নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ৩৪

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ৩৪
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা

উৎস স্পষ্ট ভাষায় এভাবে স্নিগ্ধাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াতে বেশ অবাক হলেন বিপুল রায়। তিনি নিশ্চুপ হয়ে, চক্ষু খানিকটা বড় করে উৎসকে পর্যন্তবেক্ষণ করছেন। উৎস এমন প্রস্তাব রেখে একরাশ আশা নিয়ে চেয়ে আছে ওনার দিকে। পাশে কানন দেবী অশ্রুভেজা চক্ষুতে উৎসের দিকে চেয়ে আছেন। উৎস ফিরে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। কানন দেবীর চোখের জল দেখে উৎসর মুখ খানিকটা আঁধারিয়া হয়ে উঠলো, দুহাত দিয়ে কানন দেবীর অশ্রুজল মুছে দিলো। বিপুল রায় পুরোটাই দেখলেন। বিষয়টা ওনার কাছে দারুন লেগেছে। ছোটবেলা থেকে বাবাহীন ছেলেটা মাকে ঘিরে নিজেকে উন্নতির শিখড়ে পৌঁছিয়েছে। বিপুল রায় খারাপ লাগা অনুভূত করছেন। কৌশিক চৌধুরী আর প্রমীলা চৌধুরী যে এমনটা করতে পারেন কল্পনাও করেননি তিনি। বসার কক্ষে পিনপন নীরবতা বিরাজমান। নীরবতার অন্ত করে কৌশিক চৌধুরী নিচু স্বরে কানন দেবীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,,

“ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ নেই আমার। তবুও ক্ষমা চাচ্ছি তোমার কাছে, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি জানি আমি আর প্রমীলা যা করেছি তা অনেক বড় একটা পাপ কাজ। আমি তোমায় ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, কিন্তু ধীরে ধীরে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কমে গিয়েছিলো তোমার অতিরিক্ত নিঃস্বার্থ ভালোবাসায়। অতিরিক্ত কিছুই মানুষ হজম করতে পারেনা। তোমার ভালোবাসাটাও আমার হজম হয়নি, আমি কাপুরুষ আমি তোমায় বুঝিনি, তোমার ভালোবাসা বুঝিনি। তোমায়, ছোট ছেলেটাকে ফেলে আমি পরকীয়ায় জড়িয়ে তোমাদের একা ফেলে চলে গিয়েছিলাম। তোমাদের কথা একটা বারও ভাবিনি। কি করবো বলো? কাপুরুষের মতো চলে গিয়েছিলাম সেথায় চলে আসার পর তোমাদের কথা ভাবাটা তাচ্ছিল্যকর ছিল আমার কাছে! ভাবতে পারিনি একারণে!আমি আমার করা কাজে অনেক অনুতপ্ত, যদি পারো আমায় ক্ষমা করে দিও।” (নিচু স্বরে)

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কৌশিক চৌধুরীর এহেন কথা শুনে কানন দেবী বাঁধ ভাঙা কান্নায় নিজেকে বিলিয়ে দিলেন। সত্যিই! ভালোবেসে বিয়ে করার পরেও মানুষ কিভাবে এমনটা করতে পারে? ওনার কথা না ভাবতেন, অন্তত ছয় বছরের অবুঝ বাচ্চা উৎসের কথাটা ভেবে অন্তত নিজেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতেন! কিন্তু না, উনি কি করলেন! একা তাঁদের এই পৃথিবীতে একা করে দিয়ে চলে গেলেন অন্য নারীর হাত ধরে। সে নারীও বা কেমন! বিবাহিত পুরুষ জেনেও তার হাত ধরে চলে আসলেন আরেক নারীর সংসার ভেঙে নিজের সংসার বাধঁতে! লক্ষ্য করলে দেখবেন অবুঝ পশু পাখির মধ্যেও ক্ষমতার লোভ, হিংসা, খাবার কেড়ে নেওয়া রয়েছে। সেথায় বুঝদার মানুষের মধ্যে লোভ, হিংসা, কেড়ে নেওয়া থাকবেনা তা হয়?

অশ্রুসিক্ত নয়নে দুহাত চোখের সামনে ধরলেন। হাতে থাকা শাখা পলায় স্বর্ণ বসিয়ে ওনাকে ভালোবেসে তৈরী করে দিয়েছিলেন কৌশিক চৌধুরী। এতগুলো বছর এগুলো নিজের সাথে পরম যত্নে রেখেছিলেন কারণ তখনও তিনি কৌশিক চৌধুরীর নামের সাথে জড়িত ছিলেন, ওনার স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু আজ তিনি ওনার সাথে জড়িত নন, ওনার স্ত্রী নন, ওনার ভালোবাসা নন সেথায় এই শাখা পলা নিজের কাছে রেখে লাভ নেই। এর ভাগিদারিত্ব তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। খুব যত্ন নিয়ে হাত থেকে শাখা পলা খুলে ফেললেন তিনি। এগিয়ে গিয়ে কৌশিক চৌধুরীর হাতে দিয়ে থেমে থেমে বললেন,,

“আমি নাহয় ক্ষমা করে দিবো, তবে আমার সৃষ্টিকর্তা! তিনি হতে পারে আপনাকে ক্ষমা করবেন না। এগুলো আপনি ভালোবেসে আমায় তৈরী করে দিয়েছিলেন, ভালোবাসা আর আপনি যেহেতু আমার নন আর না আমি আপনার তাই এসব রেখে আর লাভ নেই। আপনার জিনিস আপনি রাখুন। এরবেশি আমার আর আপনাকে বলার মতো কিছু নেই।” (থেমে থেমে)

কৌশিক চৌধুরী শূন্য দৃষ্টিতে ওনার হাতে থাকা শাখা পলার দিকে তাকিয়ে রইলেন আর মস্তিষ্কে কানন দেবীর বলা কথা গুলো গভীর ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতে লাগলেন।
“আজকের পর থেকে তোমরা দুজন কোনোদিন আমার সামনে আসবেনা। এমুহূর্তে এখান থেকে চলে যাও, আমি জানবো। আমি অনাথ, আমার মা বাবা নেই। তারা মৃত!”(উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে)

ইলা উপরোক্ত কথা গুলো উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো। রীতিমতো ইলার চারদিক ঘুরছে। অনেক চেষ্টা করেও চোখ খোলা রাখতে পারলোনা সে, চারদিক অন্ধকার হয়ে উঠলো তার কাছে। মুহূর্তেই দপ করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো ইলা। আদিত ইলার থেকে কিছুদূরেই ছিল। সে “ইলা” বলে চেঁচিয়ে দ্রুত পদে ইলার কাছে আসলো।
“আপনারা দয়া করে এখান হতে চলে যান। ইলার সবে জ্ঞান ফিরেছে এতগুলো দিন পর। এই মুহূর্তে তাকে উত্তেজিত করলে ওর ব্রেইনের ক্ষতি হতে পারে। দেখতেই পারছেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও অতিরিক্ত চাপ নেওয়ার ফলে।”(কঠোর স্বরে)

আদিত কৌশিক আর প্রমীলা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে একথা বলেই ইলাকে কোলে তুলে নিলো। সাবধানতার সাথে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ইলার কক্ষের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো আদিত। কৌশিক চৌধুরী আর প্রমীলা চৌধুরী যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কীয়ৎক্ষন আগেও আনন্দঘন পরিবেশ ছিল আর এখন? এখন চারদিকে বিষাদ! অপরাধবোধ! দম বন্ধকর পরিবেশ। ইশ সময়টা যদি পঁচিশ বছর আগে ফিরে যেত তাহলে কৌশিক চৌধুরী এমন পাপ কাজে লিপ্ত হতেন না। আফসোস, সময় কারও জন্য অপেক্ষা করেনা। নদীর স্রোত নিজের আপন ধারায় বয়ে চলে তেমনি সময়ও। কোনো কাজ করার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের উচিত সবদিক ভেবে তবেই কাজ করা আর সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ অল্প সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা বা কোনো ভুল কাজ করে ফেলার রেশ আজীবন থাকে।
এরজন্যই একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে, “ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না”। এছাড়াও পরকীয়ায় জড়িত হওয়াটা পাপ। পাপে লিপ্ত হলে এর শাস্তি পেতেই হবে।

প্রমীলা চৌধুরী ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠলেন, কৌশিক চৌধুরী অপরাধী দৃষ্টিতে কানন দেবীর দিকে একনজর চাইলেন। এরপর প্রমীলা চৌধুরীর দিকে তাকালেন। এমুহূর্তে এখান থেকে প্রস্থান করাটাই শ্রেয়। এগিয়ে গিয়ে প্রমীলা চৌধুরীর বাহু জড়িয়ে স্থান ত্যাগ করতে উদ্যোত হলেন তিনি।
বসার ঘরে এখনো স্নিগ্ধা, সারু, শেরহাম, মিতালি, নেহাল রায়, বিপুল রায়, উৎস ও কানন দেবী উপস্থিত।
প্রায় অনেকক্ষন ধরে উৎস আর কানন দেবী দাঁড়িয়ে আছেন, বিষয়টা কটু লাগছে বলে বিপুল রায় তাঁদের সোফায় বসতে বললেন। নিজেও বসলেন। ইতমধ্যেই কল্যাণী বসার ঘরে এসেছেন। তবে বসার ঘরে পিনপন নীরবতা ও উৎস, কানন দেবীকে দেখে অবাক হলেন। অবাক স্বরে শুধালেন,,

“আপনারা! এখানে?”(অবাক স্বরে)
উৎস দাঁড়ালো, সাথে কানন দেবীও। উৎস ভদ্রতার সহিত শ্রদ্ধা জানালো কল্যাণীকে।
“নমস্কার।”
কল্যাণী কিছু বলতে নিয়েও উৎসের এমন ভদ্রতার সহিত শ্রদ্ধা জানানো দেখে থমকালেন। গতবারের দেখায় উৎসকে ওনার অনেকটা ঠোঁটকাটা, বেহিসেবি মনে করেছিলেন। স্নিগ্ধাকে নিয়ে যাওয়ায় উপরে উপরে সবাইকে বলেছিলেন ‘উৎস ভালো, স্নিগ্ধার কোনো ক্ষতি করবেনা’ ঠিকই তবে মনে মনে রাগ করেছিলেন উৎসের উপরে। এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়াটা অভদ্রতামি, যতই ভালোবাসা থাকুক না কেন। তবে এবারের দেখায় উৎসের চাহনি, শ্রদ্ধা প্রকাশ দেখে উৎসর সম্পর্কে বেহিসেবি ধারণা কমে আসলেন ওনার। উনি মাথা ঝাকিয়ে বিপুল রায়ের দিকে তাকালেন। তিনি ইশারায় বললেন ওনাকে সোফায় বসতে।

সারুর পেটে মৃদু ব্যথা করছে বিধায় সারু শেরহামের হাত স্পর্শ করলো। শেরহাম তখনও দাঁড়িয়ে ছিল। পাশ ফিরে শেরহাম সারুর দিকে তাকালো। ইশারায় বুঝালো “কি হয়েছে?”
সারু পেটে হাত দিয়ে করুন মুখশ্রী করলো। মিতালির হয়তো বিষয়টা নজরে এসেছে বিধায় উনি বলে উঠলেন,,
“শেরহাম, সারুর শরীর খারাপ লাগছে বোধহয়। ওকে নিয়ে তোদের কক্ষে যা। রেস্ট নিক ও।”(মৃদু স্বরে)
শেরহাম মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। সারুর হাত স্পর্শ করে উঠিয়ে দাঁড় করালো সারুকে অতঃপর ধীর পায়ে এগিয়ে নিয়ে গেলো কক্ষের উদ্দেশ্যে।

কক্ষে পৌঁছে সারুকে এক গ্লাস জল খেতে দিলো শেরহাম। সারুর গলা শুকিয়ে চৌচির। এক ঢোকে জলটুকু খেয়ে সারু খানিক হাপাতে হাপাতে বলল,,
“মানুষ এমন কিভাবে হতে পারে বলতে পারেন? ভালোবেসে বিয়ে করার পর, একটা বাচ্চা থাকার পরেও কিভাবে পরকীয়ার লিপ্ত হয়ে তাকে ফেলে যেতে পারে!”(খানিক হাপিয়ে)
শেরহাম মৃদু হাসলো, হাটু ভেঙে সারুর হাঁটুর কাছে বসলো। বিছানায় হাত ঠেকিয়ে হাতের উপর গাল ঠেকিয়ে বলল,,

“পৃথিবীতে ভালো খারাপ মিলিয়ে মানুষের বসবাস। কিছু মানুষ ভালোবেসে ভালোবাসাকে আঁকড়ে বাঁচে আর কিছু মানুষ ভালোবাসাকে পেয়েও অবহেলায় দূরে সরিয়ে আরেক স্থানে ভালোবাসা খুঁজে তাকে আঁকড়ে ধরে। পার্থক্যটা এখানেই, যার মন মানসিকতা যেমন সে তেমনই করবে। তবে যেমন কর্ম তেমন ফল। তারা শাস্তি পায়, পাবে, পেতে থাকবেই। পৃথিবীর নিয়মধারা এমনই। বুঝলে?”(মৃদু হেসে)

সারু একদৃষ্টিতে শেরহামের দিকে চেয়ে রইলো। তাঁদের সম্পর্কের শুরুটার কথা ভাবলো। অপ্রাপ্তবয়সে লোকটার সাথে বিবাহ নামক সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়া, অতঃপর তিন বছর স্বামী স্ত্রী হয়েও কোনোরকম সম্পর্কে না জড়ানো। সারুকে পড়ানো, সারুর স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া অতঃপর সময় নিয়ে এঁকে অপরকে ভালোবাসাটা প্রকাশ পাওয়া, এরপর ভালোবাসায় নিজেদের রাঙিয়ে তোলা সবশেষে এই অব্দি এতো ভালোবাসা। মানুষটা আসলেই তাঁরই থাকবো তো সবসময়! এটা ভাবার পর আরেকটা কিছু ভাবতেই সারুর বুক কেঁপে উঠলো। দুহাত বাড়িয়ে শেরহামকে ইশারা করলো তাকে জড়িয়ে ধরতে। শেরহাম আলতো হেসে সারুকে বুঁকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। সারু নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো শেরহামের বুকে আর শেরহাম সারুর সিঁথিতে।
“আমাকে কোনোদিন ছেড়ে যাবেন নাতো?”

শেরহাম সারুকে আরেকটু নিজের সাথে মিশিয়ে বলে উঠলো,,
“আমি প্রতিশ্রুতিতে নয় কাজ কর্মে বুঝিয়ে দিতে বিশ্বাসী ম্যাডাম। আপনাকে আর আমাদের লিটেলকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। প্রয়োজনে আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো তবুও তোমাদের কখনো নিজের বাহুডোর থেকে দূরে সরাবোনা।”
সারু দুহাতে আঁকড়ে ধরলো শেরহামকে। এমুহূর্তে শান্তির স্থান হচ্ছে শেরহামের বাহুডোর।
“আচ্ছা, জেঠুমণি আর জেঠিমণি কি উৎস চৌধুরীর সাথে স্নিগ্ধার বিয়ে দিতে রাজি হবেন?” (থমথমে স্বরে)

“উমম, আমার মতে উৎস চৌধুরী খারাপ নয় তবে এতটাও ভালো নয়। আমাদের সবার অনুমতি না নিয়ে হুট্ করে স্নিগ্ধাকে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলো। এটাকে আমি সমর্থন করিনা। বাকিটুকু ঠিকঠাক। তার আজকের ব্যবহারে দায়িত্বশীল চরিত্রটা লক্ষ্য করলাম। এছাড়াও উৎস চৌধুরীর সাথে আর তার মায়ের সাথে যেটা হয়েছে এরপর সবদিক বিবেচনা করে তাকে না করার প্রশ্নই উঠেনা। যদি বয়সের দিকে কঠোরতা প্রকাশ করেন জেঠুমণি আর জেঠিমণি তাহলে ঝামেলা আছে।” (ভাবুক কণ্ঠে)

“যাহোক, ওনার অতীত জেনে আমার ভীষণ মন খারাপ লাগছে। কতদিন হলো বাবা মায়ের সাথে আমার কথা হয়না। চারদিন আগে কথা হয়েছিল, তবে এই চারদিনও আমার কাছে কতদিনের সমান।”(মুখ ফুলিয়ে)
শেরহাম হাসলো ঠোঁট চেপে। সারুকে বুক থেকে উঠিয়ে দুহাতে সারুর গাল আলতো হাতে স্পর্শ করে বললো,,
“কথা বলো তাহলে। আমি নিচ থেকে আসছি।”

আদিত মলিন মুখশ্রীতে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইলার শুকনো চেহারার দিকে। মেয়েটা বেশ আজ বেশ কষ্ট পেয়েছে। এমনিতেও এতগুলো দিন পর জ্ঞান ফিরে সবটা এলোমেলো লাগছিলো ইলার কাছে, ঘুম ভাঙার পরেও আদিতকে দেখেও ইলা ছটফট করা শুরু করেছিল। অশান্ত হয়ে পড়েছিল। আদিত থামাতে চেয়েও পারছিলোনা। শেষে ইলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে ভালোবাসার সহিত নরম কণ্ঠে ইলাকে শান্ত হতে বলেছিলো। তবু ইলা শান্ত হচ্ছিলোনা, শেষে নিজ থেকেই নীরব হয়ে গিয়েছিলো তবে নীরবে অশ্রুজল বিসর্জন দিচ্ছিলো। আদিত ইলাকে বলেছিলো সে একেবারের জন্য তার কাছে চলে এসেছে তার হতে। ইলা কীয়ৎক্ষন চেয়ে ছিল তার দিকে। অতঃপর জড়িয়ে ধরেছিল কান্না করতে করতে। ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আদিত। সময় গুলো জানি কেমন একটা অদ্ভুত নিজস্বতা নিয়ে অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে।

“আমি ভাবিনি কখনো আঙ্কেল আন্টি এমনটা করবেন! ওনাদের এহেন কাজ তোমার মস্তিষ্কের উপর আজ অনেকটা চাপ পড়েছে, তুমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছো। তোমায় কিভাবে শান্ত করবো আমার বুঝে আসছেনা ইলা। তবে আমি আশাবাদী কষ্টদের তোমায় ছুঁতে দিবোনা।”(মৃদু স্বরে)
আদিত কীয়ৎক্ষন নিশ্চুপ থাকলো, ইলার ডান হাত তার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে পুনরায় বললো,,
“আদিত তোমায় ভীষণ ভালোবাসে আদিতের আলু। আদিত থাকতে দুঃখরা তোমায় ছুঁতে পারবেনা, যদি ছুঁয়ে ফেলে তাহলে তোমার সব দুঃখ আমার হোক আলু। ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।”(হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে)

“আমি কথা দিচ্ছি আমি থাকতে স্নিগ্ধাকে কোনো কষ্টরা একটুও স্পর্শ করতে পারবেনা। আমি যাদের ভালোবাসি তাঁদের ভালোবেসে আগলে রাখতে জানি। আমি আমার মাকে যতটুকু ভালোবাসি স্নিগ্ধাকেও ততটুকুই ভালোবাসি। মায়ের পরে সে আমার এমনি একজন যে আমার জীবনের দ্বিতীয় নারী। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে ওর খেয়াল, ইচ্ছে পূরণ, ভালো রাখার চেষ্টা করবো।”(দৃঢ়তার সহিত)

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ৩৩

উৎসের এহেন বাক্যে বিপুল রায়, কল্যাণী, মিতালি, নেহাল রায় সকলেই যেন অনেকটা ভরসা পেলেন। স্নিগ্ধা এক কোনায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তবে স্নিগ্ধার কাছে অবাক লাগছে এটা ভেবে লোকটাকে স্নিগ্ধা চেনে। লোকটা তার বেলায় প্রচুর বেহায়া। তার দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকতে লোকটা ভীষণ ভালোবাসে। তবে এখন একটা বারের জন্যও উৎস তার দিকে তাকাচ্ছেনা। এমনকি কথা গুলো বলার সময়ও না।

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ৩৫