ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৬৩
মাহিরা ইসলাম মাহী
“ কিন্তু আমার যে সেই ন্যাকাবতী কেই চাই মেরিগোল্ড।”
মাহরিসা হাসলো।হেয়ালি করে বলল,
“ আপনার ন্যাকাবতী এখন ন্যাকামী করতে পারবে না।তবে নতুন করে তার করা বিরক্তগুলো সহ্য করার ক্ষমতা হবে তো আপনার?”
“ করেই দেখনা।সহ্য করতে না পারলে তোকে দ্বিগুণ বিরক্ত করবো প্রমিস।”
মাহরিসা মনে মনে বলল,
“ একবার করেই দেখুন না বিরক্ত। একসপ্তাহের উপোস রাখবো আপনায়।কোন সাবজেক্টে উপোস সেটা ভীষণ গোপন বিষয়। বলতে মানা বুঝেছেন।
তাই বলতে পারছি না দুঃখিত।”
মুখে কথা ঘুরিয়ে বলল,
“আমায় কি দেখে পছন্দ করলেন বলুন তো আদ্রিত ভাই?”
“ আমি কখন বললাম তোকে পছন্দ করি?”
মাহরিসা চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।
এই মুহুর্তে আদ্রিতকে ভয়ংকর একখানা গালি দেবার ইচ্ছে পোষণ করলো তার মন।
আফসোস মুখশ্রী ফেরে তার সে গালি বের হচ্ছে না।
“ ঠিক বলেছেন আমায় পছন্দ করেন বলবেন কেন, আপনি তো আপনার সেই বিদেশী রুপী দেশী বান্ধবী স্মৃতি কে পছন্দ করেন বলবেন। “
আদ্রিত বাঁকা হেসে বলল,
“ আর ইউ জেলাস মারু?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাহরিসা দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ালো।
মাহরিসা হঠাৎ নিজের মাঝে এত সাহস কি করে জোগালো কে জানে।
তবে কেন জানি মনে হচ্ছে তার এই সাহসটা চিরস্থায়ী হবে।
মাহরিসা গাড়িতে উঠে বসলো।
চিৎকার করে বলল,
“ সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। আর কত বসে বসে নদীর হাওয়া খাবেন। আমি বাড়ি যাবো। বাড়ি গিয়ে ভাত খাইয়েন, হাওয়া খেলে পেট ভরবে না।আপনি কি আমায় দিয়ে আসবেন? নাকি আমি একাই চলে যাবো?”
অর্ধাঙ্গিনীর জেলাসীতে আদ্রিত যেন মজা পেল।
পানি থেকে পা তুলে নিয়ে দৌঁড়ে এসে ড্রাইভিং সীটে বসতে বসতে বলল,
“ জেলাসী ইট’স ওকে। পজেসিভনেস নট ব্যাড। বাট ওভার রিয়্যাক্ট নট গুড মেরিগোল্ড।
বিকজ ইউ নো? আ’ম অলওয়েজ ইউর অনলি মাইন।ফ্লেকাচো!”
মাহরিসা ভেঙচি কাটলো।বিরবির করে কিছু বলল।
আদ্রিত ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
গাড়ি স্টার্ট দিলো।
“ এত হাসি আসছে কি দেখে আপনার? আশ্চর্য!”
“ বিরক্ত? “
মাহরিসা মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
“ মুখ ঘুরিয়ে লাভ নেই জনেমন।আপনার সম্পর্ণটাই আমার।সো আমার আদেশ মতন আমার দিকে তাকিয়ে থাকুন।”
“ বয়েই গেছে আমার।”
মাহরিসা গাট হয়ে বসে রইলো।
আদ্রিত মৃদু হাসলো।জোড় করলো না।
“সবক্ষেত্রে জোড় করা সাজে না।মাঝে মাঝে ছাড় ও দিতে হয়।
আদর সোহাগে ও পাখি যদি খাঁচায় বন্দি না হয় ঠিক সেই মুহুর্তে জোড় চলে।
পাখি যদি বেশি উড়ে, অন্য কারো সঙ্গে লটরপটর করে তবে শুধু জোড় নয়।একদম ধরে নিয়ে জবাই করে ফেলাই উত্তম।”
সময় তখন সন্ধ্যা পেরিয়েছে বহুক্ষণ। গাড়ি এসে মাহীনদের বাড়ির সামনে থামতেই। মাহরিসা চট করে নেমে গেল।
আদ্রিত ওও নেমে এলো।
গাড়িতে হেলান দিয়ে পিছু ডেকে সুধালো,
“ তাহলে কাল থেকে আমার ছোট্ট মাহরিসাকে পাবো তো ফিরে?”
মাহরিসা দুষ্টু হেসে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“ স্বপ্ন দেখুন। স্বপ্ন দেখা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।”
আদ্রিত ফিসফিস করে বলল,
“ উহু স্বপ্ন নয়।বাস্তব-ই দেখছি মেরিগোল্ড। এই যে তুই কথা বলতে শুরু করেছিস। চুপসানো ভঙ্গিতে নয় বরং মন খুলে।
আমার বোনা স্বপ্ন গুলোও তোকে নিয়ে ঠিক পূরণ করে ফেলবো দেখিস।”
মাহরিসা নিজ রুমে ঢুকে নাওমী কে দেখে চমকে গেল।
নাওমী পেছনে হাত বেঁধে মাহরিসার চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে দুষ্টু হেসে বলল,
“ কি ব্যাপার বলো তো মারু আপু? রাত করে বাড়ি ফিরলে।হাসি হাসি মুখ।এই, এইই তোমার গাল দুটো এমন লাল হয়ে আছে কেন বলোতো? আই গেসসস তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো।”
মাহরিসা নাওমীর কান টেনে বলল,
“ ওরে দুষ্টু। ফাজলামো না।আমি লজ্জা পাচ্ছি আর তুমি? আমার ভা..বী লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করা হচ্ছে হুম? “
“ আহ ছাড়ো লাগছে তো। ওসব কিছুই নয় বুঝলে।
তোমার হাঁদারাম ভাই প্রেমের ‘প’ ওও বুঝে না।”
“ তাই নাকি?”
“ জ্বী আজ্ঞে। সেদিন কি কাজটা করলো তোমার ভাই? ছাঁদে ডাকলাম তাকে এলোতো নাই অথচ পরদিন আবার এমনভাবে দৌঁড় দিলো পুরো গুষ্টি শুদ্ধ তার পেছন পেছন গেল আশ্চর্য। “
সেদিনের কথা মনে করাতেই মাহরিসা হাসতে আরম্ভ করলো।
নাওমী মিছে রাগ দেখিয়ে রুম ত্যাগ করলো।
দীর্ঘ আধ ঘন্টা যাবত নীবিড় ছাঁদে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে।
আসার সময় সে দেখে এসেছে নাওমী বাসন্তী মায়ের সঙ্গে গল্প করছে।
অথচ এতক্ষণেও মেয়েটার উপরে আসার কোনো নাম গন্ধ নেই কি আশ্চর্য।
সেদিন নীবিড় ভালোবাসার যে উচ্ছ্বাস নিয়ে ছাঁদে গিয়েছিল ঘটেছিল পুরো উল্টো।
“ এভাবে পাগলের মত হাসছেন কেন আপনি? আশ্চর্য! হাসের মাংশ খেয়েছেন? পাবনার পাগলা গারদে ভর্তি করে দিয়ে আসতে হবে?”
নাওমী যেই তার পানে চেয়ে দুষ্ট হেসে কথা গুলো বলল ঘটে গেল বিপত্তি।
নীবিড়ের ইচ্ছে করছিলো সেই মুহুর্তে তার নাউডুবা চশমিশ কে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে,
“ হাসের মাংশ আমি খাইনা মেয়ে।তবে তুমি যে খেল দেখালে তা দেখে এখন তোমার হাতের রান্না করা হাঁসের মাংশ খেতেও দ্বিধা নেই।তোমার হাত ধরে পাবনা যেতেও আমার কোনো অসুবিধা নেই।”
বলা হলো না।নিচ থেকে করে আসা নীবিড়ের সমস্ত জল্পনা কল্পনা ধূলিসাৎ করে দিয়ে
ঠিক সেই মুহুর্তে সেখানে হাজির হলো তিন মানব মানবী।
নিশান,নিশানী আর মাহরিসা।তিনজনে নাওমীর রুমেই ছিলো।ওখান থেকে বের হলো।
মূলত নাওমী চিঠিখানা রেখেছিলো গত রাতে।আর নীবিড় কাল বাড়িতেই ফেরে নি।
মহিষের বাচ্চা কে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে সে নিজেই বিশাল সারপ্রাইজড হয়ে বসেছে।
তাই তো তার মেজাজ এখন তুঙ্গে।
নীবিড়’কে ওভাবে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখে মাহরিসা অবাক কন্ঠে বলল,
“ কি ব্যাপার বলতো ভাই? তুই ওভাবে হাঁটু গেছে বসে আছিস যে ব্যথা ট্যথা পেলি নাকি?”
নীবিড় সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলো,
“ আহহহ।পড়ে গেছি রে মারু ভীষণ ব্যথা কোমরে। “
নীবিড়ের এমন ডাহা মিথ্যা কথায় কথায় নাওমী এক ভ্রু উচিয়ে চায়।
“ কিন্তু আপনি তো হাঁটু গেড়ে পরলেন।কোমরে ব্যথা পেলেন কেমন করে।”
নীবিড় আগের চাইতেও দ্বিগুণ জোরে চিৎকার করে বলল,
“ আহহহহ,তুমি বুঝতে পারছো না নাউডুবা চশমিশ। হাঁটু তে ভর লেগে মাজায় গিয়ে যে ঝাকিটা খেয়েছে তাতেই তো ব্যথা।সবই নিউটনীয় জড়তার প্রভাব বুঝলে।”
নাওমী কৌতুক করে বলল,
“ ওও আই সি।এখন যত দোষ নিউটন দাদার দোষ।”
নীবিড়ের এখন গলা ছেড়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
এভাবে তো মানুষ শত্রুকেও কট খাওয়ায় না চশমিশ সেখানে তুমি তো আমায় ভালোবাসো।
হায়রে কপাল জনম পোড়া,
প্রেম হইয়া ওও হইলো না যে
তাই তো আমি দুঃখে মইরা যাই।
নীবিড় এখন একটা গান-ই মনে পড়ছে,
“ আমি দুঃখে মইরা যাই,
আমি লজ্জায় মইরা যাই।
আমি দুঃখে মইরা যাই, আমি লজ্জায় মইরা যাই আমার সাথে প্রেম করতে চায় সেফালির জামাই।”
নিশান চোখ বড় বড় করে বলল,
“ ভাইয়া।তোমার কোমরে কি বরফ ঢালবো? তাহলে দ্রুত সারবে তো?ভেবেছিলাম কাল তোমায় নিয়ে শপিংয়ে যাবো।আমার কাছে তো টাকা নেই। এখন কি হবে।আমার নতুন প্যান্টটা ছিড়ে গেল। “
নিশানী আফসোস করে কষ্ট মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“ ইশশ, আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে দিয়ে একটা জোকার গানের ভিডিও করে আমার ছোট্ট পেজটায় ছেড়ে একটু ভাইরাল হবো।তুমি তো খুব সুন্দর কোমর দোলাতে পারো।
কিন্তু এখন এই ব্যথা কোমর নিয়ে কোমরটা দোলাবে কি করে।”
নীবিড় হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো।
এরা তার চিন্তা না করে ভাইরাল হবার চিন্তা করছে।
হে ওপরওয়ালা তুমি কোথায় আছো।তোমার এই নিরীহ বান্দাকে তুমি উঠিয়ে নাও।উঠিয়ে নাও।
সেদিনের কথা মনে হতেই নীবিড়ের চোখ মুখ বিতৃষ্ণায় ছেয়ে গেল।
“আপনি এখানে কি করছেন?”
নাওমীর হঠাৎ দারাজ কন্ঠে নীবিড়ের হুঁশ ফিরলো।
চট করে পেছন ঘুরে চাইলো সে,
“ নাউডুবা চশমিশ আমার কথা শুনো।”
“ আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই, না চলে যান।”
“চশমিশ…. “
নীবিড় নাওমীর হাত আঁকড়ে ধরলো।
“ হাত ছাড়ুন। “
“ উহু।”
নাওমী চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে সুধালো,
“আপনি কি হাত ছাড়বেন?”
“ নাআআ।”
নাওমী চট করে নীবিড়ের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।
নীবিড় হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করে উঠলো।
সেই ফাঁকে নাওমী চট করে রুমে ঢুকে নীবিড়ের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো।
নীবিড় অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
কে যেন বলেছিল,
“ নারীর অভিমান ভয়ংকর।আর তা যদি হয় প্রিয় মানুষটির প্রতি। তাদের মন পুড়বে, বরফ গলবে, তবুও মন গলবে না।”
সময়টা তখন সকাল এগারোটা প্রায়।
আশা তাড়াহুড়ো করছিলো।সাদাফকে আজকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে।অনেকটা দেরী হয়ে গেল।সে বারবার করে বলছে রিক্সা ওয়ালা মামাকে জোড়ে চালাতে।
তারওপর ঠিক সেই মুহুর্তে একখানা বাইক হুট করেই রিক্সার সামনে চলে আসলো। আশার মেজাজ টা এত খারাপ হলো।
“ এই ছেলে, এই বেয়াদব ছেলে।রাস্তার মাঝে এমন অসভ্যের মতো রিক্সা থামাচ্ছো কেন। আশ্চর্য। আজ কালকার ছেলে পেলে গুলো এত বেয়াদব।বড়দের সম্মান করতেই জানে না।”
আর কিছু বলার আগেই বাইকে বসা দুটো ছেলের মাঝে সামনে বসা ছোকরা ছেলেটা নিজের মাথার হেটমেট খুলে মিষ্টি হেসে বলল ,
“ আন্টি আপনার শাড়ির আচলটা ঠিক করুন প্লিজ।আরেকটু হলেই ওটা রিক্সার চাকায় যেত।”
আশা চমকে চাইলো এটা তো সেই ছেলেটা। সাদাফের বন্ধু। হসপিটালে ভর্তি করলো তার ছেলেটাকে।
পাশে তাকিয়ে দেখলো আসলেই শাড়ীর আঁচল খানা চাকায় নিজেকে জড়াতে বড্ড পায়তারা করছে।
আশার বিরক্তি মেশানো কন্ঠ মুহুর্তে কর্পূরের ন্যায় উবে গেল।
বরং তাতে মিশ্রিত হলো কেজি খানেক মধু।
আহাঃ এমন মূল্যবোধ সম্পূর্ণ ছেলেরা আজও বুঝি তাদের দেশে আছে।
তাই জন্যই তো এই দেশটা এখনো এত সুন্দর।
আশা আবেগে গদগদ হয়ে বলল,
“ আহাঃ কি সোনার টুকরোর ছেলে।তোমার নামটা যেন কি বাবা? সেদিন তো তোমার নামটা জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস তুমি দেখলে।
নাহলে আজ কি যে হত।কেলেংকারী ঘটে যেত।”
নীলাদ্র বাইক থেকে নেমে এগিয়ে এসে বলল,
“ ইট’স ওকে আন্টি।আপনার আইমিন আপনাদের মত মানুষদের জন্য আমরা তো আমরা সাধারণ জনতা আছি।
আর আমার নামটা নীলাদ্র। নীলাদ্র ফারদিন আন্টি।”
“ আচ্ছা এক সময় করে আমাদের বাড়িতে এসো কিন্তু নীলাদ্র। ভুল বুঝে তোমায় এত কিছু বলার জন্য কিছু মনে করো না বাবা।””
“ জ্বী আন্টি অবশ্যই। আর আমি কিছু মনে করিনি।আমি তো হসপিটালেই যাচ্ছিলাম শুনলাম ব্রো কে আজ ডিসচার্জ করে দেবে।”
“ হ্যাঁ তুমি আসো তবে।ওহ তোমার বাবার নামটা যেন কি?”
“ আ…”
বাকি কথাটুকু নীলাদ্র বলার সুযোগ পেল না পেছনে আরো গাড়ি জড় হয়েছে,তারা হর্ণ দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে রিক্সা ওয়ালাকে রিক্সা ছোটাতে হলো।
সাদাফক ডিসচার্জ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।নীলাদ্র ওও হসপিটালে এসেছে। সুজন মনে মনে বিরবির করলেও মুখে কিছু বলল না।
সাদাফ খানিকটা সুস্থ। একটু ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে পারে।কিন্তু বাম হাতটা বাঁধাই।
নিস্তব্ধতা তার পাশেই দাঁড়িয়ে। অথচ একহাত বাঁধা বলে সে ঠিকঠাক ভাবে বউকে একটু আদর ওও করতে পারছেনা।
সে এখন বুঝতে পারছে।মানুষের পঞ্চ অঙ্গের মাঝে কোনো অঙ্গে একটুখানি ত্রুটি থাকলেই মনে হয় সব বৃথা।
অথচ যারা পঙ্গু? কারো হাত নেই,কারো পা নেই,কেউ কানে শুনতে পায় না,কেউ চোখে দেখে না,কারো কথা বলতে সমস্যা।
তবে তারা কি করে জীবন যাপন করছে?
কই তাদের কষ্টগুলো তো সাধারণ মানুষ অনুভব করতে চায় না।
বরং তারা নাক ছিটকাতেই বড্ড বেশি ভালোবাসে।
আজকাল সমাজের মানুষ গুলো স্বার্থপর।ভীষণ স্বার্থপর।
সকলেই যে স্বার্থের দাস।
বলতে কোনো দ্বিধা নেই।একটুও না।
সাদাফ ফিসফিস করে বলল,
“ নীরুরেএএ তুই কি নিজ থেকে আমায় একটা চুমু খাবি? মাত্র একটা।বুকে হাত দিয়ে দেখ।কেমন ভয়ংকর রকমের চুমু অসুখ করেছে আমার।”
নিস্তব্ধতা আশেপাশে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ তোর কি একটু লজ্জা টজ্জা নেই রে সজনেডাঁটা। দেখছিস তো চারপাশে সকলে। উফফস।”
“ তো কি আমরা আড়ালে যাই? এই চলনা ওয়াশরুমে যাই।”
নিস্তব্ধতা অগ্নি চোখে চাইতেই সাদাফ চুপসে গেল।
কিন্তু খানিকক্ষণ পর সে আবার শুরু করলো,
“ আমার কাছে একবারে কবে আসবি বলতো? আর তো একা একা থাকতে পারছি না।”
“ যাবো না।”
“ এমন করে বলিস না জান।কষ্ট হয় তো বুঝিস না?”
নিস্তব্ধতা মনে মনে বলল,
“ তলর কাছে যেতে তো আমি এক পায়ে খাড়া সাদাফ।কিন্তু মুখে বললেই তো চলে যাওয়া যায় না।সবকিছুর জন্য পারফেক্ট টাইমিংয়ের দরকার আছে।আর সেটা তৈরি করে দেন স্বয়ং ওপরওয়ালা।আমিও নাহয় আর একটু অপেক্ষা করি। তুই পুরোপুরি সুস্থ হ।সব হবে।একটা কেন দেখিস তোকে আমি চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেব।
একটুও কার্পণ্য করবো না। বিশ্বাস কর একটুও না।”
বাসায় ফিরতেই নীলাদ্র নিজ ফ্লাটের সামনে একটি পার্সেল পেল।
বিশাল বড় নয়, মিডিয়াম সাইজের কালো গোলাপের ছাপায় গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো একটি বক্স।
উপরে স্পষ্ট তার নাম লেখা,
“ নীলাদ্র ফারদিন
ইউর স্পেশাল গিফট।”
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৬২
অথচ কে পাঠিয়েছে তার কোনো নাম ঠিকানা নেই।
সে নিজেও তো কোনো পার্সেল অর্ডার করেনি।
তবে?কে পাঠালো এই বক্স? কিই বা আছে এর ভেতরে?
