পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৪

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৪
সাদিয়া আক্তার

কাজীন দল আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠ একটা উপহার এই কাজীনদের সাথে হাসি ঠাট্টায় যে কতটা আনন্দ মিশে আছে এটা যারা জানে তারাই বুঝে। মিহি সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল ওর এই পরিবারটাকে বেশ লাগে। পুনম মুক্তি ঝিনুক রিমি রুপশা মিহি একদিকে গল্প করছে অন‍্যদিকে ছেলেরা চিকেন গ্রিলড করছে।
লাষ্ট চিকেনটা প্লেটে রাখতেই ঝড় শুরু হলো সবাই দৌড়ে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকল। মূহুর্ত্তের মধ‍্যে বসন্তের বারিধারায় মিশ্রিত হলো ধরনী।

— উফফ আপু এই বৃষ্টিতে এককাপ চা হলে জমে যেতো তাইনা
ঝিনুকের কথায় রিশান চটকরে বলে ওঠে — এখানে কফি মেকার আছে তো পাকোড়া উইথ চা হবে নাকি,,,
রিশানের কথায় সবাই হইহই করে উঠল। মুক্তি রুপশা মিলে পাকোড়া মেরিনেট করে ডুবো তেলে ভাজা শুরু করে বাধাকপির পাকোড়া বানাচ্ছে তারা। শিহাব কফি মেকারে চা পাতা পানি দুধ সহ সব মিশ্রন দেয়।
— সমন্দি সাহেবরা এখানে সিলিন্ডার গ‍্যাসের চুলা,, কফি মেকার ফ্রিজ কই পাইলা তাও আবার সবজি আছে।
— আমাদের চন্দ্রের কারসাজি লিমন ভাই ওর মাঝে মধ‍্যে এখানেই থাকে তাই মামি সব রেখে দিয়েছে এখানে। আজ ওর প্ল‍্যান ছিলো থাকার তাই মনে হয় মামিই সব রেখেছে।
লিমন মাথা নাড়িয়ে বলল — চন্দ্র তো দেখি রান্নাও পারে তো আমার শালিকা সাহেবা পারে নাকি??
পুনম মুচকি হেসে মাথা নাড়ায় সে পারে না রান্না করতে মুখ ফুটে বলে — এককাপ চা ছাড়া আর কিছুই পারি না আম্মু চাচীর সাথে রান্নাঘরে ঘুরঘুর করলেও তারা রান্নার কোনো কাজে হাত দিতে দেয় না।
— তাহলে সেই হিসেবে আমাদের চন্দ্রের হবু বউ ভীষণ লাকি,,, তো একদিন চন্দ্রের রান্নার পার্টি হয়ে যাক,, কি বলো চন্দ্র??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— ইয়‍্যু আর অলোয়েজ ওয়েলকাম ভাই,,,
চন্দ্র মাথা নাড়িয়ে বলল। তাদের কথোপকথনের মাঝে মুক্তি রূপশা গরম গরম পাকোড়া এনে হাজির করে।
পাকোড়া মুখে দিতে দিতে শিহাব বলল — তবে আমাদের চন্দ্র মামার কিন্তু এই চিলেকোঠা নিয়ে বেশ রোমান্টিক প্ল‍্যান আছে,,
সকলে হইহই করে উঠল। রুপশা আগ্রহ স্বরে বলল — কি চন্দ্র ভাই এখানে সবাই জানে তোমার স্পেশাল মানুষের বিষয়ে শুধু আমিই জানি না। জানালায় বৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — কিরে পুনম তুই কিছু জানিস নাকি??

— নাহ আপু
বলেই পুনম আবার বৃষ্টির দিকে নজর দেয় জানালার কিনারা ঘেষে দাড়ায়। বৃষ্টির ফোটাগুলো ছিটকে পুনমের মুখে এসে পরছে। যতবার বৃষ্টির ফোটা পুনমের মুখে পড়ছে পুনমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠছে। যাদের নিয়ে আলোচনা তাদেরই কোনো খেয়াল নেই একজন মজে আছে বৃষ্টিতে আরেকজন মজে আছে বৃষ্টিতে ভেজা আদল খানায়।
_সে কি জানে তার বৃষ্টি ভেজা
আদল খানায় বারিধারা বিন্দু
গুলো!!
কারো হৃদয়ের দোলাচল বাড়িয়ে দেয়
সেই ভেজা শ‍্যাম কন‍্যা কারো তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়,,,,,

বৃষ্টি দেখতে থাকা পুনমের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে চন্দ্র এ দেখার কোনো শেষ নেই। রুপশা চন্দ্রের দৃষ্টি খেয়াল করে মুক্তির দিকে তাকায়। মুক্তি দাত কপাটি বের করে হাসে। অবাক হয় রুপশা তবে খুশীও হয় যাক তার বোনকে কেউ এতো ভালোবাসে ভেবেও মনটা শান্তি পায়।
— এই পুনম ঐ দিকে কি করিস এখানে আয়,,,
বোনের ডাকে পুনম খাটে বসে এই ঘরে একটা সিঙ্গেল খাট ও একটা সিঙ্গেল সোফা আছে সেখানেই সবাই আটসাট বেধে বসেছে। পুনম এসে বসতেই চন্দ্রের নজরও ঘুরায় তাতেই আরো সিয়‍্যর হয় রুপশা তবে মনে মনে ভাবে কবে থেকে চন্দ্র পুনমকে পছন্দ করে। মুক্তির কাছে জিজ্ঞাসা করবে ভেবে চুপ থাকে।
— এই রুপশা আপু তুমি নাকি অনেক সুন্দর গান জানো আজ একটা গেয়ে শুনাও না,,,
রিমির কথায় রুপশা লিমনের দিকে তাকায়। যে এতোক্ষণ তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো রুপশাকে তাকাতে দেখে নজর ঝুকায়। রুপশা তার দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠল

_ যাও পাখি বলো হাওয়া ছলছল,,
আবছায়া জানালার কাচ..
আমি কি আমাকে হারিয়েছি বাকে,,
রুপকথা আনাচে কানাচ!!!
” আঙ্গুলের কলে জ্বলে জোনাকি
জলে হারিয়েছি কান শোনোকি
জানালার গল্পেরা কথা মেঘ __
যাও মেঘ চোখে রেখো এ আবেগ
–যাও পাখি বল হাওয়া ছলছল
আবছায়া জানালার কাচ
আমি কিইই আমাকে,,,,,
হুম হুম,,,

থামল রুপশা। সবাই একজোট হয়ে হাতে তালি দিল। লিমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টি দেখে লজ্জা পেলো রুপশা। রুপশার লজ্জা পাওয়া দেখে হাসল লিমন।
এবার রিশান বলে উঠল — লিমন ভাই আপনি একটা গান,,,
— না ভাই তোমাদের বোনের মতো এতো সুন্দর গলা না আমার ঐ যাষ্ট গুন গুন পযর্ন্তই ঠিক আছে।
সবাই আর জোরাজুরি করল না। হাসি ঠাট্টায় কেটে গেলো সন্ধ‍্যাটা। রাতের ডিনারের আওয়াজ করলে সবাই নিচে নামে।
নেমে দেখে জম্পেশ আয়োজন করে ফেলেছে মায়েরা বৃষ্টির ম‍ধ‍্যে গরম গরম খিচুড়ি বেগুন ভাজা ইলিশ মাছ ভাজা গোশ ভুনা।।
কামরুল সাহেবের বুদ্ধিতে তিন ভাই মিলে টেবিলও সরিয়ে ফেলেছে। ছোটবেলার মতো শীতল পাটি বিছিয়ে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। এর মধে কারেন্ট চলে গেলে। কামরুল সাহেব বাচ্চাদের মতো হইচই শুরু করে দেয়।
— চাদনী দেখো তো ঘরে মোমবাতি আছে নাকি মোমবাতি থাকলে সোনায় সোহাগা।
তার বাচ্চামোতে সবাই একজোট হেসে উঠল। যাই হোক অনেক খুজেও মোমবাতি পাওয়া গেলো না। তখন টর্চলাইটের সাহায্যে সবাই হাসি ঠাট্টার মধ‍্যে খাওয়া শুরু করল।।

বৃষ্টি শেষে ভেজা মাটির ঘ্রাণে মুখোরিত ধরনী। পুনম নাক টেনে ছাদের দিকে পা বাড়ায় রাত বারোটা সবাই শুয়ে পরেছে। আজও চারবোন একসাথে ঘুমিয়েছে তবে তাদের সাথে এবারের সঙ্গী একজন বেড়েছে সে হলো মিহি। পুনম অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও দুই চোখের পাতায় ঘুম আনতে পারল না। তাই উঠে জানালার কাছে যায় লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ায়।
ধীর পায়ে ছাদে যেতেই ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগে পুনমের মাথার ওড়না খসে পরে। আজ আর ওড়না টানার তাড়াহুড়া নেই রেলিংয়ের পাশে দাড়িয়ে আকাশ পানে তাকায়।
কখন যে চুলের খোপাটা খুলে যায় টের পায়না। পিছন থেকে খসখসে আওয়াজে সেদিকে তাকায়। চন্দ্রকে দেখে ভরকে যায় মনে পড়ে যায় সন্ধ‍্যার কথা আসলেই কি চন্দ্রের স্পেশাল কেউ আছে আর থাকলেই এতো লুকোচুরি কেনো??

— এখানে এমন পিচাশিনীর মতো দাড়িয়ে আছিস ক‍্যান??
পুনম মন খারাপ করল সে কালো বলে তাকে এমন উপহাস করল নিমিষেই চোখ জোড়া ছলছল করল। চন্দ্র ঠোট কামড়ে হাসল তার বোকা রানীর অভিমান হয়েছে। তখনই শুনতে পায় পুনম কর্কশ শব্দে বলল — আমার ইচ্ছা দাড়িয়ে আছি আপনার কি??
— আমারই তো সব ঐ এলো চুলে পশম যুক্ত ঘাড় পিঠময় ছড়ানো চুল আমার যে ঘোর লাগিয়ে দেয়। বিড়বিড় করে বলল,,,
— কি বললেন শুনতে পাইনি,,,
— শুনা লাগবে না

বলেই একহাত দূরত্ব রেখে রেলিংয়ে পিঠ দিয়ে দাড়ায় চন্দ্র। এখন পুনমের পূর্ণ আদলটাই চন্দ্রের সম্মুখে। পুনম চন্দ্রের দিকে একপল তাকিয়ে আবার আকাশে মনোনিবেশ করে। একজন আকাশ দেখতে ব‍্যস্ত আরেকজন তার নিজস্ব আকাশ দেখতে ব‍্যস্ত।
— আচ্ছা চন্দ্র ভাই সত্যিই কি আপনার জীবনে স্পেশাল কেউ আছে??
আবারও ঠোঁট কামড়ে হাসে। চন্দ্রের ঠোঁটের কোণে হাসিটা বিরল সহজে কেউ দেখে না। এইযে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে সে যেনো একটু বেশীই হাসছে।
— আমার বিষয়ে তোর একটু বেশীই ইন্টারেস্ট দেখছি,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৩

— উহু ভুল বললেন আপনার মতো গোমড়া মুখো গন্ডারের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেষ্ট নেই।
বলেই বড় বড় চোখ করে মুখে হাত দিয়ে মিলকা সিংয়ের মত একটা দৌড় দিয়ে ঘরে চলে গেলো।
সেদিকে তাকিয়ে চন্দ্র এবার শব্দ করে হাসল তার হাসির শব্দে শিহাব রিশান ট‍্যাংকির পিছন থেকে দৌড়ে আসল। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল প্রায় অনেক বছর পর চন্দ্রের মুখে এমন হাসি দেখল তারা। দুই ভাই ঝাপটে ধরে চন্দ্রকে। থেমে যায় চন্দ্রের হাসি রিশান শিহাবকে পেটে ঘুসি দিয়ে সরিয়ে বলে — আমার বউয়ের অধিকার হন‍্য করিস তোরা,,,
বলেই চন্দ্র চলে যায়। চন্দ্রের যাওয়ার দিকে দুইভাই হতবাক এই ভালো এই খারাপ এই ছেলেটা।।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৫