ধূসর রংধনু পর্ব ২৮

ধূসর রংধনু পর্ব ২৮
মাহিরা ইসলাম

সন্ধ্যে নামার পর মুহুর্ত। উজ্জ্বলমান আকাশটা অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে। আজ চাঁদমামার দেখা পাওয়া মনে হচ্ছে বড়ই দূর্লভ।কারণ আকাশে মেঘগুচ্ছ করে নিয়েছে তাদের দখলদারি।
তাদের দখলদারি সময়টাতে চাঁদ, তাঁরার দেখা দেওয়া যে মানা।
নিস্তব্ধ কেবলি ওসমান ভিলায় পা রেখে নিজের রুমে যাওয়া তাগিদে কদম বাড়াচ্ছিলো।তাতে ব্যাগড়া দিলেন অনিমা বেগম।

-“দাঁড়াও। ”
নিস্তব্ধ ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে পরলো। বলল,
-” যা বলার দ্রুত বলো মা।”
অনিমা বেগম নির্লিপ্ত কন্ঠে সুধালেন,
-” তোমার বাবা তোমার রুমে ডিভোর্সের পেপার রেখে এসেছে।সাবধানে তাতে সাইন করে তাসফির কাছে পাঠিয়ে দিও।”
নিস্তব্ধ এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে মাকে আলতো জরিয়ে ধরলো।বাঁকা হেঁসে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” কিন্তু আমি তো আমার বউকে ডিভোর্স দেব না মা।তোমাদের তো আগেই বলেছি।সো কোথাও সাইন করারও প্রশ্নই উঠছে না।”
অনিমা বেগম ছেলেকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বললেন,
-” তুমি কি ভেবেছো তোমার কথা মতো সব হবে?”
নিস্তব্ধ ভাবলেশহীন কন্ঠে সুধালো,
-” অবশ্যই। আমি যা বলবো,করবো তাই তো হবে।তাই না মাই ডিয়ার মাদার। আফটার অল বউ টা তো আমার।”
বলেই নিস্তব্ধ স্মিত হেঁসে দোতালায় সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল।
পেছন থেকে অনিমা বেগম শক্ত কন্ঠে চেঁচিয়ে বললেন,
-” তবে এত দিন বউয়ের প্রতি এই দরদ কোথায় ছিল তোমার। ”
নিস্তব্ধ যেতে যেতেই নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
-” সিন্দুকে বন্দি ছিল তো মা।হঠাৎ বের হয়ে আসলো।আমার এতে কি দোষ বলোতো হুম।”

মোড়ের দোকানটায় আজ ও বসেছে বন্ধুদের আড্ডা।
সৃজন কৌতুক করে বলল,
-” তাহলে আমাদের নিস্তব্ধ বাবু কে ও এখন বুঝি কেউ রিজেক্ট করার সাহস রাখে? অনুভূতি কেমন বলতো বন্ধ ? ”
নিস্তব্ধ বাঁকা হেঁসে বলল,
-” উহু কেউ নয়।অনলি ওয়ান পার্সন এন্ড শী ইজ মাই ওয়াইফ। ”
সৃজন আবারো উপহাস করে মুখ দিয়ে আফসোসের সূর তুলে বলল,
-“এখনো বউয়ের সাথে বাসরটাও সারতে পারলি না দোস্ত তার আগেই তোকে রিজেক্ট করলো।ইশশ!কলিজায় লাগে রে বন্ধু।এই আমাকেই দেখনা। এক বাচ্চার বাপ।কি যে মজা রে ভাই। ”
নিস্তব্ধ এবারে চোখ পাঁকিয়ে তাকালো ওর দিকে।
সৃজন এবারে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

-” ওকে ওকে বাট তুমি কি এখনো বলতে চাও বউয়ের প্রতি তোমার মনে কোনো প্রেম নেই? বল?”
নিস্তব্ধ বাঁকা হাসলো সৃজনের প্রশ্নে।
উত্তর না দেওয়ায় সৃজন নিস্তব্ধ’র চোয়ালে বরাবর োমারলো এক ঘুসি।
নিস্তব্ধ তার পরেও হাসছে।
মাহীন দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-” সালার হাঁসির ব্যারাম উঠছে। এই সুজন ওরে একটা প্রেসক্রিপসন লিখে দিস তো।”
সুজন সিগারেটের ধোঁয়া শূন্যে মিলিয়ে দিতে দিতে নিস্তব্ধ’র উদ্দেশ্য আর একটা সিগারেট এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
-” বুঝলাম! নাও বন্ধু সিগারেট খাও।নাও নাও।”
নিস্তব্ধ বিরক্তির স্বরে বলল,

-” খাই না।”
সুজন আহাজারি করে বলল,
-” সে কি!কি বলেন গুরুজী ।সেদিন একটানা এক প্যাকেট সিগারেট নিজে শেষ করেছেন আপনি। এখন
বলছেন আপনি সিগারেট খান না এটা তো বিশ্বাসযোগ্য নয় গুরুজী।”
নিস্তব্ধ সুজন দিকে মুচকি হেঁসে তাকালো।
আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগল।
সুজন বুঝতে পারলো এই মুচকি হাসির লক্ষণ বেশি ভালো নয়।
-” কি ব্যাপার ভাই তুই আমার দিকে এভাবে এগিয়ে আসছিস কেন।আমি কিন্তু তোর বউ নই।সো কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ দোস্ত…
বাকিটা সুজনের বলা হলো না।
নিস্তব্ধ সুজনের পিঠে দিলো এক থাবা।
সৃজন আর মাহীন সুজনের অবস্থা দেখে কুটিকুটি হাঁসতে লাগলো।

তখন বোধহয় ঘড়িতে সময় একটার বেশি।
নিস্তব্ধ, নিকষ কালো অন্ধকার রাত।চারিদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক।কোথাও হঠাৎ হঠাৎ পঁচা ডোবায় ব্যাঙ ডাকছে তার নিজস্ব ভাষায়।
দীর্ঘ ওটির শেষে নিস্তব্ধ ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাসায় পৌঁছে নিজ রুমে ঢুকলো।
বন্ধুদের আড্ডার মাঝেই ফোন এসেছিল হসপিটাল থেকে।
নিস্তব্ধ রুমে ঢুকে চারিপাশে তাকালো।
কেমন জনমানব হীন রুমটা উত্তপ্ত মরুভূমির ন্যায় খাঁ খাঁ করছে। নেই আগের মতো কোনো চঞ্চলতার ছোঁয়া।নেই কোনো হাসির উৎস। নেই তার ঝগড়া করার সঙ্গী। রুমটা কেমন হাহাকার করছে তার একমাত্র বউয়ের না থাকার বেদনায়।

বউ ছাড়া এই কদিন তার জীবনটা কেমন পানসে পানির মতো লাগছে।এক টুকরো শান্তি নেই হৃদয়ে।
নিস্তব্ধ হাতের হাতের ঘড়িটা খুলে রাখলো ড্রসিংটেবিলের সামনে। গায়ে থাকা এপ্রোন টা খুলে ছুঁড়ে মারলো বিছানার দিকে।
অতঃপর রিমোট হাতে এসির পাওয়ার টা আরো একটু কমিয়ে দিয়ে সোফায় গাঁ এলিয়ে বসলো।
দু হাতে চুলগুলো মুঠো করে ধরে সোফার রেলিংয়ের ওপর দিয়ে মাথাটা এলিয়ে দিলো।
প্রচন্ড গরম লাগছে তার।এসির পাওয়ার কি আর একটু কমানো উচিত।এই ঠান্ডায়ও কাজ হচ্ছে না।
তার কপালে জমা হয়েছে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা।

আজ কি আকাশটা মেঘলা? বৃষ্টি হবে কি? বৃষ্টিতে ভিজে তার বোধহয় একটু জ্বর টর বাঁধানো উচিত।
তাতে পরিক্ষা করে দেখা যেত মেয়েটার মনে তার জন্য একটু মায়া দয়া আছে কি না।
নাহ মনে হচ্ছে এবারে বৃষ্টিতে ভেজার আগে তার জ্বরটা বোধহয় এমনিতেই এসে যাবে।
উঠে তোয়ালে নিয়ে নিস্তব্ধ চলল, ওয়াশরুমের দিকে।
ঝর্না দিয়ে ঝিরিঝিরি পানির ফোটা তার গাল,চোয়াল বেয়ে নেমে পড়ছে ছন্দের গতিতে।
নিস্তব্ধ আয়নার দিকে তাকালো।
পেশি বহুল হাত।সুগঠিত বক্ষ। মসৃণ উদর।কোনো কিছুই কি মেয়েটার চোখে বাধে না।
নিজের সৌন্দর্য দেখে তার নিজেরই হিংসা হয়।
এই সুন্দর রুপ যৌবন দেখে কি মেয়েটার মনটা কি একটু গলে না।
তার ভেতরকার সত্তা তাকে বিদ্রুপ করে বলে,
তুমি কি মেয়েটার গোলগাল ফোলাফোলা মুখশ্রী,সরু চিকন নাক, স্ট্রবেরীর মতো ঠোঁটজোড়া,বাঁকানো সূডৌল কোমড়, রমণীর অপরুপ সৌন্দর্য দেখে তার প্রেমে মত্ত হওনি?
নিস্তব্ধ বাঁকা হাসে।
তার ভেতরকার সত্তা আবারো বিরক্তির স্বরে বলে উঠে,

-” কি হলো জবাব দাও।তুমি কি তার প্রেমে মত্ত হওনি?”
নিস্তব্ধ তার পুরু ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে ফিসফিস করে জবাব দেয়,
-” হতেও পারি।কিছুই তো অসম্ভব নয়?”
তার ভেতরকার সত্তা রাগে চিরবিরিয়ে উঠে বলে,
-” তার মানে তিমি আমায় এখনো শিওর করবে না তাইতো।আচ্ছা তোমার সমস্যা টা কোথায় বলোতো? গাছের ওও খাও তলার ওও কুড়াতে চাও।
এই আমায় ধোঁয়াসায় রেখে তুমি কি পাও বলোতো।”
নিস্তব্ধ হেঁসে ঠোঁট নাড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,
-” আনন্দ পাই।তুমি খুবই ইন্টারেস্টিং একটা পার্ট বুঝলে। কিছু চমৎকার অনুভুতি কি সহজে স্বীকার করা যায় বলো? স্বীকারোক্তির জন্য দরকার যোগ্য ব্যক্তির সঙ্গে সঠিক সময় ও স্থান।
সেই সময় এলে ঠিক তুমি ধোঁয়াসা মুক্ত হবে। তার তা মনে হয় খুব শিঘ্রই।”
বিছানায় গিয়ে নিস্তব্ধ তার বউয়ের ওড়না খানার ঘ্রাণ নিয়ে চোখ বুজলো।আবেশে তার চোখে ঘুম ধরা দিলো।

ভোর তখন ছয়টা।
পাখির হালকা কিচিরমিচির চারিপাশে।
সূর্য্যিমামা পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।
ফোনের রিংটোনে দীর্ঘক্ষণের তন্দ্রাছন্ন হলো তার।
বিরক্তি নিয়ে ফোন তুলতেই ওপাশ হতে শুনতে পেল এক ভরাট পুরুষালী কন্ঠস্বর।
-” গুড মর্নিং মিস বাসন্তী। ”
হঠাৎ এমন আপনি সম্মেলন আবার নাৃ পুরোপুরি ঘুম ছুটে গেল তার।
চোখ পিটপিট করে উঠে বসলো সে।
কিছু সেকেন্ড মস্তিষ্ক খাটিয়ে চেনার চেষ্টা করলো কন্ঠের মালিক কে।।
অতঃপর ভ্রুজুগল কুঁচকে ওপাশের করা শুভ বার্তার জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো,
-” তুমি আমার নম্বর পেলে কোথায়?”
মাহীন দুষ্টু স্বরে বলল,

-” আপনার কাছে এই মানব তো নম্বর খানা চেয়েছিলো।কিন্তু আপনি তো দিলেন না।তাই ফোনের মালিক নিজেই বহু কসরত করে নম্বর খানা যোগাড় করলো।”
-” আচ্ছা। তা আমার নম্বর দিয়ে আপনার কি কাজ।”
-” এই যে এখন যে কাজ করছি।”
বাসন্তী কৌতুক করে বলল,
-” তো এই কাজ টা করার কি প্রয়োজন।”
মাহীন দুুষ্ঠু হেঁসে বলল,
-” কি যে বলেন না। হবু বউয়ের খোঁজ খবর তো একটু নিতেই হয়।সময়টাকে তো কাজে লাগানো উচিত।”
বাসন্তী গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-” কিন্তু তুমি ভুল পথে তোমার সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছো।সঠিক পথের সন্ধান করে সেথায় যাও আর সময়কে কাজে লাগাও।”
বলেই সে খট করে কলটা কেটে দিলো।
বাসন্তী বুক ধুকপুক করছে।
মাহীন ফোন কাটতেই অজানা আশঙ্কায় তার বুক কেঁপে উঠলো।পুনরায় সে কোনো ভুল করতে যাচ্ছে না তো।
মাহীনকে কি তার থামানো উচিত।
ছেলেটার প্রতি তার কেমন মায়া কাজ করে।
কি জন্য এই মায়ার জন্ম। আদ্যত্বেও কি এর কোনো ব্যাখ্যা আছে?

কলেজের পেছনের দিকটায় বসে আড্ডা দিচ্ছে তাসফিরা।
পেছনের একটা দীঘি ও আছে।
তাতে স্বচ্ছ হালকা সবুজ পানি।উত্তরে বাতাসে দীঘির পানি থইথই করে।ঢেউ গুলো আস্তে ধীরে প্রবাহিত হয়। কখনো অদূরে কোথাও বাসের পাতা উড়ে এসে পড়ে দীঘির জলে।
আড্ডা এক ফাঁকে আশা মাইকিং করার মতো করে নিজের ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে রোল পাকিয়ে মুখের সামনে ধরে বলল,
-” গাইস তোমরা কি বিশ্বাস করো এই যে আমার সামনে যেই সুন্দরী রমণীটি বসে আছে সে একজন বিবাহিত মহিলা?”
আরাধ্য আর সুর্নিধি ড্যাব ড্যাব করে চাইলো তাসফির পানে
হলকা চেঁচিয়ে অবিশ্বাস্য স্বরে বলল,

-” কি… অসম্ভব। ”
তাদের এ কথা মোটেও বিশ্বাস হচ্ছে না।কি করে বিশ্বাস হবে? নাকে নেই নাকফুল,হাতে নেই চুরি।বিয়ের কোনো সিম্বলই তো এই রমণীর মাঝে নেই তবে বিশ্বাস হবে কেমন করে।
ওদের এভাবে তাকানোতে তাসফি একটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো।
আশা এবারে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ওদের চুপ করার ভঙ্গিমা করে বড়দের মতো করে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-” হুঁশশ! তবে সাবধান। এ খবর কেউ যেন না জানে।জানলেই সর্বনাশ।”
আরাধ্য আর সর্নিধি আশার এমন ভঙ্গি দেখে কুটকুট করে হাসলো।
তাসফি আশার বাহুতে চাপড় মারলো।
আশা তাতে পাত্তা দিল না।
আবারো সিরিয়াস কন্ঠে বলল,
-” এমন কি এই মহিলার কাছে নাকি তার বরের কোনো ছবি পর্যন্ত নেই। আর নাতো বলছে তার বরটা আসলে কে।”
সর্নিধি অবাক হয়ে বলল,
-” সে কি আমাদের বান্ধবীর বরকে আমরা দেখতে পারবো না এটা কেমন করে হয়।
তার নাম কি।”
তাসফি ইতস্তত করে বলল,

-” অনুভব শেখ।”
আরাধ্য ঠাট্টা করে বলল,
-” এই তাসফি সত্যি করে বলতো বিয়ে হয়েছে তো।নাকি ঢপ মারছিস। ”
তাসফি বিরক্তি নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” তোরা আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন? আজব।আর বিয়ে নিয়ে কি কেউ মিথ্যা কথা বলে নাকি।”
সর্নিধি বলল,
-” তবে তোর নাকের নাকফুল কই? হাতের চুরি কই?”
তাসফি নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
-” ওগুলো পড়তে আমার ভালোলাগে না তাই পড়িনি সিম্পল। ”
আরাধ্য তাসফিকে জেকে ধরে বলল,
-” ঠিকআছে মানলাম বিয়ে হয়েছে। এবার তোকে আমাদের দুলাভাইয়ের সঙ্গে দেখা করাতেই হবে।”
এই কথার সাথে আশা আর সর্নিধিও সায় দিলো।
তাসফি পরলো বিপদে এবার সে কি করবে।
তাসফি আশার দিকে রাগে কটমট করে তাকালো।
আশা তার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাঁসি দিলো।
আশার চোখগুলো যেন বলছে,
“এবার দেখ কেমন মজা।
আমায় দুলাভাইকে আজ পর্যন্ত দেখার সুযোগ দিলে না এবার বোঝো মজা।”

চারিদিক কেমন আধারে ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে। আজকাল দিনগুলো বড্ড স্যাঁতস্যাঁতে।যখন তখন আকাশ ঝাঁপিয়ে জলকণা পরতে শুধু করে তার হদিস বলা ভারী মুশকিল।
তাসফি দ্রুত চেষ্টা করছে কলেজ থেকে বের হতে।
প্রাক্টিক্যাল থাকার দরুণ আজ একটু দেরী হয়ে গেল বোধহয়। সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়।
চারপাশ কেমন আলো-আঁধারির গোলকধাঁধা সৃষ্টি করে রেখেছে।
করিডর টাও কেমন নিরব।চারপাশে কোনো শিক্ষার্থীর দেখা নেই।অবশ্য এই সময় থাকবেই বা কেমন করে।
চারপাশে কেমন যেন গাঁ ছমছমে ভাব।
সাহসি হলেও তাসফির চারপাশটা এমন গুমোট ভাব দেখে গাঁ কেমন শিউরে উঠছে।
ওরা তিন জন থাকলে তার এতটা ভয় লাগতো না।কিন্তু ওরা আগেই বেরিয়ে গিয়েছে।
তারওপর কিছুক্ষণ আগের কঙ্কাল গুলো দেখার পর থেকে মনে হচ্ছে সেগুলো তার পিছু পিছু আসছে।
হঠাৎ পিছনে কিছু পরার শব্দ পেল মনে হয়।

তাসফি ভয়ে শিউরে উঠলো।
তাসফি ভয়ে ভয়ে নিজের ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো কেউ নেই।উফফ!
তাসফি দ্রুত হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলো।
তবে কেন যেন তা হচ্ছে না।
করিডরটা পেরোতে পারলেই সে বাঁচে।
তারওপর তাসফি কে আশাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভয় ও দেখিয়ে ছিল তখন। এখানে নাকি এক শিক্ষার্থী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল।
কিন্তু তাসফি তখন ওদের কথা পাত্তা দেয় নি।
এখন মনে হচ্ছে ওদের কথা না শুনে ভুলই করেছে।
করিডরটাও হঠাৎ এত বড় হয়ে গেল কি করে। পথ যেন ফুরোতেই চাইছে না।
তিনতলা থেকে দোতালার সিঁড়ির নিকট আসতেই
কেউ তাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরলো।
তাসফি আত্মা তখন খাঁচা ছাড়া।

ধূসর রংধনু পর্ব ২৭

চিৎকার করলেও তার মুখ দিয়ে আওয়াজ বাইরে বের হতে পারলো না।
শুধু উমম শব্দই বের হলো।কারণ তার হাত ব্যতীত মুখ চোখ সবই বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
রাত তখন আটটা প্রায়।ওসমান ভিলায় ফোন এলো তাসফির মেজ চাঁচির,
-” তাসফি কি আপনাদের বাড়ি গিয়েছে বিয়াইনসাব।মেয়েটা এখনো বাড়ি ফিরে নি?”

ধূসর রংধনু পর্ব ২৯