ধূসর রংধনু পর্ব ৫৩

ধূসর রংধনু পর্ব ৫৩
মাহিরা ইসলাম

নিস্তব্ধ ঘুম থেকে উঠে তাসফিকে দেখতে পেল না।
আড়মোড়া ভেঙ্গে সে উঠে বসলো।
উদোম গায়ে পাশে রাখা টি-শার্ট জড়ালো।
ফ্রেস হয়ে এসে
হঠাৎ বালিশের পাশে চোখ যেতেই নিস্তব্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
সে জিনিসটা হাতে নিলো।
হলুদ খামে নীল চিরকুট? কোথা থেকে আসলো এটা? তাসফি রেখেছে কি।
অবাক চোখে চেয়ে নিস্তব্ধ ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করলো।
প্রিয় ডাক্তার সাহেব,

মনে আছে সেদিন ফার্মহাউসে আমায় প্রশ্ন করেছিলেন কেন এত জ্বালাতন করছি আপনাকে।নিশ্চয়ই মনে আছে, আজ তার উত্তর দেব।
বিয়ের প্রথম থেকে মানিনা, মানিনা করে আমার কানের পোকা নাড়িয়ে দিয়েছেন, সব সময় আমায় হেয়ও করে কথা বলেছেন, টিটকারি মেরেছেন।চাইতেও বাবার মৃত্যুর পরে আপনি আমার পাশে এসে বসেন নি। কীসের এত জড়তা ছিল আপনার।
আপনার এত কিছুর বদৌলতে একটু তো জ্বালাতন করাই যায়।তবে আপনি বেশ দ্বায়িত্ববান। মুখে হেয়ও করলেও স্ত্রীর ভরনপোষণের দ্বায়িত্ব ঠিকভাবেই পালন করেছেন।
আপনি হয় তো ভাবছেন আপনি আমায় নিজের জালে বন্দিনী করে ফেলেছেন,হাতের মুঠোয় কব্জা করে ফেলেছেন।উহু,আসলে ব্যাপারটা এখানে পুরোটাই উল্টো ঘটেছে।
তবে আপনি ভীষণ বুদ্ধিমান। ব্যাপারটা উল্টো করলে কি হয় আপনি নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন?
বুঝে থাকলে বলুন ঠিক কিনা?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আপনি আমার কব্জায় আসেন নি? আমি আপনাকে এই মুহুর্তে যা করতে বলবো আপনি কি তা করবেন না?
আমি যা বলবো তা কি শুনবেন না?
বিয়ের পরদিন সকালে যখন আমায় অর্ধ*নগ্ন দেখেছিলেন আপনি তো সেদিনই এই তাসফির মায়ায় পড়ে ছিলেন।সেটা তো আপনার চাউনিই বলে দিচ্ছিলো।
কিন্তু আপনি তো তা স্বীকার করবেন না।বুক ফাটবে তবু মুখ ফাটবে না আপনার।আপার কাছে গিয়ে শুধু শুধু কতগুলো ঢপ মারলেন। আপনার কথা শুনে আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে হচ্ছিলো আপনার মুখে সুপার গ্লু মেরে বন্ধ করে দেই অসহ্য।

এরপর আমায় ঘর থেকে বের করে দিলেন কেন দিয়েছিলেন সেটাও আমি বুঝেছিলাম পরে।
আপনি আমায় দেখে বারবার সিডিউস হচ্ছিলেন।
কিন্তু আপনি মানতে চাইছিলেন না যে একটা অষ্টাদশী পিচ্চি মেয়ের প্রতি আপনার কোনো অযাচিত মনোবাসনা সৃষ্টি হোক। আর আপনি কোনো ভুল করে ফেলেন।
আপনি বারবার মুখে বলেন মানিনা। কিন্তু মনে মনে ঠিকই মানতেন। কি সুন্দর করে সেদিন তৃপ্তি সাথে প্রতিবাদ করলেন, আমায় নিজের স্ত্রী বলে স্বীকৃতি দিলেন।আমি সেদিন বুঝেছিলাম আপনি আমার অসম্মান হোক তা কোনোভাবেই চাইবেন না। প্রতি নিয়ত বলতে থাকেন আমায় ভালো বাসেন না ভালোবাসেন।অথচ সেদিন আমায় ও বাড়িতে চুমু পর্যন্ত খেয়ে ফেললেন।কথায় কথায় আমার কোমর ধরা আপনার যেন স্বভাবে পরিনত হলো।
অথচ মুখে বলছেন ভালোবাসি না। এক নম্বরের অসহ্য লোক আপনি। আমার ইচ্ছে হতো কি মাঝে মাঝে জানেন, আপনার চুল গুলো টেনে ছিড়ে দিই। আপনার ওই মুখ আমি চির জীবনের জন্য আঠা দিয়ে বন্ধ করে দেই। যেন পরবর্তী কোনোদিন ও কথা বলতে না পারেন।

পরে ভাবলাম না থাক তাতে তো আমারই লস।
পরমুহূর্তে আপনি আমায় ভালোবাসার কথা বলবেন কেমন করে।
সব সময় মাথা উঁচু করে থাকেন মনে হয় আমার সামনে মাথা নিচু করলে আপনার জাত চলে যাবে।
বাবার মৃত্যুর পরে ভাবলাম না। এভাবে চলতে পারে না।এভাবে চলতে থাকলে আপনি আপনার মনের কথা কোনোদিন স্বীকার করবেব তো নাই শুধু শুধু আমায় অস্থিরতা নিয়ে থাকতে হবে। কি মুশকিল বলুন তো।এই আপনার জন্য,এই আপনার জন্য আজ আমার এত এত দুঃচিন্তা। সারাজীবন মুখে ওই একই বুলি আওড়াবেন।ভাবলাম যাক কাটা দিয়েই কাটা তোলা যাক তবে এবারে।আপনাকে আপনার মাধ্যমে হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।
ব্যস আপনাকে বলে দিলাম ডিভোর্সের কথা।আমি শিওর ছিলাম আপনি আমায় কখনোই ডিভোর্স দেবেন না। কি করে দেবে যে লোক প্রতি রাতে আমার ঘ্রাণ ব্যতীত ঘুমাতে পারে না আমার ওড়না খানা আঁকড়ে ধরে রাখে সে কি করে আমায় ডিভোর্স দিবে।

আপনি যখন আমার ডিভোর্স দেওয়া নিয়ে চোটপাট শুরু করলেন আমি তখন মুচকি হাঁসি।কি যে মজা লাগছিলো।কি করে বোঝায় আপনাকে।গেমটা খুবই সুন্দর ছিল।
আপনাকে অতিষ্ঠ করতে ভালোই লাগছিলো।
এতদিন আমায় জ্বালাতন করেছেন এবার দেখুন কেমন লাগে।
আপনাকে ডিভোর্স দেওয়া আমার কোনো ইচ্ছে ছিল না। তাছাড়া আমি তো জানতাম আপনি ডিভোর্স না দিলে আমার পক্ষে তো কখনো সম্ভবই নয় ডিভোর্স দেওয়া। আপনাকে আমি কেন ডিভোর্স দেব। যাকে ভালোবাসি তাকে কেন ছেড়ে দিবো। আমি শুধু চেয়ে ছিলাম আপনি আমায় অনুভব করুন।আমার শূন্যতাকে অনুভব করুন। আমায় আঁকড়ে ধরে রাখুন জোড় করে।।

মাঝে মাঝে আপনার উপর ভীষণ রাগ হতো।
এরপর আপনাকে ইগনোর করতে শুরু করলাম।
আমি চাইছিলাম আপনি নিজে থেকে কোনো একশন নিন। নিজের হক নিজে বুঝে নিন। নিজে আমানত কে নিজে সংরক্ষণ করে নিন। আমি কেন এত দিক সামলাতে যাবো বলুন।
ব্যস নিশানা কাজে লেগে গেল।
নিস্তব্ধ তার নিস্তব্ধতা পেরিয়ে আমার কাছে এলো।
আমায় হৃদয় উজার করে ভালোবাসা দিলো।

কিন্তু তখনও আপনি আমায় ভালোবাসার কথা বলেন নি। আপনার নত স্বীকার আমার ভালোলাগলেও আমি যে ভালোবাসি কথাটা আপনার মুখ থেকে শোনার জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষায় ছিলাম
কিন্তু ভালোবাসি বলেই যে শুধু ভালোবাসা বুঝাতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
কিন্তু আমি যখন আপনার চিরকুট খানা পেলাম।বিশ্বাস করুন জীবনের প্রথম আমার এতটা আনন্দ হয়েছিল। ইচ্ছে হচ্ছিলো আপনাকে গিয়ে জাপ্টে জরিয়ে ধরি।
কিন্তু আপনি তো বহুত সেয়ানা। ইচ্ছে করে আমায় জ্বালাতন করছিলেন লুকোচুরি খেলে।
সঙ্গে আনন্দ নিচ্ছিলেন।

বাই দ্যা ওয়ে আপনার বন্ধুরা ভীষণ ভালো মানুষ। আপনাকে নিয়ে তারা অনেক চিন্তা করে। আপনার মনের কথা বুঝতে পেরেই বোধহয় তারা আমার কাছে এসে ছিল আপনাকে ডিভোর্স না দেওয়ার আর্জি নিয়ে। আমিও সেদিন ওনাদের আমার প্লান বলেছিলাম।
আমি কিন্তু ওনাদের বলিনি কথাগুলো আপনাকে বলতে নিষেধ করতে। কিন্তু আফসোস ওরা আপনাকে বলেনি।
বিয়ের দিন যখন আমাকে মানিনা বলেছিলেন,তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে একদিন আমার নাম ছাড়া অন্য মেয়ের নাম মুখে নিতেও আপনার দ্বিধা হবে। আমি কি তা পেরেছি ডাক্তার সাহেব?
আপনাকে কি নিজের কব্জায় করতে ব্যর্থ হয়েছি?
ইতি
আপনার প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী
নিস্তব্ধ চিঠি উল্টালো।অপর পাশে লেখা,

“আপার রুমে আছি, আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।”
নিস্তব্ধ চিঠি হাতে এক দৌড়ে বাসন্তীর রুমে এসে পৌঁছালো।তাসফিকে রুমের মাঝে দেখে এক দৌঁড়ে গিয়ে তার কোমর জাপ্টে ধরে গোলগোল ঘোরাতে লাগলো।
-” কি করছেন, পরে যাবো তো। নামান।”
নিস্তব্ধ তাকে নামিয়েই বিছানার সঙ্গে চেপে ধরলো।
অজস্র চুমুতে একাকার করে দিল তাসফির গাল, মুখ, ঠোঁট।
তাসফি বাকরুদ্ধ। এই করতে সে ডেকেছিলো লোকটাকে।হায় কপাল। কোনোদিন লোকটা সুধরাবে না।
নিস্তব্ধ তাকে ছাড়তেই তাসফি হাঁপাতে হাঁপাতে নিস্তব্ধ’র পানে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
-” এটা আপনার উত্তর? এই জন্য ডেকেছি আমি আপনাকে? অসভ্য মানব। অসহ্য। ছাড়ুন।”
নিস্তব্ধ তাসফিকে পেছন থেকে জরিয়ে রেখে ফিসফিস করে বলল,
” আমার উত্তরের অপেক্ষা রাখেনা বউ। তুমি ঠিক। এই নিস্তব্ধ ইয়াসার আজন্মকালের জন্য তার অর্ধাঙ্গিনীর নিকট বন্দিনী। ”

“যা বলেছো সবই ঠিক আছে বউ।কিন্তু একটা বিষয় তুমি জানো না।
তাসফি ভ্রু কুঁচকে চাইলো।
নিস্তব্ধ বলল,
-” তা নাহয় অজানাই থেকে যাক এই মানবজীবনে সব যে জানতে নেই। যা জানছো তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো।এই পৃথিবীর সব রহস্য কেই বা সম্পূর্ণ জানে।
তাসফি ভেঙচি কাটলো।
নিস্তব্ধ সঙ্গে সঙ্গে তার ঠোঁটে কামড় বসালো।
তাসফি মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।
-” তোমায় বলেছিলাম আমার সামনে মুখ ভেঙাবে না। পরে অঘটন ঘটলে আমার দোষ নেই।”
“আচ্ছা কথাগুলো চিঠিতে না বলে সামনাসামনি মুখে বললে তো আমার সুবিধা হতো।”
“হ্যাঁ সেটা তো আমি জানি আপনার সুবিধা হতো।সামনা সামনি বলতে গেলে কথা আর শেষ করা হয়ে উঠতো না, আপনি কথার মাঝে একশ বার বা’হাত ঢুকাতেন সেটা আমি খুব ভালো করেই জানতাম।”
নিস্তব্ধ দাঁত মাথা চুলকে মেকি হাঁসলো।

” উফপ অসহ্য ছাড়ুন। ”
নিস্তব্ধ চুমু খেতে নিতেই হঠাৎ রুমে ফুফুর ঘটলো ।
ফুফু ওদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।
তাসফি লাফ দিয়ে সরে গেল ততক্ষণাৎ।
ফুফি চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
-” তোদের বুদ্ধিসুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে নাকি। দিন দিন বাপের মতো নির্লজ্জ হচ্ছিস।
নিজেদের রুম ছেড়ে অন্যের রুমে কি করছিস। আশ্চর্য। ”
নিস্তব্ধ মাথা চুলকে বোকা হাসলো।
ফুফু যেতেই নিস্তব্ধ তাসফিকে ফিসফিস করে বলল,
” তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে বউ। রেডি হও আমরা বের হবো।”
তাসফি শুধু চোখ পিটপিট করে চাইলো।

সুজন দের বাড়িতে এই মুহুর্তে তাসফি সহ, নিস্তব্ধ, সৃজন, মাহীন, আরশী আয়ানা সবাই উপস্থিত।
তাসফি আর নিস্তব্ধ কে চিনলেও বাকি সবাই আশার নিকট অপরিচিত।
সকলের চাউনি দেখে আশা লজ্জায় মিউয়ে যাচ্ছে।
তাসফি এসেই দৌঁড়ে গিয়ে আশাকে জরিয়ে ধরলো।
কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
” তুই কি কান্ড ঘটিয়েছিস রে আমার পাখির বাসা। তলে তলে টেম্পু চালিয়ে আমার দেওর কে বিয়ে পর্যন্ত করে নিলে আর আমরা টু শব্দটি পেলাম না।”
আশা অসহায় চোখে চেয়ে বলল,

” বিশ্বাস কর বুনু, সব হঠাৎ ঘটেছে।ভবিষ্যতের কাহিনি সম্পর্কে আমি নিজেও অবগত ছিলাম না।”
তাসফি ভাব নিয়ে বলল,
” ঠিক আছে করলাম তোকে বিশ্বাস। যাহ।”
সৃজন বলল,
” কি করেছিস দোস্ত। তুই তো কামাল করে দিয়েছিস।সুন্দরী বউ একদম আমাদের না জানিয়েই বিয়ে করে নিয়ে এলি।বাহ বাহ।”
আশা সকলের কথায় লজ্জায় মিউয়ে যাচ্ছে।
আর দেখ তার বর মহাশয় কেমন দাঁত কেলিয়ে হাঁসছে। অসভ্য পুরুষ মানুষ।
সবাই চলে যেতেই আশা সুজনের দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে সুধালো,
” আপনার বন্ধুরা সবাই আসবে আমায় তো বলেন নি আগে।”
সুজন নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
” তোমায় কেন বলতে হবে।”
আশা চোখ ছোট্ট ছোট্ট করে চেয়ে রইলো।
আশ্চর্য তাকে দেখতে আসলো সবাই আর তাকে জানাবে না, ইশশ, সে একটু পরিপাটি হয়ে থাকতে পারতো।

বিকালবেলা।
মাহীন নিজের রুমে বসে চিন্তায় মগ্ন।
তার মনে হয় না বাসন্তী নিজে থেকে আর তাকে লায় দেবে।এতদিন যাবত ফোন দিয়ে যাচ্ছে অথচ পাষান্ড মানবী একটিবার তার কল রিসিভ করেনি।মাহীনের ভারাক্রান্ত হৃদয় হতাশ হয়।এবারে যা করার তার নিজেকেই করতে হবে হয়তো।মনের মানুষটিকে নিজের করে পেতে হলে তো একটু কষ্ট করতেই হবে।
এই ধরণীতে কষ্ট ব্যতীত সুখ খোঁজার চেষ্টা করা বৃথা।
আবেদা বেগম তার সঙ্গে কথা বলেন না প্রয়োজন ব্যতীত। বাবা কে হারিয়েছে চিরতরে সে চায় না আর তার মাকে কষ্ট দিতে।
মাহীন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।ধীর কদমে এগিয়ে গেল মায়ের রুমের দিকে।
আবেদা বেগম বিছানায় বসে তছবি জবছিলেন।
মাহীন গিয়ে মায়ের পা জরিয়ে ধরলো।
তীব্র আকুতি মিশিয়ে বলল।
” একটু বোঝার চেষ্টা করো মা।তুমি আর পারুল ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? তুমি এমন করে থাকলে তোমার ছেলে কি ভালো থাকে বলো।

বাসন্তীকে ভালোবাসি আমি মা। তাকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো বলো?তুমি, পারুল যেমন আমার কাছে ইম্পর্টেন্ট, বাসন্তী সেও আমার কাছে তার চেয়ে কিছুটা কম নয়।
প্লিজ মা তুমি বোঝার চেষ্টা করো।তুমি কি কোনো ভাবে ওর ডিভোর্সের বিষয়টা নিয়ে….?”
আবেদা বেগম ছেলের গালে ঠাস করে চর বসিয়ে দিলেন।
মাহীন হতবাক হয়ে মায়ের পানে চাইলো।
” এই চিনলে বুঝি তুমি মাকে।এতটা নিম্ন মানসিকতার
মনে হয় তোমার আমাকে।
তুমি যাকে ভালোবাসো বিয়ে করো তাতে আমার তো কোনো সমস্যা নেই। আমি আর বাঁচাবোই বা কত দিন।কখন উপর ওয়ালার ডাক পরে যায় কে জানে।
বিয়ের পর সারা জীবন সংসার তো করবে তুমি।
আর কখনো আমায় দেখেছ মেয়েটাকে হেয়ও করতে? হুম বল।
কোনো কিছুতে আমার সমস্যা নেই।
কিন্তু তুই কেন আমার থেকে সব লুকাবি বল।
তার উপর নাটক করতে বলেছিস মেয়েটাকে।এর মাধ্যমে মেয়েটার মনে কতটা কষ্ট জমা হলো তুই বুঝেছিস তা? মেয়েটা সেদিন কষ্টে চলে গেল।”

মাহীনের চোখ চকচক করে উঠলো।
এত কিছুর পরেও মা বাসন্তীর কষ্টের কথা ভাবছে।
উত্তেজিত মাহীন মাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
চিৎকার করে বলল,
“থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ মা। আমার মিষ্টি মা। আর কখনো কিছু লুকাবো না তোমার থেকে মা।প্রমিস।
আমি চাই আগে নিস্তব্ধ কে বলতে ও কি বলে দেখার পর আমি, তুমি, পারুল বাসন্তীর বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যাব
আমার বিশ্বাস কেউ আপত্তি করবেনা।
তুমি যাবে তো মা?”
মা ছেলের এতদিনের অভিমানের দীর্ঘ পাল্লায় ভাঁটা পরলো।
আবেদা বেগম পরম আবেশে ছেলের মাথায় হাত বুলায়। ভদ্রমহিলার ছেলের কথায় চিত্ত চঞ্চল হয়।

” যাবো বাবা। অবশ্যই যাবো।আমার ছেলে পছন্দ করলে দরকার হয় স্বর্গ থেকে অপসরী ও নিয়ে আসবো।”
পারুল ঘরে ঢুকে অভিমানী কন্ঠে বলল,
” মা ছেলে তোমরা আমে দুধে মিশে গেলে। আর এতদিন আমি বেচারা যে তোমাদের জন্য খেটে গেলাম আমার আদর কোথায় শুনি?”
” আয় বুড়ি তোর আবার আদর লাগে নাকি। তোকে তো কুড়িয়ে পেয়েছিলাম বুঝিস না।”
” ভাইয়ায়া, ভালো হবে না।”
পারুল এসে ওপর পাশ দিয়ে মাকে জরিয়ে ধরলো।
তিন জনেই হেঁসে ফেলল। এই তো তাদের ভরা সংসার বাসন্তী এলেই পরিপূর্ণ হবে।

সন্ধ্যার পূর্বেই গ্রাম থেকে পুনরায় সকলে ফিরে এলো ওসমান ভিলায়।
আজ ও থাকার কথা ছিল কিন্তু ফুফু আসার খবর শোনার পর আর সেটা সম্ভব হলো না।
সবার সঙ্গে ফুফুর আরেক জোট কথা-কাটাকাটি হলো আরামছে। ফুফু সবার বিরুদ্ধে কথা বললেও অনিমা বেগম, আর তাসফি কে কিছুই বললেন না।
দুজনকেই তার খানিকটা পছন্দ হলো কিনা।
ফুফুর কথার বিপরীতে, বাপ,ভাই আর ভাতিজা শুধু অসহায় মুখ করে চেয়ে থেকেছে। আর কিই বা করার।
পরদিন, নিস্তব্ধ নিজের চেম্বারে বসেছিল।
সেখানে হঠাৎ আগমন ঘটলো মাহীনের।
নিস্তব্ধ ভ্রু উচিয়ে তার পানে চাইলো।

” কি ব্যাপার বলতো? হঠাৎ আমার দ্বারে তুই। মহিলাদের দাঁত ওঠানো বাদ দিয়ে আমার দ্বার গোড়ায় তোর কি কাজ শুনি?”
মাহীন মাথা চুলকে বোকা হেঁসে বলল,
” কিছুনা ওই আরকী।এই যে তোর জন্য একটা চিঠি এনেছিলাম বুঝলি।”
নিস্তব্ধ বিস্ময় নিয়ে সুধালো,
” আশ্চর্য আমি কি তোর প্রেমিকা লাগি যে তুই আমায় চিঠিপত্র দিচ্ছিস।মাথা ঠিক আছে তো।”

ধূসর রংধনু পর্ব ৫২

” শোন না ভাই রাগ করছিস কেন।আমি চলে গেলে খুলে পড়িস কেমন।আমি যাই হ্যাঁ, আমি যাওয়ার পরে মনোযোগ দিয়ে পড়িস। উত্তর বা সিদ্ধান্ত যেটাই হোক সেটা আমার মতো চিঠি লিখেও জানাতে পারিস আবার মেসেজ ওও করতে পারিস কেমন। আমি কিছু মনে করবো না। আসছি।”
নিস্তব্ধ অবাক চোখে মাহীনের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৫৪