দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৭৬

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৭৬
তাসফিয়া হাসান তুরফা

আকাশে মেঘ ডাকছে বিকট আওয়াজে। এখনো বৃষ্টির ফোটা ধরনীর বুকে নামেনি, তবে যেকোনো মুহুর্তে নামবে নামবে ভাব! আয়মান সাহেব চোখের পানি একহাতে মুছলেন। আকাশের দিকে চেয়ে বললেন,
—আকাশের অবস্থা ভালো না, দোলনচাঁপা। তুমি বাসায় চলে যাও এক্ষুনি!
—আর আপনি?
—আমিও যাবো। আমার এখান থেকে তো বাসা কাছেই। তুমি রিকশা নিয়ে নাও।
—তবে বাবা,
—একবার বলেছিনা, দোলা? যাও

আয়মান সাহেব খানিকটা ধমকের সুরেই বললেন।অথচ দোলা এ প্রথম আয়মান সাহেবের কথায় নিজের জন্য একটু হলেও চিন্তা খুজে পেলো। এটাও খেয়াল করলো সবসময় ওকে “দোলনচাঁপা” সম্বোধন করা আয়মান সাহেব এবার ওকে দোলা বলছেন। যেন বৃবৃষ্টি দেখে এক বাবা তার মেয়েকে শাসনের সুরে রিকশা নিয়ে যেতে বলছেন! তাই দোলা মনে মনে যেমন খুশি হলো তেমনি মুখেও রাজি হলো। ঘাড় কাত করে সায় দিলো শ্বশুরের কথায়। দোলা যতক্ষণ চলে গেলো আয়মান সাহেব ওদিকে চেয়ে থাকলেন। ও রিকশায় উঠার পর চোখ ফিরিয়ে নিলেন। আবারো তাকালেন সেই আকাশের পানে। এবার টুপটুপ করে বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করেছে। খোলা আকাশের নিচে বসে থাকায় কিছুক্ষণের মাঝেই গা ভিজে গেলো আয়মান সাহেবের। অন্য কোনোদিন হলে তার মতো খুতখুতে স্বভাবের লোক এতক্ষণে নাকমুখ কুচকে কোনকিছুর নিচে আশ্রয় নিতেন বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য অথচ আজ তিনি স্বেচ্ছায় ভিজছেন। মনের কষ্টগুলোকে বৃষ্টির সাথে ধুয়েমুছে দেওয়ার ব্যর্থ প্র‍য়াস চালাচ্ছেন। তবে আয়মান সাহেব বেশিক্ষণ ভিজলেন না। চোয়াল শক্ত করে হাতের মুঠো বদ্ধ করে বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়েই কি কি যেন ভাবলেন। বিশ মিনিট পর বৃষ্টির বেগ দৃশ্যমান রুপে কমে এলো। আয়মান সাহেবও পার্ক থেকে বের হয়ে হাটা দিলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দোলা বাসায় ঢুকে কলিংবেল দিবে এর মাঝেই নিশীথকে দরজা খুলে বের হতে দেখলো। ও নিশীথকে দেখে অবাক হলেও নিশীথ তেমন কোনো রিয়েকশন দিলোনা। বরং উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া দোলাকে দেখে মুখ শক্ত করে ওকে টেনে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। এরপর গটগট করে হেটে রুমে চলে গেলো। দোলা এভাবেই বৃষ্টিতে ভিজে নাজেহাল। তার উপর নিশীথের এমন রুপ দেখে ও একটু ভয়ই পেলো বটে। দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকতেই নিশীথ ওর হাতে শুকনো কাপড় ও তোয়ালে ধরিয়ে দিলো৷ দোলা আর দেরি না করে চুপচাপ ওগুলো নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো। শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো নিশীথ এখনো রাগী চোখে ওর দিকেই চেয়ে আছে। দোলা ভীত গলায় শুধালো,

—কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন?
—কেমন করছি?
নিশীথ ভ্রু তুলে প্রশ্ন করলো।
— এইযে কেমন যেন করছেন আমি বাসায় আসার পর থেকে। আমি বুঝলাম না কি হয়েছে!
—বুঝার কান্ডজ্ঞান থাকলে তো ঠিকি বুঝতে!
—মানে?
দোলা আকাশ থেকে পড়লো। নিশীথ চেচিয়ে বললো,
—ফোন চেক করো তো নিজের
—আমার ফোন তো বন্ধ
দোলা সরল মুখে বলে। নিশীথ তীর্যক চোখে তাকিয়ে আছে দেখে ও কিছু একটা বুঝলো। হঠাৎ শুধালো,
—অনেকবার ফোন দিয়েছিলেন কি? কিছু লাগতো?
—হুম

নিশীথ গম্ভীর মুখে বললো। দোলা মাথা নিচু করে বললো,
—সরি। মা-র বাসা থেকে বের হওয়ার পরে খেয়াল করেছি চার্জ নেই নয়তো মিনির চার্জার থেকে চার্জ দিয়ে বেরোতাম। তবে কি লাগতো আপনার? বলুন দেখি এখনো আনা যায় নাকি
দোলা আগ্রহ নিয়ে শুধালো। নিশীথ এবার কটমট করে বললো,
—আমার বউকে লাগতো। আমি অনেকক্ষণ আগে ফোন দিয়ে তোমার ফোন বন্ধ পেয়েছি। পরে কামিনিকে ফোন দিলে ও বলে আপু অনেকক্ষণ আগে বের হয়ে গেছে।

দোলা মনে মনে জিব কাটে। এই কামিনিটাও যে কেন বলতে গেলো ও এত আগে বের হয়ে গেছে! এখন ও নিশীথকে কি বলবে? বাবাকে সবকিছু বলে দিয়েছে এটা কি জানাবে? দোলা ভাবলো কিছুক্ষণ। একবার ভাবলো জানিয়ে দিক, কাল তো এমনিতেও ওকে সব জানানোর কথা ছিলো। আবার পরক্ষণেই ভাবলো থাক না! একটা দিনেরই ব্যাপার মাত্র। নিশীথ যদি এখন ওর উপর রাগ করে? এর চেয়ে কাল তো সবাই জেনেই যাবে তাই এখন ওকে জানানোর মানে হয়না। দোলা ব্যাপারটা চেপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
দোলার ভাবনার মাঝে নিশীথ ওকে ধমক দিলো। দোলা চমকে উঠে কেপে গেলো। নিশীথ বললো,

—মনোযোগ কই তোমার? কতক্ষণ ধরে কথা বলছি শুনতে পাওনা?
দোলা স্তম্ভিত ফিরে পেয়ে বললো,
—আসলে অনেকদিন হাটা হয়না তাই রোদ নেই দেখে ভাবছিলাম হেটেই বাসায় যাই এজন্য আগে আগে বের হয়েছিলাম।
—আগে আগে বের হলেও এতক্ষণে তোমার বাসায় আসার কথা, দোলনচাঁপা। আমি রাস্তা চিনি। দাদু ফোন দিয়েছিলো মাকে ও বাসায় যাওয়ার জন্য। আমি মাকে দিয়ে তোমায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। এজন্য তোমায় ফোন দিয়ে বন্ধ পেয়ে কামিনিকে ফোন দেই। যখন আমি শুনি তুমি বের হয়ে গেছো তখন তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসি তুমি একা হবে ভেবে কিন্তু বাসায় পৌছানোর পরেও যখন তুমি আসছিলেনা তখনই আমি বের হতে নিচ্ছিলাম আর তুমি এলে। সুতরাং, আমার সাথে কোনো প্রকার চালাকি করতে এসোনা! আমার যাওয়া আসা মিলিয়ে যে সময় লাগলো তুমি তার চেয়েও বেশিক্ষণ বাইরে ছিলে!

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৭৫ (২)

নিশীথ সরু চোখে দোলার দিকে চেয়ে এক নিশ্বাসে বললো। এবার দোলার ভয় লাগলো। তবে কি নিশীথ কোনোভাবে কোনোকিছু জানতে পেরেছে? বাসায় ফেরার পথে নিশীথও পার্কে ঢুকেনি তো? নিশীথ কোনোভাবে দোলা ও আয়মান সাহেবকে একসাথে পার্কে দেখেনি তো? দোলার মাথায় অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। একেতো সারাদিন বাইরে থাকার ধকল, তার মধ্যে নিশীথের এমন সন্দেহজনক প্রশ্ন! এবার দোলার প্রচন্ড মাথা ঘুরায়!

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৭৬ (২)