ধূসর রংধনু পর্ব ২৫
মাহিরা ইসলাম
বাসন্তী ডিভোর্সের কথা নিস্তব্ধকে বলবে বলে তাসফিকে আশ্বাস দিলেও দাদু আজও বলে উঠতে পারলো না।
দাদু হাঁসফাঁস করতে লাগলো।
দু’পাশ দিয়ে অনিমা বেগম, আয়েশা আর বাসন্তী চেঁপে ধরায় সে আরো চুপসে যাচ্ছে।
নিস্তব্ধ ভ্রু কুচকে শুধু ওদের একে অপরকে টানাটানি দেখছে।এদের ব্যাপার স্যাপার তার বোধগম্য হচ্ছে না।
অতঃপর সে ওখান থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
বাসন্তী আফসোস করে বলল,
-” যাহ চলে গেল কি দাদু একটা কথা তাই তুমি বলতে পারছো না। বুড়ো হয়েছো কি বাতাসে।”
দাদু দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-” তো তোরাই বলতি। আমায় কেন টানছিস।”
আয়শা আমতা আমতা করে বলল,
-” কেন, কেন আপা কেন বলবে,মা তোমাকে বলার দ্বায়িত্ব দিয়েছেন অতএব তুমিই বলবে।”
দাদু বললেন,
-” তো আমার যখন সুবিধা হবে তখন বলবো।দেখছিস না কেমন করে সবসময় ভ্রু দুখামা কুঁচকে থাকছে। এভাবে কখনো মনের কথা বলা যায় নাকি।
দাদু হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পরদিন নিস্তব্ধ কলেজে তার ক্লাস শেষে
আশা কে করিডরে একা পেয়ে গম্ভীর রাশভারী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-” এই তোমার নাম যেন কি।”
হঠাৎ নিস্তব্ধ’র প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল আশা। মনে মনে ভয়ও পেল নিস্তব্ধ স্যারের তার সঙ্গে কি কাজ। কোন ভুল করে বসে নি তো আবার।এই রে,
আশা আমতা আমতা করে বলল,
-” আশা স্যার আশা, আশা মনি।”
নিস্তব্ধ বোঝার ভঙ্গি করে বলল,
-” আশা রাইট তোমার বন্ধবীর নাম টা যেন কি তাসফি না আসফি.. ”
আশা কারেকশন করে দিয়ে বলল,
-” তাসফি স্যার তাসফি?”
নিস্তব্ধ মনে করার ভঙ্গিতে বলল,
-” ওও হ্যাঁ তাসফি,তাসফি রাইট।ওর কি হয়েছে কিছু জানো কদিন যাবত ওকে ক্লাসে দেখছিনা যে।”
আশা মেকি হাঁসার চেষ্টা করে বলল,
-” হ্যাঁ ওই স্যার তাসফির আমার বান্ধবী ওর বাসায় একটু সমস্যা হয়েছে তো। তাই আসতে পারছে না। কেন কোনো দরকার কি স্যার? আমায় বলুন আমি বলে দেব?”
নিস্তব্ধ কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলো।একজন ছাত্রীর সঙ্গে এভাবে কথা সে কখনো বলে নি।শুধু মাত্র তাসফির জন্য আজ বলতে হচ্ছে। মেয়েটাকে হাজারটা কল দেওয়ার পরেও একটা কল রিসিভ করে নি।
উল্টো এখন ওপাশের একজন মহিলার কন্ঠের বাক্যগুলো শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তার নাম্বার এখন ব্লক লিষ্টে। কি এমন হলো হঠাৎ করে।নিস্তব্ধ রাশভারী কন্ঠে বলল,
-” না আসলে বলতে পারো ও নোট গুলো ভালো বানাতো,লেখার স্টাইল ও যথেষ্ট ।তাই একটু আর…।কদিন ক্লাসে দেখতে পেলাম না, তাই তোমায় জিজ্ঞেস করা।
হোয়াট এভার।মনোযোগ দিয়ে স্টাডি করো।এভবে কলেজ বন্ধ দেওয়া মোটেও সমীচীন নয়।”
বলেই নিস্তব্ধ সরে পড়লো।
হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
আশা আফসোস করে বলল,
-“হায়। নিস্তব্ধ স্যার নিজে থেকে যেচে পরে তাসফির খোঁজ নিচ্ছে। ডাল মে কুচ কালা হে ইয়ার।বান্ধবী তু তো মাত গ্যায়া।”
আশা মুচকি হাসতে হাসতে ক্লাসে ঢুকলো।
-” এই যে শুনো? ”
মান্সার হঠাৎ কন্ঠশুনে আশা ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে নিজের দিকে আঙুল তাক করে বলল,
-” আমায় ডাকছো নাকি?”
মান্সা আবারো বলল,
-” হ্যাঁ তোমাকেই।এদিকে এসো।”
বাবা এই মেয়ের আবার তাকে ডাকার প্রযোজন পড়লো কেন।আশা মনে মনে মুখ বাঁকায়।
আশা এগিয়ে আসতেই মান্সা প্রশ্ন করে,
-” তোমার সাথের ওই মেয়েটা কোথায় বলোতো।আসছে না কেন কদিন ধরে?”
আশা ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” মেয়েটা নয় ওও আমার বান্ধবী। আর ওকে দিয়ে তোমার কি কাজ?”
মান্সা বিরক্তি স্বরে বলল,
-” ওই একই হলো। আসছেনা কেন শুধু সেটা বলো।কবে আসবে বলো তো?”
আশা ও বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” ওর ভালো লাগছেনা তাই আসছেনা। তোমার জেনে কি কাজ বলোতো। ”
বলেই সে চলে এলো।
এই শয়তানগুলোকে সে ঠিক চেনে।তাসফির সমস্যার কথা শুনলে ওর মৃত বাবাকে নিয়ে কথা শোনাতেও ভুলবে না ওরা।
আর হঠাৎ করেই সবাই শুধু আজ তাসফির খবর চাইছে কেন। অদ্ভুত।
ওই মান্সা না মান্তাসা নিশ্চয়ই তার বান্ধবীর ক্ষতি করার জন্য ওঁৎ পেতে আছে তাই তো খোঁজ জানতে চাওয়া। সে কি বুঝেনা তাদের মতলব।খুব ভালো করে বুঝেছে।
ভর দুপুরে মাহীন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো ওসমান ভিলায়।
কলিংবেল চাপতেই কয়েক মিনিটের মাঝেই বাসন্তী দরজা খুলে দিলো।মাহীন হরবর করে বলতে লাগলো,
-” বাসন্তী প্লিজ আমার সঙ্গে আসুন আপনাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন, প্লিজ একটু আমার সঙ্গে আসুন।না করবেন না প্লিজ।”
-” আরে কিন্তু?”
মাহীন তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না।টেনে এনে তার বাইকের পেছনে বসালো।
ঝড়ের গতিতে বাইক স্টার্ট দিলো সে।
বাসন্তী পরে যাওয়ার ভয়ে হালকা ইতস্তত ভাব পাশ কাটিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলো।তার বুকের ভেতর কেমন ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। কি আশ্চর্য এই অদ্ভুত অনুভুতি সে ঠাহর করেনি গত কয়েকটা বছর।
তবে হঠাৎ নতুন করে তার মাঝে এই অনুভুতির জন্ম নেওয়ার মানেটা কি।
বাসন্তী বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করলো,
-” তুমি আমায় হঠাৎ এভাবে কেন নিয়ে যাচ্ছো বলোতো।আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছো শুনি?”
মাহীন বাইক চালাতে চালাতে দুষ্টু হেঁসে বলল,
-” ভয় পাবেন না বাসন্তী আপনায় বিক্রি করে দেব না।”
বাসন্তী কপোট রাগ দেখিয়ে বলল,
“ফালতু কথা ছাড় কোথায় যাচ্ছো সেটা বলো আগে?”
-” আমাদের বাড়িতে।”
বাসন্তী চোখ বড় বড় করে বলল,
-” কি এই অবস্থায় আমি কিনা তোমাদের বাড়ি যাবো।পাগল হয়েছো।আন্টি কি ভাববেন।তাছাড়া হঠাৎ তোমাদের বাসায়ই বা কেন যাবো?”
বাসন্তী বাড়ির যেই নরমাল থ্রি পিচ পড়া ছিল তা শুদ্ধই
মাহীন তাকে নিয়ে এসেছে।
বাতাসে বাসন্তীর মাথায় প্যাচানো ওড়না আলগা হয়ে এসেছে।পাশ দিয়ে বেরিয়ে আশা ছোট চুলগুলো উড়ছে। দেখ দুষ্টু চুলগুচ্ছ কেমন ছুঁয়ে দিতে চেষ্টা করছে মাহীনের শরীর।সে মুচকি হাসলো।
তখনি বাসন্তী সামনে থেকে একটা গাড়ি কে এগিয়ে আসতে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো,
-” এই সাবধানে চালাও. ?”
মাহীন সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষলো।
বাসন্তী রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
-” এই তুমি আমায় মেরে ফেলার ধান্ধা করছো না তো।এখনি তো এক্সিডেন্ট ঘটে যেত।চোখ কোথায় রেখে গাড়ি চালাচ্ছ।এমন করলে নামিয়ে দাও আমায়।আমি রিক্সা করে যাবো।”
মাহীন ফিসফিস করে বলল,
-” আমি তো আপনার ধ্যানেই ছিলাম বাসন্তী। আপনার বাসন্তী রঙা গড়নে এই হৃদয় হরিয়েছি যে বহু আগে।এতদিন আপনাকে না পাবার বেদনা আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। তবে এবারে আর তা হতে দেব না। আপনাকে নিজের করে তবেই ছাড়বো।উপর ওয়ালা একবার যখন সুযোগ দিয়েছে তা হাত ছাড়া করি কি করে বলুন তো।”
মাহীন আবার বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল,
-” আসলে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি একটা কাজে বুঝলেন তো।মায়ের সামনে আমি যাব বলবো আপনি শুধু তাতে হ্যাঁতে হ্যাঁ মেলাবেন বুঝলেন?”
-” বুঝলাম কিন্তু কেমন সাহায্য? ”
মাহিন আবার বাইক থামালো।
বাসন্তীকে ইশারা করলো নামতে।
বাসন্তী বলল,
-” কি হলো আবার থামালে কেন?
মাহীন বলল,
-” এসে গেছি আমরা। নামুন বাসন্তী সুন্দরী ।ভেতরে গিয়েই বুঝতে পারবেন।আসুন।”
মাহীনের এমন সম্মোধনে বাসন্তী কিছুটা লজ্জা পেল।যদিও লজ্জা পাওয়া তার একদমি উচিত নয়।তবুও অবাধ্য মন তা উগড়ে দিতে তৎপর
ওপর তালার বারান্দা থেকে মাহীনের বোন পারুল চেঁচিয়ে উঠলো।
-” মা… ভাইয়া ভাবীকে নিয়ে এসে গিয়েছে…।”
বাসন্তী ওর কথায় চমকে উঠলো।
কে ভাবী?
মাহীন পারুল কে চোখে ধমক দিলো কে শুনে কার কথা।
বাসন্তী আশে পাশে তাকালো।
দোতালা বিশিষ্ট একটি বাড়ি।
চারপাশে ইটের বাউন্ডারি দেওয়া। চারপাশে বিভিন্ন গাছ গাছালির আস্তরণে আবৃত।একপাশে সবজি ক্ষেত ও লক্ষ করা যাচ্ছে।
বাসন্তী মাহিনের পিছু পিছু দোতালায় উঠে গেল সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে।নিচের তালা ভাড়া দেওয়া বোধহয়।কয়েকজন মহিলা তো আড় চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল।তার এখন ভারী লজ্জা লাগছে।এভাবে কেউ বাসার কাপড় পরিহিত ভাবে অন্যের, একটা অচেনা বাসায় চলে আছে? যতই সেটা ভাইয়ের বন্ধুর বাসা হোক না কেন।
কলিং বেল দেওয়ার আগেই পারুল দরজা খুলে দিলো। যেন যে এই অপেক্ষাতেই ছিল।
বলল,
-” ভাইয়া তুই বলেছিলি ভাবিকে আঁধা ঘন্টার মাঝে নিয়ে আসবি।কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে পঁচিশ মিনিটই পূর্ণ হলো না তার আগেই চলে এলি।
ভাবীর বাসা যে এত কাছে আমায় আগে জানাবি না।
তাহলে তো আমি আরো আগেই তার সঙ্গে দেখা করতে চলে যেতাম।বেয়াদব একটা।কিপ্টুস। আমি কি তোর হবু বউকে খেয়ে ফেলতাম নাকি হুহ।”
বোনের কথায় মাহীন বোকা হেঁসে মাথা চুলকালো।
বোনকে মৃদু ধমক দিলো।
-” চুপ থাক বুড়ি”
বাসন্তী এদের কথপোকথনের মানে কিছুই বুঝতে পারছে না।
সে কিছু বলতে যাবে তার আর সুযোগটাও পেল না।
পারুল উৎফুল্ল চিত্তে তার হাত ধরে টানতে টানতে ভেতরে একটা রুমে নিয়ে আসলো।
বাসন্তীকে আসতে দেখে আবেদা বেগম উঠে বসলেন।
ওদের পিছু পিছু মাহীন ও এসে উপস্থিত হলো।
এই যাহ আসল কথাটা তো তার বাসন্তী কে বলায়ই হলো না। এখন মা যদি উল্টা পাল্টা বলে ফেলে।তাহলে তো কেলেংকারী।
আবেদা বেগম বাসন্তী কে কাছে ডেকে নিজের পাশে বসালো।
বাসন্তীর মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে মাহীন কে শাসিয়ে বলল,
-” দেখেছো কান্ড আমার ছেলের।তোমাকে কেমন হুলস্থুল করে নিয়ে আসলো। আমি শুধু বললাম তোর পছন্দ যেহেতু আছে আমায় ছবি দেখা আর ফোনে কথা বলিয়ে দে তাহলেই হবে। ওও বলল একবারে নিয়েই আসছি মা তোমার বউমা কে,তখনিই দেখে নিয়ো। একদম হাড়ে বজ্জাত ছেলে একটা আমার বুঝেছো মা। একটু দেখেশুনে রেখ। কদিন আর আছি বলো। এরপর তো এসবই তোমার।”
বাসন্তী ভদ্রমহিলার কথায় শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ওনার পানে।তার অস্বস্তি হচ্ছে খুব। কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝছেনা। মাহীনের পছন্দ মানে? সে কেন ওকে দেখে রাখবে।
বাসন্তী মাহীনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
বলতে চাইলো,
-” কি হচ্ছে মাহীন? আমি তো কিছুই…
মাহীন দ্রুত মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
-” মা থামো তো তুৃমি।কত কষ্ট করে তোমার বউমা কে উঠিয়ে নিয়ে আসলাম।আর তুমি কি থাকবেনা, থাকবের কথা উঠিয়ে নিয়েছো।
এই পারুল যা তোর ভাবীর জন্য সরবত করে নিয়ে আয়। তোদের বাড়িতে এসে কি বেচারা খালি মুখে আবার ফিরে যাবে নাকি গাধী । ”
পারুল মুখ বাঁকিয়ে ভাইয়ের কথা শুনলো।
আবেদা বেগম আবারো বাসন্তীর থুতনিতে হাত রেখে মিষ্টি করে হেঁসে বলল,
-” ভারী লক্ষি মেয়ে।কি মিষ্টি দেখতে।একদম আমার মাহীনের জন্য যোগ্য বধূ।”
আবেদা বেগমের আরো কথা বার্তায় বাসন্তী শুধু মাহীনের শিখিয়ে দেওয়া মতন হ্যাঁবোধক মাথা নাড়লো। প্রত্যেক কথায় শুধু সে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলালো।
এই পর্যায়ে আবেদা বেগম বলে উঠলেন,
-” এই বদমাশ যা সন্ধ্যা নামার আগে আগে মেয়েটাকে ঠিকঠাক মতো বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায় যা।”
দীর্ঘকথা শেষে মাহীন বাসন্তীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া উদ্দেশ্যে নিচে নামলো।
নিচে নামতেই বাসন্তী মাহীনকে চেঁপে ধরে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
-” কি হলো এটা।উপরে আন্টি এগুলো কি বলল? আমি তো কিছুই বুঝলাম না।একটু খুলে বলবে।”
মাহীন মাথা চুলকে বোকা হেঁসে বলল,
-” আরে রাগ করছেন কেন।আসলে মা কিছুদিন যাবত বিয়ের জন্য প্রচন্ড প্যারা দিচ্ছিলো বুঝলেন তো। আজ তো কিছুতেই মানছিলো না। মা ওও অসুস্থ। তাই আমার চট করে আপনার কথা মনে পড়লো। আপনাকে আমার পছন্দ এটা বলে মাকে শান্ত করানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু মা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইলো। কিন্তু আপনার নম্বর তো আমার কাছে নেই। ভাবলাম বাসার এড্রেস তো আছে।নিয়েই আসি বরং।
তারপর আপনাকে দিয়ে একটু মিছে নাটক করিয়ে মা কে বিশ্বাস করালাম।ব্যস এখন আর আমার লবিয়ের জন্য পিড়াপিড়ি করবে না বুঝলেন?
একটু মানিয়ে নিন না।প্লিজ। ”
বাসন্তী রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,
-” তো আমার কথাই তোমার কেন বলতে হলো।দেশে আর মেয়ে ছিলো না বুঝি।”
মাহীন হাঁসলো কিছুই বলল না।
মনে মনে বলল,
-” আর মেয়ে কেন থাকবেনা আছে তো।দেশে অনেক মেয়ে আছে। কিন্তু আমি যাকে ভালোবাসি সে তো আপনি। আপনাকে রেখে আর কার কথাই বা মনে পড়বে বলুন।”
বাইকে চেপে বসে বাসন্তী প্রশ্ন করলো,
-” আর তুমি আমাকে নাম ধরে কেন ডাকো।তোমার বড় হই আমি।আপা বলে ডাকবে আমায় সবার মতো,তাতে কি সমস্যা ।”
মাহীম দুষ্টু হেঁসে বলল,
-” তা কি করে হয়। আপনি তো আমার হবু বউ।হবু বউকে কেউ আবার আপা বলে নাকি নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। খোদা পাপ দেবে। আর তাছাড়া দুই বছরের বড় আবার বড় হলো নাকি।”
বাসন্তী বির বির করে বলল,।
-” অসভ্য ছেলে।সে তো এতদিন এদের ভালো ভেবেছিলো।সবকটা বদের হাড্ডি তার ভাইয়ের মতো।
বাসন্তী ওসমান ভিলায় আসতেই অনিমা বেগম থমথমে কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
-” দাঁড়াও।কোথায় গিয়েছিলে।এই অসময়ে?”
মায়ের প্রশ্নে বাসন্তী চমকে তাকালো।
বলল,
-” মা আসলে মাহীনের মা অসুস্থ আমাকে একটু তার শারীরিক সাহায্যে করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল।বাসাতো বেশি দূরে নয়।”
অনিমা বেগম চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
-” বলো কি আমায় আগে জানাবে না।আমিও যেতে পারতাম। ভদ্রমহিলা অসুস্থ। একবার দেখা হয়েছিলো আমার সঙ্গে আরো কত আগে।
তা এখন কেমন আছেন তিনি।”
-” মোটামুটি মা।বেশি হাঁটা চলা করতে পারেন না।এই আরকি।”
-” আচ্ছা যাও ফ্রেস হয়ে নাও।”
আজ সন্ধ্যা বেলায় নিস্তব্ধ কে বাসায় পেয়ে ড্রয়িংরুমে আবারো বসেছে সকলের চোখে চোখে ফিসফাস গোল মিটিং।
নিস্তব্ধ ওদের কার্যকলাপ ভ্রু কুঁচকে দেখছে।
একফাঁকে নিজের কফির মগে চুমুক দিয়ে ল্যাপটপে মনোযোগ রেখে দাদুর উদ্দেশ্যে কৌতুক করে বলল,
-“তোমার নাতিবউয়ের কি বাপের বাড়ির সফর এতদিনেও হয়নি।এখনো শ্বশুর বাড়ি আশার তার কোনো নাম গন্ধ ও নেই যে।”
সুযোগ পেয়ে পাশ থেকে অনিমা বেগম শক্ত কন্ঠে বললেন,
-” ওও আর এবাড়িতে আসবেনা।তাছাড়া তোমায় ওকে নিয়ে আর চিন্তা করতে ও হবে না। ”
নিস্তব্ধ অবাক কন্ঠে সূধালো,
ধূসর রংধনু পর্ব ২৪
-” আসবেনা মানে?
দাদু এই সুযোগ পেলেন। বিয়ে করবেনা বলে যেমন তার নাতি জেদ ধরে ছিল তেমনি তিনিও মনের সকল আক্রোশ মিশিয়ে নাতিকে ঝাড়ি মেরে বললেন,
-” হ্যাঁ সে আর তোমার বাড়ি আসবেনা। কি করতে আসবে সে।তুমি কি তাকে মানো?কি পরিচয়ে আসবে সে।তাসফি তোমাকে ডিভোর্স দেবে। তোমাকে সমস্ত পেপার’স রেডি করে সই করে তাকে পাঠাতে বলেছে।”