ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫২

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫২
মাহিরা ইসলাম মাহী

মাহরিসা পড়েছে অথৈ সাগরে।
তার চারপাশে শুধু জল আর জল। যতই সে সাঁতার কেটে নীড়ে পৌঁছাতে চেষ্টা করছে তার মনে হচ্ছে ততই সে ডুবে যাচ্ছে গহিনে।হারিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের শত সহস্র জলরাশির ভীড়ে।
কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না সে।
নাওমী নিজেও চিন্তিত।মাত্র কয়েকটা দিনে মারু আপুকে সে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে।
সে বুঝেছে মারু আপু একদম নরম মনের মানুষ।
মানুষের সামান্য কথার ধাঁচেও মেয়েটা কেঁদে ভাসায়।
অথচ নাওমী? সম্পূর্ণ তার বিপরীত।
মারু আপু তরল হলে সে কঠিন, মাহরিসা জল হলে সে অগ্নি।
আদ্রিত ভাইয়াও যেন ঠিক তেমনি,

দু’জন কপোত-কপোতীর মাঝে একজন মাটি তো একজন পাথর,একজন ইট তো একজন সিমেন্ট।
কিন্তু দিন শেষে এই একেরপর এক ইট গুলোই সিমেন্ট কে চম্বুকের ন্যায় আঁকড়ে বাঁচে।
আসলে জীবনের সমীকরণ গুলো এমনই।
যদি গভীর সম্পর্কের দুজন মানুষ একই ধাঁচের হয় তবে সমীকরণ টা ঠিক মেলে না।কেমন পানসে পানসে লাগে জীবনটা।
এই যে আদ্রিত ভাইয়া মারু আপুকে বকে আর আপু ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদে।
যদি আপুও কঠোর মনোভাবে আদ্রিত ভাইয়াকে দুটো শক্ত কথা শুনিয়ে দিতো দুজনের সম্পর্ক টাকি এত সহজ হতো?
হতো না তো। বরং দুজনের রাগের তোপে দুজন থাকতো দু প্রান্তে, অথচ দুজনের মাঝের অবুঝ ভালোবাসাগুলো তাদের অভিমানের তোপে পরে অসহায় মুখ করে চেয়ে থাকতো নির্নিমেষ।
তাইতো জীবনে বিপরীত ধর্মী একজন মানুষের দরকার।খুব করে দরকার।নয়তো পানসে জীবন পাড় করা যে বড্ড কঠিন।
বাসন্তী মেয়ের পানে বিরক্ত হয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ এমন ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদিস না তো মারু।তোকে নেংটো হাঁসের মতো লাগে দেখতে
পাশ থেকে নিশানী চট করে বলল,
“ মা হাঁসটা এত দ্রুত নেংটো হয়ে গেল?”
নিশান বলল,
“ হ্যাঁ হলো তো? তাতে তোর কি।দেখছিস না মা বলছে।”
নিশানী মুখ দিয়ে আফসোসের সুর তুলে বলল,
“ আহারে বেচারা গুলুমুলু হাঁসের গায়ের লোম গুলো কেড়ে নিয়ে কে এমন ইজ্জত হরণের মত মহাপাপী কাজটা করলো।মা তুমি কি সেই মহান পাপীলোকটাকে দেখেছ।চিনো তাকে?”
বাসন্তী আগুন চোখে চাইলো মেয়ের পানে।
নিশানী চুপসে গেল।

পাশ থেকে নিশান ফিসফিস করে বলল,
“ এই নিশানী তুই কি করে জানলি হাঁসের ইজ্জত হরণ কারী একটা মহিলা নয় লোক? শুধু শুধু তুই আমাদের পুরুষজাতির উপর ব্লেইম দিতে পারিস না।তোরা নারী জাতিই হলি আসল ক্রিমিনাল।”
“ আমরা ক্রিমিনাল?”
নিশান মাথা নাড়লো জোড় কদমে।
“ তুই কি করে বুঝলি?”
“ বুঝবোনা বলছিস? দেখ হাঁসটা বোধহয় খুব সুন্দরী ছিল বুঝলি।তোরা নারী জাতি বড্ড হিংসুটে, নিজেকে ব্যতীত আশেপাশের কাউকে সুন্দর লাগলে তোরা হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাস।হাঁসটার সৌন্দর্য দেখেও বোধহয় ইজ্জত হরণকারী মহিলা সহ্য করতে পারেনি ব্যস নিজের কাজ সে করে দিয়েছে।”
নিশানী ওর মাথায় চাটি মেরে বলল,

“ তুই সারাক্ষণ চারপাশে শুধু সৌন্দর্য দেখিস তাইনা।”
নীবিড় দুটোর মাথায় থাপ্পড় মেরে বলল,
“ কি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছিস তোরা? চুপ থাক।পরিস্থিতি বুঝতে দে।একশন নিতে হবে তো।”
নিশান -নিশানী দুই জমজ বোকা বোকা চোখে চাইলো। ওরা বুঝলো না কিসের একশন।
বাসন্তী কাঠকাঠ কন্ঠে ঘোষণা করলো,
“ শোন মারু আমি সাফসাফ করে বলে দিচ্ছি পরশু তোকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসছে ব্যস।
আর কোনো কথা নেই।ছেলের মায়ের তোকে পছন্দ হলে ওখানেই বিয়ে পরিয়ে দেওয়া হবে।আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।”

বাসন্তী উঠে চলে গেল।
মাহরিসার কান্নার ঢল থামছেনা।বরং ক্রমাগত বাড়ছে।
নাওমী বুঝিয়ে শুনিয়ে কোনো রকমে মাহরিসা কে দিয়ে রুমে দিয়ে এলো।
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে নীবিড়কে উপরে আসতে চোখের ইশারা করলো।
নীবিড় এদিক ওদিক তাকিয়ে জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিঁশবাজাতে বাজাতে উপরে উঠলো।
নাওমী ছাঁদে দাঁড়িয়ে।
“ কি ব্যাপার বলোতো চশমিশ? তুমি ওভাবে আমায় ইশারায় বাজে ইঙ্গিত দিলে কেন? তোমার লক্ষ তো ভালো ঠেকছে না।ভালো হয়ে যাও ভালো হতে না পয়সা লাগে না বুঝলে।”
নাওমী হতভম্ব হয়ে তাকায়।সে কখন এই অসভ্য ছেলেটাকে বাজে ইঙ্গিত দিলো।আশ্চর্য!
নাওমী চোক পাকিয়ে চেয়ে বলল,
“ আসতাগফিরুল্লাহ। এই শুনুন মহিষের বাচ্চা মুখ সামলে কথা বলবেন বুঝলেন।আমি কখন আপনাকে বাজে ইঙ্গিত দিলাম? আশ্চর্য! আর আপনাকে বাজে ইঙ্গিত দেওয়ার চাইতে না বনে থাকা বুনো মহিষকে ইঙ্গিত দেওয়া ধের ভালো।
আপনি না আস্ত একটা জলহস্তী। “

“ আমি জলহস্তী? “
“ কোনো সন্দেহ আছে?”
নাওমী রুমে ঢুকে ঠাস করে নীবিড়ের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো।
নীবিড় অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে।
যাহ বাবা।সে করলো টাকি।নিজেই ইশারায় ডেকে নিয়ে এলো, নিজেই রাগ দেখিয়ে চলে গেল।
নাউডুবা চশমিশ নাকি তাকে বাজে ইঙ্গিত দেয়নি তো এই রাত্রীবেলা মানুষ একটা যুবক ছেলেকে কিসের ইঙ্গিত দেয় শুনি।আশ্চর্য! বদমাশ মেয়ে মানুষ।
ওই যে কথায় আছে না চোরের মন পুলিশ পুলিশ।কিন্তু চোর তা শিকার করতে নারাজ।
দুমিনিট যেতেই নাওমী বেরিয়ে এলো দরজা খুলে, তার হাতে কাগজ।
কাগজে কিছু লেখা সেটা সে প্রচন্ড মেজাজে নীবিড়ের হাতে ধরিয়ে দিলো,
“ আদ্রিত ভাইকে ফোন করুন, ব্যাপারটা জানান।“
নীবিড় আড়চোখে নাওমীর অগ্নিশর্মা মুখশ্রী পানে চেয়ে পিছু ঘুরে বলল,

“ সে কথা মুখে বললেই হয়।এভাবে চিটি লেখার কি আছে বাবা। আর শুনো আমি কাউকে কিছু বলতে টলতে পারবো না।”
নাওমী চট করে রুমে ঢুকলো।মিনিটের মাঝে বেরিয়ে এলো।
তার হাতে আরেক টুকরো কাগজ।
“ এই শুনুন অসভ্য ছেলে আমি না আপনার সঙ্গে একটা কথাও বাড়াতে চাইনা। আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধছে বুঝেছেন? রুচিতে বাঁধছে ।যেটা বলেছি সেটা করুন।”
“ উহু, শুনো নাউডুবা চশমিশ আমি এসব কিছু পারবো না। তোমার বলতে ইচ্ছে হলে তুমি বলো।আমি এসব ঝামেলায় নেই বাবা। শেষে ব্রো আমায় ধরে কেলাবে।”
“আপনি বলবেন আপনার ঘাড় বলবে।”
নাওমী নীবিড়ের কলার চেপে ধরলো।
নীবিড় চোখ বড় বড় করে তাকায়।

“ কি আশ্চর্য। এই মেয়ে তুমি না মাত্র বললে কথা বলবে না। কলার ধরেছ কেন? কলার ছাড়ো।”
“ ছাড়বো না কি করবেন হুম? কি করবেন শুনি?”
নাওমী কলার ঝাঁকি মেরে ধাক্কা দিয়ে নীবিড় কে সরিয়ে দিয়ে রুমে যেতে পা বাড়ায়।
নীবিড় নাওমীর বেনি করা চুলের গোছা টেনে ধরলো।
“ শুনো নাউডুবা চশমিশ শুধুমাত্র তুমি বলে বেঁচে গেলে।নয়তো আমার কলার ধরার স্পর্ধা দেখানোর ফল তোমায় হারে হারে বুঝিয়ে দিতাম।”
নাওমী রুম গিয়ে চট করে আরেক টুকরো কাগজ নীবিড়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঠাস করে দরজা লাগালো,
“ দেখান না দেখান ফল,আপনাকে বোঝাতে নিষেধ করেছে কে? আমি কে যে শুধু আমি বলে বেঁচে গেলাম নীবিড়?বলুন কে আমি? ইডিয়েট। “

নীবিড় নির্নিমেষ কাগজের টুকরো টার পানে চেয়ে রইলো। তার চোখে একরাশ নাম না জানা ঝলমলে আলো জ্বলজ্বল করছে।
আসলেই সে ইডিয়েট।
নীবিড় ঠাস করে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লো নোংরা ছাঁদের ফ্লোরে।
মা কি ছাঁদ টা আজ পরিষ্কার করেছে? নাকি করেনি? কে জানে।
নিশান-নিশানী দুজনে একে অপরের দিকে গোলগোল চোখে চায়।দু’জনে ছাঁদের দরজার সামনে উঁকি মেরে আঁড়ি পেতেছে।
নিশান ফিসফিস করে বলল,
“ বি ব্যাপার বলতো? ম্যাডাম ভাইয়াকে কি বলার কথা বলছিলো।”
“ গাঁধা আমি কি করে জানবো।তুই যেখানে আমি ও তো সেখানে নাকি আমি মহাকাশ থেকে উদয় হলাম।”
“ চুপ থাক।বেশি পকপক করিস।তোরা মেয়ে মানুষ এত বাঁচাল।শুধু উত্তর দিতে পারিস না?”
নিশানী ভেঙচি কাটে।
নীবিড় তাদের দেখার আগে দুটো সুরসুর করে নেমে যায় নিচে।

মাহীন বাড়ি ফিরলেই বাসন্তী চিল্লাফাল্লা শুরু করে,
“ কি শুরু করেছে তোমার ছেলে মেয়ে?
ছেলে মেয়েকে মানুষের মতো বাড়িতে থাকতে বলো নয়তো সবগুলো নিজের চেম্বারে নিয়ে রোগীদের দাঁত দেখতে বসিয়ে দাও।”
মাহীন শুষ্ক ঢোক গিলে বলল,
“ বাসন্তী বলছিলাম যে..”
“ আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা।মেয়েকে গিয়ে বোঝাও।বিয়ে ওকে করতেই হবে। ওকে গিয়ে বলে দাও ছেলে কোনো ফ্যালনা কেউ নয়।
দারুন হ্যান্ডসাম ছেলে, হ্যান্ডসাম স্যালারী, হ্যান্ডসাম ফিউচার।”

“ ছেলের সব কিছু এত হ্যান্ডসাম বাসন্তী? “
“ অবশ্যই হ্যান্ডসাম না হওয়ার তো কোনো কারণই দেখছিনা আমি।”
“ দাঁড়িয়ে আছো কি জন্য আমার রুপ দেখার জন্য? আশ্চর্য মানুষ।যাও মেয়েকে বোঝাও।”
“ একটু ফ্রেস হই?”
“ কোনো দরকার নেই।কত কাজ করি আমি সারাদিন তুমি জানো? জানবে কি করে বসে থাকো তো এসির ভেতর।”
মাহীন হতাশ শ্বাস ছাড়ে।
মেয়ের রুমের দরজা ভিড়িয়ে মাহীন ভেতরে ঢুকে।
বাবাকে দেখে মাহরিসা চোখ মুছে উঠে বসে।
মাহীন খাটে মেয়ের পাশে গিয়ে বসে।

“ আমার মায়ের কি সমস্যা জানতে পারি কি?
মা বললো সে এই মুহুর্তে বিয়ে করতে চায় না।”
মাহরিসা নাক টেনে পুনরায় কেঁদে দিয়ে বাবার কাঁধে মাথা রেখে আলতো হাতে জরিয়ে ধরে।
মাহীন মেয়ের মাথায় হাত বুলায়,
“ আমায় সমস্যা বলা যাবে কি?”
“ আমি বলতে পারবো না বাবা।এই মুহুর্তে আমি বিয়েটা করতে চাইনা। মায়ের হ্যান্ডসাম ছেলেকে আমার চাই না।তুমি প্লিজ মাকে বোঝাও।কিছু একটা করো প্লিজ।”
মাহীন হাসলো।মেয়েরা বাবার কাছে যতটা না সহজ হতে পারে মায়ের কাছে তা পারে না। এই ঘটনা পরপর কেন ঘটে আসছে কে জানে।
মাহীন মেয়ের মাথায় ভরসার হাত বুলায়।
“ আচ্ছা, আচ্ছা। তোমার মায়ের হ্যন্ডসাম ছেলেকে নাহয় আমি কোনো ভাবে ভাগিয়ে দিলাম কিন্তু যদি তোমার মায়ের হ্যান্ডসাম ছেলেকে তোমার বাবার ওও হ্যান্ডসাম মনে হয় তখন কি হবে?”

“ নাআআ বাবা।”
মাহরিসা অসহায় মুখ করে চায়।
মাহীন শব্দ করে হাসে।
“ ওকে মাই ডিয়ার মামনী বিয়ে তবে ক্যান্সেল।”
মাহরিসা মিষ্টি করে হাসে।
তার সে হাসির ধরণ অপরূপ।তৃপ্তির।
“ ক্যান্সেল।”
“ ডান মামনী?”
“ ডান বাবা।আমার লক্ষ্মী বাবা।”
বাবা-মেয়েতে হাইফাই দেয়।
এই মিষ্টি খুনসুটিময় সম্পর্কটার জন্যই বোধহয় প্রতিটা বাবা এবং মেয়ের সম্পর্ক গুলো অন্য রকম মিষ্টি হয়।সে মিষ্টি নাতো ছানার আর নাতো গুড়ের কিংবা চিনির।সে এক অন্য রকম সুখ মেশানো মিষ্টি। আদুরে মিষ্টি।

মিষ্টি সকালের তীক্ষ্ণ সূর্যরশ্মি থাইগ্লাসের ফাঁক গলিয়ে জাওয়াদের চোখে মুখে পরতেই ঘুম ছোটে তার।
বিছানায় অদিতি নেই।
মেয়েটা সারারাত তার পাশে বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে ছিলো।যেন আস্ত একটা বাবুই পাখি।তার ছোট্ট পাখি।একদম ছোট। তাই তো মেয়েটাকে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সময় দিয়েছে সে।
তাই তো সারারাত একত্রে একবিছানায় কাটিয়েও মেয়েটাকে গভীর স্পর্শ করেনি সে।হোক তারা স্বামী-স্ত্রী। তার লিটল বার্ড যখন নিজে থেকে তার কাছে ধরা দেবে তখনই সই।সে মনে করে জোড় করে ইন্ট্রিমেট হওয়া আর ধর্ষণ করা সমান ব্যাপার।স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত তার কাছাকাছি যেতে চায় না সে।
করলো নাহয় সে আর একটুখানি অপেক্ষা। সে জানে আজকের কষ্ট তাকে কেষ্ট মেলাবে।
অদিতি তখন তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে।

জাওয়াদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
হঠাৎ জাওয়াদকে দেখে সে হকচকায়।
অদিতির পরনে কালো জামদানী শাড়ি।
কালো শাড়িতে তাকে কালো পরীর ন্যায় লাগছে বোধহয়।
মাথায় ঘোমটা টানা।মেয়েটার চোখ মুখের উজ্জ্বলতা সামান্য বেড়েছে কি?
অদিতি জাওয়াদের এমন চাউনিতে লজ্জায় রাঙা বধূ বনে।
জাওয়াদ অদিতির দিকে এগোয়।
হাত দিয়ে চট করে অদিতির ঘোমটা দেওয়া আঁচল খানা সরিয়ে দেয় মাথা থেকে।
চুলে হাত দিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।
মুখ এগিয়ে ফিসফিস করে সুধায়,
“হঠাৎ এভাবে গোসলের প্রয়োজন পড়লো যে? বাট আমাদের মাঝে তো গোসলের মতো মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবার মত তেমন কিছু হয়নি মাই লাভভভ।”

অদিতি লজ্জায় আরো কুঁকরে যায়।চোখ তুলে তাকানোর সাহসটুকু পর্যন্ত করতে পারে না।
জাওয়াদ আরো ফিসফিস করে বলল,
“আমাকে বারবার এভাবে মিথ্যা ব্লেইম দেওয়ার কাজটা ঠিক করছেন না আপনহি।আপনার শাস্তি কি প্রাপ্য নয় মাই লিটল বার্ড?”
অদিতি এক ছুটে বেরিয়ে যায়।
রমণীর ছুট লাগানোয় জাওয়াদ শব্দ করে হাসলো।
বাইরে এসে অদিতিকে এভাবে হাঁপাতে দেখে রহিমা খালা কৌতূহলী কন্ঠে সুধায়,
“ আপামনি গো এই ভাবে হাফসায় তাছেন ক্যান? মনে হইতাছে আপনেরে পাগলা কুত্তায় দৌঁড়ানি দিছে।
আয়হায় কথা কন না কেন? ভয় টয় পাইছেন নাকি?

আপনারে এক গ্লাস লেবু আর লবন পানি দিয়া সরবত কইরা দেই? দাঁড়ান এখুনি আসতাছি। দেখবেন খাওনের সঙ্গে সঙ্গে আপনের ভয় ডর সবফুরুৎ কইরা পলান দিবো।আহারে।
জামাইডা আওনের পড় থিকাই কি সব ঘটতাছে। এই কি চোখে দেখা যায়। “
অদিতি ফিসফিস করে বলল,
“ পাগলা কুত্তায় দৌঁড়ানি দেয় নি খালা।আপনার আপামনি নিজেই নিজেরে দৌঁড়ানি দিছে।
তার তো এখন দৌঁড় প্রতিযোগিতা চলছে।সে এখন শুধু দৌঁড়াবে আর দৌঁড়াবে বুঝলেন।”

ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে কাশফি আশেপাশে তাকায়।
একবার সে আসতে চায়নি কি মন করে আবার চট করে ব্যাগটা নিয়ে চলে এলো কে জানে।
আশে পাশে তার দু-চোখ নীলাদ্রকে খুঁজতে চেষ্টা করে।পায় না।
নীল সমুদ্র তাকে আসতে আদেশ করে এখন নিজেই সমুদ্রে বিলীন হয়েছে।হুহ।
মাঠের মাঝে সাদাফকে অসহায় মুখ করে বসে থাকতে দেখে কাশফি এগিয়ে যায় সেদিকে।
“ কি ব্যাপার বলতো তোর ভাই? এভাবে গোমড়া মুখ করে বসে আছিস যে? ভাবী তোকে পাত্তা টাত্তা দিচ্ছে না নাকি? হুম হুম?”
সাদাফ অসহায় মুখ করে বোনের পানে চাইলো।
মাথা নাড়লো।

“ একটা ট্রিপস দে বুনু প্লিজ।”
কাশফি মিষ্টি করে হাসলো।
তার সে মিষ্টি হাসিকে তেঁতো করে দিয়ে কোথা থেকে নীলাদ্র ঝড়ের বেগে দৌঁড়ে এসে চট করে সাদাফের পাশে বসলো।
দুই ভাইবোন বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইলো।
নীলাদ্র সাদাফের পাশে এসে বসেছে কাশফি ভুল দেখছে না তো?
তার চোখের চশমাটা সে পুনরায় ঠিক করে লাগালো।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫১

নাহ ঠিকই দেখছে।কিন্তু এ অসম্ভব সম্ভব হলো কেমন করে।সেদিন হসপিটালেও তো সাদাফকে দেখে নীল সমুদ্র মুখ বাঁকিয়ে বেরিয়ে গেল।
তবে হঠাৎ করে এ অসম্ভব সম্ভব হলো কেমন করে?

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here