নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ১৮
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা
“স্বামীদেরকে বউয়ের কাছেই অসভ্য হতে হয়। অন্যথায় দেখা যাবে অন্য নারীর কাছে অসভ্যতামি করলে বউ খুন্তি দিয়ে পে’টানো শুরু করে দিচ্ছে। তোমার হাতে খুন্তি পে’টা হতে চাইনা দেখেই তো একমাত্র তোমার কাছেই নিজেকে অসভ্য রূপে সাজাই।”(মৃদু হেসে)
শেরহামের এহেন কথায় মিটমিট করে হেসে উঠলো সারু। শেরহামের বুকে আঙ্গুল দিয়ে লাভ আঁকতে আঁকতে হেসে বলে উঠলো,,
“অন্য নারীর কাছে গিয়ে দেখুন না, শুধু খুন্তি কেনো প্রয়োজন পড়লে হারপিক মাখিয়ে টয়লেট মাজার ব্রাশ দিয়ে পে’টাবো।”(হেসে)
শেরহাম চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“আচ্ছা জী, আমাকে হারপিক মাখানো টয়লেট মাজার ব্রাশ দিয়ে পে’টাবে! এতো বড় সাহস তোমার। তোমার শাস্তি আমাকে তেরোটা বাচ্চার বাবা বানানো, হুহ।”
সারু বেশ জোরেই হেসে উঠলো। শেরহামের বুকে আলতো করে থা’প্প’ড় মে’রে বলে উঠলো,,
“সবার পটি, হিসু কিন্তু আপনাকে দিয়েই পরিষ্কার করাবো জনাব, তখন কিন্তু আমার সাহায্য পাবেন না।”
শেরহাম বাঁকা হেসে বলল,
“হুহ তোমার সাহায্য কে নিবে? বাচ্চাদের পটি পরিষ্কার করার জন্য দরকার পড়লে আবার বিয়ে করবো, সমস্যা কই।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারু ভ্রু কুঁচকে মুখ ফুলিয়ে শেরহামের বুকে শক্ত করে আঙ্গুল দেবে বলে উঠলো,,
“মনে হচ্ছে হারপিক মাখানো টয়লেট মাজার ব্রাশের কথা ভুলে গিয়েছেন। একদম মুখে ঘষে দেবো বলছি আরেকবার বিয়ে করার কথা বললে।”(মুখ ফুলিয়ে)
শেরহাম সারুর এহেন কাণ্ডে হেসে দিলো। সারুর নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে বলে উঠলো,,
“তোমায় উপেক্ষা করে অন্য নারীকে বিয়ে করার কথা মাথায় আনলে সেদিন আমার মৃ’ত্যু হোক সারুউউউ।”(গলার স্বর টেনে)
“বাবাহ হঠাৎ যেন অনেক বউপ্রেমী হয়ে গেলেন জনাব। এই বউপ্রেমী যদি আগে হতেন তাহলে এতদিনে আমরা হ্যাপি কাপল হইতাম উইথ দুই ছেলেমেয়ে।”(মুখ ভেঙিয়ে)
শেরহাম সারুকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। দুহাত সারুর কাঁধে রেখে ঝুঁকে সারুর চোখে চোখ রেখে বল উঠলো,,
“সেদিন সন্ধ্যায় যেভাবে সিডিউজ করেছিলেন ম্যাডাম, নিজেকে কিভাবে সামলিয়েছিলাম তা একমাত্র আমিই জানি। আপনার তখন আমার ভালোবাসা পাওয়ার সময় ছিলোনা, তাই সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকতাম আপনার সামনে। পাছে যদি আপনার মায়ায় গভীর ভাবে নিজেকে আবৃত করে আপনার উপর একটু বেশিই অধিকার খাটিয়ে ফেলি এই ভয়ে। কিন্তু ঠোঁ’টকা’টা আপনি, বরাংবার চু’মু খাবো চু’মু খাবো মুখ ফসকে বলে ফেলতেন। আর এখন তো আপনাকে চু’মু খাওয়ার কথা বললে আপনি মুখ বাঁকান!”
সারু আচরণ গত এই কথাতেও মুখ বাঁকালো। শেরহাম সারুর মুখ বাঁকানো দেখে হেসে উঠল।
“হয়েছে আর মুখ বাঁকানো লাগবেনা, রেডি হয়ে নাও। আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরোবো।”
সারু ঠোঁট উল্টে বলল,,
“এসেছি তো একদিনও ঠিক মতো হয়নি, এর মাঝেই যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সমস্যাটা কি?”(ঠোঁট উল্টে)
“সমস্যাটা হচ্ছে উৎস চৌধুরী। ওপেনলি থ্রেট দিয়েছে আমাকে আর আদিতকে যে স্নিগ্ধাকে যেভাবেই হোক বিয়ে করবেন। এমনিতেও ফুলের মন মেজাজ ভালো নেই। এতটা দিন অনেক বার হাসানোর চেষ্টা করেছি, তবুও একবারের জন্যও হাঁসেনি ফুল। যেই ফুল সবসময় দুরন্তপনা বজায় রেখে অন্যকে হাসাতো সে ফুল গত দুমাসে একবারও হাঁসেনি। কতটা মানসিক যাতনায় আছে আমার ফুল! এমতাবস্তায় উৎস চৌধুরী ফুলকে জোর করে বিয়ে করার কথা বলছে, ভাবো ফুল কতটা ভয় পাচ্ছে? তাছাড়া উৎস চৌধুরীকে সুবিধার মনে হচ্ছেনা। ওনার জন্য ফুল এখানে সেইফ নয়। তাই যেতে হচ্ছে, ফুলকে নিয়ে আর কোনো রিস্ক নিতে চাইনা। আমার ফুল ভালো নেই, আমি চাইনা নতুন কোনো মানসিক যাতনা আমার ফুলটাকে ঝরিয়ে দিক।”
সারু শেরহামের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। শেরহাম সারুর এহেন দৃষ্টিতে মৃদু হাসলো, দুহাতে সারুর গাল স্পর্শ করে বলে উঠলো,,
“দাভাই হিসেবে আমি এই কথাগুলো বলেছি, তবে শেরহাম হিসেবে যদি বলি তাহলে এটাই বলবো উৎস চৌধুরী সব দিক দিয়েই পারফেক্ট এবং ফুলের জন্যও পারফেক্ট। কিন্তু ফুল এখন ঠিক নেই এবং আগামীর কোনো পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত নয়। উৎস চৌধুরীর চোখে আমি ফুলের জন্য ভালোবাসা দেখেছি, নিখুঁত ভালোবাসা। কিন্তু যেভাবে জোর করে বিয়ে করার কথা হুমকি ধামকি দিচ্ছেন এটাতে ফুল আরও বেশি মানসিক যাতনায় ভুগবে। যার পরিণতি ফুলের জন্য ভালো হবেনা।”
“বুঝতে পেরেছি, এখন সরুন আমি রেডি হবো। খালি সুযোগ পেলেই এমনভাবে চেপে ধরেন কেনো?”
শেরহাম ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
“আমার বউ আমি চেপে ধরবো, এটা একান্ত আমার ইচ্ছা। তুমি এই সম্পর্কে বলার কেউ হওনা।”
“এহহ ঢং।”(মুখ বাকিয়ে)
সারু আর দাঁড়ালোনা, শেরহামকে ঠেলে সব গোছগাছ করা শুরু করলো। শেরহাম কিছুক্ষন সারুর দিকে চেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
কথামতো সবাই ঘন্টাখানেকের মধ্যে রেডি হয়ে বেরোলো বাড়ি ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ইলাও ওদের সাথেই ফিরে যাচ্ছে। দুটো গাড়ির মধ্যে একটিতে স্নিগ্ধা, কল্যাণী, মিতালি, নেহাল রায় বসেছেন। আরেকটিতে সারু, শেরহাম, আদিত ও ইলা বসেছে। শেরহাম ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে। পেছনের সিটে জানালার পাশে বসেছে সারু। মাঝখানে ইলা বসেছে আর ইলার পাশে আদিত।
আদিতের পাশে বসে ইলা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। আদিতকে বিরক্ত করার জন্য বারবার আদিতের দিকে চেপে বসছে, আর আদিত বেচারা ভ্রু কুঁচকে মুখ গম্ভীর করে ইলার দিকে চেয়ে আছে। ইলা আদিতের এমন মুখশ্রী বেশ উপভোগ করছে।
এদিকে আদিতের আর সহ্য হচ্ছেনা, মেয়েটা কিছুক্ষন পরপরই আদিতের দিকে সরে আসছে। তার উপর চুলের ক্লিপ খুলে দিয়েছে, বাতাসের সাথে সাথে ইলার চুল উড়াউড়ি শুরু করেছে সেই সাথে আদিতের মুখে আছড়ে পরছে। আদিত খুবই বিরক্ত, ইলা ইচ্ছে করেই আদিতকে বিরক্ত করছে। কিয়ৎক্ষণ আদিত ইলার দিকে চেয়ে রইলো ভ্রু কুঁচকে, ইলা আদিতের মুখশ্রী পানে চেয়ে মিটমিট করে হাসছে। কি ভেবে আদিত বাঁকা হাসি দিলো, তা দেখে ইলা ভ্রু কুঁচকালো। কিছুক্ষনের মধ্যেই টের পেলো আদিত ইলার কোমরে হাত দিয়ে ইলাকে নিজের দিকে মিশিয়ে নিয়েছে। চোখ বড়োবড়ো করে তাকালো ইলা, আদিত বাঁকা হেসে ফিসফিস করে বলে উঠলো,,
“অনেক শখ না আমার শরীরের সাথে মিশে যাওয়ার, ভালোভাবে মিশতে পারছিলেনা দেখে নিজ উদ্যোগে তোমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলাম।” (ফিস ফিস করে )
ইলার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো আদিতের ছোঁয়ায়। ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো ইলা। মুখে আলতো হাসি রেখে বলে উঠলো,,
“আমিতো আপনার ছোঁয়াই পেতে চাই জ আঁকার জা ন, জান।”(আলতো হাসি দিয়ে)
আদিত ইলার এহেন কথায় খুশি হলোনা যেন। আদিত ভেবেছিলো পাল্টা বিরক্ত করবে ইলাকে। কিন্তু ইলা, মেয়েটা তো আস্ত ঠোঁ’টকা’টা বে’শরম! কই চার বছর আগ অব্দিও তো লজ্জাবতী ফুলের মতো ছিল। ভালোবাসি বললেও তো লজ্জায় নুইয়ে যেত। কিন্তু এখন! এখন মেয়েটা বেশরমের মতো কথা বলছে।
আদিত দাঁতে দাঁত চেপে রাগত স্বরে বলে উঠলো,,
“আগে তো ভালোবাসি বললেও লজ্জায় লাল নীল হয়ে যেতে। এখন, এখন তোমার লজ্জা কোথায় গেছে? মুখে আটকাচ্ছেনা এভাবে বলতে? লজ্জাবিহীন মেয়ে।”(রাগত স্বরে)
ইলা শান্ত স্বরে আলতো হাসি দিয়ে কথাটা বললেও ভেতরে ভেতরে পাগলের মতোন হাসছে। পুনরায় ইলা বলে উঠল,,
“প্রেমিকের কাছে কিসের লজ্জা জান? আপনি আমার কাছে, আমি আপনার কাছে লজ্জা পেলে আমার শাশুড়িমা ঠাম্মি কিভাবে হবেন? ভারী আশ্চর্য কথা বলেন।”(শান্ত স্বরে)
আদিত দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো, ইলার কোমর থেকে হাত সরিয়ে বিরক্ত সহিত বলে উঠলো,,
“অসভ্য মেয়ে, মুখে লাগাম টানো নয়তো..”
আদিতকে কথা শেষ না করতে দিয়ে ইলা ধীর কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,,
“নয়তো? নয়তো কি চু’মু খেয়ে মুখে লাগাম টেনে দিবেন? হাউ রোমান্টিক! আপনার মতো রোমান্টিক একটা হ্যান্ডসামকে পেয়ে আমি নিজেকে খুউউউব ভাগ্যবতী মনে করছি। আহা চিত্ত জুড়িয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে।”(ধীর কণ্ঠস্বরে)
আদিত কঠোর চাহনিতে ইলার চোখে চোখ রাখতেই ইলা চোখ টিপ দিলো। আদিত বিড়বিড়িয়ে “অসহ্যকর” বলে নজর সরিয়ে বাহিরে রাখো। আর ইলা সে তো দিব্যি আরামে আদিতের গা ঘেঁষে রইলো।
এদিকে আদিত ইলার কান্ড পুরোটাই আড়চোখে দেখলো সারু। সারুর প্রচুর হাসি পাচ্ছে ওদের এহেন কাণ্ডে। আদিত ইলার কথাবার্তা সবটা না শুনলেও ইলা আদিতকে ‘জান’ বলে কিছু বলছে এটুকু শুনতে পেয়েছে। আদিতের মুখোভঙ্গি দেখে প্রচুর হাসি পেয়েছিলো সারুর। সারু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো, আদিত ইলার উপর কোনো বিষয় নিয়ে অভিমান করে আছে বেশ বুঝতে পারলো সারু।
নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ১৭
“গোটা পৃথিবীতে খুঁজো, আমার মতো কে তোমারে এতো ভালোবাসে।
এই মনের ঘরে এসো, এই বুঁকেরই বা পাশেতে তোমার নামই জপে।”
ইলা ফিসফিস করে আদিতের কাঁধে থুতনি রেখে গেয়ে উঠলো। আদিত ভ্রু কুঁচকে ইলার মুখশ্রী পানে চেয়ে রইলো। ইলা আলতো হাসলো।