পাতা বাহার পর্ব ৪৭
বেলা শেখ
শীত শীত ভাব বিরাজমান তবে ধরনীতে এখনো শীতের আগমন ঘটে নি। কিন্তু শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে শত শত বিহঙ্গের আগমন লক্ষনীয়! সাথে ভোর রাতে হালকা শীতের আমেজ। ভোর বেলায় হালকা ধোঁয়া উড়ানো কুয়াশা। শিশিরে ঘেজা সবুজ ঘাসের মাঠ, গাছের পাতা! এ হেমন্ত যেন শীতকে বরণ করে নিতে মুখিয়ে আছে! পাতা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গাছের টবগুলোয় পানি দিচ্ছে আর সকালের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটা উপভোগ করছে। সাথে ছোট বেলার তিক্ত স্মৃতি হাতরিয়ে কিছু মধুর মুহূর্ত চোখের পাতায় ভেসে উঠছে।
ছোটবেলায় সে, জুবাইদা, কাওছার ভাই, পাবেল ও গ্রামের কিছু ছেলেমেয়ে মিলে মক্তব পড়তে যেতো। একদম কাকডাকা ভোরবেলায়! হিজাব পড়ে আমপাড়া, রেহাল বুকে জড়িয়ে শীতকে উপেক্ষা করেই সব ছেলেমেয়ে ধল বেঁধে যেতো! আজ অনেকদিন পর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাইরের পাখির কিচিরমিচির ও হালকা কুয়াশায় ঘেরা দৃশ্য দেখে মনে পড়ে গেলো শৈশবের কিছু অমূল্য রত্ন! পাতা সবগুলো গাছে পানি দেয়ার পর খেয়াল করে তাঁর পিছনে কেউ আছে। একটা ছোট্ট প্রানী তার গা ঘেঁষে মিও মিও করছে। পাতা বিরক্তবোধ করে না। তবে মুখাবয়বে কৃত্রিম বিরক্ত বোধ ফুটিয়ে বলে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
-” কি চাই মহারাজার পাতাবাহারের? হুম?”
বিড়াল শাবকটি মিও মিও করে। পাতা মুচকি হেসে বলল,
-” আপনার কর্তা মশাই এখনো ফেরেনি!”
পাতাবাহার পাতার পা ঘেঁষে মিও মিও করে পানির মগটা খামচে ধরলো। পাতা মগটা নিচে রাখলে সে মুখ নামিয়ে পানি চেটে খেতে শুরু করে। পাতা মুচকি হেসে ভেংচি কাটে। বিড়ালটা মোটামুটি সুস্থ হয়েছে। ঘাও শুকিয়ে এসেছে। এখন আগের মতোই দুষ্টুমি করে বেড়ায়। পাতা প্রথমবারের মতো বিড়ালটির গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। অবুঝ বোকা প্রানী! মালিকের জন্য কুকুরের ভয়, কামড়কে উহ্য করে ছুটে এসেছিল!
এরই মাঝে অরুণের আগমন ঘটে। সে বেলকনিতে পাতাকে দেখে খানিক অবাক হয়।মেয়েটা ঘুম পাগলী! তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবে আবার উঠবেও দেড়িতে! গত চার মাসে এই মেয়েটা হাতেগোনা কয়েকবার সকাল সকাল উঠেছে আজ তার মধ্যে একদিন।অরুণ এগিয়ে যায়।
-” বাহ্! আজ সূর্য মামা কোনদিকে উঠলো!”
পাতা দরজার দিকে চায়। অরুণকে দেখে মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসে। দুই হাত অরুণের টি শার্টটায় ঘষে মুছে নেয়। অরুণ নাক সিঁটকায় বিড়ালের পশম লেগেছে। পাতা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো সাথেই। হাসতে হাসতেই বলে,
-” একদম নাক সিকায় তুলবেন না। এমনিতেই বোচা আরো বুচুন বুচুন লাগে।”
অরুণ প্রতিবারের মতো শান্ত গম্ভীর। পাতার কথায় তার মুখাবয়বে হাসির রেখা ফুটে ওঠে নি। তাঁর সিরিয়াস মুড দেখে পাতা হাসি থামিয়ে নেয়। ভেংচি কেটে বলে,
-” একটু হাসি খুশি থাকতে পারেন না? হাসলে কেউ আপনার স্বর্ণের উপর ট্যাক্স বাড়াবে না!”
অরুণ তার কথা সম্পুর্ন উপেক্ষা করে। পাতা তার উপেক্ষাকে উপেক্ষা করে বেলকনির টবগুলোকে দেখিয়ে বলে,
-” নিন আপনার কাজ করে দিলাম!সব টবেই পানি দিয়েছি!”
-” একদিন দিয়েই বাহবা কুড়াতে চাইছো? রোজ রোজ দিলেও পারো!”
অরুণের কথায় পাতার মুখ খানি চুপসে যায়। তার আড়ামের ঘুমের সাথে কেন লোকটার আড়িবাদ! সে আমতা আমতা করে বলে,
-” এখন ঘুম আমাকে না ছাড়লে আমি কিভাবে উঠি বলুন তো?”
অরুণ ভ্রু কুঁচকে চায়। পাতা পিট পিট করে তাকিয়ে হাসলো। যাকে বলে বেক্কেল টাইপ হাসি। অরুণ হাত বাড়িয়ে পাতার গাল টিপে দিয়ে বলে,
-” কাল থেকে ফজর নামাজ শেষে আর ঘুমাবে না।এক কাজ করতে পারো আমার সাথে হাঁটতে বের হবে। সকাল বেলা হাঁটা ইটস্ আ গুড হ্যাভিট! শরীর মন দুটোই ভালো রাখে। আর এমনিতেও শুয়ে বসে থেকে একটু মুটিয়ে গেছো পাতাবাহার!!”
পাতা গোল গোল করে চায়। লোকটা তাকে ইনডিরেক্টলি মোটা বললো? মানছে সে আগের থেকে একটু, বেশি না কিন্তু এই এইটুকুনি স্বাস্থ্যবতী হয়েছে। বিয়ের পর সব মেয়েরাই হয়! তাই বলে মোটা বলবে? পাতা গাল ফুলিয়ে ফোঁস ফোঁস করে। দাঁত কপাটি পিষ্ট করে বলে,
-” নাক উঁচু ম্যানারলেস লোক! আপনি আমাকে ইনডিরেক্টলি মোটা বললেন? আমি মোটা? কোন দিক দিয়ে ভাই?”
পাতা অরুণের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তার নাকের পাটা ফুলে উঠেছে বারংবার। অরুণ পকেট থেকে হাত বের করে। কপালে ভাঁজ ফেলে এক হাত পাতার অল্প মেদ যুক্ত পেটে রেখে চিমটি কাটে। পাতা শ্বাস টেনে হালকা ফুলো পেটটা লুকিয়ে নেয় নিমিষেই। খানিক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে। লোকটা এভাবে প্রমাণ পেশ করবে? অরুণ পাতার ফুলো গাল চেপে ধরে শক্ত করে। নিজে খানিক ঝুঁকে রাশভারী গমগমে গলায় বলে,
-” ভাই? আ’ম ইয়্যুর হাসবেন্ড পাতাবাহার! আর মোটা বলি নি! বলেছি হালকা মুটিয়ে যাচ্ছো! ইট স্যুটস ইয়ু! প্রিটি লাগে।”
বলেই ছেড়ে দেয়। পাতা আটকে রাখা শ্বাস টানে। অসভ্য জালিম লোক!! পাতা গালে হাত বুলায়। তার নরম গালটার বারোটা বাজালো! অরুণ দাঁড়ায় না রুমের ভিতরে এসে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। পাতা হন হন করে এগিয়ে আসে। গায়ে থাকা ওভার সাইজের শার্টটার কলার ঠিক ঠাক করে অরুণের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-” আমি আপনার নামে নারী নির্যাতনের কেস দেবো। আমার আদরের গালটা লাল করে দিয়েছেন! আর আমাকে মোটা বলছেন? মাত্র আটচল্লিশ কিলো আমি! আমি যদি মোটু হই তাহলে আপনি কি?”
অরুণ বিরক্ত হয়ে বলে,
-” ক বলতে কিশোরগঞ্জ বোঝা মহিলা? করো কেস! আমি অরুণ সরকার মোটেই ভয় পাচ্ছি না।”
পাতা ভেংচি কেটে ব্যঙ্গ করে বলে,
-” আমি অলুন তলকাল মোতেই ভয় পাই না!”
অরুণ চোখ গরম করে তাকায়। পাতা বত্রিশ পাটি বের করে হাসে। সোফায় অরুণের পাশ ঘেঁষে পা তুলে বসে। অরুণের বাহু জড়িয়ে দুঃখি দুঃখি ভাব ফুটিয়ে বলে,
-” আপনার ঐতিহ্যবাহী ধমক খুউব মিস করছি! কত দিন হলো আপনার ধমক খাই না।”
অরুণ ঘার ঘুরিয়ে পাতার দিকে চায়। পাতা মুচকি হেসে বলে,
-” ওভাবে তাকাচ্ছেন কেন? সত্যি বলছি! সাত আট দিন হয়ে গেলো আপনি একটাও ধমক দেন নি!”
অরুণের চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তের ছাপ।পাতার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-” পাতাবাহার যথেষ্ট হয়েছে! বিরক্ত হচ্ছি আমি!”
পাতা চোখ ছোট ছোট করে চায়। শালার জামাই! মজা খুনসুটি কিছুই বোঝে না। রসকষহীন লোক কোথাকার! পাতা পা ভাঁজ গুটিয়ে বসে। হাঁটুতে থুতনি রেখে গম্ভীর মুখে বসে থাকে। করবে না বিরক্ত!
অরুণ কিছু বলে না। হাত বাড়িয়ে পাতার এলোমেলো খোলা চুলগুলো গুছিয়ে দিয়ে বলে,
-” আমার শার্টটাই পড়ে আছো।এখনো চেঞ্জ করোনি কেন?”
-” ভুল হয়ে গেছে।এখনি চেঞ্জ করে আপনার মহামূল্যবান শার্ট ফিরিয়ে দিচ্ছি! ওয়েট!”
বলেই পাতা পা নামিয়ে নেয়। অরুণ চুল টেনে ধরায় যেতে পারে না। পাতা ভরা চোখে তাকায় অরুণের দিকে। অরুণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তাঁর গালে একটা চুমু দেয়।
-” রেগে যাচ্ছো কেন? আমার শার্ট তোমার শার্ট! যতক্ষণ খুশি পড়ে থাকতে পারো! বাট এই ওভার সাইজ শার্ট পড়ে তো সবার সামনে যেতে পারবে না। কলিজা উঠলো বলে!”
একদম শান্ত আর আদুরে গলা। পাতার মাঝে যেন একবুক সাহসের সঞ্চার হয়। মুচকি হেসে অরুণের পায়ের উপর বসে গলা জড়িয়ে কাঁধে মুখ গুঁজে দেয়। অরুণ অল্প হেঁসে এক হাতে জড়িয়ে নেয়। এরমধ্যে বিড়াল শাবকটির আগমন ঘটে। টি টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে মিও মিও করতে থাকে। পাতা আড়চোখে তাকে চোখ রাঙায়। শালার লাজ লজ্জা হীন বিড়াল !
অরুণ তাকে সরিয়ে দিয়ে পাতার উদ্দেশ্যে বলে,
-” কলিজাকে ডেকে দাও!”
পাতা ‘হুম’ বলে কিন্তু অরুণকে ছাড়ে না। তার ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। চোখটা ভারি হয়ে আসছে। হামি উঠছে বারংবার। চোখের পাতার ঘুম উড়ে বেড়ায়। অরুণ পাতার চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে ঘুমন্ত ছেলের দিকে চায়। কম্ফোর্ট ঢাকা সম্পূর্ণ শরীর শুধু মাথাটা উঁকি দিচ্ছে অল্প সল্প। ছোট বাচ্চাদের মতো টকটকে ঠোঁটজোড়া ফুলিয়ে নিদ্রায় মগ্ন। অরুণের ইচ্ছে করে ছেলের ঠোঁটে আলতো চুমু দিয়ে ঘুম ভাঙাতে;আদর করে বুকে জড়িয়ে রাখতে!
-” পাতাবাহার? কলিজার জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা উচিত! তাই না?”
পাতার ঘুম ছুটে যায়। অরুণের গলা ছেড়ে সোজা হয়ে বসে। কি বলল লোকটা?
অরুণ পাতার চোখে চোখ রেখে বলে,
-” কালকে খুব একটা অপ্রিতিকর অবস্থায় পড়েছিলাম! তাই নয় কি? ভোর বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে!”
পাতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে সোফায় বসে। কথা ঠিক! কালকের মুহূর্তটা খুবই দৃষ্টিকটু! ভোর এখন বড় হচ্ছে। একটু স্পেস তো দরকার। লোকটা ছেলেকে পাশের ঘরে রেখে আসে। তাদের একান্ত মুহূর্তের সমাপ্তির পর ছেলেকে কাছে এনে তবেই ঘুমোবে। ছেলেকে ছাড়া লোকটা একটুও ঘুমোতে পারে না।
-” থাকতে পারবেন ছেলেকে ছাড়া?”
অরুণ উঠে বিছানায় ছেলের শিয়রে বসে বলে,
-” এক মুহূর্তও না। ওকে ছাড়া চোখের পাতায় ঘুমই নামবে না আমার! কিন্তু এখন বড় হচ্ছে। আজ হোক কাল হোক আলাদাভাবেই রাখতে হবে!”
পাতা মাথা নাড়ে। কথা ঠিক! কিন্তু এ ব্যাপারে সে কিছুই বলবে না। একটা কথাও না। কারণ সে জানে আগে হোক পরে এ নিয়ে তাকে একটু হলেও খোঁচা শুনতে হবে। অরুণ সরকার না দিলেও আরো অনেকেই আছে। বলবে দূরে ঠেলে দিচ্ছে ভোরকে; তিন চার মাস যেতে না দিতেই সৎ ছোট ছেলেকে আলাদা ঘরে রাখার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
-” তুমি কি বলো?”
অরুণের প্রশ্নে পাতা মুচকি হেসে বলে,
-” আমি কিছুই বলবো না। এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। আমি কিছু বললেই ভাবতে পারেন ছেলেকে দূরে রাখার পাঁয়তারা করছি। সৎ মায়ের ট্যাগ লাগিয়ে দিবেন! আবার এও হতে পারে আপনি এই কথাটা আমাকে পরীক্ষা করার জন্যই করেছেন! যে দেখি মেয়েটা কি বলে!”
অরুণের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় নিমিষেই। শক্ত গম্ভীর মুখে বলে,
-” ডোন্ট সে দ্যাট ওয়ার্ড এনি মোর! মার্ক মায় ওয়ার্ড। সৎ মা! সৎ ছেলে! কথাটা তোমার মুখে যেন আর না শুনি! কখনোই না! আর প্রতিবারের মতো একটু বেশি বোঝো পাতাবাহার! কিছুই বলতে হবে না তোমাকে। তবে এই শব্দ গুলো বলে আমাকে বা আমার ছেলেকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না।”
পাতা থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। সে কি ভুল কিছু বলে ফেলেছে? মনে তো হচ্ছে না!
অরুণ ছেলের গা থেকে কম্ফোর্ট সরিয়ে গালে হাত রাখে। ফুলো ঠোঁটজোড়ায় চুমু দিয়ে ডাকে,
-” আব্বু? কলিজা? এই আব্বু?”
ভোর চোখ মুখ কুঁচকে ওপাশ ফিরে শোয়! অরুণ আবার ডাকে,
-” মানিক সোনা? ওঠো? এই আব্বু?”
ভোর কাঁদো কাঁদো ফেস বানিয়ে উঠে বসে। ঘুম জড়ানো ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে,
-” আব্বু? একটু ঘুমালে কি হবে? একটু ঘুমাই না? প্লিজ আব্বু?”
অরুণ ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশ রুমে যায়।
-” আমার ছোট্ট আব্বু?এই একটু না ঘুমালে কি হবে? হুম?”
-” অনেক বড় লস হবে! ভোর আরো ঘুমাবে!”
-” আমার ভোর এখন ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করবে!”
ভোর গাল ফুলিয়ে নেয়!
-” আচ্ছা বুঝলাম না! আজ অফিস ছুটি কেন হলো?”
আরিয়ান আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। চোখে তার আকাশ সম ঘুম। হামি তুলে ঘুমন্ত ছেলের ডায়পার চেক করে খুলে রাখে। রুবির কথার জবাবে বলে,
-” সত্যিই জানো না?”
রুবি মানা করছ সত্যিই সে জানে না! আরিয়ান বালিশে পুনরায় মাথা এলিয়ে বলে ড্রেসিন টেবিলের সামনে দন্ডায়মান রুবির দিকে তাকিয়ে বলে,
-” ভাইয়ের মরহুম মা স্বপ্না চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ!”
-” ইশ্ ভুলেই বসেছিলাম!”
-” হুম! ভাই এই দিনে অফিসে যাবে না আবার বাড়িতেও থাকবে না। এলোমেলো ঘুরবে। দান সদকা করবে গরীব দুঃস্থদের হাতে খাবার পানি তুলে দিবে। মাদ্রাসা গুলোয় কোরআন শরীফ খতম পড়িয়ে দোয়া করবে! তাদের খাওয়াবে! এইসব! তবে কোনো আয়োজন করে না।”
রুবি বিছানার কিনারায় বসে জিজ্ঞেস করে,
-” আচ্ছা উনার মৃত্যু কেমন করে হয়েছে?”
-” অসুস্থ ছিলেন উনি; হার্টে সমস্যা! ভাই হওয়ার পর থেকেই অসুস্থতা বেড়ে যায়। অপারেশন করা হয়! ডায়েবেটিসের রুগি ছিল তাই খুব একটা সুবিধার করতে পারে নি। অপারেশনের সাতদিনের মাথাই হঠাৎ চলে যায়!”
বলে আরিয়ান উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল। রুবি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অরুণ সরকার। অন্যসময়ের মতো ফরমাল ড্রেস আপে নয়। সাধারণ শার্ট প্যান্ট ও পড়নে চটি জুতো! চুলগুলোও পরিপাটি নয় এলোমেলো তবে উস্কো খুস্কো নয়। একদম সাধারণ বেশে; নরমাল লুক! মুখায়ব নিত্যদিনের মতোই ঠাহর করা মুশকিল। অরুণ হাত ঘড়ি পড়ে।
পাতা তার পাশেই বুকে হাত খুঁজে দাঁড়িয়ে। ভোর বিছানায় শুয়ে বসে গড়াগড়ি খাচ্ছে খুশিতে। আজও স্কুলে যেতে হবে না। তার মানে অনেক অনেক খেলা! সাইকেল চালানো! মোবাইলে গেম খেলা! কার্টুন দেখা!আর একটু আকটু পড়াশোনা! ইশ প্রতিদিনই যদি এমন হতো? পড়াশোনা করতে তাঁর মোটেও ভালোলাগে না।পড়ালেখা তো একটা ভ্যাম্পায়ার! স্টুডেন্টদের রক্ত চুষে খায় অনবরত। পড়াশোনার নামে সে চাচ্চুর কাছে একটা মামলা করবে; জেলে পাঠিয়ে দেবে! কেন পড়াশোনা বাচ্চাদের ডিস্টার্ব করে! ভেবেই ভোরের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে আসে। সে বালিশ শূন্যে ছুঁড়ে লাফিয়ে ওঠে আনন্দে! পাতা ছোট ছোট করে তাকিয়ে তাঁর উল্লাস দেখে। ভোর আম্মুর চাহনি দেখে চুপচাপ গুড বয় হয়ে বসে থাকে। পাতা অল্প হেসে অরুণের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“হয়েছেটা কি জানতে পারি? কেন স্কুলে যেতে পারবো না আমরা? পাঁচদিন হলো স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না! আমরা এখন সুস্থ আছি!”
-” বলছি যেতে হবে না মানে হবে না ব্যস আর কোন কথা নয়!”
গম্ভীর মুখে আদেশ বানী অরুণের। পাতা মানতে নারাজ!
-” কেন জাবো না? কোন রিজেন তো থাকতে হবে? এক দুই মাস পর সবার এক্সাম। ভোরেরও! স্কুলে না গেলে চলবে?”
ভোর এতক্ষণ চুপচাপ শুনলেও এবার আর চুপ থেকে না। হাসিখুশি মুখে বলে,
-” আম্মু স্কুলে না গেলে তো আমাদেরই লাভ তাই না? স্কুলে গিয়ে গিয়ে আমরা টায়ার্ড হয়ে গেছি তাই আব্বু আমাদের ছুটি দিচ্ছে! তাই না আব্বু?”
অরুণ ছেলের মাথার এলোমেলো চুল আঁচড়ে দেয়। কিছু বলবে এর আগে পাতা বলে,
-” ভোর? খুব খুশি হচ্ছো দেখছি! পড়ালেখা দূরে থাকলেই বাঁচি তাই না? মনে রেখো ফাইনাল এক্সামে ফাস্ট না এলে বিয়ে করাবো! লাল টুকটুকে বউ এনে তোমাকে বউয়ের হাতে সঁপে দিবো! বলবো বউমা সামলাও আমার পড়াচোর ছেলেকে!”
ভোরের ছোট লজ্জা মাখা মুখটা দেখার মতো হয়েছে। সে গাল ফুলিয়ে বুকে হাত গুটিয়ে বসে থাকে। সবাই কিছু হলেই বলবে বিয়ে করাবো, বউমা আনবো! এটা কি ঠিক? এটা রীতিমতো শিশু নির্যাতন! তাঁর কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি! সবে ছয় বছর তাঁর সে তো এইটুকু নি বাচ্চা!
অরুণ ছেলের ফুলো গালে চুমু দিয়ে আদর করে বলে,
-” বাড়িতে পড়তে বসালেই চলবে!”
-” আশ্চর্য আপনি কি শুরু করে দিয়েছেন? আমি স্কুলে চাকরি করি কারো অধীনে। এমন ভাবে বিনা রিজনে মোটেই মিস দিতে পারি না স্কুল! আচ্ছা ভোর থাকুক আমি যাবো!”
অরুণের চোখে মুখে অসন্তোষের ছাপ স্পষ্ট। সে কড়া সুরে বলে,
-” কেউ যাবে না!”
পাতার রাগ হয়। একে তো বলছে না কেন অফ দিবে উপরন্তু হুকুম জারি করা হচ্ছে। সে শান্ত গলায় বলে,
-” কেন? প্রিন্সিপাল ম্যামকে বলেছেন আমি যাবো না। কেন সেটা বলেন নি! তিনি আমাকে কল করে বলে কিছু হয়েছে কিনা! আমি কি বলবো তাকে? আমার প্রতিদিন কতো গুলো ক্লাস থাকে তাঁরা কিভাবে ম্যানেজ করবে? সৈয়দ ফোন করে! কেন আসি না..”
-” ফোনটা দাও?”
পাতাকে থামিয়ে বলে অরুণ! পাতার কপালে ভাঁজ পড়ে। ফোন কেন চাইছে? সে বাড়িয়ে রাখা হাতে ফোন দেয়। অরুণ লক খুলে কললিস্ট চেক করে সৈয়দ নামক কন্টাক্ট ব্লক লিস্টে ছুঁড়ে মারে। পাতাকে উদ্দেশ্য করে শান্ত গলায় বলে,
-” তর্ক করবে না। আমি বলছি কিছুদিন স্কুল যেতে হবে না। ব্যস যাবে না।”
পাতা কিছু বলবে অরুণ আবার থামিয়ে বলে,
-” কোন কথা না! ম্যামের সাথে আমি কথা বলেছি আবার ইনফর্ম করবো! তোমার এ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। আর ওই অবরোধ নাকি সৈয়দ ওর সাথে এতো কথা কিসের শুনি? নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলেছি! বিকেলে এসে তোমার সোসাল মিডিয়ায় তল্লাশি চালাবো!”
পাতা থমথমে গলায় বলে,
-” আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন?”
অরুণ পাতার মুখোমুখি দাঁড়ায়। তার গালে আলতো চাপড় মেরে বলল,
-” কাননে ফুলের সমারোহ! ছাগলের হাত থেকে বাঁচাতে হবে না?”
পাতার কপালে ভাঁজ পড়ে। কিছু বলবে কিন্তু পরবর্তী কান্ডে সে বাকহারা!
ভোল বাবার বাহু ঠেলে সরিয়ে রাগে ক্ষোভে ফুঁসে বলে,
-” আমার আম্মুকে মারলে কেন? হুম?”
অরুণ খানিকটা অবাক হলেও শান্ত চোখে ছেলের দিকে চায়। ছেলের রাগান্বিত মুখটা দেখে বেশ অবাক হয়। পাতা ভোরকে জড়িয়ে ধরে হেসে বলে,
-” আরে পাগল ছেলে! মেরেছে নাকি আমাকে! ওতটা সাহস আছে নাকি ওনার হুম? যাস্ট ক্যাজ্যুয়ালি হাত রেখেছে । এই আলতো ভাবে ! ভোর আমি শুনেছি ন্যাড়া কিন্তু বেল তলায় এক বারই যায়!”
অরুণ ছোট ছোট চোখে চায়। পাতা ভেংচি কাটে। ভোর পাতার গালে হাত বুলিয়ে দেখে।বাবার মতো মুখ বানিয়ে বলে,
-” ন্যাড়া কি আম্মু?”
অরুণ ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
-” লাড্ডু মাথাকে ন্যাড়া বলে!”
ভোর বাবার গলা জড়িয়ে মিনমিনে গলায় স্যরি বলে। অরুণ ছেলেকে আদরে আদরে ভরিয়ে বলে,
-” বাবা? স্টাডি রুমে আমার ওয়ালেট আছে একটু নিয়ে আসো তো?”
ভোর ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
-” প্রত্যেকদিনই তুমি এটা ওটা আনতে বলো!ভোর গুড বয় তাই এনে দিবে। তুমিও গুড বয় তাই আমার জন্য রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টার এনে দিবে কিন্তু?”
মধ্যাহ্ন গড়িয়ে বিকেল। কুসুমের ন্যায় উজ্জ্বল নক্ষত্র পিন্ড পশ্চিম দীগন্তের বুকে উঁকি দিচ্ছে। সকালের শীতের আমেজ মধ্যাহ্নে না থাকলেও বিকেলের দিকে আবার ফিরে এসেছে। হালকা পবনের তানে সেটা অনুমান করা যায়! ভোর আনিকা সাইকেল চালাচ্ছে। সাইকেল চালানো শিখেছে তাঁরা। পাতা ফোন হাতে বাড়ির আঙিনায় বসে আছে। তাঁর দৃষ্টিতে ভোর আনিকা। তার সম্পূর্ণ ধ্যান তাদের উপরেই! তবে সাথে ফোনের ডায়েল প্যাডে একটা নম্বরে। অরুণ সরকারকে কল করে করে সে ক্লান্ত। সেই সকালে বেরিয়েছে এখনো তার খোঁজ খবর নেই। ফোনটা বন্ধ রেখেছে। পাতা খুবই দুশ্চিন্তায় আছে। সে জানতো না আজ অফিস বন্ধ। তাঁরও একটু খটকা লেগেছিল। লোকটা নিত্য রূপে বেরোয় নি। একদম সাধারণ বেশে। লোকটা যাওয়ার পর নিচে নামলে তাঁর রুবির সাথে দেখা হয়। সে হেসে জিজ্ঞেস করেছিল ‘অফিসে যায় নি কেন?’।
রুবি প্রতিত্তরে জবাব দিয়েছিল অফিস বন্ধ। পাতা কপালে গাঢ় ভাঁজ পড়ে। কিন্তু পরবর্তী কথা শুনে সে বাকহারা হয়ে পড়ে। আজ লোকটার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী! অথচ সে জানেই না। লোকটাও কিছু বলে নি। না ভোর জানে। পাতা তারপর থেকেই অনবরত কল করে যাচ্ছে।অথচ লোকটার ফোন প্রথম থেকেই সুইচ অফ! কোথায় লোকটা? আরিয়ান ভাইয়ের থেকে জেনেছে লোকটা এই দিনে এখানে ওখানে যায় মায়ের কবর জিয়ারত করে, দান সদকা করে! একা একাই, কারো সাথে যোগাযোগ করবে না। এর আগে ভোরকে নিয়েছিল সাথে।এবার তাও নেয় নি। পাতার মনটা সেই থেকে বিষন্নতার অতল গহ্বরে তলিয়ে আছে। নিশ্চয়ই লোকটার মন ভালো নেই। লুকিয়ে চুরিয়ে অগোচরে দু এক ফোঁটা চোখের জল ফেলছে। ভাবতেই পাতার বুকটা ভারি হয়ে আসে। চোখে নোনাজল ভিড় জমায়! ইয়া আল্লাহ লোকটার সব কষ্ট তাকে দিক! এরইমাঝে রুবির আগমন ঘটে। পাতা চোখের জল অগোচরে লুকিয়ে মুচকি হাসে। রুবি রূপকে পাতার কাছে দিয়ে বলে,
-” একটু খেয়াল রেখো বড় ভাবী! আমি গোসল সেরে আসছি!”
পাতা রূপকে কোলে নিয়ে চুমু দিয়ে সায় জানালো। রুবি চলে যায়। রূপ সেদিকে তাকালোই না। পাতাকে পেয়ে সে খুব খুশি। হাত তালি দিয়ে আ’মা আ’মা বুলি আওড়িয়ে গালে মুখে লালা মাখিয়ে দেয়। পাতা তার গাল টিপে দিয়ে বলে,
-” পঁচা রূপ! তোমার ভোর ভাইয়া দেখলে পিটিয়ে সোজা করে দেবে তার আম্মুকে আদর করা হুম?”
রূপ হেসে কুটি কুটি। পাতা আধো আধো বুলিতে বলে,
-” তোমার বড় চাচ্চু কোথায় গেল বলোতো? কলই ধরছে না। তোমার বড় আ’মার বুঝি কষ্ট লাগে না? বুকটা জ্বলছে তো! তাড়াতাড়ি আসতে পারে না? আসুক সে! খুউব করে বকে দিবো! সব কষ্ট দুঃখ কেন নিজের ভিতর পুষিয়ে রাখবে? শেয়ার করলে কি তার ইগোর রফাদফা হবে? তাঁর জন্য যে একজন চিন্তায় অক্কা যাবার পথে সে খেয়াল মোটেই নেই।”
রূপ আ আ করে সব শুনে পিটপিট করে চেয়ে আবার হাসে। পাতা তার গালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে সেঁটে নিয়ে গুনগুন করে,
‘সে যে কেন আসে না
কিছু ভালো লাগে না
এবার আসুক আমি তাঁরে..’
গুনগুন থামিয়ে রূপকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” কি করবো বলতো রূপ? হুম ? শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনেক গুলো আদর করে দিবো পঁচা নাক উঁচু ম্যানারলেস লোকটাকে! ঠিক হবে না?”
রূপ হাত তালি দিয়ে সায় জানালো।
অপর দিকে ভোর সাইকেল স্ট্যান্ড করে দাঁড়িয়ে আছে। মুখাবয়ব ভারী সন্দেহভাজন। ফর্সা ফুলো গাল লাল টুকটুকে হয়ে আছে।নাকের পাটা ফুলছে। নোনাজলে ভাসমান বড় বড় কালো চোক্ষু যুগল পাতা ও রূপের উপরে নিবদ্ধ। ভেজা চোখের কর্নিয়ায় ভাসমান পাতা রূপের আদুরে মুহূর্ত! সে রাগে সাইকেল থেকে নেমে ঠেলে ফেলে দেয়। আভারি দৌড়ে আসে। আনিকাও সাইকেল নিয়ে এগিয়ে এসে বলে,
-” এই ভোর কি হলো?”
ভোর তার দৃষ্টি স্থির রেখে জবাব দেয়,
-” কিছু না। আমি সাইকেল চালাবো না!”
বলেই হনহন করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়।
পাতা দূর থেকে সবই লক্ষ্য করে। রূপকে কোলে নিয়ে সেও উঠে আসে। ভিতরে প্রবেশ করার আগে আভারিকে আনিকার খেয়াল রাখতে বলে।
পাতা তড়িঘড়ি পা চালিয়ে যায়। গিয়ে দেখে ভোর ড্রয়িং রুমে বসে আছে। নাক টানছে অনবরত। কাঁদছে না তবে চোখের পানি যেকোনো সময় বাঁধনহারা হতে পারে। পাতা রূপকে নিয়ে তার পাশে বসে। ভোর টি শার্ট তুলে নাক মুছে। পাতা আঁচল দিয়ে মুছে দিবে ভোর সরে বসে। রূপ আ আ উ উ করে হাসছে। এটাই যেন ভোরের সহ্য হলো না। সে টি টেবিলে রাখা পানি ভর্তি জগটা লাথি দিয়ে ফেলো দিলো মুহুর্তেই! পাতা অবাক হয়ে বলে,
-” এসব কি ভোর? এরকম কে করে?”
-” আমি করি!”
স্পষ্ট উত্তর। পাতার চোখে মুখে অবাকতা! ভোরের এ রূপ সে তো কখনো দেখেনি! সে রূপকে সোফায় বসিয়ে জগটা তুলে রাখে। প্লাস্টিকের হওয়ায় ভাঙ্গে নি। তবে ফ্লোর পানিতে টইটুম্বর। সে সুফিয়াকে ডাকে গলা উঁচিয়ে।
রূপ সোফায় চুপ করে বসে থাকে না। হাম্পুরা দিয়ে ভোরের কাছে যায়। ভোরের কোলে হাত রেখে উঁকি দিয়ে হেসে আ’মা আ’মা বলে! ভোর ঠাস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় সাথে সাথেই। পাতা থাপ্পড়ের শব্দে এদিকে ফিরে তাকায়। কিছু বলবে এর আগেই ভয়ঙ্কর কান্ড ঘটে যায়।
রূপ থাপ্পড় খেয়ে ভোরের হাতে ছোট ছোট দাঁত বসিয়ে কামড়ে দেয়। ভোর যেন অগ্নি কুন্ডের জলন্ত শিখা! সামান্য কেরোসিনেই সে ভয়ঙ্কর রূপ দেখায়। রূপকে ধাক্কা দেয়। রূপ কাঠের টি টেবিলের উপর পড়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। সাথে সাথেই গলা ফাটিয়ে কান্নার শব্দ! পাতা তড়িৎ বেগে এগিয়ে এসে তাকে তুলে নেয়। মাথা হাত কনুই চেক করে। বাচ্চাটা সর্বোচ্চ গলা উঁচিয়ে কান্না করতে থাকে। পাতা ভোরের দিকে চায় শান্ত চোখে। ছেলেটার চোখে মুখে নেই কোনো অনুতাপের রেশ! যেমনটা সে রোহানকে ধাক্কা দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়ার পর দেখেছিল!পাতা এটা ওটা বলে চুপ করানোর চেষ্টা করে রূপকে। ভোর জলন্ত চোখে সেটা অবলোকন করে!
রুবি এগিয়ে এসে পাতার কোল থেকে ছিনিয়ে নেয় ছেলেকে। রূপ কান্না করতে করতে দম আটকে যায়। রুবি হাঁউমাঁউ করে কেঁদে ওঠে। পাতা রূপের বুকে পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। মাথা ধরে ঝাঁকুনী দেয়। রূপ আবারো কেঁদে ওঠে। পাতা তাকে নিয়ে বেসিনে চলে যায়। মাথার বা পাশে ফুলে উঠেছে নিমিষেই। পানি দিয়ে রুবিকে বলে বরফ আনতে। রুবি বরফ এনে নিজ ওড়নায় মুড়ে ছেলের মাথায় ধরে। রূপে কাঁদছে অনবরত। সাথে রূবিও। আসমা বেগম,সুফিয়া,মিনু সবাই এগিয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে! রুবি ক্রন্দনরত ছেলেকে বুকে নিয়ে বরফ ডলতে ডলতে পাতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” পাতা? তুমি কিন্তু সাক্ষী! আমার ছেলেটা মরতে মরতে বাঁচলো! সব ঘটনা তোমার সম্মুখেই ঘটেছে। আমিও তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী!”
রূপের কান্না কিছুটা থেমে আসে। রুবি ছেলেকে নিয়ে ভোরের সামনে বসে মাতৃদুগ্ধপান করায়! রুবির শান্ত নজর চুপটি করে বসে থাকা ভোরে নিবদ্ধ।
পাতা হাত পা কেঁপে উঠলো যেন! অজানা আশঙ্কায় বুক দুমড়ে মুচড়ে ধরে। আসমা বেগম পাতার কাঁধে হাত রেখে গম্ভীর মুখে বলে,
-‘ হয়েছেটা কি?”
পাতা যেন হুঁশে ফেরে। ভোরের কাজটা একদম ঠিক হয় নি। সে জড়ানো গলায় বলে,
-” ওই রূপ পড়ে গেল মা! আমি ধরবো.”
রুবি গলা উঁচিয়ে শক্ত গলায় বলে,
-” পড়ে যায় নি আমার রূপ! সত্য কেন লুকাচ্ছো?চর মেরেছে ভোর। ধাক্কা দিয়ে ফেলেও দিয়েছে। কারণটাও আমি গেস করলাম নিশ্চয়ই ভোরের মা’কে সে মা ডেকেছে তাই নয় কি বড় ভাবী?”
পাতা অসহায় চোখে তার দিকে তাকায়। ভোর এখনো সেভাবেই বসে আছে মাথা নিচু করে। যেন কোনো পুতুল বসে আছে। আনিকা এগিয়ে এসে মায়ের কাছে বসে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-” পঁচা ভোর! আমার ভাইকে মারলি কেন? আমি চাচ্চুকে বলে দিবো!”
-” ভয় পাই না তোর চাচ্চুকে!”
শক্ত গম্ভীর গলা ভোরের! পাতা চমকে উঠে এগিয়ে যায়। ভোরের পাশে দাঁড়িয়ে হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করে। ভোর নিরেট! সে নড়ে না শক্ত হয়ে বসে থাকে।
আসমা বেগম এগিয়ে এসে ভোরকে ধমকে বলে,
-” বেয়াদব হচ্ছো দিন দিন! রূপকে মেরেছো কেন? ছোট বাচ্চা রূপ। ভাই হয় না তোমার? হুম?”
ভোর রাগে কাঁপছে অনবরত। পাতা ভোরের আচরণে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই ভোরকে সে মোটেই চেনে না। এ কেমন ধ্বংসযজ্ঞ রূপ তার! সে ভোরকে জোড় করে তুলে জড়িয়ে বলে,
-” মা ছোট বাচ্চা। ভুল হয়ে গেছে। আমি বকে দেব! সত্যিই! রূবি আপু আমি সত্যিই শক্ত করে বকে দেবো! ওর বাবার কানে দিও না কেউ!”
আসমা বেগম কিছু বলবে এর আগে রুবি পাতার কথা টেনে বলে,
-” বড় ভাবী? এটা কোনো ছোট খাট ব্যাপার মোটেই না। প্রায়ই আমার ছেলের পিঠে গালে লাল দাগ থাকে। আমি প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও একদিন দেখি ভোর ওর গালে চিমটি কাটছে। আমি কাছে গিয়ে দেখি লাল হয়ে আছে। বুঝতে পারি এর কারণ কি! আর আজ তুমিও দেখলে আমিও দেখলাম! ব্যাপারটা মোটেই স্বাভাবিক নয়। আমার ছেলেটা দম আটকে গিয়েছিল ভাবতে পারো কি হতে পারতো? আমি এটা মেনে নেব না!”
সবাই স্তব্ধ। পাতার চোখ মুখ বিবর্ণ হয়ে আছে। ভোর পাতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। পাতা আবার বলে,
-” রুবি আপু ছোট বাচ্চা! ওদের কি আর বুঝ আছে বলো..”
রূবি যেন ক্ষেপে গেলো।
-” ও ছোট বাচ্চা? আমারটা কি? তুমি ওর সাফাই গাইছো? ভালো! ও বাচ্চা না মেন্টালি সিক! সাইকো বলে না? সেরকম কিছু! এখন বিশ্বাস করছো না। ছেলের জন্য দরদ উথলে উঠেছে।শোন? যখন নিজের বাচ্চা হবে তখন বুঝতে পারবে! অবশ্য নাও হতে পারে। দা গ্রেট অরুণ সরকার ছেলে অন্ত প্রাণ। বাচ্চা নাও নিতে পারে!”
পাতা শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে কিছু পল। নিজেকে সামলে ঠান্ডা মাথায় বলে,
-” আপু বাচ্চা ছেলে ভুল করেছে। বাচ্চারাই তো ভুল করে। তাই বলে সে মেন্টালি সিক নয়। আমি ওর হয়ে ক্ষমা চাইছি। ভোরও স্যরি বলবে। তুমি প্লিজ কথা বাড়িও না!”
রুবি ছেলেকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।রূপ কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। সে পূর্বের চেয়েও দ্বিগুন তেজে বলে,
-” আমি কথা বাড়াচ্ছি? হুম? আমার ছেলেটা দম আটকে মরতে বসেছিল আর আমি কথা বাড়াচ্ছি। বড় ভাবী..”
আর বলতে পারে না। ভোর সোফা থেকে একটা কুশন তুলে রুবিকে ঢিল মেরে চিল্লিয়ে বলে,
-” ভোরের আম্মুকে বকছো কেন তুমি? ভোর আর কখনো ভালোবাসবে না তোমাদের!”
পাতা ভোরকে আবার জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়। ‘বাবা আমার শান্ত হও’ বলে বিড়বিড় করে। ভোর শান্ত হয়ে আসে। রুবি এবার কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
-” দেখেছো বড় ভাবী? কতটা বেয়াদব বনে গেছে। এরপরও বলবে এগুলো বাচ্চামো? হি’জ মেন্টালি সিক। জলদি কাউন্সিলরের কাছে যেতে পারো! নইলে ভবিষ্যতে তুমিই বেশি পস্তাবে। মিলিয়ে নিও আমার কথা! কতটা ভালোবাসি ওই বাচ্চাটাকে। মা চলে যাওয়ার পর কম যত্ন নিয়েছি! এখন দেখো? কথায় আছে না আপন আপনই হয় আর পর পরই।”
আসমা বেগম এগিয়ে এসে ধমকে রুবিকে বলে,
-” অনেক হয়েছে রুবি! এখন বেশিই বলছো! যাও ছেলেকে নিয়ে!”
রুবি যায় না ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ কেমন যেন নীরবতা বিরাজ করে। থমথমে ভাটা ফুটে ওঠে। কারো মুখেই রা নেই। সব চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে; শুধু নিঃশ্বাসের আনাগোনা! ভোরের ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাসের আওয়াজ শোনা যায় সাথে নাক টানার ক্ষীণ শব্দ। সব মিলিয়ে যেন আগত ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস! সেই ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসে ড্রয়িং রুমে। হাতের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে এগিয়ে আসে অরুণ সরকার। তার হাঁটার শব্দে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। শ্বাস নিতেও যেন ভূলে গেলো! এখন কি হবে? অরুণ সরকারের আগমনে সবচেয়ে বেশি ঘাবড়ে যায় পাতা ও মিনু। মিনু ধীর পায়ে এগিয়ে এসে পাতার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে পাতাকে ইশারা করে ভোর নিয়ে সরে যেতে। পাতা যেন হঠাৎ স্বয়ংবৎ হারিয়ে ফেলে। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগে তাঁর।এখন এই তীব্র বেগে ঘনিয়ে আসা তুফানকে সে কিভাবে সামাল দিবে। সে ভোরকে আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে আঁচলে লুকিয়ে নিয়ে করুণ চোখে চায়। অরুণকে দেখে রুবি ছেলেকে নিয়ে এগিয়ে এসে বলে,
-” ভাইয়া ভোর..!”
অরুণ হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয়। ব্যাগটা টি টেবিলে ছুড়ে ফেলে পাতার উদ্দেশ্যে বলে,
-” ওকে ছাড়ো! ভোর এদিকে এসো?”
ভোর পাতাকে ছেড়ে দিয়ে গম্ভীর মুখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। পাতা ভোরের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-‘ ভোরের বাবা আমি সব বলছি। বাচ্চা ছেলে..”
তাকেও থামিয়ে দেয় অরুণ! শান্ত ঠান্ডা গলায় বলে,
-” সবটা শুনেছি আমি! তুমি সরবে না? এই ভোর রুমে চলো? চলো?”
বলেই ভোরের বাহু টেনে ধরে হাঁটা দেয়। ভোর চুপচাপ পা চালায়। ভয়ে পাতার বুকটা দুরুদুরু করে। সে ভোরকে টেনে ধরে অরুণের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে,
-” বাচ্চা ছেলে ভুল হয়েছে ক্ষমাও চাইবে। আমি কথা বলছি ওর সাথে!”
অরুণ ভয়ঙ্কর চোখে চায়। পাতার ভেতরটা যেন নড়েচড়ে ওঠে। অরুণের লালিমায় ছেয়ে যাওয়া ওই ছোট ছোট ভয়ঙ্কর চোখের ভাষা খুবই কঠোর। চোয়ালদ্বয় কঠিন; হাতের কপালের শিরা উপশিরা ত্বকের উপরিভাগ থেকেই দৃশ্যমান!ভোর পাতার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অরুণের হাত ধরতেই অরুণ সপাটে তাঁর ফুলো নরম গালটায় সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ভোর ছিটকে পড়ে ফ্লোরে। মিনু ডুকরে কেঁদে ওঠে নিমিষেই। পাতা তড়িৎ বেগে ভোরকে তুলে বুকে জড়িয়ে নেয়। ভোর কাঁদে না, ফোপায় না। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পাতার বুকে মুখ গুঁজে থাকে। অরুণ ঝটকায় পাতার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলোপাথাড়ি কয়েকটি থাপ্পড় দেয় পিঠে, বাহুতে। পাতা শব্দ করে কেঁদে ওঠে। অরুণের হাত থেকে ভোরকে ছাড়িয়ে নেয়। ছোট্ট ভোর এখনো অনুভূতিহীন! টু শব্দটি করে না। আসমা বেগম, আভারি এগিয়ে আসে পাতার কাছে। অরুণ আবার তেড়ে আসলে পাতা তাকে ধাক্কা দিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-” খবরদার ভোরের বাবা! আর একটা মার ছেলেটার গায়ে পড়লে আমি পাতা আপনাকে তোয়াক্কা করবো না মোটেও!”
রুবি গম্ভীর গলায় বলে,
-” ভাইয়া মারছেন কেন ছেলেকে? ছেলেটাকে মেরে সমস্যার সমাধান মোটেই হবে না! আরো বিগড়ে যাবে। আর আপনি ছেলেটাকে মারলেন না মনে হলো আমি প্রতিবাদ করেছি বলে আমার গালেই মারলেন!”
অবাধ্য বেঈমান আঁখিতে ভরে ওঠা নোনা জল গড়িয়ে পড়তে চায়! অরুণ আঙ্গুল দিয়ে মুছে হেসে বলে,
-” তুমি ভুল বুঝছো রুবি! আমার ছেলেটা জেদি! একটু পসেসিভ! সবার ক্ষেত্রেই কিন্তু না। পাতাকে একটু বেশিমাত্রায় ভালোবেসে ফেলেছে তাই ওকে অন্য কেউ মা ডাকে সেটা সহ্য করতে পারে না! আজ যেটা করেছে তার পানিশমেন্ট পাবে সে। তবে আমার কলিজা মেন্টালি সিক নয় রুবি!”
আসমা বেগম শান্ত গলায় বলে,
-” অরুণ ঘরে যাও! পড়ে কথা হবে! যাও! রুবি? চলো আমার সাথে।”
বলে রুবির বাহু ধরে টেনে নিতে চায়। রুবি যায় না। তাঁর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অরুণের সম্মুখীন হয়ে বলে,
-” মা ব্যাপারটা এখনি মিমাংসা হওয়া উচিত! আপনি হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবেন না! বড় ভাবী সাথেই ছিল! আমার ছেলেটাকে কিভাবে থাপ্পড় দিলো। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো! দেখুন মাথায় জখম হয়ে গেছে। বড়বড় ক্ষতি হয়েছে কি না বলা যাচ্ছে না। ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে দম আটকে মরতে বসেছিল! আমার ছেলেটার কিছু হলে তাঁর দায়ভার কে নিতো? আপনার ছেলে যেমন আপনার কলিজা আমাদের ছেলেও আমাদের প্রাণ! আপনার খারাপ লাগতে পারে বাট আমি বলবো ভোরকে কাউন্সিল করানোর দরকার!”
অরুণ পাতার বুকে লুকিয়ে থাকা ছেলের অবয়ব দেখে শক্ত গলায় বলে,
-” আমার ছেলে ভুল করেছে আমি স্বীকার করছি। আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি। ভোরও চাইবে। কিন্তু তুমি আমার ছেলেকে মেন্টালি সিক বলে পাগল প্রমাণ করবে আমি অরুণ সরকার সহ্য করবো না।”
একটু থেমে আবার বলল,
-” আমার অবুঝ ছেলেটা যখন দেখতো তুমি আনি মামুনিকে আদর করছো, খাইয়ে দিচ্ছো! তখন তোমার পিছু পিছু ঘুর ঘুর করতো একটু আদরের আশায়! আবদারও করতো। তখন আনি মামুনি কেমন রিয়েক্ট করতো? ওর উপর চিল্লিয়ে উঠতো কিন্তু। ওরটা স্বাভাবিক হলে আমার ছেলে কেন মেন্টালি সিক হবে? ডোন্ট মাইন্ড!আমার ছেলে ভুল স্যরি অপরাধ করেছে আমি সর্বোচ্চ শাস্তি দিবো! চাইলে তোমরাও দিতে পারো আমি কিছু মনে করবো না। বাট ওকে মেন্টালি সিক বলবে এটা আমি মোটেই সহ্য করবো না।”
রুবি এবার তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলে,
-” আমি জানি সেটা। আপনাকে কিছুটা হলেও চিনি! আরিয়ানের থেকে আপনার স্বভাবের কথাও কিছুটা জেনেছি! আমার কথায় কিছু মনে করবেন না! আপনার স্বভাব আপনার ছেলে পেয়েছে! ওর এসব অ্যগ্রোসিভ আচরণে আজ আমার ছেলেটা মরতে মরতে বেঁচেছে ভবিষ্যতে..”
আসমা বেগম ধমকে ওঠে। রুবিকে চোখ রাঙিয়ে অরুণের উদ্দেশ্যে বলে,
-” ওর কথায় কিছু মনে কোরো না। বাচ্চার এ অবস্থায় মাথা ঠিক নেই!”
রুবি তাচ্ছিল্যভাবে তাকায়। অরুণ মুখাবয়ব আগের মতোই।
-” ছোট মা? বলতে দাও! ঠিক বলেছেন। আমার ছেলে আমার মতো হবে না? লাইক ফাদার লাইক সন! আমরা দুজনেই মেন্টালি সিক! আন্তরিক ভাবে দুঃখিত যে আমাদের জন্য তোমার বাচ্চাটার এই অবস্থা! তবে নিশ্চিন্তে থাকতে পারো! খুব শীঘ্রই এই অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষজন থেকে মুক্তি পেতে চলেছো!”
বলে টি টেবিল থেকে ব্যাগটা তুলে পাতার কাছে এগিয়ে যায়। ভোরকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। পাতা ছাড়ে না মোটেও। অরুণ ছোট করে বলে,
পাতা বাহার পর্ব ৪৬
-” রুমে চলো ওকে নিয়ে!”
পাতা মিনুর দিকে একবার তাকিয়ে ভোরকে কোলে তুলে নেয়। ভোর মায়ের গলা জড়িয়ে থাকে। রুবির ও রূপের দিকে একনজর দেখে পাতার কাঁধে মুখ লুকিয়ে রাখে।