ধূসর রংধনু পর্ব ৭
মাহিরা ইসলাম
সুদর্শন, অপরূপ সৌন্দর্য ধারী পুরুষের পদচারণ ক্লাসরুমে পরতেই সঙ্গে সঙ্গে পুরো রুমজুড়ে এতক্ষণের সকল গুঞ্জনে ভাটা পড়লো যেন মুহুর্তেই।
লম্বা চওড়া, ফর্সা সুদর্শন পুরুষটির ঠোঁটের কোণে বিরাজমান এক টুকরো গাম্ভীর্যতার ছাপ। তার গম্ভীর ভাবভঙ্গিতেই যেন মেয়েরা অধিক আকর্ষিত হয়। তবে হাসলে পুরুষটিকে কেমন লাগবে হয়তো সেই চিন্তাই রমণীদের মাথায়। আকর্ষিত হওয়ারই কথা। কারণ এই পর্যন্ত এই মেডিকেল কলেজে সুদর্শন স্যারদের দেখা পেয়েছে তারা খুব কমই। ওই হাতে গোনা দু থেকে তিনজন।
সুদর্শন গম্ভীরমুখো পুরুষটি এনাটমির বই হাতে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত লেকচারের স্থানে গিয়ে দাঁড়ালো।
তাসফি বিস্ময়ে এখনো বিমূঢ় হয়ে বসে আছে।
পাশ থেকে আশা শত কথা বলে গেলেও একটাও তার কর্ণগোচর হলো না বোধহয়।
তার মস্তিষ্ক জুরে তো এখন শুধু ওই মানবের বাস।
সর্বনাশ করেছে। এই লোক বাড়ি ফিরলো কবে। আর ফিরেই কি এই মেডিকেল কলেজে জয়েন্ট করলো?তাসফির দেখতে কোথাও ভুল হচ্ছে না তো।উফফ পাগল হয়ে যাবে সে। যদি ফিরেই থাকে তাসফি কেন তাকে দেখলোনা। আরর কেউ তো তাকে জানায় ওও নি যে এই লোক আসবে।
তাহলে কি এই অহংকারী পুরুষ কোনো হস্টেলে উঠলো। তাসফি আশা কে ফিসফিস করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” এই পাখির বাঁসা আমায় একটা চিমঠি কাটতো।”
আশা ঠোট উল্টে বলল,
” কেন?”
” আরে ভাই যা বলছি করনা।”
আশা নিরুপায় হয়ে চিমটি কাটতেই তাসফি উউউ শব্দ করে উঠলো।
ওও মাই গড এএ তো সত্যি নিস্তব্ধ ইয়াসার সয়ং তার সামনে। কাম সারছে। লোকটা এক মাসেই বিদেশ থেকে চলে এলো।তাসফির চিন্তায় মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তার সব জিনিস পত্র,মেয়েলি বস্তু গুলো এই লোকের রুমে। যদি দেখে ফেলে কি কান্ড করবে খোদা মালুম। ইয়া খোদা। এই ক্লাস শেষেই তাকে বাড়ি যেতে হবে দ্রুত। সব সরিয়ে ফেলতে হবে তার এক নিমিষেই। আর রক্ষে নেই।তাসফি কেন যে এত আরাম আয়েশ করতে গেলি এখন ঠেলা সামলা। বুড়ি ঠিকই বলেছিল।
তাছাড়া এই লোক যদি এসেই থাকে তাসফি সকালে তো তার রুমে গেল কই তখন তো রুমে দেখা গেল না তাকে। সত্যিই কি হস্টেলে উঠেছে?
আরে ধূর ওতো বড় একখানা বাড়ি ছেড়ে সে হস্টেলে কেন উঠবে।
শত ভাবনা চিন্তার মাঝেই তাসফি কানে ভেসে এলো পুরুষটির গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর,
” হাই, আই’এম ডাঃ নিস্তব্ধ ইয়াসার। এন্ড ইওর’স নিউ লেকচারার।সো এভরিওয়ান প্লিজ এডজাস্ট উইথ মি”
অতঃপর কারো দিকে না তাকি নিস্তব্ধ নিজের মতো লেকচার দিতে শুরু করলো।
তাসফি নিচু হয়ে বসে আছে। তাকে আবার না দেখে ফেলে।
আশা রাগড় করে বললো,,
— কি ব্যাপার বলতো তোর তাসফি। আমাকে এত কথা শুনিয়ে এখন নিজেই এমন বিড়ালের মত মিউ মিউ করছিস কেন আজব।
— চুপ থাক পাখির বাসা। তুই বুঝবিনা বইন। বুঝলেতো হতোই।
আশা তাসফির ভাব ভঙ্গি কিছু না বুঝে শুধু হতাশ নয়নে তাকিয়ে রইলো।
নিস্তব্ধ লেকচার শেষে নিজের মতো করে বেরিয়েও গেল কারো দিকে না তাকিয়ে।
তাসফি যেন হাফ ছেড়ে বা্ঁচলো যাক বাবা তাকে তো দেখেনি।
নিস্তব্ধ ক্লাসরুম ত্যাগ করতেই তাসফি ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে এলো। সময় নেই তার হাতে। তাড়াহুড়ো করে বাসায় ফিরলো সে।কি আশ্চর্য তার সারাটা দিনই কি তাড়াহুড়ো করে যাবে নাকি আজ। এখন আবার ওই লোকটার রুম থেকে সবকিছু তাড়াহুড়ো করে সরাতে হবে।উফপ!
তাসফি নিজের ব্যাগ রেখে কোনো রকমে ফ্রেস হয়ে লেগে গেল জিনিসপত্র গোছাতে।
অথচ বোকা মেয়েটা জানেই না নিস্তব্ধ অনেক আগেই এগুলো অবলোকন করে গেছে।
কাল রাতে যখন নিস্তব্ধ প্রথম নিজের রুমের ঢুকে। চারপাশের একটা মেয়েলি মিষ্টি গন্ধে তার মন পুলকিত হয়।সে ওয়াশরুমে ঢুকতেই দেখতে পায়,বেসিনে নতুন ব্রাশ,পেস্ট, স্যাম্পু, মেয়েলি সব জিনিস পত্র। আশ্চর্যজনক ভাবে এসব দেখে সে হতভম্ব হয়ে যায়। বিরক্তিতে তার চোখমুখ কুঁচকে যায় আপনা আপনি।
তোয়ালে রাখার স্টানে তাকিয়ে সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়
, নিজের নামের মতোই তার কন্ঠনালী নিস্তব্ধ হয়ে যায়।রাগ করবে না দেখাবে সে নিজেই বুঝে পায় না।
এসব মেয়েলি বস্ত তার ওয়াশরুমে ছড়ানো ছেটানো। আসতাগফিরুল্লাহ। মনে হচ্ছে কয়েকদিন পর এখানে দোকান দেওয়া হবে আশ্চর্য। ওই পুঁচকে মেয়ে এসব করেছে টা কি। রাগে তার চোখ লাল হয়ে আসছে।
রুম থেকে বের করে দেওয়ার পরেও এই অপকর্ম গুলো ঠিক করেছে ওই পুঁচকে মেয়েটা।
কোনো রকমে নিস্তব্ধ ফ্রেস হয়ে ওয়ারড্রবের প্রথম ড্রয়ার খুলে সে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে।পুরো ড্রয়ার জুরে মেয়েদের জামা কাপড়ে ভর্তি করা। নিচের ড্রয়ার খুলে দেখে সেটা তেও তাই।
অবশেষে পরবর্তী ড্রয়ারে তার জামা কাপড় সাইড করে রাখা পেল।
তীব্র অনুভুতিতে সে কি বিয়্যাক্ট করবে সেটাই ভুলে গেছে। এই মেয়ে তার জীবনে আসবে বলেই বোধহয় বাবা তার নাম নিস্তব্ধ রেখেছিলো।
কোনো রকমে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো সে।
তার এই মুহুর্তে রেস্ট দরকার ভীষণ ঘুম দরকার তার ।
দীর্ঘ ঘন্টা জার্নিতে তার বেহাল অবস্থা। সঙ্গে রুমে পরিস্থিতিতে তার অবস্থা আরো মারাত্মক।
অবশেষে বিছানায় গেল নিস্তব্ধ । তবে ঠিকমতো ঘুমাতে পারলো পারলোই বা কোথায়।
পুরো বিছানা জুড়ে মেয়েলি মিষ্টি সুভাসের ছড়াছড়ি।
ভীষণ মন কাড়া। খারাপ নয়। মন মাতানো।
তার বুঝতে বাকি রইলোনা। ওই মেয়ে তার বিছানাটাও দখল করে নিয়েছে।
বালিশের পাশ হাতিয়ে নিস্তব্ধ একটা ওড়না পেলো।
নাকে নিয়ে শ্বাস নিতেই তার মন প্রাণ যেন কেমন মন মাতানো দোলায় হারিয়ে গেল।
তার রুমে এইসব কর্ম করা শুধু মাত্র ওই একটা মেয়ের পক্ষেই সম্ভব। আর সে হচ্ছে তার একমাত্র বউ। যাকে সে মুখে অস্বীকার করেছে।
অতঃপর শত চেষ্টা করে সকালের দিকে যখন তার চোখে ঘুমেরা ধরা দিল। ঠিক তখনি মিষ্টি রিনিঝিনি কন্ঠের স্বরে গান তার পাতলা ঘুমটুকু পুনরায় ভেঙে দিলো
আর তারপর, তারপর, তারপর সর্বশেষে সকালের দৃশ্য দেখে ডাক্তার নিস্তব্ধ ইয়াসার বাকরুদ্ধ,কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আর সকালে ওয়াশরুমে গিয়ে নিস্তব্ধ আগের থেকে অধিক মেয়েলি বস্তুের সংখ্যা আবিষ্কার করলো। গ্রেইট তুমি নিস্তব্ধ ইয়াসার তুমি গ্রেইট। এতকিছু আবিষ্কার করে তো তোমার বিজ্ঞানী হয়ে যাওয়া উচিত ছিলো।সঙ্গে ডাক্তারি ছেড়ে এই বস্তুগুলোর ব্যবসা শুরু করা উচিত।
তাসফির গোছানোর মাঝেই বাসন্তী রুমে এলো।
সে আফসোস নিয়ে বলল,,
— “এগুলো গুছিয়ে আর কি হবে তাসফি।
ভাই তো দেখেই ফেলেছে।”
তাসফি চোখ বড়বড় করে ফেললো, কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
— “দেখে ফেলেছে মানে?”
— “ভাই তো কাল রাতেই এসেছে। এসে তো দেখেছেই।”
তাসফি ঠাস করে বসে পড়লো ফ্লোরে।
শেষ তাসফির সব শেষ বদ লোক তার সব দেখে ফেলেছে। ওয়াশরুমে তার ব্রা*** ছিঃ ছিঃ। তার মান সম্মান আর কিছুই রইলো। সে এই লোককে মুখ দেখাবে কি করে।খোদা..
আরে আরে কি করছিস।
হঠাৎ কিছু মনে হতেই তাসফি চট করে বাসন্তীর দিকে তাকালো।
— আপা উনি ঘুম থেকে উঠেছে কখন?
— কেন? দশটার দিকে।
তাসফি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো যাক বাবা লোকটা তার চেঞ্জ করাতো দেখেনি। নিশ্চয় ঘুমিয়ে ছিল। যতই সে ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে লোকটার সামনে ভাবলেশহীন দেখাক। আসলে তো তা নয়। সেদিন তো সে নিজেও ভীষন লজ্জা পেয়েছিলো। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছিলো। নাহলে অহংকারী লোকটা তো তাকে ড্রামাকুইন বানিয়ে দেবে।
তবুও তাসফির মন খচখচ করতে থাকে।
লোকটাকে একবার খুঁচিয়ে খুচিয়ে জিজ্ঞেস করে সিওর হতে হবে। না হলে তার আর মান সম্মানের কিছু বাকি তাকবেনা।
তবে সে লোকটার সামনে যাবে কিভাবে।
বাসন্তী বেরিয়ে গেল।
দেখে দেখুক তার সব জিনিস সে তবুও বের করবে।
এত এত জিনিসপত্র গোছাতে ঘন্টা পেড়িয়ে গেল।
আশ্চর্য এত জিনিস সে এই রুমে আনলো কখন।
তাসফি আনমনে সব গুছিয়েই যাচ্ছে।
বেলা গড়ালো অনেকটা সময়।
নিস্তব্ধ নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করলো।হাতের ঘড়ি টেবিলে খুলে রাখতে রাখতে ঠেস দিয়ে বলে উঠলো,,
— “ম্যাডামের জিনিস পত্র যখন পুনরায় নিয়েই এসেছেন ফিরিয়ে নেওয়ার কি দরকার।”
হঠাৎ আওয়াজে তাসফি চমকে তাকালো পেছনে।
ইয়া খোদা এই লোক এসেও গেছে। এবার সে কি করবে।
চঁন্দ্র কাচুমাচু ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো।
আর এক মুহুর্ত ওও এই লোকের সামনে দাঁড়ানো যাবে না। নো রিস্ক নো অপমান।
নিস্তব্ধ পুনরায় কিছু বলে উঠার আগেই তাসফি গোছানো জিনিসপত্র রেখে দিলো দৌড়।
ধূসর রংধনু পর্ব ৬
এক দৌড়ে বাসন্তীর রুমে।
নিস্তব্ধ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মেয়েটা এতটা ভয় পাবে সে ভাবেনি।
তাছাড়া সে দৌড়ানোর মতো কি এমন বললো।