নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৬

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৬
সিনথিয়া

আরশি পা বাড়ায় না। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে এক জায়গায়। বিস্ময়ে পলক ফেলতে ভুলে গেছে মেয়েটা। অধরজোড়া অল্প-বিস্তর ফাঁক হয়ে আছে বিমূঢ়তায়।
ধুপধাপ পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে মানুষটা। চেঞ্জ করার সময় তো কস্মিনকালেও এই লোক ওকে ডাকেনি!
ঠিক তো নিজের মতো সাজুগুজু করে ভার্সিটি চলে যায়! তাহলে আজ হঠাৎ করে ওকে চেঞ্জ করার সময় রুমে ডাকলো কেনো?
আরশি যাচ্ছে না দেখে পাশে এসে দাঁড়ালেন মরিয়ম বেগম। মাথায় হাত রাখলেন মেয়েটার। তাগাদা দিয়ে বললেন,

“কি হলো? দাঁড়িয়ে রইলি যে? যাবি না?”
মেয়েটা বেখেয়ালে বলে বসলো,
“মাথা খারাপ! ওরে বাপরে! আমি যাবো না!”
“সে কি? কেনো?”
“তুমি জানো না আন্টি! উনি আমাকে ডেকেছেন বকাঝকা করতে! হয়তো গেলেই বলে বসবে; শাড়ি কেনো পড়েছো? আমাকে সিডিউস করার জন্য? এক্ষুনি খোলো!”
শেহজাদের নকল করে শেষের কথাগুলো বলে নিজেই নিজের জিভ কাটলো আরশি!
আড়চোখে চাইলো মরিয়মের মুখপানে!
এইভাবে বরের নামে বদনাম? তা-ও আবার শাশুড়ির কাছে?
ওরে আরশিরে! তোর মুখে কি একটু ফিল্টার লাগানো যায় না? যা পেটে আসে; মুখ ফসকেও ওটাই কেনো বের হয় তোর?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চেহারায় ইতস্তত ভাব ওর। ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করতেই হু হা করে হেসে উঠলেন মরিয়ম। আশেপাশে তাকালেন পরপর। এমিলিয়া ফোন ঘাটছে পাশে দাঁড়িয়ে। খুব বেশি মনোযোগ নেই তাদের কথায়। এই সু্যোগে মেয়েটার কানে কানে বললেন,
“তো সিডিউস কর! এই বয়সেও তোর আঙ্কেলকে আমি নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাই; আর তুই আমার ছেলেটাকে এখনো পটাতে পারছিস না?”
চোখজোড়া ফুটবল আরশির। শাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে খালি গলাতেই যেনো বিষম খেলো মেয়েটা। কেঁশে-টেঁশে প্রৌঢ়ার মুখের দিকে তাকাতেই চোখ টিপলেন মরিয়ম বেগম। পরপর মুখ গম্ভীর করে এমিলিয়াকে শুনিয়ে শুনিয়ে আওড়ালেন,
“আহারে! ভেজা কাপড়ে আমার ছেলেটার যদি ঠান্ডা লেগে যায়? আরশি! তুই এক্ষুনি রুমে গিয়ে দেখ কি লাগবে ওর! এক্ষুনি যা!”

এমিলিয়ার চোখ ফোনে থাকলেও কান মরিয়ম বেগমের কথায়। শাশুড়ি বউমা কি বলছে সবটাই শুনছে ও।
শেহজাদ তো আরশিকে দেখতে গিয়েই গায়ে পানি ফেলেছে! কই! সে কথা তো কেউ একবারো বললো না!
আজ যদি এই মেয়েটা শেহজাদের বউ না হতো; তাহলে কি এমন ঘটতো? এই সামান্য বিষয়টা যদি কেউ না বোঝে; তাহলে সে নিজে চোখে আঙুল দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দেবে! এটা এমিলিয়ার প্রমিজ– নিজের কাছে নিজের!

জারার জ্ঞান ফিরেছে। তবে মাথাটা ভার হয়ে আছে ভীষণ। ত্রস্ত এক হাতে মাথার পাশ চেপে ধরলো মেয়েটা। আস্তে-ধীরে উঠে বসে আধবোজা চোখেই চাইলো নিজের দিকে।
অমনি ধক করে উঠলো ওর বুকের ভিতর!
সকালে যে সোয়েটার আর জিন্স পড়ে ছিল সেগুলো উধাও। তার বদলে বাসায় পড়া পাজামা আর ঢিলে ঢালা টি-শার্ট। তড়িৎ ঘরের চারপাশে তাকালো ও!
পরিচিত সব জিনিসপত্র দেখেই বুঝলো রুমটা আয়ানের! কিন্তু সে কি করে এলো এখানে? আর কাপড়-ই বা কে বদলালো ওর?
তখনই দরজায় এসে দাঁড়ালো অফিসার। ডোরফ্রেমে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজলো। ফুলে ফেঁপে থাকা বাইসেপসে আজ আর ইউনিফর্মের ভিতরে নেই। শুধু একটা গ্রে রঙা ট্রাউজার আর হাতা কাটা কালো গেঞ্জি বাদে সমস্ত শরীরই উন্মুক্ত।
ঢোক গিললো জারা। মুখ কঠিন করে শুধোলো,

“আমি এখানে কি করে এলাম? আর আমার কাপড় কে বদলালো?”
ভ্রু জোড়ার মাঝে গভীর ভাজ পড়লো আয়ানের! অবাক হয়ে শুধোলো,
“তোমার সত্যিই কিছু মনে নেই বাটারফ্লাই? ”
মেয়েটা মাথা নাড়ে দু’পাশে! শঙ্কিত মুখে কোনোমতে আওড়ায়,
“ক-কি মনে থাকবে আমার? কি করেছেন আপনি আমার সাথে?”
ত্রস্ত পা বাড়ায় অফিসার। বুকে হাত বেধেই এসে দাঁড়ালো জারার কাছে। পুরু ওষ্ঠপুটে প্রহসন ঢেলে চাইলো মেয়েটার মুখের দিকে। পরপর সেই নজর মুখ থেকে নেমে আসে গলায়। কিন্তু গলা থেকে আরেকটু নিচে নামার আগেই হাতজোড়া ক্রস করে বুকের সামনে আনলো জারা।
বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললো,

“আপনাকে দ্বিতীয়বার ভরসা করাটাই আমার ভুল হয়েছে। আমার উচিত ছিল প্রথম দিনই অন্য বাসা খুঁজে বের করা! একা একটা মেয়ের অচেতন অবস্থার সুযোগ নিলেন আপনি? ছিহ!”
আয়ান থমকায়। মুখের দুষ্টুমি ভাবটাও উধাও ওর। বাটারফ্লাইয়ের কিছু মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক! কিন্তু ওকে যে ভুল বুঝছে মেয়েটা!
“লেইট মি এক্সপ্লেইন বা-”
কথাটা শেষ করতে পারলো না অফিসার! তার আগেই সজোরে এক থাপ্পড় এসে পড়লো গালে।
আক্রোশে কাঁপছে জারা। চড় দিয়েও যেনো শান্ত হতে পারলো না ও। নিজের রুমে যাওয়ার জন্য বিছানা ছেড়ে নামতেই বাসার কলিং বেল বাজে ওদের।
আয়ানের নড়বার শক্তি নেই। থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়।
অগত্যা ফুঁসতে ফুঁসতে জারাই গিয়ে দরজা খুললো। বাড়িয়ালি এসেছেন। মেয়েটাকে দেখেই প্রশস্ত হাসলেন মহিলা। সুপের বাটি এগিয়ে দিয়ে পশ্চিমা ভাষায় বললেন,
“তখন তাড়াহুড়ো করে তো শুধু তোমার কাপড়টা বদলে দিয়েই চলে গেছিলাম! তাই এখন একটু স্যুপ বানিয়ে আনলাম তোমার জন্য! মাথা ব্যাথা করছে না? এটা খেয়ে দেখো! একদম সেরে যাবে! ”
জারার যেনো বুঝতে পারলো না কথাগুলো! ঘোরের মধ্যেই স্যুপের বাটিটা নিলো বাড়িয়ালির হাত থেকে। পরপর শুধোলো ইংরেজিতে,

“আমার কাপড় আপনি বদলে দিয়েছিলেন ?”
“হ্যাঁ তো! তুমি তো বমি-টমি করে হুশ হারিয়ে পড়ে ছিলে আয়ানের কাঁধে। পরেই না ছেলেটা আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে এলো তোমার কাপড় বদলে ভালো কাপড় পড়িয়ে দেয়ার জন্য! যাই হোক! স্যুপটা কিন্তু খেয়ে নিও মনে করে!”
মহিলা অপেক্ষা করে না। ওকে দোলাচলে ফেলে পা বাড়ায় নিজের বাসার দিকে।
জারা স্তব্ধ। ধীরে ধীরে মনে পড়ে সবটা ওর। ও তো নিজে থেকেই প্রথমে চুমু খেয়েছিল আয়ানকে; বমিও করেছে মানুষটার গায়ে! এখন আবার থাপ্পড়ও মেরে এসেছে! এবার কি করে সামনে যাবে ও অফিসারের?

ধীর পায়ে রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় আরশি। দরজা হালকা ভিরানো দেখে থমকায় মেয়েটা। উঁকি দিয়ে ভিতরের পরিস্থিতি বোঝার আগেই ভেসে আসে শেহজাদের রাশভারি কন্ঠ,
“এতো দেরি হলো কেনো আসতে?”
ঢোক গিললো ও। গলা ভিজিয়ে খামচে ধরলো শাড়ির দু’পাশ। পরপর দরজা ঠেলে সামনে চাইতেই যেনো আঁতকে উঠলো অন্তর-আত্মা।
জাম্বুবান পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে। চওড়া পিঠে সুতোর নাম গন্ধ নেই। শার্ট খুলে ফেলেছে বহুত আগেই। এভাবে প্রফেসরকে তো ঐ একবারই দেখেছিল মেয়েটা। সেবার জ্বরের সময়!
আরশির ভাবনার মধ্যেই ফিরে চায় শেহজাদ।
প্যান্টের পকেটে হাত ভরে এগিয়ে আসে কিশোরীর সামনে। ঐ রহস্যে ঘেরা নীল চোখে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে ফেললো মেয়েটা। কুন্ঠার ভিড় ঠেলে ঠুলে তাকালো মেঝেতে।
প্রফেসরের নিরেট আনন। কিন্তু হুট করেই কামনায় পিষ্ট হাত নিজে থেকেই গিয়ে থামলো আরশির কোমরে।
এক টানে মেয়েটাকে মেশালো উদোম বুকের সাথে। হাসফাস করে উঠলো আরশি। কোমর বেকে এলো কাতুকুতু এড়াতে। রাঙা গালে বিড়বিড় করে বললো,

“কাকে বললো আন্টি পটাতে? এমন অজগরের মতো পেচিয়ে ধরলে পটানো যায়?”
বাঁকা হাসলো শেহজাদ। পাতলা কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে আওড়ালো,
“তাহলে কে বলেছিল এতো সুন্দর করে সাজতে? আর এখন পেচিয়ে ধরলেই আমার দোষ?”
ধরাস ধরাস শব্দ বাড়লো মেয়েটার বক্ষে। ছটফটিয়ে বের হতে চাইলো প্রফেসরের হাত সরিয়ে। কিন্তু অমন শক্ত-পোক্ত হাত সরানো তো দূর; নাড়াতেই পারলো না আরশি। উপায় না পেয়ে হড়বড়ালো,
“আপনি না চেঞ্জ করবেন? আমি কাপড় বের করে দেই? ট্রলিতেই আছে সব!”
শেহজাদের অধরজোড়া গলায় নেমেছে মেয়েটার। সেভাবেই বললো,
“উহু! কাপড় পড়ার মুড নেই এখন!”
শিউরে উঠলো আরশি! মানুষটার প্রতিটি স্পর্শে শাড়ির দু’পাশ যেনো আরো জোরে খামচে ধরলো মুষ্টি বদ্ধ হাত। নখ গেঁথে গেলো তালুতে। কম্পিত স্বরে অস্পষ্টে শুধোলো,

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৫ (২)

“তাহলে কেনো ডেকেছেন আমায় এখানে?”
“উমম! একটা ফিউচার শেহজাদ অর মেইবি আরশির জন্য?”
কেঁপে উঠলো মেয়েটা। থামলো প্রফেসর। গলার খাঁজ থেকে মুখ তুললো মন্থর গতিতে। নীল চোখে তাকিয়ে দেখলো দাগ হওয়া জায়গাটা।
“কাঁপছো কেনো ওভাবে?
আরশি ঠোঁট টিপলো রাগে! কাঁপছে কেনো এটাও জানতে হবে ওনাকে?
আনত মুখে দাঁতে দাঁত পিষলো মেয়েটা। বিড়বিড় করে বললো,
“আপনি যে পরিমাণ গোমড়ামুখো! তাহলে আপনার ফিউচার শেহজাদ কি পরিমাণে গোমড়ামুখো হবে? সেই ভেবেই কাঁপছি!”

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৭