ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩২

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩২
মাহিরা ইসলাম মাহী

নাওমী অদিতিকে আলতো ধাক্কা দেয়।
গম্ভীর কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,
“ নিস্তব্ধতা আর জাওয়াদ স্যারের বিয়ের খবর শুনে তুই খুশি নস? পছন্দ করিস প্রফেসরকে?
আমার কথার জবাব দে অদিতি। “
অদিতি চমকে তাকায় নাওমীর পানে।
“ না…না তেমন কিছু নয় নাওমী।”
“ আমাকে কি তোর নির্বোধ মনে হয়? গাঁধা মনে হয়? আমায় তুমি ভু-গোল বোঝাবে আর আমি বুঝে যাবো? “
নাওমী অদিতির মুখের কথা চট করে কেড়ে নেয়।
অদিতি হতবিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে।

“ দেখ নাওমী আমি..”
“ চুপ বেডি মানুষ, চুপ থাক।পছন্দ ওর ভালোবাসা বাসি করিস কি না বল?”
নাওমীর ধরা সায়ে অগত্যা অদিতি মুখ খুলতে বাধ্য হয়।
মাথা নিচু করে সুধায়,
“ বাসি।”
“ আশ্চর্য মেয়ে মানুষ। কি বাসি? বাসি ভাত না পান্তা ভাত?”
অদিতি থতমত খেয়ে চেয়ে। নাওমী’র প্রশ্নে অদিতি নিজের দুঃখ ভুলে বসেছে।
প্রফেসর জাওয়াদ বেরিয়ে যায় ক্লাস থেকে।
নাওমী মৃদু স্বরে চেঁচায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ আরে আরে অদিতি চলে গেল তোর পান্তা ভাত।”
অদিতি সঙ্গে সঙ্গে নাওমীর মুখ চেপে ধরে
“ এই মেয়ে পাগল হলি নাকি।নিজে পাগল সঙ্গে আমাকেও পাগল বানাবি।”
“ তোমাকে পাগল বানাবো কি তুমি তো তোমার জাওরা ব্যাটার ছোঁয়াই পাগল হয়েছো।”
অদিতি থতমত খায়।
“ ছোঁয়ায় মানে?”
“ ছোঁয়ায় মানে ছোঁয়ায়।বাংলা বলেছি ইংলিশ তো বলিনি ভাই।সেদিন যে জাওরাটার সঙ্গে জোড়ছে ধাক্কাটা খেলে কি ভেবেছ আমি দেখিনি বুঝি অতিথি পাখি।”
নাওমী চোখ টিপ দেয়।
অদিতি চোখ বড় বড় করে নেয়।
দুই বান্ধবী হতাশ নেত্রে বসে পরে ঠাস করে নিজেদের বেঞ্চে।
অদিতি নিষ্প্রাণ চোখে চেয়ে নাওমীর কাঁধে মাথা রেখে ফিসফিস করে বলল,

“ জানিস তো অতিথি পাখি আমাদের জীবনে আসে ক্ষণ সময়ের জন্য। পরিশেষে তাকে তার নিড়েই ফিরতে হয়।এটাই বাস্তবতা রে।”
অদিতি চট করে উঠে দাঁড়ায়। তার মাকে চাই। মা তৃপ্তির কোলে মাথা রাখতে চায় সে।মায়ের হাতের তৃপ্তি পেতে চায় সে।ওটাই যে তার শেষ্ঠ আশ্রয়স্থল।
অদিতি বেরিয়ে যায় ঝটপট।
কাশফি ক্লাসে আসতেই নাওমী চুপটি করে বসে রয়।
কাশফি কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে গাল ফুলিয়ে বসে রয়।বাইরে তাকায় হাজারবার।
সে দেখতে চেষ্টা করে নীল সমুদ্র এলো কি না।
নাওমী মুখ খুলে,

“ কাকে খুঁজছিস? নীবিড় ভাইয়া কে?”
কাশফি চমকে পাশে চায়।
সে আসলে খেয়ালই করেনি ক্লাসে নাওমী ওও এসেছে।
“ ক..কই নাতো।”
নাওমী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চায়।
“ সাদাফ ভাইয়া তোর ভাইয়া বলিস নি তো?নীবিড় ভাইয়া তোর কাজিন বলিস নি তো? বাট হুয়াই কাশফি? রিজন বল ফাস্ট?”
নাওমীর পর পর প্রশ্নে কাশফি ঠোঁট উল্টে চায়।
এত প্রশ্নের উত্তর কি করে দেবে সে এখন?

সময়টা মধ্য দুপুর।
মাহরিসা রোশনীর সঙ্গে ক্লাসে বসে।লাঞ্চের টাইম হয়েছে। অথচ মাহরিসার মাঝে খাবার খাওয়ার তাড়া নেই।অগত্যা বিরক্ত হয়ে রোশনীকেই ছুঁটতে
হলো খাবার খোঁজে পেট বাঁচানোর তাগিদে।
মেয়েটার নাকে থাকা নোজপিনটা নাকি তাকে তার এক ভাইয়া এনে দিয়েছে বিদেশ ভূইয়ে।
ভাইয়ায়া… ইন্টারেস্টিং।
মাহরিসার ফোনের ম্যাসেজ টোন বাঁজে।
সে উদাসীন ভঙ্গিতে চায়।
“ চেম্বারে আয়। যাস্ট ফাইভ মিনিট দেওয়া হলো তোকে।”

উহু, আজ শুধু পাঁচ মিনিট নয় দশ মিনিট কাটে অথচ মাহরিসার বেঞ্চ থেকে উঠার না গন্ধ মাত্র নেই। মেয়েটার আকাশ সমান ভয় হুট করেই পালিয়েছে কোথায় যেন।কে জানে।
নিজের সাহসে রমণী নিজেও ভীষণ অবাক হচ্ছে ভীষণ ।
গত রাতে কথা অবাধ্য হয়ে রাতে বের হয়নি।
আজ আবার একি কাজের পুনরাবৃত্তি করছে। ইন্টারেস্টিং।
নাহ এভাবে একদমি স্বামীর কথার অবাধ্য হতে নেই মারু।উঠ।যাহ তোর আদু ভাইয়ের কাছে যা।
স্বামী তোর উপর নারাজ হলে ওপর ওয়ালা তোর উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। গজর পরবে তোর উপর।যা,যাহ।

মাহরিসা নিজেকে নিজে শাসায়। ভীষণ করে শাসায়।
এবার থেকে সে ভালো মেয়ে হয়ে যাবে।
তার আদু ভাইয়ের সকল কথা শুনে চলবে।
একটুও দুষ্টু করবে না সে।একটুও না।হুহ।
আদ্রিত রাগে দাঁতে দাঁত চেপে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে।
তার মেরিগোল্ড এতটা অবাধ্য হবে সে ভাবতেই পারছেনা। যেখানে মেয়েটা তার এক ধমকে কেঁপে উঠতো আর আজ দুদিন যাবত মেয়েটা তাকে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে চরকির ন্যায়।পনেরো মিনিট পেরুলো অথচ এখনো আসার নাম মাত্র নেই রমণীর।
অনেক হয়েছে আদর।আজ আসুক একবার, থাপড়ে যদি গাল লাল না করেছে তার নাম ওও আদ্রিত শেখ নিভৃত নয়।
ঠিক বিশ মিনিট পরে মাহরিসা হেলে দুলে চেম্বারে ঢুকে অনুমতি বিহীন।
দরজাটা লাগায় ঠাস করে।

আদ্রিত কড়া কিছু কথা বলতে নিয়েও থেমে যায়। কথা বলার ভাষা হারায়।
তার পণ করা কথার জোয়ারে ভাঁটা পরে মুহুর্তে তার মেরিগোল্ডের নাদুসনুদুস মুখ খানি অবলোকন করে।
হৃদয় তোলপাড় করে।
ইচ্ছে করে চট করে রমণীর ফোলা ফোলা গাল দুটোতে ফটাফট দুটো চুমু খেয়ে নেয়।
সাদা এপ্রোনে মেয়েটাকে পারফেক্ট ডাক্তারনী লাগছে।ইশশ।এত আদুরে কেন মেয়েটা।
আদ্রিত খুকখুক করে কেঁশে উঠে।

“ কেন ডেকেছ আদু ভাইয়া দ্রুত বলো।”
মাহরিসা তাড়া দেখায়।
“ কাছে আয়।”
“কেন।”
“ প্রশ্ন করতে বলেছি?”
মাহরিসা মাথা নারায়।
“ তো করছিস কেন? কাছে আয় ইডিয়েট।”
মাহরিসা মাথা নাড়ায়।
“যাবো না।”
ক্লাস থেকে করা পণ ভাঙলো সে মুহুর্তে। কেমন চট করে স্বামীর হুকুম কে অমান্য করে দিলো মুখের উপর।
আদ্রিত চেয়ারে মাথা এলিয়ে দেয়।কপাল ডলে তর্জনী আঙুলের সহিত।সে বুঝে গিয়েছে বিয়ের পর মেয়ে মানুষ হয়ে যায় বউ।আর বউ হয় ঠিক শামুকের ন্যায়। গরম দিলেই নিজের শক্ত প্রাচীর বের করে নেয়।অতঃপর বউয়ের ভেতর ছোঁয়া অসম্ভব।
আর নরম হলে আদর যত্ন করলে বউ তোমার নিজেও তার নরম অঙ্গ দিয়ে তোমায় আদর যত্ন করবে কনফার্ম।
ফিচেল হাসে আদ্রিত।
ফিসফিস করে বলল,

“ কাছে আয় বউ।চুমু খাবো।মাত্র দুটো প্রমিস।একটাও বেশি নয়।”
মাহরিসা টিপটিপ করে চায় অসভ্য ডাক্তারের হঠাৎ এমন বদলকৃত রুপ দেখে।
“ আচ্ছা চুমু খাবো না আয় দেখ মাথাটা প্রচন্ড গরম দেখতো জ্বরটর এলো কি না?”
মাহরিসা এবারে চিন্তিত হয়।তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে, উদ্বিগ্ন হয় তার আঁখিদ্বয়।
আদ্রিতের ছলচাতুরি বোকা মেয়েটা বোঝে না।অথচ তার অসভ্য ডাক্তারের কাজ হাসিল হয় ততক্ষনাৎ। দ্রুত কদম ফেলে মাহরিসা এগিয়ে যায় মিছে ভান ধরা আদ্রিতের পানে।
অথচ মুহুর্তেই সে তাল হারায় পুরুষালী শক্তপোক্ত থাবায়।একদম বিনা নোটিশে চুমুর বর্ষণ তুলে মাহরিসার মুখশ্রী জুড়ে। কে?মাহরিসার আদু ভাই।
আদ্রিতের হঠকারিতার মাহরিসার মেজাজ চটে।কিন্তু সুবিধা করতে পারেনা দানবীয় হাতের সঙ্গে।

সাদাফ নিস্তব্ধতা কে টানতে টানতে ফাঁকা অডিটোরিয়ামে নিয়ে আসে।
“ কি হচ্ছে কি সাদাফ ছাড় আমায়।”
“ সাদাফ? বাট হুয়াই? একদিনে নিজের অভ্যাস ভুলে গেলি।”
“ ফালতু কথা বলবি না আমার হাত ছাঁড়।”
“ চুপ।”
নিস্তব্ধতা হতভম্ব হয়ে চেয়ে রয় সাদাফের অগ্নিশর্মা মুখশ্রীর পানে।
ছেলেটাকে এতটা রাগতে সে বোধহয় আগে কখনো দেখেনি।
নিস্তব্ধতা সাদাফের শক্ত হাতের মুঠো ছাড়িয়ে পেছায়।
পিঠ থেকে তার কংক্রিটের দেয়ালে।
সাদাফ দু হাত দিয়ে পথ রোধ করে দাঁড়ায়।

“ বিয়ে করবি ভালো কথা। বাট আমার দেনা পাওনা শোধ করে তারপর… যাহ খুশি করে নে আই ডোন্ট কেয়ার। “
“ তোর দেনা পাওয়া মানে?”
“ বাহ।কাল রাতে আমার পকেট থেকে একশত পঞ্চাশ টাকা বের করেছিস। সেদিন পাঁচশত টাকা দিয়ে শপিংমল থেকে টেডি বিয়ার কিনলি।
মেলা থেকে মাটির হাঁড়ি কিনলি একশত টাকা দিয়ে, কাচের চুরি কিনলি চারশত ত্রিশ টাকা দিয়ে।
আমার এতসব কিছুর টাকা ফেরত দেবে কে?
তুই কি ভেবেছিস এগুলো সব মাগনা? পাগল মনে হয় আমায়।অবশ্য পাগলের ভালো পাগল ও বুঝে।
অন্যের ঘরের বিলাতি কত্তা হবা।রং করবা ঢং করবা আমার সামনে, অথচ আমার টাকা মেরে দিবা। তা তো হবে না। টাকা বের কর।আমার টাকা পরিশোধ করে তুই তোর জাওরা কে না জাওরান কে বিয়ে করবি জানিনা।আমার টাকা চাই।”

“ সজনেডাঁটার বাচ্চা ফালতু কথা বলবি না।”
“ টাকা দে।”
নিস্তব্ধতা নিজের রুপে ফিরে আসে।
“ ছিঃ, ছিঃ, ছিঃ তুই যে এভাবে ভিকারীর মতো আমার কাছে হাত পাতবি জানলে তোর টাকা তোর মুখের উপর ছুঁরে ফেলতাম।
বেয়াদ্দব। “
“ টাকা দে।”
“ এই একদম টাকা টাকা করবি না।এত্ত টাকা নেই আমার কাছে। যা সর।তুই বরং আমার জন্য দু প্যাকেট জুস নিয়ে আয় যাহ।”
ঘটনা ঘটে খুব দ্রুত।
সাদাফ নিস্তব্ধতার দু হাত শক্ত করে চেপে ধরে দেওয়ালের সঙ্গে।

“ টাকা দিবি কি না।”
“ দিচ্ছি। “
“ কই?”
“হাত পাত।”
সাদাফ সত্যি সত্যিই হাত পাতে।
নিস্তব্ধতা ঠোঁট কামড়ে হাসে।
সাদাফ পিটপিট করে চেয়ে, তার মনোযোগ সরেছে ইতোমধ্যে।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩১

মুহুর্তে নিস্তব্ধতা পা উঁচিয়ে ঝুকে থাকা লম্বু সাদাফের গলায় কামড় বসায় জোড়ছে।
পরপর বাড়িয়ে দেওয়া সাদাফের হাতে নিজের দন্ত বসায় ।
অতঃপর সাদাফের বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে দেয় দৌঁড়।
ব্যথায় চিৎকার করে উঠে সাদাফ।
“ নীরুরেহহহহহহ! উউউইফ!রাক্ষসী মেয়ে মানুষ। একবার তোকে শুধু হাতের কাছে পাই।তোর হাড় গোড় সব ভাঙবো আমি।একবার শুধু কাছে আয় বিশ্বাস কর তোকে আস্ত রাখবোনা।উফফস। জ্বলে গেল।”

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৩