করে সাজানো। অরুপের রুমটা যেভাবে আশা নিজের মনমতো সাজিয়েছে, সেভাবেই ওদের নিজেদের বেডরুমটাও সাজানো। আশার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। ও ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে দরজায় সিটকিনি তুলে ধীর পায়ে এগুতে এগুতে ডাকলো-‘এই যে ডাক্তার, আপনি রুমে?নাকি বারান্দায়?’

জবাব এলো না। আশা ঠোঁটে সেভাবেই হাসি ঝুলিয়ে বারান্দায় গেল। বারান্দায় পা রাখতেই অ্যাশার কোমর আগলে ধরলো কেউ। আশা চমকে উঠলো। ও জানে, এই হাতদুটো কার! ও অবলীলায় নিজেকে হারিয়ে দেওয়ার সুযোগ দিলো, চুপ করে দাঁড়িয়ে গেল সেখানেই। ধীরে ধীরে ওই হাত-দুটো আশার কোমর ছুঁয়ে শাড়ি সরিয়ে পেট স্পর্শ করেছে। আবেশে, অনুরাগে আশার চোখ বুজে আসছে। কোমল কিছু মারাত্মক আবেগে ডুবন্ত আশা, ওর কানে একজন ভীষণ সফ্ট কণ্ঠে ফিসফিসালো-‘উড ই্যয়ু ওয়ানা ডাই টুনাইট, মিসেস শেখ?’
আশা হেসে ফেলল। পাগলামির সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে লোকটা। আশা লাই দেখালো, অনিরুপের গালে আলগোছে মাথাটা ঠেকিয়ে দিয়ে বললো-‘ইয়াহ, ইফ হি ওয়ান্টস্।’

অনিরূপও হেসে ফেলল! ও আশাকে একহাতে সেভাবেই জড়িয়ে রেখে অপরহাতে গোলাপের চারা থেকে একটা গোলাপ ছিঁড়লো। গোলাপটা আশার পুরো মুখে একটু একটু করে ছুঁয়ে দিতে দিতে নেশালো কণ্ঠে বলতে লাগল-‘যদি সে তোমার গা এভাবে, ঠিক এভাবে ছুঁয়ে যায়, তবুও সায় আছে?’
আশা কাঁপছে। ওর মুখে সুড়সুড়ি লাগছে। পেটে বাটারফ্লাই উড়াউড়ি করছে খুব।স্বামীর ছোয়ায় দিশেহারা আশা বড়বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো-‘হু।’

অনিরুপ হাসলো। গোলাপটা এবার আশার কোমরে দিতে দিতে বললো-‘যদি সে এভাবে তোমাকে নিজের সঙ্গে সাপের মতো প্যাঁচিয়ে ফেলতে চায়, তবুও সায় আছে?’
আশা কথাই বলতে পারছে না। ওর সারা গা থরথর করে কাঁপছে! সহ্য হচ্ছে না আর এই মিস্টি যন্ত্রণা। ও শুধু অস্ফুট স্বরে এটুকু বললো-‘হু।’

অনিরূপ হাসলো। শেষ ট্রিকসটা কাজে লাগালো ও এবার। গোলাপটা আশার উন্মুক্ত পেটে ছুঁয়ে, চেপে ধরে শেষবারের মতো বললো-‘আর যদি সে তোমার এই নরম পেটে নিজের একটা অংশ রাখতে চায়, তবুও সায় আছে?’
আশা আবেগে ডুবে আছে আকণ্ঠ। অনিরূপের এসব ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বলা কথা ওর মাথায় নেই। ও শুধু স্বামীর স্পর্শ মন দিয়ে উপভোগ করছে। মাথায় আর কিচ্ছুটি নেই, শুধু রয়ে গেছে স্বামী অনিরূপের করা মারাত্মক একেকটা ছোঁয়া! ও আর নিজেকে সামলাতে না পেরে পেছন ঘুরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল অনিরূপকে। নিচু গলায় বলতে লাগল-‘হু,আছে, আছে।’

অনিরূপ হাসল। গোলাপটা আশার কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে, নিজেও স্ত্রীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। যাক মানানো গেছে বউকে। এখন আর বউটা অনিরূপকে দোষ দিতে পারবে না। সম্মতি ও নিজেই দিয়েছে। অনিরূপকে বললে, সরাসরি বলে দিবে অনিরূপ।

অনিরূপ হালকা হেসে বউকে পাঁজকোলে তুলে নিলো। আশা দুহাতে গলা জড়িয়ে রেখে, অনিরুপের কাঁধে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রেখেছে। অনিরুপ আশাকে নিয়ে রুমে ঢুকলো। আশার মাথাটায় বালিশ ঠেকতেই আশা অনিরূপের গলা ছেড়ে টলমল চোখে স্বামীর দিকে তাকালো। অনিরুপ আশার কপালে চুমু খেল। আশা আবেশে, সুখে চোখ বুজে উলভোগ করলো। অনিরুপ আশার শাড়ির আঁচলে হাত দিলো। সঙ্গেসঙ্গে আশা লজ্জায় কুকড়ে গেলো একদম। খামচে ধরলো অনিরূপের অসভ্য হাতটা! অনিরূপ লক্ষ্য করে ফিচেল হাসলো। বউকে পুরোপুরি লজ্জায় ফেলল না আর, হাত সরিয়ে ফেললো। আশার চুলগুলো গুছিয়ে দিল ভীষণ যত্নে! অতঃপর আশার বুজে থাকা চোখের দিকে চেয়ে, গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল। আশা সুখের আতিশয্যে দুহাতে আকড়ে ধরলো অনিরুপের বলিষ্ট পিঠ।

মধ্যরাত এখন। আশা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে অনিরুপের বুকে। শুধু ঘুম নেই অনিরূপের নীলাভ চোখ-দুটোতে। আশার ঘুমন্ত মুখটার দিকে চেয়ে অনিরূপ হালকা হাসলো! আজকের রাতটা অনিরুপের জন্যে অত্যন্ত বিশেষ একটা রাত ছিলো!
একটা বাচ্চা! একটা বাচ্চা হলে, আশা মন দিয়ে স্বামীর ঘর করবে। কেউ আশাকে উষ্কাতে পারবে না, ভরকাতে পারবে না। আশা সারাজীবনের মতো অনিরুপের কাছে বাধা পড়বে।

আজকে অমিতের রিলিজ ডেইট ছিলো। অমিত হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ পাওয়ার পর থেকেই ভীষণ উড়ছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে অনিরূপকে। অনিরুপের এসব দেখে মাথা ঠিক নেই একদম। ওই অমিতের বাচ্চারে জানে মেরে ফেললে বেশি ভালো হতো। শুধুশুধু বাঁচিয়ে রেখে উটকো ঝামেলা বাড়িয়ে রেখেছে।
আশাকে সে সবেই পেলো, এখনো ওর মধ্যে আশাকে হারানোর আতঙ্ক এখনো রয়ে গেছো। শকুনেরা ওর সংসারের পিছে হাত ধুয়ে পড়ে গেছে রীতিমত। অনিরূপকে নিজের সংসার বাচানো লাগবে। ও নিজেই নিজের উপর মহা বিরক্ত! কাউকে নিজের জীবনে এতটা মূল্য দিবে না , দিবে না ভাবা অনিরুপ আজ বউ এর প্রেমে রীতিমত পাগল পাগল বোধ করে। ও ভাবেনি, কোন মেয়ে, কেউ ওকে এতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কখনো। কিন্তু পেরেছে, আশা পেরেছে, ওর স্ত্রী!

অনিরূপ আবারো নিজের বুকের মধ্যে পরে থাকা আশাকে দেখে, ওর ঠোঁটে ক্রূর হাসি ফুটে উঠলো! ও ভেবে নিয়েছে-ওর নিজের সংসার বাঁচাতে যদি নিজেকে সর্বনিম্ন স্তরে নামাতে হয়, দ্বিধা করবে না। অনিরুপ জানে, ওর অবনতি কতটা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ও নিরুপায়!

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৬

এই প্রেমে পরা ওর অনিচ্ছাকৃত! ও চায়নি, তবুও বেহায়া মন প্রেমে পরে গেছে। এখন বেহায়া মনকে ধরে বেঁধে না রেখে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে।
অনিরূপ আবারও বউয়ের মুখের দিকে তাকালো। আশার কপালে দীর্ঘ চুমু খেয়ে বড্ড আদুরে ভঙ্গিতে ওকে বুকে আগলে ধরো! আহ্, শান্তি লাগছে ভীষণ!

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৮