পারমিতা পর্ব ৮
Nabila Ahmed
শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে হাটতে বেড়িয়েছে অরিয়ন। খালি পায়ে ভোরের শিশির পা স্পর্শ করতেই যেন কেঁপে উঠলো পুরো শরীর। চারপাশ এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি, কুয়াশায় ঝাপসা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে দূরের সব কিছু।
বাগানে হেটে প্রবেশ করতেই কারো উপস্থিতির টের পায় অরিয়ন। ফিসফিস করে কেউ কথা বলছে তবে কি বলছে তা বুঝতে পারছে না অরিয়ন।
–আমাদের তাড়াতাড়ি সরে যেতে হবে এখান থেকে।
ঝাপসা ঝাপসা পরিচিত কণ্ঠে কথাগুলো শুনতে পায় অরিয়ন।
–কেউ দেখলে সমস্যা হবে। দেখার আগেই চলে যেতে হবে।
আবারও বলে উঠে পরিচিত সেই ব্যক্তি।
কোনদিক থেকে শব্দ আসছে শুনার জন্য দ্রুত হাটা শুরু করে অরিয়ন। বাগানের শেষ মাথাতে আসতেই দু জনের অবয়ব দেখতে পায় অরিয়ন।
–কে? কে ওখানে?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনেই যেন দু জনে চমকে গেলো। ক্ষণিকের মধ্যেই কুয়াশা কেটে গিয়ে আশপাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে যেন পা থেকে মাটি সরে গেলো অরিয়নের।
–আফরিন?
অবিশ্বাসের সুরে বলে উঠে অরিয়ন।
সামনেই চাদর গায়ে দাঁড়িয়ে আছে আফরিন। পাশেই চাদর দিয়ে মুখ ঢাকা একজন দাঁড়িয়ে আছে। সে যে একজন পুরুষ তা বুঝতে সময় লাগেনি অরিয়নের।
–আফরিন?
খুশি হয়ে বলে উঠে অরিয়ন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–ওখানে কি করছো? চলে আসো। তোমাকে ছাড়া কত কষ্ট হয়েছে আমার। কাম ব্যাক বেব।
নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন।
–সবাই আশার আগেই আমাদের পালাতে হবে।
আফরিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের হাত ধরে বলে উঠে আফরিন।
আফরিনের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় অরিয়ন। ক্ষণিকেই চেহারায় চিন্তার ছাপ পড়ে।
–আফরিন?
অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।
–আই এম সরি আফনান বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে আফরিন।
–আফরিন!
আফরিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন।
–সো সরি, আই হেভ টু গো।
কথাটা বলেই ছেলেটির হাত ধরে হাটতে শুরু করে আফরিন।
অরিয়ন যেন নিজের জায়গায় থেকে নড়তে পারছে না। মাটি যেন নিজের মধ্যে তলিয়ে নিচ্ছে অরিয়নকে।
–আফরিন, প্লিজ প্লিজ প্লিজ বেব, প্লিজ কাম ব্যাক।
অরিয়নের শত ডাক যেন আফরিনের কানে পৌঁছালো না, নিজের মতো চলে যাচ্ছেই।
–আফরিননননননননননন।
আফরিনের নাম ধরে চিৎকার করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে অরিয়ন।
স্বপ্ন, এ কেমন স্বপ্ন দেখলো অরিয়ন? আফরিনের চলে যাওয়াটা কি যথেষ্ট নয়? প্রতিদিন একই স্বপ্ন যে পাগল করে দিচ্ছে অরিয়নকে। বিছানায় বসে থাকা অরিয়নের কপাল ভিজে গেছে ঘামে, হাত অনবরত কাঁপছে, গলা শুকিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পানি পান করেনা কয়েক বছর। পাশের টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি ঢালতে নিতেই দেখতে পায় জগ খালি। পাশে রাখা ঘড়িতে এখন ৪:১০ বাজে।
জগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে অরিয়ন। সিড়ি বেয়ে নেমে সরাসরি চলে যায় রান্নাঘরের ফ্রিজের কাছে। বোতল থেকে পানি পান করে ফিল্টার থেকে পানি নিয়ে জগটা ভরে নিয়ে আবারও নিজের রুমের উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করে।
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমের দিকে যেতেই চোখ পড়ে মিতার রুমের দরজার দিকে। দরজাটা খোলা। আসার সময় খোলা ছিলো নাকি তা খেয়াল করেনি অরিয়ন। ঘুমের ঘোরে অতোদিকে নজর দেয়নি। এখন যখন ঘুম পুরোপুরি কেটেছে তখন এই রাতের বেলা দরজা খোলা দেখে একটু টেনশন হলো অরিয়নের।
রুমে উঁকি দিতেই ডিম লাইটের আলোতে দেখতে পায় বিছানায় গুটি মেরে শুয়ে আছে মিতা। পাশেই উচ্চতর গণিত বই, খাতা, ম্যাথ গাইড কলম সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ম্যাথ করার চেষ্টা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছে মিতা। “হয়তো কোনো এক ফাকে শায়লা এসে লাইট অফ করে দিয়েছিলো” ভাবে অরিয়ন। রুমে প্রবেশ করে লাইট অন করে মিতার দিকে এগিয়ে যায় অরিয়ন। শরীর থেকে কম্বলটা সরে গেছে। কোমরের এক পাশ থেকে জামাটা উঠে পেট বের হয়ে আছে মিতার।
পেটের দিকে নজর যেতেই চোখ সরিয়ে নেয় অরিয়ন। ধীরে ধীরে বিছানায় গিয়ে বসে। চোখ তুলে মিতার মুখের দিকে তাকায়। মিতা নিষ্পাপ শিশুর মতো ঘুমাচ্ছে। মিতার মুখের দিকে তাকাতেই যেন খারাপ লাগা কাজ করছে অরিয়নের মধ্যে। তখন ম্যাথটা না করে দেওয়াতে নিজেকে এখন একটা এ*হোল মনে হচ্ছে অরিয়নের। নিজের হাত দিয়ে পায়ের কাছ থেকে কম্বলটা টেনে নিয়ে শরীরে দিতে নিলেই আবারও চোখ যায় পেটের সেই খালি অংশে। সাদা ধবধবে গায়ের রঙের এক পাশে বড় একটা কালো তিল দেখতে পাচ্ছে অরিয়ন। সাদা কাপড়ে যেমন একফোঁটা কালো দাগ স্পষ্টভাবে দেখা যায় ঠিক তেমন লাগছে মিতার তিলটা।
কম্বল শরীরে দিয়ে মিতার দিকে আবারও তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মিতার মুখটা যেন আজ অন্য রকম লাগছে অরিয়নের কাছে। কেমন? তা অরিয়ন জানে না। শুধু জানে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে। কিছুক্ষণ আগেও যেই অস্থিরতা ছিলো সেই অস্থিরতাটা যেন কিছুটা হলেও কমে এসেছে।
–পরী।
মিতার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই বলে উঠে অরিয়ন।
মোবাইলে এলার্ম বাজতেই লাফিয়ে উঠে মিতা। এলার্ম অফ করতে মোবাইল হাতে নিতেই চোখ যায় সময়ের দিকে। ৭ টা।
–না না না। আমি ম্যাথ করবো কখন।
নিজে নিজে বলতে থাকে মিতা।
–৫ টার এলার্ম দিয়েছিলাম বাজলো না কেনো।
নিজে নিজে বলতে বলতেই বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে মিতা।
গতকাল ১২ টা পর্যন্ত আবরারের জন্য অপেক্ষা করলেও আবরার আসেনি। পরে জানতে পেরেছে একটা কনর্সাটে গিয়েছে আবরার তাই আসতে পারবে না। অপেক্ষা করছিলো সকালে উঠে এরপর ম্যাথ করে আসবে। এখন এলার্ম না বাজার কারণে তাও হলো না।
তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুম থেকে গোসল সেরে বের হয়ে টেবিলের কাছে যেতেই অবাক হয় মিতা। গতকাল রাতে বই খাতা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো মিতা কিন্তু খাতা বই সব কিছু এখন সুন্দর করে টেবিলের উপর রাখা। খাতার মাঝখানে কলম রাখা। তাড়াতাড়ি করে খাতা খুলতেই অবাক হয়ে যায় মিতা। পুরো খাতা জুড়ে ম্যাথ করা। কীভাবে কী হবে, কোনটার পর কী করবে সব কিছু শর্ট নোট করে দিয়েছে। মিতার মতো মেধাবী ছাত্রীর জন্য এর থেকে বেশি আর কিছুই লাগবে না।
–অরিয়ন ভাইয়া।
বলে উঠে মিতা।
হাতের লেখা, এই হাতের লেখা খুব চেনা মিতার। আফরিনের সাথে বসে অনেক চিঠি পড়েছে মিতা যা অরিয়ন নিজের হাতে লিখেছিলো। আর মাঝে মধ্যে মিতাকেও এটা সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার কারণে অরিয়নের হাতের লেখা চিনে মিতা। সব কিছু অরিয়ন করে দিয়েছে কথাটা ভাবতেই নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে মিতার মুখে।
আজ নাস্তার টেবিলে অরিয়নের সাথে দেখা হয়নি মিতার। অরিয়ন আরও সকালেই চলে গেছে অফিসে। হাবিব চৌধুরী ও একটু আগেই চলে গিয়েছে নাস্তা করেই। টেবিলে একা বসেই নাস্তা করছে মিতা।
–আরিয়ান ভাইয়া বাসায় এসেছে কখন??
শায়লাকে জিজ্ঞেস করে মিতা।
–আবরাত স্যার তো প্রায় ৪ টা করে এসেছিলো।
মিতার প্লেটে ডিম অম্লেট দিতে দিতে বলে শায়লা।
–শায়লা আমার গ্রিন টি।
পেছন থেকে আনিকা চৌধুরী কথাটা বলেই টেবিলে বসে।
–গুড মর্নিং আন্টি।
আনিকা চৌধুরীকে দেখে বলে মিতা।
মিতাকে দেখেও না দেখার মতো করে রইল আনিকা চৌধুরী। মিতা আর কিছু না বলে নিজের নাস্তা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
–তুই এখানে আর কতদিন থাকবি??
হুট করে বলে আনিকা চৌধুরী।
–সেটা তো আমি বলতে পারছি না।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।
–না পারার কি আছে? এখানে ভালো লাগে না থাকতে সেটা বললেই তোকে নিয়ে যাবে মায়া আর ওয়াহিদ।
বলে আনিকা চৌধুরী।
–আমি তো বলেছিলাম কিন্তু..
–ন্যাকামো বাদ দে। মায়া আর ওয়াহিদের ভালো ব্যবহারের সুযোগ নিস না। তাদের মেয়ের সংসারে তুই বিয়ে করে এসে বসেছিস সেটা কি ভালো লাগবে তাদের? আর আফরিন? আফরিনের কথা ভুলে গেলি তুই? আফরিন ফিরে এসে যদি জানতে পারে তুই অরিয়নকে বিয়ে করেছিস তাহলে কি হবে একবার ভেবেছিস??
রাগ হয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।
আনিকা চৌধুরীর কথাগুলো শুনে মিতার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। “অরিয়ন ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সেটা কি আমার দোষ? আমি তো বিয়ে করতে চাইনি” কথাগুলো মুখে মুখে থাকলেও বেয়াদবি করতে চায়নি বলেই চুপ করে থাকে মিতা।
–শুধু ন্যাকা কান্না।
মিতার চোখের পানি দেখে কথাটা বলেই গ্রিন টি নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে যায় আনিকা চৌধুরী।
–মন খারাপ করিস না।
মিতাকে বলে শায়লা।
–হুম।
জবাব দেয় মিতা।
পুডিং হাতে অরিয়নের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। অরিয়নের করে দেওয়া নোটের কারণে আজ মিতার উচ্চতর গণিত পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। তাই খুশি হয়ে সবার জন্য পুডিং করেছে মিতা।
অরিয়ন আজ অফিস থেকে সন্ধ্যার পর চলে এসেছে। তাই ধন্যবাদ জানানোর জন্য মিতাই পুডিং নিয়ে এসেছে। দরজায় নক করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেয় অরিয়ন।
চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে অরিয়ন। টেবিলের এক কর্ণারে টবে তাজা কতগুলো গোলাপ রাখা। পুডিং হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মিতার নজরে ফুলগুলো আসতেই যেন মুখ থেকে মৃদু হাসিটা বিলিন হয়ে গেলো।
–কি হয়েছে?
মিতাকে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–তোমার জন্য পুডিং নিয়ে এসেছিলাম।
জবাব দেয় মিতা।
–ভুলে গেছিস? আমি পুডিং খাই না পরী।
কথাটা বলেই আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দেয় অরিয়ন।
মিতা অরিয়নের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতে থাকা পুডিং এর প্লেটটা এগিয়ে দেয় অরিয়নের দিকে।
পুডিং দেখে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন।
–বললাম তো আমি খাই না। নিয়ে যা।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
–তুমি খাও না কারণ আফরিন আপুর পছন্দ না কিন্তু তোমার খুব পছন্দ তা আমি জানি।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় অরিয়ন। অরিয়ন পুডিং খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় ৫ বছর ধরে শুধুমাত্র আফরিনের পছন্দ না তাই। আফরিনের নাম শুনতেই দেয়ালে লাগানো আফরিনের ছবিটার দিকে তাকায় অরিয়ন। ছোটবেলা থেকেই মিতা লক্ষ্য করেছে পুডিং দিলে অরিয়ন খুব মজা করে সেটা খেত। এরপর একদিন হঠাৎ করেই খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রথমে কারণ বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকি বুঝতে পেরেছে যখন দেখলো আফরিনের পছন্দের সব কিছু নিজের পছন্দ আর অপছন্দগুলো নিজের অপছন্দ করে নিয়েছে অরিয়ন।
–তুই খেয়াল করেছিলি??
মৃদু এক হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের হাসি দেখে যেন আশপাশের সব থেমে গেলো মিতার। ঠোঁটে হাসি ফুটতেই তা ফুটে উঠেছে চোখে। অরিয়নের চুলগুলো চোখের মাঝ বরাবর এসে পরেছে। হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে অরিয়ন সুন্দর। এক সুদর্শন পুরুষ।
–তোমার কোনো কিছুই আমার নজরের বাইরে যায় না।
এক দৃষ্টিতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। মুখ থেকে হাসিটা বিলিন হয়ে গিয়েছে। এক অজানা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মিতার দিকে।
দরজায় কড়া নাড়া শুনে ঘোর কাটে অরিয়ন ও মিতার।
–কাম ইন।
ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন স্যার, ডিনার করতে ম্যাম ডাকছে।
ভিতরে ডুকে বলে শায়লা।
–আর পরী তু..
–কি বললে শায়লা?
শায়লার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠে অরিয়ন।
–ডিনার করতে ডাকছে।
–না, এরপর।
–মিতাকেও ডাকছে।
–হুম। মা কে বলো আসছি আমি।
বলে অরিয়ন।
–জি স্যার।
বলে শায়লা।
মিতা নিজের জায়গায় চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইল। অরিয়নের কথার মধ্যে কেউ কথা বলাটা একদম পছন্দ করে না অরিয়ন। তাই চুপ করেই রইল মিতা।
–শায়লা…
শায়লা চলে যেতে নিলেই ডাক দেয় অরিয়ন। অরিয়নের ডাক শুনে ফিরে তাকায় শায়লা।
–জি স্যার!
–পরীকে আমি ছাড়া আর কেউ পরী ডাকে না। কেউ না। নেক্সট টাইম থেকে খেয়াল রাখবে।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–জি স্যার।
ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় শায়লা।
অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয়ে অরিয়নের দিকে তাকায় মিতা। অরিয়নের এরুপ কথা শুনে কেনো যেন মনের মধ্যে এক অজানা আনন্দ অনুভব করছে মিতা। অরিয়ন আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দিতেই মিতা আর অপেক্ষা না করে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।
–তোমার জন্য আমি কাল রাতে ১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম।
ভ্রু কুচকে আবরারকে বলে মিতা।
–আরে কাল ই আমাকে তোর প্রয়োজন হবে তা কি আমি জানতাম? কনসার্টটা সেই হয়েছে মিতা।
দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে আবরার।
–রাখো তোমার কনসার্ট। অরিয়ন ভাইয়া না থাকলে আজ আমি এক্সামে লাড্ডু মারতাম।
আবরারের হাতে চিমটি কেটে বলে মিতা।
–আউচ…
ব্যাথা পাবার অভিনয় করে শব্দ করে উঠে আবরার।
ডিনার টেবিলে মিতা আর আবরার মিলে সবার জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পরেই একে একে সবাই চলে আসে। সবাই আসতেই শায়লা ও অন্যান্য কাজের লোক খাবার দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়এ। আবরারের অপজিটে বসেছে অরিয়ন ও আনিকা চৌধুরী। মাঝখানের চেয়ারে হাবিব চৌধুরী বসা।
–ধন্যবাদ ভাইয়া।
হঠাৎ করে বলে উঠে আবরার।
–কি জন্য??
ধন্যবাদ দেওয়ার কারণ বুঝতে না পেরে বলে অরিয়ন।
–মিতাকে কাল গণিতে হেল্প করার জন্য, তা না হলে আজ নিশ্চিত ও ফেল করতো।
কথাটা বলেই হেসে দেয় আবরার।
–তুমি তো..
কথাটা বলেই আবরারের বাহুতে এক চড় বসায় মিতা।
টেবিলে বসে সব কিছু দেখে হাসি ফুটে উঠে হাবিব চৌধুরীর মুখে। অন্যদিকে আনিকা চৌধুরী বিরক্তবোধ করছেন।
–ধন্যবাদ অরিয়ন ভাইয়া, তুমি না থাকলে আমি নি..
–মিতা!!
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।
–জি চাচ্চু।
হাবিব চৌধুরীর দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলে মিতা।
–অরিয়ন এখন আর তোমার কাজিন নয়, তোমার স্বামী। তাই ভাইয়া বলা বন্ধ করো। শুনতে বাজে লাগে।
অনায়াসে কথাটা বলে ফেলে হাবিব চৌধুরী।
হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে খাবার খাওয়া বন্ধ করে নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মিতাও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কিছুক্ষণ হাবিব চৌধুরী ও কিছুক্ষণ অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। হাবিব চৌধুরীর কথাটা বলতেই আবরারের হাতে থাকা চামচটা শক্ত করে ধরে আবরার।
পারমিতা পর্ব ৭
অরিয়ন কোনো কথা না বলেই ধাক্কা দিয়ে প্লেট সরিয়ে দিয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে যায়। হঠাৎ করে অরিয়ন এমন করাতে লাফিয়ে উঠে মিতা। পাশে থাকা আবরার মিতার কাধে হাত দিয়ে নর্মাল করার চেষ্টা করে।
মিতার যখনি মনে হয় অরিয়ন একটু স্বাভাবিক হচ্ছে তখনি কিছু না কিছু অরিয়নকে আবার সেই নিজের জায়গায় টেনে নিয়ে আসে।