পারমিতা পর্ব ২২
Nabila Ahmed
ড্রাইভারকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে অরিয়ন মিতার সব বই আর প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় কিনে নিয়ে এসেছে। আগুন লাগার কারণে মিতার রুমের কিছুই আর বাঁচানো যায় নি।
–হঠাৎ করে আগুন লাগার বিষয়টা একবার ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিৎ।
ওয়াহিদ চৌধুরী বলে।
হাবিব চৌধুরীর স্ট্যাডি রুমে অরিয়ন,আবরার,ওয়াহিদ চৌধুরী ও হাবিব চৌধুরী মিলে আগুন লাগার বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।
–আমার ও তাই মনে হচ্ছে।
একমত প্রসন করে অরিয়ন।
–আমি বাড়িতে গার্ড হিসেবে পুলিশ দিতে বলবো কাল থেকেই।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–আরিয়ান বাবা, তোকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো। তুই না থাকলে মিতার যে কি হতো।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–এরকম করে বলো না চাচ্চু, মিতা কি আমার কিছু হয় না? ওকে যেমন তোমরা ভালোবাসো তেমন আমিও ভালোবাসি।
অনায়াসে বলে ফেলে আবরার।
অরিয়ন চুপ করে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল,কথাটা শোনা মাত্রই নিজের হাত যেন আপনা-আপনি মুঠ হয়ে গেলো। মিতার প্রাণ বাঁচানোর জন্য একদিকে যেমন আবরারকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে অরিয়নের অপরদিকে, কথাটা শুনে ইচ্ছে করছে দুটো ঘুষি দিতে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–আমি ভাবছিলাম, মিতাকে গেস্ট রুমে না রেখে ও বরং আমার রুমেই থাকুক। আমি গিয়ে গেস্ট রুমে বা অরিয়ন ভাইয়ার সাথে ঘুমাবো।
অরিয়ন আর মিতার মধ্যে হওয়া কথা সম্পর্কে বেখবর আবরার সবার সাথে নিজের মতামত শেয়ার করে।
–মিতা আমার সাথে থাকবে। যতোদিন না ওর রুম ঠিক হচ্ছে ততোদিন।
কেউ কিছু বলার আগেই অরিয়ন বলে উঠে।
অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয়ে বড় বড় চোখ করে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে আবরার। অপরদিকে, হাবিব চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী যেন অরিয়নের কথা শুনে খুশি হলেন।
–কেনো? মিতা কেনো তোর রুমে থাকবে?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে আবরার।
–আরিয়ান।
গম্ভীর কন্ঠে ডাক দেয় হাবিব চৌধুরী।
–নো, হোয়াট ইজ দিস বাবা?
হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।
–মিতা কেনো ওর রুমে থাকবে? শী ইজ এন এডাল্ট,শী নিডস হার ওন রুম।
চেচিয়ে বলে আবরার।
–বিকজ শী ইজ মাই ওয়াইফ।
নিজের জায়গায় থেকে উঠে গিয়ে চেচিয়ে বলে অরিয়ন।
–যাকে তুই ওয়াইফ মানিস না। কি ৬ বছরের ভালোবাসা ৯ মাসেই শেষ? নাও ইউ ওয়ান্টস হার?
ব্যঙ্গ করে বলে আবরার।
–আরিয়ান।
চেচিয়ে বলে অরিয়ন।
–আরিয়ান সাবধানে কথা বল।
চেচিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–হোয়াট বাবা, হোয়াট? শী ওয়াজ মাইন। আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো ওর সাথে।
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে আবরার।
–কিহ?
অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।
–কি বললি তুই?
আবরারের দিকে দু কদম এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
আবরারও নিজের জায়গা থেকে নড়লো না। অরিয়নের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল।
–অরিয়ন শান্ত হ বাবা। আর আরিয়ান, অতীত কেনো উঠাচ্ছিস। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
অরিয়নকে ধরে বলে হাবিব চৌধুরী।
–আরিয়ান এসব কি বলছে বাবা? ও আর প..কি সব বলছে ও?
মিতার সাথে যেন অন্য কোনো পুরুষের নামও নিতে পারলো না অরিয়ন। নিজের বাবার দিকে সত্যি জানতে মরিয়া হয়ে তাকিয়ে রইল অরিয়ন।
–তুই কেনো বিয়ে করেছিস মিতাকে?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে আবরার।
–আমি কেনো বিয়ে করেছি তা এই বাড়ির সবাই জানে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–ঠিক একই কারণে ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। তোর বিয়ের পর আমা..
–শাট আপ, শাট দা ফা* আপ আরিয়ান। আমি কিছু শুনতে চাই না।
আবরার থেকে দূরে সরে এসে রাগে চেচিয়ে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কি হচ্ছে তা নিজেও বুঝতে পারছে না। কিন্তু আবরার থেকে দূরে সরে না আসলে উলটা পালটা কিছু করে বসবে তা ভালোই জানে অরিয়ন।
–আরিয়ান চুপ কর। এইসব কথা বলার সময় এখন? অরিয়ন আর মিতার বিয়ে কোন অবস্থায় হয়েছে তা কি জানিস না তুই? তাহলে এখন কেনো এতো কথা হচ্ছে?
চেচিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–বাট বাবা…
–নিজের রুমে যা আরিয়ান।
আদেশ করেন হাবিব চৌধুরী।
–বা…
–নিজের রুমে যেতে বলেছি।
হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আবরার।
ওয়াহিদ চৌধুরী নিজের জায়গায় বসে দু হাত দিয়ে মাথা ধরে রেখেছে। দু ভাইয়ে ভাইয়ে এখন যে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে তা ভালোই বুঝতে পারছেন তিনি।
–আরিয়ান যা বললো তা যদি সত্যি হয়, তাহলে কাজটা তুমি ভালো করোনি বাবা।
হাবিব চৌধুরীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় অরিয়ন।
–সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো ভাইয়া, এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।
মন খারাপ করে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমাদের হাতে তো কিছুই নেই ওয়াহিদ।
জবাব দেয় হাবিব চৌধুরী।
–আমার কপালটাই খারাপ, বাবা হিসেবে ব্যর্থ আমি। আমার নিজের মেয়ে আমাকে শেষ করে দিয়ে গেলো, আর যেই মেয়ে আমাকে এতো ভালোবাসলো তাকেও আমি তার পাওনা সুখ দিতে পারছি না।
কথাগুলো বলতেই চোখ ভিজে আসলো ওয়াহিদ চৌধুরীর।
–হয়তো এতেই সবার ভালো ছিলো।
ওয়াহিদ চৌধুরীর কাধে হাত রেখে বলে হাবিব চৌধুরী।
–তাই যেন হয় ভাইয়া। আর তা না হলে আমি মিতার কাছে মুখ দেখাতে পারবো না।
–তাই হবে ইনশা আল্লাহ।
–হুম।
বিছানায় বসে আছে মিতা। পাশেই বসে আছে মায়া চৌধুরী। খাবার খেয়ে পেইন কিলার খেয়েছে মাত্র। মিতার সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলে মেয়ের মন ভালো করার চেষ্টা করছেন মায়া চৌধুরী।
অরিয়ন স্ট্যাডি রুম থেকে বের হয়েই দ্রুত হাটতে লাগলো। মনে হচ্ছে কেউ অরিয়নের পুরো শরীরে মরিচ লাগিয়ে দিচ্ছে। এতো কেনো অস্থির লাগছে তা বুঝতে পারছে না অরিয়ন। তাড়াতাড়ি করে নিজের শার্টের প্রথম দুটো বাটন খুলে ফেলে অরিয়ন। বার বার মনে হচ্ছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
“কি ৬ বছরের ভালোবাসা ৯ মাসেই শেষ? ” আবরারের কথাটা যেন বার বার ঘুরছে অরিয়নের মাথায়। “কি সব আজেবাজে বলছিলো আবরার? আমি এখনো আফরিনকে ভালোবাসি, তাতে কি হয়েছে যে আফরিন আমাকে ধোকা দিয়েছে। আমি তাও ভালোবাসি আফরিনকে। আমি মিতাকে চাই না, মিতার জন্য স্নেহ কাজ করে বলেই এতো ভাবি ওর জন্য” বার বার মনে মনে বলতে লাগলো অরিয়ন।
–কি শুনছি এসব আমি?
অরিয়নের সামনা সামনি এসে বলে আনিকা চৌধুরী।
–কি শুনেছো?
বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–ঐ মেয়ে নাকি তোর সাথে থাকবে? তোর রুমে?
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।
–ঐ মেয়ের নাম পারমিতা, মা। আর হ্যাঁ, ও আমার সাথেই থাকবে।
উত্তর দেয় অরিয়ন।
–সব কিছু জানার পরও? এটা জানার পরও যে তোর মা ঐ মেয়েটাকে দেখতে পারেনা তাও? ওর প্রতি তোর মায়া কি কম ছিলোনা? বিয়ে করেছিস তা কি কম ছিলোনা? এখন ওর সাথে তোর সংসার করার ইচ্ছাও হচ্ছে?
আনিকা চৌধুরীর প্রতিটা কথায় যেন শুধু ঘৃণা প্রকাশ পাচ্ছে।
–মা, কি সব আজেবাজে বলছো তুমি। আমি ওর সাথে সংসার করছি না। ওর এখন থাকার জায়গার দরকার তাই থাকবে।
উত্তর দেয় অরিয়ন।
–থাকার জায়গার অভাব নেই এই বাড়িতে অরিয়ন। ও দরকার হলে আরিয়ানের রুমে থাকবে। আরিয়ানকে আমি গেস্ট রুমে প..
–পরী আমার সাথেই থাকবে।
কোনোরুপ সমোঝোতার সুযোগ না রেখে জানিয়ে দেয় অরিয়ন।
–তুই বদলে গেছিস অরিয়ন। তুই বদলে গেছিস। তুই দুর্বল হয়ে পরেছিস ঐ অলক্ষী মেয়েটার জন্য।
কথাটা বলেই কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে যায় আনিকা চৌধুরী।
–ফা* ফা* ফা* ফা*।
নিজের মায়ের এরূপ অবস্থা দেখে রাগে বলতে থাকে অরিয়ন।
বিছানায় শুয়ে আছে মিতা, মায়া চৌধুরী মিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
–তোমার মনে আছে মা? আমার মাথায় যখন তুমি হাত বুলিয়ে দিতে,যখন আপু কীভাবে হিংসা করতো? ঝগড়া শুরু করে দিতো আমার সাথে।
কথাটা বলতেই যেন হাসি ফুটে উঠে মিতা আর মায়া চৌধুরীর মুখে। পরক্ষণেই হাসি পরিণত হয় কষ্টে। দু জনেরই চোখ ভিজে এসেছে।
–চাচি।
হুট করে রুমে ঢুকেই মায়া চৌধুরীকে ডাক দেয় অরিয়ন।
–হ্যাঁ, বলো অরিয়ন।
জবাব দেয় মায়া চৌধুরী।
–মিতার সব কিছু আমার রুমে নেওয়ার ব্যবস্থা করুণ।
বলে অরিয়ন।
–আমি ওখানে যাবো না। এখানে বা আমাদের বাড়িতে থাকবো।
হুট করে ভয়ে ভয়ে বলে উঠে মিতা।
–ওয়াহিদের সাথে আমার কিছু কথা ছিলো, তোমরা থাকো আমি আসছি একটু পর।
মায়া চৌধুরী কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মিতার কথা শুনে অরিয়ন তখন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও এখন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে মিতার কথা বলার। মায়া চৌধুরী রুম থেকে বের হতেই ভয়ে ভয়ে গুটিমেরে থাকলো মিতা। যদিও সেই থাপ্পড়ের পর থেকে ঐরকম ঘটনা আর ঘটেনি তাও মিতার মন থেকে ভয়টা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
–কি বলছিলি তুই? কি করবি না?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–আমি এখানে থাকতে চাই। ঐ রুমে গিয়ে কি করবো আমি।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।
–তুই কি….তুই কি আমাকে আর ভা…ভালোবাসিস না?
হুট করে প্রশ্ন করে বসে অরিয়ন।
–এহ?
হুট করে অরিয়নের এই প্রশ্ন শুনে যেন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো মিতা। ঐ রুমে না যাওয়ার সাথে এই প্রশ্নের কি সম্পর্ক তা বুঝতে পারছে না।
–বল…ভালোবাসিস না?
মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন।
–বাসি।
মাথা নিচু করে জবাব দেয় মিতা।
মিতার কথাশুনে যেন হাফ ছাড়লো অরিয়ন। মনে হচ্ছিলো এতোক্ষণ শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে রেখেছিলো।
–তাহলে আমার সাথে থাকতে চাচ্ছিস না কেনো?
মিতার সামনা সামনি গিয়ে বেডের কাছে হাটু ভেঙ্গে বসে অরিয়ন।
–ঐ ভুল আমি আর করবো না, প্রমিস লাভ।
মিতার কাছাকাছি গিয়ে কোমল কণ্ঠে বলে অরিয়ন।
এতোদিন পর অরিয়নের কণ্ঠে এমন কোমলতা দেখতে পেয়ে মিতার খুশি হওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু মিতার ভয় যেন আরও বাড়ছে। অরিয়নের চোখে অজানা এক আনহেলথি কিছু দেখতে পারছে মিতা।
–না।
ভয়ে ভয়ে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনতেই যেন সব কোমলতা দূর হয়ে গেলো অরিয়নের চোখ থেকে। কঠোর দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
–কি বললি? যাবি না তুই?
হুট করে রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে অরিয়ন।
–না।
নিজে একটু কঠোর থাকার চেষ্টা করে বলে মিতা।
–তুই যাবি না? তোর বাপও যাবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন ভাইয়া।
রেগে চেচিয়ে উঠে মিতা।
–আহ…
মিতার কথা শুনামাত্রই অরিয়ন গিয়ে মিতার দুই গাল একসাথে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে। হঠাৎ করে ধরাতে আর শরীরে আগে থেকে ব্যাথা থাকার কারণে শব্দ করে উঠে মিতা।
–ভাইয়া ডাকতে না করেছি না?হুম?
মিতার কাছাকাছি নিজের মুখ নিয়ে বলে অরিয়ন।
–ব্যাথা….ব্যাথা লাগছে।
কোনোমতে বলে মিতা।
–ঐ রুমে যাবি কি না বল?
আবারও বলে অরিয়ন।
মিতা নিজের মাথা নাড়িয়ে না বলে।
–ওকে।
কথাটা বলেই মিতার থেকে দূরে সরে আসে অরিয়ন।
মিতার নিজের হাত দিয়ে নিজের গাল ঘোষতে থাকে।
–এখন ৭ টা বাজে..
অরিয়নের কথা শুনতেই মিতা একবার অরিয়নের দিকে তাকায় আর একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নেয়।
–৯ টার মধ্যে তোকে যদি আমার রুমে না দেখি, তাহলে ৯ টা ১ মিনিটে এই রুমে আগুন জ্বলবে। আর এই আগুন ততোক্ষণ নিভবে না যতোক্ষণ না তুই ঐ রুমে যাচ্ছিস। তাতে যদি এই পুরো বাড়ি পুরে যায় তাহলে তাই হবে।
অনায়াসে কথাগুলো বলে ফেলে অরিয়ন।
মিতার আর কোনো কথা শোনার প্রয়োজনবোধ না করেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় অরিয়ন। মিতাও অরিয়নের কথায় গুরুত্ব দিলো না। সামান্য একটা রুমের জন্য যেই বড় হুমকি দিয়ে গেলো মনে হচ্ছে মিতা একজন ভিআইপি। নিজের গাল ঘোষতে ঘোষতে বিছানায় শুয়ে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে মিতা।
–বস,প্লান মাফিক কাজ হয়ে গেছে। এসি ব্লাস্ট হয়েছে।
–যা বলেছিলাম তা কি ঠিক মতো করছিস তোরা?
–জি বস। আমরা মেয়েটার দিকে সব সময় নজর রাখছি। যদিও এখন একটু নজর রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাও আমাদের আটকাতে পারবে না।
–গুড। এবারও যদি ওরা পিছিয়ে না পড়ে তাহলে পরবর্তীতে আর কোনো ওয়ার্নিং দেওয়া হবে না। চৌধুরীকে বুঝতে হবে ভয় কাকে বলে।
নিজের কপালে আর মাথায় আলতো করে কারো স্পর্শ অনুভব করতেই মিটমিট করে চোখ খুলে মিতা। মিতার পাশেই বসে আছে আবরার। মিষ্টি হাসি ফুটে আছে মুখে।
–আরিয়ান ভাইয়া।
কথাটা বলেই উঠে যেতে নেয় মিতা।
–উঠিস না। শুয়ে থাক তুই।
মিতাকে বাধা দিয়ে আবারও শুয়িয়ে দেয় অরিয়ন।
–ধন্যবাদ তোমাকে আ…
–ধুর পাগলি, কিসের ধন্যবাদ? তোকে রক্ষা করা আমার কাজ। তার জন্য কি ধন্যবাদ দিতে হবে আমাকে?
–ইউ আর দি বেস্ট আরিয়ান ভাইয়া।
আলতো এক হাসি দিয়ে বলে মিতা।
–কেমন লাগছে তোর? শরীর ভালো আছে? কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
প্রশ্ন করে আবরার।
–না, সামান্য ব্যাথা এই আর কি। আর কোনো সমস্যা নেই।
জবাব দেয় মিতা।
–আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তোকে ফ্লোরে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকতে দেখে।
মন খারাপ করে বলে আবরার।
–আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই।
বলে মিতা।
–মিতা?
মিতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডাক দেয় আবরার।
–জি?
–তুই জানিস যে, আমি তোকে খুব ভালোবাসি।
মিতার হাত ধরে বলে আবরার।
–আমি ও তোমাকে খুব ভালোবাসি আরিয়ান ভাইয়া।
মিতার জবাব শুনে আবরারের মনটা খারাপ হয়ে যায়। আবরার যে ভালোবাসার কথা বলেছে মিতা যে সেই ভালোবাসার কথা বলেনি তা আবরার ভালোই জানে। কেনো সবটা এতো জটিল হয়ে গেলো তা বুঝতে পারছে না আবরার। সব কিছু ঠিক থাকলে এখন প্রায় ১০ মাস হয়ে যেতো অরিয়ন আর আফরিনের বিয়ের। এর মধ্যে মিতা আর আবরারের বিয়েটাও হয়ে যেত। কিন্তু, মিতা এখন বড় ভাইয়ের বউ হিসেবে আবরারের সামনে রয়েছে। নিজের ভালোবাসার কথা কিভাবেই বা মিতাকে বলবে এখন আবরার? না বলেও যে থাকতে পারছে না।
পারমিতা পর্ব ২১
মিতার প্রতি অরিয়নের পাগলামি সবার নজরের অগোচরে থেকে গেলেও আবরারের অগোচরে যেতে পারেনি।
এই প্রথম আবরার,অরিয়নের চোখে যা দেখতে পেলো তা যেন আফরিনের জন্যও কোনোদিন দেখেনি। এই পাগলামি দিন দিন যতোই বাড়বে ততোই মিতা আবরারের থেকে দূরে সরে যাবে তা পানির মতো পরিষ্কার আবরারের কাছে।
“আচ্ছা মিতা কী কোনোদিন আমার হবে” মনে মনে ভাবে আবরার।
