নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৫৮

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৫৮
সিনথিয়া

—“ আরশি! দাঁড়াও বলছি! একবার ধরতে পারলে কিন্তু এরপর কান্নাকাটি করলেও আর ছাড়বো না!”
আরশি উর্ধ্বশ্বাসে পেছন ফিরলো। গোধূলির কনে দেখা আলোয় ঝলমল করছে ওর পদ্মকোমল মুখখানা। উচ্ছ্বসিত কন্ঠ উঁচিয়ে আওড়ালো,
—“ দৌড়ে হেরে গেলে অমন কথা সবাই বলে! আপনি হেরে গেছেন আমার কাছে, আগে স্বীকার করুন!”
ব্যস্ত রাস্তায় মানুষের ফাঁকফোকড় দিয়েই ফের দৌড়তে লাগলো আরশি। যেন পালালো কথাটা বলে। অনেকটা যাওয়ার পরও যখন শেহজাদের আর কোনো সাড়াশব্দ পেলো না, তখনই যেন একটু ধীর হলো ওর নুপুর পরা পায়ের গতি।
শেহজাদ কতদূর এসেছে দেখার জন্য যেই না পিছনে ফিরে তাকাবে, অমনি… পা জোড়া শূন্যে উঠে গেলো ওর।
আরশি হকচকায়। চমকে থমকে খিঁচে নেয় কাজল কালো চোখ। সন্ত্রস্ত চিবুক বুকে ঠেকাতেই কর্ণকুহরে পৌঁছায় সেই রাশভারী গলাটা,

—“ বলেছিলাম না? ধরতে পারলে কিন্তু আর ছাড়বো না তোমাকে? ”
কোমর আর পিঠে পোক্ত হাতদুটোর অস্তিত্ব অনুভব করতেই ভরসা পায় আরশি। চোখজোড়া মেলে পিটপিট করে তাকায় সম্মুখে। দেখে মেঘের মতো গম্ভীর সেই মুখে লেপ্টে থাকা অকপট হাসি। শেহজাদ হাসছে! আরশিকে দ্বিতীয়বারের মতো ভয় পাইয়ে দিয়ে বাচ্চাদের মতো আনন্দে ভাসছে তার চোখমুখ।
ছদ্ম ঠোঁট উল্টোয় আরশি। যেন হেরে গিয়ে ভারী দুঃখ পেয়েছে এমন দুঃখী দুঃখী গলায় বলে ওঠে,
—“ মানলাম গাট্টাগোট্টা মানুষের সাথে দৌড়ে আমি পারবো না, তাই বলে একটু তো মিছেমিছিও নিজের বউটাকে জিতিয়ে দিতে পারতেন? নিজে সবকিছুতে পারফেক্ট বলে এভাবে আমাকে হারিয়ে দিতে হবে?”
শেহজাদ নরম চোখে চেয়ে চেয়ে দেখলো গাল ফুলিয়ে অভিমান ঝাড়তে আরশিকে। অথচ প্রতিটা অভিমানী শব্দে ঠোঁটের হাসি যেন আরো চওড়া হলো মানুষটার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—“ গেম ইজ গেম! তুমি জিততে পারোনি বলে তো আমার উপর দোষ চাপাতে পারো না স্নোফ্ল্যাক! আমি জিতেছি, সুতরাং ট্রফিও আমার!”
শেহজাদের হেয়ালি কথার মানে ধরতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে ফেললো আরশি। বেখেয়ালেই জিজ্ঞেস করে বসলো,
—“ কোথায়? কোথায় আপনার ট্রফি?”
—“ কেনো? এই যে, আমার কোলে!”
আরশিকে আর কিছু বোঝাতে হলো না শেহজাদের। যাকে হারালো তাকেই যে ট্রফি বানিয়ে বসে আছে, এই মানুষ! মনে মনে আইঢাই করে উঠলো মেয়েটা। বারকয়েক পলক ফেলে দৃষ্টি নোয়ালো। পেটে শতশত প্রজাপতি নিয়ে অস্পষ্টে শুধোলো,
—“ সেই তো আপনিই জিতে গেলেন! আপনি জিতে গেলে আমার কী লাভ?”
শেহজাদ তখনই বললো না কিছু। কেবল হাসলো নিঃশব্দে। পরপর মাথা নুইয়ে কপালে কপাল ঠেকালো আরশির সাথে। চোখ বুঁজে আওড়ালো,

—“ আমার জিতে যাওয়াই মানে তোমার জিতে যাওয়া আরশি! কিন্তু তোমার হার মানে আমার হার!”
আরশি এমন কঠিন কথা বুঝলো না। ঐ ছোট্ট মাথায় ভালোবাসার এতো কঠিন অংক কষতে হিমশিম খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—“ তারমানে তো, আপনি জিতেও হেরে গেলেন
জাম্বুবান! কারণ আমি হেরে গিয়েছি বলে?”
শেহজাদ আরশির ঠোঁটের কার্ণিশে ঠোঁট ছোঁয়াল।
তার এই ভীষণ বুদ্ধিমতি বউয়ের বোকা বোকা প্রশ্ন শুনে আলতো হেসে বললো,

—“ আর তুমি হেরেও জিতে গেলে, কারণ আমি জিতে গিয়েছি! ডিড ইউ গেট ইট নাও?”
—“ আমি যদি এভাবে জিততে থাকি, তাহলে আপনার খারাপ লাগবে না?”
—“ তোমার কাছে হাজারবার হারলেও আমার খারাপ লাগবে না স্নোফ্ল্যাক! একটুও খারাপ লাগবে না! তবুও যদি তোমার মনে হয় আমার খারাপ লেগেছে, তাহলে নাহয় ইট্টু আদর করে পুষিয়ে দিও!”
শেহজাদ আরশির মতো করে ‘একটু’কে ‘ইট্টু’ বলায় এতক্ষণে আবার পুরোনো হাসিটা ফিরে এলো রমনীর ওষ্ঠপুটে। ঠিক যেমন অক্টোবরেই অতিথি পাখি ফিরে আসে সেন্ট্রাল পার্কের লেকের ধারে! ঠিক তেমন করে।
—“ নামাবেন না আমাকে?”
অবিচল কন্ঠ শেহজাদের। সে বন্ধ চোখে আরো একটা চুমু খেলো পাতলা অধরপুটে। তারপর বললো,

—“ প্রশ্নই আসছেন না!”
—“ সবাই হাসছে দেখুন!”
—“ হাসুক!”
—“ চোখ খুলে দেখুন! পার্কের সবাই যেতে যেতে কেমন করে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে!”
—“ ওরা শিখছে স্নোফ্ল্যাক!”
—“ হ্যাঁ! আপনার থেকে কীভাবে পাগলামি করতে হয়, সেসব শিখছে!”
আরশির ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বলতেই হেসে ফেললো শেহজাদ। ধীরে ধীরে চোখ মেলে নীলাম্বরের নিগূঢ় দৃষ্টিতে ঘায়েল করলো কুন্ঠিত ঐ মুখখানা। হাস্কি স্বরে বললো,
—“ দ্যে আর লার্নিং হাউ টু ট্রিট দ্যেয়ার কুইন লাইক মি! লেট দ্যাম বি জান!”
লাজুক মুখখানা লুকোতে ব্যস্ত হলো আরশি। কিন্তু বেচারি যেদিকেই তাকায়, শেহজাদের চোখ সরে না ওর থেকে। অল্প ঘাড় হেলিয়ে মানুষটা চেয়ে রয় তার পুতুলের মতো বউটার দিকে। লজ্জা লুকোতে যখন চেষ্টা ব্যর্থ হয় লাজবন্তীর, তখনই জড়িয়ে আসে ওর কথা,

—“ না-নামবো আমি এখন! এভাবে কোলে চড়ে ঘোরা যায়? ঘোরাতে এনে যদি কোলেই তুলে রাখেন পুরোটা সময়, তাহলে আমার পা দুটো অভিশাপ দেবে না আমাকে?”
শেহজাদ ভালো করেই জানে, তর্কে তার বউয়ের সাথে সে পারবে না। উল্টোপাল্টা যুক্তি দেখিয়ে হলেও আরশি নেমে যাবে তার বুক থেকে! আবার শূন্য করে দেবে মানুষটাকে।
—“ না নামলে হয় না? খুব খারাপ লাগছে এভাবে থাকতে?”
আকুতিভরা কন্ঠে টললো না রমনী। ঘন ঘন মাথা দুলিয়ে বোঝলো, খুব খারাপ লাগছে তার! শুধু বোঝাতে পারলো না, মানুষটার হাত ব্যথা হয়ে গেলে যে ওরও কষ্ট হবে। বায়ান্ন কেজি তুলে হাঁটতে থাকা কি চাট্টিখানি কথা?
অগত্যা! হাল ছাড়ল শেহজাদ। নামিয়ে দিলো আরশিকে। মাটিতে পা পড়তেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো মেয়েটা। ঠোঁট কামড়ে এদিক-ওদিক চাইলো কিছু একটা খুঁজতে!

—“ আইসক্রিমের গাড়ি খুঁজছো?”
অমনি চোখদুটো রসগোল্লা বানিয়ে শেহজাদের দিকে তাকালো আরশি।
—“ আপনি কী করে বুঝলেন?”
শেহজাদ উত্তর দিলো না। শার্টের স্লিভদুটো টান দিয়ে উপরে উঠালো। পরপর আরশির মতোই এদিক-ওদিক তাকিয়ে কলার ঠিক করলো শার্টের। চশমা পরা, শার্টের স্লিভ আর কলার ঠিক করতে থাকা মানুষটাকে বড় মুগ্ধ চোখে দেখলো আরশি। নাসারন্ধ্র টেনে নিলো ম্যানলি পারফিউমের কড়া গন্ধ!
—“ একটা গাড়ি আছে! তবে রোড ক্রস করতে হবে! তুমি এখানে একটু দাঁড়াও! আমি নিয়ে আসছি আইসক্রিম!”
পুরুষালী ভরাট স্বরে ঘোর কাটলো আরশির। তড়িঘড়ি জিজ্ঞেস করলো,
—“ আপনি জানেন আমার কোন আইসক্রিম পছন্দ? শুনুন! ভাববেন না, খেতে চেয়েছি বলে যেকোনো একটা এনে দেবেন! আমার পছন্দের ফ্লেভার কিন্তু …একি কোথায় যাচ্ছেন পুরো কথা না শুনে?”
কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াল আরশি। ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলো কপালের উপরে পড়ে থাকা খুচরো চুলগুলো। তার পুরো কথা না শুনেই চলে গেলো লোকটা?
শেহজাদ রোড পার হয়ে এলো বেশখানিক্ষণ পর। দু’হাত ভরে আইসক্রিম নিয়ে। সেগুলো দেখেই চোখ কপালে উঠলো আরশির। কন্ঠ শৃঙ্গে তুলে আওড়ালো,

—“ গাড়ির সবগুলো আইসক্রিম নিয়ে চলে এলেন নাকি?”
—“ তারপর কী যেন বলছিলে? কোন ফ্লেভার…”
—“ রাখুন আপনার ফ্লেভার! মনে তো হচ্ছে, পুরো দোকান তুলে নিয়ে এসেছেন!”
—“ ভাবলাম তোমার জন্য ইজি হবে, পছন্দের ফ্লেভার খুঁজে পেতে!”
—“ আর বাকিগুলো? বাকি আইসক্রিম কী করবেন বলুন? ইশ! এইজন্য আপনাকে আমার ভরসা হয়না! কিছু কিনতে বললেই আপনি গুবলেট করে ফেলেন! হয় সব কিনে নিয়ে আসেন, নয়তো যেটা বলি, সেটা খুঁজেই পান না! তারপর বারবার ফোন দিয়ে পাগল করে ফেলেন আমাকে!”
শেহজাদ এতো বকা খেয়েও দাঁত মেলে দিলো। ঝকঝকে হাসি! যেন এক্ষুনি টুথপেষ্টের শ্যুট শেষ করে ফিরেছে! আরশি হতাশ চোখে তাকিয়ে দেখলো সেসব। পরপর মাথা নাড়লো দু’পাশে। বকা খেয়েও মানুষ এভাবে হাসতে পারে?

আইসক্রিমগুলো নিয়ে বেশি বেকায়দায় পড়তে হয়নি ওদের। নিজেদের জন্য দুটো রেখে, বাকিগুলো বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে আসা পার্কের মানুষগুলোর হাতে হাতে দিয়ে দিয়েছে আরশি। সাথে বাচ্চাগুলোর সাথে আলাপও জমিয়েছে রমনী। নরম গালে টোল ফেলে হেসেছে পুরোটা সময়।
—“ দেখলেন, কেমন উদ্ধার করলাম আপনাকে বিপদ থেকে!”
কোমরে হাত রেখে বললো আরশি। মিছে কলার ঠিক করে দেখালো শেহজাদকে। ঠিক যেমন করে শেহজাদ করেছিল একটু আগে। মানুষটার ধ্যান ভাঙলো তখনই। দৃষ্টি নামিয়ে ঠোঁট টিপলো। পরপর টেনে টেনে বলে উঠলো,
—“ তুমি না থাকলে আমার কী যে হতো, এটা বলবে না?”

খোঁচা টের পেয়ে তার দিকে সরুচোখে চাইলো আরশি। নিজের হাতের আইসক্রিম থেকে কিছুটা ক্রিম সুযোগ বুঝে লাগিয়ে দিলো শেহজাদের ঠোঁটে। পরপরই আবার লুটোপুটি খেলো হাসতে হাসতে!
—“ প্লিজ মুছবেন না! মারাত্মক লাগছে কিন্তু আপনাকে! এখন মনে হচ্ছে পিচ্চি ওরা নয়, আপনি! আহালে আমার বাত্তাটা। তকলেট লাগিয়ে ফেলেছো খেতে গিয়ে?”
আরশি মনের খোরাক মিটিয়ে মজা উড়ালো শেহজাদের। হাসলো পেট চেপে ধরে! তারপর যখন একটু ধাতস্থ হলো, তখন আবার নিজে থেকেই এগিয়ে এলো শেহজাদের কাছে। ঘাড়ের দু’পাশে হাত রেখে বললো,
—“ আচ্ছা বেশ! মুছে দিচ্ছে দাঁড়ান! আর গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না!”
—“ কী দিয়ে মুছবে?”
—“ কেনো? রুমাল আছে তো আমার কাছে! নাকি মিস্টার জাম্বুবানের হাইজিনে ব্যাঘাত ঘটে যাবে আমার ব্যবহার করা রুমাল দিয়ে মুছে দিলে?”

—“ দু’লাইন বেশি কেনো বোঝো তুমি?”
আরশি হাসি আঁটকে বললো,
—“ আপনিই তো বলতেন! কেউ একজন যেন সবসময় তিনফিট দূরত্ব বজায় রেখে চলে! এখন আমি বেশি বুঝে ফেললাম?”
—“ কারণ তখন…”
—“ কারণ তখন?”
শেহজাদ থতমত খেলো! কথায় কথায় অতীত ধরে টান মেরে তাকে নাস্তানাবুদ করা? বেশ! শেহজাদও জানে, কী বললে কাজ হবে!
অমনি দু’হাতে মেদহীন কোমরটা টেনে নিজের সাথে মেশালো আরশিকে। যেন বলিষ্ঠ ঐ বাহুডোরে আঁটকে ফেললো আরশির সমস্ত কথা! পরপর স্বর নামিয়ে আওড়ালো,
—“ কারণ তখন তো জানতাম না, যে সেই কেউ একজনকে আমি তিন ফিট দূরে রাখলেও আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে?”
ঘনঘন নিশ্বাস পড়লো আরশির। লাজুক চোখে দৃষ্টি ফেললো ইতিউতি। ক্ষীণ স্বরে বললো,

—“ চ-চকলেট! চকলেট লেগে আছে আপনার ঠোঁটে! মুছে দেই?”
—“ চুমু খেয়ে মুছে দিতে হলে দাও! নইলে থাক! ইউ নো, হাইজিন ফার্স্ট?”
নিজের কথার প্যাঁচে নিজেই পড়লো এবার মেয়েটা। আহত চোখে তাকালো শেহজাদের দুষ্টমি ভরা চোখের দিকে।
—“ ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই! আমাকে নজরানা দিয়ে তুমি পার পেয়ে যাবে ভাবছো নাকি? ভেবে থাকলে আগেই বলে রাখি! নিজের ব্যাপারে আমি কিন্তু আবার ভীষণ স্বার্থপর মিসেস শেহজাদ!”
—“ তাই বলে বউকে ছাড় দেবেন না!”
—“ বউকেও ছাড় দেবো না!”

আরশি হাল ছেড়ে আশেপাশে তাকালো। সন্ধ্যে নামছে। লেকের পানিতে ঝিলমিল করছে শেষবেলা। মানুষের ভীড় কমেনি মোটেও। রঙবেরঙের নিয়ন আলোর সাথে উল্টে বাড়ছে কোলাহল। আরশি সেসবের মধ্যেই চোখ বন্ধ করলো। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়াল শেহজাদের বরবার।
চওড়া কাঁধজোড়ায় হাত রেখে ঠোঁট ছোঁয়াল শেহজাদের ঠোঁটে। আইসক্রিমটুকু নিয়ে নিলো জিভ দিয়ে। কিন্তু চোখ খোলার আগেই আইসক্রিম লেগে থাকা অধরজোড়ায় ফের চেপে বসলো ঐ উষ্ণ ওষ্ঠপুট। ঠোঁটে লেগে থাকা আইসক্রিমটুকুর স্বাদ ভাগাভাগি করে নিলো দু’জনে। অক্টোবরের প্রথম সন্ধ্যা
সাক্ষী হলো ওদের এই সুখ সুখ মুহূর্তের। ভারতীয় একজন মিউজিশিয়ান লেকের ধারে বসেই সুর তুললো গিটারে,

❝ Kacchi doriyon, doriyon, doriyon se
Mainu tu baandh le
Pakki yaariyon, yaariyon, yaariyon mein
Honde na faasley
Eh naraazgi kaagzi saari teri
Mere sohneya sunn le meri
Dil diyan gallan
Karaange naal naal beh ke ❞

—“ দেখুন! হ্যালো কিটি হেয়ার ব্যান্ড!”
আরশি হাতের ইশারায় কিছু দেখালো শেহজাদকে। একটা সফ্ট টয়ের দোকান? শেহজাদ বিভ্রান্ত কন্ঠে শুধোলো,
—“ কিন্তু দেখে তো খরগোশের কানের মতো মনে হচ্ছে আরশি! ওগুলো হেয়ার ব্যান্ড?”
—“ ওগুলোকে মোটেই খরগোশের কান নয়! আপনি খরগোশের কান আর বিড়ালের কানের পার্থক্য করতে পারছেন না? পাশেরগুলো দেখুন! ওগুলো মিকি মাউস হেয়ার ব্যান্ড!”
শেহজাদ দেখলো ঠিকই। কিন্তু আলাদা করতে পারলো না কোনোকিছুই। এগুলোর আলাদা আলাদা নাম মনে রাখার যখন আপ্রাণ চেষ্টা করছে সে, তখনই শার্টের স্লিভে টান পড়লো তার। আরশি টেনে নিয়ে গেলো তাকে দোকানের ভিতরে। অনেক বেছে বেছে দু’জনের জন্য দুটো মিকি মাউসের হেয়ার ব্যান্ড কিনলো৷ তারপর পরিয়ে দিলো শেহজাদকে। মানুষটা প্রথমে গাঁইগুঁই করলেও হার মানলো না আরশি। পরিয়েই ছাড়লো। দু’জনে একই রকম ব্যান্ড আর রঙিন রোদ চশমা পরে ঢুকলো ওখানকার একটা ফটো বুথে। ওল্ড ফ্রেন্ড ফটো বুথ। ভিন্টেজ ছবি তোলা হয় এখানে। ছবি তোলার জন্য আরশি খুশিতে ঝুমঝুম করলেও শেহজাদ কাতর কন্ঠে আওড়ালো,

—“ উইয়ার্ড লাগছে আরশি! ব্যান্ডটা অন্তত খুলে ফেলি?”
—“ কিচ্ছু উইয়ার্ড লাগছে না! চুপচাপ দাঁড়ান আমার পাশে! আপনার আর আমার প্রথম ডেট এটা! প্রথম ছবি তোলা একসাথে! যখন বুড়ো হয়ে যাবেন, তখন এগুলো দেখে কেমন নস্টালজিক হবেন ভাবুন তো একবার!”
শেহজাদ আর কিছু বলতে পারলো না। বিব্রত আননখানা মোলায়েম হয়ে এলো আরশির কথায়।
পরপর মুচকি হেসে পেছনে এসে দাঁড়াল মেয়েটার। হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো ওর কোমর। পেছনে দাঁড়িয়ে থেকেই চিবুক রাখলো ওর কাঁধে। প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষনে মাথা নুইয়ে ঠোঁট টিপলো আরশিও।
—“ নিন! এবার সামনে তাকান!”
আরশি সামনে তাকাতে বললেও শেহজাদ তাকিয়ে রইলো তার প্রিয়র থেকেও প্রিয় মানুষটার দিকে।
শাটার খোলার শব্দ হলো অমনি! আর সাথে সাথে—
ক্লিক!
আরশি ছবিগুলো হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে হাঁটতে লাগলো। মাঝে মাঝে স্ফূর্ত কন্ঠে আওড়ালো,

—“ আপনার ছবিগুলো দেখুন! আপনার এতো সুন্দর ছবি আমি আর একটাও দেখিনি!”
—“ তুমি রীতিমতো মিকি মাউসের ব্যান্ড পরিয়ে আমার ছবি তুলিয়েছো আরশি!”
শেহজাদ ছদ্ম গোমড়া মুখে কথাগুলো বললেও আরশি ততক্ষণে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলো হাসতে হাসতে। তারপর হঠাৎই ওর চোখ পড়লো প্রথম ছবিটায়। পরপর আরো কয়েকটায়। মাত্র একটা ছবি বাদে সবগুলো ছবিতেই শেহজাদ ক্যামেরার দিকে না তাকিয়ে, ওর দিকে তাকিয়ে আছে! আরশি হতবুদ্ধবোনে রইলো কিছুপল। ঘাড় ঘুরিয়ে নির্বাক চোখে চাইলো শেহজাদের পানে।
শেহজাদ অবশ্য খেয়াল করলো না তার অবাক প্রেয়সীকে। সে নিজের মতো করেই দু’হাত পকেটে গুঁজে হাঁটতে হাঁটতে বলে গেলো,

—“ বই কিনবে? সেদিন দেখলাম শেল্ফের পুরোনো বইগুলোই বের করে আবার পড়ছো! চলো কিছু বই কিনে আনি! উমম…তোমার পছন্দের ফিকশন বইগুলো কিনলে কেমন হয়?”
—“আ-আপনি এটা কবে খেয়াল করলেন?”
শেহজাদ বললো না কিছু। রাস্তার পাশেরই একটা বুক শপের দরজা ঠেলে আরশিকে ইশারা করলো আগে ঢোকার জন্য। ব্যস! আর পায় কে ওকে? যদিও ভদ্রতার খাতিরে মেয়েটা একবার সাবধান করতে চাইলো! বললো,
—“ যা করছেন, ভেবে করছেন তো? কারণ একবার যদি আমি ভেতরে ঢুকি, তাহলে কিন্তু আপনার পকেট পুরো খালি না হওয়ার আগ অবধি বেরোবো না!”
—“ পুরো ক্রেডিট কার্ডটাই কোনো একজনের বই কেনার জন্যই রেখেছিলাম। এবার সে যদি শুধু পকেটের টাকা খরচ করেই বেরিয়ে যেতে চায়, তাহলে তো তার লস! আমার কোনো অসুবিধে নেই!”
আরশি কেশে উঠতেও নিয়েও নিজেকে সামলালো। মুখে নরম হাসি টেনে কানের পিছনে চুল গুঁজে দাঁড়ালো শেহজাদের সামনে।

—“ ইয়ে মানে, ভিতরে যাই?”
শেহজাদ হাসি আঁটকে ছদ্ম গম্ভীর করে রাখলো মুখখানা। শেহজাদের চোখের ইশারায় মেয়েটাকে শপের ভিতরে যেতে বলতে দেরি, চোখের পলকে অদৃশ্য হতে দেরি হলো না আরশির!
মানুষটা এলো আরশির পিছন পিছন।
বুকশেল্ফ থেকে পছন্দের বইগুলো শেহজাদের দিকে না তাকিয়েই তার একে একে হাতে তুলে দিতে থাকলো আরশি। এতো এতো বই হাতে হিমশিম খেলেও মনে মনে হাসলো শেহজাদ। আরশির তার দিকে খেয়াল না করেই বলে চললো নিজের মতো,

—“ এটা সেকেন্ড এডিশন এই বইটার! বাইন্ডিংটা সুন্দর না? এই বইটার প্রচ্ছদটা দেখুন! কী দারুণ! আর ঐ যে বইটা? ওটা আমার পছন্দের লেখিকার। ওনার সবগুলো বই আছে আমার কাছে! এ বছর আরো একটা আশার কথা! সিকুয়েন্স আর কি! এই বুকমার্কগুলোও নিই? ঐ, ঐ বইটা একটু নামিয়ে দিন না! কতদিন উইশলিস্টে ছিল। কিনবো কিনবো করেও সময় পাইনি! আজ নিয়ে ফেলি?”
অবশেষে দু’হাত ভরে বই এনে কাউন্টারে রাখলো শেহজাদ। পরপর আরশির হাতে কালো রঙের কার্ডটা ধরিয়ে দিয়ে নরম গলায় বললো,

—“ আমি উবার ডেকে আনছি! তোমার বের হতে হবে না। আমিই ভিতরে এসে নিয়ে যাবো তোমাকে! কেমন?”
বুক শপের মাঝবয়সী মহিলা মাথা নুইয়ে মিটিমিটি হাসলো এতোগুলো বই দেখে। পরপর শেহজাদ চলে যেতেই আরশিকে পশ্চিমা ভাষায় বলে উঠলো,
—“ তুমি কিন্তু ভীষণ ভাগ্যবতী, মেয়ে! এমন ভালোবাসার মানুষ পাওয়া আজকাল কঠিন নয়, দুঃসাধ্য! তুমি পেয়েছো! যত্ন করে রেখো! আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি! মানুষটা একবারের জন্যও তোমার থেকে নজর সরায়নি। পুরোটা সময় তোমার দিকেই তাকিয়েছিল! যতক্ষণ তুমি বই দেখেছো, ততক্ষণ সে তোমাকে দেখেছে!”

শেহজাদ দাঁড়িয়েছিল শপের বাইরে। ফোন হাতে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছিল বারবার। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই! ক্লান্ত মুখটা দেখে আরশি বুক ভরে শ্বাস নিলো। বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত টান অনুভব হলো মানুষটার জন্য। না চাইতেও পাওয়া এমন ভালোবাসায় গলা ভিজে এলো আরশির। মুখ ফসকেই যেন বলে ফেললো,
—“ আমিও ওনাকে সারাজীবন ভীষণ ভালোবাসবো! যতটা উনি অনুভব করতে পারেন, আর যতটা অনুভব করতে পারেন না, তার উর্ধ্বে গিয়ে যদি কখনো আমাদের ভালোবাসা সত্যি হয়? তাহলে আমি সেই সত্যিটাই প্রমাণ করে ছাড়ব! এটা নিজের কাছে আমার নিজের করা পাক্কা প্রমিজ!”

—“ আরশিকে আমার হাতে তুলে দিলে তুমি শেহজাদকে পাবে! কথা দিচ্ছি! তুমি তোমার কথা রাখলে শেহজাদের ক্ষতি আমি করবো না! ডিল ইজ ডিল! আর তুমি আমার ক্রাইম পার্টনার। পার্টনারের ভালোবাসাকে আদি মারবে না!”
এমিলিয়া নীরব হাসলো আদির কথায়। অবজ্ঞা মিশিয়ে বললো,
—“ তোমার কী মনে হয়? আরশি না থাকলেই শেহজাদকে আমি পেয়ে যাবো? মানুষটার মন ভেঙে যাবে পুরোপুরি সে যদি আরশিকে হারিয়ে ফেলে! আর সেই ভাঙাচোরা মনে জবরদখল বসালেও কোনোদিন হয়তো আমি আরশির জায়গা নিতে পারবো না!”
উষ্ণ পানির রেখা নামলো এমিলিয়ার গাল বেয়ে। আদি ভূতগ্রস্তের ন্যায় চেয়ে রইলো শুধু ওর দিকে। যেন এখনো হজম করতে পারলো না যে এমিলিয়া বলছে এই কথাগুলো।
পরপর অদ্ভুতভাবে দুলে দুলে হাসলো আদি। এমিলিয়ার গালের দু’পাশে আঙুলের চাপটা দৃঢ় করলো ফের। হিসহিসিয়ে বললো,

—“ তোমার মাথাটা কি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলো এমি ডার্লিং? এ্যাঁ? এসব ডায়লগ উপন্যাসের নায়িকাদের মুখে মানায় এমি! তোমার মতো খলনায়িকাদের মুখে নয়! বাস্তবে ফিরে আসো আর আমার সাথে হাত মেলাও। নিজেরটা বুঝে নিতে হলে জগতের সবাইকে স্বার্থপর হতে হয়! তুমি যা করবে, তোমার নিজের জন্য করবে! আরশিকে আমার হাতে তুলে দিলে তোমার রাস্তা সাফ! আমাদের এক হয়ে কাজ করার মানে কেনো বুঝতে চাইছো না তুমি!”
চোখ ফেটে জল গড়ালো এমিলিয়ার। আদির অন্য হাতে তখন ধারালো পকেট নাইফ। ঠোঁটে পৈচাশিক হাসি। যেন এমিলিয়াকে নীরব হুমকি দেয়ার জন্য বের করেছে হাতের ঐ ছু”ড়িটা।
আর ঠিক তখনই…সাইরেনের শব্দে সরব হলো ক্যাফে নিউইয়র্ক। পুলিশের গাড়ির আওয়াজ পেয়েই হট্টগোল বেঁধে গেলো ক্যাফের ভিতরে। কিন্তু তাতে লাভ খুব একটা হলো না। আয়ানরা মিনিটখানেকের মধ্যে ঘেরাও করে ফেললো ক্যাফে নিউইয়র্কের পুরো এরিয়াটা। শ’খানেক পুলিশ জিম্মি করে ফেললো আদিদের। আয়ান হাতে মেগাফোন নিয়েই ক্যাফের ভিতরে ঢুকলো। এমিলিয়ার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে তাকালো আদির চোখ বরাবর। ফিচেল হেসে ফোনটা সামনে নিয়ে জানান দিলো,

—“ পুট দ্যাট নাইফ ডাউন আদি! ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট!”
আদি এবার সত্যি সত্যি অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো এমিলিয়ার দিকে! ততক্ষণে পিছন থেকেও পুলিশ ঘিরে ফেলেছে আদিকে। এমিলিয়া শক্তি খাঁটিয়ে আদির হাতটা সরালো নিজের গাল থেকে। সেখানটা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে দৃঢ় গলায় বললো,
—“ ইয়র গেইম…ইয়র গেইম ইজ ওভার!”
মিনিটখানেক স্তম্ভিত থাকার পর মুখ খুললো আদি। বিমূঢ় স্বরে আওড়ালো,
—“ পুরোটা তোদের সাজানো নাটক ছিল? তুই আগে থেকেই পুলিশকে সবটা জানিয়ে এসেছিলি এখানে, যেন আমাকে ধরিয়ে দিতে পারিস? কেনো?”
—“ আগে থানায় চল! তারপর কেনো, কীসের জন্য, সব বুঝিয়ে দিচ্ছি আমি তোকে!”

আয়ানের কথা শুনে অমনি ছুড়ি সমেত আয়ানের দিকেই এগিয়ে যেতে উদ্যত হলো আদি। বদ্ধ উন্মাদ সে এখন। যদিও সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়! এভাবে ধরা পড়ে যাবে, এটা হয়তো ওর ধারণাতেই ছিল না। নিঃশব্দে হাসলো আয়ান।
কিন্তু আয়ানের গায়ে একটা আঁচও লাগাতে পারলো না আদি। তারআগেই দু’জন পুলিশ এসে হাতদুটো পিঠমোড়া দিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দিলো ওর। ততক্ষণে এমিলিয়াও কিছুটা সামলে নিয়েছে নিজেকে। দৃষ্টি মেঝেতে রেখে আয়ানের পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই ক্ষেপাটে হয়ে উঠলো আদি।
—“ তোদের সবকটাকে দেখে নেবো! নিজের কবর নিজে খু্ঁড়লি তুই এমিলিয়া! একটা একটা করে মাটিতে পুঁতে রাখবো তোদের শালা। আমার সাথে বেইমানী! আমার সাথে?”

আয়ান সহাস্যে এগিয়ে এসে হাত রাখলো আদির কাঁধে। বিদ্রুপ মেশানো কন্ঠে আওড়ালো,
—“ তোর মতো ক্রিমিনালকে একবার শুধু নিয়ে যাই হাজতে? এমন জামাই-আদর করবো যে শ্বশুরবাড়ির নাম শুনলেই প্যান্ট ভিজিয়ে দিবি!”
আয়ানের বলা কথার প্রতিত্তোর করার আগেই পুলিশের হ্যাচকা টানে মুখ থুবড়ে পড়লো আদি। ক্যাফে ভরতি মানুষ দেখলো, ভিডিও করলো এই দৃশ্যের। পুলিশের গাড়িতে আদিকে তোলা হলো টেনেহিঁচড়ে!
পরক্ষণেই আয়ানের পাশে এসে দাঁড়াল এমি। নিজের সমস্ত কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত আজ সে। দৃষ্টি নত। গাল ভিজে আছে নোনা পানিতে। ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,

—“ বাস্টার্ডটাকে ছাড়বেন না কখনো! ও আবার পালাতে পারলে আরো ডেস্পারেট হবে আম…আপনাদের ফ্যামিলির ক্ষতি করার জন্য!
আয়ান ফিরে চায় পাশে। এমনিতে এমিকে সহ্য করতে না পারলেও আজ আর বিরক্তিটুকু প্রকাশ করলো না বাইরে। ভ্রুজোড়া টানটান রেখে বুকে হাত গুঁজে দেখলো ভয়ে কাঁপতে থাকা মেয়েটাকে। তারপর বলে উঠলো,
— “ পরিবারটা তোমারও এমিলিয়া যদি নিজেকে তুমি শুধরে ফেলতে পারো। স্টিল, তোমাকে ধন্যবাদ! আমাদের টিম এর সাথে কোঅপারেট করার জন্য! তোমাকে আমার দু’জন ফিমেইল টিম মেম্বার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে। বি সেফ আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই! আদি আমাদের পরিবারের আর কিছু করতে পারবে না!’

— ‘ আরো একটা প্রশ্ন ছিল!’
—- ‘ গো অন!’
—‘ আপনি কী করে বুঝতে পেরেছিলেন যে, আদি আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে, আরশির ক্ষতি করার জন্য!’
অন্যমনস্ক হয়ে ফোন বের করছিল আয়ান। আরেকজন মানুষকে কল দিয়ে জানাতে হবে তো এই ভালো খবরটা! তাই এমিলিয়ার প্রশ্ন শুনে সৌম্য মুখখানায় রহস্যময় হাসি প্রসারিত হলো শুধু।
ওখান থেকে বিদায় নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠতে উঠতে আয়ান কল করলো শেহজাদকে। কানে লাগানো ব্লুটুথে ভেসে এলো একটি পুরুষালী শক্ত কন্ঠ,

— ‘ কাজ হয়েছে?’
আয়ান বাঁকা হাসে। গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ঘোরাতে ঘোরাতে বলে উঠলো,
—- ‘তোর শালা প্রফেসর না হয়ে পুলিশ হওয়া উচিত ছিল! মাঝেমধ্যে আমিই তোর বুদ্ধি দেখে অবাক হই! হ্যাঁ রে! এতো বুদ্ধি নিয়ে রাতে বালিসে মাথা রেখে ঘুমোনো তো সম্ভব নয়! তাহলে ঘুমোনোর সময় মাথাটা রাখিস কোথায়?’
— ‘ বউয়ের বুকে! এখন বল, আদিকে পেয়েছিস কিনা?’
আয়ান বিষম খেতে নিয়েও সামলালো নিজেকে! দাঁত কপাটি বের করে হাসলো একচোট। পরপর গর্ব করে বললো,
—‘ পেয়েছি মানে! বিকেলেই একেবারে হাতেনাতে ধরেছি বিটকেলটাকে! যাই হোক! তুই যদি আমাকে এমিলিয়ার ফোনের উপর নজর রাখতে না বলতি, তাহলে হয়তো আজকেও আদিকে ধরা পসিবল হতো না! নির্ঘাত আবারও হাত ফসকে পালাতো হতচ্ছাড়া!’

শেহজাদ নিশ্চিন্তের শ্বাস ফেললো আদির এ্যারেস্টের খবর শুনে। বাড়ি ফিরছে ওরা। উবারেই ঘুমিয়ে পড়েছে আরশি। বারবার ঘুমন্ত মাথাটা টলে পড়ছিল পিছনের দিকে। শেহজাদ ফোনে কথা বলতে বলতেই আড়চোখে দেখলো সেটা। পরপর এক হাতে নিজের কাছে টেনে আনলো মেয়েটাকে। বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো ওকে।
ফের আয়ানকে শুধোলো,

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৫৭

—“ আর এতক্ষণে জানালি আমাকে এটা?”
—“ কান্ট ডিস্টার্ব ইয়্যু অন ইয়্যুর অফিশিয়াল ফার্স্ট ডেট বাডি! তারপর বল! কেমন ছিল? রিভিউ দে ভাই!”
নিম্নাষ্ঠ কামড়ে হাসলো শেহজাদ। মনে পড়লো আরশির সাথে আইসক্রিম নিয়ে ওর খুনসুটির মুহূর্তটুকু! ফটোবুথে জোর করে ওকে হেয়ার ব্যান্ড পরিয়ে ওর ছবি তোলানো, বই কেনার সময় নিরন্তর কথা বলতে থাকা মেয়েটাকে। পরপর নিঃশব্দে মাথা নুইয়ে চুমু খেলো ঘুমন্ত মুখটায়। বিড়বিড় করে বললো,
— “ পার্ফেক্ট! ইট ওয়াজ পার্ফেক্ট আয়ান!”

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৫৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here