পাতা বাহার পর্ব ৩১(২)

পাতা বাহার পর্ব ৩১(২)
বেলা শেখ 

অপর্ণা ঘোষ! মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা, মা ও বড় দাদা মিলেই তাদের ছোট্ট সংসার ছিল! হাসিখুশি দিন কেটে যাচ্ছিল তাদের! কিন্তু তাদের হাসিখুশি জীবনে অন্ধকার নেমে আসে হঠাৎ। অপর্ণার বাবা ট্যাক্সি ড্রাইভার ছিলেন! বেশ রাত অবধি গাড়ি চালাতেন বেশি টাকা রোজগারের আশায়। মধ্যবিত্তের সংসারের খরচ! দুই ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ! মাস শেষে টানাটানি বেঁধে যেতো! রাতের বেলায় ভারা বেশি পাওয়া যায় তাই এই পন্থা অবলম্বন। হঠাৎ এক রাতে তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। সব টাকা পয়সা নিয়ে গাড়ির চাবি নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ভদ্রলোক চাবি দিতে নারাজ।

এ যে তার সংসারের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন! হাতাহাতির এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সে নিহত হয়।তারপর আর কি? মধ্যবিত্ত সংসারে নেমে আসে বিপর্যয়! যে মারা গেছে ,সে তো গেছেই!যে শোকাহত পরিবার রেখে গেল তাদের কি হলো? অপর্ণার মা স্বামীর শোকে দুমাসও টিকে থাকতে পারলেন না। চলে গেলেন স্বামীর কাছে। বাকি রইল দুই ভাইবোন! অপর্ণা তখন এস. এস. সি. দিবে আর ভাই অদূত ঘোষ সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বেকার! চলতে থাকে দু ভাই বোনের জীবন। অদূতের একটা বেসরকারি ফার্মের চাকরি হয়। দুই ভাইবোন খুব খুশি! ভাই বোন একে অপরের উপর জান হারাতো! কেউ কারো টু পরিমাণ কষ্ট সহ্য করতে পারতো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিকটাত্মীয়রা অদূতের বিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যুবা ছেলে বিয়ে করাতে হবে না? ঘরে লক্ষীর আগমন ঘটে। । অপর্ণা উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়!শুরুতে দাদা, বৌদি ও অর্পণা মিলে সুখের সাগরে ভাসলেও ধীরে ধীরে সব কেমন যেন পাল্টে যেতে থাকে। বৌদির আচরণ পাল্টে যেতে শুরু করে। অপর্ণার সাথে কেমন যেন দূরছাই আচরণ করে। তার দাদা প্রথম প্রথম প্রতিবাদ করলেও ধীরে ধীরে সেটাও বাদ দিয়ে দেয়। সম্পর্কের ফাটল ধরে। অপর্ণার বিদায়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। দ্বিতীয় বর্ষেই সে অন্নপূর্ণা রূপে অন্যের ঘর আলোকিত করতে পদার্পণ করে । ভালোই চলে সংসার জীবন। শশুর শাশুড়ি ননদ বর মিলে। পড়াশোনাও চালিয়ে যায়। পড়াশোনা শেষ হয়ে চাকরির খোঁজ করতে থাকে অপর্ণা।

শাশুড়ি এটার ঘোর বিরোধীতা করে! পড়াশোনা করছিল ঠিক আছে! কিন্তু চাকরি? ঘরের অন্নপূর্ণা ঘর ছেড়ে যাবে চাকরি করতে? তিনি মানলেন না। ছেলে পুলে জন্ম দিয়ে মানুষ করো! অপর্ণা মেনে নেয়। কনসিভ করেনা। অপেক্ষা করে ফলাফল শূন্য! শাশুড়ির বিষ বাক্য, প্রতিবেশীর কটুক্তি! শাশুড়ি দ্বিতীয় বার বিয়ে করাতে চান ছেলেকে। অভাগীর ভাগ্যটা প্রসন্ন ছিল বোধ হয়। ওর স্বামী সন্দীপ ঘোষ ভদ্রলোক! স্ত্রীকে ভালোবাসে ঢের। মানা করে দেয় মা কে! এতে তার বাবা মা ক্ষুন্ন হয়ে ত্যাগ করে ছেলে, ছেলে বউকে। সন্দ্বীপ বউকে নিয়ে আলাদা বাসায় গিয়ে ওঠে। গড়ে ওঠে টোনা টুনির সংসার। একা বাড়িতে ভালো না লাগায় অপর্ণাও চাকরির খোঁজ করে। ভাগ্যক্রমে মিলেও যায়। আজ সে সরকার জুয়েলারি ফ্যাশন হাউসের একজন কর্মী!

কিন্তু তার কোলটা এখনো শূন্য! ছোট বাচ্চা দেখলে বুকটা হাহাকারে ভরে ওঠে। তবুও সকল‌ বেদনাকে পিছনে ফেলে সর্বদা হাসিখুশি চঞ্চল আমাদের অপর্ণা। অফিসে সকলের সাথে তার সুসম্পর্ক। অপর্ণা ব্যাগ কাঁধে অফিসে ঢোকে। সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের কাজ শুরু করে দেয়।‌ অনেক দিন ছুটির পর আজ প্রথম দিন হওয়ায় কাজে অলসতা আসে। ঘুম আসতে চায়। সে ডেস্কটপে মাথা রেখে চোখ বুজে নেয়। আজ বস এখনো আসে নি। তার মানে কাজে চাপ নেই। একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক! কিন্তু তার আরামের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে আগমন ঘটে লাবিবের। এক গাদা গয়নার ডিজাইন এনে ডেস্কটপে রাখে!
-” মিসেস অপর্ণা ঘোষ! রাতভর ডাকতি করতে যান নাকি? যে দিনের বেলায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন! বস বা বসের ম্যানেজার দেখলে বোনাস সরূপ নট আউট করে দেবে!”
অপর্ণা হাই তুলে হাসি মুখে বলে,

-” বস নেই তো দেখবে কিভাবে? আর ম্যানেজার সে তো নিজেই অলসের ঢেঁকি!”
বলতে বলতেই ম্যানেজারের আগমন ঘটে। লাবিব ঠোঁট চেপে হাসে। অপর্ণা জিভে কামড় দিয়ে নমস্কার জানিয়ে বলে,
-” ভালো আছেন স্যার? আপনার কথাই বলছিলাম! বস আসে নি?”
ম্যানেজার সুজন বসের মতো গম্ভীর মুখে বলে,
-” মাত্রই এলো! আর আপনাকে তলব করলো! যান গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসুন! ফাস্ট!”
বলেই গটগট করে চলে যায়। অপর্ণা কাঁদো কাঁদো গলায় লাবিবের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” ক্রাশ ডেকেছে! কিছুদিন আগে হলে দৌড়ে যেতাম! এখন ক্রাশ বিবাহিত কষ্টে বুকটা আমার ফেটে যাচ্ছে।”
লাবিব ছোট ছোট করে চায়।
-” ম্যাডাম আপনি নিজেও বিবাহিত! অন্য বেডার দিকে নজর না দিয়ে আপনার পতি পরমেশ্বরের উপর কিছুটা সদয় হন!”

অপর্ণা খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বসের কেবিনের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। লাবিব হেসে নিজের ডেস্কে বসে। অপর্ণা মেয়েটা চঞ্চলতায় ঘেরা এক হরিণী!
অপর্ণা দুরু দুরু বুকে কেবিনে নক করে। ভিতর থেকে পারমিশন এলেই প্রবেশ করে কেবিনে। অরুণ সরকার ল্যাপটপে মুখ গুঁজে। কোনো কনফারেন্সে কথা বলছে হয়তো। তার উপস্থিতিতেও কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। অগত্যা অপর্ণা দাঁড়িয়েই রইল। অরুণ মিনিটের মধ্যেই কনফারেন্স শেষ করে ল্যাপটপের সাটার অফ করে অপর্ণার দিকে চায়।

-” সিট মিসেস অপর্ণা ঘোষ!”
অপর্ণা বসে।
-” ডেকেছিলেন বস?”
অরুণ চেয়ারে গা এলিয়ে চশমা খুলে টেবিলে রাখে।
-” জি! একচুয়ালি এক নতুন ক্লায়েন্ট কিছুদিন হলো যোগাযোগ করছিল! বিয়ের বিভিন্ন অকেশনের জন্য গয়না চাই তাদের। বেশ ধর্ণাঢ্য পরিবারের কনে ও বর উভয় পক্ষই। হিন্দু সম্প্রদায়ের। অনেক চ্যুজি তারা। আধুনিক গর্জিয়াস ডিজাইন চাই তাদের। একদম নিপুণ কারিগরের। অনেকটা পশ্চিমাঞ্চলের মতো! আমি চাইছি এই ডিজাইন গুলো আপনি কালেক্ট করুণ! ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে। তারাহুড়ো নেই! শুধু ডিজাইন গুলো যেন ইউনিক হয় আর নজর কাড়ে! সো কাজে লেগে পড়ুন!”

অপর্ণা সম্মতি জানালো। আরো কিছু ইনফরমেশন নিয়ে আলোচনা হয় দুজনের মাঝে। আলোচনা শেষে অপর্ণা উঠতে নিলে অরুণ থামায়! মাঝারি সাইজের টিফিন বক্স এগিয়ে দেয় অপর্ণার দিকে। অপর্ণা প্রশ্নাত্মক চাহনিতে অরুণ সরকারের দিকে চায়। অরুণ স্বাভাবিক গম্ভীর গলায় বলে,
-” দু দিন আগে ছেলের পরনা আপুর বার্থডে ছিল। তো সেদিন সে অনেকবার কল করেছিল! পায় নি তার পরনা আপুকে! মন খারাপ করে বসেছিল!”
অপর্ণা অবাক চোখে চায়!

-” বস? ছোট বসের আমার বার্থডে মনে ছিল? হে ভগবান! স্যরি স্যরি বস! বার্থডে তো সেরকম ভাবে উৎযাপন করা হয় না। সন্দ্বীপের সাথে সারাটা দিন ঘুরে বেড়িয়েছি! ফোনটা বন্ধ রেখেছিলাম! আই এম সো স্যরি!”
অপর্ণা খুবই অনুতাপ বোধ করে। সাথে একটু ভালোও লাগে। বাচ্চা ছেলেটা তার বার্থডে মনে রেখেছে,ভাবা যায়!
অরুণ অপর্ণার উদ্বিগ্নতা দেখে বলল,
-” ইটস ওকে। ডোন্ট নিড টু স্যে স্যরি! আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড! এখন এই বক্সটা নিন আর কাজে লেগে পড়ুন!”
অপর্ণা ইতস্তত ভঙ্গিতে টিফিন বক্সটা হাতে নিলো। তারপর নমস্কার বলে বেরিয়ে নিজের ডেস্কে যায়! বক্সটা রেখে এক আকাশ সমান কৌতূহল নিয়ে চেয়ে রয়। বক্সটা খুলে উপরের অংশে একটা চিরকুট ও একজোড়া এয়ারিং! অপর্ণা তাজ্জব বনে যায় এয়ারিং হাতে নিয়ে! এতো স্বর্ণের ঝুমকো! সে চিরকুটটা হাতে নেয়! তাতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে লেখা,

~হ্যাপি বার্থডে পরনা আপু!
আরেকটা চিরকুট! অপর্ণা ভাঁজ খুলে পড়ে,
ছেলের পরনা আপু,
ছেলের আপু হলে সম্পর্কে তো আমার মেয়ে হও তাই তুমি বললাম! জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা! সুখি হও! দীর্ঘজীবী হও! স্বামী সোহাগী হও! আশির্বাদ করি সকল শূন্যতা পূর্ণতায় ভরে উঠুক! অপর বাটিতে পায়েস আছে আমি নিজে রেঁধেছি তোমার জন্য। আর গিফট আমার ছেলের তরফ থেকে! ফেরত এলে চাকরি থেকে নট আউট করে দিব!
~বস
অপর্ণার চোখে অশ্রু ভিড় করে। স্বামী সন্দীপ ছাড়া জন্মদিনে কেউ শুভেচ্ছা জানায় নি! তার আপন দাদাও না। অথচ বস আর ছোট বস তার মনটাই ভালো করে দিলো!!! তার খানিকটা হাসিও পাচ্ছে এই ভেবে যে যাকে ক্রাশ বলে ডাকে সে মেয়ে বলে ডাকলো!

দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়েছে মাত্র। সূর্যমামার ঝলমলে আলোয় প্রকৃতি যেন উজ্জ্বল নক্ষত্র পিন্ডে পরিণত হয়েছে। চারদিকে আলোর তীব্রতা এতো যে চোখ রাখা দায়! এলোমেলো ঝড়োয়া বাতাস বয়ে উজ্জীবিত আলো থেকে রক্ষা করছে প্রকৃতি। ভোর ব্যাট হাতে ক্রিজে স্ট্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে। হাফ প্যান্ট হাতকাটা গেঞ্জি ও‌ মাথায় ক্যাপ। বল হাতে আভারি। পাতা ও মিনু ব্রেঞ্চে বসে হাত তালি দিচ্ছে। ভোর বল জোরে মেরে শূন্যে তুলেই চিল্লিয়ে ওঠে।
-” খালা ছক্কা! আম্মু ফোর! দেখেছো আমি কতো ভালো খেলতে পারি! সাকিবের থেকেও ভালো!”
মিনু পাতা হেসে আরো উৎসাহিত করে। আভারি বল খুঁজে এনে আবার বল করতে থাকে। আসমা বেগম, সুরুভি বেগম, রুপ আনিকে নিয়ে শপিং করতে গেছে।
-” মিনু আপা ভোরকে খুব ভালোবাসেন তাই না?”
মিনু পাতার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

-” গরিব ঘরের মেয়ে আমি! ষোলো বছর পড়তেই বিইয়ে দেয় ওই লোকটার সাথে। লোকটার মা ছাড়া কেউ ছিলনা! আবাদের কাজ করতো অন্যের জমিতে। দিনকাল ভালোই চলতো। আমার শাশুড়ি মারা যাওয়ার পরে গ্রামের জায়গা জমি বেঁইচে শহরে চইলে আসি। শহরে আইসে একটা রিকশা কিনলো গচ্ছিত টাকা পয়সা দিইয়ে। বস্তিতে একটা ছোট্ট ঘর ভারা নিইয়ে দুজন থাকতাম। আল্লাহর রহমতে ভালোই চইলছিল। একদিন লোকটা আইসে বলল আর এইখানে থাইকবে না। রিক্সাও বেঁইচে দিছে। আমি জিগাইলেও কিছু বইলতো না। পরদিন নিয়ে আইসে এই বাড়িতে। তারপর থেকে দুইজন এইখানেই থাকি; তিনজন হইতে পারি নাই। চৌত্রিশ বছর চলতেছে আমার ওই লোকটার কত হবে? পঞ্চাশের কাছাকাছি! পঁচ্চল্লিশের মার নাই! আঠারো বছরের সংসার! লোকটারে আইজো আব্বা ডাক শোনাইতে পারি নাই! লোকটা কখনো ট্যু শব্দ করে নাই এই নিয়ে! এতটা ভাগ্যবতী হইয়েও অভাগী আমি!”
বলেই আঁচলে চোখ মুছে। স্মরণে আসে অতীতের আনন্দ মূহুর্তগুলো। চোখে পানি আসলেও অধরে খেলা করে মোহনীয় হাসি। সেই হাসির অনন্ত মায়াতেই বোধহয় আভারি ডুবে গেছে। পাতা মিনুর বাহু জড়িয়ে আশ্বস্ত করে। মিনু হেসে বলে,

-” আমরা যখন আসি অরুণ স্যার এখানে থাকতো না। মেসে থাকতো বোধহয়। গাম্ভীর্যে ভরপুর তাগড়া যুবা আছিল! গোমড়া মুখেই থাকতো সবসময়। কথা বললো নাকি ধমক দিইতো বোঝা যাইতো না। সপ্তাহে একদিন তরি আইসতো! আমি তো দেখলেই লুকাই পড়তাম! অহংকারী বদমেজাজি লোক! পড়ালেখা শেষ কইরে বাড়িতে আবার স্থায়ী হয়! কখনো কারো সাথে কথা বইলতো না জরুরী ছাড়া। আরিয়ান স্যারের সাথে দাঙ্গা লেগেই থাকতো! বড় স্যারের পরলোকগমনের পর দুই জনে একটু স্বাভাবিক হয়! অরুণ স্যার বিইয়ে করে বর্ষা ম্যাডামরে!”
বলেই পাতার দিকে চায়! স্যারের প্রথম বউয়ের কথা বলা ঠিক হইবে না বোধহয়। পাতা মনোযোগ দিয়ে সব গ্রাহ্য করছিল। অরুণের নাম ওঠাতে মনোযোগ বেড়ে গেলেও তার প্রাক্তন স্ত্রীর কথা উঠলে কানটা একেবারে খরগোশের মতো খাঁড়া হয়ে যায়। আগ্রহ মন আঁকুপাঁকু করে শোনার জন্য।
-” থামলেন কেন মিনু আপা? বলুন না? হ্যাজিটেশনের প্রয়োজন নেই আপনি বলতে পারেন! অতীত না জানলে ভবিষ্যত গড়বো কিভাবে?
মিনু মুচকি হেসে বলতে শুরু করে,

-” স্যার আগে জেদি বদমেজাজি গোমড়া মুখো থাকলেও বিয়ের পর কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে। বর্ষা ম্যাডামের সাথে হাসিখুশিই থাকতো। আপনে মন খারাপ কইরেন না! ওনাদের মাঝে কখনো ঝগড়া হইতো না। খুব মিল ছিল। জোড়া চড়ুইয়ের সংসারে। তারপর ভোর বাবা আইসে। এই এইটুকু পিচ্চি বাচ্চা! শুধু কাঁদতো! কোলে নিয়ে কথা বললে চুপটি করে হা মুখে গল্প শুনতো। অরুণ স্যার অফিসে যাইতো না ঠিকমতো। সারাক্ষণ ছেলে নিইয়েই পইড়ে থাকতো। বগলদাবা করে গল্প করতো আর ঘুরতো। তবে বর্ষা ম্যাডাম কেমন জানি বাচ্চার প্রতি উদাসীন থাকতো। তেমন যত্ন নিতো না। স্যার বাড়ি না থাকলে আরো করতো না। বড় ম্যাডাম টুকটাক যত্ন করতো প্রথম প্রথম। রুবি ম্যাডামের কোলে আনিকা মামুনি আইলে তার পিছনেই পইড়ে থাকতো। বর্ষা ম্যাডাম অফিসে যাইতে শুরু করলে ভোর বাবা আমার কাছেই থাইকতো সারাদিন। আমি খুশি হইতাম বেশ। শূণ্য কোলটা ক্ষণিকের পূর্ণতা পেয়ে যেন আনন্দে নাইচতে শুরু করতো। ভোর বাবার দুই বছরের মাথায় হঠাৎ কইরে বর্ষা ম্যাডাম ডিভোর্স চায়। আমরা সকলে তো অবাক! এটাতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার! আরে এতো ভালোবাসা এতো খুনসুটির সংসার ভাইঙ্গে যাইবে? অরুণ স্যার মাইনবে? কিন্তু অরুণ স্যার বিনা বাক্যব্যয়ে ডিভোর্স দেয়। ভোর বাবার কথা বর্ষা ম্যাডাম আর বলে নাই! মুক্ত হইতেই বিদেশে পাড়ি জমান ক্যারিয়ার গইড়তে! আরে এতো ভালো চাকরি করতি তবুও মন ভইরতো না? সেটা ছাইড়ে আপন সন্তান, এতো ভালো স্বামী ছাইড়ে ক্যারিয়ার সুউচ্চ পাহাড় বানান লাইগবে? ওই মহিলার কথা না বলি!”

পাতা হা করে গিলছে সব কথা। সে টুকটাক জানতো। তবে বিস্তারিত জানতে পেরে আরো আগ্রহ জমা হলো। নাক উঁচু ম্যানারলেস লোকটা আগে থেকেই এমন ছিল? মিনুর থেমে যাওয়া পাতার ভালো লাগলো না।
-” মিনু আপা থামলেন কেনো বলুন না?”
মিনু আড়চোখে পাতার দিকে চায়। ম্যাডামের আগ্রহ আসমান সমান।

-” আর কি বইলবো? বাপ ব্যাটার সংসার। ভোর বাবা তখনও‌ মায়ের বুকের দুধ ছাইড়ে নাই! সারাক্ষণ মা মা বলে গলা ছাইড়ে কাঁদতো। কারো কাছেই যাইতো না। ‘মা যাবু মা যাবু’ বলে চিৎকার কইরতো, খাইতো না। অরুণ স্যারও কোলে নিয়ে শান্ত করতে পারতো না, ছেলের লগে সেও নিঃশব্দে কাঁদতো। আপনা আপনি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমাইয়ে যাইতো! ঘুমের ঘোরে মুখে ফিটার বা খাবার দিলে খাইতো! প্রথম কয়েক দিন খুব জ্বালাতন কইরতো। তারপর শান্ত ছেলে। হাসতো না কাদতোও না। অরুণ স্যার কোলে নিয়ে কতো কথাই না বইলতো! চুপ কইরে থাকতো! সবার কোলেই যাইতে শুরু করে। অরুণ স্যার অফিসে যায় ছেলেকে রাইখে। বড় ম্যাডাম আনিকা মামুনিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমার কাছেই থাকতো! আমি বাড়ির কাজের মানুষ। তিন বেলা রান্নার দায়িত্ব আমার। ওই লোকটাও বাজার করতো, সকলের ফরমাইশ খাটতো।

একদিন বিকেলে ভোর বাবা ঘুমাইছিলো। আমি ভাবছি ভালোই ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। আমি আমার মতো ব্যস্ত হয়ে যাই। মাঝে মাঝে স্যারের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে যাই। সন্ধ্যার বেশ কিছু সময় পর স্যার আইসে ভোর বাবার খোঁজ করে। আমি বলি ঘুমাই রইছে। একটু পরে স্যার ভোর বাবাকে কোলে নিয়ে আসে। দাঁড়ায় না সোজা ডাক্তারের কাছে যায়। জ্বরে গা পুইড়ে যাচ্ছিলো। অথচ আমরা কেউ একটু ধ্যান দেই নাই।স্যার অবশ্য কাউকে কিছুই বলে নাই। এরপর থেকে অফিস যাওয়ার সময় ছেলেকে বুকে নিয়েই যেতো। একবেলার জন্যও রাইখে যায় নাই। শান্ত ভোর অফিসে গিয়ে দস্যিপনা শিখে চঞ্চল হয়ে ওঠে। এতো এতো বুলি তার মুখে। মাসখানেক হবে যবে থাইকে স্কুল যাইতে শুরু কইরছে স্কুল শেষে বাড়িতেই থাকে। আবার আমার কোলটাকে ভরে তুলে। মিষ্টি সুরে মিনু খালা বইলে যখন ডাকে, আবদার করে পরানটা জুইড়ে যায়।”
বলে আবার হাসে। অথচ চোখ তার অঢেল আবেগে টইটুম্বুর। আবেগী পাতার চোখও ভিজে ওঠে। মিনু সেটা লক্ষ্য করে বলল,

-” বাবার নামে শত শত নালিশ তার অথচ তার বাবাকে কিছু বলা যাইবে না। মিছে মিছে যদি বলি অরুণ স্যার পইড়ে গিয়ে ব্যাথা পাইছে! গঙ্গা যমুনা বইতে শুরু করে। বাবা বলতে অজ্ঞান। আমি জানি আপনি খুব ভালো । ভোর বাবার অনেক খেয়াল করেন। তবুও বলছি বাচ্চাডারে একটু মায়ের মমতায় আগলে রাইখেন। পুরো ভালোবাসার পাগল। যে ভালোবাসবে তার পিছনে ঘুর ঘুর কইরবে। বাপের মতো একটু জেদিও বটে। আর বাচ্চাডার সাথে বড় বাচ্চাডারেও একটু ভালোবাইসে আঁচলে বাঁইধেন। একবার বাঁধা পড়লে আপনার পিছু পিছু ঘুর ঘুর কইরবে।সেও আরেক ভালোবাসার কাঙাল!”

পাতার বুঝতে অসুবিধা হয়না বড় বাচ্চাটা কে? সে লাজুক হাসে। তার লজ্জা দেখে মিনু শব্দ করে হেসে উঠলো। তার হাসির শব্দে ভোর ও আভারি খেলা বন্ধ রেখে এদিকে তাকায়। ভোর ব্যাট নিয়ে ছুটে আসে আভারি তার পিছু পিছু।
-” ও মিনু‌ খালা তুমি আমাকে রেখে রেখেই হাসছো যে ! আমাকেও বলো জোকস আমিও হাসি!”
মিনু আঁচল দিয়ে ভোরের মুখ ও গলার ঘাম মুছে দিয়ে কোলে নিয়ে চুমু খায়।
-” এমনিই হাসতে ছিলাম ভোর বাবা!”
পাতা মিনুর কোলে ভোরকে দেখে। কি সুন্দর দৃশ্য! সে প্রাণভরে দোয়া করে মিনু আপার জন্য। তার কোল জুড়েও যেন এরকম একটা চাঁদ খেলা করে।

তন্মধ্যে বাড়ির আঙিনায় একটা গাড়ি প্রবেশ করে। ভোর মিনুর কোল থেকে লাফ দিয়ে নামে।
-” আনি,দাদি, রুপ, নানি আন্টি এসেছে বোধহয় শপিং থেকে। আমি যাই?”
বলেই দৌড় লাগালো। পাতা মিনু আস্তে যেতে বলে শোনে না। ঝড়ের গতিতে দৌড়াতে থাকে। সামনে ইটের টুকরোর সাথে বেজে পড়ে যায় ধপাস করে। মিনু, আভারি ও পাতা গিয়ে তোলে। লেগেছে খানিকটা, হাঁটু ছিলে গেছে। চোখে পানি টলমল করছে। পাতা উদ্বিগ্ন হয়। খেয়াল রাখতে বলেছিল বাচ্চাটার!
-” ওভাবে দৌড় কেউ দেয়? পড়ে গিয়ে কতখানি লাগলো? বেশি ব্যাথা করছে?”
আভারি কোলে নিতে চায় তার কোলে যায় না ভোর। পাতার গলা জড়িয়ে তার কোলে উঠে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

-” জ্বলছে আম্মু!”
-” ঠিক হয়ে যাবে চলো আমি ওষুধ লাগিয়ে দিই! আর ওভাবে দৌড় দিলে কেন? আস্তে যেতে পারতেনা?”
-” আনি’রা এসেছে। আনি বলেছিল শপিং করে অনেক গুলো খেলনা কিনে দিবে দাদি আর ওই নানি আন্টি। আমার জন্যেও তো আনবে তাই না?”
পাতার উদ্বিগ্নতার মাঝেও হাসি পায়।
-” তোমার জন্য আনবে বলেছে?”
ভোর মাথা নেড়ে মিষ্টি হেসে বলে,

-” না বলে নি। কিন্তু আমি জানি তো! আনবে। আব্বু যখন খেলনা আনে আনি রুপ ওদের জন্যও তো আনে।”
পাতা অধর চেপে চুমু খায় কিউটের বৈয়ামকে। এতো মিষ্টি আদুরে ভঙ্গিতে কথা বলে এই ছেলে যে মনে হয় শুনতেই থাকি।কথা বলবে আর মিষ্টি করে হাসবে। ভোরকে কোলে নিয়ে পাতা সহ সবাই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। মিনু ঘরে যায় মলম আনতে! নজরে আসে ড্রয়িংরুমে আসমা বেগম সহ সকলকে। অনেক শপিং ব্যাগ সাথে। সত্যিই অনেক খেলনা কিনে এনেছে। পুতুল, গাড়ি, বন্দুক, ঝুনঝুনিসহ অনেক কিছুই। ভোর সেগুলো দেখে পাতার কোল থেকে নেমে দৌড়ে যায়। আনিকা তাকে দেখে হেসে হাত ধরে সব দেখায়,
-” ভোর দেখো কতো খেলনা! সুন্দর না? এই যে এটা এনা-এলসা, এটা ডল হাউজ,এটা ডরিমন! এগুলো টেডি, এইযে স্কুটার! এগুলো সব আমার। আর এই বন্দুক, গাড়িগুলো সব রূপের! সুন্দর না?”
সব আনির! সব রূপের! তার জন্য আনে নি! সে গাল ফুলিয়ে দাদির দিকে চায়! দাদি হাসিমুখে আনিকা কোলে তুলে আদর করে বলে,

-” একদম আনিবুড়ির মতো সুন্দর! এখন এগুলো ঘরে নিয়ে নিজের সংসার সাজাও যাও!”
আনি হাসি মুখে একটা একটা করে খেলনা নিজের ঘরে নিয়ে যায়। সুরুভি বেগম শপিং শেষেই নিজ বাড়ি চলে গেছে। সে রূপকে ঘরে শুয়ে এসেছে মাত্র। এখন সে অনেক ক্লান্ত। আভারিকে একগ্লাস ঠান্ডা শরবত আনতে বলে। আভারি চলে যায়। ভোরের মুখশ্রীতে আঁধার নেমেছে। সে সোফায় বসা দাদির কোলে বসে বলল,
-” দাদি আমার জন্য কোনো খেলনা আনো নি?”
আসমা বেগমের টনক নড়ে। ইশ ভুলেই বসেছে। ভোরটার জন্য কিছু আনা উচিত ছিল। সে ভোরের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু আঁকে।

-” তোমার জন্য কোনটা আনবো বুঝতেই পারছিলাম না! যদি তোমার পছন্দ না হয়? তাই ভেবেছি তোমাকে নিয়ে আবার যাবো? তখন তোমার যেটা পছন্দ হয় কিনে আনবো!”
ভোর মাথা নাড়ল। হালকা হাসেও! তবে তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সে আশায় ছিলো দাদি তার জন্যও খেলনা আনবে।

পাতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভোরের মলিন মুখশ্রী দেখে মায়া হয়। ছেলেটা কতো আশায় ছিল! ওদের জন্য আনা একটা গাড়ি দিয়েই বলতো তোমার জন্য! ভোর হয়তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতো!
মিনু ক্রিম তুলা ও স্যাভলন আনলে পাতা ভোরের হাঁটু পরিষ্কার করে লাগিয়ে দেয়। ভোর উফ তাক করে না। গোমড়া মুখে কুটুর কুটুর চেয়ে থাকে। পাতা তার ফুলো গালে চুমু খায়, ভোর হাসে না। অপর গালে খায় তবুও হাসে না। কপালে, নাকে থুতনিতে তবুও সেই গোমড়া মুখ। তবে তার অধর জোড়া হাসতে চায়। পাতা সেটা লক্ষ্য করে পেটে হাত দিয়ে কাতুকুতু দেয়। ব্যস! মিশন কমপ্লিট। খিলখিলিয়ে হাসির বন্যা বয়ে যায়। সেই হাসির ধ্বনি বাড়ি খায় সরকার বাড়ির দেয়ালে। প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। ভোর হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেই পাতা ছেঁড়ে দেয়। বুকে টেনে নেয় ভোরকে। ভোর তার আম্মুর বুকে লেপ্টে হামি তুলে।

-” আম্মু ঘুম পাচ্ছে আমার!”
-” ঘুমাও!”
বলেই চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে দিলো। ভোর আরামে চোখ বন্ধ করে। কিন্তু তার আরামে বিঘ্ন ঘটে চেনা পরিচিত আওয়াজে। ভোর চোখ খুলে উঁকি দেয়। মিস টুম্পাকে দেখে মিষ্টি হাসে।
-” আসসালামুয়ালাইকুম মিস! কেমন আছেন মিস?”

পাতাও তাকায় মেয়েটার দিকে। অল্প বয়সী মেয়ে বিশ বাইশ বছরের হবে হয়তো। সুন্দর দেখতে আর সবচেয়ে সুন্দর তার চুলগুলো। অনেক লম্বা। ছেড়ে দিয়েছে কোমড় ছাড়িয়ে হাঁটু ছুই ছুই। যেন উপন্যাসের সেই রূপবতী কেশবতী নায়িকা। পাতা মেয়ে হয়েই এই মেয়ের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে যায়। ইয়া আল্লাহ এতো আসমানের পরী! টুম্পা ভোরের সালামের জবাব দেয়। ভোরকে জড়িয়ে রাখা মেয়েটাকেও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এই হবে হয়তো অরুণ সরকারের ওয়াইফ! ভাবতেই চেহারায় মলিনতা ছেয়ে যায়। তার ওয়াইফ হওয়ার স্বপ্ন তো সে দেখেছিলো! অথচ অরুণ সরকার তাকে ভাগ্নী বানিয়ে দূরে ঠেলে দিয়েছে। মামার বন্ধু কি জীবন সঙ্গী হতে পারে না নাকি? এখন আর এসব ভেবে কি হবে? অরুণ সরকার তো তাঁকে ছ্যাঁকা দিলোই।

পাতা ভোরকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
-” আপনি ভোরের টিচার? ভোর অনেক বলেছে আপনার কথা? আমি পাতা ভোরের আম্মু!”
টুম্পা ভাবনা থেকে বেরোলো।পাতার দিকে ভালো করে তাকায়। তার বয়সীই মনে হচ্ছে! ঠোঁটে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে বলে,
-” আপনিও তো ভোরের টিচার ছিলেন! টিচার থেকে আম্মু! ভোর আপনার কথাও বলতো আমাকে!”
কথাগুলো যেন কেমন শোনায় পাতার কাছে। তবে পাতা মাথা ঘামায় না। ভোরকে নামিয়ে দিয়ে বলল,
-” ভোর টিচার এসেছে যাও পড়তে বসো! পড়া শেষ হলে ঘুমিও”
ঘুমে ভোরের চোখ ছোট ছোট হয়ে এসেছে। তবুও মাথা নাড়িয়ে টুম্পার হাত ধরে স্টাডি রুমের দিকে অগ্রসর হয়। বই ব্যাগপত্র নিয়ে পড়তে বসে। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। পাতা টুম্পার জন্য নাস্তা নিয়ে গিয়ে দেখে চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা বইয়ের উপর মাথা রেখে হা করে ঘুমুচ্ছে। পাতাকে দেখে টুম্পা হেসে বলে,
-” ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়েই পড়লো!”
পাতা নাস্তা পাশে রেখে টুম্পাকে নিতে বলে। টুম্পা নুডুলসের বাটি হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করে স্বাভাবিকভাবেই। পাতাকে বলে,

-” অরুণ স্যার অফিসে?”
পাতার ভ্রু কুঁচকে যায়। অরুণ স্যার? শুধু স্যার বলতি!
-” হুম! ঈদের পরে আজ প্রথম গেল।”
-” ওহ্। তার সাথে একটু জরুরী কথা ছিল!”
পাতার সন্দেহভাজন মনে খটকা লাগলো।এতো সুন্দরী মেয়ে ছেলের হোম টিউটর!তার সাথে কিসের জরুরী কথা !
-” আমাকে বলুন আমি ওনাকে বলবোনি!”
-” আমি তাকেই বলবো! উঠি এখন!”
পাতাকে নাকচ করে বলল টুম্পা। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আস্তে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যায়। তার লম্বা চুল ও কোমড় দুলিয়ে যাওয়া দেখে পাতার সন্দেহভাজন মনটা কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। তার বাগিচার ভোমড়! তার সাথে ঠিক ঠাক আলোচনা হলো না; অন্য বাগিচায় জরুরী কথা বলবে!!! সে ভোরের দিকে চায়! হা করে ঘুমিয়ে। এভাবে ঘুমোলে তো ঘার ব্যাথা করবে। সে ভোরকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। উঠে আসতে নিবে ভোর ছাড়ে না। এক হাত জড়িয়ে পাতার হাত মুখ বুলিয়ে বিড়বিড় করে ‘আব্বু যেও না’ বলে। পাতা তার কপালে চুমু দিয়ে নিজেও বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

সন্ধ্যায় আসমা বেগম আনিকার ঘরে যায় রূপকে নিয়ে। আনিকা পুতুল নিয়ে খেলছে। বিড় বিড় করে পুতুলের সাথে নানা ধরনের গল্পও করছে। সে নাতনির কাছে বসে পড়লো। আনিকা দাদিকে দেখে মিষ্টি হাসে। রূপের গালে ও পেটে চুমু খায়। রূপ ঠোঁট চোখা করে উ উ বলে। আনিকা একটা পুতুল রূপের হাতে দিয়ে বলে,
-” উ উ আবার কি? সুন্দর করে করে কথা বলতে পারিস না পঁচা ছেলে?”
রূপ হেসে পুতুল দিয়ে ঢিল ছুড়ে আনিকার দিকে আনিকা চোখ রাঙিয়ে ভেংচি কাটলো। আর দেবে না। যতই কাঁদুক। আসমা বেগম হেসে আনিকার মাথার ঝুটি ঠিক করে বলে,
-” আনি বুড়ি গুড গার্ল তাই না?”
আনিকা মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ল মানে সে গুড গার্ল। আসমা বেগম বলল,

-” রূপের মতো ভোরও তোমার ভাই হয় তাই না? তোমার খেলনার মধ্যে থেকে একটা খেলনা যদি ভোরকে দিই তুমি কি রাগ করবে?’
আনিকার হাসি নিভে যায়।
-” ভোর পঁচা! আমায় মারে শুধু। চাচি মনির কাছেও যেতে বারণ করে। ওর তো অনেক খেলনা! বাক্স ভর্তি। আমার খেলনা কেন দিবো?”
-” তোমার বড় চাচ্চু তোমাকে কতো খেলনা কিনে দেয়! কিছুদিন আগে কতো বড় টেডি দিলো! প্রতিদিন চকলেট আইসক্রিম দেয়! তুমি ভোরকে দিবে না?”

পাতা বাহার পর্ব ৩১

আনিকা পিট পিট করে চায়। চাচ্চু তাকে অনেক ভালোবাসে, আদর করে। চুপিচুপি খেলনা আইসক্রিম এনে দেয়।
-” আচ্ছা! দাও ভোরকে! ওই বড় গাড়ি ও বন্দুকটা দিও! ওগুলো ওর পছন্দ হবে!”
আসমা বেগম নাতনিকে কোলে বসিয়ে আদর করে।

পাতা বাহার পর্ব ৩২