পারমিতা পর্ব ৪৯
Nabila Ahmed
–হাহাহহাহাহাহায়াহহাহাহায়াহ।
শব্দ করে হাসতে থাকে অরিয়ন।
এই হাসি কতই না বিশ্রী লাগছে অরিয়নের মুখে,অদ্ভুত লাগছে এই হাসির শব্দ। অরিয়নের হাসি দেখে অচেনা কেউ ভাববে মিতা হয়তো কোনো কৌতুক বলেছে।
অরিয়ন হাসতে হাসতে দুহাত নিজের পেটে হাত রাখে। মিতার কাছে এই অরিয়নকে এক সময় অদ্ভুত রকমের বিশ্রী লাগছে, তো আরেক সময় ভয়ানক সুন্দর লাগছে। ভয়ানক আর সুন্দর শব্দগুলো একসাথে যায় না কিন্তু মিতার কাছে এসবের কোনো মানেই নেই।
–অনেক সুন্দর কৌতুক বলতে পারিস। নতুন শিখলি বুঝি?
পেটে হাত রাখা অবস্থায় মাথা তুলে মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
মিতা কিছু বললো না। এক নজরে অরিয়নকে দেখছে।
মিতার চেহারার অঙ্গভঙ্গি পরিবর্তন না হওয়াতে অরিয়ন নিজের হাসি বন্ধ করে। দু হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো পেঁছনের দিকে নিতে নিতে সোঁজা হয়ে দাঁড়ায়। বড় করে নিশ্বাস ছাড়ে কয়েকবার। এগিয়ে যায় মিতার দিকে।
–তোর কী মনে হয়, আমি আবা*ল? বল*দ নাকি বোকা**দা?
অগ্নি দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
–ভাষা সুন্দর করে কথা বলবে।
অরিয়নের কথা শুনে যেন আগুন জ্বলে উঠে মিতার।
–তোর ভাষার গুষ্টিকিলাই আমি।
মিতার হাতে থাকা ছাতা টান দিয়ে নিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন!!
অরিয়নের এহেন বিহেভিয়ার দেখে চেঁচিয়ে উঠে মিতা।
–চুপ। একদম চুপ। আর একটা কথা বলবি না।
নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল এনে দেখিয়ে বলে অরিয়ন।
–সুন্দর করে কথা বলছিলাম তা ভালো লাগেনি, তাই না? অন্য কারোর? অন্য কারোর? তোর অন্য কারোর মা*রে…
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–ঠাসসসসসসসস।
অরিয়ন নিজের কথা শেষ হওয়ার আগেই থাপ্পড় মা*রে মিতা।
মিতা কী ভেবেছিলো? মিতা অন্য কারোর সেটা জানার পর খুশি খুশি এখান থেকে চলে যাবে অরিয়ন? এরকম কিছু হতে পারে তা তো মিতার জানা কথাই। তাও অরিয়নের এসব কিছু সহ্য হচ্ছে না মিতার। মিতার দুচোখে যেন কোনো ভয় বলতে কোনো কিছুই নেই। অন্য কারোর হলে কোন অধিকারে চড় বসালো তাও জানেনা। শুধু জানে অরিয়ন মিতাকে কিছুই করবে না।
মিতার দুর্বল হাতের থাপ্পড় অরিয়নের কাছে কিছুর মতোই লাগলো না। ব্যাথা তো দূরের কথা কিন্তু যা অরিয়নকে কষ্ট দিলো, তা হলো মিতার অরিয়নকে আ*ঘাত করার ইচ্ছাটা।
–আমার সাথে বাসায় যাবি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–বললাম না আমি যাব না? বললাম না আমি অন্য কারোর? মাথায় কী কথা ঢুকে না নাকি?
চেঁচিয়ে বলতে থাকে মিতা।
মিতার উপরে যেন কিছু ভর করেছে। কিসের রাগ কোথায় ছাড়ছে তা বুঝতে পারছে না।
–অন্য কারোর অর্থ আমি এখন অন্যজনের বিবাহিতা। অন্য কারোর ব…
–ঠাসসসসসসসসসসসস।
মিতাকে ঠাটিয়ে এক চড় বসায় অরিয়ন।
থাপ্পড় খাওয়ায় মিতার মুখ অন্যদিকে সরে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিতা। রাগান্বিত অবস্থায় অরিয়নের দিকে ফিরে তাকায়।
–আমার গা*য়ে হাত তুললে তুমি!
বলে মিতা।
–বেশ করেছি তুলেছি। এখন যদি এই বা*লের কথা বন্ধ না করিস তাহলে হাত, পা ভে*ঙ্গে এরপর কোলে করে বাড়ি নিয়ে যাবো।
বলে অরিয়ন।
–তুমি..
–আমি কি? কি আমি? আইন অনুযায়ী আমি তোর স্বামী। আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে তুই কীভাবে অন্য জায়গায় বিয়ে করলি? আমাকে কী ১৭/১৮ বছরের কঁচি খোকা পেয়েছিস? যা ইচ্ছা তা বুঝ দিবি?
মিতার হাত শক্ত করে ধরে বলে অরিয়ন।
–আর যদি বিয়ে করেও নিস তাহলে আইন ও ধর্ম অনুযায়ী তা অবৈধ। এক অবৈধ সম্পর্কের জন্য আমি আমার ওয়াইফে ছেড়ে যাবো তা কীভাবে ভাবলি তুই? এতোদিনে আমাকে এই চিনেছিস?
মিতার মুখের উপর চলে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে অরিয়ন।
ছাতা ফেলে দেওয়ার কারণে মিতা প্রায় ভিজে গেছে। কী অপরূপ সুন্দর লাগছে মিতাকে তা একমাত্র অরিয়নের চোখ দিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে। ৬ মাস আগে মিতা পালিয়ে না গেলে আজ এই বৃষ্টিতে ছাদে দুজনে বৃষ্টিতে ভিজতো, নাচতো, এরপর গরম গরম চা পান করতে করতে গল্প করতো। মিতার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকতো অরিয়ন কিন্তু সবটাই এখন উলটো। এই বৃষ্টিতে দুজনে ঝগড়া করছে, দু জন দুজনকে চড় মে*রেছে।
–আমি বাড়ি যাব না।
এক ঝাপটা দিয়ে অরিয়নের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে মিতা।
–বাড়ি তো তুই যাবি ই। আমিও একটু দেখি কার ম*রার এতো সখ হয়েছে যে তোকে বিয়ে করেছে। তোকে নিয়ে গেলে তো তোর স্বামীর ছুটে আসার কথা তাই না? নাকি কাপুরুষের বাচ্চা তাও আসবে না?
মিতার চোখে চোখ রেখে বলে অরিয়ন।
মিতা কিছু বললো না। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলো অরিয়নের দিকে। মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে চোখ দিয়ে আগুন বেড়িয়ে আসবে আর তা অরিয়নকে পুড়ে ছারখার করে দিবে।
–নাকি সবটাই মিথ্যে? সবটাই অভিনয় আমাকে ভুলার জন্য?
নিজের হাত দিয়ে আলতো করে মিতার গলায় স্পর্শ করতে করতে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের স্পর্শ অনুভব করতেই নড়েচড়ে উঠে মিতা। অরিয়নের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করে অরিয়নের দৃষ্টি এখন আর মিতার চেহারার দিকে নেই। তাকিয়ে আছে মিতার গলার দিকে যেখানে হাত স্পর্শ করেছে সেখানে। অরিয়নের চেহারার ফুটে উঠেছে অন্য অনুভূতি। এই স্পর্শ বা অনুভূতির অর্থ মিতা ঠিকি বুঝতে পারছে।
–গলাটা খালি খালি লাগছে।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
এই কথাটা দিয়ে কী বুঝিয়েছে তাও বুঝতে পারছে মিতা। কারণ মিতার গলাতে গোল্ডের একটা চেইন পড়া আছে তাও খালি থাকার মানে যে এটা না তা বুঝাই যাচ্ছে। মিতা আবারও অরিয়নের হাত সরিয়ে দেয়।
–Don’t touch me.
বলে মিতা।
–আহা,স্বামী বেচারা বুঝি খুব রাগ করবে?
ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বলে অরিয়ন।
–আমি যে সব কিছুতে প্রথম তা কী জানে?
বাঁকা হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন!!!
–আহ!!!
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই মিতার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে অরিয়ন।
–অনেক হয়েছে মিষ্টি মিষ্টি কথা। My wife likes spicy things. Don’t you, love?
মিতার মুখের কাছাকাছি গিয়ে বলে অরিয়ন।
মিতা নিজের হাত দিয়ে চুল থেকে হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে থাকে।
–পালিয়ে গেলি কেন? কোথায় ছিলি এতোদিন?
কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
একটু আগে মিতাকে কাছে পাওয়ার যে অনুভূতিটা দেখা গিয়েছিলো এখন আর তা দেখা যাচ্ছে না। গম্ভীরতা প্রকাশ পাচ্ছে হঠাৎ করে। একটা মানুষ কীভাবে ক্ষণিকের মধ্যে এতো পরিবর্তন হতে পারে তাই বুঝতে পারছে না মিতা।
–জবাব দে।
–ব্যাথা পাচ্ছি আমি।
চুলে টান খাচ্ছে মিতা। এখন চামড়ায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে।
–ব্যাথা পাওয়ার জন্যই ধরেছি। বল কেন পালিয়েছিলি?
আবারও চুলে টান দিয়ে বলে অরিয়ন।
–কারণ তোমাদের মতো মিথ্যাবাদীর সাথে আমি থাকতে চাই নি।
বলে ফেলে মিতা। কথাটা বলতেই মিতার চোখে ঘৃণা প্রকাশ পেতে থাকে।
–মানে?
ভ্রু কুঁচকে বলে অরিয়ন। মিতার কথার কিছুই বুঝতে পারছে না অরিয়ন।
–মানে খুব ভালোই জানো। এতো অভিনয় করার কী আছে?
–কী বলতে চাচ্ছিস পরিষ্কার করে বল।
বলে অরিয়ন।
–আমি ব্যাথা পাচ্ছি।
অধৈর্য্য হয়ে বলে মিতা।
–I know.
বলে অরিয়ন।
–আমাকে খু*ন করার চেষ্টা, রাতে তোমার আর বড় চাচ্চুর কথা বলা আর এর পর পরই আমাকে ভালোবাসি বলা। সবগুলো খুব স্বাভাবিক ঘটনা তাই না?
অরিয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে মিতা।
–কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–কেন অভিনয় করলে? আমি তো কিছুই চায়নি তোমার কাছে? ভালো নাই বাসতে আমাকে। তাও কেন ভালোবাসার অভিনয় করলে? কেন ব্যবহার করলে আমাকে? টাকাই কী সবকিছু?
কথাগুলো বলতেই মিতার চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে।
–কি সব বলছিস তুই। টা…
–আহ…
–আয়ায়ায়ায়ায়া।
চিৎকার করে উঠে মিতা।
–অরিয়ন!!!!!!!!
ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে মিতা।
মিতা আর অরিয়নের কথা চলাকালীন হুট করেই পেছন থেকে কেউ অরিয়নের মাথায় বারি মারে। নিমিষেই মিতার থেকে কিছুটা দূরে সরে আসে অরিয়ন। মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। হাতে র*ক্ত দেখা যাচ্ছে। মিতা দৌড়ে অরিয়নের কাছে গিয়ে বসে।
অরিয়ন র*ক্তমাখা হাত দেখে পিছনের দিকে তাকায়। সামনের দাঁড়িয়ে আছে ৮/১০ জন লোক। বয়সে প্রায় অরিয়নের সমান বা বড় হবে। একজনের হাতে কাঠের টুকরো একটা। একপাশে র*ক্ত লেগে আছে। বুঝতে পারে এটা দিয়ে আ*ঘাত করা হয় অরিয়নকে।
–দাঁড়ায় আছস কেন। মাইয়াটাকে ধর।
লোকগুলোর মধ্যে একজন বলে উঠে।
লোকটার কথা শুনতেই মিতা ভয়ে অরিয়নকে শক্ত করে ধরে। মাথায় আ*ঘাত পাওয়ার কারণে চোখে সব যেন ঝাপসা ঝাপসা দেখছে অরিয়ন। একজন মিতার দিকে এগিয়ে যায়। হাত বাড়িয়ে দেয় মিতার দিকে কিন্তু মিতাকে স্পর্শ করার আগেই তার হাত ধরে ফেলে অরিয়ন।
–কে তোরা?
হাত মোচড় দিয়ে ধরে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন। মিতাকে নিজের শরীর দিয়ে পুরোটাই লুকিয়ে রাখে।
–আয়ায়ায়া।
ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে লোকটি।
–ঐ দাঁড়ায় আছস কেন। ধর ওরে।
সামনে থেকে একজন বলতেই ৪/৫ জন এগিয়ে আসে অরিয়নের দিকে।
–যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাবি তুই৷ ওদের কাছে ধরা দিবি না। আমি খুজে নিবো পরে।
বলে অরিয়ন।
অরিয়ন হাত ধরে রাখা লোকটাকে সামনের দিকে ধাক্কা দেয়। অন্যরা লোকটিকে ধরতে ধরতেই এগিয়ে যায় অরিয়ন। একের পর এক ঘুষি আর লা*থি মারতে থাকে অরিয়ন। ৫ জনের সাথে মা*রামা*রি করতে করতে বাকি ২ জন এগিয়ে যেতে থাকে মিতার দিকে। মিতা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
–কে তোরা? আমাদের সাথে কী সমস্যা?
একজনের লোকের বুকের উপর পা রেখে চাপ দিয়ে বলে অরিয়ন।
লোকটি কিছু বললো না। একটু পর পর মাথা ঝাকি দিচ্ছে অরিয়ন। একটু পর পর চোখে ঝাপসা দেখছে। পেছন থেকে অরিয়নকে একজন লা*থি মা*রতেই মাটিতে পড়ে যায় অরিয়ন।
মিতা দৌড়াচ্ছে পালানোর জন্য। কেনই বা এরা মিতাকে ধরতে এসেছে অথবা কেনই অরিয়নকে মা*রছে তা জানেনা মিতা। নাকি জানে?
–বাঁচাওওওওওওওও।
চিৎকার করে উঠে মিতা।
এই বৃষ্টিতে কেউ কিছুই শুনতে পারবে নাকি তা সন্দেহ আছে।
–বাঁচাওওওও, কেউ আছোওওওও?
আবারও দৌড়েতে দৌড়েতে চিৎকার করে উঠে একজন।
–আহহহহহ…
পেছন থেকে মিতার চুল টান দিয়ে ধরতেই চিৎকার করে উঠে মিতা।
অরিয়নকে ৩/৪ জন মিলে পিটাচ্ছে। মাটিতে পড়ে আছে অরিয়ন। একের পর এক লা*থি দিয়েই যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। মাথায় আঘাত খাওয়া অরিয়নের শরীর থেকে র/ক্ত বেরিয়ে গেছে অনেকটা। শরীর অনেকটাই দুর্বল হয়ে এসেছে অরিয়নের।
–আয়ায়ায়া..
মিতার চুলের মুঠি ধরে টান দিতেই চিৎকার করে উঠে মিতা। মিতা ভেবেছিলো অরিয়ন চুল ধরাতেই ব্যাথা পেয়েছিলো কিন্তু এখন বুঝতে পারছে এই ব্যাথার কাছে কিছুর ছিলো না ঐটা।
–ছাড় আমাকে..ছাড়। বাঁচাওওওওওও।
চিৎকার করে মিতা।
–চুপ ছেড়ি। চিল্লাবি না। একদম জানে শেষ কইরা দিমু।
চুল ধরে রাখা লোকটি বলে।
–ছাড়া আমাকে, ছাড়।
চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে মিতা।
–বেশি ফালাবি তো তুই ও মরবি। তোর মজনুরে জীবিত দেখতে চাইলে চুপ কইরা থাক।
বলে লোকটি।
–আসছি শুধু তোরে নিতে। স্যার কইছে তোরে নিতে। তার পোলারে ছাইড়া দিতে। তোর জন্য তারে মা*রতে হইছে,মা*গী।
মিতার চুল ধরে হাটতে হাটতে বলে লোকটি।
লোকটির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় মিতা। চুলের থেকে হাত সরিয়ে নেয়। “কী ভেবেছিলো? হাবিব চৌধুরী এতো সহজেই ছেড়ে দিবে? ” পরাজয়ের সহিত চুপ করে রইল মিতা।
–ঐ,ছাইড়া দে মজনুরে। লায়লারে পাইছি।
মিতার চুল ধরে রাখা লোকটি চেঁচিয়ে বলে।
–রিয়ননননন।
মাটিতে লুটিয়ে থাকা অরিয়নকে দেখে বলে উঠে মিতা।
মিতার কন্ঠ শুনতেই ঘোর কাটে অরিয়নের। চোখ খুলে মিতার দিকে তাকাতেই চোখ যায় মিতার চুল ধরে রাখা হাতের দিকে। সাদা রঙের জামাটা কাদায় নোংরা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের জন্য সবটা মরীচিকা লাগলো সবকিছু অরিয়নের কাছে। মাথা ঝাকি দিয়ে আবারও চোখ তুলে মিতার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সবটাই বাস্তব। ক্ষণিকেই যেন ভূত ভর করলো অরিয়নের উপর। দু হাতে দুজনের পা ধরে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় অরিয়ন। এক লাফে নিজে উঠে দাঁড়ায়।
একের পর এক আঘাত করতে থাকে লোকগুলোকে। কিছুক্ষণ আগেও অরিয়নকে মা*রতে থাকা লোকগুলো যেন এখন অরিয়নের সাথে শক্তিতে পারছে না। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তারা।
–মাদার**দ।
মিতার চুল ধরে রাখা লোকটির দিকে তাকিয়ে গালি দিয়েই দৌড়ে এগিয়ে যায় অরিয়ন।
কিছুদূর দৌড়ে গিয়েই থেমে যায় অরিয়ন। লোকদুটো অরিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। একে অপরকে ফিসফিস করে কিছু বলে। একজন নিজে থেকে একটু এগিয়ে আসে। অরিয়ন হঠাৎ কেন থেমে গেল তা বুঝতে পারছে না মিতা। মিতার কাছে সব পরিষ্কার হয় যখন মাটিতে পড়ে থাকা ছাতাটা তুলে নেয় অরিয়ন। এক দৃষ্টিতে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকেই হাত দিয়ে টেনে ছাতার কাপড় খুলে আনে। মিতার চোখ সাথে সাথেই বড় বড় হয়ে যায়। অরিয়নের দৃষ্টি মিতার দিকে না থাকলেও অরিয়ন কী করতে চাইছে সব বুঝতে পারছে মিতা।
হাটা শুরু করে অরিয়ন। একটু এগিয়ে আসা লোকটি আশা পাশে তাকিয়ে গাছ থেকে ঠাল ভেঙে নেয়। খালি হাতে যে মা*রামা*রিতে টিকা যায় না তা ভালোই জানে এরা। লোকটি গাছের ঠাল দিয়ে আঘাত করার আগেই ছাতার হ্যান্ডেল দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে অরিয়ন। লোকটিকে যেন আঘাত করার কোনো সুযোগই দিচ্ছে না অরিয়ন। র*ক্তে আশেপাশের পানি লাল হয়ে এসেছে।
মিতার চুল ধরে রাখা লোকটি সব কিছু দেখে ভয়ে মিতার চুল ছেড়ে দেয়। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। অরিয়ন তা লক্ষ্য করতেই পেছনে দৌড়াতে থাকে। ধরতে না পেরে হাতের ছাতাটা ছুড়ে মা*রে। পায়ে আঘাত করতেই পড়ে যায় লোকটি। সাথে সাথে গিয়ে ধরে ফেলে অরিয়ন।
–মাফ করেন ভাই, মাফ করেন। আপনার পাও ধরি।
অরিয়নের পা ধরে কাঁদতে থাকতে লোকটি।
অরিয়ন কিছু বললো না। মুখ দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। নিচু হয়ে বসে অরিয়ন।
–মাফ চাই ভাই। আর হবে না। আমাগো যা কইছে আমরা তাই করছি।
বলে লোকটি।
অরিয়ন আলতো করে লোকটির ডান হাত ধরে। তাকিয়ে থাকে হাতের দিকে। যতো তাকিয়ে থাকছে ততোই হাতের উপর চাপ প্রয়োগ করছে অরিয়ন।
–প্লিজ ভাই প্লিজ, মাফ কইরা দেন ভাই।
–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
লোকটির বুকে পা দিয়ে লাথি মারে অরিয়ন। সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে লোকটি। ডান হাত মোচড় দিয়ে ধরে অরিয়ন।
–আমার পরীর চুল ধরেছিস এই হাত দিয়ে।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–আয়ায়া..
ব্যাথায় কোকাতে থাকে লোকটি।
–আমার পরীকে আমি ছাড়া কেউ স্পর্শ করতে পারে না, শু*য়োরের বাচ্চা। পারে না।
–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
অরিয়ন কথাটা বলতে বলতেই ডান হাতটা মোচড় দেয়। সাথে সাথেই ভেঙ্গে যায় ফলে বিভৎসভাবে চিৎকার করে উঠে লোকটি।
–আমার পরীকে কেউ কষ্ট দিতে পারে না।
–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
–কেউ না।
বলতে বলতে ভাঙ্গা হাতে আবারও মোচড় দিতে থাকে অরিয়ন।
–রিয়ননননননন।
ভয়ানক এক চিৎকার করে উঠে মিতা।
পারমিতা পর্ব ৪৮
অরিয়ন মিতার কণ্ঠ শুনে ফিরে তাকানোর পূর্বেই অরিয়নের মাথায় ইট দিয়ে কেউ একজন আঘাত করে। সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অরিয়ন। চোখের সামনে সব কিছু ক্ষণিকেই ঝাপসা হয়ে যায়। মিতার দিকে তাকাতেই অস্পষ্টভাবে লক্ষ্যকরে কয়েকজন মিলে মিতাকে ধরে রেখেছে।
র*ক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা অরিয়ন নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় মিতার দিকে।
–পরী!!
সাথে সাথে মাটিতে অরিয়নের হাত পড়ে যায়। জ্ঞান হারায় অরিয়ন।