পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২০
সাদিয়া আক্তার
বিকাল চারটা ত্রিশ মিনিট। পুনম গভীর মোহে পড়ে আছে পুনমের জীবনের প্রথম মোহ আকাঙ্খা রং তুলি,, ড্রয়িং রুমের জন্য পুনম কিছু পেইন্ট আর্ট করছে।
এর মধ্যেই কলিং বেলের আওয়াজ আসল। এই সময় কেউ আসায় বিরক্ত হলো পুনম হাতের তুলি রেখে উঠে দাড়ালো কোমরে জরানো ওড়নাটা খুলে শরীরে জড়াতে জাড়াতে এগিয়ে যায়।
দরজা খুলতেই নজরে আসে চন্দ্র। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল চন্দ্র দরজা খোলার আওয়াজে উপরে তাকায়। থুতনিতে সাদা রঙ লেগে আছে ঠিক যেনো চাদেঁর আকারে রয়েছে। চন্দ্র পুনমের পুরো মুখস্রীতে নজর বুলায়।
বিড়বিড় করে বলে — তুমি নামক পুনমে এই চন্দ্রের সিল লাগা লেগে গেলো এবার এই চন্দ্রের আধিপত্য বিস্তার করা বাকি,,,,,
— উহহ মাগোওওও,,,,,
রিশানের আর্দনাতে ধ্যান ভাঙ্গে চন্দ্রের পিছন ফিরে একবার তাকে দেখে আবার পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — সামনে থেকে সর,,,,
সাইড সরে যায় পুনম চন্দ্র হনহন করে ভিতরে ঢুকে আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় বসে শিহাব রিশানও পিছন দিয়ে আসে। এদেরকে এই সময় দেখে পুনম অবাক হয়।
— মামারা কোথায়রে পুনম??
— আব্বু আম্মু ঘুমায় শিহাব ভাইয়া,, আর বড় চাচারা বাসায় চলে গেছে
— ওওওও
বলেই শিহাবও বসে পরল। শুধু দাড়িয়ে রইল রিশান পুনম রিশানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনম বলল — এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো রিশান ভাইয়া??
পুনমের কথায় শিহাব মিচকে হেসে বলল — ওরে স্পেশাল ডোজ দিয়েছে চন্দ্র
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— কি??
— হু ওর
শিহাবকে বলতে না দিয়ে রিশান বলল — পুনম ওর কথায় কান দিস না। জানিস আমি আজ থেকে ঠিক করেছি সব জায়গায় তোর বডিগার্ড হিসেবে যাব।
বলেই আবার সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলল
— বডিগার্ড লাভলি সিং রিপোর্টিং আপা,,,,,,
রিশানের কথায় হাহা করে হেসে উঠল শিহাব পুনম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আর চন্দ্র বিরক্তিতে।
চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — এককাপ কড়া করে কফি দে তো,,,,
— কফি পাউডার নেই
পুনমের কথা শেষ হতে না হতেই আবারও দরজায় নক হলো পুনম গেটে দিকে তাকিয়ে দেখে দরজা খোলা সেখানে একটা ছেলে একটা ব্যাগ হাতে দাড়িয়ে আছে।। ভিতরে এসে বলল
— আসসালামু আলাইকুম ভা,,,, ফের চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — আপা মনি এগুলো চন্দ্র ভাই আনিয়েছে
পুনম হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ধ্যান ভাঙ্গে চন্দ্রের গম্ভীর স্বরে বলল — দ্রুত যা,,
পুনম বিরক্ত হয়ে থলেটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো খুলে দেখে দুধ চিনি সহ কফি পাউডার সবই আছে।
পুনম মেপে চার কাপ পানি দেয় হাড়িতে। চুলা জ্বালায় কিছুক্ষণের মধ্যে পানি বলক আসতে কফি পানি চন্দ্রের জন্য কাপে ঢেলে শুধু কফি পাউডার মিশিয়ে এক চামচ চিনি মিশায়। বাকী তিনজনের জন্য দুধ দিয়ে সুন্দর করে কফি বানায়। পুনম রান্নাঘর থেকে বের হয়েও দেখে তখনও রিশান দাড়িয়ে সাথে সেই ছেলেটা রিশানের সাথে দাড়িয়ে মোচরা মুচরি করছে।
পুনম কিছু না বলে চন্দ্রের কফি বাড়িয়ে দেয় চন্দ্র নিজের কফিতে নির্বিঘ্নে চুমুক দেয়। তা দেখে পুনম বিড়বিড় করে বলে — তিতা করলা আবার মিষ্টি খাবে সেটা ভাবাও অবাস্তব।
পুনমের বিড়বিড়রানি কানে গেলেও চন্দ্র কিছু বলে না সবাইকে কফি দিয়ে চলে যেতে নিলে ডাকে চন্দ্র
— ভাত দে খাব,,
— এখানে তো কিছু নেই সব আপনাদের বাসায় আর আপনি এতোক্ষণ না খেয়ে ছিলেন??
পুনমের দিকে তাকিয়ে চন্দ্র বলল — সেটা আমি জানি বাসা থেকে এনেই দিবি। নাহ এখানে আনা লাগবে না বাসায় চল,,
বলেই চন্দ্র উঠে দাড়ায় পিছন থেকে সাঙ্গপাঙ্গ দাড়াতেই চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — আয় আয় আমি হাগ**তে গেলেও তোরা আমার পিছু পিছু আয়,,,
চন্দ্রের কথা নাক মুখ কুচকে ফেলে পুনম নাকে ওড়না দিয়ে আগে আগে হাটে। কথা বাড়ায় না এই লোকের কাজ শেষ করে দ্রুত বাসায় আসতে চায় সে। শিহাব হাসতে হাসতে বলল — যেই জায়গায় আমরা একই কমোটে হা*গি সেই জায়গাই তুই আমাদের রেখে খেয়ে ফেলবি ভাবাটা বিলাসিতা তাও আজ মাফ করে দিলাম যাহ চন্দ্র যাহ ভারলে আপনি পেট,,
শিহাবের কথায় চন্দ্র ওর দিকে তাকাতেই শিহাব চুপসে যায়। চন্দ্র কালো শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলল — রিশান আজকে তোর মেহমান দারীটা কেমন লেগেছে সেটা ইন ডিটেইল”সে শিহাবকে বলবি কালকে যাতে ওর কোনো সমস্যা না হয়।
চন্দ্র কথা শেষ করে চলে যেতেই শিহাবের মাথাটা হাতের মাঝে বন্দী করে রিশান। ঠুয়া দিতে দিতে বলে — আমি তোর মাথায় এইযে ঠুয়া গুলা দিতেছি তোর যেমন ফিলিংস হচ্ছে আমারও তেমনি হচ্ছিল।
শিহাব অনেকবার নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও পারেনা। শেষে নিজেকে বাচাতে রিশানের পশ্চাতদেশে ঠাসসস করে থাবা বসায়।
ব্যাথা জায়গায় ব্যাথা পেয়ে রিশান উহহ মাগো বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে। তার চিৎকারে পারভেজ সাহেব ও রোজিনা বেগম দৌড়ে ঘরে থেকে বের হয়।
— কি হয়েছে রিশান এমন চিল্লাচিল্লি করলি ক্যান। তোরা কখন আসলি পুনম কই??
— আরে মামু থামো কিচ্ছু হয়নাই এমনি আমরা দুষ্টুমি করছিলাম আর পুনম চন্দ্ররে ভাত বেড়ে দিতে গেছে
পাচঁ মিনিট হাটার রাস্তা দূরত্বে চন্দ্রদের বাড়ি। পুনমের পিছু পিছু চন্দ্র বাসায় ঢোকে ঢুকতেই দেখে মুক্তি ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে অ্যাসাইনমেন্টে ব্যস্ত তাদের দিকে ফিরেও তাকাল না। চন্দ্র চেয়ার টেনে বসতেই পুনম রান্নাঘর থেকে ভাত বেড়ে একটা আলাদা বাটিতে তরকারি আনল।
চন্দ্রের সামনে দিতে চন্দ্র কিছু না বলে খাওয়া শুরু করল।। পুনম যেয়ে মুক্তির পাশে বসে। মুক্তি রুপশা এবার ফোর্থ ইয়ারে। লাষ্ট যেহুতু পড়ার চাপ বেশী
— আপু রুপশা আপুর সাথে তোমার দেখা হয়েছে??
নিজের অ্যাসাইনমেন্টে মনোযোগ থেকেই মুক্তি বলল — হ্যা আজ এসেছিল বলল কাল আসবে তোদের বাসায় লিমন ভাই নাকি অনুমতি দিয়েছে,,
— আচ্ছা
বলেই চুপ থাকল পুনম একবার চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে দেখল তার খাওয়া শেষ কিনা মিনিটের মধ্যে শেষ হতেই থালা নিয়ে ধুয়ে রেখে আসল। আর কোনো কথা না বলে চন্দ্রও চলে গেলো নিজের ঘরে তার এখন লম্বা একটা ঘুমের দরকার।
আজ চাদনী বেগম ও রোজিনা বেগম যাবে আজ ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার দেখিয়ে রোজিনা বেগম ঘরের জন্য বাজার সদাইপাতি কিনবে। সেই প্রিপারেশনেই দুইজনে বের হয়েছে।।
পুনম ক্লাসে তাই তার জন্য রান্না করেই রেখেছে পারভেজ সাহেব এখানেও নতুন করে দোকান দিবে তাই সেটা দেখতে গিয়েছে।
— রোগির এজেটা অনেক বেশী এতে অনার জীবনে ঝুঁকি আছে। এই বয়সে বাচ্চা,,,
গাইনী বিশেষজ্ঞ আফিফা পারভীন রোজিনা বেগমের সকল রিপোর্টস দেখে বলল তবে শেষের কথাটা শেষ করতেও পারল না রোজিনার লজ্জায় নত মস্তক দেখে। বুঝল বাচ্চাটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
— আপনার শরীর একটা বাচ্চা ধারনে অতটা স্টেবল না রেষ্ট নিবেন আর বেশী বেশী খাওয়া দাওয়া করবেন।।
আরো কিছু ইন্সট্রাকশন নিয়ে ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হলো তারা। রিক্সায় উঠে চলল বাজারে
— হ্যারে রোজিনা এখন কোনো ভারী বাজার না করি মাছ মাংস এগুলো তোর ভাইকে দিয়ে আনিয়ে নিবনে,,
রোজিনা বেগম উদাস ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায়। চাদনী বেগম নিজের মতো কেনা কাটা করে বের হয়। আবার রিক্সায় উঠে চাদনী বেগম রিক্সায় বসা পুরোটা সময় খেয়াল করে রোজিনা বেগম উদাসীন ছিলো ভেবে নেয় বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করবে,,
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৯
বাসায় এসে দারোয়ানকে রিক্সা থেকে জিনিস পত্র গুলো নামাতে বলে তারা ভিতরে যায়। রোজিনা বেগম বসতে তার সামনাসামনি বসে জিজ্ঞাসা করে — কি হয়েছে তোর এমন উদাস হয়ে আছিস কেনো??
— যার থেকে আমার কোনো আশা ছিলো না আপা সেই আমার পাশে আর যার থেকে সবচেয়ে বেশী আশা ছিল সেই আজ আমার থেকে দূরে।
বলেই ফিকরে কেদেঁ উঠল আবার কান্নাভেজা স্বরেই বলল — আজ দুইদিন নিশার ফোন বন্ধ আপা আপনার দেবরকেও কথাটা বলতে পারছি না। ওর হোষ্টেলের ওয়ার্ডেন ফোন দিয়েছিল নিশা নাকি আজ দুইদিন ধরে হোষ্টেলে ফিরছে না।