না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৯
মাইশা জান্নাত নূরা
সারফারাজের পছন্দ করে দেওয়া নীল রংয়ের কাজ করা নরম জর্জেটের শাড়ির সাথে সাদা রংয়ের হিজাবটা পরে পিহু যখন ওর সামনে এসে দাঁড়ালো তখন সারফারাজ পিহুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো….
—”মাশাআল্লাহ, সব কাপড়েই আমার প্রিটিহার্টকে কি ভিষণ প্রিটি লাগে!”
পিহু কিছুটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে সারফারাজকে এভাবে এক দৃষ্টিতে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আর ওকে করা কমপ্লিমেন্ট টুকু শুনে। পরপরই পিহু নিজেকে ধাত*স্থ করলো। মনে মনে বললো….
—”না, পিহু। এই লোকের কথার মায়ায় নিজেকে বাঁধিস না তুই। এই লোকের জন্যই আজ তোর চরিত্র নিয়ে পপেলা চাচী কথা বলার দূঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন। ভুলে যাস না তুই তার বলা কথাগুলো। তোকে বাজারের নোং*রা মেয়েদের সাথেও তুলনা করেছিলেন উনি। তাই এই লোকের থেকে তোকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনার জন্য যা করণীয় করা দরকার তাই কর তুই।”
পরপরই পিহু কিছুটা কঠিন কন্ঠেই বললো….
—”আমাকে শেষ বারের মতো নিজের দান করা পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখে আপনার পরাণ জুড়িয়েছে নিশ্চয়ই? এবার আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিন।”
সারফারাজ পিহুর কিছুটা কাছে এসে বললো….
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—”চলো আমার সাথে তোমায় একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।”
পিহুর মাথায় এবার চরম রাগ চেপে বসলো সারফারাজের কথায়। এই লোকটা তাকে পেয়েছে টা কি! একের পর এক হুকুম করছে তা মানতে বাধ্যও করছে! পিহু তেজী কন্ঠে বললো….
—”আপনার সাথে আমি কোথাও যাবো না। ফাজলামী শুরু করেছেন আপনি আমার সাথে! আমাকে কি পুতুল পেয়েছেন যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে নাচাবেন আর আমি নেচে যাবো?”
সারফারাজ বললো…
—”একটু খাবার দিলে তো ইশারায় রাস্তার কু*কু*র গুলোও পোষ মেনে নিজ ইচ্ছেতে চলে আসে পিছন পিছন। তাদের নিজ ইচ্ছেতে নাচানোও যায়। কিন্তু তোমাকে আমি ভালোবাসি প্রিটিহার্ট৷ যত্নে রাখতে চাই সর্বক্ষণ। তোমার ক*ষ্ট হলে আমারও ক*ষ্ট লাগে বিলিভ মি!”
পিহু সারফারাজের চোখে চোখ রেখে বললো….
—”আমার সব ক*ষ্টে*র মূল এখন আপনি। আমার ক*ষ্টে যদি আপনি সত্যিই ব্য*থি*ত হন তাহলে আমায় মুক্তি দিন এই ব*ন্দী*ত্বে*র জীবন থেকে। আপনার মতো মানুষের ভালোবাসার আমার প্রয়োজন নেই। আমি যেমন ছিলাম তেমনই ভালো ছিলাম। তেমন জীবনেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। হঠাৎ পাওয়া বিলাসিতার জীবন আমার সহ্য হচ্ছে না।”
সারফারাজ বললো…..
—”আগেও বলেছি এখন আবারও বলছি। আমার থেকে তোমার মুক্তি পাওয়া কখনই সম্ভব না। আমি বেঁচে থাকা কালীন ও নয়-ই আমার মৃ*ত্যু*র পরেও নয়। তাই বারবার মুক্তি চেয়ে লাভ নেই।”
—”যদি আপনি আমায় মুক্তি না দেন তাহলে আমি আ*ত্ম*হ*ত্যা করবো।”
পিহুর বলা এই কথায় এবার সারফারাজের রাগ যেনো তার সীমা ছাড়িয়ে গেলো। কপালের ও ঘাড়ের সূক্ষ্ম র*গ গুলো রাগে মূহূর্তেই ভেসে উঠেছে ওর। সারফারাজ ক্ষি*প্ত চোখে পিহুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—”কি বললে তুমি? কি করবে?”
পিহু দমে না গিয়ে নিজের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ সাহস জুগিয়েই বললো…..
—”ম*র*বো আমি। ম*র……!”
পিহু পুরো কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই সারফারাজ পিহুর গলা নিজের ডান হাত দ্বারা শক্ত ভাবে চেপে ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে পিহু ছোঁটার জন্য একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করতে শুরু করলো। সারফারাজ ওভাবে পিহুর গলা চে*পে ধরে রাখা অবস্থাতেই রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললো……
—”ম*র*বি তুই? আ*ত্ম*হ*ত্যা করবি? এতো সাহস তোর? আমি তোকে কি করেছি রে? অসম্মান করি তোর? নাকি তোর সাথে যাচ্ছে -তাই আচারণ করি? কোনটা করি যার জন্য তুই আমার থেকে মুক্তি চাস? ভালোবাসি তোকে কতোবার বলবো? জীবনকে এতোটাই সস্তা ভেবেছিস তুই যে যা ইচ্ছে তাই করবি নিজের জীবনের সাথে আর আমি চুপচাপ তা মেনে নিবো? তোকে বুঝাচ্ছি ভদ্র ভাবে সেটাতে তোর পোষাচ্ছে না তাই না! মুক্তি চাস তাই না! আজ তোকে জন্মের মতো মুক্তি দিবো।”
পিহুর না*টা জোড়া উল্টে আসতে ধরছে এবার। ছটফটের গতিও কমে আসছে। সরফারাজ তখুনি পিহুর গলা ছেড়ে দিলো। পিহু ধপ করে মেঝের উপর শুয়ে পড়লো। নিজের গলায় দু’হাত রেখে কাশতে শুরু করেছে পিহু। একেবারে যেনো মৃ*ত্যু*র দোরগোড়ায় থেকে ফিরে এসেছে এমন লাগছে পিহুর নিজের কাছে নিজের অবস্থা। সারফারাজ পিহুর এতো বা*জে অবস্থা হতে দেখে রাগে আলমারীর পাশের দেওয়ালে স্ব*জোড়ে একটা ঘুঁ*ষি মা*র*লো। সঙ্গে সঙ্গে চা*ম*ড়া ফেঁ*টে র*ক্ত ঝড়তে শুরু করলো সারফারাজের। পরক্ষণেই সারফারাজ নিজের ক্ষ*ত*কে তোয়াক্কা না করে পিহুর কাছে ছুটে এলো। পিহু ততোক্ষণে সেন্সলে*স হয়ে গিয়েছে। সারফারাজ পিহুর মাথাটা নিজের কোলের উপরে নিয়ে ওর গালে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে ওকে ডাকছে…..
—”পিহু! এই পিহু! আমি সরি প্রিটি! আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ৷ আমি তোমার সাথে এতোটা কঠোর আচারণ করতে চাই নি বিলিভ মি। আমার, আমার রাগ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিলো তুমি আমার থেকে মুক্তি না পেয়ে আ*ত্ম*হ*ত্যা করার কথা বললে যখন। আমি সত্যিই তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি। এই পিহু! এই প্রিটি! চোখ খুলো। তাকাও আমার দিকে! এই! পিহু!”
কথাগুলো বলতে বলতেই সারফারাজের দু’চোখ ভিজে উঠেছে। হ্যা পিহুর এমপি সাহেব কাঁদছে। সারফারাজের দু’চোখের পানি টপ টপ করে পিহুর চোখে-মুখে পড়ছে। পরপরই পিহু চোখ মেলে তাকালো। সারফারাজ পিহুকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে একেবারে বাচ্চাদের মতো ডুঁ*ক*রে উঠলো মূহুর্তের মধ্যেই। এক টানে পিহুকে উঠিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো…..
—”আমি অনেক বড় অ*ন্যায় করে ফেলেছি প্রিটি। আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও দয়াকরে। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি পা*গ*ল হয়ে যাবো। বাঁচবো না নিশ্চিত। আমাকে এভাবে য*ন্ত্র*ণা দিও না আর। আমি তোমার সাথেই থাকতে চাই। তোমাকে খুব করে ভালোবাসতে চাই। এতোটা ভালোবাসতে চাই যতোটা দুনিয়া সৃষ্টির পর কোনো পুরুষ তার প্রিয় নারীকে বাসে নি। ততোটা ভালোবাসতে চাই। আমাকে তুমি একটা সুযোগ দিয়েই দেখো। তোমার দিকে কেউ আঙুল তোলার সাহস করবে না কখনও। যারা করবে তাদের আমি শেষ করে ফেলবো। এই দুনিয়া থেকে তাদের অ*স্তি*ত্ব মুছে ফেলবো।”
সারফারাজের এমন কান্না করে পা*গ*ল প্রায় অবস্থা হতে দেখে আর ওর বলা কথাগুলো শুনে পিহুর বুকের ভিতরটা কেমন যেনো করে উঠছে একটু পর পর। এই লোকটা তাকে এতো কি করে ভালোবাসতে পারে এতো স্বল্পসময়েই! নিজেই আ*ঘা*ত করে বসলো এখন নিজেই ওকে আঁকড়ে ধরে কেমন বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে! পৃথিবী জুড়ে যেখানে শ্যমবর্ণ এতো অব*হে*লিত সেখানে এক শ্যমবর্ণের কন্যাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য তাকে একটু ভালোবাসার জন্য একজন সুদর্শন পুরুষ কতোই না পা*গ*লা*মী করছে! কি অদ্ভুত তাই না!
পিহু বললো…..
—”আমি ঠিক আছি এমপি সাহেব। আপনি দয়াকরে এভাবে কাঁদবেন না। কান্না থামান।”
সারফারাজ পিহুকে ছেড়ে দিয়ে নিজের দু’হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে দু’চোখের পানি কোনোরকমে মুছে নিয়ে পিহুর দিকে অস*হা*য় চোখে তাকিয়ে বললো….
—”আমায় ক্ষমা করেছো তুমি প্রিটি!”
পিহু মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিলো। সারফারাজ আবারও বললো…..
—”আমায় কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না প্রিটি! আমি কি এতোটাই খা*রা*প? এতোটাই অ*যোগ্য লাগে আমায় তোমার যে আমার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের জীবনকেও ত্যা*গ করতে চাইলে!”
পিহু মাথা নুইয়ে নিলো। শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—”আপনি সবদিক থেকেই যোগ্য এমপি সাহেব। কেউ আপনাকে অ*যোগ্য বলতে পারবে না। কিন্তু আমি যে বড্ড সাধারণ। ছোট বেলা থেকে এতোটাই অ*নাদরে বড় হয়েছি যে হুট করে আপনার আমার জীবনে আগমন ঘটা, আমার প্রতি আপনার এতো ভালোবাসা দেখানো, আমার ছোট খাটো বিষয় গুলোও লক্ষ্য রেখে যত্ন করা! সবকিছুই আমার মনে ভ*য়ে*র সৃষ্টি করছে। এতো সুখ, এতো আনন্দ আমায় স্বস্তি দিতে পারছে না তাই।”
সারফারাজ পিহুর দু’গালে নিজের দু’হাত রেখে ওর মুখটা তুলে ধরে বললো….
—”তুমি আমার কাছে কতোটা মূল্যবান কিছু তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না প্রিটিহার্ট। তোমায় ছাড়া আমি এখন আর আমার জীবনকে কল্পনাও করতে পারি না বিলিভ মি! তাই ভ*য়ে*র কোনো কারণ নেই তোমার। আল্লাহর দুনিয়ায় তিনি যতোদিন হায়াত রেখেছেন আল্লাহর এই বান্দা তোমার পিছু ছাড়বে না। তোমায় ভালোবাসতে ভুলবে না।”
পিহু এবার লজ্জা পেলো। নজর ঝুকিয়ে ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে নিজের খুশিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো। সারফারাজ বিষয়টা লক্ষ্য করে বললো…..
—”এবার নিশ্চয়ই আমার সাথে কোথাও যেতে তোমার আপত্তি নেই প্রিটি!”
পিহু মাথা এপাশ-ওপাশ নাড়িয়ে ‘না’ সূচক জবাব দিলো। অতঃপর ওরা দু’জনেই মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো। সারফারাজ বললো….
—”চলো তাহলে। আজ তোমায় একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাবো। যেখানে যাওয়ার তোমার মনে হবে আমার থেকে মুক্তি চেয়ে তুমি ভু*লই করেছিলে।”
পিহু আর পাল্টা প্রশ্ন করলো না। অতঃপর সারফারাজ পিহুর হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে আঙিনায় এসে দাঁড়ালো। কমলা ওদের দু’জনকে একে-অপরের সাথে দেখে কি যে খুশি হয়েছে তা ওর চেহারায় ফুটে থাকা খুশির ছাপ দেখেই বোঝা সম্ভব।
পিহুর সৎ মা সোমা ও সৎ বড় বোন সোনালী তখনও আসে নি। সারফারাজ কমলাকে বললো…..
—”তোর আপামনিকে নিয়ে যাচ্ছি বিশেষ জায়গায় বিশেষ কাজে।”
কমলা হাসিমুখে ‘আইচ্ছা’ বললো৷ সারফারাজ পিহুকে নিয়ে বের হলো বাসা থেকে।
তেজ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। পরণে রয়েছে সাদা চেক প্রিন্টের লুঙ্গি ও কালচে রংয়ের ফতুয়া টাইপ কিছু। তেজ বাসায় থাকা সময়টুকুতে এই ধরণের পোশাকই পরিধান করে থাকে। মাথার চুলগুলো এক পাশ দিয়ে সিঁথি উঠানো। তেল চিটচিটে ভাব। আর চোখে বড় ফ্রেমের চশমাটা রয়েছেই। তেজের এমন ছদ্মবেশী সেজে বাড়ির সবার সামনে থাকার একমাত্র কারণ হলো ওর বাবা জামাল খান ও বড় ভাই সারফারাজ ইউসুফ খান।
ওরা দু’জনেই ভিষণ স্ট্রিক্ট স্বভাবের। সবকিছু গোছালো ভাবে করতে পছন্দ করে। পরিবারের কোনো ছেলে সদস্য মেয়েদের সাথে বাহ্যিক ভাবে অতিরিক্ত মেলামেশা করবে, ড্রিংকস করবে, বিভিন্ন ক্লাবে যাওয়া-আসা করবে, জীবনে চলার পথে কোনো ডিসিপ্লিন ঠিক রাখবে না এমনটা জামাল ও সারফারাজ কেউ-ই পছন্দ করে না। যদি কারোর আচারণে এমন কিছু দেখে ওরা তাহলে তাকে উপযুক্ত পানিশমেন্ট পাওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
তেজ বাড়ির সবার সামনে এমন ভোলাভালা ভাবে চলে ঠিক এই কারণেই যেনো জামাল বা সারফারাজ তেজকে কোনো ভাবেই স*ন্দে*হ করতে না পারে। তেজের উপর নজরদারি করার প্রয়োজন মনে না করে। আর এই সুযোগেরই অসৎ ব্যবহার করে তেজ বাহিরের জগতে নিজের মতো করে চলতে পারছে, লাইফ টাকে ফুললি ইন্ঞ্জয় করে কাটিয়ে দিতে পারছে এখনও পর্যন্ত।
নির্ঝর ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে ছিলো। তেজকে নিচে আসতে দেখে নির্ঝর ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো……
—“ব্রো, তুমি একটা চিজ বটে। যাকে বলা উচিত গভীর জলের মাছ।”
এই বলে নির্ঝর ওর হাতে থাকা ফোন থেকে ইউটিউবে ঢুকে দেবের একটা গান ছাড়লো। সাউন্ড মোটামুটি জোড়েই ছিলো। যা তেজের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যর্থ হলো না……
“গভীর জলের ফিস রে তুই
গভীর জলের ফিস
পাব্লিক তাই নাম দিয়েছে
খোকা ৪২০…..”
তেজ কপাল কুঁচকে নির্ঝরের দিকে তাকালো। নির্ঝর ওর দিকে তাকিয়েই নিজের ৩২ পাটি দাঁত বের করে হাসছে। সেইসময় তেজের ছোট চাচী আতুশি একটা গ্লাসে করে গরম দুধ নিয়ে তেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে আদুরে স্বরে বললো……
—”তেজ বাবা, এই দুধ টুকু খেয়ে শেষ করো তো এক্ষুণি।”
তেজ আতুশির হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে নরম কন্ঠে বললো……
—”গতকাল তোমার হাতে তৈরি করে আনা দুধ টুকু ভিষণ মিস করছিলাম চাচী।”
নির্ঝর মনে মনে বললো….
—”মাঝেমধ্যে যখন মা-জ্যষ্ঠী তোমায় তোমার রুমে গিয়ে দুধ দিয়ে আসতো আর তুমি সেই দুধের ভিতরেও হুইস্কিসোডা মিশিয়ে খেতে তা ওনারা কেউ না জানলেও আমি ঠিকই জানি ব্রো। তোমার সব সিক্রেট আমার পেটের মধ্যে দলা পেঁকে আছে। যদি ভু*ল বশতও একটা কিছু বলে বসে তাহলে তুমি নিশ্চিত আমায় তোমার পরণের লুঙ্গি খুলে হলেও বেঁ*ধে উল্টো ঝুলিয়ে বে*ধ*র*ম দিবে। এই ভ*য়ে*ই মুখ ফুটে কিছু বলি না।”
আতুশি তেজকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—”এরপর থেকে কোথাও গিয়ে রাত পার করার হলে আমায় আগেই বলে দিবে তুমি। যাওয়ার আগেই আমি তোমার জন্য দুধ গরম করে বোতলে ভরে দিবো। তাহলে আর মিস করবে না।”
—”ঠিক আছে চাচী।”
এই বলে তেজ নির্ঝরের পাশে এসে বসলো। আতুশিও চলে গেলো নিজ কাজে। তেজ খুব মনোযোগের সহিত দুধ পান করছিলো। গরম হওয়ায় সময় লাগছে। সেইসময় তেজের ফোন বেজে উঠলে তেজ বললো….
—”ফোনটা উঠা আর আমার কানে ধর। আশপাশে এখন কেউ নেই তাই কথা বলতে সমস্যা নেই৷ তবুও আশেপাশে নজর রাখিস তুই। কেউ আসতে নিলে আমায় বলবি। আমি সতর্ক হবো”
নির্ঝর তেজের কথানুযায়ীই কাজ করলো। ওপাশ থেকে নিশার রাগী কন্ঠস্বর ভেসে এলো….
—”এই বাঁ*দ*র ছেলে নিজের পরিবারের সামনে আমায় আন্টি বলে ডেকেছিলে কেনো তুমি?”
নির্ঝর তেজের মাথার কাছে মাথা এগিয়ে নিয়ে ওপাশ থেকে নিশা কি বলছে তা শোনার চেষ্টা করছে। তেজ বললো….
—”তোমাকে আগেও বলেছিলাম যে তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তুমি একরাতের জন্যও আমার বেডপার্টনার হওয়ার যোগ্য নও। তারপরেও নির্ল*জ্জে*র মতো আমার আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে। একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলের থেকে এতোবার রিজেক্টেড হওয়ার পরেও তার পিছনে ঘুরঘুর করতে তোমার এতো কেন ভালো লাগে হ্যা?”
নিশা বললো….
—”আমি নিশা সিনহা তালুকদার। রূপে, গুণে, ধন-দৌলতে কোনো অংশে কমতি নেই আমার ভিতর। বড় বড় বিজনেসম্যান থেকে শুরু করে টপ হ্যন্ডসাম ছেলেরা এই নিশার পিছনে ঘুরঘুর করে তার সাথে যাস্ট ১টা মিনিটের জন্য হলেও কথা বলার ইচ্ছে নিয়ে। আর তুমি! তুমি আমাকে প্রতি পদে পদে নিজের এটিটিউড দেখাতে, আমাকে এড়িয়ে চলতে এই বিষয়টাই মূলত আমার ইগোতে এসে লেগেছিলো। তাই আমার জেদ চেপে গিয়েছে তোমাকে পাওয়ার। সেটার জন্য যদি আমাকে সর্বোচ্চ নির্লজ্জপনাও দেখাতে হয় আমি দেখাবো।”
—”দেখানোর বাকি কি রেখেছো তুমি? তোমাকে আমি স্পর্শ পর্যন্ত করি নি। অথচ তুমি কিনা আমার বাড়িতে এসে সবার সামনে নিজেকে আমার সন্তানের মা বানিয়ে দিয়েছিলে! হাউ চিপ!”
—”চিপ এর দেখছো কি তুমি! অবশ্য আজ যদি আমি ওভাবে তোমার বাড়িতে না যেতাম তাহলে তোমার আসল রূপ সম্পর্কে আমার জানা হতো না। বাহিরের দুনিয়ার সামনে তুমি একজন অতি স্মার্ট প্লেবয় হলেও ঘরের সবার সামনে তুমি নিজেকে যে টিপিক্যাল রূপে তুলে ধরেছিলে সেই নাটকটা আর খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। খুব শীঘ্রই তোমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ জানতে পারবে তুমি আসলে কতো বড় একটা চি*টা*র, বা*ট*পার, মু*খো*শ*ধা*রী, ক্যরেক্টার লে*স।”
নিশার কথাগুলো শুনে রাগে তেজের কপালের সূক্ষ্ম র*গ গুলো ফুলে উঠেছে ইতিমধ্যেই। তেজ অত্যন্ত রাগ নিয়ে বললো…..
—”Shut the fu*ck up you damn bit*ch.!”
(বঙ্গানুবাদঃ বলবো না। কারণ ইহা একখানা পঁ*চা গা*লি। গল্পের স্বার্থে তেজের চরিত্রের সাথে যায় তাই ব্যবহার করা হয়েছে। যারা বুঝেন তারা 💥)
নিশা হাসতে হাসতে বললো…..
—”যদি নিজের পরিবারের সামনে ফাঁ*সতে না চাও তাহলে আমার জি*দ পূর্ণ করে আমার হয়ে যাও।
নয়তো বাঁচার ২য় কোনো অপশন তোমার কাছে নেই বেব।”
তেজ ওর অর্ধ খাওয়া দুধের গ্লাসটা হাত থেকে ছুঁ*ড়ে ফেলতে নিয়েও নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গ্লাসটা টি-টেবিলের উপর রেখে নির্ঝরের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বাঁ*কা হেসে বললো…..
—”ঠিক আছে বেইবি, আগামীকাল তোমার সাথে সাক্ষাৎ এ যা কথা বলার বলবো কেমন?”
এই বলে তেজ নিশাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই খ*ট করে কলটা কেটে দিলো।
সেইসময় নির্ঝরের মা অর্থাৎ তেজের মেজো চাচী শিউলি হুট করে বললেন…
—”আমি কি কানে ঠিক শুনলাম! তেজ বাবা! তুমি কাউকে বেইবি বলে সম্বোধন করলে ফোনে?”
সঙ্গে সঙ্গে তেজ আর নির্ঝর ভূ*ত দেখার মতো চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালো শিউলির দিকে। নির্ঝর একবার ঢো*ক গি*লে মনে মনে বললো….
—”আব তো তেজ ভায়া তুম গেয়া!”
(বঙ্গানুবাদঃ এখন তো তেজ ভাইয়া তুমি শেষ)
পরপরই নির্ঝরের স্মরণ হলো তেজ ওকে আগেই ও*য়া*র্ন করেছিলো কেউ আসতে নিলে যেনো ওকে সতর্ক করানো হয়। কিন্তু নির্ঝর ওদের দু’জনের মধ্যকার কথা শোনার তালে হারিয়ে গিয়ে এই খেয়াল আর করে। নির্ঝর ঠোঁট উল্টে নিলো সঙ্গে সঙ্গে। সকালে তো পালিয়ে বেঁচেছিলো কোনোরকমে। এবার আর তেজের হাত থেকে নির্ঝরের রক্ষে নেই৷
তেজ নিজের চেহারায় ভোলাভালা সেই আদলখানা ফুটিয়ে তুলে শিউলিকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
—”চাচী, আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো গরুর একটা নিজস্ব ছোট্ট খামার তৈরি করা৷ আমি কয়েকদিন আগেই সেই খামারটা তৈরি করার কাজ সম্পন্ন করেছি। আমার সেই খামারে ছোট ছোট অনেক গুলো বাছুর আছে। যাদের আমি আদর করে বেইবি বলে ডাকি। খামারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ যাকে দিয়েছিলাম তিনি একটু আগে কল করে বললেন একটা বাঁছুর সকাল থেকে কিচ্ছু মুখে তুলছে না এমনকি নিজের মায়ের দু*গ্ধও না। তাই আমি তাকে বললাম ফোনটা বাঁছুরের কানের কাছে ধরতে। লাউডস্পিকার অন রাখতে। বাঁছুরগুলো আমায় এতো আপন করে নিয়েছে যা বলার মতো না। আমি বেইবি বেইবি বলে ডাকছিলাম আমার কন্ঠ শুনেই সে শান্ত হয়ে গিয়েছে। নিজ থেকেই মায়ের কাছে গিয়েছে দু*গ্ধ পান করতে। এটাও বললাম কাল ওদের সাথে দেখা করে আসবো।”
তেজের মুখে এমন অ*বা*স্তব কাজের বর্ণনা শুনে নির্ঝরের মুখ হা হয়ে গিয়েছে। তেজের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে আছে। শিউলি আদুরে স্বরে বললো….
—”আউউ, কি সুইট আমার বাচ্চাটা। অনেক ভালো কাজ করেছো তুমি বাবা। আমাদের সবারই আসলে উচিত অবলা প্রাণীদের যত্ন করা। তাদের ভালবাসা দেওয়া। আমি খুব খুশি হয়েছি তোমার এই কাজে।”
তেজ বললো….
—”দোয়া করবেন আমার জন্য মেজো চাচী। আমি যেনো সামনেও এমন আরো ভালো ভালো কাজ করতে পারি।”
—”দোয়া ও ভালোবাসা তোমার জন্য সর্বক্ষণ আছে বাবা।”
এই বলে শিউলি পরপরই নির্ঝরের মাথায় একটা গা*ট্টা মা*র*লে*ন। নির্ঝর নিজের মাথার সেই স্থানে হাত বুলাতে বুলাতে বললো….
—”আমায় মা*র*ছো কেনো মা? আমি কি করলাম?”
—”কিছু করিস না জন্যই মা*র*ছি। সর্বক্ষণ তেজ বাবার সাথে সাথে ঘুরিস তবুও কখনও তোর একটা গুণের গল্প পর্যন্ত শুনলাম না আমরা। ওর সাথে থাকিস ভালো কথা৷ ওর দেখে একটু কিছু শিখলেও তো পারিস। তাহলেও তো জীবনে কিছু না কিছু করতে পারবি। এখনও বলছি, সময় থাকতেই নিজেকে ঠিক কর বাঁ*দ*র ছেলে।”
এই বলে শিউলি স্থান ত্যগ করলেন। পরক্ষণেই তেজ নির্ঝরের পশ্চাৎদেশে জোড়ে একটা চি*ম*টি কাটলো। নির্ঝর নিজের পশ্চাৎদেশের উপর হাত রেখে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো….
—”ব্রো এতো জোরে কেউ চি*ম*টি কা*টে!”
তেজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..
—”এবার পিছনে মা*র*লাম এরপর একদম জায়গা মতো মা*র*বো। তখন আর মুখ দিয়ে সাউন্ড বের করার মতো অবস্থাতেও থাকবি না। লাল-নীল বাতি জ্বলবে কেবল তোর মুখজুড়ে বুঝলি! ই*ডি*য়েট।”
এই বলে তেজ পিঠ ঠেকিয়ে দু’চোখ বুঁজে নিলো। নির্ঝর নিজের চেহারাজুড়ে অ*স*হা*য় ভাব ফুটিয়ে তুলে মনে মনে বললো…..
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৮
—”আগে গেলেও দো*ষ
পিছনে গেলেও দো*ষ
মাঝামাঝি থাকলেও দো*ষ
তাই যতো দো*ষ নির্ঝর ঘোষ।
থুরি আমি তো নির্ঝর খান। কপাল আমার কতো খারাপ চিন্তা করা যায়! পদবীর জন্য মনের দুঃ*খে কবিতাও বানিয়ে বলতে পারি না।”