পাতা বাহার পর্ব ২৫

পাতা বাহার পর্ব ২৫
বেলা শেখ 

গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকছে মেদিনী জুড়ে।‌বর্ষাকালে বৃষ্টির কোনো ভরসা নেই যখন তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো বলে। আজকে সকালেও ঝলমলিয়ে রোদ উঠেছিল। এমনকি দুপুরের দিকেও মেঘের ছিটেফোঁটা ছিল না। হুট করে কোথা থেকে মেঘমল্লার তার দলবল পসরা নিয়ে হাজির হলো জানা নেই। নীল সাদা মেঘমালা ঈশান কোণে চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে। যেন বলছে অতিশীঘ্রই বর্ষণে তোমাদের পরিবেশ শীতলতায় ছেয়ে যাবে। বাতাসের ছিটেফোঁটাও নেই যেন ঝড়ের পূর্বাভাস! তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছ থেকে এমন কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায় নি।

বৃষ্টির পূর্বে সাধারণত ভ্যাপসা গরম থাকে আজকেও ব্যতিক্রম নয়। ভ্যাপসা গরমের ভিতর বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিনিমিনি খেলছে জনগনের সাথে। মেঘ দেখে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আতিকুর ইসলাম আজ বাড়িতেই। অফিসে ঈদের ছুটি পড়েছে। ঈদের যে বেশি দিন‌ বাকি নেই, মাত্র চার দিন। তিনি খবরের কাগজ পড়তে ব্যস্ত। তার সামনে বসে রাতুল ভুঁইয়া মেয়েকে কোলে নিয়ে ফোনে কার্টুন দেখছে। লাবিব মুখ ফুলিয়ে বাবার পাশে বসে ঘার উঁচিয়ে ফোনে উঁকি দিয়ে দেখছে। একটু আগেই মায়ের ঝাড়ি পড়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

লতা এখনো পাতার উপর রেগে আছে। কথা বলে তবে খোঁচা মেরে। লাবনী আক্তার আজ ব্যস্ত মানবী। সকাল থেকেই একটা পর একটা কাজে লেগেই আছে। এখন রান্নাবান্নার তোরজোড় চালাচ্ছে। আর তাকে সাহায্য করছে লতা। হরেক রকমের পদ রান্না হচ্ছে আজকের বিকেলের মেনুতে। আর এতোসব আয়োজনের উদ্দেশ্য বাড়িতে মেহমান আসবে। আর বাঙালি মেহমান আপ্যায়নে সর্বস্বই করতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে কৃপণতা তাদের ঔদ্ধত্যে নেই। আর মেহমান যদি হয় মেয়ের শশুর বাড়ী থেকে তাহলে তো কথাই নেই। বাঙালি মায়েরা পারেনা পুরো রেস্টুরেন্ট খুলে দেয়। লাবনী আক্তারের আয়োজন কিছুটা সেরকমই। পাতা লুবমান বসে নেই। মায়ের আদেশে পুরো ঘরবাড়ি ধোয়া মোছা, পরিষ্কার সহ গোছানো তাদের দায়িত্ব। লুবমান ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিল

-” মেহমান তো পাতাকেই দেখতে আসছে। ও কাজ করলে চেহারার গ্লো..”
আর বলতে পারে নি। লাবনী আক্তার স্পষ্ট করে বলেছেন,
-” তো কি হয়েছে? আমার মেয়েদের চেহারা এমন যে ফকিন্নি বেশে থাকলেও কেউ অপছন্দ করবে না। আর তাছাড়া বিয়ে টা যেহেতু হয়ে গেছে পছন্দ হওয়া, না হওয়া ম্যাটার করে না। ওরা ভারি বড়লোক পরিবারের! আমরা মধ্যবিত্ত। এখন সেটা তো বদলাতে পারবো না তবে তারা যেন বলতে পারে মধ্যবিত্ত না হয় পরিবেশ ভালো! তাই বকবক না করে কাজে হাত লাগা!”

লুবমান আর বলার সাহস পায় না। সবাই মিলেমিশে সব কাজ সেরে ফেলে। মেহমান আসার সময় হয়েছে সাথে বৃষ্টিও এলো বলে। পাতা গোসল সেরে এসে ফ্যান ছেড়ে চুল শুকাচ্ছে। লতা নিজের বেশ কিছু শাড়ি ওর্নামেন্টস নিয়ে এসে পাতাকে দেখায়। কোনটা পড়বে বললে পাতা জলপাই রঙের একটি বেনারসী শাড়ি পছন্দ করে। লতা তার সাথে মেচিং জুয়েলারি রেখে বাকি গুলো রেখে আসে। পাতা চুল শুকিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। তার চুল গুলো ছোট। কাঁধ থেকে অল্প একটু নিচে তবে বেশ গোছের। খোঁপা করলে মনে হবে দীঘল লম্বা কেশবতী হবে হয়তো, নয়তো এতো মোটা খোঁপা। চুল গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় চিরুনি করে মাথায়। দৃষ্টি আয়নাতে দৃশ্যমান নিজ প্রতিচ্ছবিতে বিদ্ধ! পাতা একটু নার্ভাস!একটু এক্সাইটেড! একটু সংকিত! কি লেখা আছে তার নসিবে? কেমন হবে তার ভবিষ্যতের পথচলা? যার সাথে তার পথচলা তাকে পাশে পাবে তো? মাঝরাস্তায় হাত ছেড়ে একা ফেলে চলে যাবে না তো? এমন হলে কি করবে পাতা? কোথায় যাবে? কেমনে শ্বাস নেবে? সে উপর ওয়ালার কাছে প্রার্থনা করে,

‘ ইয়া আল্লাহ তুমি রহিম রহমান! একটু রহম রেখ সর্বদা!’ তার ভাবনার মাঝেই লতা ঘরে আসে। শাড়ির ভাঁজ খুলতে খুলতে বলে,
-” ওনারা এলো বলে! আম্মু জলদি রেডি হতে বলল! তারাতাড়ি আয়!”
পাতা এগিয়ে এসে লতাকে জড়িয়ে ধরলাম গালে চুমু খায়।
-” আপু! এখন রাগ কমাও তো! এমন লতা আপু ভালো লাগে না! আর কটা দিনই তো আছি! একটু বেশি করে ভালোবাসা দিবে তা না!”
লতার কঠোর মনটা নরম হয়। বোনটাকে একটু বেশিই ভালোবাসে। তাই তো বোনের ভবিষ্যত নিয়ে এতো সংশয়! কি হবে? ছোট থেকেই সয়েই আসছে বোনটা ভবিষ্যতে কি স্বস্তির দেখা মিলবে? ভালোবাসার কাঙালিনী সুখের রাজ্যের দেখা পাবে?
সে নরম কণ্ঠে পাতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

-” জামাই বাড়ি যাওয়ার জন্য‌ এতো তাড়া? নাকি এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার?”
পাতা মাথা তোলে। লতাকে ছেড়ে শান্ত চোখে বোনের দিকে চায়‌। মলিন হেসে বলে,
-” তোমাদের দায়িত্ব নামক বোঝা থেকে মুক্তি দেওয়ার বেশি তাড়া!”
বলে বিছানায় রাখা প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে। লতা মলিন চোখে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। হে পরম করুণাময়, ছোট্ট বোনটাকে একটু সুখের সংসার জীবন দান করো!

একটা বড় গাড়ি এসে থামলো পাতাদের বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে। গাড়ি থামার সাথে সাথে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ছোট্ট একটি বাচ্চা। পরনে হাফ প্যান্ট ও‌ টি শার্ট। তার সাথে আরেকটা বাচ্চা মেয়ে হালকা গোলাপি রঙের ফ্রক পরে। মাথায় ছোট একটি ঝুটি সেখানে রঙ বেরঙের ক্লিপের সমাহার। ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। বাচ্চা ছেলেটা মেয়েটার হাত ধরে দৌড় লাগায়। মেয়েটিও তার সাথে পা চালিয়ে এক দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। গাড়ি থেকে নেমে আসা লোকজন পেছন থেকে ডাক দেয়,

-” আরে আস্তে যাও পড়ে যাবে তো! ভোর, আনি?”
নাহ! তাঁদের কথা শোনার সময় নেই। দৌড়াতে দৌড়াতে ভোর আনিকাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” আম্মু দেখতে অনেক সুন্দর আর কিউট। একদম পাতাবাহারের মতো। বুঝলি?”
আনিকা ভেংচি কেটে বলে,
-” আচ্ছা দেখা যাবে! তুই বললি স্কুলের সবাইকে আদর করে! আমাকেও করবে?”
ভোর দৌড়ানি থামিয়ে দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-” করেই তো! তবে এখন আমার আম্মু তাই শুধু আমাকে আদর করবে! তুই কিন্তু ভুলেও আমার আদরে ভাগ বসাতে আসবি না। আর আম্মুর কোলেও উঠবি না!চল?”

বলে আবার দৌড় লাগায়। দরজা খোলা থাকায় প্রবেশ করতে অসুবিধা হয় না। তবে ভিতরে ঢুকেই নজরে আসে সোফায় বসা আতিকুর ইসলামের দিকে। আরো একটা লোক যাকে ভোর এর আগে দেখে নি। ভোর দৌড় থামিয়ে ভদ্র ছেলের মতো দাঁড়িয়ে সালাম দেয় আতিকুর ইসলামকে,
-” আসসালামুয়ালাইকুম আঙ্কেল কেমন আছো?”
ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবাই তাদের দিকে চায়। ভোর মিষ্টি হাসে। আতিকুর ইসলাম সালামের জবাব নিয়ে দাঁড়ায়। লুবমান রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে ভোরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-” এই ছোট প্যাকেট! তোর বাপও আমার আব্বুকে আঙ্কেল ডাকে আবার তুই ও ডাকছিস?”
ভোরের হাসিমাখা মুখ চুপসে যায়‌

-” তো কি ডাকবো?”
আতিকুর ইসলাম এগিয়ে এসে ভোরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-” নানু বলে ডাকবে ঠিকাছে? এই মিষ্টি মেয়েটা কে?”
ভোর মাথা নাড়ে বাধ্য ছেলের মতো। আনিকা ভোরের হাত ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। ভোর হেসে বলে,
-” ও আনি! আমার বোন হয়!”
আতিকুর ইসলামের কপালে ভাঁজ পরে। বোন? ভোর পাতার রুমের দিকে চায়। সেখানে দরজা দিয়ে পাতা উঁকি দিয়ে মাথা বের করে এদিকেই তাকিয়ে। ভোরকে ইশারায় ডাকে। ভোরের খুশি দেখে কে! সে আনিকার হাত টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,

-” আম্মু? আনি ওই যে আমার আম্মু!”
বলে তাকে টেনে পাতার ঘরে নিয়ে যায়। আতিকুর ইসলাম ও রাতুল বেরিয়ে যায় মেহমানদের এগিয়ে আনতে। লুবমান সোফায় বসে রুম্পাকে কোলে নিয়ে লাবিবের গালে টোকা দেয়। লাবিব মামার গলা জড়িয়ে ধরে। ওদিকে কিচেনের সব কাজ সেরে লাবনী আক্তার রুমে যায়। কাপড়টা পাল্টে নেওয়া যাক। এরকম বেশে মেহমানদের সামনে যাওয়া কেমন দেখায়!

পাতাকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছিল লতা। ভোরের মিষ্টি গলা শুনে বুঝতে বাকি নেই সবাই এসে গেছে।তাই শাড়ি পড়া বাকি রেখে উঁকি দিয়েছিল মনে একরাশ কৌতূহল নিয়ে। ভোর রুমে ঢুকেই পাতার কোমড় জড়িয়ে ধরে ডাকে,
-” আম্মু! আই মিসড ইউ সো মাচ! আজকে তোমাকে নিয়ে যাবো কিন্তু?”
পাতা হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। লতা পাতার শাড়ির কুচি করতে করতে জবাব দেয়,
-” বাহ্ আমাদের ভুলে গেলে?”
ভোর পাতাকে ছেড়ে মিষ্টি হেসে লতার দিকে তাকিয়ে বলে,
-” ভুলিনি তোমাকেও মনে আছে তো!”
আনিকা নিরব দর্শক। সে পাতার দিকে চায়। এটাই ভোরের আম্মু? ভোর ঠিক বলেছে! সুন্দর দেখতে। পাতা আনিকাকে ডাকে। আনিকা এগিয়ে যায়। লতা শাড়ির কুচি দিচ্ছে দেখে কোলে তুলতে পারে না। থুতনিতে হাত রেখে বলে,

-” কি কিউট বাচ্চা! একদম বারবি ডলের মতো! ইশ! তোমার নাম কি সোনা?”
প্রশংসায় আনিকার চোখ উজ্জ্বল হয়। কি সুন্দর করে কথা বলে? একদম ডিজনে কার্টুন দের মতো! আনিকা হাসিমুখে বলে,
-” আনিকা সরকার! তুমি ভোরের আম্মু?তোমার নাম কি?”
পাতা তার গাল টিপে বলে,
-” হুম! আমার নাম পাতা! গাছের পাতা না কিন্তু!”
আনিকা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। লতা পাতার কুঁচি গুঁজে দেয়। পাতা আনিকাকে কোলে তুলে নিল। কি মিষ্টি মেয়ে! দেখতে পুরাই পুতুল।
লতাও তার গাল টিপে দিয়ে বলে,

-” সত্যিই পুতুল! পাতা পরে আদর করিস! আগে শাড়ি পরিয়ে দিই।‌ আবার চুলও বাঁধতে হবে।”
দু গালে দুটো চুমু দিয়ে পাতা আনিকাকে নামিয়ে দিল। ভোর চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আম্মু আনিকাকে আদর করলো! তাকে না? আনিকাকে পেয়ে তাকে ভুলে গেল!তার সাথে কথাও বলল না। এই আনির বাচ্চাকে আনাই ভুল হয়েছে! সে গাল ফুলিয়ে নিল। আনিকা পাতার কোল থেকে নেমে ভোরের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-” তোর আম্মু খুব ভালো! আমায় কত আদর করলো দেখলি?”
ভোর কিছু বলে না। সে মলিন মুখে পাতার দিকে তাকিয়ে থাকে। লতা পাতার কুঁচি ঠিক করে আঁচল ঠিক করে দিতে দিতে বলে,

-” ভোর কে কে এসেছে? তোমার আব্বু এসেছে?”
ভোর লতার দিকে তাকিয়ে বাবার মতো গম্ভীর মুখে বলে,
-” আব্বু, দাদি, চাচ্চু, চাচিমনি, ফুপ্পিমনি,রুপ আমারা সবাই এসেছি!”
পাতা ভ্রু কুঁচকে ভোরের দিকে চায়। কণ্ঠটা চেঞ্জ হয়ে গেল না? সে আর ভাবতে পারে না‌ কেউ দরজায় কড়া নাড়ে। লতা পাতার আচল ঠিক করে দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বলে,
-” কে? ভিতরে আসুন!”

ভেজানো দরজা খুলে হাসি মুখে প্রবেশ করে আদুরি ও রুবি! আদুরি সালাম দিয়ে এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলে,
-” আরে আরে ভোর তোমার আম্মু কোনটা ? এতো দেখছি দুটো অপ্সরা দাঁড়িয়ে আছে!”
ভোর আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয়। পাতা মাথা নিচু করে। অধরকোনে লজ্জালু হাসি মেখে। লতা‌ বোনের কাঁধ জড়িয়ে বলে,
-” এই আপনাদের আমানত!”
আদুরি পাতার দিকে চায়। মিষ্টি একটা মেয়ে।
-” মাশাআল্লাহ! কি মিষ্টি দেখতে! আমি আদুরি! অরুণ ভাইয়ের ছোট ও একমাত্র বোন! আর এটা আমার আরেক ভাই আরিয়ান সরকারের একমাত্র স্ত্রী আমার ছোট ভাবি!”

পাতা মিনমিন করে সালাম দেয়। রুবি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে আসে। চেনা চেনা লাগছে! মস্তিষ্ক ঘেটে ঘেটে পরে চিনতে পারে এটা তো সেই পার্টির ঝগরুটে মেয়ে! এই মেয়েটাই অরুণ ভাইয়ের বউ? এ তো পিচ্চি মেয়ে। এখন শাড়ি পড়ায় একটু বড় বড় লাগছে।‌ সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” তুমি সেই মেয়েটা না? ওই দিন জন্মদিনের পার্টিতে আরিয়ানের সাথে ঝগড়া করছিলে?”
পাতা জিভে কামড় দেয়। ইশ! চিনে ফেলেছে! কি ভাবছে তার বিষয়ে! ইয়া আল্লাহ! জামাই বাড়ি যাওয়ার আগেই ইমেজ নষ্ট হয়ে গেল। লতা ,আদুরি বুঝতে পারে না ।‌আদুরি রুবির হাত ঝাঁকিয়ে বলে,

-‘ চেন‌ তুমি?”
রুবি মাথা ঝাঁকিয়ে কিছু বলবে পাতা মিনমিন করে বলে,
-” সেদিন আমার দোষ ছিল। আমি স্যরিও বলেছিলাম। তবুও উনি বেয়াদব স্টুপিড বলেই চলেছিল।ওনারও কিন্তু দোষ ছিল হুম!”
রুবি হেসে ওঠে। পাতা তার হাসি দেখে যেন একটু স্বস্তি পায়।‌ লতা আদুরি কিছু বুঝতে পারে না। রুবি তাদের সব খুলে বলে।

ড্রয়িং রুমে সোফায় চুপচাপ বসে আছে অরুণ সরকার।‌ কোলে ছোট্ট রুম্পা। তাকে দেখে হাত বাড়িয়ে আ আ করছিল।‌অরুণ কোলে তুলে নেয়। চারপাশে আরিয়ান বসে আছে রুপ কে কোলে নিয়ে। আসমা বেগম সিঙ্গেল সোফায় বসে। আতিকুর ইসলাম চেয়ারে বসে আরিয়ানের সাথে টুকটাক কথা বলছে। আসমা বেগম গম্ভীর মুখে বসে। সে ভেবেছিল অরুণ তাদের মতোই কোনো বড় ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেছে। কিন্তু এতো মধ্যবিত্ত!! অরুণ পাগল হয়ে গেছে নাকি। এতো বড় বিসন্যাসম্যান হয়ে এই ঘরে বিয়ে করেছে আত্মীয় স্বজন জানলে কি ভাববে! ক্লাসের একটা ব্যাপার আছে না। বিয়েতে আত্মীয় স্বজন এ বাড়িতে আসলে হাসাহাসি করবে না? বিরক্তিতে তার মাথা ধরেছে।

আতিকুর ইসলাম, রাতুল ও আরিয়ানের কথোপকথনের মাঝে রুপ মা মা বলে কেঁদে ওঠে। আরিয়ান এটা ওটা বলে চুপ করানোর চেষ্টা করে পারে না। অরুণ রুম্পাকে কোলে বসিয়ে বলে,
-” রুবির কাছে যাবে। দিয়ে আয়!”
রাতুল সায় জানালো।
-” ওর মা বোধহয় পাতার ঘরে! ওই যে কর্ণারে! লুব নিয়ে যাও?”
-” আমিই যাচ্ছি!”
বলে উঠে দাঁড়ায়। ছেলেকে কোলে নিয়ে কর্নারের রুমে গিয়ে নক করে। আদুরি দরজা খুলে হাসিমুখে বলে,
-” ছোট ভাইয়া! রুপ কাঁদছে কেন?”
-” কি জানি! রুবির কাছে দে তো!”

রুবি এগিয়ে এসে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
-” তোমার ভাবিকে দেখবে না? ভেতরে আসো?”
আরিয়ান হেসে পাতার উদ্দেশ্যে বলে,
-” বড় ভাবিজান? আসলাম কিন্তু?”
বলেই ভিচরে ঢোকে। প্রথমে নজরে আসে লতা। আরিয়ান ভাবে এই ভাবি হবে হয়তোবা! সে হেসে কিছু বলবে তার আগে পাশে দাড়ানো মাথায় ঘোমটা টানা পাতার দিকে নজর যায়। তার ভ্রু যুগল কুঁচকে যায়। এই মেয়েটা ঘোমটা দিয়ে আছে এ পাতা নয়তো! রুবি আরিয়ানের দ্বিধা ভেঙ্গে দেয়। পাতাকে দেখিয়ে বলে,
-” এই হলো তোমার বড় ভাবি!”

আদুরি ঘোমটা টা একটু তুলে দেয়। এতে পাতার সম্পূর্ণ মুখশ্রী দৃশ্যমান হয়। আরিয়ানের চোখ কপালে! এতো সেই ঝগরুটে বেয়াদব মেয়েটা! কলেজের গন্ডি পারই করেনি হয়তোবা বলে কি না শিক্ষিকা! এই মেয়েটা ভাইয়ের বউ? সম্পর্কে তার ভাবি? ভাই তাহলে বাল্যবিবাহ করলো? হাঁটুর বয়সী মেয়েকে গলায় ঝুলিয়ে বসে আছে। সে কটমট‌ চোখে পাতার দিকে চায়। পাতা আরিয়ানের দিকে চায় সরাসরি। আরিয়ানের মুখের আদল দেখে তার ‌হাসি পাচ্ছে। সে গালে জিভ ঠেকিয়ে হাসি আটকায়। নজর ঝুঁকিয়ে সালাম দেয়,
-” আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া!”

আরিয়ান একবার রুবির দিকে তাকিয়ে হন হন করে বেরিয়ে যায়। সে বেরিয়ে যেতেই ঘরে হাসির রোল পরে। রুবি সেদিনের ঘটনা সবাইকে জানিয়েছে একটু আগেই। পাতাও হেসে উঠলো। লতা বোনকে চোখ পাকায়। পাতা অনেক কষ্টে হাসি থামায়। ভোর এদের হাসাহাসিতে বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আদুরি ডাকে শোনে না।
আরিয়ান রাগে গজগজ করতে করতে ভাইয়ের পাশে বসে। ভাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীমে বলে,

-” এটা তুই ঠিক করিস নি! দুনিয়াতে মেয়েদের অভাব ছিল নাকি! কলেজ পড়ুয়া পিচ্চি মেয়ে।তোর হাটুর বয়সী হবে ওই আম পাতা জোড়া জোড়া!”
অরুণের কপালে ভাঁজ পড়ে। পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি। সে গম্ভীর মুখে কণ্ঠ খাদে এনে বলে,
-” মাথা গেছে? পাতা ভোরের স্কুলের টিচার! গ্র্যাজুয়েটেড!”
আরিয়ান খানিকটা অবাক হয়। মেয়েটাকে দেখে তো মনে হয় না। প্রথম দেখায় যে কেউ ভাববে কমবয়সী মেয়ে। তবে‌ সে যাই হোক আসল কথা হলো মেয়েটাকে তার ভাবি হিসেবে একদম পছন্দ হয় নি। সে অরুণকে বলে,
-” বিয়ে ক্যান্সেল! মেয়ে আমার পছন্দ হয় নি!”
অরুণ চোখ ছোট ছোট করে চায়।

-‘ বিয়েটা ওলরেডি হয়ে গেছে। আমরা শুধু ফর্মালিটিজের জন্য এসেছি‌। আর‌ বিয়েটা তুই করছিস না!”
আরিয়ান বিরক্তিকর চাহনিতে ভাইয়ের দিকে চায়। রাতুল দুই ভাইয়ের সিরিয়াস মুখে গুসুর ফুসুর লক্ষ্য করছিল। কোনো প্রবলেম হয়েছে কি? সে ভদ্র কণ্ঠে বলে,
-” কোনো সমস্যা?”

অরুণ মাথা নাড়ে। তন্মধ্যে লাবনী আক্তার ও লুবমান ট্রে হাতে ড্রয়িংরুমে আসে। ট্রেতে ফলফলাদি, মিষ্টি ,শরবত, চা বিস্কুটের সমাহার। টি টেবিলে রেখে হাসিমুখে আসমা বেগমকে বলে,
-” আসসালামুয়ালাইকুম আপা! ভালো আছেন? আমি পাতার আম্মু!”
আসমা বেগম গম্ভীর মুখে সালামের জবাব দিয়ে বলে,
-” আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”
লাবনী আক্তার খুশি হয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে অরুণকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” ভালো আছো?”
-” হুম”
ছোট্ট জবাব। প্রতিত্তরে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে না। আরিয়ান কনুই দিয়ে ভাইকে গুতা দেয়। এই ভাই সুধরানোর নয়। তারপর লাবনী আক্তারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
-” আমি আরিয়ান! ভালো আছেন আন্টি? আপনাকে দেখে কিন্তু আন্টি আন্টি মনে হয় না একদম! আমি সত্যিই বলছি!”
লতা খানিকটা লজ্জা পায়। প্রসঙ্গ পাল্টাতে ট্রের দিকে ইশারা করে বলে,

-” নাও!”
আসমা বেগম একটা আপেলের টুকরো হাতে নিয়ে বললেন,
-” নিচ্ছি। আপনি পাতাকে নিয়ে আসুন!”
লাবনী হেসে মাথা নাড়ায়। ভোর গুটি গুটি পায়ে ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ায়। বাবার কোলে ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে দ্রুততম পায়ে এগিয়ে যায়। তার বাবার কোলে কেন বসবে? অরুণের পায়ের উপর ভর দিয়ে ডাকে,
-” আব্বু?”
অরুণ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” কি হয়েছে?”
ভোর গলা জড়িয়ে ধরে। রাতুল এসে মেয়েকে অরুণের হাত থেকে নিল। অরুণ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-” কি হয়েছে আব্বু?”
ভোর অরুণের কাঁধ মুখ লুকিয়ে বলে,
-” কিছু না!”

অরুণের কপালে ভাঁজ পড়ে। হাসিখুশিই তো ছিল। এখন গাল ফুলিয়ে! আতিকুর ইসলাম ভোরকে ডাকে,
-” এদিকে এসো? কি হয়েছে? মন খারাপ কেন?”
ভোর মাথা তোলে। বাবার কোল থেকে নেমে আতিকুর ইসলামের কোলে বসে। আতিকুর খানিকটা অবাক হয়। সে তো কাছে ডেকেছিল, আর এ‌ ছেলে কোলে উঠে বসলো।‌
লুবমান লাবিবের পাশে দাঁড়িয়ে । ভাগ্নের কাঁধ চাপড়ে বলে,
-” তোর আদরের নানা নানির আদরে ভাগ বসানোর লোক এসে গেছে মামু!”
লাবিব তীক্ষ্ণ নজর ফেলে ভোরের দিকে। পঁচা ছেলে?
আতিকুর ইসলাম ট্রে থেকে কুকিজ তুলে ভোরের হাতে দেয়। ভোর হাসিমুখে সেটা নিয়ে মুখে পুরে মিষ্টি করে বলে,
-” থ্যাংক ইয়ু নানু!”

কঠোর আতিকুর ইসলামের অধরেও হাসি ফুটে ওঠে ভোরের মিষ্টি কথায়। বাচ্চটা এতো আদুরে!
তন্মধ্যে আনিকা দৌড়ে আরিয়ানের কোলে বসে। রুবি, আদুরি,লাবনী আক্তার ও লতা পাতাকে নিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে। সবার নজর পাতার উপর পরে। অরুণ ও চায়। জলপাই রঙের শাড়িতে বেশ লাগছে। মুখশ্রীতে হালকা প্রসাধনীর ছোঁয়াটাও মন্দ নয়। কপাল পর্যন্ত ঘোমটা টানায় পুরো বউ বউ লাগছে। আরিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চায় পাতার দিকে। পাতার নজর অরুণের দিকে না পড়ে আরিয়ানের উপর পড়ে। কেমন করে তাকিয়ে আছে। যেন সে মুজলিম! পাতা ভারি মজা পায়! তবে সে চোখ ফিরিয়ে নেয়। রাতুল মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে ডাবল সোফা থেকে উঠে পড়ে। আদুরি, রুবি পাতাকে নিয়ে সেখানে বসে। পাতা আড়চোখে সামনে চায়। গম্ভীর মুখো অরুণ সরকারের দিকে দৃষ্টি পড়তেই ফিরিয়ে নেয়। আসমা বেগম পাতাকে পর্যবেক্ষণ করে। নাহ! মেয়েটি দেখতে বেশ। তাই হয়তোবা অরুণ পিছলে পড়েছে। সে পাতাকে জিজ্ঞেস করে,

-” নাম কি তোমার?”
পাতা মিনমিনে গলায় জবাব দেয়,
-” মোছা:পাতা ইসলাম!”
আরো কিছু টুকটাক প্রশ্ন করে আসমা বেগম। পাতা নম্র কণ্ঠে জবাব দেয়। আসমা বেগমের বিরক্তির রেশ খানিকটা কেটে যায়। আরিয়ান চুপচাপ দাঁতে দাঁত চেপে বসে। ভোর এখনো আতিকুর ইসলামের কোল দখল করে বসে। লাবিব তার নানার পাশে দাঁড়িয়ে। লুবমান ভাগ্নিকে কোলে নিয়ে। লতা লাবনী আক্তার ডায়নিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে।
অরুণ গম্ভীর মুখে বসে আছে। পাতা আড়চোখে বেশ কয়েকবার তাকিয়েছে অরুণের দিকে কিন্তু নাক উঁচু ম্যানারলেস লোকটা একবারও চায় নি! পাতার প্রফুল্লচন্দ্র মনটা একটু মলিন হয়ে আসে। ভাবে সে একটু বেশিই এক্সপেক্ট করে বসে থাকে। তাদের মধ্যে তো তেমন ভাব নেই যে তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে থাকবে!
আসমা বেগম আতিকুর ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলে,

-” বিয়েটা তো হয়েই গেছে। এখন শুধু ফরমালিটি মেইনটেইন করতে হবে। আমরা পাতাকে রিং, বালা পড়িয়ে দিন ক্ষণ ঠিক করতে এসেছি! আপনারা কি বলেন?”
আতিকুর ইসলাম ভদ্রসুলভ হেসে বলে,
-” আমরা কি বলবো? আপনারা যা ভালো বোঝেন!”
বলে রাতুলকে কিছু ইশারা করে। রাতুল চলে যায় ঘরে।‌ লাবনী, লতা এসে দাঁড়ালো। আসমা বেগম আরিয়ানকে উঠতে বসে আদুরিকে বলে,
-” ওকে এখানে বসিয়ে দাও!”
আদুরি সায় জানিয়ে হাসিমুখে পাতাকে নিয়ে অরুণের পাশে বসিয়ে দেয়। অরুণ প্রতিক্রিয়া হীন বসে থাকে। পাতা মাথা নিচু করে অরুণের পাশে বসে। ভোর আতিকুর ইসলামের কোল থেকে নেমে এসে বাবার কোলে বসে। লাবিব সুযোগ বুঝে নানার কোলে বসে। আর উঠবে না! তার নানার আদর শুধু তার।
আরিয়ান ভোরকে অরুনের কোল থেকে নিতে চাইলে অরুণ ছেলেকে জড়িয়ে বলে,

-” আমার কাছে থাক!”
আরিয়ান আর কিছু বলে না। আসমা বেগম ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে চারটা গয়নার বাক্স বের করে।একটা বক্স থেকে একজোড়া বালা বের করে অরুণের হাতে দেয়। বালা জোড়া দেখে অরুণের চিনতে অসুবিধা হয় না। এগুলো তার মায়ের বালা! ছোট বেলায় দেখেছিল মায়ের হাতে। সে বালা জোড়া হাতের মুঠোয় ধরে রাখে। মায়ের স্মৃতি, মায়ের ছোঁয়া লেগে আছে। আসমা বেগম অরুণকে বলে,
-” পরিয়ে দাও!”
অরুণ পাশে তাকায়। পাতার অশান্ত নিচু মুখশ্রী, হাত মোচড়ানো দেখে ভোরের হাতে বালা জোড়া দিয়ে বলে,
-” আব্বু? পড়িয়ে দাও!”

পাতা নজর তোলে। অশান্ত নজর শান্ত হয়। হাত মোচরা মুচরি থেমে যায়। মন কুঠিরে সদ্য জন্ম নেওয়া স্বপ্ন খানি কাঁচের চুড়ির মতো ভেঙ্গে পড়ে। নিজের হাতে কি পড়িয়ে দিতে পারতো না বালা জোড়া!
ভোর খুশি হয়ে বালা জোড়া পাতাকে পড়িয়ে দিতে নিলে আসমা বেগম থামিয়ে দেয়। ভোরকে বলে,
-” ভোর তুমি আমার কাছে আসো? আর অরুণ তুমি পড়িয়ে দাও!”
ভোরের মনটা খারাপ হয়। বালা জোড়া অরুণের হাতে দিয়ে উঠে যেতে নিলে অরুণ আটকায়। কিছু বলবে এর আগে পাতা ছোট করে বলে,
-” ভোর তুমিই পড়িয়ে দাও!”

ভোর দাদির দিকে চায়। আসমা বেগম কিছু বলে না। সে পাতার দিকে চায়। পাতার হাসিমুখে থাকা মলিন চেহারার কথা সে জানে। নিজেও এমন পরিস্থিতি পার করে এসেছে কি না! তাই পাতার মলিনতা তার চোখ এড়ায় নি।
অরুণ বালা জোড়া পুনরায় ভোরের হাতে দেয়। ভোর তার ছোট্ট হস্ত দ্বারা পাতার হাতে বালা জোড়া পড়িয়ে দেয়। পাতা ভোরের হাত মুঠোয় পুরে চুমু দেয়। ভোর খুশি হয়ে অরুণের কোল থেকে নেমে পাতার কোল জুড়ে বসে। পাতা হাসিমুখে তাকে জড়িয়ে নেয়। এরমধ্যে রাতুল আসে। আতিকুর ইসলামের হাতে কিছু দেয়। আতিকুর ইসলাম সেটা পাতার হাতে দিয়ে আসমা বেগম ও অরুণকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-” আমরা মধ্যবিত্ত। আপনাদের মতো দামি উপহার দেওয়ার সাধ্য নেই হয়তো! তবে এই ছোট্ট রিংটা! পড়লে খুব খুশি হবো?”
আসমা বেগম কিছু বলবে এর আগে অরুণ ছোট্ট করে বলে,
-” আমি রিং পড়ি না! আর তাছাড়াও..”
আর কিছু বলতে পারে না। পাতার কান্ডে অবাক হয়ে হাতের অনামিকা আঙ্গুলের দিকে চায়। উপস্থিত সবার চোখে মুখে অবাকতার রেশ। পাতা নির্বিকার। বললেই হলো রিং পড়ি না।‌ পড়তে হবে! নাক উঁচু লোক!
আসমা বেগমের ঠোঁটে মৃদু হাসির রেশ। না বাঘকে সামলাতে বাঘিনীই দরকার। সে অরুণের হাতে পাতার জন্য আনা রিং টা দেয়। আদেশের সুরে বলে,
-” নিজে পড়িয়ে দিবে!”

পাতা বাহার পর্ব ২৪(২)

অরুণ প্রতিত্তর করে না। পাতার নরম হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে রিং পড়িয়ে দেয়। সবাই হাসিমুখে অভিনন্দন জানায় অরুণ পাতাকে। আসমা বেগম বাকি কানের ঝুমকো ও নাকের নথ পাতার মায়ের কাছে দেয় পড়িয়ে দিতে। পাতার নাক ফুটো নেই সেটা ভেবেই অরুণ একটা নথ বানিয়ে এনেছে। অনেকটা মারাঠির মেয়েরা পড়ে না? সেরকম। লাবনী আক্তার মেয়েকে যত্নের সাথে পড়িয়ে দেয়। সবার নজর পাতার দিকে। সোনার অলংকার এমনিতেই মেয়েদের সৌন্দর্য যেন ফুটিয়ে তোলে। পাতার ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে। বিশেষ করে নাকের নথ! পাতার ফর্সা মুখশ্রীতে যেন ফুটে উঠেছে। আদুরি তো ক্যামেরা ম্যান বনে গেছে। ভাই ভাবিকে একসাথে বসিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে নিয়েছে। অরুণ পাতা চুপচাপ বসে আছে।

পাতা বাহার পর্ব ২৫(২)