ধূসর রংধনু পর্ব ৩৭
মাহিরা ইসলাম
নিস্তব্ধ রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
-“সমস্যা কি?”
তাসফি কোনো রকমে হাঁসি থামিয়ে বলল,
-” তো এই আপনার কাজ।”
নিস্তব্ধ বিরক্তির স্বরে বলল,
-” তো প্রবলেম কোথায়?”
তাসফি নিস্তব্ধ’র চারিপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলল,
-” প্রবলেম মানে মহা প্রবলেম।এইরকম ভাবে নাকে মুখে আটা লাগিয়ে আপনি কি করছিলেন শুনি।”
নিস্তব্ধ হতবাক হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেসিনের আয়নায় নিজেকে দেখলো।
অতঃপর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
-” আটা দিয়ে খাবার বানালে এইরকম একটু আকটু লাগতেই পারে।এটা বড় কোনো ব্যাপার নয় বুঝলে।”
তাসফি অবাক হয়ে বলল,
-” আপনি খাবার বানাচ্ছিলেন?”
-” জ্বী।”
-“কেন?”
নিস্তব্ধ চোখ ছোট ছোট করে ঠাট্টার ছলে বলল,
-” ম্যাডাম কি খাবার দাবারের কথা ভুলে বসেছেন নাকি।রাতে ডিনার করেন নি তা কি মাথায় আছে। পেটের মাঝে আদ্যত্ত্বেও এখন কিছু আছে নাকি পুরোটাই খালি সে খেয়াল আছে?”
তাসফি জ্বীবে কামড় দিলো।হ্যাঁ তাই তো সে তো রাত থেকে না খাওয়া।দুপুরে ক্যান্টিনে লান্স করেছিল এরপর তো আর কিছু মুখেই দেয় নি। কি আশ্চর্য। তার এখন পর্যন্ত খুদা অনুভব হলো না।
তাসফি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আপনি রান্না করতে পারেন নাকি?”
নিস্তব্ধ ভাব নিয়ে বলল,
-” কি মনে হয়? ইউকে তে স্টাডি কম্পিলিট করা কালিন মাঝে মাঝে নিজেই রান্না করে খেতাম।”
-” বাহ খুব ভালো।দেখতেই পাচ্ছি রান্নার নমুনা।”
-” ইজ কিউজ মি! বাইরের টা দেখে কখনো ভেতরের স্বাদ বুঝতে যাবেন না।আগে টেস্ট করবেন।অতঃপর প্রশংসা কিংবা তিরস্কার সব করবেন।”
তাসফি ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-” আমি করবো আপনার খাবারের প্রশংসা?”
-” প্রবলেম কিসের?”
-” কেন করবো।আপনি আমার তৈরি খাবারের প্রশংসা করেছিলেন? আমি বিয়ের পর আপনার পছন্দের স্পেশাল স্পেশাল ডিশ রান্না করে খাওয়ালাম তখন তো আপনি মুখ দিয়ে শুধুমাত্র ভালো শব্দ টাও উচ্চারণ করেন নি। আমি কেন করবো?”
নিস্তব্ধ বাঁকা হেঁসে বলল,
-” ওহ হো।তা আপনি বুঝি আমার প্রশংসা শোনার জন্য মুখিয়ে ছিলেন মনে হচ্ছে? ”
তাসফি থতমত খেয়ে বলল,
-” একদমি নয়।আমি তো কথার কথা বললাম।”
তাসফি কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে বলল,
-” আর এখানে খাবার তৈরীর মশলাপাতি পেলেন কই সেটা বলুন?”
-” কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই।আমি যা বোঝার বুঝে নিয়েছি।বরং আপনার প্রশ্নের উত্তর দেই।আমি এখানে মাঝে মাঝেই আসি।শুধু রাত থাকা হয় না। তাই এগুলো থাকে।জায়গাটা বহু আগে কিনেছিলেন বাবা।তখনই এত গাছগাছালি লাগিয়ে ছিলেন।আমি এখানে প্রায় আসতাম।অতঃপর মাথায় আসলো ফার্মহাউস তৈরীর ভাবনা।ব্যস। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন?”
তাসফি মাথা নাড়ালো।
” তবে খাবার গুলো ডাইনিংয়ে সার্ভ করুণ আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।”
নিস্তব্ধ’র কথা মতো তাসফি তাই করলো।
আইটেমে দেখতে পেল পরোটা, ডিম ভাজা, আর আলু ভাজি।
আলু ভাজি করলো কেমন করে এই লোক।এত সুন্দর কিচকিচ করে তো সেও কাঁটতে পারে না।
বেসিনের পাশে তাসফি তাকিয়ে দেখলো আলু ঝুড়ি ঝুড়ি করা হাত মেশিন।তবে তা এটারই কামাল
বাহ লোকটার বুদ্ধি আছে বেশ।
নিস্তব্ধ আসলে তারা ব্রেকফাস্ট করে নিল।
তাসফি মনে মনে হাসলো।
বাহ আসলেই লোকটা ভালো রান্না করে বোধহয়।পরোটা মোটেও শক্ত হয় নি।ভাজিটাও খারাপ না।
কিন্তু সে তো মোটেও প্রশংসা করবে না।
নিস্তব্ধ খাবার শেষ করে দ্রুত উঠে গেল।
তাসফি আড়চোখে সে দিকে চাইলো
লোকটা এত দ্রুত খায় কেমন করে।অদ্ভুত।
খাবার শেষ করে বেডরুমে পৌঁছে তাসফি অবাক হয়ে গেল।এরই মাঝে লোকটা ফুল প্যাকেজ।
নিস্তব্ধ তাসফির দিকে নজর রেখে তারা দিয়ে বলল,
-” দ্রুত রেডি হয়ে বাহিরে এসো।আমি গাড়িতে ওয়েট করছি।
তোমার ড্রেস বেডে রাখা।”
নিস্তব্ধ বেরিয়ে গেল।ড্রেস কোথায় পেল তা জিজ্ঞেস করার সুযোগ টুকু পেল না।
চলে যেন তুফানের গতিতে।আশ্চর্য।
তাসফি মুখ বাঁকালো।
দ্রুত রেডি হবে না ছাঁই।
সে ঘন্টা কাটিয়ে রেডি হবে।হুহ।
তাসফি আয়নায় নিজের অবয়ব দেখলো।
তার ত্বকের উজ্জ্বলতা কি একটু বেড়েছে? দাদি তো সারাক্ষণ গীত গাইতো।সোয়ামীর ছোঁয়া পাইলে মাইয়্যা গো শরীরের উজ্জ্বলতা এমনি এমনিই বাইড়্যা
যায়।কই সে তো এমন কিছু দেখছে না।তবে কিছুটা পরিবর্তন তো দেখছেই।এই যে নিস্তব্ধ’র অযাচিত ছোঁয়ার শিহরণের কথা ভেবে সে লজ্জায় রাঙা হচ্ছে। এএও বা কম কিসে।
তাসফি প্রায় আঁধা ঘন্টা সময় লাগিয়ে বেরিয়ে আসলো।
নিস্তব্ধ বার বার বিরক্ত হয়ে ঘড়ি দেখছিলো।
তাসফি কে এগিয়ে আসতে দেখে চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” দ্রুত আসতে বলেছিলাম আপনাকে?”
তাসফি নির্লিপ্ত কন্ঠে গাড়িতে উঠে জবাব দিলো,
-” আমি দ্রুত করতে পারিনা। বুঝেছেন?”
-” হ্যাঁ সেইই।”
নিস্তব্ধ আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো।
এখান থেকে কলেজ যেতেও সময় লাগবে খানিকটা।
তাইতো তারাহুরো করছিলো।
যাওয়ার পথে তাসফি উৎফুল্ল হয়ে আবদার করলো,
-” ডাক্তার সাহেব আমায় এখানে আবার নিয়ে আসবেন প্লিজ,প্লিজ?”
প্রেয়সীর নিঃসংকোচ আবদারে নিস্তব্ধ মুচকি হাসলো।সূধালো,
-” অবশ্যই কেন নয়।আমার মানেই আপনার সব।
লোকেশন চিনে রাখুন যখন ইচ্ছে হবে চলে আসবেন। চাবি সবসময় আবুর কাছেই পাবেন।”
নিস্তব্ধ’র জবাবে তাসফি খুশি হলো।ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
-” আচ্ছা আপনার এই আপনি তুমির সংমিশ্রণের ডাকের হেতু কি বলবেন প্লিজ?”
নিস্তব্ধ সুধালো,
-” ভালো লাগে।”
তাসফি মুখ বাঁকালো।
নিস্তব্ধ হুশিয়ারি করে বলল,
-” কথায় কথায় এমন মুখ বাঁকাবেন না। আমার পছন্দ নয়। আপনি যদি আমার কাজিন হতেন তবে নিঃসন্দেহে তুই সম্মোধন হতো।সে ওয়াইফ হোক আর যাই হোক।”
তাসফি চোখ বড় বড় করে ফেলল।
-” ছিঃ।”
নিস্তব্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” এখানে ছিঃ বলার মতো কি হলো।”
তাসফি জবাব দিলো না।
মনে মনে বারংবার মুখ বাঁকালো অদৃশ্য ভঙ্গিতে।
দীর্ঘক্ষণ পর তারা পৌঁছালো কলেজের গেটের সামনে।
পথে তাসফি আর একটা কথাও বলেনি।
নিস্তব্ধ ওও কথা বাড়ায়নি।
তাসফি নামার আগে নিস্তব্ধ আদেশ সূচক কন্ঠে বলল,
-“এখান থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটার পর যে চাইনিজ রেস্টুরেন্টটি চোখে পড়বে ক্লাস শেষে দুটোর দিকে আশা সহ আপনার বাকি বন্ধুদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকবেন।”
তাসফি অবাক হয়ে বলল,
-” কেন।”
নিস্তব্ধ গম্ভীর স্বরে বলল,
-” বলবেন আপনার হাসবেন্ড তাদের স্পেশাল ট্রিট দেবে।”
বলেই নিস্তব্ধ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দুহাত দূরে হসপিটালের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল।
তাসফি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে।মানেটা কি।
তাসফি হাসিখুশি মুখে কলেজে প্রবেশ করলো।চারিদিকের বাতাসেরা গুন গুন করে কেমন তাকে ভালোবাসার শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ইশশ আজ দিনটা এত সুন্দর কেন।
আশা ক্লাসে আসতেই তাসফি তাকে দাঁত কিড়মিড় করে চেপে ধরলো।
-” কাল তুই আমায় পার্কিংয়ে রেখে কই গিয়েছিলি সেটা আগে বল।”
আশা বেচারি এসে বসার ওও সুযোগ পেল না।তাসফির কথায় থতমত খেল।সত্যিটা বলবে কি বলবে না বেচারি তাই নিয়েই কনফিউজড। নিস্তব্ধ স্যার তো তাকে বিষয়টা গোপন রাখতে বলেছিল।এখন কি বলবে?
সে আরো ভেবেছিলো নিস্তব্ধ স্যার তাসফির সাথে কাল কিছু করেছে বা বলেছে কিনা তা শুনবে।কিন্তু এখন তো অন্য কেস।
আশা আমতাআমতা করে বলল,
-” আসলে আমি তোকে সারপ্রাইজ দিতেই গিয়েছিলাম। তারপর নিস্তব্ধ স্যার এসে বলল, এখনো কলেজে কি বাসায় যাও বলে ধমকে ধামকে পাঠিয়ে দিলো।”
আশার কথা তাসফির একফোটাও বিশ্বাস হলো না।
সে বুঝতে পারলো পাখির বাঁসা এই মুহুর্তে তাকে একদম ঢপ দিলো। তাসফি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
-” তাই? স্যার বললো আর তুই আমাকে ফেলে চলে এলি? যেখানে কিনা আমার তোর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল? এতটা অপদার্থ তুই যে স্যার বলল আর তুই ওমনি সূর সূর করে চলে এলি? হুম।”
আশা বুঝতে পারলো বুদ্ধিমান মানুষের নিকট মিথ্যা বলাও আরেক ধরনের ঝামেলা।তারা সেটা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারে কিভাবে যেন।
আশা তবুও উপায় না পেয়ে মাথা নাড়লো।
আরাধ্য আর সর্নিধি এসে পড়ায় তাসফি তাকে আর কোনো প্রশ্ন করলো না।
চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলবো টাইপ লুক দিলো।
যেন তার চোখের ভাষাই বলে দিল, তোকে আমি পরে দেখে নিবো পাখির বাঁসা।
ক্লাস শেষে তাসফি ওদের তিন জনকে হাঁটিয়ে নিয়ে চলতে লাগলো রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে।
ওরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
-” আরে ভাই যাচ্ছি টা কই সেটা তো বল?”
তাসফি টেডি স্মাইল দিয়ে বলল,
-” কেন তোদের না ট্রিট চাই? হাসবেন্ডের ছবি দেখবি,ছবি দেখবি পাগল বানিয়ে ফেলছিলি।ট্রিট চাই চাই করে মাথা নষ্ট করে দিচ্ছিলি।দেখ কি সৌভাগ্য তোদের বর মহাশয় তোদের নিজে থেকে ট্রিট দিতে চেয়েছে।ওয়াহ।সে কোনোদিন আমায় ট্রিট দিলো না অথচ তোদের ট্রিট দেবে অবাক কান্ড। কি সৌভাগ্য তোদের।
রাস্তা মাঝে ওরা হাঁটা থামিয়ে চিল্লিয়ে উঠলো।
যেন কত বড় কিছু পেয়ে গেছে।
-” আস্তে ভাই এটা রাস্তা। আসতে।”
আশা উৎফুল্ল চিত্তে বলল,
-” দূর তোর আস্তে। তুই ভাবতে পারছিস।এতদিনে তবে আমাদের তোমার সোয়ামী কে দেখার সৌভাগ্য হবে।
এই তোর উনি কি সত্যি সত্যিই আসবে নাকি?”
তাসফি মাথা নাড়লো।
আরাধ্য ভ্রু কুঁচকে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
-” এই সত্যি তোর বর বর্ননার মতে কুৎসিত নয়তো?”
তাসফি সয়তানি হেঁসে বলল,
-” আসলেই দেখতে পাবি।”
ওরা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দেখলো সেখানে নোটিশ টানানো আগামী দু’ঘন্টা রেস্টুরেন্ট বন্ধ।
সর্নিধি সতর্ক করে বলল,
-” তুই আমাদের ভুল জায়গায় নিয়ে আসিস নি তো?রেস্টুরেন্ট তো বন্ধ।
তাসফি চিন্তিত কন্ঠে বলল,
-না তো। এটার নামই তো বলল।
ওরা সামনে এগোতে গেলে রেস্টুরেন্টের ভেতর তেকে দুজন ওয়েটার বেরিয়ে এসে তাসফিকে বলল,
-” ম্যাম আপনারা ভেতরে গিয়ে বসুন।স্যার কিছুক্ষণ পরেই আসবেন।”
তাসফি শিওর হওয়ার জন্য বলল,
-” আমাকে চেনেন?
দুজনের মাঝে একজন বলল,
-” জ্বি ম্যাম আপনার ছবি স্যার আমাদের দেখিয়েছে।
তাসফি সহ ওরা অবাক হয়ে ভেতরে গিয়ে বসলো।
আশা বললো কি ব্যাপার বলতো তাসফি।এসব কি?
ওর বর আবার কোনো কিডনাপার নয় তো।
তাসফি ধমক দিয়ে বললো-” চুপ থাক। ফালতু কথা বলবি না।”
আশা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-” হ্যাঁ যেই জামাইয়ের নামে বললাম তোমার লেগে গেল তাই না হুম।”
ওরা প্রায় দশ মিনিট বসে রইলো।অথচ তাসফির বর মহাশয়ের আশার নাম গন্ধ ও নেই।
আশা ঠাট্টা করে বলল,
-” কি ব্যাপার বলতো।তোর বর মহাশয় কি আদ্যত্বেও আসবে তো। নাকি আমাদের দেখেই ভয়ে পালালো।হুম।”
তাসফিরওও এবার চিন্তা হচ্ছে লোকটা এখনো আসছেনা কেন।
“কেমন আছেন সালী সাহেবা’গন?”
তখনই হঠাৎ পেছন থেকে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
তাসফির মুখে হাসি ফুটলো।
আশা, সর্নিধি,আরাধ্য চমকে পেছনে তাকালো।
আগন্তুককে দেখে ওরা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।কোথাও নিঃশব্দে অদৃশ্য বর্জ্যপাত হলো বুঝি।
আশা ওরা একবার আগন্তুকের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার তাসফির দিকে।এই মুহুর্তে ঠিক কি রিয়্যাক্টশন দিবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না তারা।
আশা তাসফির পানে তাকিয়ে ইশারায় মুখ ভার করে জানতে চাইলো,
-” এটাই তোর হাসবেন্ড নাকিরে বোন।”
তাসফি কাচুমাচু ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো। তার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।
এর মাঝে আরাধ্য হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-” তোরা থাক। আমার না একটা কাজ আছে আসছি।”
নিস্তব্ধ তার ঘাড়ে থাবা বসিয়ে টেনে এনে আবারো জায়গায় বসিয়ে বলল,
-” কোথায় যাচ্ছেন সালা বাবু।এত দিন আমার মিসেস কে তো ট্রিট ট্রিট করে পাগল করে দিচ্ছিলেন।ট্রিট দিতেই তো এত কষ্ট করে আসা।ট্রিট না দিয়েই কি করে পাঠাই বলুন তো।”
ওয়েটার, ওয়েটার।
একজন ওয়েটার দৌড়ে আসলো।
নিস্তব্ধ গম্ভীর স্বরে বলল,
-” এরা যা যা অর্ডার করবে সব নিয়ে আসুন কুইক।”
এরপর নিস্তব্ধ শার্টের হাতা ফোল্ট করতে করতে তাসফির পাশে বসে পড়লো কোনো জড়তা ব্যতীত।
আশা, সর্নিধি আর আরাধ্য যেন তাসফিকে পারে না এই মুহুর্তে কাঁচাচিবিয়ে খেয়ে ফেলতে।
এত হ্যান্ডসাম বর কে মেয়েটা বলে কিনা চেহারা খারাপ কুমড়ো পটাশের মতো।কয়লার মতো কালো।
তার উপর শেষে কিনা নিস্তব্ধ স্যার?
আর আমাদের কাছে এতদিন কথা গুলো লুকিয়ে গিয়েছে।আশ্চর্য! আশ্চর্য!
ওরা নিজেদের সামলে নিলো।
স্যারের সামনে তো তাসফিকে কিছুই বলতে পারছে না তবে একা পাক তখন দেখাবে মজা।
এখন খাবারের ট্রিটটা আপাতত লুফে নেওয়া যাক।
আশা মনে মনে শয়তানি হেঁসে বলল,
-” আজ আপনাকে ফুতুর বানিয়ে ছাড়বো স্যার ওফস সরি দুলাভাই।
আশা ওরা একের পর এক ওর্ডার দিয়েই যাচ্ছে।
নিস্তব্ধ ওদের আবাক করে দিয়ে বলল,
– “ওয়েটার।আপনি এক কাজ করুন রেস্টুরেন্টে যত ধরনের রেসিপি আছে সব তৈরি করে নিয়ে আসুন।”
আর তোমাদের খাবার কম্পিলিট করতে কতক্ষণ সময় লাগবে?
ওরা নিস্তব্ধ’র কাজকর্মে হতবাক হয়ে তাকালো আশা খানিকটা আমতাআমতা করে বলল, “এক ঘন্টা লাগতে পারে। পাশে আরাধ্যকে খোঁচা মেরে বলল কিরে বল।”
আরাধ্য বলল,”হ্যাঁ,হ্যাঁ ওই।”
“ওকে।ওয়েটার আপনি এককাজ করুন বাইরে যে নোটিশ টানিয়ে ছিলেন তাতে আরো একঘন্টা বাড়িয়ে দিয়ে আসুন।আমার সালী সালারা আজ মন প্রাণ ভরে খাবে। যেন সারাজীবন এই ভজনের কথা তারা অন্তরে স্মরণ করে রাখে। ”
ওয়েটার লোকটা ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।
নিস্তব্ধ’র হঠাৎ হঠাৎ আগমন হলেই তারা ভয়ে থাকে।
কাজে ভুল দেখলে রাম ধমক খাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
নিস্তব্ধ কিছু খেল না।সে ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্ত।
তাসফি কেমন নাম না জানা জড়তায় খেতে পারছে না।
নিস্তব্ধ ফোনের দিকেই চোখ রেখে বলল,
-” মাই মিসেস।আপনি খাচ্ছেন না কেন।রেস্টুরেন্টের খাবার পছন্দ হয় নি।”
তাসফি থতমত খেয়ে বলল,
-” কই,কই খাচ্ছি তো।”
আশা সর্নিধি আরাধ্য আর চোখে সব দেখছে।
এত দ্রুত খাচ্ছে তারা যেন বাঘের গুহা থেকে যত দ্রুত পারা যায় তারা পালাতে পারলেই বাঁচে।
ভেবেছিলো নিস্তব্ধ স্যারকে ফুতুর করবে।
কিন্তু এখন তো নিজেদের পেটের অবস্থাই খারাপ।আর পারছে না। পেট এবার ফেটেই যাবে।
তারা তো ভুলেই গিয়েছিল নিস্তব্ধ স্যার তাদের থেকে দুই কাঠি উপরে।
ওরা তিনজন ঠাস করে উঠে দাঁড়ালো।
নিস্তব্ধ কৌতুক করে বলল,
-” কি ব্যাপার আপনাদের খাওয়া শেষ বুঝি?”
ওরা জোড়ে জোড়ে মাথা নাড়লো।
-” কিন্তু খাবার তো ধরাই রয়েছে। কি খেলেন?”
আশা আহাজারি করে বলল,
-” আর সম্ভব নয় স্যার থুক্কু দুলাভাই।আজ বরং আমরা আসি হ্যাঁ।”
তাসফি আমরা যাচ্ছি টাটা।
ওরা বেরিয়ে গেল।
নিস্তব্ধ ওদের কান্ড দেখে গাঁ দুলিয়ে হাসলো।
তাসফি রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
-“এমন করলেন কেন ওদের সঙ্গে?”
নিস্তব্ধ অবাক চোখে চেয়ে বলল,
-” আমি কি করলাম।ওরাই তো ট্রিট চেয়েছিলো।”
এতকিছু এমনিই অর্ডার করলেন কতগুলো টাকা নষ্ট হলো না।কিছু তো খেল না ওরা শুধু শুধু খাবার গুলো নষ্ট হলো। শুধু শুধুই ঝামেলা করলেন।ওরা যা খেত খেত।
ধূসর রংধনু পর্ব ৩৬
-“উহু।নো ম্যাডাম এই রেস্টুরেন্ট টা আপনার হাসবেন্ড এর গড়া। ফার্মহাউস তৈরি করার পেছনে টাকার উৎস এই রেস্টুরেন্টের বুঝলেন?কারো হৃৎপিণ্ড, কিডনি বিক্রি করার টাকায় নয়।”
তাসফি থতমত খেলো।কাঁসি উঠে গেল তার।
নিস্তব্ধ মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-” আর কে বলল খাবার গুলো নষ্ট হবে।ওগুলো এখন বস্তিতে যাবে।চলুন আমার সঙ্গে। ”
তাসফি অবাক চোখে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।