পারমিতা পর্ব ২৬

পারমিতা পর্ব ২৬
Nabila Ahmed

মিতার ঘুম ভাঙ্গে গলায় আর ঘাড়ে কারও স্পর্শ অনুভব করতেই। মিটমিট করে চোখ খুলতেই দেখতে পায় পাশেই মিতাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে অরিয়ন। মিতার ঘাড়ে নিজের মুখ গুজে রেখেছে। মিতার ঘাড়ে আর গলায় অনবরত চুমু দিয়ে যাচ্ছে অরিয়ন।
–রিয়ন?
ধীরে ধীরে বলে উঠে মিতা।
অরিয়নের চুমু দেওয়ার কারণে মিতার যেমন শিহরণ জাগছে ঠিক তেমন কাতুকুতু লাগছে খুব।
–রিয়ন?
আবারও ডাক দেয় মিতা।
–হুম লাভ?
চুমু খেতে খেতেই জবাব দেয় অরিয়ন।
–আমার ক্লাস আছে আজকে, উঠতে হবে।
নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের বুকে ধাক্কা দিতে গিয়ে বলে অরিয়ন।

–যা, আমি কি ধরে রেখেছি?
কথাটি বলেই মিতার এগিয়ে দেওয়া হাত শক্ত করে বিছানায় চেপে ধরে অরিয়ন।
–হাহহাহহাহাহাহাহহা
অনেক চেষ্টা করেও মিতা আর নিজের হাসি আটকে রাখতে পারেনি। নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি অরিয়নকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে হাসতে থাকে মিতা।
–আমা..আমার কাতুকুতু লাগছে..হাহাহাহাহ…সরি…হাহাহহহা।
হাসতে হাসতে বলে মিতা।
অরিয়ন অপলক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। দিন দিন মিতা যেন আগের থেকে বেশি সুন্দরী হয়ে যাচ্ছে।
–তুমি কি অফিসে যাবে? আমার ক্লাসে যেতে হবে আজ থেকে।
হাসতে হাসতে বিছানা থেকে উঠে বলে মিতা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–যাবো, যাবার পথে তোকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যাবো আমি।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন।
–ওকে।
বলেই ওয়াশরুমে যেতে নেয় মিতা।
–লাভ?
ডাক দেয় অরিয়ন।
–হুম।
নিজের অজান্তেই সারা দেয় মিতা। অরিয়নের কাছ থেকে কথাটা শুনলেই মন ভালো হয়ে যায় মিতার।
–আমি ও আসি?
বাঁকা হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
–কোথায়?
বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে মিতা।
–গোসল করতে।

দাঁত দেখিয়ে বলে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে অরিয়ন।
–নিলর্জ্জ কোথাকার।
কথাটা বলেই দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় মিতা।
দরজা লক করতেই দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় অরিয়ন। দরজার সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে নক করতে থাকে বারবার।
–কাজ হবে না রিয়ন, যাও অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
হাসতে হাসতে বলে মিতা।
অরিয়ন নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আলতো করে হাসলো। ২৯ বছরের অরিয়নের মন যেন ১৭/১৮ বছরের ছেলেদের মতো হয়ে গেছে। এতো শান্তি আর আনন্দ কখন অনুভব করেছিলো ভুলেই গেছে অরিয়ন। আলমারি থেকে কাপড় বের করে চলে যায় গেস্টরুমে।

নাস্তার টেবিলে আজ অরিয়নের পাশের চেয়ারে নিজ থেকেই মিতা বসেছে। আবরার বন্ধুদের সাথে ঢাকা গিয়েছে ট্যুরে। আনিকা চৌধুরী হাবিব চৌধুরীর পাশেই বসে আছে। মিতা আর অরিয়ন আড় চোখে একে অপরের সাথে চোখাচোখি করছে। হাবিব চৌধুরীর নজর থেকে তা বাদ গেলো না। নিজের ছেলের মুখে এতোদিন পর সেই হাসি ফুঁটতে নিজেও হাসে। আনিকা চৌধুরী সব কিছু দেখে যাচ্ছে। কীভাবে তার অরিয়ন মিতার দিকে মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর কিভাবে প্রতিবার মিতা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই হাতের চামচ শক্ত করে ধরে আনিকা চৌধুরী।

গাড়িতে বসে আছে মিতা আর অরিয়ন। মিতার হাত নিজের হাতে নিয়ে মুঠ করে ধরে রেখেছে অরিয়ন। মিতা বাইরের দিকে তাকিয়ে সব কিছু দেখছে।
–কাকা, গাড়ি থামান।
হুট করে বলে উঠে অরিয়ন।
–কেনো? কি হয়েছে?
রাস্তায় কোনো সমস্যা হলো নাকি তা দেখার জন্য বাইরে তাকায় মিতা।
–তেমন কিছুনা। বস এখানে তুই।
কথাটা বলেই গাড়ি থেকে বের হয় অরিয়ন।
অরিয়ন কি করছে তা বুঝতে পারে যখন অরিয়ন গিয়ে ফুলের দোকানে গিয়ে ঢুকে। একটু পরেই রজনীগন্ধা হাতে দোকান থেকে বের হয় অরিয়ন। খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায় মিতা। অরিয়ন এতোটা কেয়ার করবে তা জীবনেও ভাবেনি মিতা।

–নে, তোর না পছন্দ।
গাড়িতে ঢুকে মিতার হাতে দিয়ে বলে অরিয়ন।
–হ্যাঁ।
কথাটা বলতেই চোখের কোণে পানি চলে আসে মিতার।
–কাঁদছিস কেনো? ফুল দেখে? এখনি ফেলে দিচ্ছি দাঁড়া।
বলেই ফুল হাত থেকে নিয়ে যেতে নেয় অরিয়ন।
–না, না। তুমি এতো কেয়ার করছো তাই।
জবাব দেয় মিতা।
মিতার কথা শুনে হেসে দেয় অরিয়ন।
–অভ্যাশ করে নে, এখন থেকে সব সময় এরকম ট্রিটমেন্ট পাবি।
একটু গম্ভীর হয়ে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে হেসে ফেলে মিতা। অরিয়নও হেসে দেয়। মিতার হাত নিয়ে তাতে চুমু খায় অরিয়ন।
কলেজের সামনে এসে গাড়ি দাঁড়াতেই গাড়ির পার্টিশন নামিয়ে দেয় অরিয়ন।

–শব্দ করবি না।
কথাটা বলেই মিতার ঠোঁটে চুমু খেতে থাকে অরিয়ন। মিতাও তাল মিলিয়ে অরিয়নকে চুমু খায়।
একে অপরকে ছেড়ে দিতেই অরিয়ন নিজের কপালের সাথে মিতার কপাল স্পর্শ করে বড় বড় করে শ্বাস নিতে থাকে। পরক্ষণেই আক্রমণ করে মিতার গলায়।
–রিয়ন, আমার ক্লাস আছে।
আস্তে আস্তে বলে মিতা।
–আই নো।
বলেই আবারও একটা চুমু দিয়ে সরে আসে অরিয়ন।
–আই উইল মিস ইউ।
মাথা নিচু করে বলে অরিয়ন।
–মি টু।
কথাটা বলেই আলতো করে অরিয়নের ঠোঁটে চুমু খায় মিতা।
–আই লাভ ইউ সো মাচ, রিয়ন।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়েই রইল। এর উত্তরে কিছুই বললো না।
–যাচ্ছি, লেট হয়ে যাচ্ছে।
বলেই বের হয়ে মিতা।
অরিয়ন গাড়িতে বসে চলে যেতে থাকা মিতার দিকে তাকিয়ে রইল। মিতার কনফেশনে অরিয়ন কোনো জবাব দিতে পারেনি। কি বলবে তা জানা নেই অরিয়নের।

“আই লাভ ইউ সো মাচ, রিয়ন”
“ইউ ডোন্ট ডিসার্ভ হার”
“আই লাভ ইউ সো মাচ, রিয়ন”
“ইউ ডোন্ট ডিসার্ভ হার ”
“ইউ ডোন্ট ডিসার্ভ হার ”
“ইউ ডোন্ট ডিসার্ভ হার ”
কথাটা মন্ত্রের মতো বার বার ঘুরতে লাগলো অরিয়নের মাথায়।
“নো, নো, শি লাভস মি, শি লাভস মি, আই ডিসার্ভ হার। শি ইজ মাইন, মাইন, মাইন” চেচিয়ে একা একাই বলতে থাকে অরিয়ন।
–কি হয়েছে অরিয়ন বাবা?
প্রশ্ন করে ড্রাইভার কাকা।
ড্রাইভারের কথা শুনে যেন নিজের কল্পনার রাজ্য থেকে বের হলো অরিয়ন। নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
–কিছুনা, চলুন।
জবাব দেয় অরিয়ন।

ক্লাসে এসে বসেছে মিতা। সুমাইয়া, ফয়সাল বা ফাহমিদা এখনো কেউ আসেনি। ব্যাগ থেকে বই বের করে পাশের বেঞ্চে সবার জন্য জায়গা রাখে মিতা। নিজের জায়গায় যেতেই দেখতে পায় মোবাইলে মেসেজ এসেছে অরিয়নের নাম্বার থেকে।
অরিয়ন ভাইয়া :
কলেজ থেকে বাড়ি পৌঁছে মেসেজ দিস।
অরিয়নের মেসেজ দেখে মিষ্টি এক হাসি ফুটে মিতার। অরিয়ন এমনটাই হবে মিতা তা ভালোই জানতো। তাই তো বুঝ হওয়ার পর থেকে অরিয়নের মতো একজন ছেলের স্বপ্ন দেখেছিলো মিতা। কিন্তু ভাগ্যে যে স্বয়ং অরিয়ন থাকবে তা জানা ছিলো না মিতার।

ক্লাস শেষ করে মাত্র বাড়িতে ঢুকেছে মিতা। আগামী মাস থেকে মিতার ইন্টারমিডিয়েট এক্সাম শুরু। সব কিছু গুছিয়ে নিতে হবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায় মিতা। বিশাল এক রজনীগন্ধা তোড়া রাখা খাটের উপর। ধীরে ধীরে খাটের সামনে যেতেই দেখতে পায় ফুলগুলো একদম তাজা। তার মানে ফুলগুলো আজকের। ফুলগুলো হাতে তুলে নিজে ঘ্রাণ নিতেই বিশাল এক হাসি ফুঁটে মিতার মুখে। তাড়াতাড়ি করে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে মিতা।

মিতা :
বাড়িতে পৌঁছেছি আমি আর ধন্যবাদ।
অরিয়ন :
ধন্যবাদ চাই না। বিনিময়ে অন্য কিছু চাই।
সাথে সাথে অরিয়নের মেসেজ আসে।
মিতা :
কি?
অরিয়ন :
ভালোই জানিস কি।
মিতা লজ্জায় লাল হয়ে রইল। কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না।
অরিয়ন :
লজ্জা পেয়ে লাভ নেই। ৩০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে থাক। ড্রাইভার এসে নিয়ে যাবে তোকে। ডিনার বাইরে করবো আমরা।
অরিয়নের মেসেজ দেখেই তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হতে চলে যায় মিতা।

রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছে মিতা। বেবি পিংক কালারের গাউন পরেছে মিতা। চুলগুলো খোপা করা। খোপার এক পাশে রজনীগন্ধা ফুল ছিড়ে গুজে দিয়েছে মিতা। ঠোঁটে পিংক কালারের গ্লোজ দেওয়া।
গাড়ির হর্ন শুনতেই তাড়াতাড়ি করে দরজার সামনে যায় মিতা। গাড়ি থামতেই উঠে বসে।
গাড়ি আপন গতিতে চলতে শুরু করেছে। চারিদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। শীতের দিন হওয়াতে খুব তাড়াতাড়ি রাত হয়ে যাচ্ছে এখন। ঘড়িতে ৬:৩০ টা বাজে। কিন্তু চারিপাশ থেকে মনে হচ্ছে গভীর রাত।
৭ টা করে গাড়ি এসে দাঁড়ায় বিশাল এক রেস্টুরেন্টের সামনে। মাঝে মধ্যে পরিবার আর বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়েছে মিতা। কিন্তু এটায় কখনো আসা হয়নি। পুরো রেস্টুরেন্ট বাইরে থেকে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। গাড়ি থেকে বের হতেই শীতের ঠান্ডা হাওয়া স্পর্শ করে মিতার শরীর। কেঁপে উঠে মিতা। ধীরে ধীরে রেস্টুরেন্টের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পায় অরিয়ন দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
দরজার সামনে মিতাকে দেখতেই যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো অরিয়নের। মিতাকে দেখতে সত্যিই কোনো পরীর মতো লাগছে। এতো সুন্দর আর পবিত্র পরী কিভাবে অরিয়নের ভাগ্যে আসলো তা যেন নিজেই বুঝতে পারছে না অরিয়ন।

–ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল, লাভ।
নিজের হাত মিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন।
মিতা মিষ্টি এক হাসি ফিরিয়ে দিয়ে অরিয়নের হাতে হাত রাখে। অরিয়ন মিতাকে নিয়ে চলে যায় নিজেদের টেবিলে। ওয়েটার আসতেই অরিয়ন মিতার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার দেয়। অরিয়ন আর মিতা যেখানে বসেছে তার একটু দূরেই লাইভ মিউজিক এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিউজিসিয়ান গানের সুর চালু করতেই নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন। মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত দেয়।
–কি?
প্রশ্ন করে মিতা।
–ডান্স উইথ মি।
বলে অরিয়ন।
–না, না। আমি ডান্স করতে পারিনা।
উত্তর দেয় মিতা।
–আমি শিখিয়ে দিবো।
কথাটা বলেই মিতার হাত ধরে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে যায় অরিয়ন।

নিজের হাত দিয়ে মিতার হাত নিজের কাধে ও অন্য হাত নিজের হাতে নেয় অরিয়ন। অরিয়ন নিজের অন্য হাত রাখে মিতার কোমরে। মিউজিসিয়ান গান গাওয়া শুরু করে।
I found a love for me
Oh, darling, just dive right in and follow my lead
Well, I found a girl, beautiful and sweet
Oh, I never knew you were the someone waiting for me
‘Cause we were just kids when we fell in love, not knowing what it was
I will not give you up this time
Oh, darling, just kiss me slow, your heart is all I own
And in your eyes, you’re holding mine
Baby, I’m dancing in the dark with you between my arms
Barefoot on the grass while listening to our favourite song
When you said you looked a mess,
I whispered underneath my breath
But you heard it, “Darling, you look perfect tonight”
গান শেষ হতেই রেস্টুরেন্টে থাকা সকলেই হাতে তালি দেয় একসাথে। মিতা আর অরিয়ন আলতো করে এক হাসি ফিরিয়ে দেয় সবাইকে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে গাড়িতে বসে আছে মিতা আর অরিয়ন। এখন প্রায় রাত ১০ টা। অরিয়নের বুকে মাথা দিয়ে রেখেছে মিতা। সবকিছু যেন মিতার কাছে কল্পনার মতো লাগছে। মিতার জীবনটা এতো রঙ্গিন হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেনি মিতা।
–লাভ?
বলে উঠে অরিয়ন।
–হুম?
অরিয়নের বুক থেকে মাথা তুলে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
অরিয়ন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে।
–তুই বললে এই পৃথিবীর সব কিছু তোর পায়ের নিচে এনে দিবো আমি।
বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথায় শুধু সিরিয়াসনেস প্রকাশ পাচ্ছে।
–বিনিময়ে তুই প্রমিস কর,আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না তুই।

অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিতা। “ছেড়ে যাবে? তাও আবার অরিয়নকে?” সেটা এখন আর সম্ভব নয় মিতার জন্য। অরিয়নের সাথে শারীরিক আর মানুসিক ভাবে জড়িয়ে গেছে মিতা। অরিয়ন হয়তো জানেনা, মিতা নিজেও অরিয়নকে ছাড়া আর ভালো থাকতে পারবে না। মিতার ও অরিয়নকে ততোটাই প্রয়োজন যতোটা অরিয়নের মিতাকে প্রয়োজন।
–আই অনলি ওয়ান্ট ইউ।
অরিয়নের চোখে চোখ রেখে বলে মিতা।
–আই এম সো সরি লাভ, আমি জানি তুই ভালো কাউকে ডিসার্ভ করিস কিন্তু আম যে অনেক সেলফিশ।
মাথা নিচু করে বলে উঠে অরিয়ন।
–সরি বলবে না। আমি তোমাকে ডিসার্ভ করি রিয়ন, তাই আল্লাহ তোমাকে দিয়েছে।
অরিয়নের গাল ধরে মাথা উপরের দিকে তুলে বলে মিতা।

–চোখ বন্ধ কর।
হঠাৎ করে বলে মিতা।
–কেনো?
প্রশ্ন করে মিতা।
–কর তো।
অরিয়নের কথা শুনে চোখ বন্ধ করে মিতা।
নিজের পকেট থেকে ছোট একটা বক্স বের করে অরিয়ন। মিতার কাছাকাছি নিয়ে যায়। বক্স খুলে মুখে হাসি ফুটিয়ে মিতার দিকে তাকায়।
–চোখ খুলতে পারিস।
বলে অরিয়ন।
মিতা চোখ খুলতেই চমকে যায়। মিতার সামনে ছোট বক্সে পিংক কালারের বিশাল বড় এক ডায়মন্ডের রিং। রিংটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা খুব এক্সপেন্সিভ। ওভাল সাইজের রিংটায় দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মিতা। অবাক হয়ে তাকায় অরিয়নের দিকে।
–তোর জন্য।
হেসে বলে অরিয়ন।
–এতো দামী এ…
–তোর সামনে কিছুই না।
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে অরিয়ন।
–মে আই?
পড়িয়ে দেওয়ার অনুমতি চায় অরিয়ন।
–হুম।

বলে মিতা।
অরিয়ন বক্স থেকে রিংটা খুলে মিতার বাম হাতে পড়িয়ে দেয়। মিতা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। ডায়মন্ডের দাম কেনো এতো বেশি তা আজ বুঝতে পারছে মিতা। এই রিংটা যেন পুরোপুরি মিতার গেটআপ চেঞ্জ করে দিয়েছে।
–আই লাভ ইউ সো মাচ।
খুশিতে বলে উঠে মিতা।
–হুম।
বলেই নিতার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায় অরিয়ন।
গাড়ি এসে দাঁড়ায় দরজার সামনে। অরিয়ন বের হয়ে মিতার জন্য দরজা খুলতেই মিতা অরিয়নের হাতে হাত রেখে বেরিয়ে আসে। দু জনে একে অপরের হাত ধরে দরজায় এক পা রাখতেই মিতা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়।
–কি হয়েছে?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।

–রিং এর বক্সটা গাড়িতেই রেখে এসেছি। আমি নিয়ে আসছি ওয়েট।
বলে মিতা।
–আমি যাচ্ছি দাঁড়া।
বলে অরিয়ন।
–না, তুমি থাকো আমি যাচ্ছি।
কথাটা বলেই মিতা দৌড়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে গাড়ির সিট থেকে বক্সটা হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে আবারও এসে অরিয়নের হাত ধরে। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অরিয়নের সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে থাকে মিতা।

পারমিতা পর্ব ২৫

–মায়ে কল দিয়ে রিংটা দেখাবো…এত্ত সুন্দর। কি ব..
অরিয়নকে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিতা কথা বন্ধ করে অরিয়নের দিকে তাকায়।
–কি হয়েছে দাঁড়িয়ে রইলে কেনো?
অরিয়নকে প্রশ্ন করে মিতা। কিন্তু মিতার কথা যেন অরিয়নের কানে গেলো না। এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিসের দিকে তাকিয়ে আছে দেখতে মিতাও ফিরে তাকায় সেদিকে।
–আফনান।
দূর থেকে ভেসে আসে অরিয়নের নাম।

পারমিতা পর্ব ২৭