ধূসর রংধনু পর্ব ৪৭
মাহিরা ইসলাম
বাসন্তী নিচে এসে ভারী অবাক হলো।
এতরাতে প্রায় সবাই জাগ্রত। তার বাবা, মা, দাদু, নানি, আয়েশা ভাবী।
অনিমা বেগমের উদ্দেশ্যে বাসন্তী বলে উঠলো,
-” আমায় ডেকেছিলে মা?”
অনিমা বেগম মা ডানে বামে মাথা নাড়লো। অর্থাৎ না।
বাসন্তী হতবাক স্বরে সুধালো,
-” তবে ভাই যে বলল তুমি ডেকেছো?”
নিলয় সাহেব বলে উঠলেন,
-” তোমার মা তোমায় ডাকেনি।তোমার গুনধর ভাই
আমাদের সবাইকে বলে গেল তার রিসিপশনের ডেট ফিক্স করতে।যে কোনো দিন সে ফ্রি থাকবে।
সে বলে গেল।তোমরা সবাই মিলে আলোচনা করো আমি আপা কেও পাঠিয়ে দিচ্ছি ওয়েট। তোমার ভাইয়ের সে মতিগতি ঠিক হয়েছে এতেই আমরা খুশি।”
বাসন্তী বিরক্তিকর স্বরে বলল,
-” তবে তোমরা আলোচনা করো আমি যাচ্ছি। আর জাগতে ইচ্ছা হচ্ছে না।”
-” হ্যাঁ যাও।তোমার ভাইয়ের যে এতদিন পরে একটু বোধবুদ্ধি হয়েছে এতেই যথেষ্ট। ”
-” এতদিন পরে নয় বাবা।তোমার ছেলের মাথায় অনেক আগে থেকেই বোধবুদ্ধি উদয় হয়েছিল শুধু আমরাই বুঝিনি। বুঝেছো।”
বলে সে আবারো রুমে ফিরে গেলো।
নিলয় সাহেব অনিমা বেগম কে ঠেস দিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” যেমন মা তার তেমন ছেলে মেয়ে।একদম মায়ের মত রগচটা। ”
অনিমা বেগম রাগান্বিত দৃষ্টিতে চাইলেন স্বামীর পানে।
কটমট করে বলল,
-” এত বেশি কথা বলো না বুঝেছো। আগে ডেট ফিক্স করো।কত আত্মীয় স্বজন সে খেয়াল আছে? সবাইকে খবর দিতে হবে। নিস্তব্ধ’র ফুফুকে সবার আগে খবর দিবে। আফা ছাড়া আমি এত কাজ একা একা কিছুতেই সামলাতে পারবো না।”
তিনি আবারে শ্বশুরের পানে চেয়ে বললেন,
-” শুনুন বাবা আপনি আপা কে কিচ্ছুটি বলতে পারবেন না। আফা আসবে যতদিন খুশি থাকবে। আমার ছেলের রিসিপশনে আমি আফা কে পাশে চাই। আপনাদের নিজেদের মনোমালিন্য আপনাদের মাঝে রাখলেই খুশি হবো।”
ওসমান সাহেব অপর দিকে মুখ করে বিরবির করে বলল,
-” আমার মেয়ে আর আমার কথার তোয়াক্কা করলোই বা কবে। নিলয় তুই ভুল বুঝেছিস বাবা তোর ছেলে তার মায়ের মত হয়নি হয়েছে একদম ফুফুর ধাঁচের। সে এবারে এসে আবার কি লংকাকান্ড বাধায় কে জানে।”
বাসন্তী রুমে এসে ফাঁকা রুম দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল।
তবে এই ব্যাপার।এই কারণে সবাইকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে তাকেও পাঠানো হয়েছে।
তার ভাই সেয়ানার উপরে সেয়ানা।
বাসন্তী মুঁচকি হাঁসলো। যাক ভাই তার দাদার মতো বউ পাগলা হতে চলেছে।
হঠাউ বাসন্তীর ফোন বেঁজে উঠলো।মাহীনের কল।
বাসন্তী দুরুদুরু বুকে ফোন হাতে নিলো।আজ আবার ছেলেটা নিচে এসে দাঁড়িয়ে রয়নি তো।
-” কাল একটু আমাদের বাসায় আসতে পারবেন বাসন্তী? ”
-” কেন?”
-” একটু দরকার ছিল।মা অনেক দিন হলো আপনাকে আবারো দেখতে চাইছে।”
বাসন্তী কল কেটে দিলো।হ্যাঁ না কোনো উত্তর দিলো না সে।
নিচ থেকে ঘুমের তাগিদে রুমে আসলেও হঠাৎ করে তার ঘুম পরীরা যেন নিজেরাই ঘুমিয়ে গিয়েছে।
অন্ধকার রুমে থাইগ্লাস ভেদ করে বাইরে আলোর দিকে তাকিয়ে রইলো সে দীর্ঘক্ষণ।কিছু সম্পর্কের সমীকরণ মেলাতে সে ব্যর্থ।জীবনের মোড় আবার তাকে নতুন করে কোথায় গিয়ে ফেলে আসে কে জানে।পুনরায় কি তাকে নদীতে ঠাই না পেয়ে ভেঁসে
যেতে হবে প্রবল স্রোতে? কে জানে।
তাসফি অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে অন্য দিকে।
নিস্তব্ধ’র থেকে দুরত্ব বজায় রেখেছে একহাত।সতর্ক করেছে একদম যেন সে বর্ডার টপকানোর ধান্ধা না করে।
নিস্তব্ধ হাল ছেড়ে বলল,
-” উফফ! বড্ড জ্বালাতন করছো তুমি তাসফি।দূরে কেন গিয়েছো কাছে আসো।”
তাসফি মাথা নাড়লো।
নিস্তব্ধ রাগী স্বরে বলল,
-” আমি কিন্তু কাছে আসতে বলেছি তাসফি।”
তাসফি দ্বিগুণ রাগ দেখিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলল,
-” এই একদম আমাকে ধমকাবেন না।আপনার ধমকে আমি ভয় পাই না বুঝেছেন।”
-” তাই নাকি?”
-” হুম হুম।”
-” আচ্ছা। ”
নিস্তব্ধ এপাশ দিয়ে এসে ঠাস করে এপাশে শুয়ে পড়লো।
তাসফি টোম ফুলিয়ে বলল,
-” আপনি কথার খেলাপ করেছেন।”
-” উহু মোটেও না। আমি তো তোমার মাপা একহাত ক্রস করিনি। দেখ!”
-” আপনি একটা চিটিংবাজ। ”
-“ওকে বাবা ঠিক আছে। বলছি তো ।কাছে এসো। রাগ করছো কেন।এত দূর থেকে তো শুনতে পাবে না বউ।”
তাসফি মুখ ভেঙচি দিলো।
“ছাই। মিথ্যা কথা বলে আর তার সঙ্গে চিটিং করতে লোকটা ওস্তাদ। সবসময় হেঁয়ালি। ”
তাসফি আবারো ওপাশে ফিরতে নিলে নিস্তব্ধ সেই সুযোগ দিলো না।
নিস্তব্ধ সঙ্গে সঙ্গে তাসফিকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো। ললাটে চুম্বন করলো, পরপর অধরে।
হঠাৎ আক্রমণে তাসফি কিছুটা অস্থির হয়ে উঠলো।
নিস্তব্ধ ফিসফিস করে বলল,
-” সবসময় পালাই পালাই করো কেন বলো তো বউ।এত ছটফট কর বাঁধন আরো দৃঢ় হবে মনে রেখ। তাই শান্ত থাকলেই তোমার লাভ আর আমারও।বুঝেছো।”
তাসফির নাকে আলতো কামড় বসালো।
তাসফির পেটে দুষ্টু প্রজাপ্রতির দল উড়িতেই থাকলো।তাতের শিহরণে তাসফি অতিষ্ঠ।
একদিকে তার অসভ্য ডাক্তার সাহেব অপরদিকে দুষ্টু অনুভুতির মাতলামি।
কপোত-কপোতীর আলিঙ্গনে মাধ্যমেই কাটিয়ে দিলো পুরো একটি রাত।
দীর্ঘ রজনী কেটে গেল এক লহমায়।
পুর্ব দিগন্তে ঊদয় হলো নতুন দিবাকর।
ঊদয় অবশ্য হয়নি। ঊদয় তো হয়ে আছে সেই শত,সহস্র কোটি বছর যাবত। আদ্যত্বেরও কোনোদিন তার তেজস্বী উত্তপ্ত জ্যোতি নিভবে কিনা কে জানে। তাতো জানেন একমাত্র তারই সৃষ্টিকর্ত।
ফোনের রিংটোনের বিকট শব্দে তাসফি ঘুম ছুটে গেল। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো তার।
উফফ।তার এত স্বাদের ঘুৃমে ব্যাগড়া দিতে ইচ্ছে হলো কোন মানুষটার আশ্চর্য।
পিটপিট করে চোখ মেলে চাইলো সে।
ফোনটা পেল একহাত দূরে।
নিস্তব্ধ তাকে রুমে আনার মুহুর্তে ফোনটা তার হাতেই ছিল।
সারারুমে চোখ বুলিয়ে সে নিস্তব্ধ’র টিকিটাও পেল না।
বিয়ের আগের দেখা স্বপ্ন বুঝি তার আর পুরণ হবে না।
সে কি পারেনা তার ডাক্তার সাহেবের আগে ঘুম থেকে উঠতে। হে সৃষ্টিকর্তা তুমি কি পারো না এই তাসফিকে একটু আগে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতে।
ভেবেছিলো বিয়ের পর প্রতিদিন সকালে জামাইয়ের মুখ দেখে তার হৃদয়কে শীতল করবে।
কিন্তু তা আর বোধহয় ইহজনমে সম্ভব নয়।
তাসফি বাঁকা হাসলো। কেন সম্ভব নয়? অসম্ভব কে সম্ভব সে করবে।নিজের কোনো ইচ্ছাই তো সে অপূর্ণ থাকতে দেয় নি।ঠিক কৌশলে নিজের করে নিয়েছে।
এটাও পূরণ করে নেবে।নিস্তব্ধ ইয়াসারের মতো তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পূর্ণ তাগড়া পুরুষকে বোকা বানিয়ে ফেলল আর এতো সাধারণ বিষয়।
মুচকি হেঁসে চোখের সামনে এসে পরা একগুচ্ছ এলোমেলো কেশরাশি যত্নের সহিত গুঁজে নিলো সে নিজ কানের পিছে।
ফোনটা আবারো বেঁজে উঠলো।
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সে উঠে বসলো।
হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিজ মুঠোয় কব্জা করে নিলো।
আশার ফোন।ভ্রু কুঁচকালো তাসফি।
টাইমের দিকে নজর গেলে সে আঁতকে উঠলো।
ওও মাই গড দশটা বাজে।কেউ এসে তাকে ডাকলো পর্যন্ত না।সে এতক্ষণ কি করে ঘুমালো আশ্চর্য। দুবার মাথা ঝাঁকি দিলো সে।
দ্রুত কল কেটে দিয়ে ব্যাক করলো সে।
বেচারার ফোনের টাকা নষ্ট করতে চায় না।এমনিতেই চাচার দয়ায় ফোনটা পেয়েছে।
আশা ফোন রিসিভ করে তাসফিকে কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলো না।
উত্তেজিত কন্ঠে তরতর করে বলতে লাগলো,
-” দোস্ত তুই সত্যি সত্যিই অন্য কলেজে মাইগ্রেশন করে নিবি? দোস্ত তুই চলে গেলে আমি একা একা কলেজে পাঁচটা বছর কি করে পার করবো বল?
তুই ছাড়া আমি কি করে প্রাক্টিক্যাল ক্লাসগুলো করবো বল? আমি তো ভয়েই হার্ট অ্যাটাক করবো।
স্যারকে একটু বোঝা না প্লিজ।এতটা পাষান্ড হোস না।
এই তাসফি শুনছিস?”
তাসফি রাগান্বিত কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে সুধালো,
-” তুই আমায় কথাটা বলতে দিচ্ছিস টা কখন শুনি?আর হোয়াট? কিসব আবোল তাবোল ফালতু কথা বকছিস।অন্য কলেজে যাবো মানে কি?”
-” হ্যাঁ আমি তো তাই শুনলাম।”
-” ওয়েট ওয়েট।শুনেছিস মানে।আমি কিছু বুঝতে পারছি না খুলে বল পাখির বাসা। তোর বাসায় আমি আগুন লাগানো গাধা।
পুরো কথা না বলে বকর বকর করতে শুরু করেছিস। কান্না করতে শুরু করেছিস। বেয়াদব একটা। ”
আশা তাসফির ধমক খেয়ে চুপ করলো।কাচুমাচু মুখ করে কালকের ঘটনা খুলে বলল।
কাল নিস্তব্ধ তাসফিকে সুজনের সঙ্গে বাড়িতে পাঠিয়ে নিজে আরাধ্য কে সাথে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল।
সুজন তাসফিকে পৌঁছে দিয়ে সেও সেখানে গিয়ে পৌঁছায় তার খানিকক্ষণ পরেই।
আরাধ্য’র বাবা মা আর আরিফুল হক মান্সা কে নিয়ে উপস্থিত হন খানিক ক্ষন বাদেই।
নিস্তব্ধ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ফোন স্ক্রল করছিলো।
তারা সবাই আসতেই নিস্তব্ধ তাদের সকলকে সে বিনয়ের সহিত বসতে বলে।
এক ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করলো,
-” স্যার আজও কি বাইরে নোটিশ টানাবো?”
-” প্রয়োজন নেই।তোমরা তোমাদের কাজ করো। আমাদের একটা কর্ণারই যথেষ্ট। শুধু সংখ্যা মোতাবেক কফির কাপ পাঠিয়ে দিয়ো।যাও।”
আরাধ্য’র বাবা উৎকন্ঠা নিয়ে সুধালো,
-” কোনো সমস্যা স্যার? হঠাৎ এত আর্জেন্ট ডেকে পাঠালেন।আরাধ্য কোনো অন্যায় করেছে কি। কিন্তু ওও তো তেমন ছেলে নয় স্যার।”
নিস্তব্ধ শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
-” ওরকম ছেলে নয় বলে যে কখনো খারাপ কিছু করবে না এটা ভাবাটা নিতান্তই বোকামি। খারাপ প্ররচনায় পরে মানুষ নিজের স্বভাবের গন্ডি পেরিয়েও অনেক সময় অনেক কিছু করে বসে মিস্টার মির্জা।”
মির্জা সাহেব ছেলের দিকে অবাক হয়ে চাইলেন।কিছু বুঝতে পারছে না সে।
নিস্তব্ধ কথা বাড়ালো না। ওর ইশারায় সুজন দুটো ভিডিও তাদের সামনে বের করে দেখালো।
ভিডিও দুটো আপনার ছেলে পাবলিশ করেছে।ওটা তারই আইডি।
আর তাকে প্রথম ভিডিওটা দিয়ে সাহায্য করেছে আপনার সামনে বসা মেয়েটা।সে আরিফুল সাহেবেরই সন্তান।
মিথ্যা কিছু প্রবলেম ক্রিয়েট করে আমায় এবং আমার ওয়াইফ কে অসম্মান করেছে।
তার দুজনকেই ইতোমধ্যে শাস্তি অর্ধেক দেওয়া হয়েছে।
বাকিটা দিতেই আপনাদের এখানে ডাকা।
ভিডিওটা দেখে মিস্টার আর মিসেস মির্জা ভীষণ অস্বস্তি বোধকরলেন।
ছিঃ কি হিতকর কাহিনী।লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে। কি কুৎসিত ব্যাপার।
আরিফুল হক টেবিলের নিচ দিয়ে নিজের মেয়ের হাত রাগে দুঃখে এমন ভাবে চেপে ধরেছে মান্সার মনে হচ্ছে
তার হাতটা এবারে ভেঙেই যাবে।
চোখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে সে।
আরাধ্য’র দিকে চোখ তুলে তাকাতেও তার লজ্জা লাগছে।ইশশ ছেলেটা তার কৃতকর্মের জন্য মার খেল।
তবুও ভিডিওতে একটাবার সে মান্সার নাম উল্লেখ করেনি। সব দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছে।
অপরাধ বোধে এই প্রথম মান্সার উত্তপ্ত প্রতিশোধ পরায়ন হৃদয় কেঁপে উঠলো খানিকটা।
তার সকল দম্ভ তো মিশে গিয়েছে সেই কবেই।
তবুও কি করে পুনরায় ভুলটা করলো।
ওইযে কথায় আছে না কুকুরের লেজ কখনে সোজা হয় না।তার হয়েছিল সেই দশা।
পানিতে তার চোখ টইটম্বুর হয়ে গেল।কিন্তু তার এই অশ্রু সকলের নিকট এখন নাটক বৈ কিছুই নয় তা সে জানে।
আজ নিস্তব্ধ স্যার তাকে যা শাস্তি দেয় সে মাথা পেতে নেবে। অনেক তো হলো হতকারিতা, ধ্বংসলীলা। এখন সে শীতল হতে চায়।কুমতলব এটে কি হলো উল্টো তারই বিপদ বাড়লো বৈ কমলো না।
এবার একটু প্রাশ্চিত্ত করা যাক তবে।
নিস্তব্ধ আরিফুল হকের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আপনাকে বলেছিলাম আপনার মেয়ের পুনরায় একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটলে আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না।”
তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এতে মান্সা আরাধ্য দুজনেরই শিক্ষা হবে।
সকলেই তার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাইলো।
নিস্তব্ধ গম্ভীর কন্ঠে সুধালো,
-” আমি চাই দুজনের বিয়ে হবে।উহু তবে এখনই নয়।যোগ্য ডাক্তার হয়ে ওঠা পরে তবেই। মান্সা আরাধ্যকে যে অবহেলা করেছিল তার শাস্তি সে এর মাধ্যমেই পাবে। আপনার মেয়ের ছোট মস্তিষ্ক আরিফুল সাহেব। এখনো ব্রেন তার পরিপুষ্টটা লাভ করে নি।আপনার মেয়ে আমায় কথা দেবে সে ভবিষ্যতে কোনোদিন আর এমন কাজ করবে না।
আরাধ্যকে সে না চাইলেও মেনে নিবে।
আর আরাধ্য সে তো মান্সাকে পছন্দই করতো।কিন্তু আজ যে ধারণা হলো মান্সার প্রতি আরাধ্য’র তাতে তাদের মাঝের ফাটল ধরেছে খানিকটা। মান্সা নিজের চেষ্টায় আরাধ্য’র মনের সেই ফাটল মেটাবে।
আশা করি আপনারা আমার মতবিরোধ করবেন না?”
সকলে বিস্ময় নিয়ে নিস্তব্ধ’র পানে চাইলো।
সুজন নিজেও খানিকটা হকচকালো বন্ধুর এমন কথায়।
অতঃপর দুজনের বাবা,মা উভয় চুপ রইলো।
কি বলবে তারা। এ মেনে নেওয়া ছাড়া তো তাদের কোনো উপায় ওও নেই।ছেলেমেয়ের কৃতকর্মে তাদের মাথা হেট হয়ে আছে।
আরাধ্য’র বাবা মা দুজনেই একটু অসন্তুষ্ট। তারা কেউ ই ছেলের জন্য এমন বউ আশা করেননি কখনো।তাছাড়া ছেলে তাদের এখনো অনেকটা ছোট।
মিসেস মির্জা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মান্সা কে পরখ করতে লাগলো। ভদ্রমহিলা খানিকটা খুঁতখুঁতে কড়া মেজাজের।
মান্সা মাথা নিচু করে বসে আছে।
অস্বস্তি, লজ্জা, ভয়, সংকোচ সব তার মাঝে বাসা বেঁধেছে।
মান্সা কে পরখ করার মাঝেই ভদ্রমহিলা আরাধ্য’র গালে ঠাস করে চর বসিয়ে দিলেন।
ছেলে কে ইচ্ছে করছে তার এখনি পুঁতে ফেলতে।শেষ পর্যন্ত একটা মেয়ে মানুষের পাল্লায় পড়ে তার এতদিনের শিক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে দিলো ছেলেটা।
সবাই চমকে উঠলো।
নিস্তব্ধ কিছুই বললো না। তার যা বলার সে বলে দিয়েছে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার পূর্বে নিস্তব্ধ আরিফুল হকের উদ্দেশ্যে সুধালো,
-” ওও মিস্টার আরিফুল হক।আমি আমার ওয়াইফ কে আর আপনার কলেজে পড়াচ্ছি না।প্রশ্নই উঠে না।
তার মাইগ্রেশনের মাধ্যমে আমি ঠিক অন্য কলেজে ভর্তি করিয়ে নেব তাতে আমার বিন্দু পরিমাণ সময় ওও লাগবে না।
ওও হ্যাঁ আরেকটা কথা। আমি আর আপনার হসপিটালে থাকছিনা। শিক্ষকতা, চিকিৎসা কোনোটায়ই থাকছি না।”
এই পর্যায়ে আরিফুল হক হতবাক হয়ে তাকালেন নিস্তব্ধ’র দিকে।
নিস্তব্ধ এতটা কঠোর হবে সে ভাবতেই পারেননি।
নিস্তব্ধ আসার পর তার হসপিটাল কলেজ দুটোরই বেশ উন্নতি হয়েছে।
একমাত্র নিস্তব্ধ’র চতুর বুদ্ধিমত্তার জন্যই তা সম্ভব হয়েছে।
নিস্তব্ধ আর সুজন বেরিয়ে গেল তৎক্ষনাৎ।
আরিফুল হক পিছু ডাকলেও নিস্তব্ধ আর তা শোনার প্রযোজন বোধ করলো না।
আরাধ্যকে টানতে টানতে তার বাবা মা নিয়ে গেল।
আরিফুল হক মান্সার হাত শক্ত করে ধরে বসে রইলো খানিকক্ষণ সেখানেই।
আশার কাছে থেকে সব শুনে তাসফি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলো।জনাব তবে কাল এসব কান্ড ঘটিয়ে এসেছে।
সব মেনে নিতে পারলেও প্রিয় বান্ধবীকে ছাড়া অন্য কলেজে যাবে সেটা সে মেনে নিতে পারলো না।
নিস্তব্ধ’র সঙ্গে সে কথা বলবে।
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু তুই এসব কিছু জানলি কি করে হুম?”
আশা আমতাআমতা করলো।
এখন সত্যিটা সে বলবে কেমন করে।এগুলো তো সে সুজন স্যারের কাছে থেকে জানতে পেরেছে।তাসফিকে বলবে কেমন করে।
আশা মিছে বিরক্তি প্রকাশ করার চেষ্টা করে বলল,
-” বলেছে। আমি শুনেছি একজনের থেকে। তোর এত জেনে কাজ নেই। আমি শুধু জানি যে করেই হোক নিস্তব্ধ স্যার কে তুই বোঝাবি। তোকে ছাড়া আমি একা কিছুই করতে পারবো না দোস্ত প্লিজ।”
তাসফি ফোন কেটে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল।
সব কেমন যেন অগোছালো মনে হচ্ছে তাসফির কাছে।সব ঠিক হয়েও বারবার ঠিক হচ্ছে না।
তাসফি ফ্রেস হয়ে থমথমে মুখে নিচে নেমে এলো।
লোকটা কে নিচে পেলে সে নির্ঘাত আচ্ছা রকম করে কথা শুনিয়ে দেবে।
ধূসর রংধনু পর্ব ৪৬
কি পেয়েছে টা কি।তাসফির কাছে কিছু না জিজ্ঞেস করেই নিজের মত যা খুশি করে যাচ্ছে।
সে তো তা কিছুতেই হতে দেবে না।পরিচিত জায়গা ছেড়ে নতুন জায়গায় মানিয়ে নেওয়া কি এতই সোজা নাকি।
সে নাহয় গম্ভীর, খাটাশ লোক মানিয়ে নিতেই পারে।কিন্তু তাসফি পারবে কেমন করে।উফফ!