পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৭

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৭
সাদিয়া আক্তার

রাতে যতবার পারভেজ সাহেব ওয়াশরুমে যাওয়ার জন‍্য উঠে ততবার পুনমের ঘরে উকি দেয়। আজও তার অন‍্যথা হলো না পুনমের ঘরে উকি দিয়ে দেখলেন রিমি ঝিনুক ঘুমে পাশে একটা কাতা মুরানো আরেকজন পারভেজ সাহেব আর কিছু না ভেবে চলে যায় ঘরে।
চিলেকোঠার ঘরে।
পুনমের কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গেছে। বেচারী ভয়ে একশেষ চন্দ্র কাপড়ে বাধা সেই ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার রাগ এখনো কমে নি। কিছুক্ষণ পরে ধীরে ধীরে ফুপানোর শব্দে চন্দ্র পুনমকে আবার সেই অবস্থায় কাধে তুলে নেয়। পুনম আবার ছটফট করলে থামে না চন্দ্র পুনমের ঘরে এসে ঝিনুকের পাশ থেকে কাতায় মুড়িয়ে রাখা কোল বালিশট সরিয়ে সেখানে পুনমেকে শোয়ায়। হাতের মুখের বাধন খুলে চোখের বাধন খুলে চট করে অন্ধকারের দিকে চলে যায়।
পুনম ধরফরিয়ে লাফিয়ে ওঠে নিজের চারিদিকে তাকিয়ে দেখে সে নিজের ঘরে হুহু করে আবার কেদেঁ দেয় বালিশে মুখ গুজে টের পায়না। চন্দ্রও সুযোগ বুঝে রুম থেকে বের হয়ে যায়।। পুনম কাদতে কাদতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় টের পায়না।

ভোর পাচঁটায় হঠাৎই কারো গোঙ্গানির শব্দে ঝিনুকের ঘুম ভাঙে কাপাল ভাজ করে ওঠে রিমির দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘুমাচ্ছে। পুনমের দিকে তাকিয়ে দেখে পুনম কাতা মুরানো অবস্থায় কাপছে ঝিনুক দ্রুত পুনমের গায়ে হাত দিয়ে দেখে ধুম জ্বর তার।
ঝিনুক দ্রুত পারভেজ সাহেবকে ডেকে আনে রোজিনা বেগমও পুনমের জ্বরের কথা শুনে এসে পরে। মিনিট খানিকের মধ‍্যে পুরো ফ‍্যামিলি পুনমের জ্বরের কথা জেনে যায়। এই ভোর বেলা কোনো ডাক্তার না পাওয়ায় ঘরেই মাথায় পানি ঢালতে শুরু করে পারভেজ সাহেব পুনম বিড়বিড় করে কিছু বলছে দেখে চাদনী বেগম তার ঠোঁটের সামনে কান পেতে দেখে পুনম বিড়বিড় করে বলছে — আমাকে মারবেন না আমি বিয়ে করব না প্লিজ মারবেন না।
চাদনী বেগম মাথা উচু করে চন্দ্রকে আশে পাশে খুজে। কামরুল সাহেব জিজ্ঞাসা করে — কি শুনলে চাদঁ আম্মা কি বলল???

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চাদনী বেগম গম্ভীর স্বরে বলল — চন্দ্র কই
যা বুঝার বুঝে গেলেন কামরুল সাহেব তবে এখন কিছু না বলে সোজা চন্দ্রের ঘরে যায়। তার পিছু পিছু মিরাজ সাহেব ও যায়। চাদনী বেগম যেতে নিলে তাকে আটকায় নিপা বেগম।
পারভেজ রোজিনা বেগমের এদিকে কোনো ধ‍্যান নেই তারা একজন পুনমের মাথা পানি ডালছে তো আরেকজন হাত পা ডলে দিচ্ছে রিমি ঝিনুক মুক্তিও থেমে নেই তারাও অন‍্য হাত পা ডলে দিচ্ছে। ।
নিজের ঘরে গভীর ঘুমে চন্দ্র এসির পাওয়ার কমিয়ে হীম শীতল করে রেখেছে ঘর। কামরুল সাহেব অনবরত দরজা ধাক্কানো শুরু করে।

— ভাইজান ছেলেটা উঠলেও কথা বলা যাবে,,,
— না মিরাজ ছেলেটা বেশী উচ্ছেন্নে চলে গিয়েছে ওকে থামানো দরকার ভেবেছিলাম অল্প বয়সের ট্রমাটা নিতে পারেনি তাই এমন হয়েছে। মেনে নিয়েছি সব কিছু আর না,,,,
অনবরত দরজা ধাক্কানোর ফলে চন্দ্রের গভীর ঘুম হালকা হয় সে ভ্রু কুচকে ঘুমঘুম চোখে উঠে দরজা খুলতেই ঠাসসস ঠাসসস করে পরপর দুইটা থাপ্পর তার গালে পরল।
— মারলে কেনো আব্বু কি করেছি আমি??
চন্দ্রের ঘরে ঢুকে আরেকবার মারতে গেলে আটকায় মিরাজ সাহেব। কামরুল সাহেব তার থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল — কি করেছ তুমি জানো না তাই না,?? পুনমের সাথে কি করেছ জানো না তাইনা মেয়েটার ১০৬° জ্বর। কেনো শুধুমাত্র তোমার কারণে তুমি নিশ্চয়ই মেয়েটার সাথে কিছু করেছ নাহলে ভালো মেয়েটার হঠাৎই জ্বর আসল কেনো??
— যা করেছি বেশ করেছি ওর সাহস কী করে হলো ঐ ছেলের সাথে কথা বলার ওর সামনে যাওয়ার ওরে আমি ঘরে যেতে বলিনি।

কামরুল সাহেব এবার তেড়ে এসে চন্দ্রকে আরো দুইটা থাপ্পড় দিলেন।
— আমি তোমাকে আগেও বলেছি চন্দ্র এখনো বলছি তুমি এমন করতে থাকলে পুনমের দিকে যাওয়ার পথে তোমার সবচেয়ে বড় বাধা আমি হব। তার পরেও যেহুতু তুমি শোধরানোর না এবার আমি অন‍্য পথ অবলম্বন করব।
— কি করবে আব্বু?? চন্দ্রের সাবলীল কথা কোনো ভয় নেই যেনো কোনো জোক্স বলেছে কামরুল সাহেব।
— পুনমকে অন‍্যত্র বিয়ে দিব ওকে অন‍্য জায়গাই পাঠিয়ে দিব।
কামরুল সাহেবের কথা শুনে চন্দ্র হাসে তবে সেকেন্ডের মধ‍্যে সেটা বিলীন হয়।
— ভালোবাসা ভালো আব্বু তবে অ‍বসেশন না। ও আমার অবসেশন নেশায় ডুবে যাওয়া আমি নতুন ভাবে পুনম নামক নেশায় ডুবেছি ওকে তুমি চাইলে ও আমার থেকে দূরে রাখতে পারবে না।
চন্দ্রের কথা শুনে কামরুল সাহেব তার দিকে আবার তেড়ে যেতে নিলে আটকায় মিরাজ সাহেব। কামরুল সাহেবকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে চন্দ্র চলে যায় তার জোহরার ঘরে মেয়েটা ভালোই ভয় পেয়েছে এবার বিয়ে নামক শব্দটা তার কাছে আতঙ্ক থাকবে কয়েকদিন।

সকাল সাতটায় হাউজিং এর একজন ডাক্তারকে সাথে করে নিয়ে আসে চন্দ্র। তার ছেলে চন্দ্রের কোচিং এ পড়ে সেই সুবাদেই পরিচয় তাই চন্দ্র ডাকার সাথে সাথেই চলে এসেছে।
ডাক্তার এসে সবার আগে গ্লাভস পরে নিলো। এতোক্ষণ ডাক্তারের হাতের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ছিলো চন্দ্র হাতের নজর ঘুরায়। পুনমের জ্বর মেপে তার চেকআপ করে একটা ইনজেকশন পুশ করে বলল — ডোন্ট ওয়‍্যারি একঘণ্টার মধ‍্যে জ্বর নেমে যাবে। মনে হয় সিজনাল ফিবার।
সবাই ডাক্তারের কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। ডাক্তার চলে যাওয়ার আধঘন্টার মধ‍্যে জ্বর ছেড়ে ঘাম দেয় পুনমের। ঘাম ছুটতে দেখে চাদনী বেগম সবাইকে বের করে মুক্তিকে গা মুছিয়ে দিতে বলে। সবাই বের হতে মুক্তি পুনমের গা মুছে দেয়। পুনম গভীর ঘুমে টের পায়না কিছুই।।

খাবার টেবিলে সবাই চুপচাপ নাস্তা করলেও আজ চন্দ্র চাদনী বেগম ও কামরুল সাহেব একটু বেশীই গম্ভীর। পুনম তখনও ঘুমে নিঃশব্দ পুরো টেবিল জুড়ে নিরবতা ভেঙে মিরাজ সাহেব বলল
— ভাইজান কালকে আমরা চলে যাব রিমি ঝিনুকের ও নতুন ক্লাস শুরু হবে আবার আমার ছুটি শেষ।
— এর পরের বার রাইয়‍্যানকে নিয়ে এসো।
— ওর তো সামনে ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা তাই এবার আনিনি পরীক্ষা শেষ হলে ছুটি হবে তখনই নিয়ে আসব।
মাথা নাড়ায় কামরুল সাহেব। আর কেউ কিছু বলে না যে যার মতো খেয়ে চলে যায় মুক্তি,, ঝিনুক,, রিমি আবার মুক্তির ঘরে চলে যায় ঘুমাতে।
পারভেজ সাহেব আজ আর দোকানে যায় না পুনমের কাছে যায়। রোজিনা বেগম পুনমের কাছে যেতে নিলে তাকে পারভেজ সাহেব রেষ্ট নিতে বলে সে নিজেই যায়।
ঘুমন্ত পুনমের মাথায় হাত বুলায় পারভেজ সাহেব কয়েক ঘন্টার জ্বরে মেয়েটার চেহারা একেবারে ফ‍্যাকাশে হয়ে গেছে চকলেট কালারের ঠোট জোড়া শুকিয়ে গেছে।।

কামরুল সাহেব তার কিছুক্ষণ পর ঢোকে। অপর পাশে বসে পুনমের মাথায় হাত বুলায় পুনম মেয়েটা একদম তাদের মায়ের মতো হয়েছে আচার আচরণে কথা চেহারা এবং কন্ঠস্বরেও রুপা বেগমের মতো। রুপা বেগম কামরুল,, পারভেজ ও মিরাজ সাহেবের মা। বাড়ির সব মেয়েরা উজ্জল ত্বক পেলেও এই মেয়েটা পেয়েছে শ‍্যামলা বর্ণ। একদম তাদের মায়ের মতো তাইতো মায়ের নেওটা কামরুল সাহেব পারভেজ সাহেব মেয়েটাকে একটু বেশীই ভালোবাসে।।
— আমাকে ছেড়ে দিন আমি আআমমমি নাহহহ
বলেই চিৎকার দিয়ে ওঠে পুনম এতোক্ষণ দুইভাই গভীর ভাবনায় ছিলো পুনমের চিৎকারে তাদের ধ‍্যান ভাঙে।
— এই যে এইযে আম্মা কিচ্ছু হয়নাই আম্মা তুমি আব্বুর বুকেই আছো।
— আবববব্বু আআমম,,,
— হুশশ বলতে হবে না আম্মা তুমি স্বপ্ন দেখেছ খারাপ স্বপ্ন।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৬

কান্নার জোরে পুনম কথা বলতে পারছে না এবার কামরুল সাহেব ও এগিয়ে এসে তাকে বুঝায় সে যা দেখেছে সব স্বপ্ন। এর বেশী কিচ্ছু না অনেক্ষণ পর পুনম থামে পারভেজ সাহেব তাকে গোসলে পাঠায় কারণ সে ঘামে ভেজা ছিলো এভাবে বেশীক্ষণ থাকলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৮