ধূসর রংধনু পর্ব ৪৯
মাহিরা ইসলাম
রাতের অন্ধকারে চারপাশ নিমজ্জিত। দূরের ট্যাম্পপোস্ট গুলো জ্বলে আছে দীর্ঘক্ষণ, সেই সন্ধ্যা থেকে। এটাই তো তাদের ধর্ম।
হসপিটাল থেকে সুজন বাড়ি পৌঁছে দোতালায় উঠে আগে ফ্রেস হয়ে নিলো।
ফোনে টুংটাং মেসেজের শব্দে অবাক হলো।
সুজন ভ্রু কুঁচকে ফোন হাতে নিলো।
-” সরি স্যার।আপনার সঙ্গে মিস বিহ্যাভ করার জন্য আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত।
হয়তো আর কখনো আপনার সঙ্গে ফাজলামো করা হবে না। আপনার ক্লাসের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা হবে না।কোনো অন্যায় করে থাকলে মাফ করে দেবেন।”
আশার হঠাৎ এমন মেসেজে সুজনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো।
-” সরি আমায় বলছো কেন? তোমার বয়ফেন্ডকে….?
সুজন কথা টুকু লিখেও সেন্ট না করে আবারো মুছে ফেলল। লিখলো,
-” তোমার কথা বুঝলাম না।আর কখনো ফাজলামো করবে না মানে?”
-” কি হয়েছে? ”
-” ক্লাস করবেনা কেন?”
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না। আশা অফলাইনে।
সুজনের মনে চিন্তারা বাসা বাঁধলো খানিক।
কি হলো হঠাৎ মেয়েটার।
চিন্তিত মুখেই সুজন নিচে নেমে সোফায় বসলো।
ছেলেকে দেখে রাহেলা বেগম এগিয়ে এলেন।
সুজনের পাশে বসে আদুরে স্বরে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” কখন এলি বাবা।”
-” মাত্রই।”
মায়ের সঙ্গে কথা বলছে আর বারবার সে ফোন দেখছে এই আশায় যে আশা তার মেসেজ দেখলো কিনা।
কথার এক পর্যায়ে রাহেলা বেগম বলে উঠলেন,
-“হ্যাঁ রে, ওইযে তোর ছাত্রী আশা নামের মেয়েটা কেমন আছে।কথা হয় তোর সাথে? দেখা সাক্ষাৎ হয়?”
সুজন ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে চেয়ে বলল,
-” কেন বলোতো।কথা হলে কি আর না হলে কি।”
-” না তা কেন।এ কেমন কথা। মেয়েটা ভারী মিষ্টি বুঝলি। আর একবার নিয়ে আসিস না বাড়িতে। ”
-” কেন। ওকে কেন বাড়িতে আনতে যাবো আমি মা। সেঁধে সেঁধে কেউ কখনো ঘরে ত্যালাপোকা ঢুকিয়েছে? কখনো দেখেছ। আর মিষ্টি জিনিজ বেশি ঘরে আনতে নেই মা পিঁপড়ায় ছেয়ে যাবে ঘর।আর মিষ্টি তুমি কি করে বুঝলে তুমি কি ওকে চেখে দেখেছো?”
-” শুনো ছেলের কথা। কেমন কথা বলছিস তুই।আমি তো ভাবসি মেয়েটা আরেকবার আসলে ওর চাচা,চাচির নম্বর খানা নেবো।”
সুজন রেগে গেল এই পর্যায়ে।
-” কি শুরু করেছ বলো তো মা। ওও আমার ছাত্রী কতবার বলবো তোমায়।তবুও এক কথা বার বার বলতে থাকো।এসব কথা আর আমায় বলবে না।”
সুজন রাগ করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
-” আরে কোথায় যাচ্ছিস বাবা
শোন না।”
ওগো শুনছো দেখ তোমার ছেলে এই রাতের বেলা আবার বেরিয়ে গেল।
এই ছেলেটাকে নিয়ে না আর পারিনা।
তাসফি আনমনা হয়ে টেবিলে বসে তখন বই ঘাটাঘাটি করছিলো।
নিস্তব্ধ গায়ে টি-শার্ট জড়াতে জড়াতে বলল,
-” থাকো।আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। ”
তাসফি ততক্ষণাৎ পিছু ঘুরে চাইলো। চোখ ছোট ছোট করে সুধালো
-” কোথায় যাচ্ছেন বাহিরে? এই দশটার সময় আপনি কেন বাহিরে যাচ্ছেন? ”
নিস্তব্ধ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল,
-“গোয়েন্দাগীরী করছো নাকি হুম?”
-” যা ভাবেন সেটাই। বলুন।”
-” যদি না বলি।”
তাসফি চেয়ার থেকে উঠে এসে নিস্তব্ধ সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে সুধালো,
-” কেন বলবেন না শুনি।বলতে আপনি বাঁধ্য বুঝেছেন।”
-” তাই নাকি।”
-” জ্বী আজ্ঞে। ”
-” উমম! বলবো না কি করবে?”
তাসফি রেগে গেল।
নিস্তব্ধকে পিছু থেকে টাইট করে জরিয়ে ধরে বলল,
-” বলবেন না।আমিও আপনায় যেতে দেব না দেখি কি করে যান আপনি।”
নিস্তব্ধ দুষ্টু হাসলো এটাই তো সে চাইছিলো।
-” তুমি দেখবে তোমার এই বাঁধন আমি এক মুহুর্তে ছুটিয়ে ফেলবো?”
তাসফি আরো রেগে গেল।দাঁতে দাঁতে চেপে বলল,
-” তার মানে আপনি তবুও বলবেন না? দেখি কি করে ছোটান।নিশ্চিত ওই অতৃপ্ত আত্মা আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছে।”
নিস্তব্ধ এক লহমায় নিজের কোমর থেকে তাসফির হাত ছুটিয়ে ফেলল।
তাসফি মুখ কাঁদো কাঁদো করে ফেলল।
ভাবলো এই বুঝি নিস্তব্ধ চলে যাবে।
কিন্তু না। তাসফির অবচেতন মনের ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে নিস্তব্ধ তাসফি হাত ধরা সমেতই সামনে ঘুরে তাসফি কোমর আঁকড়ে ধরে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
তাসফির মনে হলো সে ছোট একটা সুরঙ্গের ভিতরে ঢুকে পড়েছে যেখানে নড়াচড়া করার জো নেই।তার নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম নিস্তব্ধ ফিসফিস করে সুধালো,
-” এই তাসফির বাঁধন ছেড়ে নিস্তব্ধ ইয়াসারের ছুট পাওয়া যে বড্ড মুশকিল। নিস্তব্ধ কখনো ছোঁটার চেষ্টাই করবে না।বরং এভাবেই আপনাকে আরো দৃঢ় প্রত্যয়ে জরিয়ে বাঁধন মজবুত করবে।বুঝেছেন?”
এই মুহুর্তে তাসফির অনুভুতি বোঝানো মুশকিল।
-” আর শোনো বোকা মেয়ে আমি কোনো অতৃপ্ত আত্মা তাত্তার কাছে যাচ্ছি না।বউ থাকতে আত্মার কি প্রয়োজন বলোতো। মোড়ের মাথার দোকানে যাচ্ছি। সুজন ওরা আসছে। শুনে নিয়েছো? হ্যাপি?”
তাসফি লজ্জা পেল নিজের অদ্ভুত কর্মকান্ডে।
মাথা উঁচু করে চাইতেই।
মুহুর্তেই দু’জোড়া ওষ্ঠের আলিঙ্গন ঘটলো দৃঢ় প্রত্যয়ে।
তাসফি ভ্যাবাচ্যাকা খেল।
হঠাৎ নিস্তব্ধ এমন কিছু করে বসবে তার ভাবনায় ছিল না।
তাসফি নিস্তব্ধ’র ঠোঁটে কামড় বসালো।
তবুও নিস্তব্ধ ছাড়লো না।
তাসফির দম বন্ধ হবার জোগাড়। হাতে খামছি দিলো।
নিস্তব্ধ ছেড়ে দিলো এবারে।
ফিসফিস করে বলল,
-” সো সুইট টেস্ট বউ।”
বলেই পুনরায় তাসফির ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দ্রুত কদমে মৃদু হাঁসতে হাঁসতে হাতের সাহায্যে ঠোঁট মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেল।
-“উউউউ”
ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো তাসফি।
তাসফি পেছন থেকে রাগে ফেটে পারলো।
-” অসভ্য লোক।সব সময় শুধু ধান্ধা।ইতর,বদমাশ লোক।ছিঃ।তার ঠোঁট শেষ।রাক্ষস কত জোড়ে কামড় দিয়েছে।”
সে ও সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিয়ে নিবে হুহ।
নিস্তব্ধ দোকানে পৌঁছে দেখলো সুজন, মাহীন,সৃজন সবাই উপস্থিত। তারই বোধহয় দেরি হলো আসতে।
কিন্তু পরিবেশ কেমন নিরব শান্ত মনে হলো তার কাছে।
একেকজন একেক দিকে মুখ করে বসে আছে।
সুজন আকাশের দিকে মুখ করে সিগারেট ফুঁকে যাচ্ছে।
মাহীন মাথা নিচু করে সিগারেট ফুঁকে যাচ্ছে।
আর সৃজন সুজনের দিকে করুণ মুখ করে চেয়ে আছে।
নিস্তব্ধ পাঁচ মিনিট যাবত অপেক্ষা করলো।অথচ একজন বান্দার মুখ থেকে একটা শব্দ ওও বেরুলো না।
নিস্তব্ধ ঠাট্টা করে বলল,
-” কি ব্যাপার বলতো তোদের।এমন দেবদাস হলি কেমন করে। কথা নেই বার্তা নেই। দেবদাসের মতো সিগারেট ফুঁকে যাচ্ছিস। কাহিনি কি ভাই?”
সৃজন অসহায় মুখ করে বলল,
-” এই তুই এসেছিস ভাই এখন এদের দেখ।আমি আধা ঘন্টা যাবত দুজনের কাহিনি দেখতে দেখতে ক্লান্ত। তুই কিছু একটা কর।এরা সিগারেট খাচ্ছে তো আর বারবার ফোন দেখেই যাচ্ছে। মানেটা কি ভাই। ”
আমি বিরক্ত এদের কান্ডে।
নিস্তব্ধ এবারে দুজনের হাত টেনে দাঁড় করালো।
হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ছুড়ে ফেলল।
দোকানে মামার উদ্দেশ্যে বলল,
-” মামা কাঁচি থাকলে দিনতো। এদের মুখের অদৃশ্য টেম আগে কেটে নেই।কি হয়েছে আমিও দেখছি। ”
মাহীন বলল,
-” কিছু হয়নি ভাই।এমনিতেই ভালো লাগছে না।”
সুজন ওও একই কথা বলল,
সুজন দীর্ঘ হাই ছেড়ে নিস্তব্ধ’র কাঁধে হাত রেখে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
-” এই জীবন টাই প্যারাময় ভাই। বাড়িতে দেয় প্যারা কলেজে পাই প্যারা,ফোনে পাই প্যারা,শুধু প্যারা আর প্যারা বুঝলি তো।”
নিস্তব্ধ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
-” আচ্ছা বুঝলাম তা এই প্যারাটা দিচ্ছে কে শুনি। এই তোরা আবার প্রেম টেম করছিস নাতো আমাদের না জানিয়ে?”
সৃজন বলে উঠলো,
-” এক্সাক্টলি! আমি এই কথাটাই বলেতে চাইছিলাম।
ব্যাটারা ছেঁকা ট্যাকা খেয়ে দেখ বাঁকা হয়ে গেছে এখন এখানে এসে দেবদাস গিরি করছে।
হালাগো পশ্চাত বরাবর দিলে যদি মুখে মুখে কথা ফুটে।”
নিস্তব্ধ এবারে সিরিয়াল হয়ে বেঞ্চে বসলো
-” দেখ সত্যি করে বল তোদের কি হয়েছে।তোরা যদি এমন মনমড়া হয়ে থাকিস আমাদের ভালো লাগে বল?”
সৃজন ওও মাথা নাড়লো।
-” হ্যাঁ তাইতো।আমরা বন্ধু হয়েছি কি করতে তবে।
মনের কথা খুলে বল। যদি আমরা কোনো সল্যুশন দিতে পারি।”
মাহীন ভীষণ দোটানায় ভুগছে বাসন্তীর ব্যাপারটা নিস্তব্ধ বলবে কি বলবে না। নিস্তব্ধ কেমন রিয়েক্ট করবে।নিস্তব্ধ যদি রেগে যায়? তাদের বন্ধুতে ফাটল ধরে? কিন্তু একটা সময় না একটা সময় তার সবটা জানাতেই হবে। একদিকে বাসন্তী ওভাবে বেরিয়ে গেল ফোন তুলছে না। মা আর দরজা খুলে নি।
সব মিলিয়ে মাহীম প্রচন্ড পরিমান ডিস্টার্ব ফিল করছে।কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার।
সুজন বলল,-” আরে কিছুনা ভাই। তোরা শুধু শুধু টেনশন করছিস।আরে মা বিয়ের প্যারা দিচ্ছিলো।তাই রাগ করে বেরিয়ে এসেছি।”
নিস্তব্ধ হাই ছেড়ে বলল,
-” এবারে বিয়েটা করে ফেল।”
-” মেয়ে তো পাচ্ছি না। মেয়ে না পেলে বিয়েটা করবো কাকে।”
সৃজন বললো,
-” সালা দেশে কি মেয়ে মানুষের অভাব পরেছে? দেশে না পেলে তোর জন্য বিদেশ থেকে মেয়ে তুলো আনবো সমস্যা কোথায়?”
-” আমার বিয়ে নিয়ে পড়ে আছিস কেন মাহীনকে আগে দিয়ে দে।তারপর আমারটা। ”
মাহীন মুখ কাচুমাচু করলো।বন্ধুদের সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলল,
-” আমায় নিয়ে পরলি কেন। সুজনের জন্যই আগে মেয়ে খোঁজ। ”
এভাবে আরো খানিকক্ষণ কথা চালিয়ে গেল তারা।
মাহীন কথা বলে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করলো।
একটাসময় রাত বাড়লো। রাত অনেকটা হওয়ায় সুজন আর সৃজন বাড়ির পথে রওনা দিলো।
মাহীম বাইকে উঠতেই যাবে তখন নিস্তব্ধ মাহীনের কাঁধে হাত রেখে গম্ভীর স্বরে বলল,
-” দেখ মাহীন আমি তোকে জোড় করবো না। আমি জানি তুই কিছু একটা নিয়ে টেনশনে আছিস।তবে ভাই বা বন্ধু হিসাবে যদি কখনো মনে হয় আমাকে কারণটা বলা যায় তখনই বলিস।আমি অপেক্ষায় থাকবো।
নিস্তব্ধ চলে এলো। মাহীন অসহায় চোখে নিস্তব্ধ’র যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।
নিস্তব্ধ বাড়ি ফিরলো খানিকটা আনমনা হয়ে।
বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে রইলো সে খানিকক্ষণ।
প্রকৃতির মুক্ত বাতাস ভালোলাগছে উপভোগ করতে।
তাসফি পড়ছিলো।
নিস্তব্ধ আনমনা দেখে খানিকটা অবাক হলো।
সে নিজেও এগিয়ে গেল বেলকনির দিকে।
পাশে দাঁড়ালেও নিস্তব্ধ’র কোনো সাড়াশব্দ পেল না।
কি হলো হঠাৎ লোকটার।যাওয়ার সময় তো বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিল।
তাসফি তার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-” কি হয়েছে বলুন তো?”
-” নাথিং।”
-” মিথ্যা কথা বলছেন কেন। এই আপনি নাকি মিথ্যা কথা বলতে পছন্দ করেন না। তবে এই যে কদিন যাবত সমানে মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছেন, তাতে কিছু হচ্ছে না। ”
নিস্তব্ধ ছোট্ট ছোট্ট করে বলল,
-“সেটা প্রয়োজনের স্বার্থে।তুমি বেশি কথা বলো। ”
তাসফি ভেঙচি কাটলো।
নিস্তব্ধ তাসফির হাতধরে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করালো।পেছন থেকে আলতো করে জরিয়ে ধরলো।
তাসফি উৎকন্ঠা নিয়ে সুধালো,
-” কি হয়েছে বলুন তো।”
লোকটার হঠাৎ এমন হুটহাট কর্মকান্ডে মাঝে মাঝে সে লজ্জায় মিইয়ে যায়।তবুও চেষ্টা করে নিজেকে সামলে নেওয়ার
নিস্তব্ধ তাসফির কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে রেখে বলল,
” হুশ কথা নয়। এভাবেই ভালো লাগছে। ”
কিন্তু তাসফি তো থেমে যাওয়ার পাত্রী নয়।তাসফি খানিকক্ষণ থেমে আবারো বলল,
-” শুনুন?”
নিস্তব্ধ বিরক্তসূচক শব্দ করে সুধালো,
-” চুপ থাকতে বলেছিলাম তো।”
-” আরে শুনুন না ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কথা।”
নিস্তব্ধ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে চাইলো।
তাসফি বলল,
-” আজ আপাকে দেখলাম সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরতে।চোখমুখ কেমন শুকনো লাগছিলো জানেন।
আমি ডাকলে দরজা না খুলে বলল মাথা ব্যাথা করছে এখন কথা বলবে না ঘুমাবে। হঠাৎ কি হলো বলুন তো আপার? এমন তো আগে কখনো করেনি।”
তাসফির কথায় নিস্তব্ধ’র কাপালেও চিন্তার ভাজ দৃঢ় হলো।
রাত তখন অনেকটা।সুজনের চোখে ঘুমেরা ধরা দিচ্ছে না। সে বারবার ফোন চেক করছে।কিসের এত কৌতূহল তার।আশা মেসেজ নাই দেখতে পারে তাতে তার তো এত উত্তেজিত হওয়ার কারণ নেই।
সময় পরিবর্তনশীল।তার সঙ্গে সময়ের গতি ধাবমান।
মাঝে কেটে গেল আরো চারটে দিন। সবকিছু নিয়ম মাফিকই চলেছে।
তবে এই হাসিখুশি দিনগুলোর মাঝেও ছিল কিছু মানুষের কারো জন্য অপেক্ষা, কারো মনে সুপ্ত বেদনা।
তবুও সব মিলিয়ে সময় তো পার হবেই।সে কারো জন্য থেমে থাকবে না।
সুন্দর, স্নিগ্ধ একটি সকাল।
ধূসর রংধনু পর্ব ৪৮
সুজন ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে ফোন চেক করলো তবে আশা আজ চারদিন যাবত অনলাইনে আসে না।
চারদিনে সুজন তাকে কলেজের,ক্লাসের গন্ডিতেও দেখে নি।
সত্যিই মেয়েটা তার জীবন থেকে হারিয়ে গেল না তো?
কি হলো হঠাৎ মেয়েটার?
আজকের দিনটা বোধহয় সকলের জন্যই একটু বেশিই স্পেশাল।
তারই বার্তা দিচ্ছে প্রকৃতি।
উমম,তবে কেমন স্পেশাল?
দুঃখের নাকি সুখের?