নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৯

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৯
সিনথিয়া

শেহজাদের নীল চোখের কোটর জুড়ে উপচে পড়ছে দুষ্টুমি। ওষ্ঠপুটের হেয়ালি হাসি আড়াল করতেই যেনো চওড়া বুকে হাত গুঁজেছে লোকটা। বউয়ের হাতে খাওয়ার জন্য অপেক্ষমান পুরুষটি, নিরেট মুখে এক পৃথিবী সমান ধৈর্য্য নিয়ে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে।
এদিকে আরশির প্রাণ যে ওষ্ঠাগত!শেহজাদের প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে ভাবছে, “স্বাভাবিক থাকতে হবে। কাঁপাকাঁপি একদম করা যাবে না! খাবার গায়ে ফেললে কিন্তু তোকে দিয়েই ধোঁয়াবে! সুতরাং সাবধান আরশি। ফোকাস অন ইউর টাস্ক!”

ঠোঁট গোল করে দম ফেললো মেয়েটা। পরপর লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলো যুদ্ধে নামার প্রয়াসে। কিন্তু চামচে খাবার তুলে শেহজাদের দিকে তাকাতেই হাওয়া ছেড়ে দিলো তার সমস্ত প্রচেষ্টা।
মানুষটার খুরখার চাওনিতে লাগাম ছাড়ালো ওর হৃদযন্ত্রের গতি। ভূমিকম্প উঠলো শক্ত হাতে ধরে রাখা চামচে।
অথচ মেয়েটার বেহাল দশায় ঠোঁট টিপে হাসলো শেহজাদ। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ধারালো চোখজোড়া আরশির নিটোল কালো চোখে আসন গেড়েছে।
“মাঝখানে এতো বড় বর্ডার দিয়ে রাখলো খাবো কিভাবে? পাশে এসে বসো। আমি টেবিলের উপর ঝুঁকে খেতে পারবো না! বুকে ব্যাথা আমার!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঠেস দেয়া কথায় আরশির রাগের পারদ মাত্রা ছাড়ালো। কটমট করে উঠে এসে বসলো মানুষটার পাশে। মনে মনে সহস্র গালি-গালাজে শেহজাদের চৌদ্দ পুরুষ উড়িয়ে দিলো নিমিষেই। তারা বেঁচে থাকলে
নির্ঘাত এতক্ষণে স্বেচ্ছায় পরলোকের রাস্তা খুঁজতেন।
খাইয়ে দেয়ার সময়ও শিকারী চোখে বিদ্ধ হলো কিশোরী। শ্বাসের গতি যেনো খিঁচে বন্ধ হয়ে আসলো অমনি। কেমন এক গা শিরশিরে অনুভূতি লোকটার চাহনিতে।
“তুমি খাচ্ছো না কেনো? নাকি না খেয়ে অসুস্থ হয়ে মম-ড্যাডকে দেখাতে চাইছো, আমি কতটা অযত্নে রাখি তোমাকে?”
খেতে খেতেই কথাগুলো আওড়ালো শেহজাদ।

কিন্তু এবারের খোঁচাটা আর হজম হলো না আরশির। জেদের বসে শেহজাদের এঁটো চামচ দিয়েই এক গাদা ফ্রাইড রাইস তুলে মুখে দিলো ও।
আর এটাই যেনো চাইছিল মানুষটা। অন্তপুট জুড়ে বিজয়ীর হাসি তার। অথচ চোখে-মুখে প্রহসন ঢেলে বলল,
“আহ! আবার থেমে গেলো কেনো? খাইয়ে দাও আরো! নাকি আমাকে এক চামচ দিয়ে বাকিটা নিজের জন্য রেখে দিয়েছো?পরে খাবে বলে? আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছো খেতে?”
অন্যদিকে ফিরে বড় বড় দম নিচ্ছিলো
মেয়েটা। গাল ভর্তি ফ্রাইড রাইস শেষ করতে বেগ পেতে হয়েছে খুব।
আচানক শেহজাদের কথায় কপালে ভাজ ফেলে ফিরলো ওর দিকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও খ্যাঁক করে উঠলো,
“কিহ্? আপনার মনে হয় আমি এতো খেতে পারবো?”
“তাহলে হাত গুটিয়ে বসে আছো কেনো? খাইয়ে দাও!”
শেহজাদের কথা শুনে লাভার ন্যায় ফুঁসছে মেয়েটা। আর আচমকাই সেই সমস্ত রাগ গিয়ে বর্তাল বেচারা চামচের উপর। যেটা লোকটার মুখে একপ্রকার ঠুসে
দিলো ও।

ঠোঁটের বাকা হাসি সমেত বাধ্য স্বামীর ন্যায় বউয়ের রাগটুকু স্বাদরে গ্রহণ করলো শেহজাদ।
তবে খেতে খেতে ওর নজর আঁটকালো আরশির ঠোঁটের কোনায়। কয়েকটা ভাত লেগে আছে সেখানে।
ঢোক গিললো শেহজাদ। গলার এ্যাডাম অ্যাপল টা ওঠানামা করলো সেই ঢোকের সাথে। বলল,
“ঠোঁটের কোনায় খাবার লাগিয়ে রেখেছো কেনো? তোমার উপন্যাসের হিরোদের মতো মুছিয়ে দেবো ভেবে?!”
মানুষটার কথায় চোখ ফুটবল আরশির।
ও উপন্যাস পড়ে এটা জানলো কি করে লোকটা? ওর রুমে এসে গোয়েন্দাগিরি করে নাকি?
এসব ভেবেই হাত উঠিয়ে ঠোঁট মুছতে নিলো আরশি। অমনি ক্ষিপ্র গতিতে সেই হাত ধরে ফেললো শেহজাদ। পরপর ঝুঁকে আসলো কিশোরীর ঠোঁটের কোনে। পাতলা অধর জোড়া কিশোরীর ঠোঁটের কোনায় লেগে থাকা ভাতটুকু নিয়ে নিলো কৌশলে।
মানুষটা গলার স্বর খাদে নামলো। আরশির ফুটবল হওয়া চোখে তাকিয়ে বলল,
“সো দিজ ইজ হাউ দে ডু ইট! এ্যাম আই রাইট আরশি? ”

চেলসির একটা সরু গলি দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছে জারা। সারাদিনের ক্লাস আর লাইব্রেরীর কাজের ধকল সামলে উঠতে উঠতে এখন রাত প্রায় নয়টা।
স্টামফোর্ড ব্রিজ অবধি মানুষের আনাগোনা থাকলেও এদিকটা বেশ শূন্য। তারউপর গলির লাইটের অবস্থা জোনাকি পোকার মতো। কখনো জ্বলছে তো কখনো নিভছে।
সাথে গা ছমছমে অন্ধকার তো আছেই।যেনো ঘিরে রেখেছে তা পুরো রাস্তাটাকে।
হুট করেই লাইব্রেরীর ম্যানেজারের উপর খুব দমে চড়াও হলো জারার মেজাজ। আরেকটু দিন থাকতে ছুটি দিলে কি হতো? অন্তত এই ভুতুড়ে গলি দিয়ে তো ফিরতে হতো না ওকে!
জারার এসব ভাবনার মধ্যে ল্যাম্পপোস্টের বাতির নিচে হঠাৎই যেনো উদয় হলো এক ছায়া মূর্তির।
থমকে দাঁড়ালো মেয়েটা। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দল-বল নিয়ে ছুটলো অজানা শঙ্কারা। মনে মনে ঢোক গিললেও বুক চিতিয়ে সামনে আগালো ও।
মনে মনে ভাবলো,

“চোর-ডাকাত, জ্বিন-ভূত যা-ই হোক! জারা কাউকে ভয় পায় না। আমার দিকে এগোতে নিলে এমন লাথি মারবো, ভূতের বাপও বাপ-বাপ করে পালাবে!”
দোয়া-কালাম পড়ে বুকে ফুঁ দিলো ও। কিন্তু সাহস নিয়ে এগোতে গেলেই ছায়া মূর্তিটাও বেরিয়ে আসলো ল্যাম্পপোস্টের নিচে থেকে।
ব্যাস! অমনি দ্বিগ্বিদিক ভুলে ওটার গায়ে সজোরে এক লাথি বসালো জারা।
ছিটকে পড়লো আয়ান। পশ্চিমা ভাষায় অশ্রাব্য কিছু শব্দ আওড়ে তলপেটের নিচে চেপে ধরলো সে। চোখের সামনে তারারা ঘুরপাক খাচ্ছে। দুলছে সমস্ত পৃথিবী।
অদূরে দাঁড়ানো জারার মুখটাও অস্পষ্ট লাগছে কেমন।
পরিচিত কন্ঠ শুনে ওর কাছে ছুটে এসেছে মেয়েটা। ভয়ে ফ্যাকাসে হওয়া চোখমুখ যেনো অনুতাপের বানে আরো ফ্যাকাসে লাগছে এখন।
হাঁটু গেড়ে বসে জারা আয়ানের পিঠে হাত বোলাচ্ছে। বারবার জিজ্ঞেস করছে,

“কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলুন! কোন জায়গায় লেগেছে?”
আয়ান চোখ খিঁচে বন্ধ করলো। অস্পষ্টে আওড়ালো,
“বলা যাবে না! মারাত্মক জায়গা! আপতত একটু হসপিটালে যদি নিয়ে যেতে-”
জারা কাঁদো কাঁদো মুখে ধমকে উঠলো,
“কে বলেছিল ওভাবে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে ল্যাম্পপোস্টের নিচে? হ্যাঁ? আমাকে ভয় না দেখালে কি ওভাবে লাথিটা খেতেন?”
জারার বকুনি শুনে মনে মনে হাসি পেলো আয়ানের। কিন্তু এই ব্যাথার কাছে সে হাসি যে তুচ্ছ। কোনোমতে শুধু বলল,
“তুমি আসতে দেরি করছিলে দেখেই তো তোমাকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম বাটারফ্লাই! আচ্ছা ছাড়ো ওসব! আমার ফিউচার জেনারেশনটা বাঁচানো বেশি জরুরি এখন! ওদের ছাড়া আমার বিয়ে হবে না!”
জারা আর দেরি করলো না। উঠে দাঁড়িয়ে টেক্সি ডেকে আনলো। পরপর আয়ানকে গাড়িতে তুলে রওনা হলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে!

শেহজাদের কথায় আর কাজে বিষম খেলো আরশি। কেশে-টেশে একাকার হলো চোখ-মুখ। শেহজাদ পানি এগিয়ে দিয়েছিল।
সেদিকে তাকালোও না মেয়েটা।
ছুটে গিয়ে রুমের দরজা আঁটকালো।
বোতল দিয়ে পানি খেয়ে ধাতস্থ হয়ে বসলো বিছানায়।
এই কনকনে শীতেও এসি ছাড়লো।
তবুও হাসফাস কমলো না ওর।
শেহজাদের ঐ কথাগুলো মনে পড়তেই লজ্জা আর জেদ একসাথে চেপে বসলো ঘাড়ে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“জাম্বুবান! এক মাঘে শীত যায় না। এটা আমেরিকা দেখে যা খুশি তাই করছেন তো? আমাকে বোকা পেয়ে মজা নিচ্ছেন? গোয়েন্দাগিরি করেছেন আমার রুমে?
করুন! করুন!
শীত আমারও আসবে! তখন এই আরশি চৌধুরীও দেখে নেবে আপনাকে!”
কিছুক্ষণ আনমনে বকবক করে ফোন খুঁজলো মেয়েটা। ডায়াল প্যাড বের করে ‘আম্মু’ লেখা নাম্বারে কল দিলো! বারকয়েক বাজার পর
রিসিভ হলো কলটা।
জেয়নেব ঘুম জড়ানো কন্ঠে আওড়ালেন,

“আরশি! মা! কি খবর তোর?”
এপাশ থেকে উত্তর না পেয়ে প্রৌঢ়ার কপালেও ভাজ পড়লো। খারাপ কিছুর আশংকায় আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
“এতো রাতে ফোন দিলি? কিছু হয়েছে জামাইয়ের সাথে?”
এবার মুখ খুললো মেয়েটা। নাক টেনে টেনে বলল,
“তোমার জামাই একটা আস্ত জাম্বুবান! আমি থাকবো না এটার সাথে। চিড়িয়াখানার জিনিস চিড়িয়াখানায় ফেরত দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসবো । তুমি এক্ষুনি আব্বুকে ফ্লাইটের টিকিট বুক করতে বলো!”
জেয়নেব চৌধুরী ঠোঁট টিপে হাসলেন মেয়ের কথায়। আড়চোখে একবার দেখে নিলেন ঘুমের ঘোরে থাকা স্বামীর মুখটা।
মনে মনে ভাবলেন, “বাপ-মে একেবারে সেইম ক্যাটাগেরির। একটুও এদিক-ওদিক হয়নি!”
“কি হলো! বলো! এক্ষুনি বলবে তো আব্বুকে?”
মেয়ের জেদ দেখে জেয়নেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দু’পাশে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে বললেন ,
“দেখ! আগে কি হয়েছে সেটা না শুনে কি করে তোর আব্বুকে ফ্লাইটের টিকিট বুক করতে বলি বলতো? আগে বল আমায় কি হয়েছে? শেহজাদ কি কিছু বলেছে তোকে?”

“তুমি জানো, উনিহ্-উনি আমাকে-”
এবারটায় চোখ ছলছল করে উঠলো আরশির। ত্রস্ত আওড়ানো কথাগুলো মাঝপথেই টুপ করে গিলে ফেললো আবার।
নাহ্! এসব কথা তো আর বড়দের বলা যাবে না!
অবশেষে হাল ছাড়লো মেয়েটা। কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে জেঁকে ধরলো মাকে,
“তোমরা এই দু’দিন আমাকে কল দাও নি কেনো একবারো?”
“ওমা! কে বললো কল দেইনি? কিন্তু তোকে কলে একবারও পেলে তো!
পরে তো শেহজাদই কল দিলো আমাদের। বললো, তোরা ভালো আছিস। আর তোর ফোনের স্ক্রীন নাকি নষ্ট হয়ে গেছে, তাই ধরতে পারিস নি। আরো বললো, আমি আর তোর আব্বু যেনো টেনশন না করি তোর জন্য!
এজন্যই তো একটু নিশ্চিন্ত হয়ে বসতে পেরেছি আমরা।”
আরশি কন্ঠে পাতালসম বিস্ময় নিয়ে কোনো মতে শুধোলো,

“উনি কল দিয়েছিল তোমাদের? নিজে থেকে? ”
“হ্যাঁ! দিলো তো। ছেলেটার দায়িত্ব-জ্ঞান দেখে তোর আব্বু এতো মুগ্ধ হয়েছে না! সেই থেকে শেহজাদের প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ উনি!”
একশো ভোল্টেজের শক খেলেও আরশি এতোটা তব্দা খেতো না যতটা না এখন খেয়েছে, ওর মায়ের কথাগুলো শুনে!
যে লোক নিজের মা-বাবাকে ফোন দেয়ার সময় পায় না, সেই লোক ওর মা-বাবাকে কল দিয়েছে? তা-ও আবার ওর খবর দিতে?
পুরো বিষয়টা এতোটাই অবিশ্বাস্য যে মেয়েটা তিন তিনবার নিজের গায়ে চিমটি কেঁটেও বিশ্বাস করতে পারলো না, যে ভুল শোনেনি ও।

রাত প্রায় দুটোর কাছাকাছি। ম্যানহাটন সিটির গগনচুম্বী ভবনগুলো তুষারের চাদর গায়ে তলিয়েছে ঘুমের দেশে। অথচ শুধু ঘুম নেই আরশির চোখে!
প্রথমে কতক্ষণ কোলবালিশ নিয়ে এপাশ-ওপাশ করলো মেয়েটা। তারপর উঠে বসলো গাঁট হয়ে। ডুবলো গভীর চিন্তায়,
কেনো জাম্বুবানটা ওর সামনে এক আর পিছনে আরেক ব্যবহার করে? এর উত্তর না পেলে আজ আর ঘুম হবে না ওর!
তড়িৎ উঠে দাঁড়ালো ও। ধুমধাম দরজা খুলে এগিয়ে গেলো শেহজাদের রুমের দিকে। আজ দরকার পড়লে হেস্তনেস্ত একটা হয়ে যাক জাম্বুবানের সাথে!
তবুও ওনার মুখ থেকে সত্যিটা ও শুনবেই ! উত্তর না নিয়ে এক পা-ও নড়বে না ঐ লোকটার রুম থেকে।
কিন্তু শেহজাদের রুম পর্যন্ত আসতেই এতক্ষণের দেখানো তেজ লেজ গুটিয়ে পালালো আরশির। ভিরানো দরজা ঠেলে ভিতরে যাওয়ার সাহসে আর কুলিয়ে উঠতে পারলো না মেয়েটা।
ধীর পায়ে পেছনের দিকে যেতে যেতে
বিরবির করে আওড়ালো,

“আজ থাক! রাতের বেলা জাম্বুবানদের জাগাতে নেই আরশি! কালকে ধরিস একে!”
কিন্তু তখনই গোঙানির মতো শব্দ এলো রুমের ভেতর থেকে । একবার, দু’বার। তৃতীয়বারের বার চিন্তা হলো আরশির।
হাতের ব্যাথায় মানুষটা আবার অসুস্থ হয়ে পড়লো না তো!
নিজেকে আর আটকাতে পারলো না মেয়েটা।
দরজা ঠেলেই ঢুকলো শেহজাদের রুমে।
কিন্তু বিধিবাম! ঢুকেই তো চোখ কপালে আরশির। এই কনকনে শীতেও খালি গায়ে উবু হয়ে ঘুমোচ্ছে শেহজাদ!
ডুভেটটা কোমর অবধি কোনোমতে ঢেকে রাখলেও চওড়া পিঠের অর্ধেকের বেশিই আবরণহীন।
সাথে সাথে চোখ নামালো ও। ত্রস্ত
নিজের রুমের দিকে ফিরে যেতে নিলেও আবার কানে এলো সেই একই আওয়াজ।
আরশি থামলো। কৃতজ্ঞতার খাতিরেই যেনো একা ছাড়তে পারলো না শেহজাদকে। যতই হোক, এই মানুষটাই তো সেদিন বাঁচিয়ে ছিল ওকে কিডন্যাপারের হাত থেকে।

পরপর পা টিপে টিপে শেহজাদের কাছে গেলো মেয়েটা। মাথার দিকটাতে গিয়ে দাঁড়াতেই যেনো আগুনের ধাপ এসে লাগলো আরশির গায়ে। মানুষটার ফর্সা মুখখানা কেমন লাল হয়ে আছে তাপে!
তার মানে কি জ্বরের ঘোরেই অমন করছিলেন উনি?
শেহজাদের জন্য এবার আর রাগ নয়, মায়া হলো আরশির। কোমল মনটা ভুলেই গেলো এ ঘরে আসার উদ্দেশ্য।
আস্তে আস্তে বলল,
“জ্বরের মধ্যে এমন জাম্বুবানের মতো শুয়ে থাকলে তো জ্বর আরো বাড়বে। উঠে ডুভেটটা ভালো করে গায়ে জড়ান। আমি পানি আর রুমাল নিয়ে আসছি!”

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৮

মানুষটার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে উত্তরের অপেক্ষায় রইলো মেয়েটা। কিন্তু উত্তর দিচ্ছে না দেখে নিজেই
উদাম পিঠ ঢেকে দিতে গেলো ডুভেট দিয়ে।
আর তখনই পেলব হাতদুটো শিকারীর ন্যায় খপ করে ধরে ফেললো শেহজাদ। নেশালো চোখে তাকালো আরশির ভড়কানো মুখের দিকে। অস্পষ্টে আওড়ালো,
“কেনো এসেছো এই ঘরে?”

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ১০