দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ৩০

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ৩০
অবন্তিকা তৃপ্তি

প্রেগন্যাসি কীটে দুটো লাল দাগ দেখা যাচ্ছে। আশা এবার উত্তেজিত ভঙ্গিতে বারবার কিট ঝাঁকিয়ে চেক করছে, আদৌ এটা সত্যি কিনা। অথচ বারবার রেজাল্ট পজিটিভ দেখাচ্ছে। আশা সেটা দেখে হেসে ফেলল বোকার মতো, তারপর আবার চেক করল কিটটা । লাল দাগ-টাই দেখাচ্ছে বারবার।
আশা হঠাৎ বেসিন চেপে ধরে খুশিতে কেঁদে ফেললো, ওর ভেতরটা ভীষণ ভরা-ভরা লাগছে। মনে হচ্ছে হঠাৎ, হঠাৎ করেই ও কি যেন পেয়ে গেছে। ওই ‘কি যেন’ আশা-অনিরূপের সন্তান, ওদের ভালোবাসার অংশ, দুজনের চোখের মণি! এ জীবনে আর কিছু বোধহয় এই নারীর জীবনে পাওয়ার নেই।

আশা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ও দুহাতে চোখ মুছল। খুশির খবরটা অনিরূপকে জানাতে হবে। জানলে কী করবে অনিরূপ? ইশ, পাগলমি করবে ভীষণ। এমনিতেই যা করে! এই খবর শুনলে তো হুশ-মন হারিয়ে ফেলবে।
আশা ছোট্ট করে শ্বাস ফেললো। নতুন কেউ অবশেষে আসছে। ওপেরেছে, অনিরূপের এতদিনের শেষ অব্দি পূরণ করতে পেরেছে ও। আনন্দে-গর্বে নিজেই কেমন পাগল-পাগল বোধ করে। জানেনা, অনিরূপের পাগলামি কোন মাত্রাটা ছাড়িয়ে যাবে?আশাকে বড্ড আগ্রহী দেখাচ্ছে এই মুহূর্তে।সে জানতে ছয়, নিজের চোখে দেখতে চায় অনিরূপের পাগলামি-গুলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আশা গেস্ট রুমের বাথরুম থেকে বের হয়ে নিজেদের রুমে এলো। কীটটা হাতে নিয়ে সাবধানে বিছানায় গিয়ে বসলো। অনিরূপ বাথরুমে, বোধহয় ফ্রেশ হচ্ছে। পেটে আলতো করে হাত ছুয়ে ধৈর্য্যহীনার ন্যায় বসে রইলো ও। দু-চোখে ওর উপচে পড়া আনন্দ টলমল করছে।

আশা বসে আছে। হঠাৎ অনিরুপের ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠল। কিট টেবিলের উপর রেখে মোবাইলটা ধরলো আশা। মোবাইলের লক ও জানে। অনিরূপের পারমিশন আছে মোবাইল ধরার। আশা লোক খুলে দেখলো, কল এসেছে দুটো। এখন আবারো দুটো মেসেজ। কারো দরকার আছে মনেহয়। ডাক্তারদের প্রতিটা কল, মেসেজই তো গুরুত্বপূর্ণ। সেটা ভেবে মোবাইলের লক খুলে মেসেজ অপশনে ঢুকলো।
‘omit’ নামে সেইভ করা নম্বর থেকে গত দুদিনের ওনেক মেসেজ পড়ে আছে ইনবক্সে। আশা মেসেজে ঢুকবে না ভাবল। এটা কারো প্রাইভেসি নষ্ট করবে। ফোনটা রেখে দিবে আসা, সে সময় আরেকটা মেসেজ এলো। স্ক্রিনের ডিসপ্লেতে উঠে এলো মেসেজটা,

আশার অবহেলায় না চাইতেও এমনিতেই চোখ গেল ডিসপ্লেতে, মেসেজটা ছিলো-‘
‘Ami vebe obak hocchi onirup, tor BOU tor etodiner ovinoy ektuo keno dhorte parlo na. Tor BOU ki etotai bolod?’

চমকে উঠল আশা। একবার বাথরুমের বদ্ধ দরজার দিকে চেয়ে আবারো ফোনের মেসেজটার দিকে তাকাল। এসব কী? কী এসব? ভ্রু কুঁচকে ফেলেছে আশা। আশা বলদ? কি বুঝেনি ও? কীসের অভিনয়ের কথা বলছে এই লোক? ওর বুক লাফাচ্ছে। আর মেসেজ পড়তে ইচ্ছে করছে না। তবুও অবচেতন মনে হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেন রাজ্যের কৌতূহল জাগলো । আশা নিজের ইচ্ছায় অন্যের প্রাইভেসি নষ্ট করে মেসেজ অপশন খুলে বসলো।সর্বশেষ দশটা মেসেজ এসেছে, আধা ঘণ্টার মধ্যেই। নম্বর সেইভ না, বোঝা যাচ্ছে নতুন নম্বর। তবে অনিরুপের ফিরতি রিপ্লে দেখে বোঝা যাচ্ছে, লোকটা অনিরূপের পরিচিত।
আশা শ্বাস আটকে বাকি মেসেজগুলো পড়ল। লেখা—

‘Tui je kotoboro khelowar tor BOU seta janbe onirup, ami janabo…’
অনিরূপ রিপ্লে করেছে-’amar bou niye eto kisher matha betha tor? she is my sector, oke niye vabbar jonne or husband ache. tor kutshit matha etate dhukabi na, sabdhan korlam omit..’
অনিরুপের ফিরতি কথা, অমিতের খেলোয়াড় বলা। সবকিছু আশার মাথার দুহাত উপর দিয়ে গেল। এই অমিত কে? আশার স্বামীকে খেলোয়াড় বলছে কেন? অনিরূপ কী খেলেছে? কী করেছে অনিরূপ? আশা বাকি মেসেজ পরলো। লাস্ট মেসেজ ছিলো বাংলায়, লেখা-

‘TIME IS OVER..অভিনয়ে তুই দক্ষ এটা মানতেই হবে অনিরূপ। তাই তো তোর বউ তোর ভালোবাসার অভিনয় ধরতে পারেনি। কিন্তু ও পারলেও আমি ধরতে পেরে গেছি। তুই ব্যাটা কাউকেই ভালোবাসতে পারিস না। আল্লাহ তোকে এই সিস্টেম দেইনি। সেদিন কী বলেছিলি আমাকে, আমার বউরে আমি জিতে নিব। হোক সেটা অভিনয় দিয়েই।

যা ভাবলাম, জিতসস তুই। বাট তোর এই জয় বেশিদিনের না। আমি তোর বউর সামনে তোর মুখোশ টেনে খুলে দিব কু/ত্তার বাচ্চা। তোর জন্যে অমি একটা মাস হাসপাতালের বেডে মরার মতো পড়েছিলাম। আমি এতো কষ্টে ছিলাম, আর তুই আরামে বৌর সঙ্গে সংসার করবি? নেভার! Again never, never!’
মেসেজটা দেওয়ার পর একটা ভিডিও সেন্ড করা হয়েছে। সেখানে অনিরূপ নেশার ঘোরে কাউকে বলছে, সে আশার সঙ্গে কতটা নিখুঁত অভিনয় করে আশাকে বাপের বাড়ি থেকে ফিরিয়ে এনেছে। আশা কতটা বোকা, একটুও বুঝে না কিছু। অনিরূপ জিতে যাবে একদিন। আশার ভালোবাসা জয় করা ওর বা হাতের কাজ।যে বৌটা ভালোবাসার কাঙাল, তাকে ভালোবাসা দিয়েই জয় করবে অনিরূপ।

ভিডিওটা শেষ অব্দি দেখে আশার হাত-দুটো আচমকা কেপে উঠলো, থরথর করা কাপুনিতে হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো। টেবিলে ধাক্কা খেয়ে সঙ্গে একই সঙ্গে কীটটা পরে গেলো মেঝেতে। ফোনটা এখনও অক্ষত, ফোনের মধ্যে ঝলঝল করছে আশার স্বামীর কারনামাগুলো।
আশা বড়-বড় করে শ্বাস টেনে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল। কান্না আসছে, বুকটা জ্বলে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে আশা, ভেতর থেকে একদম চুরমার হয়ে গেছে। আশা হুট করে একদম, একদম নিঃস্ব হয়ে গেল। চারপাশে, এই দুনিয়ায় আশা নিজের পাশে, নিজের সঙ্গে কাউকে দেখতে পেল না। যা পেল, সেটুকু ধোকায় গলে গেল।

আশা দুহাতে মাথার চুল খামচে ধরে বড়বড় শ্বাস টানছে শুধু। ও কান্না করবে না, করবে না। কান্না করবে? কার জন্যে? কেউ নেই ওর, কেউ না। যারা আছে, সবাই স্বার্থপর। আশা হঠাৎ নিজের পেটে আলতো করে হাত রাখলো, অস্ফুট স্বরে বিড়বিড় করে বসল—‘ত-তুমি কী আমাদের ভালোবাসার অংশ?নাকি তুমি আমাদের স্বার্থের, আমাদের ধোকার অংশ, ব-বাবা?

আশা জবাব পেলো না। ও আবার মাথার চুল খামছে ধরে বসে থাকল। কান্না দমিয়ে রাখার ফলে এখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তার উপর শরীর দুর্বল। আশার শরীর নিজের উপর এত অত্যাচার সহ‍্য করতে পারছে না আর।
অনিরুপ বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো একটু পর। আশাকে এই অবস্থায় দেখে দৌড়ে এগিয়ে এলো ও। আশা পাগলের মতো শুধু শ্বাস নিচ্ছে, ও যেন নিজের মধ্যেই নেই। অনিরূপ আশাকে এই অবস্থায় দেখে ভয় ওয়ে গেল একদম। সঙ্গেসঙ্গে আশার পালস চেক করল, পালস অনেক স্লো। অনিরূপ আশাকে দ্রুত নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরে ব্যস্ত গলায় বললো-‘আশা? আশা? কী হয়েছে তোমার? শ্বাসকষ্ট হচ্ছে?ইনহেলার দিব?‘

আশা অনিরূপকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। ও হঠাৎ করেই নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি যেন হারিয়ে বসলো। অনুরূপ আশাকে নিজের সঙ্গে শক্ত করে ধরে রেখেছে. আশা সেই শক্ত বাঁধন থেকে এক ফোটাও সরতে পারছে না। আশা হার মানলো না। দুহাতে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো অনিরুপকে। অনিরূপ ছিটকে পরলো পেছনে। ও ফ্যালফ্যাল চোখে আশার দিকে তাকালো । আশা দূরে বসে ঘেন্নার দৃষ্টিতে তাকালো অনিরূপের দিকে। অনিরূপের মনে হলো, এই আশাকে সে চিনে না। এই আশা অদ্ভুত, ওর চোখের চাওনি অনিরূপ চিনে না।

‘আশা? আর ই‍্যয়ু ওকে?’
অনিরূপ কথাটা বলতে বলতে এগিয়ে এসে আশাকে ছুঁতে চায়।আসা ছিটকে সরে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠে—‘খবরদার আপনার ওই নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না।’
অনিরূপ হতবম্ব হয়ে তাকায় আশার দিকে। ওর মাথায় যেন বাজ পড়লো। একটু আগেও এই মেয়ে অনিরুপের একেকটা কথায় লাজে রাঙা হয়েছিলো, যে নারী অনিরূপের একটুখানি স্পর্শের জন্যে মরিয়া, এই একই নারী এখন এমন করছে কেন?

আশার এই লোকের স্পর্শ, এই লোকের সন্তান এখন সবটাই অসহ্য লাগছে, মনে হচ্ছে অনিরূপ আশার সঙ্গে বেইমানি করেছে। আশার সঙ্গে লোকটা কী নিখুঁত অভিনয় করে গেলো। ছিঃ! ঘেন্নায় আশা কেন মরে যাচ্ছে না।
আশার ওমন চাহনি কিছুই বুঝল না অনিরপ। আশা জোরে জোরে শ্বাস টেনে কিছুটা শান্ত হলো । অনিরূপের দিকে ঘেন্নার চাওনি নিক্ষেপ করে আশা বহু কষ্টে কটা লাইন উচ্চারণ করলো-‘আ-আপনার ভালোবাসা, ভ-ভালোবেসে আমায় স্পর্শ সবটাই, সবটাই অভ-অভিনয় ছিল অনিরুপ? কোথাও, কোথাও এক ফোঁটা সত্যি ছিলোই না? যা ছিল, যেটুকু ছিলো সবটাই মিথ‍্যা? আপনি জানেন, আম-আমি এগুলো কিভাবে সহ্য করছি?’

অনিরূপ থমকে গেল। আশার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে হঠাৎ পাগলের মতো নিজের ফোন খুঁজতে লাগলো। ফোন পেলো মেঝেতে পড়া অবস্থায়। ফোনের স্ক্রিনে ঝলঝল করছে অমিতের নম্বর, মেসেজেস।
অনিরূপ ফোনের দিকে চেয়েই চোখ খিঁচে বুজে ফেলল। কী হয়ে গেলো এসব? ওর সাজানো গোছানো সংসারটা…
আশার দু চোখে অবিশ্বাস। ক্লান্ত চোখজোরা অসহায়ের মতো অনিরূপের দিকে চেয়ে আছে। অনিরূপ ফোনের দিকে চেয়ে, বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল-‘শিট…শিট!’
আশা আহত,আক্রান্ত মন দিয়ে তাকিয়ে রইলো অনিরূপের দিকে।

অনিরূপ ফোনটা মেঝে থেকে তুলে বিছানায় রাখল।বহু ধৈর্য‍্য নিজের মধ্যে ধারণ করে, শান্ত ভঙ্গিতে আশার হাত চেপে নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে বলতে লাগলো -‘আই ক্যান এক্সপ্লেইন আশা। প্লিজ লেট মি এক্সপ্লেইন। আমি সব বুঝিয়ে বলছি তোমাকে। প্লিজ শান্ত হও, লক্ষ্মীটি।’

আশা রেগে উঠলো। ঝাড়ি দিয়ে অনিরুপের হাতটা নিজের বাহু থেকে সরিয়ে দিল। তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে বলে বসলো —‘আমাকে রাতারাতি বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনার মানে এতদিন আমি না বুঝলেও এখন ভালো বুঝতে পারছি। কি পাক্কা অভিনয় করেন আপনি। অথচ আমি কিনা একটুও সেও অভিনয় বুঝতে পারলাম না। সত্যই বলেছেন আপনি, খুব খুব বেশিই বোকা আমি। আমার স্বামী দিনের পর দিন আমার সঙ্গে নাটক করেছে, আর আমি পাগল কিনা সেটা ভালোবাসা ভেবে বসেছিলাম?’

বলতে বলতে আশা এবার কেঁদেই ফেলল। মনের বি/ষে চোখ গড়িয়ে অশ্রু নামলো। দুহাতে অনিরুপের বুকে বারবার ধাক্কা দিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো-‘আপনি আমার সাথে বেই/মানি করলেন। অথচ আমার ভালোবাসার কোথাও কোনো অভিনয় ছিল না, ডাক্তার! কোথাও আমি এক ফোঁটা মিথ্যা ভালোবাসিনি। আমি খাঁটি ভালোবাসা দিয়েছিলাম আপনাকে, বদলে আমি কি পেলাম? বলুন কি পেলাম? অভিনয়, ছলনা?’
অনিরূপ আশাকে আটকাচ্ছে না। আশার রাগ জায়েজ, অনিরূপ মানে। আশা এবার হাপিয়ে উঠে অনিরুপের ঘাড়ে মাথা ঠেকিয়ে ফুপিয়ে উঠলো। আজকাল অল্পতেই বড্ড ক্লান্ত লাগে ওর। হয়তো নতুন যে আসছে তার জন্যেই এত অশান্তি আশার শরীরে ।

অনিরূপ পাথরের মতো বসে আছে নিজের জায়গায়। হাত বাড়িয়ে আশা কে একটুও ছুলো না, ধরলো না, চুলে হাত বুলালো না। শুধু কঠোর অবস্থায় দেখে গেল সবটা, একসময় খুবই ক্লান্ত ভঙ্গিতে অনিরূপ বলে উঠলো-‘আমার ভালোবাসা কখনো মিথ্যা ছিলো না, আশা। তুমি আবারও আমায় ভুল বুঝছো।’

কথা ফোরানোর আগেই আশা ফুপিয়ে উঠলো-‘বেইমান আপনি, আবারও আমার সাথে ছলনা করছেন।’
অনিরূপ আলতো করে আশার চুলে হাত রাখলো, ধরা গলায় বললো-‘সবটা মিথ্যা ছিলো না আশা। সবটাই না। আমি শুরুতে তোমায় অভিনয় করে পেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শেষে আমি হার মেনেছি। নিজের কাছে, তোমার কাছে, নিজের আত্মগরিমার কাছে, মেইল ইগোর কাছে।আমায় বিশ্বাস করো, আশা।’
আশা মাথা তুলে তাকালো, ওর চোখ দুটো ভেজা, ফুলে আছে। ও অনিরুপের অসহায় মুখটা দেখল, পরপর পরপর ঘেন্নায় মুখ ঝামটি দিয়ে সরে গেল ঝট করে-‘অভিনয়টা এবার বন্ধ করুন, আমি তো জানি এখন সব। তাহলে এখনো কেন?আমার কাছে থেকে আর কি ফায়দা তোলার বাকি আপনার?’

‘ফায়দা? আমি তোমার ফায়দা তুলেছি আশা?’- অনিরুপ ভীষণ আহত ভঙ্গিতে বলে উঠল।
আশা জবাব দিল না। বিছানা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে আশেপাশে খুঁজে আলমারি থেকে ম্যাট্রেস বের করলো। অনিরূপ শান্ত চোখে সবটাই দেখলো। আশা ম্যাট্রেস হাতে নিয়ে চোখের জল মুছে বলল-‘আমি এই রুমে থাকব না। অন্য রুমে যাচ্ছি। খবরদার আমার পিছু নিবেন না। আপনার সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমালে আমার ঘা আবার তাজা হবে। বাকি আমার যা সিদ্ধান্ত আমি সকালে জানাব।’
‘দাঁড়াও আশা, প্লিজ। দয়া করে শোনো আমার কথাটা একবার।’
আশা চলে যেতে নিলে, অনিরূপ উঠে দাড়িয়ে আটকাতে চায়। অনিরূপ আশার হাত ছুতেই আশা রক্তলাল চোখে ফিরে তাকালো। অনিরূপ আশার তাকানো দেখে হাতটা ছেড়ে দিল সাথেসাথেই। আসা ম্যাট্রেস নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

অনিরূপ কিছুক্ষণ সেভাবেই দাড়িয়ে রইলো। ওকে বড্ড বেচারা, অসহায় দেখাচ্ছে। অতঃপর ধীরেধীরে ওর অসহায় মুখটা মারাত্মক রাগান্বিত মুখে পরিণত হলো।এই মুহূর্তে তার আশপাশের সবকিছু গুড়িয়ে ফেলতে মন চাচ্ছে। অনিরূপ কিছুক্ষণ ফোসফোঁস করে শ্বাস ফেলে ,আচমকা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালর ঘুষি মেরে বসলো।

সঙ্গেসঙ্গে হাতটা টকটকে লাল হয়ে গেলো ওর। অমিতের উপর ভয়ংকর রাগে ওর সারা গা কাঁপছে। শা/লা, শুয়ো/রের বাচ্চা। বারবার, বারবার বলেছে, বারবার সাবধান করেছে অনিরূপ। তারপরও ওর সংসারে শ/কুনটা নজর দিল, তছনছ করে দিল অনিরুপের সাজানো ভালোবাসার, সাধের সংসাটা। অনিরূপ সেবার বাঁচিয়ে রেখেছিল না? এবার কি করবে? অনিরূপ নিজ হাতে এরে টুক/রো-টুক/রো করবে।

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৯

রাগে-জেদে রীতিমত অন্ধ হয়ে উঠলো অনিরুপ। ঝটপট ফোনটা হাতে নিয়ে পুরনো সব মেসেজ ডিলিট করে দিল। অতঃপর সেখানে দাঁড়িয়েই কল লাগালো কাউকে।

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ৩১