নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৩৫
ঝিলিক মল্লিক
কায়েস সবে বাথরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছছিল। তখনই ফোন বেজে উঠলো ওর। দেয়ালঘড়িতে একবার নজর বুলিয়ে নিলো কায়েস। রাত দেড়টা। এই অসময়ে কে কল দেবে! সেলফোনটা বিছানার ওপর থেকে হাতে তুলে নিলো কায়েস। আরবিন স্যার কল দিয়েছেন। কায়েম বুঝলো, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাই তড়িঘড়িতে কল রিসিভ করে জিজ্ঞাসা করলো,
“কী হয়েছে স্যার?”
“কথা বললাম ওর সাথে।”
আরবিনের সহজ-স্বাভাবিক কন্ঠস্বর। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তাতে খাদ বা অস্পষ্টটা নেই এতটুকুও। ওর কথা শুনে কায়েস কৌতূহলী হয়ে বললো,
“কাজ হয়েছে স্যার?”
“নাটক করেও কাজ হলো না।”
“সে কি!”
“হ্যাঁ, তাই-ই। তোমার কথা মোতাবেক ওকে কল করে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করলাম। তাতেও কাজ না হওয়ায় শেষমেশ বেহেড আর মাতাল সাজতে হলো। ওকে বললাম, ওর জন্য আমি নেশা করা পর্যন্ত শুরু করেছি। তখন কী বললো জানো?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কী বলেছে?”
“বলেছে, ওই নেশাদ্রব্যের সাথে একটুখানি বিষ মিশিয়ে গিলে মরে যেতে। তবুও নাকি ফিরবে না। কতটা বেয়াড়া হয়েছে চিন্তা করতে পারো! অথচ ওর জন্য আমি নিজস্ব খোলস থেকে বেরিয়ে লাইফে ফার্স্ট টাইম একটু সলিট অ্যাক্টিং করলাম। নেশা না করেও নন-অ্যালকোহলিক হুইস্কি খেয়ে মাতাল সেজে সুন্দর করে দু’টো কথা বললাম। তবু গায়ে মাখলো না!”
“ নন-অ্যালকোহলিক জিনিসটা পেয়েছেন কোথায় স্যার? ওটার কথা তো আমি আপনাকে বলিনি।”
“নাম মিমসো। ব্র্যান্ডেড জিনিস। হুইস্কি-ফ্লেভারড নন-অ্যালকোহলিক মকটেইলস এটা। এগুলো অ্যালকোহলের মধ্যে পড়ে না বিধেয় নেশা হওয়ার কোনো চান্স নেই। তবে ফিল পাওয়া যায় তেমন। কলেজ লাইফে বন্ধুদের খেতে দেখেছিলাম। আজ নিয়ে আসলাম একটা সুপার শপ থেকে। তবু লুকিয়ে। লোকে চোখে দেখে একটা, বানিয়ে দেয় আরেকটা। এজন্য সবসময় আমাদের কিছু কাজে প্রয়োজন না পড়লেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বুঝতে পেরেছো?”
“ইয়েস স্যার। আমি বুঝতে পেরেছি৷ কিন্তু কথা হচ্ছে, আপনি এখন কী করবেন? ভাবী তো দেখছি খুবই কঠোর।”
“উহুঁ। ও কঠোর ছিল না আগে৷ আমি ওকে কঠোর হতে বাধ্য করেছি।”
আরবিনের এবারের কথাটা কেমন যেন একটু অদ্ভুত শোনালো। কায়েস কানে ফোন চেপে ধরে ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কী বলছেন স্যার? আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না। এতো শক্ত কথা বলেন কেন?”
“আমি এমন-ই কায়েস। কারো কাছে খুব ভালো, আবার কারো কাছে খুব খারাপ। অধিকাংশ মানুষ-ই আমাকে বুঝতে পারে না।”
“আসলেই স্যার। ভাবীও আপনাকে বুঝতে পারে না সম্ভবত। যদি বুঝতে পারতো, তাহলে এভাবে ছেড়ে চলে যেতো না।”
“ওর ছেড়ে চলে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে৷ আমি স্বেচ্ছায় সেই কারণগুলো তৈরি করেছি। তবে ভাবতে পারিনি, ব্যাপারটা এতোদূর গড়াবে। ও আমাকে শাস্তি দিতে চাইছে এখন। তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মে’রে ফেলতে চাইছে।”
আরবিনের কন্ঠস্বর কেমন যেন শোনালো কায়েসের কাছে। ও কিছু বলে ওঠার আগেই আরবিন আবারও ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
“ফোন রাখছি কায়েস। আই উইশ, তুমি আর এই ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। যতটুকু হেল্প করেছো, এরজন্য থ্যাংকস। তবে চ্যাপ্টারটা এখানেই ক্লোজড। যে মন থেকে চলে যেতে চায়, তাকে জোর করে ধরে রাখার কোনো মানে হয় না। রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।”
আরবিন ফোন কেটে ব্যালকনির যেই দেয়াল ঘেঁষে এলোমেলোভাবে বসেছিল, সেখান থেকে উঠে দাঁড়ালো৷ নেশা ও করেনি। তবে ওকে দেখে যেকেউ এই মুহূর্তে মনে করতে পারে, ও নেশা করেছে৷ প্রচন্ড বেপরোয়াভাব৷ চোখ-মুখ লাল। হাত মুঠো করে দেয়ালে কয়েকটা আ’ঘাত করেছিল বিধেয়, হাতে ইনজুরড হয়েছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। সবসময়কার মতো সেই পরিপাটি ভাবটা আর নেই। আরবিন বিছানার ওপর গিয়ে বসলো৷ উহহ! নিজেকে কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না৷ কি অসহ্যকর যন্ত্রণা! এমন ভয়াবহ যন্ত্রণার সম্মুখীন আরবিন এ জীবনে আগে আর কখনো হয়নি। আরবিন উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে লাগলো পুরো ঘরময়।
প্রচন্ড অস্থির অস্থির লাগছে ওর। নিজেকে স্থির করতে পারছে না কোনোভাবেই। মন আর মস্তিষ্কের এই যুদ্ধে মদদ দেওয়ার কোনোপ্রকার ইচ্ছা আরবিনের ছিল না। তবু তারা জোরপূর্বক দ্বন্দ্ব লাগিয়েছে নিজেদের মধ্যে। শেষমেশ এই যুদ্ধে আপাতত মন বিজয়ী হলো। মস্তিষ্ক হেরে গেল। আরবিন এবার পায়চারি থামালো। আবারও গিয়ে বিছানার ওপর বসলো। ঘরে আবছা আলো। বর্তমানে তা-ও সহ্য হচ্ছে না। তাই আরেকটা বাতিও নিভিয়ে দিলো আরবিন। শোবার ঘর এখন পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে আরবিন ফ্লোরে পা রেখে বিছানার ওপর বসলো। সেলফোনটা হাতে তুলে নিয়ে রিদির কাকিমণির নাম্বারে আবারও কল করলো একবার, দুইবার রিং হতেই তৃতীয়বারে কল রিসিভ হলো। ফোনের ওপাশ থেকে রিদির কাকিমণি কিছু বলে ওঠার আগেই আরবিন অস্থির কন্ঠে বললো,
“রিদির কাছে ফোনটা দেন কাকিমণি। প্লিজ।”
“আচ্ছা দিচ্ছি।”
হালিমা খাতুন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জামিয়ার ঘরে গেলেন। রিদি তখন একাই ছিল। বালিশে হেলান দিয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে চোখ বুঁজে শুয়ে আছে ও। হালিমা খাতুন নিঃশব্দে হেঁটে ধারে এলেন। রিদিকে কোমল স্বরে ডেকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“আরবিন।”
“কী চাইছে?”
“তোর সাথে কথা বলবে।”
রিদি উঠে বসে বালিশ সোজা করে তাতে ভালোমতো হেলান দিলো। বিদঘুটে মাথা ব্যাথা করছে ওর৷ মাথার ভেতর চিলিক মারছে। মনে হচ্ছে, এখনই শিরা-উপশিরা সব ছিড়েফেরে যাবে। তবুও রিদি ফোনটা নিলো। হালিমা খাতুন ঘর থেকে বের হতেই সামান্য অস্ফুট স্বরে বললো,
“হ্যালো।”
“কি করছো?”
“শুয়ে আছি। কেন?”
“জিজ্ঞাসা করতে পারি না?”
“সেই অধিকার হারিয়েছেন আপনি।”
“জেদ ধরছো কেন?”
“শান্তি পাই।”
“হঠাৎ এতো পাষাণ হলে যে?”
“আপনি শিখিয়েছেন।”
“আমি?”
“হ্যাঁ আপনিই।”
“আমি তোমাকে শক্ত হতে শিখিয়েছিলাম। পাষাণ হতে নয়।”
“কি আর করার! আমি তো হয়েছি। আর কোনো কথা আছে আপনার? থাকলে জলদি বলবেন। আমার মাথা যন্ত্রণা করছে। কথা বলতে পারছি না।”
“মেডিসিন নিয়েছো।”
“না।”
“কেন?”
“ইচ্ছা হয়নি।”
“নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো? আমার থেকে দূরে গিয়ে ভালো আছো?”
“যেসব মানুষের কাছে আমার কোনো মূল্য নেই, তাদের থেকে দূরে গিয়ে আমি কষ্ট পাই না৷ বরং যথেষ্ট শান্তিতে আছি।”
“জান, মেডিসিন নাও প্লিজ। আর রাগের মাত্রাটা একটু কমাও। ওই রাগ তোমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে তোমাকে অসুস্থ করে তুলবে।”
“রাগ নয়। আফসোস। আফসোস বোঝেন?”
“উহুঁ।”
“কেন বোঝেন না?”
“আমি এমন অনেককিছুই বুঝি না। ইমোশন-ড্যামোশন বোঝার ক্ষমতা খোদাতায়ালা বোধহয় আমাকে দেননি রিদি। এইজন্য তোমাকে বুঝতে পারি না। তোমাকে কী বলা যায় জানো?”
“কী?”
“প্রেমের প্রতিমূর্তি। তুমি গোটা মানুষটাই প্রেম দিয়ে মোড়ানো। তোমার আব্বু-আম্মু তোমাকে অপাত্রে দান করেছেন। সত্যি, তুমি একটা ভালো ছেলে ডিজার্ভ করো। তবু, আমার মতো খারাপ মানুষের সংস্পর্শে যখন একবার এসেছো; তখন ছেড়ে যাওয়ার আর কোনো উপায় দেখছি না।”
“ছেড়েই তো এলাম।”
“তুমি ছেড়েছো। আমি কিন্তু এখনো ছাড়িনি।”
“যার কোনো গুরুত্ব আপনার কাছে নেই, তার জন্য অনুশোচনা করছেন কেন?”
“অনুশোচনা নয়। তুমি বুঝবে না।”
“কেন বুঝবো না? বুঝিয়ে বললেই বুঝবো। আপনি তো কখনো কোনোকিছু বোঝাতে পারেন না। কেন পারেন না? কী সমস্যা আপনার? আমাকে সহ্য হয় না? তাহলে বিয়ে করেছিলেন কেন? কেন বারবার কাছে এসেছিলেন? কেন আমাকে দুর্বল করেছিলেন? নরম মাটি পেয়ে আঁচড় কাটতে চেয়েছিলেন? আমি তো আপনার সাথে সংসার করতে চেয়েছিলাম। আসলে ওটা কোনো সংসার ছিল না। আপনি স্বেচ্ছায় এই ঘর ভেঙেছেন। আমি শুধু একটা খুঁটি ছিলাম মাত্র। ঘর নড়বড়ে দেখেই আমি সরে এসেছিলাম। এখন সেই ঘর ভেঙে পড়লে তো তার দায়বদ্ধতা আমার নয় আরবিন। আপনি কেন বারবার আমাকে দোষারোপ করবেন?”
“কী চাও তুমি? মন থেকে বলো তো।”
“আপনার থেকে সারাজীবনের জন্য দূরে সরতে।”
“অভিমান করে বলছো?”
“না, মন থেকেই। আমার ভবিষ্যৎ আমি বেছে নেবো৷ আমরা সারাজীবন একসাথে থাকতে পারবো না৷ তাই মিউচুয়াল ডিভোর্স-ই বেস্ট সলিউশন। আপনি বিচক্ষণ মানুষ। আশা করছি ভেঙে বলতে হবে না।”
আরবিনের হাতের মুঠোয় ছিল মিমসোর বোতলটা। কাঁচের লম্বা বোতলটা এবার ছুঁড়ে ফেললো মেঝের মাঝখানে। সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পুরো মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লো। শব্দ এতোটাই তীব্র হলো যে, ফোনের মধ্যে থেকে তা শুনতে পেয়ে হালকা কেঁপে উঠলো রিদি। ভাবলো না কি হয়েছে! আরবিন এবার দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করলো,
“তারমানে তুমি সত্যিই ফিরবে না?”
“না।”
রিদির স্পষ্ট জবাব৷ আরবিনের কপালের রগ ফুলে উঠেছে। এলোমেলো চুলগুলো কপালের ওপর থেকে সরিয়ে পেছনে ঠেলে দিতে দিতে ঠোঁট চেপে নিজেকে সংবরণ করলো ও। বিছানার চাঁদরের সাথে হাত মুঠো করে চেপে ধরলো। তারপর আবারও ফিসফিসানো স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
“শাস্তি দিতে চাচ্ছো আমাকে?”
“আমি কে আপনাকে শাস্তি দেওয়ার? কেউ না আমি আপনার।”
“তাহলে এতোক্ষণ কথা বললে কেন আমার সাথে? কল কেটে দিতে পারতে? কেন কাটলে না? গেইম খেলছো আমার সাথে? আমার লাইফ ডেস্পারেট করে দিতে চাইছো?”
“আপনি কেন ডেস্পারেট হবেন আমার জন্য? আপনার না কোনো ইমোশন নেই? তাহলে এতো চটছেন কেন?”
“বেয়াদব! জায়গায় মে’রে ফেলবো তোমাকে।”
কল কেটে গেল৷
রিদির প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে এই মাথাব্যাথার মধ্যেই। নাহ! লোকটার হৃদয়ে ওর জন্য কিছু একটা তো অন্তত আছে। নাহলে লোকটার এমন সহজ স্বীকারোক্তি আর এলোমেলো আচরণের সম্মুখীন এর আগে কখনো হয়নি রিদি। কতটা অসহায় লাগছে তাকে। ইশশ! কি অধঃপতন করে ছেড়েছে লোকটার! রিদির বেশ মায়াও হচ্ছে মানুষটার জন্য। শত হোক, একটা সম্পর্কের টান রয়ে গেছে। রক্তের সম্পর্কের বাইরেও একটা শক্তিশালী সম্পর্ক হয়, তা হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক।
আজ তিনদিন কেটে গেছে। রিদির জীবন-যাপন কেমন যেন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ঠিক বিয়ের আগে যেমন ছিল, তেমনই। এরমধ্যে আরবিন বেশ কয়েকবার কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করেছে। রিদি ওকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে। জামিয়ার সাথে মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে ঘুরে আসে। বাসায় থাকতে দমবন্ধ লাগে ওর৷ এরমধ্যে একদিন ওর আব্বা-আম্মার সাথেও কথা হয়েছে। তারা ওকে নিতে আসার কথা বললে; রিদি খুব করে অনুরোধ করলো, যেন কয়েকদিন পরে আসে।
আজ মাত্র বাইরে থেকে ফিরেছে রিদি। জামিয়াকে সাথে নিয়ে গিয়েছিল বুকশপের দোকানে৷ কিছু দরকারি বই কিনতে। এখানে থাকলেও রিদির পড়াশোনায় এতটুকুও অসুবিধা হচ্ছে না। অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন বেশ ভালোভাবেই নেওয়া হচ্ছে ওর। বাসায় ফিরে উদ্ভাসের ঢাকার ব্রাঞ্চে ক্লাস করবে। রিদি তখন সাইড ব্যাগটা সোফার ওপর রেখে চুলের খোঁপা ছাড়ছিল। তখনই ব্যাগের মধ্যে থেকে ফোনটা বেজে উঠলো। তড়িঘড়িতে ফোন বের করে নাম্বারটা একবার দেখলো রিদি৷ অচেনা নাম্বার। রিদি ভ্রু কুঁচকে ভাবলো নাম্বারটা কার হতে পারে। ধারণায় আসলো না। রিদি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জোরে জোরে শ্বাস ফেলার শব্দ শোনা গেল শুধু। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রিদি ভ্রু কুঁচকে বললো,
“হ্যালো। কে বলছেন?”
“আপনার নাম কি রিদি?”
“জি? কেন? কে আপনি?”
“আমাকে চিনবেন না। আমার নাম কায়েস। আরবিন স্যারের জুনিয়র। আপনার সাথে একটু জরুরি কথা ছিল।”
কায়েসের কন্ঠস্বরে চরম অস্থিরতা। উৎকন্ঠা। আরবিনের নাম শুনে হতচকিত হলো রিদি। কিছু একটা আঁচ করতে পারলো। এবার মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
“কী হয়েছে?”
“আপনি মন শক্ত করে শুনবেন প্লিজ। প্যানিকড হবেন না।”
“আরে আপনি বলুন তো কি হয়েছে।”
“আরবিন স্যারের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। হিজ কন্ডিশন ইজ ক্রিটিকাল নাউ।”
রিদির হাত কি কাঁপলো? একটু বোধহয় কেঁপে উঠলো। শরীর অবশ হয়ে এলো৷ বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্নে করলো,
“কী বলছেন আপনি? প্র্যাংঙ্ক করছেন? এসব আরবিনের শেখানো কথা, তাই-না?”
“না। সিরিয়াস সিচুয়েশনে আছি ভাবী৷ এসব কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই এখন। স্যার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হসপিটালে অ্যাডমিট। আপনার মন চাইলে এসে দেখে যেতে পারেন।”
“উনার আব্বা-আম্মাকে কল করেছেন?”
“না। আগে আপনাকেই কল করেছি।”
“কারণ?”
নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৩৪
“যতদূর আমি জানি, আপনি স্যারের জীবনের মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট একজন মানুষ। তাই আপনাকে কল করেছি প্রথমে। স্যার অ্যাক্সিডেন্ট করার পরে কিছুক্ষণ আগেও হুঁশে ছিল। বারবার আপনার নাম নিচ্ছিল।”
রিদি কিছুক্ষণ থমকে, হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো৷ কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে ওর৷ চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে৷