ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৩

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৩
মাহিরা ইসলাম মাহী

মাহরিসা মুহুর্তেই তাল হারায় পুরুষালী শক্তপোক্ত থাবায়।একদম বিনা নোটিশে চুমুর বর্ষণ তুলে মাহরিসার মুখশ্রী জুড়ে। কে?মাহরিসার আদু ভাই।
আদ্রিতের হঠকারিতার মাহরিসার মেজাজ চটে।কিন্তু সুবিধা করতে পারেনা দানবীয় হাতের সঙ্গে।
মাহরিসা কাঁদো কাঁদো আদুরে স্বরে হেঁচকি তুলে।
আদ্রিত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে, একটু চুমু খাওয়াতে এখন তার বউকে হেঁচকি তুলে কাঁদতে হবে? কি আশ্চর্য।
“ কাঁদছিস কেন ইডিয়েট মেরেছি তোকে?”
মাহরিসা মাথা নাড়ায়,

“আপনি বলেছিলেন মাত্র দুটো চুমু খাবেন অসভ্য লোক।এত্ত গুলো নয় তো।”
“ সরি বউ, দুটো চুমুতে এই আদ্রিতের পেট ভরে না।”
“ চুমু খেলেও পেট ভরে?”
মাহরিসা হতবিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে।
আদ্রিত মাথা নাড়ায়
“ এই দেখ আরো একশটা চুমু খেলে আমার পেট ভরবে।ডিনারের প্রয়োজনই হবে না।”
“ একশটা? পাগল আপনি?”
“ অবশ্যই না।”
“ আর লাঞ্চ? “
“ লাঞ্চ তো করতেই হবে পেট তো খালি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাহরিসা জোকের ন্যায় খামছে ধরে আদ্রিতের পিঠ।
“ আদ্রিত ভাই আপনি না এই মাত্র বললেন আপনার চুমু খেলে পেট ভরবে? “
“ ভরবে তো লাঞ্চের পর।কারণ একশটা চুমু তো লাঞ্চের পরে খাবো।প্রমিস লাঞ্চের পরেই খাবো।এখন তোকে মুক্ত করে দিলাম যাহ।হুশশ…”
কান্না ভুলে মাহরিসা রাগে কটমট করে চায়।
ইদানিং লোকটার প্রতি রাগ তার ক্ষণে ক্ষণে বারছে।
একটা মানুষ একটা কথাকে পেঁচিয়ে জিলাপি প্যাচ দিতে পারে কিভাবে । হাউ?
অসহ্য।

“ সাদাফ ভাইয়া তোর ভাইয়া বলিস নি তো?নীবিড় ভাইয়া তোর কাজিন বলিস নি তো? বাট হুয়াই কাশফি? রিজন বল ফাস্ট?”
নাওমীর পর পর প্রশ্নে কাশফি ঠোঁট উল্টে চায়।
এত প্রশ্নের উত্তর কি করে দেবে সে এখন?
“ঠোঁট উল্টালে কাজ হবে না উত্তর দে ঝটপট।”
কাশফি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুধালো,
“ বললে কি হতো? সাদাফ ভাইয়া আমার মায়ের পেটের ছেলে বললে তুই কি আমার ভাবী হতি? বল?হতিস?”
“ আসতাগফিরুল্লাহ। এমনিতেই তোর ভাই আছে মহা বিপদে।তার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তারওপর সে যদি শুনে তুই আমাকে তোর ভাবী করার ধান্ধায় নেমেছিস তাহলে তো খুব বিপদ।”
কাশফি চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।কন্ঠে তার অবাকের লেশ,

“ আ..মার ভাইয়ের প্রে..মিকা মানে? আমার জানা মতে ভাইয়ার কোনো প্রেমিকা নেই নাওমী।”
“ কেন নিস্তব্ধতা আপু।তুই জানিস না নিস্তব্ধতা আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে ওই জাওরা ব্যাডার লগে।”
কাশফি চট করে উঠে দাড়ায়।
“ কি সর্বনাশ…”
দৌঁড়ায় কাশফি, তার পিছু পিছু নাওমী।গোল্লায় যাক ক্লাস।
ভাইকে খোঁজে কাশফি হন্তদন্ত হয়ে।
পথে দেখা নীবিড়ের সঙ্গে।
“ ভাইয়াকে দেখেছ নী..নীবিত ভাইয়া? “
নীবিড়ের অস্তিত্ব দৃষ্টিগোচর হতেই নাওমী দাঁড়িয়ে যায়।নড়ে না এক পা।
নীবিড় চোখ মুখ কুঁচকে মাথা নাড়লো।
“ কেন কি দরকার তোর? ক্লাস নেই তুতলারানীর?”
কাশফি শুষ্ক ঢোক গিললো।ভুল স্থানে ভুল কথা বলে ফেলেছে সে।তার হয়তো নীবিড়ের সঙ্গে কথা বলা উচিত হয়নি।একদমী না।

পিছু ফিরে চায় সে নাওমীকে না দেখে অস্বস্তি দিগুণ বাড়ে তার।কি আশ্চর্য এমন অস্বস্তি তো তার নীলাদ্র’র সঙ্গে থাকলেও কখনো অনুভব হয় না।
কাশফি কয়েক পা পিছু হটে।
করিডেরের বাঁকে থমকে দাঁড়ানো নাওমীর হাতখানা শক্ত করে ধরে নীবিড়ের সামনে এসে দাঁড়ায়।
“ দাঁড়িয়েছিস কেন? আয়..”
“ কাশফি আমি…”
কাশফি নীবিড়ে সামনে দাঁড়িয়ে মেকি হেসে বলল,
“ ভাইয়ার কাছে নিয়ে চলো নী…নীবিত ভাইয়া।”
নীবিড় নাওমীর পানে চেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। কাশফির দিকে তার নজর নেই।
নাওমী ভুলেও চোখ তুলে দেখেনা নীবিড়কে।
নীবিড়ের দৃষ্টি লক্ষ করে কাশফির অস্বস্তি গাঢ় হয়।
“ আয়।”

সাদাফ তখন অডিটোরিয়ামে থেকে বের হয়ে বটগাছটার পাশে এসে দাঁড়ায় গলা ডলতে ডলতে।
তিন জন এসে ঝাঁপিয়ে পরে তার সামনে।
নিস্তব্ধতা উধাও।
তিন মূর্তিকে দেখে সাদাফ ভ্রু কুঁচকে চায়।
নীবিড়,কাশফি,নাওমী তিনজনই সাদাফকে দেখতে ব্যস্ত।
খানিকক্ষণ আগে ঘটনা কি ঘটেছে সবাই জানে।
নীবিড়ই প্রথমে মুখ খুললো,
“ ভাই নীরু আপা কই? দেখছি না যে।সব ঠিক হলো তোমাদের মাঝে?”
“ কি ঠিক হবে?”
“ কেন জাওরাকে বাদ দিয়ে তোমাদের দুজনের বিয়ে।”
কাশফি ফট করে বলেন উঠলো।

“ তোর নীরু আপাকে বিয়ে করতে আমি ঢোল-ডগর, কাজী,পাজী নিয়ে বসে নেই নিশ্চয়ই?
বেয়াদ্দব মহিলাদের কপালে ওসব জাওরাই ঠিক আছে।”
ভাইয়ের জবাবে কাশফি থতমত খায়।
“ সাদাফ ভাইয়া আপনার জন্য বরং ভার্সিটির সুন্দরী একটা মেয়ের সমন্ধ খুঁজি কি বলেন?”
নাওমী মুখ টিপে হাসে।
সাদাফ রিয়েকশন বোঝা দায়।নীবিড়ের দিকে ঠোঁট কামড়ে চায় সে।
“ খোঁজো নাওমী। তোমার মতন সভ্য শান্ত কাউকে খুঁজিও।বিশেষ করে যাদের চুলগুলো তোমার মতো ছোট ছোট।মেয়েদের চুল বড় হলে ঝামেলা বুঝলে।বড় বড় চুলগুলো দিয়ে তারা জামাইয়ের গলা পেঁচিয়ে ধরতে অস্তাদ।”
নীবিড় চোখ ছোট ছোট করে চায় সাদাফের পানে।
ফিসফিস করে তার কানে কানে বলল,

“ ভাই তুমি নীরু আপাকে ছেড়ে অন্য কাউকে লাইন মারার চেষ্টা করছো? তবে কিন্তু সর্বনাশ?”
“ আমার সর্বনাশ আমি বুঝে নেব।তোর চরকায় তুই তেল দে।”
নীবিড় বিরবির করে কিছু বলে। বোঝা দায়।
সাদাফের লাল হওয়া গলায় কাঁমড়ের দাগ লক্ষ করে নীবিড় চিৎকার করে বলল,
“ ভাই তোমার গলায় কি হয়েছে? বিড়াল কাঁমড় দিয়েছে নাকি?”
সাদাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“পানিতে ঝাপ দিয়েছিলাম কাঁকড়া কামড়ে ধরেছে।”
“ওও মাই গড। ডক্টরের কাছে চলো ভাই তোমায় ইনজেকশন দিতে হবে এখুনি।ইনফেকশন হবে তো।”
“ সাটআপ মহিষের বাচ্চা। “
নীবিড় ফিসফিস করে বলল,

“ বাই দ্যা ওয়ে ভাই, কাঁকড়াটার নাম কি ‘ন’ দিয়ে শুরু? কনফার্ম করো প্লিজ নয়তো আমাদের না আবার কাঁকড়ার কামড় খেতে হয়।তবে তো খুব বিপদ।”
সাদাফ অগ্নিচোখে চায়। চোখ দিয়ে মহিষের বাচ্চা কে ধ্বংস করে দেওয়ার পায়তারা।
নির্ঘাত ড্রাগনের ন্যায় তার মুখশ্রী হতে ছলাৎ ছলাৎ করে আগ্নি নির্গত হয় না।নয়তো আজ নীবিড় এখানে পুড়েই ধ্বংস হতো কনফার্ম।
“ কাঁকড়া জনগোষ্ঠীর ও আলাদা আলাদা নাম থাকে বুঝি নীবিড় ভাইয়া?”
নীবিড় হেসে বলল,
“ অবশ্যই থাকে। যেমন তুই কাশফি কাঁকড়া। ছোটবেলায় আমার পেছন পেছন লেগে থাকতি খামছে ধরে।”
কাশফি শুষ্ক ঢোক গিললো। বুকের মাঝে হঠাৎ-ই চিনচিন ব্যথা অনুভত হলো তার। কিসের ব্যথা কাশফি খুঁজে পায় না সে উৎস।মূলত সে খুঁজতেই চায়না হয়তো।
নাওমী পেছন থেকে সরে গেল চট করে।

কেউ তার খবর নিলো না।নেওয়ার কথাও না।
ঠিক তাদের বিপরীত পার্শ্বে দাঁড়িয়ে নীলাদ্র, সাফওয়ান, এবং তিয়াশা।
নীলাদ্র’র শক্ত সামর্থ্য শরীরখানা নিয়ে দাঁড়িয়ে বাইকে হেলান দিয়ে।
হাতে তার জলন্ত সিগারেট।
চোখ দুটো তার নিঃষ্প্রাণ ভঙ্গিতে সামনে চেয়ে।
সেই চোখে নেই কোনো অনুভূতির কিনারা, আর না তো চাওয়া পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা।
শেষ টান দিয়ে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশটুকু পায়ের নিচে ফেলে পিষে ফেলল পা দিয়ে তীব্র আক্রোশে।
সাফওয়ান ফিসফিস করে বলল,
“ ভাই তোর কাঁশিকে ডাকি? “
নীলাদ্র জবাব দিলো না।

নীবিড় আর কাশফির কথা চলল।কাশফির মুখশ্রী হাসি হাসি।
সময় কাটল।বেশ অনেকটা সময় পর কাশফি চাইলো সামনে।
কাঁশি আর তার নীল সমুদ্রের দুজনের দৃষ্টি’র মিলন ঘটলো।
নীলাদ্র সেইখানটায় দাঁড়ালো না আর একফোঁটাও।
মিনিটের মাঝে বাইক ছুটিয়ে চলল নিজ গন্তব্যে।
কাশফি নীলাদ্র’র হঠাৎ রিয়্যাক্টশনে হকচকালো।
তিয়াশা অদূরে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে।
এই নিস্তব্ধতা মেয়েটা একদম বারো ভাতারি।
অসভ্য মেয়েটা সাদাফ কে তার কব্জায় করলো আর এখন তার ক্রাশ জাওয়াদ পাটোয়ারী কেও নিজের কব্জায় নিয়ে নিলো? যেন তেন নয় সোজা বিয়ে?
এই মেয়ের সমস্যা কি।
এরা কয়েকজন ভাইবোন মিলে কি শুরু করেছে টা কি। এক এক জন একজন কে নিয়ে টানাটানি করছে।আশ্চর্য।

সময়টা তখন দুপুর দুটো।
নীলাদ্র রুমের দরজা জানলা লাগিয়ে উদোম গায়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আরামদায়ক বিছানায়।
তার হাতে স্পিডের ক্যান।
শেষ চুমুক দিয়ে ছুঁড়ে মারে সে তা দূরে।
তার রুমের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না কোনো মানুষ বসবাস করে না সেখানে। পরণের কাপড় ফ্লোরে পরে।বইপত্র নিচে ফেলা।ল্যাম্পসেডটা ভেঙে পরে আছে নিচে।মনে হচ্ছে মিনিট দুই পূর্বে কেউ তান্ডব চালিয়েছে রুমের মাঝে।
ভাইরাসে আক্রান্ত কাঁশির আজ আসার কথা ছিলো।আসেনি আজ মেয়েটা।
তার নীবিড়ে ব্যস্ত সে।
তাতে নীলাদ্র’র কিছু যায় আসে না।উহু একদমি কিছু যায় আসে না।
কপালে হাত ঠেকিয়ে চোখ বুজে সে।ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে হয়তোবা।তার ডাইনিংয়ে ডেকে রাখা খাবারগুলো মন কারাপ করে আছে।

কাঁশির নীল সমুদ্র এত্ত এত্ত অসভ্য কেন?
কি রকম করে কষ্ট দিচ্ছে খাবার গুলোকে।
সময় কাটে কয়েক মুহুর্ত পর্বের ন্যায় কলিংবেল বাজে নীলাদ্র’র তিনতলার ফ্লাটে।
একবার নয়, দুবার নয়, পর পর কয়েকবার।
দরজার ওপাশে দাঁড়ানো রমণীর বড্ড ধৈর্য্য। তাইতো পূর্ণ ধৈর্যের সহিত কাজটি সে করে যাচ্ছে অনর্বর।
অনবরত কলিংবেলের শব্দে মাত্র ধরা ঘুমটা ছুটে যায় নীলাদ্র’র।
ওপাশে থাকা ব্যক্তির উদ্দেশ্যে গালি ছুঁড়ে বিশাল আকারে।
বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরে তার অসংখ্য।
চট করে উঠে দাঁড়িয়ে ডান হাতের কব্জির সহিত কপাল ডলে সে।
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দরজা খুলে, দরজাটা আগলে দাঁড়ায়।
তার সামনে মিকি মাউস ওয়ালা হেয়ার ব্যান্ড পরিহিত, বিড়াল চোখে, ক্যাট সু পায়ে, খরগোশ ওয়ালা ব্যাগ কাঁধে মেয়েটা দাঁড়িয়ে।
চোখে মুখে তার উৎফুল্লতা স্পষ্ট। অজানা কে জানার কৌতুহলী উত্তেজনা চোখে, মুখে।

“ কি চাই তোমার? “
কাশফি চোখ পিটপিট করে চায়।
দরজা আগলে দাঁড়ানো নীলাদ্রর হাতের নিচ দিয়ে কাশফি চট করে ভেতরে ডুকে যায়।
নীলাদ্র ভ্রু কুঁচকায়। কাশফি দাঁত কেঁলিয়ে হাসে।
“ ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,তোমার নী…নীবিত এখানে নেই।সো আসতে পারো।”
“ আমার তো নীবিড় ভাইয়াকে চাই না নীল সমুদ্র। “
“ তো কাকে চাও?”
নীলাদ্র ঝটপট প্রশ্ন করে।
কাশফি কয়েকপল পিটপিট করে চায়। ঠোঁট উল্টে সরল মনে উত্তর দেয়,
“ গল্প শুনতে চাই নীল সমুদ্র ।রাজকুমারের গল্প। শোনাবেন না? কথা দিয়েছিলেন তো?”
নীলাদ্র কিছু সেকেন্ড চোখ ছোট করে করে চেয়ে রয় সরল মেয়েটার মুখশ্রী পানে।সরল? উহু একদমি নয় বদমাশ মেয়ে একটা। এক নম্বর ভাইরাস জনিত কাঁশি।
অনুমতি বিহীন খুব সাবলীল ভাবে কাশফি সোফায় গিয়ে বসে। হাতের ফোনটা রাখে পাশে।পাশ ঝেড়ে নীলাদ্র’র বসার জায়গা করে দিয়ে সুধায়,

“ কি হলো আসুন, বসুন,বলুন।”
এই এত্ত ক্ষনে কাশফি নীলাদ্র দিকে লক্ষ করে।
টাওজার পরিহিত নীলাদ্র উন্মুক্ত বক্ষ চোখে লাগতেই কাশফি চোখ বড় বড় করে চায়।
“ ছিঃ কি অসভ্য নীল সমুদ্র। কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই।এত বড় মানুষ হয়েও কি উদোম গায়ে থাকতে হয় নাকি।
মিনিমাম কমন সেন্স নেই এই ছেলের।”
থতমত খেয়ে চট করে বসা থেকে এক ঝটকায় সটান দাঁড়িয়ে যায় কাশফি।
নীলাদ্র ততক্ষণে কাশফির অনেকটা কাছে চলে এসেছে।
দুজনের অস্তিত্ব ছুঁইছুঁই।
কাশফি ঘাড় তুলে উপরে তাকায়।কারণ নীলাদ্র’র হাইটের চাইতে সে অনেকটাই ছোট।
সামনাসামনি দেখা দায়।
বোকা বোকা চাউনিতে চোক পিটপিট করে চায়।
নীলাদ্র’র ঘুম জড়িত উত্তপ্ত নিঃশ্বাস কাশফি’র মুখে আছড়ে পরে।
তাতে কাশফির চোখের চশমা ঘোলাতে হয় খানিকটা।

“ আ..আপনি আন্টি, আঙ্কেলের সঙ্গে থাকেন না কেন নীল সমুদ্র? “
“তো? তোমার তাতে কোনো সমস্যা? “
কাশফি শুষ্ক ঢোক গিলে। মাথা নাড়ায়,
“ নীল সমুদ্র আপনি কি দয়া করে গায়ে একটি টি-শার্ট জরাতে পারবেন।”
“ উঁহু। “
কাশফি ঠোঁট উল্টে চায়।

“ এই মুহুর্তে তোমার গোলাপি ফ্রেমের চশমাটা যদি ভেঙে যায় কেমন হবে বলোতো কাঁশি? “
অজানা অনুভুতির লজ্জায় লাল হয় তার গাল।কিন্তু এমনটাতো হওয়ার কথা নয়।তবে কেন হচ্ছে?
কাশফি আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। নীলাদ্রকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে দেয় দৌঁড়। এক দৌঁড়ে গিয়ে দাঁড়ায় নিচে।দম নেয়।অথচ ভুলে বসে নিজ ফোনের কথা। ফোনটা তার পরে রয় অবহেলিত ভঙ্গিতে সোফার এক কোণে।
ধাক্কা সামলাতে হিমসিম খায় নীলাদ্র, সোফায় গিয়ে পরে।
উঠে বসে। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে নীলাদ্র মাথা চুলকে রহস্যময় হাসে।

সময়টা তখন রাত্রী ভাগের।এই মাঝ রাতের আগে ভাগে।জ্যোৎস্না রাত।চারিপাশ জ্যোৎস্নার আলোয় স্পষ্ট দৃশ্যমান। মাহরিসার ফোন বাজে।
তার একমাত্র হাসবেন্ড, তার আদু ভাইয়ের।
“ বলুন। “
“ নিচে আয়।”
“ উঁহু পারবো না।”
“ মুখে মুখে তর্ক করতে শিখে গেছিস? “
মাহরিসা চুপটি করে থাকে। জবাব দেয় না।
“ নিচে আয়।”
“ সম্ভব নয় আদু ভাইয়া।”
“ কেন? কি সমস্যা? তোর হিটলার বাপ আজ ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমায়নি?”
“ ঘুমিয়েছে।”
“ তো কি সমস্যা নিচে নাম।”
“ পারবো না আপনার দরকার হলে আপনি আসুন।”
“ ওও আচ্ছা। তাই নাকি।সে কথা আগে বললেই পারিস তুই বড় আদর চাস।এত ঘুরিয়ে বলার কি কোনো প্রয়োজন আছে বল?”

আদ্রিত ঠোঁট কাঁমড়ে হাসে।
মাহরিসা হতবিহ্বল দৃষ্টি ফোনে তাক করে। লজ্জায় দু গাল লাল হয়ে উঠে তার।
চট করে সে উঠে দাঁড়ায়। দৌঁড়ে বেলকনিতে গিয়ে নিচে তাকায়।আদ্রিত ততক্ষণে অর্ধেক গাছে উঠে ফেলেছে।
কি আশ্চর্য বাসরের লোকটার এত শখ?
মাহরিসা একপলক নিচে চেয়ে।দৌঁড়ে ভেতরে ঢুকে বেলকনির দরজা লাগিয়ে দেয়।
তার বুকের মাঝে ধরাস ধরাস শব্দ তুলে।
বেলকনিতে আদ্রিত মেজাজ খিঁচিয়ে দাঁড়িয়ে।
ফোনে ফিসফিস করে বলল,

“ দরজা খোল।”
“ না।”
“ তুই দরজা খুলবি কি না?”
“ ইন্না।”
“ খোদার কসম আমার যদি আজ ফিরে যেতে হয় তোকে আস্ত রাখবোনা।”
“ আপনি চলে যান আদ্রিত ভাই। আপনার শ্বশুড় মশাই উঠে গেলে কিন্তু পরে আর বউ পাবেন না। আজীবনের জন্য হারাবেন।”
রাগে গজগজ করতে করতে পুনরায় গাছ বেয়ে নিচে নামে আদ্রিত।মাহরিসাকে একবার হাতে কাছে পেলে নির্ঘাত চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে সে।
নীবিড় মাত্রই বাইক থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে।
ব্রো কে গাছ থেকে নামতে দেখে থম মেরে দাঁড়িয়ে যায় সে।
উপরে চাইলে দেখতে পায় নাওমী ছাঁদে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে চেয়ে। আদ্রিত বরাবর চক্ষু তার।
চোয়াল শক্ত হয় নীবিড়ের।

“ তাকে ইগনোর করে প্রেমিক জোটানো হয়েছে তাই না?”
বাইকের চাবিটা রাগে ছুঁড়ে মারে দূরে। তার এই রাগ অহেতুক।একদম বেমানান।
নিজের রাগ দেখে নিজেই অবাক হয় সে।
অভদ্র নাউডুবা চশমিশ প্রেমিক জুটাক আর বর জুটাক তাতে তার কী?
নিচে নেমে পাশে তাকাতেই আদ্রিত নীবিড়ের দুজনের দৃষ্টির সঙ্গে দৃষ্টি মেলে।
চোখ বন্ধ করে আদ্রিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশ নেত্রে বিরবির করে,
~“ সালার কপাল আমার।
জোড় করে করলাম বিয়ে পেতে বউয়ের আদর।
এখন বউ আমার করছে ত্যাড়ামি।
খাচ্ছি আমি শ্বশুরের তাড়ানি।
না পাই বউয়ের আদর,
আর না পাই জামাই আদর।
সালার জীবনটাই বেদনার।
ছেহহহ।”~

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩২

“ ওহে যুবক’গন শুনো হে তোমরা।
ভুল করেও করিও না আমার মতন ভুল।
করো না নিকাহ জোড় করে শ্বশুরের অগোচরে।
নয়তো হারাতে হবে অচিরেই যৌবন।
পাবেনা বউয়ের আদর,
হবে তোমার সিস্টেম লস।
দিন শেষে হোচট খেয়ে পরবে তুমি টুপ করে বৃক্ষ হতে।”
~~বানীতেঃ ডাঃআদ্রিত শেখ নিভৃত~~

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৪