ধূসর রংধনু পর্ব ২১
মাহিরা ইসলাম
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই হৃদয়ে লোকানো কিছু কথা থাকে।কৈশোর থেকে বৃদ্ধ এভাবেই তারা সেই কথা গুলো সংগোপনে বয়ে বেরোয়।মৃত্যুর আগ মুহুর্তে তাদের মনে হয় সেই যত্ন নিয়ে লোকানো মিশ্র অনুভুতির বাক্যগুলো তারা কেউ একজন ভরসা বান ব্যক্তির নিকট ব্যক্ত করে যাক।লুকানো সকল তথ্য তার নিকট সে গচ্ছিত রেখে যাক সংগোপনে।
নিস্তব্ধ আইসিইউ তে ঢুকে এক অদ্ভুত কান্ড দেখলো। এতটা অসুস্থ মানুষটা উঠে বসেছে।এতো আশ্চর্য হওয়ারই কথা। ওই যে কথায় আছে না, কিছু মানুষের মৃত্যুর আগ মুহুর্তে যেন প্রবল আত্মবিশ্বাস জনিত একটা অদ্ভুত শক্তি কাজ করে তাদের মাঝে।
ব্যাপারটা তেমনি।
মোস্তফা সাহেব হাতের ইশারায় নিস্তব্ধ কে কাছে ডাকলেন।
নিস্তব্ধ দ্রুত সবাইকে ডাকতে চাইলো তবে ভদ্রলোক তা মানতে চাইলেন না।সুধালেন,
-” তুমি আমার কাছে বসো বাবা আমার হাতে বেশি সময় নেই হয়তো।এসো।শেষ বার তোমার সঙ্গে একটু গল্প করি।”
নিস্তব্ধ এগিয়ে এসে মোস্তফা সাহেব কে শুইয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু তিনি আবারো তাতে বাঁধা দিলেন,
-” তোমায় আর কিছু করতে হবে না বাবা। একজন মৃত্যু পথযাত্রী তার গমন বার্তা ঠিক বুঝতে পারে। আছেই বা আর কত সময় হাতে।”
-” আপনি একদম এসব কথা বলবেন না আঙ্কেল। কাল সকালেই আপনার লন্ডনের ফ্লাইট। আপনি একদম সুস্থ হয়ে যাবেন।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
-” মিথ্যা আশা দিয়ে আর কি লাভ বলো।আমি তো বুঝি আমার শরীরের খবর।”
মোস্তফা হাসতে চেষ্টা করে কিন্তু পারেন না।
তিনি জোড় করে নিস্তব্ধ কে নিজের কাছে বসান।
নিস্তব্ধ’র হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেন।
ভদ্রলোক বলতে থাকেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” তাসফি আমার একমাত্র মেয়ে।মেটা ছোট সময় মা কে হারিয়েছে।আমি বাবা হয়ে তাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিতে চেষ্টা করেছি।তবে যত দিন যাচ্ছিলো আমার কাজ ওও বাড়ছিলো।পরের চাকরি বুঝই তো।মেয়েটাকে সময় দিতে পারতাম না।কৈশোরকাল থেকে বয়ঃসন্ধি মেয়েটার দু চাঁচির কাছে মানুষ হয়েই কেটে গেল।
আমার মেয়েটা বড্ড অভিমানী বুঝলে বাবা।কিন্তু সে অভিমান করে খুব সংগোপনে।খুব সু্ক্ষ্ম ভাবে না দেখলে তা বোঝা মুশকিল। তোমার উপর দিয়ে দেখলে মনে হবে এই তো কি সুন্দর আমার সাথে হাসছে, কথা বলছে,এখানে অভিমান কোথায়।
কিন্তু সেখানেই অভিমান।বললাম না সুক্ষ্ম অভিমান। কারো বোঝার সাধ্যি নেই যদি না সে নিজে বোঝায়।
কিছুভাগ্যবানদেরই সেই ভাগ্য হয় তার অভিমান ভাঙানোর।যেমন সে আমাকে ও সেই সুযোগ দিয়েছে।তবে ওও যাদের উপর থেকে অভিমান ভাঙতে চায় না তাদের কখনোই সুযোগ দেয় না।দিনের পর দিন তার সঙ্গে হাসি মুখে হেঁসে খেলে বেড়ায়।
এটাই ওর নতুনত্ব। মেয়েটা আমার বড় অদ্ভুত। কখনো দুঃখ পেলে কারো সামনে প্রকাশ করডে চাইবেনা। হাজারবার প্রতিবাদ করবে মেজাজ দেখাবে তবুও তার সামনে নরম হবে না। যদি দেখে সে নরম হয়ে যাচ্ছে দ্রুত সে নিজের শক্ত খোলসে আবৃত করতে নিজেকে তার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।
এই তার বিয়ের আগে আমার সঙ্গে একবার রাগ হলো তার। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে যেতেই দ্রুত সে উঠে নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল যেন আমি তার কাছে না যেতে পারি। একবার তো ওর বড় খালার বাড়ি ওও চলে গিয়েছিল।বুঝো মেয়ের অভিমান।হাহাহা।
মেয়েটার ডাক্তার হবার খুব শখ জানোতো। তার মায়ের শখ ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবে।তার মায়ের স্বপ্নকেই সে নিজের মাঝে ধারণ করে নিয়েছে।এখন সেই স্বপ্নই তার স্বপ্ন। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সে উঠে পড়ে লেগেছিলো।কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয় নি।সারাদিনরাত খেটেও মেয়েটা আমার সরকারি মেডিকেল এর একটা সিট পেল না।ওই যে ভাগ্য বলতেও তো একটা কথা আছে।
আমার এই অসুখটাও হঠাৎই ধরা দিলো। দ্বিতীয় স্টেজে তখন।মেয়েটাকে কিছু জানালাম না।চাইলেও আর কিছু করা সম্ভব ছিলনা। ভাবলাম মেয়েটাও আমার একা হয়ে যাবে। আমার মেয়েটার সামনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমি তো আর তা নষ্ট করে দিতে পারি না।আমার নাহয় শরীর পঁচে গিয়েছে কিন্তু খোদা যদি হায়াত দেয় আমার অভিমানী মেয়েটা তো অনেক দিন বাঁচতে পারে। আমার কিছু হলে মেয়েটার কি হবে। সে তো সম্পূর্ণ একা জয়ে যাবে
তাই চিন্তা করলাম মেয়েটার বিয়ে দেব। কিন্তু এত দ্রুত ভরসা যোগ্য পাত্র পাওয়াও তো মুখের কথা নয়।তখন দেবদূত হিসাবে এগিয়ে এলেন তোমার দাদা।
আমায় সাহস দিলেন।বললেন,
আমার নাতিটা একটু ঘাড়ত্যাড়া বটে।তবে মানুষ হিসাবে বড্ড ভালো।একবার তোর মেয়ের ভালোবাসার স্বাদ গ্রহন করলে পুনরায় আর পিছু ঘুরে চাইবে না। আমি কথা দিচ্ছি তোকে।আমি যেন উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় আশার আলো দেখতে পেলাম।
তবে তিনি আমার অসুখের কথা অবশ্য জানতেন না।
তখন আমি তাকে মেয়েটার স্বপ্নের কথা বললাম।মেয়েটা আমার ডাক্তার হতে চায়।
ওসমান সাহেব আমায় আশ্বাস দিলেন।ডাক্তারী তারা পড়াবে সরকারিতে চান্স পাইনি তো কি হয়েছে, তারা বেসরকারি তে পড়াবে। অসহায় আমি তখন নতুন করে আশা খুজে পেলাম।
কিন্তু সমস্যা হলো আমায় ছেড়ে মেয়েটা এখন কিছুতেই বিয়ে করবে না।অভিমান করে বসলো।
কিন্তু আমি তো আমার সমস্যা মেয়েকে বলে তার কষ্ট বাড়াতে চাই না। প্রথমে মা তার পর বাবা।আমার মেয়েটা তো সইতে পারবেনা এত ধকল।কিন্তু তার হাতটা যদি শক্ত করে কেউ ধরে রাখে তবে কেউ তাকে ভাঙতে পারবে না। আমায় হারানোর ধকল ওও ঠিক সামলে উঠতে পারবে।
কথা যেহেতু আমার সাথে বলছেনা তাই পুনরায় তার উদ্দেশ্যে চিঠি লিখতে শুরু করলাম। আমাদের এই একটা অভ্যাস আমার উপর অভিমান হলে আমাদের তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যম হচ্ছে চিঠি।আর ডাকটা তুমি থেকে আপনি তে গিয়ে ঠেকে।বুঝলে নিস্তব্ধ। ”
বলতে বলতেই মোস্তফা সাহেব আবার হাসলেন।
নিস্তব্ধ ব্যস্ত হয়ে পড়লো,তাকে শুইয়ে দিতে।
কিন্তু ভদ্রলোক তাকে আবারো থামিয়ে বলতে লাগলেন।
নিস্তব্ধ বাঁধা দিয়ে বলতে চাইলো “কিন্তু আপনি তো অসুস্থ, পরে শুনবো।”
-” পরে আর সময় পাবো না।তুমি শোনো বাবা।
তারপর আমি মেয়েকে চিঠি লিখলাম এরকম হাজারো চিঠি আমাদের বাবা মেয়ের মাঝে আদান প্রদান হয়েছে। এই যে যেমন ধরো তাসফির আজ কলেজের ফ্রি লাগবে।সে আমায় চিঠি লিখে সম্মোধন বিহিন,
আমার আজ কলেজ ফ্রি লাগবে দয়া করে আপনার মূল্যবান টাকাগুলো আমায় পেশ করবেন কি।
হাহাহা। বুঝলে কেমন।
এরপর আমি বিয়ে নিয়ে মেয়েটাকে চিঠি লিখলাম। অবশ্য আমার চিঠি লিখে সুবিধাই হতো।মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি তাকে আবার কিছু জোড় করতে পারি না বুঝলে।
লিখলাম,
আমার স্বপ্নচারী রাজকন্যা,
মামনি, আপনি কি ডাক্তার হতে চান না।বিয়ের পর তারা বলেছেন আপনাকে তারা ডাক্তারী পড়াবে বেসরকারীত, কোনো চিন্তা নেই।দেখুন আমার তো আপনাকে এতটাকা দিয়ে বেসরকারি তে পড়ানোর সাধ্যি নেই।এখন কি করবেন আপনিই বলুন।আপনার আজ্ঞা শীরধার্য।
ইতি
আপনার অসহায় বাবা
একঘন্টা পরে মেয়ে আবার বেরিয়ে এলো।আমায় এসে জরিয়ে ধরলো।
বলল সে রাজী।তার স্বপ্ন পূরণে সে যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে রাজী।
ব্যস তোমাদের বিয়েটা হয়ে গেল।
আমি বুঝে ছিলাম হঠাৎ করে বিয়ে হওয়ায় তুমিও একটু নারাজ ছিলে।ভেবেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে। হয়েছে কিনা জানিনা।যদি নাহয়, তুমি বুদ্ধিমান ছেলে আশা করবো আমি থাকলেও তুমি তা অবশ্যই ঠিক করে নেবে।
কিন্তু আজ তুমি আমায় কথা দাও বাবা আমার মেয়েটাকে তুমি আগলে রাখবে।কথা দাও বাবা।আমার মেয়েটার কিছু হতে দেবে না তুমি।
নিস্তব্ধ কিছু বলল না।মাথা নিচু করে রাখলো।
মোস্তফা সাহেব বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে আবারো বললেন,
-” তুমি কি মেয়েটাকে একটু ডাকবে বাবা শেষ বার একটু কথা বলতাম।”
নিস্তব্ধ অস্থির হয়ে পড়লো।
নার্স নার্স বলে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে গেল।
একজন নার্স তাসফির কেবিন দেখিয়ে দিল।
তাসফি জাগ্রত অবস্থাই চোখ বন্ধ করে ছিল। তার শিওরেই অনিমা বেগম মেজ চাঁচি আর আয়েশা ছিল।
নিস্তব্ধ ঝড়ের বেগে সেই কেবিনে ঢুকলো।
কোনো কথা ব্যতীত তাসফি কে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলো। শত কথা ব্যাখ্যা করার মত না আছে তার কাছে সময়, না আছে তর্ক করার ধৈর্য্য। ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।অনিমা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন কি করছিস নিস্তব্ধ মেয়েটা অসুস্থ।
নিস্তব্ধ তা শোনার অবস্থায় নেই।
আইসিইউ বাইরে বাকি বন্ধুমহল ও ছিল। কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।
ভেতরে এনে নিস্তব্ধ তাসফিকে কোল থেকে নামালো দীর্ঘ ক্ষণ পর বাবাকে দেখে সে আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়লো।
তাসফি বাবাকে জাগ্রত দেখে আরো উৎফুল্ল হলো।দৌঁড়ে জরিয়ে ধরে ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো।
মোস্তফা সাহেব শেষ বারের মতো মেয়ের মাথায় হাত বুলালেন।
নিস্তব্ধ অপর হাত আর তাসফির হাত নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে থেমে থেমে বলতে চেষ্টা করলো।
কথা দাও আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবে….
ভদ্রলোক বাকিটা বলতে পারলেন না।ভদ্রলোক ওখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।ভদ্রলোকের মুখে হাসি। যেন সে সঠিক কাজটা ইহকালে করে যেতে পেরেছেন।
তাসফি বাবা….বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
তার চিৎকারে বাইরে সবাই কিছুটা আন্দাজ করলেন।দ্রুত ভিতরে আসতে লাগলো।সকলের বুক চিরে বেরিয়ে এলো শুধুই দীর্ঘশ্বাস।এছাড়া আর তো কিছু করার ও নেই।সময়কে তো কখনো থমকে দেওয়া যায় না।এটাই নিয়তি, ভাগ্য আমাদের।
নিস্তব্ধ চোখ বুজে নিলো।মোস্তফা সাহেবের চোখ দুটি অপর হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তাকে আর লন্ডনে নেওয়ার প্রয়োজন পরলো না। কারো ঘাড়ের বোঝা যেন তিনি আর একটু কমিয়ে দিলেন।
তার একহাত মোস্তফা সাহেব কে ছোঁয়া অপর হাত তাসফির হাত আকড়ে ধরা। নিস্তব্ধ চোখ বন্ধ করেই তাসফির হাত চেপে ধরে মনে মনে বলল,
-” আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি না বাবা।তবে আমি আপনাকে ছুঁয়ে কথা দিলাম বাবা।আপনার মেয়ের এই হাতখানা আমি আজন্ম কাল শক্ত করে ধরে রাখবো।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাকে আমি আগলে রাখবো।এই নিস্তব্ধ ইয়াসার আপনাকে কথা দিল।নিস্তব্ধ তার বউয়ের দ্বায়িত্ব ঠিক পালন করবে।
আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তাকে ভালো রাখাবার চেষ্টা করবো।কি করে খারাপ থাকতে দেব বলুন তো। তার চোখের অশ্রু দেখে আমার সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গ কেঁপে ওঠে।শরীর কেমন ঝিম ঝিম করে।
ভালোবাসা ব্যতীত সমস্ত রোগ তার জন্য আমার হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে।আর সেই বাঁসা যেন ঝড়, বৃষ্টির ফলে ভেঙে,পঁচে না যায় তার খেয়াল নিস্তব্ধ ইয়াসার নিজে রাখবে।কথা দিলাম।”
মোস্তফা সাহেব কে বাড়িতে আনা হয়েছে।সন্ধ্যে ছয়টার মাঝেই তার দাফন শেষ করা হবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।কারণ আত্মীয় সজনদের আসতেও একটু সময় লাগবে।নিস্তব্ধ’র বাবা ভাই ও আসবে দূর থেকে।
তাসফির চাচাদের পক্ষে তো আর এভাবে হঠাৎ করে চলে আশা সম্ভব নয়।
তাসফি এতটা সময় ফুফিয়ে কেঁদে গিয়েছে।বাবা হারানোর যন্ত্রণা তাকে পুরো পুরি গ্রাস করে নিয়েছে।
এই ভয়টাই হয়তো পেতেন মোস্তফা সাহেব।
প্রথমে মা এখন বাবা আর কেই বা আছে তার।দাদি, চাচি, পিসি এরা তো পরের মেয়ে।
কমলা বেগম ছেলেকে খাটিয়ায় দেখে শক্ত হয়ে বসে আছেন।জানতেন তার এই ছেলেটা হয়তো আর বেশিদিন থাকবেনা।তবে এত দ্রুত তার নিঃশ্বাস ফুরোবে বুঝেনি বুড়ি।এমনি এক লগ্নে নিজ স্বামীকে শায়িত করে রেখে এসেছিলেন কবরে।আর আজ তার ছেলে।
সে বুড়ি হয়ে গেল অথচ খোদা কি তার হায়াত এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন যে স্বামী সন্তান সবাই তার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বরং তিনিই রয়ে যাচ্ছেন। নিয়তি কেন এই নিষ্ঠুর খেলা খেলছে।তাকে তো সবার প্রথমে নিতে পারতো।কিন্তু সবই যে মহান রব্বুল আলামিনের বিধান। তা তো খন্ডাবার নয়।
তাসফি এখন একজন এতিম মেয়ে তা ভাবলেই যেন তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
এতিম।হ্যাঁ সে এখন এতিম।এই ট্যাকটাই তার গায়ে জুড়ে গিয়েছে।
“কেন বাবা কেন আমাকে এভাবে পর করে গেলে।
এই কঠিন দুনিয়ায় সব কিছুর সঙ্গে এখন তোমার ছোট্ট তাসফি কি করে যুদ্ধ করবে বলো। ”
বাবার প্রতি তীব্র অভিমান গ্রাস করে নিলো তাকে।
মৃত মানুষের প্রতিই বা অভিমান করে কি লাভ।
এখন আর বাবার হাতের লেখা চিরকুট গুলো আর কখনো সে ক্ষনে ক্ষনে পাবে না। কেউ আর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে না। জিজ্ঞেস করবেনা মামনি তুমি কি ওবাড়িতে ভালো আছো? কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো।
কেউ যত্ন করে মুখে ভাত তুলে খাইয়ে দেবে না।ইশশ প্রিয়জন হারানোর এ কেমন যন্ত্রণা।
আল্লাহ কি পারতো না তার বাবাকে আর একটুখানি তার সঙ্গে পথ পারি দেওয়ার সঙ্গী করতে।
অনিমা বেগম, আয়েশা, চাচি, শ্বশুর কারো কথা তার এখন আর ভালো লাগছে না। কারো সান্ত্বনার বানী শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। যার হারায় সেই তো বুঝে তার বেদনা।অন্য কেউ তো তা উপলব্ধি করতে পারে না।
দাফন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাসফি শক্ত লোচনে উঠে দাঁড়ালো।নিজের ঘরের দাঁড় দিলো।
বাবার মুখখানি শেষ দেখাটাও আর দেখলোনা সে। দেখে কি হবে যন্ত্রণা যে বারবে বৈ কমবে না।বুকের ক্ষত আরো তাজা হবে।তার বাবার ছবি তার হৃদয়ে খুব সুন্দর করে আর্ট করা।তা যে সে কখনো ভুলবেনা।
নিস্তব্ধ পারছেনা ।পারছেনা সে তার কথা রাখতে।চাইলেও পারছেনা সে তাসফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে।তার হাতটা একটু শক্ত করে ধরে আশ্বাস দিতে।কেন পারছে না সে?
কোথাও যেন একটা তীব্র বাঁধা। ক্ষীণ অপরাধ বোধ।কি করবে সে।কে এই হৃদয়হীনতা থে্কে তাকে মুক্তি দেবে।তার হৃদয়ের এই অদৃশ্য চাওয়া পাওয়ার পথকে কেউ কি সুগোম করে দিতে পারবে?
কে আছে এমন।
ধূসর রংধনু পর্ব ২০
তখন মাঝ রাত নিস্তব্ধ দিশাহীন পথে হাঁটছে। কি করছে সে জানেনা।
তার মনের হতকারিতা, সমস্ত দ্বিধা দন্দ সে দূর করতে চায়। যে কোনো উপায়।কিন্তু কি করে? কি সে উপায়?
কি এমন আছে যা এক নিমিষে মানুষের মনের সকল দুঃখ, বেদনা,দ্বিধা- দন্দ দূর করে মন প্রফুল্লতা এনে দিতে সক্ষম