নিষিদ্ধ অনুভূতি শেষ পর্ব 

নিষিদ্ধ অনুভূতি শেষ পর্ব 
আহমেদ হৃদ

ধরনিতে আধার নেমে এসেছে। জঙ্গলে ঘেরা নিস্তব্ধ রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে ওয়াইট কালারের একটি কার। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, অদূরে কোথাও শেয়ালের হাঁক কানে আসে। জনমানব থেকে দূরে, সবুজ সমারোহের মাঝে পিচঢালা রাস্তাটা বেশ ভুতুড়ে দেখায়! এইযে, খানিক আগেও কতগুলো গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেলো, এখন কিছুই নেই তার। পুরো শুনশান নীরবতায় ছেঁয়ে চারপাশ। গাড়ির ভেতর থেকে খুটখাট শব্দ আসছে। গাড়ির ভেতরে এক পুরুষের অবময়। সে হাতের ফার্স্ট এইড বক্সটা আগের স্থানে রেখে দিলো। তাকালো তানিয়ার দিকে। এই বেহায়া চোখদু’টি যেন সরছেই না ওই মুখ হতে। কেন?

আগুন্তক এর কারন সম্পর্কে অবগত। হুট করে মাথায় প্রশ্ন এলো,’কে পারে এই মানুষটার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে?’ ঠোঁটের কোন প্রসারিত করে হাসে আগুন্তক। তার হাতে মিনারেল ওয়াটার-এর বোতল। ছিপি খুলে মুখে পানির ছিটে দিতেই, চোখের পাতা পিটপিট করতে লাগলো তানিয়া। চোখ খোলার অব্ধি শক্তি বুঝি তার মাঝে নেই। শুষ্ক চেহারা। কিছুক্ষণ নিজের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে চোখ মেলে তাকালো তানিয়া। আবছা অন্ধকার চারপাশে। কোথায় সে এখন? জিবনের মোড় আবার কোথায় এনে ফেললো তাকে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চারপাশে চোখ বোলায় তানিয়া। সে এখন গাড়িতে। গাড়ির মধ্যস্থ হলদে আলোয় উজ্জ্বল। তানিয়া দ্রুত উঠে বসে। সে তো ড্রইংরুমে ছিলো, এখানে কি করে এলো? ওই ছেলেটা তাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে না তো? তানিয়া সচেতন দৃষ্টিতে পাশে তাকায়। পাশের ব্যাক্তিটিকে দেখতেই চমকে উঠলো তানিয়া। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় তার নিস্তেজ আঁখিজোড়া। সে কি স্বপ্ন দেখছে? হ্যা, সে স্বপ্নই দেখছে! চোখে ঘোর অবিশ্বাস তানিয়ার। তানিয়া কম্পয়মান হাতখানা তুলে আগুন্তকের গাল স্পর্শ করে। চট করে মুচকি হাসলো আগুন্তক। একগালের টোল দৃশ্যমান তার প্রাণোচ্ছল হাসিতে। তানিয়া থমকে গেলো। দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে ফেললো। এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না সে! খানিক্ষণ স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে তানিয়া। আচমকা ছলছল করে ওঠে তার চোখদুটি। ক্লান্ত কন্ঠে বিরবির করে বলে ওঠে,

‘অভ্র!’
ঠোঁটের কোনের হাসিটুকু প্রাসারিত হয় অভ্র’র। তানিয়া ঝাপিয়ে পড়ে অভ্র’র বুকে। শক্ত করে খামচে ধরে শার্ট। উষ্ণ বুকে মাথা গুঁজে শ্বাস টানে কয়েকবার। শান্তিতে বুজে আসে দু’চোখের পাতা। যেন কয়েক যুগ পর সে মানুষটাকে পেয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চোখের পানিতে ভিজে যায় শুভ্র শার্ট। কষ্টে নয়, এ যে তিব্র সুখের কান্না! তানিয়া তবু ছাড়ে না। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তারমানে, জ্ঞান হারানোর আগে দেখা দৃশ্য কল্পনা ছিলো না! সত্যিই অভ্র এসেছিলো তাকে বাঁচাতে। অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো তানিয়া,
‘আপনি এসেছেন? এসেছেন আপনি?’
অভ্র পরম যত্নে তানিয়ার চুলে চুমু খায়। দু’বাহুর শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ করে প্রেয়সীকে। তারা যেন মিশে যেতে চায় একে-অপরের সাথে আজ। বুকের অতলে, অতিব গহ্বরে। অভ্র তানিয়ার মাথায় হাত রাখে। সংকীর্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

‘এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না?’
তানিয়া মাথা ঝাঁকায়। যার অর্থ, হচ্ছে তার বিশ্বাস। অভ্র’র শরীর থেকে অদ্ভুত এক সুবাস ভেসে আসছে। এই সুভাস নেশার মতো টানছে তানিয়াকে। তানিয়া শ্বাস টানে বুক ভরে। আরও সিঁটিয়ে যায় সুঠাম বুকে। অভ্র মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। বলে ওঠে,
‘আই লাভ ইউ। লাভ ইউ সো মাচ! উইদাউট ইউ, দিস টু ডেইস আই হ্যাভ বিন হাঙরি লাইক আ থার্স্ট’টি এ্যানিমেল ইন দি ডিজার্ট, লাইফ হ্যাজ বিন হার্ড।’
‘লাভ! আ’ম দি সেইম।’

তানিয়া মাথা তুলে তাকায়। অভ্র’র খোঁচা খোঁচা চাপদাড়ির ফাঁকে ক্ষুদ্র এক আঁচড়ের দাগ। নরম হাতে ছুঁয়ে দেয় তানিয়া। কি সুখ চারপাশে! কতদিন পর এই সুখের দেখা পেলো সে? মনে নেই! সুখেরা যেন লহুরি তুলে ছুটছে চারপাশে। তানিয়া তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে অভ্র’র মুখপাণে। অভ্র’র গভীর দৃষ্টিও অকপটে তানিয়ার দিকে স্থির। কিছু সময় এভাবেই অতিবাহিত হয়ে যায়। তবু এই চোখদু’টির তৃষ্ণা মেটবার নাম নেই। অভ্র মনের গহীন থেকে দোয়া করলো, না কমুক এই তৃষ্ণা! সারাজীবন এভাবেই কেটে যাক।
‘এতো দেরি কেন করলেন আপনি? আমি তো আর একটু হলে মরেই..’
মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো অভ্র। স্পষ্ট স্বরে জবাব দিলো,’এভাবে বলবেন না। বুকে এসে লাগে।’
আবারো আঁখিজোড়া ভিজে ওঠে তানিয়ার। অভ্র তানিয়ার কপালে চুম্বন করে। কপালে ঠোঁট ছোঁয়ানো অবস্থাতেই প্রশ্ন করে অভ্র,

‘আমায় বিয়ে করবেন, তানিয়া?’
অভ্র’র আকস্মিক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নে ভরা চোখের পানি উপচে পড়ে গালবেয়ে তানিয়ার। এক চিলতে হাসে তানিয়া। মাথা উপর নিচ করে ‘হ্যা’ বোঝায়। আবারো তানিয়াকে বুকে জড়িয়ে নেয় অভ্র। ক্ষিণ কন্ঠে আওড়ায়,
‘আমি ভেবেছিলাম আপনি আমায় এভয়েড করছেন। তাই..আ’ম সরি। সত্যিই আমি দুঃখিত!’
তানিয়া প্রতিত্তোরে কিছু বলতেই পারলো না। সে বাকরুদ্ধ! অভ্র, এই মানুষটা তাকে ভালোবাসে! বিয়ে করতে চায়। যে স্বপ্ন তানিয়া প্রতিটা দিন দেখতো, আজ তা পূর্ণ হতে চলেছে। কি সুন্দর না? তানিয়া মৃদু হাসে। অভ্র আবারো বলতে লাগলো,

‘আমি আপনাকে নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে চাই না তানিয়া। আজকেই আপনাকে বিয়ে করবো। এ্যাজ এনি কস্ট! আপনি হীনা আমি যে প্রতিটা সেকেন্ড ধুঁকে ধুঁকে মরছি। এ যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারছি না আর।’
অসহায় শোনালো অভ্র’র কন্ঠ। তানিয়া মাথা তুলে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো,’আজকেই?’
‘হ্যা, আজকেই!’ বলে থামলো অভ্র। কি যেন ভেবে আবারো বলে উঠলো,’জানেন তানিয়া? ভাইয়া-ভাবী আমাদের জন্য রেজিস্ট্রার অফিসে অপেক্ষা করছে। ভাইয়া যখন আমায় বললো আপনাকে নিয়ে আসতে, আমি ভয় করছিলাম। আরও চমকেছিলাম যখন ভাইয়া বললো সে নাকি আগে থেকেই রেজিস্ট্রার অফিসে থাকবে। আমি তো দ্বিধায় ছিলাম, পারবো তো আপনাকে আনতে? আর..আর ভাইয়ার এতো আত্নবিশ্বাস যে সে আগেই চলে গেছে সব পেপার্স রেডি করতে।’

বলতে বলতে হেসে ফেললো অভ্র। তানিয়া মুগ্ধ হয়ে দেখে ওই হাসি। অভ্র দু’হাত তানিয়ার গালে রাখে। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘আপনি রাজি তো, তানিয়া?’
‘না।’
জবাব দিলো তানিয়া। ভ্রু কুঁচকে এলো অভ্র’র। তানিয়া অভ্র’র হাত ছাড়িয়ে আগের জায়গায় গিয়ে বসলো। জানালার বাইরে তাকানোর চেষ্টা করলো, তবে ব্যার্থ হলো। কাচ ওঠানো। তবু সেদিকেই তাকিয়ে রইলো সে। অভ্র বিহ্বল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
‘না? কেন?’

‘কখনো কোন স্বামিকে দেখেছেন নিজের বউকে আপনি করে বলতে? আমি কি বুড়ি? আগে তুমি করে বলুন।’
অভ্র শ্বাস ছাড়লো। এতোক্ষণ নিশ্বাস আঁটকে ছিলো যেন। থাকার মতোই কথা নয় কি? বললো,
‘আচ্ছা।’
‘আচ্ছা? ব্যাস?’
অভ্র থতমত খেয়ে তাকালো। আর কি বলবে সে? কি বলা উচিত? ভেবে পেলো না অভ্র। গলা পরিষ্কার করে বলে উঠলো,
‘হ্যা..তো..?’
‘আগের মতো ‘তুমি’ সম্মোধন করে প্রপোজ করুন।’
অভ্র জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। ক’সেকেন্ড সময় নিয়ে ধাতস্থ করে নিজেকে। অতঃপর সজল কন্ঠে প্রস্তাব দেয়,
‘তুমি কি আমায় বিয়ে করবে, তানিয়া?’

তানিয়া লজ্জা পায়। সাথেসাথে মাথা নিচু করে নেয়। ইশশ্! এই দৃশ্য সে কতবার কল্পনা করেছে! প্রতিবার তানিয়া বিভিন্ন রঙে-ঢঙে প্রস্তাব গ্রহন করেছে। কিন্তু আজ যখন সত্যি হলো, এখন কেন সরাসরি ‘হ্যা’ বলতে পারছে না সে? সত্যি বলেই কি? তানিয়া কোনমতে জবাব দেয়,
‘অবশ্যই রাজি।’
অভ্র তৃপ্তির হাসি হাসে। কালকে এই সময়েও সে ভেবেছিলো চির তরে বুঝি হারিয়ে ফেলেছে সে তানিয়াকে। অথচ ভাগ্যের কি পরিকল্পনা! কে জানতো ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন সৃষ্টিকর্তা? অভ্র পাশে রাখা খাবারের ব্যাগটা এগিয়ে দিলো তানিয়ার দিকে। তানিয়া জিজ্ঞেস করলো,’কি এতে?’
‘শুকনো খাবার রাখা আছে। খেয়ে নেও।’
তানিয়া নিয়ে নিলো ব্যাগটা। ব্যাগ নিতে গিয়ে অভ্র’র হাতের ক্ষতের দিকে চোখে পড়লো তানিয়ার। তানিয়া খপ করে ধরলো হাতটা। ছিঁলে গেছে অনেকটা। রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে উঠেছে। অভ্র বুঝতে পেরে ছাড়িয়ে নিলো হাত। তানিয়া ভ্রু-যুগল কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করে,

‘কিভাবে হয়েছে এটা?’
‘তেমন কিছু নয়। তোমায় আনার সময় হাতাহাতি হয়েছিলো একটু। তখনি লেগে গেছে হয়তো!’
বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো অভ্র। তানিয়া আর কিছুই বললো না। আরিফ যে তাকে এমনি এমনি আসতে দেবে না, সেটা ভালো করেই জানে তানিয়া। তানিয়া খাওয়ায় মন দিলো। পেটে কিচ্ছু নেই৷ অভ্র’কে পাওয়ার আনন্দে ক্ষিদের কথা ভুলে গিয়েছিলো সে। এরিমধ্যে গাড়ি চলতে শুরু করেছে। নির্জন রাস্তা ধরে তিব্র গতিতে ছুটছে। বনজঙ্গল, জনমানবহীন এলাকা ছেড়ে শহরে চলে আসে তারা। খানিক বাদেই এক অফিসের সামনে থেমে যায় গাড়ি। দু’জনে নেমে পড়ে। তানিয়া চোখ বড়বড় করে চারপাশে তাকায়। কতো মানুষ! কতগুলো কপোত-কপোতী বসে আছে। কারো চোখে নতুন জিবন শুরুর জন্য আনন্দ, কারোবা মুখ ভর্তি চিন্তার ছাপ।

‘কি দেখছো?’
অভ্র’র কন্ঠ শুনতেই সেদিকে তাকালো তানিয়া। কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অভ্র, তানিয়া খেয়াল করেনি। বললো,
‘কিছুনা।’
‘তোমার আব্বুর জন্য মন খারাপ হচ্ছে?’
মুহুর্তে চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো তানিয়ার। মন খারাপ? তানিয়া তাচ্ছিল্য হাসলো। যেন হাস্যকর কোন কথা বলেছে অভ্র। শক্ত করে অভ্র’র হাত ধরে নিলো তানিয়া। কোন কথা না বলেই হাঁটতে লাগলো অফিসমুখো। অভ্র বুঝলো, বাবা নামক মানুষটার প্রতি এতোটুকু ভালোবাসা আর অবশিষ্ঠ নেই তানিয়ার মনে। ওরা ভেতরে ঢুকতেই দেখলো পেলো আরু-রুদ্র’কে। দূরের এক বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষারত দুজনে। তানিয়াকে দেখতেই ছুটে এলো আরু। বুকে জড়িয়ে নিলো বান্ধুবীকে। মুখ গোমড়া করে তাকালো তানিয়ার দিকে। অভিমান করে বললো,
‘কি হয়েছিলো রে তোর? জানিস, অভ্র ভাইয়া কত কষ্ট পেয়েছে?’

তানিয়া ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায় অভ্র’র দিকে। অভ্র বুঝি লজ্জা পায়, মাথা চুলকাতে চুলকাতে অন্য দিকে ফিরলো। তানিয়া একটু হেসে আরুর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
‘সব কষ্ট দূর করতে তো চলেই এসেছি।’
আরু হাসলো শুধু। রুদ্র এগিয়ে আসে। অভ্র’কে তাড়া দিয়ে বলে ওঠে,’ভেতরে চল। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তোদের জন্য।’
অভ্র মাথা নাড়ে। রুদ্র, তানিয়া, অভ্র একসাথে ভেতরে যায়। আরু বাইরেই রইলো। মহুয়া একটু পরপর কল করছেন। জিজ্ঞেস করছে, আজকে তারা এলো না কেন! আরু কি রে বোঝায়, তার মায়ের কাছে পৃথিবীর সবথেকে ভদ্র, সভ্য মেয়েটার বিয়ে দিতে এসেছে সে!

অভ্র আর তানিয়ার ছবি তোলা শেষে কাজি সাহেব সমস্ত পেপার এগিয়ে দিলেন অভ্র’র দিকে। প্রথমে সে সাইন করবে। তারপর তানিয়া। অভ্র সাইন করলো। তার মুখে উজ্জ্বল হাসি। জিবনের কত আকাঙ্খা জড়িত প্রাপ্তি পেলে মানুষ এতো খুশি হয়? পেপারটা এবার তানিয়াকে দিলো অভ্র। তানিয়া কলম তুলে নিতেই, আরিফ সেহরানের মুখখানা ভেসে ওঠে দু’চোখের পাতায়। তানিয়া অগাহ্য করে, এক নিঃশ্বাসে সাইন করে দেয় পেপারে। কাজি সাহেব হাসেন। স্ব-শব্দে বলে ওঠেন,’আলহামদুলিল্লাহ।’

ইলিমা সারা ঘরে পাইচারি করছেন। আরু-রুদ্র সে-ই যে বেরোলো, এখনো তাদের ফেরার নাম নেই। যদিও এ বিষয়ে তিনি অতোটা চিন্তা করছেন না। ওদের সবে বিয়ে হয়েছে, ওরা যেতেই পারে! ইলিমার চিন্তা হচ্ছে অসুস্থ ছেলেটার জন্য। সে কোথায় গেলো? ডাক্তার বলেছে খেয়াল রাখতে, যত্ন নিতে। অথচ ছেলেটাকে দেখো, কোন হদিস নাই। কিছু ঘটিয়ে না ফেলে আবার!
ইলিমা এ নিয়ে সপ্তমবার জু্ঁইয়ের কাছে গেলেন। চিন্তিত কন্ঠে বললেন,’ফোন দে তো আরেকবার অভ্র’কে।’
জুঁই ফোন দিলো আবারো। রিং হচ্ছে, কিন্তু ধরছে না। ফোনটা কেটে গেলো ফের। পাশে বসে জেবা চানাচুর চিবুচ্ছে। ইলিমা আবারো সারাঘর চাইচারি করতে লাগলেন। হুট করে জেবার দিকে চোখ পড়লো। তিনি তিরিক্ষি গলায় বলে উঠলেন,

‘অসুস্থ ভাই বাইরে! আর একে দেখো, মনের সুখে চানাচুর খাচ্ছে। যেন দুনিয়াতে কোন দুঃখ-ই নেই!’
জেবা মুখ ভরে চানাচুর নিয়েছিলো তখন। কোনমতে বললো,’ফোন দিলেও ভাইয়া ধরবে না। অযথা চিন্তা করো না তো!’
‘চিন্তা করবো না? তুই কি এখনি পর ভাবতে শুরু করেছিস, জেবা? ছিঃ ছিঃ-‘
‘উফফ্, তুমি বরং এক কাজ করো মা; অনলাইন থেকে ভালো রেস্টুরেন্টের খাবার অর্ডার করো। দেখ, এমনিতেও আজকে বাড়িতে কিছুই রান্না হয়নি। তার থেকে ভালো অর্ডার করি। আর, নতুন অতিথিকে তো আর অভুক্ত রাখা যায় না!’
ইলিমা প্রথম কথাগুলোয় বেজায় রেগে গেলেও, শেষের কথাটা শুনে ভ্রু যুগল বেঁকে তাকালেন জেবার দিকে। সন্দিহান কন্ঠে বললেন,

‘নতুন অতিথি মানে? কি বলতে চাইছিস-‘
‘সবুর করো। এলো বলে..’
ইলিমা ব্যাঙ্গ করে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আরেকবার পাইচারি করে তিনি সোফায় এসে বসলেন। সেই মুহুর্তে বেজে উঠলো ডোরবেল। তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ালেন ইলিমা। সাথে উঠলো জেবা, জুঁই। ইলিমা একপ্রকার দৌড়ে গেলেন দরজা খুলতে। কিন্তু দরজা খুলে তিনি এমন একটি দৃশ্য দেখবেন, কল্পনাও করেননি। অভ্র’র পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। কিছু দূরে দাঁড়িয়ে রুদ্র-আরু। তিনি অবাক নয়নে একপলক রুদ্র’কে দেখে তাকালেন মেয়েটার দিকে। পরিচিত মুখ মেয়েটার। মেয়েটাকে কোথায় যেন দেখেছেন তিনি। চট করে মনে পড়লো ইলিমার। রুদ্র’র এনগেজমেন্টের দিন এই মেয়েটাকেই তো বকছিলো বারবার অভ্র। কত কাজ করালো! আবার, বিয়ের দিনও গেট ধরার সময় তিনি দেখেছিলেন। লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা পরে, কি সুন্দর’ই না লাগছিলো দেখতে! অথচ আজকে কেমন যেন দেখাচ্ছে। মাথায় বিরাট এক ব্যান্ডেজ। চোখমুখ শুকিয়ে গেছে কিছুটা। কিন্তু, এই মেয়ে এখানে কেন? তিনি অবাক চিত্তে জিজ্ঞেসা করলেন,
‘মেয়েটা কে, অভ্র?’
অভ্র এককথায় জবাব দেয়,’তোমার আরেক মেয়ে!’

পাঁচ বছর পর–
সারা বাড়িতে রমরম ভাব। দোতলার পূর্ব থেকে পশ্চিম, পুরোটা সাজানো হয়েছে ফুল, মরিচবাতি ও প্লাস্টিক কাঠামোয় তেরি ডেকোরেশনে। উত্তরে সাজানো হয়েছে ফটো ব্যাগরাউন্ড। শেওলার মতো সবুজ, উপরে সোনালি সোলা দিয়ে ইংরেজি সুন্দর ফন্টে লেখা ‘ফ্যামিলি ফটো’, সোনালী রঙ করা পুরোনো আমলের হারিকেন সহ আয়না, ফুলসহ আরও কত কি! কম বয়সি কিছু ছেলে-মেয়েরা সেখানে ভীর জমিয়েছে ফটো তুলতে। আজ ইরহাম বাড়ির বিশেষ একটি দিন। কত প্রতীক্ষা, অপেক্ষা এই দিনের! সব অবশান করে অবশেষে এই দিন এলো! আয়োজনের কোন ত্রুটি রাখেননি ইরহাম।

রাশেদা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন। পুরো বাড়িতে ডেকোরেশন চলছে পুরো দমে। শ্বাস নিতেও বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি উপরে উঠে গেলেন। ইলিমার কোথাও দেখা নেই! কই যে গেলো! গায়ের জ্যাকেট খুলে ফেলতে ইচ্ছে করছে রাশেদার। ছোটাছুটি করতে করতে হাপিয়ে গেছেন তিনি। না পেয়ে একই পথে ফিরে এলেন আবারো। রান্নাঘরে গিয়েই দেখতে পেলেন ইলিমাকে। চারবছর বছর হলো রাশেদা এসেছে এ বাড়িতে। স্বামী মারা যাওয়ার পর যখন শশুর বাড়িতে ঠাই হলো না রাশেদার, তখনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এই মানুষটা। আগের থেকে কত পাল্টে গেছেন! মাথার কালো কেশ আর আগের মতো নেই। মাঝেমাঝে সাদা চুল উঁকি দেয়। তবুও বয়স বাড়ার ছাপ নেই। নাতি-নাতনীদের পাওয়ার পর যেন নতুন জিবন পেয়েছেন তিনি। রাশেদা ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে ঢুকলো। রাশভারি গলায় বলে উঠলো,

‘কই ছিলেন খালাম্মা? পায়েস তো হইয়া গেছে! আপনে কইছেন দেইখা আমি হাতও দেই নাই।’
‘ভালো করেছিস। আবরার কোথায় রে?’
‘আবরার রিহান বাবাজীবন? হে মনে হয় বাচ্চাগো লগে খেলে।’
ইলিমা আর কিছু বললেন না। পায়েস বাটিতে বেড়ে রেখে দিলেন একপাশে। এরপর ব্যাস্ত পায়ে তিনি বেড়িয়ে গেলেন। উপরে উঠে আরুকে দেখতে পেলেন তিনি। শাড়ি পড়েছে। শাড়ির সাথে চাদর জড়িয়ে পেঁচিয়ে-পুঁচিয়ে একাকার কান্ড। মেয়েটা এখনো শাড়ি পড়া শিখলো না। তিনি এগিয়ে গেলেন। ডাকলেন আরুকে। আরু এগিয়ে এলো চাদর সামলাতে সামলাতে। ইলিমা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘চাদর পড়েছো কেন? অসুবিধা হচ্ছে তো!’
‘সমস্যা নেই মা। আর আজকে চাদর না পড়ে কি সোয়েটার পড়বো? ছবি ভালো আসবে?’
ইলিমা হাসলেন আরুর কথায়। কে বিশ্বাস করবে এই মেয়ে তিন বছর বয়সি ছেলের মা! জিজ্ঞেস করলেন,’তোমার বাবা-মা এসে গেছে?’
আরু মাথা নাড়লো। ইলিমা জিজ্ঞেস করলেন,’রিহান কোথায়?’
‘নানুর সাথে খেলছে।’

ইলিমা হেসে রুমে ঢুকলেন। নাতিকে নিয়ে তখন আহ্লাদে ব্যাস্ত মহুয়া আর আহমেদ সাহেব। তিনি এগিয়ে গেলেন। ইলিমাকে দেখে তিন বছর বয়সী রিহান ছুটে এলো। গায়ে জ্যাকেট। একপায়ের মোজা নেই। নিশ্চয়ই খুলে ফেলেছে আবারো? বুকে ঝাপিয়ে পড়লো দাদির কোলে রিহান। দেখতে ঠিক আরুর মতো হয়েছে ছেলেটা। ভীষণ ছটফটে! ইলিমা রিহানকে কোলে নিয়ে গল্প জুড়লেন তাদের সাথে।
আরু দূর থেকে দেখে মুচকি হাসলো। গায়ের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে পাশের ঘরে গেলো। তানিয়া বসে আছে আয়নার সামনে। আরু গিয়ে বসলো বিছানায়। তানিয়া তাকালো আরুর দিকে। জিজ্ঞেস করলো,
‘কেমন লাগছে আমায়, আরু?’

আরু মন দিয়ে দেখতে লাগলো তানিয়াকে। আগের থেকে একটু মোটা হয়েছে তানিয়া। গাল ফুলে গেছে। আগের থেকে সৌন্দর্য কয়েকগুনে বেড়ে গেছে। মুখে অস্বাভাবিক সুন্দর এক উজ্জ্বলতা সমসময় বিরাজমান আজকাল। থাকবে না-ই বা কেন? এই সময়ে সব মেয়েদের মাঝেই আলাদা একটা সৌন্দর্য আসে। আরু তানিয়ার উঁচু পেট’টার দিকে তাকালো। কয়েকমাস পর চাচী হবে আরু। ভাবলেই লাফাতে মন চাইছে আরুর। বললো,
‘কি যে কিউট লাগছে! আচ্ছা তানিয়া, আজ ফুটবল খেলেনি আমাদের চ্যাম্প?’

‘না।’
‘ওমা, কেন?’
‘ও তো মেয়ে! ও ফুটবল খেলে না। নাঁচ করে জ্বালাতন করে মাঝেমাঝে।’
আরু দাঁত বের করে হাসে। তখনি রাশেদার গলা শোনা গেলো নিচ থেকে। তিনি হেঁড়ে গলায় চেঁচাচ্ছেন। আরু তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। তানিয়াকে ‘দাঁড়া আসছি’ বলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। উপর থেকে রেলিং ধরে নিচে উঁকি দিলো আরু। রাশেদা চেঁচিয়ে বলছেন,
‘আইয়া পড়ছে, আইয়া পড়ছে জেবা আফারা। নিচে আসো হগ্গলে।’
আরু আবারো ছুটলো তানিয়ার রুমে। তানিয়া প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আরু হাসফাস করে বলে উঠলো,
‘জেবারা চলে এসেছে।’

রুমে প্রবেশ করলো জুঁই। তার চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। আগের থেকে বেশি পড়ুয়া হয়েছে কি-না! এসেই বলে উঠলো,’চলো ভাবি, নিচে যাই। আপুরা চলে এসেছে।’
‘উম, আমি নিয়ে যাবো।’
অভ্র’র কন্ঠ শুনতেই জুঁই পিছন ফিরলো। দরজায় অভ্র দাঁড়িয়ে। জুঁই হাসলো। বেড়িয়ে গেলো দু’জনে রুম হতে। জুঁই-আরু বেরোতেই শেরোয়ানির হাতা গোটাতে গোটাতে এগিয়ে এলো অভ্র। তানিয়া মৃদু হাসলো। অভ্র তানিয়ার সামনে হাটু মুড়িয়ে বসে। তানিয়া লজ্জামাখা কন্ঠে বলে,
‘এভাবে বলার কি আছে? ওরা কি ভাবলো?’

‘অভ্র থোরাই কেয়ার করে! নিজের বউকে নিজে নিয়ে যাবো। এতে লাজ-লজ্জার কি আছে?’
তানিয়া কপাল কুঁচকে তাকালো। অভ্র সেদিকে পাত্তা দিলো না। তানিয়ার পেটে গাঢ় চুম্বন করলো। পেটে কান পেতে জিজ্ঞেস করলো,
‘আমার তানহা মামনী কি করে এখন?’
‘ঘুমায়।’
বললো তানিয়া। অভ্র উঠে দাঁড়ায়। হাত ধরে তুললো তানিয়াকে। কপালে চুমু দিলো অভ্র। তানিয়ার একহাত ধরে বললো,’যাওয়া যাক?’

মাথা নাড়ে তানিয়া। রুম থেকে বেড়িয়ে এলো দু’জনে। তানিয়ার হাত ধরে ধীরেধীরে নিচে নেমে এলো অভ্র। নিচে নামতেই ব্যাস্ত পায়ে এগিয়ে এলেন ইলিমা। তার ভীষণ যত্ন। যেদিন ওরা চুপিসারে বিয়ে করে এলো, প্রথমে কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন মেয়েটাকে। পরে যখন বুঝলেন মনেপ্রাণে ভালোবাসে তার অভ্র’কে তানিয়া, তিনি মেনে নিলেন। ধুমধাম করে বিয়ে দিলেন ছেলের। তানিয়া ইলিমার হাত ধরে ড্রইংরুমে গেলো। জেবা একপ্রকার ছুটে এগিয়ে এলো। তানিয়ার গুলুমুলু গাল ছুঁয়ে বললো,’কেমন আছো ভাবী?’
‘ভালো। তোমরা কেমন আছো? পাঁচ বছর পর দেশ কেমন লাগছে?’
‘আমরাও ভালো আছি।’ বলে জেবা রাফিদের দিকে তাকায়। হেলার সুরে বলে,’নিজের দেশের মতো কি পরের দেশ হয়!’

‘সমস্যা নেই। এখন তো এখানেই থাকবে।’
‘তা ঠিক। চলো চলো, ছবি তুলবো সবাই। ফ্যামিলি ফটো তুলবো।’
শেষে কথায় তাড়া দিয়ে উঠলো জেবা। জুঁই বলে,’রেস্ট, খাওয়া-দাওয়া করবি না?’
‘অনেক খেয়েছি। আর রইলো রেস্ট? বসে বসেই তো এলাম।’
সবাই শব্দ করে হেঁসে উঠলো। উত্তরের দিকে চলে গেলো সবাই। রিহান’কে কোলে নিয়েছিলো রাফিদ। রিহান কিছুতেই কোলে থাকবে না। সে তার বাবার কাছে যাবে। অগত্যা তাকে নামিয়ে দিতে হলো! রাফিদ ছুটে রুদ্র’র কাছে যায়। রুদ্র কোলে নিলো রিহানকে। আরু পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের দু’জনের নামের প্রথম অক্ষর মিলেয়ে নাম রাখা হয়েছে ‘আবরার রিহান’। অভ্র আর তানিয়া একসাথে দাড়িয়েছে। মহুয়া, আহমেদ এর সাথে ইরহাম এবং ইলিমা। জুঁই সবার মাঝে।

ফটোগ্রাফার ক্যামেরা হাতে দিলো। ছবি তোলার ঠিক আগ মুহুর্তে ডোর বেল বেজে উঠলো। সবাই বিরক্ত হয়ে চাওয়াচাওয়ি করলো একে-অপরের দিকে। জুঁই গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই একজন অপরিচিত ব্যাক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো জুঁই। কেমন জীর্ণশীর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে লোকটি। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও লোকটির গায়ে কোন শীতবস্ত্র নেই। শুধু একটি শার্ট পড়ে।
‘এটা ইরহাম আজাদের বাড়ি না?’

ধ্যান ছুটলো জুঁইয়ের। জুঁই মাথা নাড়লো। লোকটি ফের জিজ্ঞেস করলো,’তিনি বাড়িতে আছেন?’
এবারেও শুধু মাথা নাড়লো জু্ঁই। ভেতরে আসতে বললো লোকটিকে। লোকটি ভেতরে এলো। সবাই উৎসুকভাবে তাকালো কে এসেছে দেখতে। সবার দেখাদেখি তানিয়াও তাকালো সেদিকে। সহসা চমকে উঠলো তানিয়া। নিজের পিতাকে এরুপ অবস্থায় দেখে থমকে গেলো। তানিয়া ধীরেধীরে এগিয়ে যায়। বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে। এই শিতে কোনকিছু গায়ে কেন দেয়নি আরিফ? শরীর আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে। চোখদ্বয় কোটরে ঢুকে গেছে। চামড়ায় ভাজ পড়েছে। পাঁচ বছরে যেন একদম অচেনা দেখাচ্ছে তাকে। তানিয়া সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ায়। কতদিন পর দেখলো মানুষটাকে! অস্ফুটস্বরে ডাকলো তানিয়া,

‘আব্বু..’
আরিফ ডাকটুকু শুনতেই হু হু করে কেঁদে উঠলেন। উপস্থিত সকলে আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো। আরিফ কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘মারে..মাফ করে দে আমায়। এই কয়েক বছর আমি এতোটুকু ভালো থাকতে পারিনি। অপরাধবোধ খুবলে খেয়েছে আমার প্রতি সেকেন্ডে। মাফ করে দে রে মা, মাফ করে দে।’
তানিয়াও কেঁদে ফেললো। আড়ষ্ট গলায় বলে উঠলো,
‘মেয়ে কি কখনো বাবার উপর রাগ করে থাকতে পারে?’

নিষিদ্ধ অনুভূতি পর্ব ৩৫+৩৬

আরিফ সজল চোখে তাকালেন। ঠোঁটের কোনে তার মৃদু হাসি। ইরহাম নিজের একটি চাদর এনে জড়িয়ে দিলেন আরিফের গায়ে। হেঁসে বললেন,’এসব কান্না ছাড়ুন তো আজ! আমরা সবাই ফ্যামিলি ফটো তুলছি। আপনিও আসুন। সৃষ্টিকর্তা বুঝি অসম্পূর্ণ ফ্যামিলিকে পূর্ণ করলেন এবারে।’
তিনি আরিফ সেহরানকে নিয়ে এলেন সবার মাঝে। তানিয়াও এসে অভ্র’র পাশে দাঁড়ালো। ফটোগ্রাফার ক্যামেরাতে ফের মনোযোগ দিলেন। তোলা হলো এক পরিপূর্ণ ‘ফ্যামিলি ফটো’

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here