ধূসর রংধনু পর্ব ৪৫
মাহিরা ইসলাম
বাতাবরণ মানুষের উত্তপ্ত নিঃশ্বাসের মতোই উষ্ণ।
আকাশে মেঘ অথচ পরিবেশ গরম।
আরিফুল হক নিস্তব্ধ’র রাগীর মুখশ্রীর পানে একবার তাকিয়ে সুধালেন,
-” দেখ নিস্তব্ধ গ্রুপ থেকে ভিডিওটা ডিলিট করার কথা বলা হয়েছে। তবে যা রটে যাওয়ার তা তো রটেই গিয়েছে। এখন আর কিছুই করা সম্ভব নয়।তারা তো আর সত্যিটা জানে না। ”
“কিচ্ছু রটে নি স্যার।রটানো হয়েছে।আমার স্ত্রী কে আমি জরিয়ে ধরবো না কিস করবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
সুজন বলল,
-” দেখ নিস্তব্ধ রটানো হয়েছে সেটা আমরাও বুঝতে পারছি।কিন্তু যে কাজটা করেছে সে তো তোর ক্ষতি চায় বলেই সুযোগ টা লুফে নিয়েছে।”
– “হ্যাঁ আমার ক্ষতি চায় তাই না? যে এই কাজটা করেছে না ওর কলিজাটা ছিঁড়ে নিয়ে আসবো আমি।
কত্ত বড় বেত্তমিজ, বলে কিনা আমি নাকি নিজের বৈধ ওয়াইফ এর সঙ্গে ফষ্টি নষ্টি করি।ফষ্টি নষ্টি কত প্রকার কি কি সবগুলো বুঝিয়ে ছাড়বো জানোয়ার টাকে।”
“স্যার ভিডিও ডিলিট করার আগে ফেইক আইডিটা দেখে রাখুন। সুজন তোর বন্ধু হৃদয়ের নম্বরটা আমায় সেন্ট কর। ওতো এসব কাজে এক্সপার্ট। ওকে বল যে করেই হোক আইডিটাকে ট্রাক করতে। একবার শুধু জানতে পারি।যাস্ট একবার।”
নিস্তব্ধ আরিফুল হকের দিকে রক্তচক্ষু বদনে চেয়ে সুধালো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আর আমি যদি এবারে কোনোভাবে জানতে পারি এবারেও এসব কাজের সঙ্গে আপনার অপদার্থ মেয়ে জড়িত আছে তবে মেয়ে বলে এবারে আমি আর তাকে ছেড়ে দেব না।
আর শুনুন কিচ্ছু রটে যায় নি বুঝেছেন সবাইকে মাঠে জড় করুণ এখুনি। এতদিন যা বলিনি আজ বলবো।”
সুজন নম্বর দিতেই নিস্তব্ধ হৃদয় কে কল লাগালো।
-” হ্যালো হৃদয়। হ্যাঁ শোনো আইডির নাম নীলপদ্ম। ত্রিশ সেকেন্ডের ভিডিওটি ছাড়া হয়েছিল সকাল ছয়টার দিকে। আমাদের কলেজ গ্রুপে ছাড়া হয়েছিল।হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তোমায় লিংক পাঠিয়ে দিচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব আইডিটা কার ট্রাক করার চেষ্টা করো ভাই।তুমিই একমাত্র ভরসা। প্লিজ যত দ্রুত সম্ভব।আচ্ছা রাখছি।”
নিস্তব্ধ ফোন কেটে বাসন্তীর নম্বরে কল লাগালো।
-” কি ব্যাপার ভাই এই সময়।”
-” আপা শোন। যেখানে আছিস যেভাবে আছিস, এখুনি আমার রুমে যাবি। ড্রেসিংটেবিলের তিন নম্বর ড্রয়ারে আলমিরার চাবির ছোড়া পাবি। সবথেকে বড় চাবি দিয়ে আলমিরা খুলে সব চেয়ে ছোট্ট চাবি দিয়ে তার মাঝের ড্রয়ার খুলে আমার আর তাসফির বিয়ের কাবিন নামা নিয়ে আসবি
ড্রাইবারকে বলবি হাই স্পিডে গাড়ি চালাতে।সঙ্গে বাবাকেও আনবি। দশ মিনিটের মাঝে কলেজে পৌছাবি। আই রিপিট দশ মিনিট।”
-” কিন্তু…. ”
-” কোনো কথা নয় আপা যা বলেছি দ্রুত কর। সময় কম।”
বাসন্তী কেবলি একটু ড্রয়িংরমে বসেছিল। ভাইয়ের কথার মানে না বুঝলেও যা বলল সে তাই করলো।
মান্সা তাসফিদের পিছু পিছু এসেছিল।
সব দেখে আহাজারি করে বলল,
-” ওও মাই গড।এসব কি তাসফি।শেষে কিনা তুমি আর নিস্তব্ধ স্যার? এই জন্যই বুঝি নিস্তব্ধ স্যার তোমায় বারবার নিজের চেম্বারে ডাকতো।ইশশ! হাও রোমান্টিক। হাহাহা।”
তাসফি চোখ ফেটে বেরিয়ে এলো নোনাজলের ভান্ডার।
তাসফি উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে বলল,
-” মুখ সামলে কথা বলবে মান্সা।নিস্তব্ধ ইয়াসার আমার প্রেমিক নয়।হি ইজ মাই হাসবেন্ড। হাসবেন্ড সঙ্গে কেউ ফষ্টি নষ্টি করে না বুঝেছো।আমাদের হালাল সম্পর্ক।তাই বদ্ধ রুমে আমরা কি করবো না করবো তোমরা বলার কে শুনি। ”
মান্সা অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-” ওও তাই বুঝি? নিস্তব্ধ স্যার তোমার হাসবেন্ড। হাসালে তাসফি।”
মান্সা জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
-” নিজেদের নোংরামি ঢাকতে এখন মিথ্যা গল্প ফাঁদছ। অসাধারণ।নোংরা মেয়ে। ”
মান্সার গালে ঠাস করে চর পরলো।
পুরুষটা বোধহয় নিজের সর্ব শক্তি লাগিয়ে কষিয়ে চরটা বসিয়েছে গালে।
মান্সার মাথা ঘুরে উঠলো চরের দমকে।।
-” ইডিয়েট।তোমার সাহস কি করে হয় আমার ওয়াইফ কে নোংরা মেয়ে বলার?”
-” কি হলো আন্সার মি।”
মান্সা কোনো উত্তর দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেল না।
সে এখনো শক এ আছে।
নিস্তব্ধ একপলক তাসফি পানে চাইলো। কাঁধ জরিয়ে ভরসা দিয়ে আদুরে স্বরে সুধালো,
-” কিছু হয়নি বউ।এই তো সব ঠিক হয়ে যাবে এখনি। আমি ঠিক করে দেব সব।প্রমিস জান।”
মান্সার দিকে তাকিয়ে বলল,
“- কি হলে এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন ক্ষমা চাও তোমার ম্যাডামের কাছে।”
মান্সা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইলো। তার চোখ ছলছল করছে।তার মানে কি সত্যিই তাসফি….
মান্সা আর ভাবতে পারলো না।
কাঁপা কন্ঠে সুধালো,
“আমায় মাফ করে দিয়ো তাসফি। ”
নিস্তব্ধ তাসফির হাত আঁকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে চলল।
আশা আর সর্নিধি একপলক মান্সার দিকে চেয়ে তারাও চলল ওদের পিছু পিছু।
মান্সা ওখানেই ঠাস করে বসে পড়লো।
তবে কি বাবা এ বিষয় অবগত ছিল? তবে কেন তাকে জানালো না।মান্সা হাওমাও করে বসে কাঁদতে লাগলো।কিন্তু তার কান্না কারো কাছে পৌঁছালো না।
আর না কেউ দেখলো।
নিস্তব্ধ মাঠে জড় হওয়া সকলের সামনে তাসফির হাত ধরে টেনে এনে দাঁড় করালো।
নিস্তব্ধ সবার সামনে এনে তাসফি কে দাঁড় করালো।নিস্তব্ধ তাসফির পেছনে দাঁড়ালো। তাসফির দু হাত ধরে উঁচু করলো আরো একটু হাতের চাপ প্রয়োগ করে স্পর্শ গভীর করলো। বর্জ্যকন্ঠে বলল,
-” এই নাও তোমাদের সকলের সামনেই ফষ্টি নষ্টি করছি। নাও নাও দেখে নাও।এভাবেই তো ভিডিওতে তাসফির হাত গভীর ভাবে ধরে রেখেছিলাম তাইনা? এতটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলাম? তখন সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখন পেছনে।এটা কোন বড় ম্যাটার নয়। নাও নাও দেখ সবাই।লুক এট মি।
এভাবেই ফষ্টিনষ্টি করছিলাম।রাইট।
এতক্ষণে মাঠে হওয়া সকল গুঞ্জন থেকে কেমন গুমোট ভাব আঁকড়ে ধরলো সকলকে।সবাই স্তব্ধ বদনে সামনে তাকিয়ে আছে।
এমনটা তাদের মোটেও আশায় ছিল না।
সবাই একে অপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে চাইলো।
নিস্তব্ধ সকলের নিরবতা অবলোকন করে মুচকি হাঁসলো। তাসফিকে পুনরায় সযত্নে তার পাশে দাঁড় করিয়ে হাত আঁকড়ে ধরে থাকলো।
যেন ওই একমাত্র হাতই তাসফির ভরসা।এই হাত তাকে সব বিপদের থেকে মোকাবিলা করবে।তাকে রক্ষা করবে।
ভীরের মাঝ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো,
-” এসব কি করছেন।একজন শিক্ষক হয়ে সবার সামনে এখন নোংরামি করতে বাঁধছে না? এই আপনাদের মতো স্যারদের জন্য আজ সমাজটা রসাতলে যেতে বসেছে।”
নিস্তব্ধ মুচকি হেঁসে ঠাট্টা স্বরে বলল,
-” কি বলছো ভাই নিজের হালাল স্ত্রীর সঙ্গে নোংরামো কেন করবো।আরে এটাকে তো রোমান্স বলে জানো না বুঝি।”
নিস্তব্ধ’র কথার মানে বুঝতে সবাই একে অপরের দিকে হতভম্ব হয়ে চাইলো।
নিস্তব্ধ আবারো শক্ত কন্ঠে বলল,
-” আর হ্যাঁ এখানে আমি কোনো শিক্ষক বা ডাক্তার নই।আর নাতো তোমরা আমার শিক্ষার্থী। আমি এখানে কথা বলছি একজন সাধারণ মানুষ, একজন হাসবেন্ড হিসাবে ।যে তার স্ত্রীর সঙ্গে নোংরামো তকমা কিছুতেই সহ্য করবে না।আর তোমরাও আমার মতো সাধারণ মানুষ। তাই সাধারণ মানুষ সাধারণ মানুষের মাঝে এখন কোনো শিক্ষক – শিক্ষার্থী বলতে কিছু নেই। আশা করি বুঝাতে পেরেছি?”
বাসন্তী ততক্ষণে সেখানে এসে হাজির হয়েছে।
নিস্তব্ধ তাসফির কাঁধ হালকা ভাবে জরিয়ে বলল,
-” হ্যাঁ এই নিস্তব্ধ ইয়াসার বিবাহিত।আর এই যে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা তার একমাত্র অর্ধাঙ্গিনী।
আমরা বদ্ধ চেম্বারে কোনো নোংরামি করছিলাম না বরং যে আমাদের প্রাইভেট মোমেন্ট এর ভিডিও গুলো পাবলিক করেছে সেই ব্যক্তি অপরাধী।
আর বিয়ের কথা বানোয়াট মনে হলে এই যে কাবিন নামা চেক করে দেখতে পারো।তবুও বিশ্বাস না হলে তারিখ মিলিয়ে দেখতে পারো। ভাবতেই পারো আমার বাপ উকিল এগুলো বানানো সহজ ব্যাপার। আরে ভাই আইন এতটাও সোজা নয় যে তুমি দশ মিনিটে জাল কাগজ বানাবে। তবুও বিশ্বাস না হলে এক্সপার্ট কে দিয়ে সই করা কলমের কালি পরিক্ষা করিয়ে দেখতে পারো তা কতটা পুরনো। যে কাজি বিয়ে পরিয়েছে তাকেও ডেকে আনতে পারো।এ্যাজ ইওর উইস। বাট তাসফি মাই ওয়াইফ ইট উইল নট বি ফলস প্রুফ ইন এনি ওয়ে।”
সকলের চোখে বিস্ময়।
পুনরায় শুরু হলো গুঞ্জন।
-” এই তবে কি এই তাসফি নামের মেয়েটাই নিস্তব্ধ স্যারের বউ।”
-” ওও মাই গড।”
-” এই মেয়েটাই।”
-” ছিঃ আর আমরা কিনা শুধু শুধু মেয়েটাকে কত কথা শোনালাম।”
-” সত্যি ইশশ আসলেই আমরা বোকা।”
-” না বুঝে স্যারকে কত কথা বলে ফেললাম।”
-” মানুষ না বুঝে কেন যে এসব ভিডিও করে পাবলিক করে বুঝিনা।”
-” সত্যি পুরো কথা না জেনেই এরা সবাইকে নাস্তানাবুদ করে।”
-” ছিঃ, ছিঃ।”
নিস্তব্ধ সকলের দিকে তাকিয়ে কৌতুক করে হাঁসলো।
কিছুক্ষণ আগে যারাই দুর্নামের বন্যা বৈয়ে দিচ্ছিল।দেখ এখন তারাই আবার আফসোসের সমুদ্রে ভাসছে।হায় রে মানব জাতি।
তাসফি অপলক তাকিয়ে রইলো তার ডাক্তার সাহেবের মুখশ্রীর পানে।তার সুদর্শন ডাক্তার সাহেবের রাগী মুখখানা দেখতে বোধহয় আরো একটু বেশীই সুদর্শন লাগছে।কি অদ্ভুত তাসফির এতকিছুর মাঝেও এত কেন ভালো লাগছে।কেন ইচ্ছে করছে নিস্তব্ধ’র ধরে রাখা হাতখানা আর না ছাড়তে।উহু।কেন ছাড়বে সে।আজন্ম কাল ধরে রাখবে সে তার সুদর্শন, বুদ্ধিদীপ্ত ডাক্তার সাহেবের হাতখানা।ইহকালে,পরকালে সর্বকালেই সে এই হাতখানা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখবে।
নিস্তব্ধ সকলকে থামতে বলে উচ্চ কন্ঠে সুধালো,
-” তোমাদের শিক্ষক হিসেবে একটা উপদেশ দিতে চাই।জীবনে কখনো কোনো পদক্ষেপ যাচাই বাচাই না করে নেবে না। এখনকার অনলাইনের যুগে কে সত্যি বলল কে মিথ্যা বলল এটা বাছাই করা বড্ড মুশকিল।
আর তা যদি হয় আমাদের একদমই অজানা। তাহলে তো কথাই নেই।সমাজ আমাদের যেভাবে পারবে লুফে নিবে।তাই কারো দিকে আঙুল তোলার আগে সত্য মিথ্যা যাচাই করে নেবে।তোমাদের একটা কথার প্যাঁচে কত মানুষ কত সমস্যায় পরে তা তোমাদের ধারণারনওও বাইরে।
আজ যদি আমার অর্ধাঙ্গিনী দর্বল হতো।আমহ দুর্বল হতাম। তবে তো তোমাদের সামনে এই সত্য গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করতাম না। অপমানে ঘরের দ্বার দিয়ে বসে থাকতাম। আমার স্ত্রী প্রতিবাদ না করে কান্না করে বুক ভাসিয়ে ফেলতো।আর তোমরা? তোমরা কি করতে। একজনের মিথ্যা কে বুকে পুষে রেখে মিথ্যা কে সারাজীবন সত্য মেনে আসতে।
আর আমরা কি করতাম।সমাজের অসুস্থ মানসিক টর্চারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতাম।
তাই কখনো কাউকে মানসিক আঘাত করার আগে সত্য কিংবা মিথ্যা যাই হোক না কেন যাচাই করে নেবে।কখনো কখনো এই সত্য মিথ্যা একটা প্রাণের মূল্যের সমান ভাগীদার হয়ে দ্বারায়।যা আমরা, আমাদের সমাজের মানুষ তা কল্পনাও করতে পারিনা।
এই সত্য, মিথ্যার খেলা মানব জীবনেও তোমাদের অনেকটা কাজে দেবে প্রতিটা পদে পদে।নতুন করে মানুষ চিনবে। মাঝে মাঝে আমাদের সমাজের কিছু
অসুস্থ, বিকৃত মানুষ কে জানবে।
আর পরবর্তীতে অবশ্যই তাদের এরিয়ে চলবে।”
” আর একটু আগে ওখান থেকে কোন ছেলেরা যেন বলল না, সমাজের মানুষ কি শিখবে।আরে ভাই তোমরা কি শেখাচ্ছ সমাজ কে? নোংরামি, ফাতরামি, রাহাজানি। এই যে কদিন আগে একটা শিশু ধর্ষন হল সেখানে তো প্রতিবাদ করো না।এখানে সেখানে চুরি, ডাকাতি হচ্ছে। কেউ শত্রুতা করে কারো গলা কেঁটে ফেলছে।আশ্চর্য সমাজ আমাদের।অহেতুক কোন শিক্ষক, কোন সেলিব্রিটি কি করলো সেই খবর গুনতে থাকো সারাদিন।তোমাদের থেকে সমাজ কি শিখবে।
তোমাদের থেকে সমাজ যদি কিছু শিখতোই তবে দেশে এখন আর এত অন্যায়,অপরাধ হতো না।
বর্তমানে আবার সমাজ আছে নাকি।যে যার নিজের মতো চলে।আরে সমাজই যদি থাকতো তবে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের ছেলেরা ইভটিজিং করলে সমাজের আর পাঁচটা লোক এগিয়ে এসে মেয়েটাকে সাহায্য করতো। কই তা তো করে না। যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।অন্যের কথা ভাববার সময় আছে নাকি কারো। সকলে নিজের পকেট ভরতে ব্যস্ত।
সমাজ আছে কিন্তু সমাজের মানুষগুলোর মনে বর্তমানে একতা নেই।সাহস নেই।কেউ তো পশুর সমান। কেউ কেউ পশুর চাইতেও নিকৃষ্ট।
যেসব মানুষ জন ছোট্ট শিশুদের কে ধরে ধর্ষণ করতে পারে তারা আবার মানুষ হয় কেমন করে।
দেশে ধর্ম নিয়ে টানাটানি। আরে ভাই আমরা সবাই তো মানুষ। যার যার ধর্ম সে সে পালন করো না কেউ তো বাঁধা দিচ্ছে না।তবুও কেন এত হানাহানি।
এই মন্দির ভাংগে, মসজিদ ভাংগো।কেন ভাই।
কেন এত হিংসা, পরাবলম্বন।
আমাদের প্রিয় নবির শিক্ষা ভুলতে বসেছে মানুষ।
দিনে কে কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়ে?
কে কতবার আল্লাহকে সরণ করে।
সমাজের খোঁজ খবর রাখো তোমরা?
সারাদিন ইউটিউব ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকো আর প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ে বাপের অন্ন ধ্বংস করো।”
নিস্তব্ধ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সংবরণ করলো।
সবাই মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ভীর থেকে নিস্তব্ধ ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালো। নিলয় সাহেব গর্বে ছেলের পিঠ চাপড়ে বুক ফুলিয়ে সুধালেন,
-” বেস্ট অফ লাক মাই সান।আজ যেভাবে নিজের ভুল সুধরে নিজ ইগো পাশে রেখে অর্ধাঙ্গিনীর পাশে দাঁড়ালো, আই প্রাউড অফ ইউ মাই সান।আশা করি ভবিষ্যতে ও আজন্মকাল নিজ অর্ধাঙ্গিনীর হাত শক্ত করে ধরে রাখার চেষ্টা করবে।”
নিস্তব্ধ কন্ঠ নিচু করে নিলয় সাহেবের কানে কানে বলল,
-” ইগো নয় বাবা।ভালোবাসা। আমি তোমার বউমা কে ভালোবাসি বাবা।আজ ভালোবাসা শিকার করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।তুমি মা কে যতটা ভালোবাসো আমি আমার বউকে তোমার থেকেও বেশি পরিমাণ ভালোবাসি।”
ছেলের কথায় নিলয় সাহেব চোখ গরম করে চাইলেন।
একটা কথা বলে যদি সে শান্তি পায়।
ভালোবাসা শিকার করবে তবুও নিচু হবে না। মানে তাকে টেক্কা দিতেই হবে।
তবে সে যাই হোক টেক্কা তো দেবেই ছেলেটা কার দেখতে হবেনা হুহু।
ভাবনার মাঝেই ভদ্রলোক আনমনেই হাঁসতে লাগলো।
নিস্তব্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” মাথা ঠিক আছে তো তোমার? একা একা হাঁসছো কেন?”
ভদ্রলোক ছেলের কথায় থতমত খেল।
ছেলেকে পাত্তা না দিয়ে তাসফির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-” এই যে মামনী আর কোনো চিন্তা নেই বুঝেছো। ছেলে যখন মেনে নিয়েইছে।তখন আর ঝামেলা করো না মামনী।তোমার এক বাবা নেই তো কি হয়েছে আমি আরেক বাবা আছিনা। তোমার সঙ্গে তোমার বর মহাশয় সয়ং আছেন। আমার গোটা পরিবার আছে। আর কিসের চিন্তা তোমার বলো?”
বাসন্তী পেছন থেকে তাসফিকে জরিয়ে ধরে বলল,
-” আর এই যে আমি আছি।সব সময় আমার মিষ্টি বোনু প্লাস ভাবির সঙ্গে। ”
আজ নিস্তব্ধ’ ও নিজে খুব বড় ধরনের একটা শিক্ষা পেল।
বদনাম! একবার যা রটে যায় তা সুধরে নিলেও তার রেশ খানিকটা থেকেই যায়।এই যে আশে পাশে মানুষের ফিসফিস দেখে বোঝাই যাচ্ছে তা।
তাই তো জীবনে ইচ্ছে করে এমন কোনো কাজকে অপ্রয়োজনীয় ফেলে রাখতে নেই।কখনো কখনো ছোট্ট ছোট্ট বিষয় বস্তুকেও তুচ্ছ করতে নেই।
দেখবে তোমার অবহেলার কারণে একটা সময় সেই ঠিক তোমাকেই ভুগতে হবে।
নিস্তব্ধ চোয়াল শক্ত করে তাসফির কান্নারত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
নিস্তব্ধ এখন বিষয়টা খুব করে উপলব্ধি করতে পারছে,আসলে কিছু কিছু বিষয় আছে যা সময় থাকতে থাকতেই সকলকে অবগত করা উচিত। সময় ফেরিয়ে যাওয়ার পর তা সামনে আসলে ভীষণ করে ভুগতে হয়।ক্ষতি বৈ লাভ কিছুতেই হয় না।
অর্ধাঙ্গীনীর আধ ভেজা শুষ্ক চোখ মুখ দেখে নিস্তব্ধ’র বড্ড মায়া হলো।
তারা এখন বসে আছে গাড়িতে।
তাসফি কান্না করেই যাচ্ছে। হাজার প্রশ্নের পরেও তাসফি উত্তর দিচ্ছে না কি মুশকিল।
নিস্তব্ধ অসহায় চোখে চেয়ে বলল,
-” আহাঃ কি মুশকিল। এভাবে কান্না কেন করছো বউ সেটা তো বলবে নাকি? এভাবে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামালাম কিছু বলছোও না তুমি।”
তাসফি কোনো জবাব দিলো না।
নিস্তব্ধ পুনরায় কিছু বলতে নেবে তার আগেই তাসফি ঝাঁপিয়ে পড়লো তার কোলে।
আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলো।
নিস্তব্ধ ওও মুচকি হেঁসে প্রেয়সীকে আগলে নিলো।আদুরে চুমু খেল কপালে।
তাসফি ফিসফিস করে আমোদিত স্বরে বলল,
ধূসর রংধনু পর্ব ৪৪
-” থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ সো মাচ ডাক্তার সাহেব। ”
আলিঙ্গন রজনী ভাঙতে নিস্তব্ধ ফোন বেঁজে ওঠাই যথেষ্ট ছিল।
নিস্তব্ধ ফোন রিসিভ করলো।
-” হ্যাঁ হৃদয় বলো, কোনো ক্লু পেলে?”
ওপাশের ব্যক্তির কথা শুনে মুহুর্তেই নিস্তব্ধ’র হাসিখুশি চোখ মুখ পাল্টে রাগে লাল হয়ে উঠলো মুখশ্রী।
তাসফি নিজেও ভয় পেয়ে গেল।
-” কি হয়েছে ডাক্তার সাহেব?”
নিস্তব্ধ তাসফিকে নিজ বক্ষের সঙ্গে চেপে ধরে উচ্চারণ করলো,
-” আরাধ্য, আরাধ্য……